Connect with us
৬৫২৬৫২৬৫২

মত দ্বিমত

জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস: যোগ্যতা, সম্ভাবনা ও বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা

Published

on

এক্সিম ব্যাংক

জাতিসংঘের মহাসচিব এমন একজন নেতা, যিনি কেবল একটি সংস্থা পরিচালনা করেন না, বরং বৈশ্বিক শান্তি, মানবিক মূল্যবোধ এবং ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে কাজ করেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিঃসন্দেহে সেই ব্যক্তি, যিনি তার কাজ ও দর্শনের মাধ্যমে বহু আগেই বিশ্ববাসীর আস্থা অর্জন করেছেন। তিনি এমন একজন নেতা, যিনি ক্ষমতা নয়, মানুষের কল্যাণকেই সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছেন।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বিশ্ব আজ গভীর সংকটে নিমজ্জিত। যুদ্ধ, দারিদ্র্য, বৈষম্য, জলবায়ু পরিবর্তন, শরণার্থী সমস্যা এবং দুর্নীতির করাল গ্রাসে বিপর্যস্ত মানবসভ্যতা। জাতিসংঘের মতো সংস্থার প্রয়োজন কখনো এত তীব্রভাবে অনুভূত হয়নি। কিন্তু এই সংস্থার কার্যকারিতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ—অর্থবিত্ত, রাজনীতি ও ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতার কারণে এটি তার মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘকে যদি তার প্রকৃত দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা হয়, তবে এমন একজন নেতার প্রয়োজন, যিনি দূরদর্শী, নিরপেক্ষ, মানবিক এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহসী। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেই নেতা।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তিনি শুধু একজন নোবেল বিজয়ী নন, বরং দারিদ্র্য বিমোচনের একটি নতুন দর্শন প্রতিষ্ঠার কারিগর। ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে তিনি বিশ্বকে দেখিয়েছেন, কেবল দাতা সংস্থা বা সরকারি উদ্যোগই নয়, বরং সাধারণ মানুষও নিজেদের ভাগ্য গড়ে নিতে পারে যদি তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হয়। তিনি এমন এক বিশ্ব কল্পনা করেন, যেখানে কেউ দারিদ্র্যের অভিশাপে জর্জরিত থাকবে না। জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে তিনি এই দর্শনকে আরও বিস্তৃত পরিসরে প্রয়োগ করতে পারেন, যেখানে অর্থনৈতিক অসমতা হ্রাস, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন হবে বৈশ্বিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তিনি মানুষকে বিশ্বাস করেন, এবং মানুষ তাকে বিশ্বাস করে। রাষ্ট্রনেতারা তাকে সম্মান করেন, সাধারণ মানুষ তার কথায় আশার আলো দেখতে পান। তার প্রতি এই বিশ্বাস শুধু তার কাজের ফল নয়, বরং তার সততা, নৈতিকতা এবং গভীর মানবিক মূল্যবোধের পরিচায়ক। তিনি কখনো ক্ষমতার মোহে পরিচালিত হননি, বরং ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও শান্তিকেই তার প্রধান লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

কূটনৈতিক দক্ষতার দিক থেকে তিনি অনন্য। তিনি কখনো আগ্রাসী নন, কিন্তু তার উপস্থিতিই সমস্যার সমাধানের পথ খুলে দেয়। কল্পনা করুন, সিরিয়া বা গাজার কোনো শরণার্থী শিবিরে তিনি যখন প্রবেশ করবেন, তখন কী হবে? মানুষ তাকে কেবল একজন নেতা হিসেবে নয়, বরং একজন সহমর্মী, এক আশার প্রতীক হিসেবে দেখবে। আফ্রিকার কোনো খরাক্রান্ত গ্রামে, যেখানে শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে, তিনি সেখানে গেলে শুধু ত্রাণ নিয়ে যাবেন না, বরং একটি টেকসই অর্থনৈতিক মডেল প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবেন, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ পথ তৈরি করবে।

তার ভাষাগত দক্ষতাও তাকে আরও যোগ্য করে তুলেছে। ইংরেজিতে তার সাবলীলতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাকে স্পষ্টভাবে নিজের কথা বলার সুযোগ দিয়েছে। তিনি যেভাবে নীতিগত অবস্থান নেন, তা শুধু ভাষাগত দক্ষতার কারণেই নয়, বরং তিনি বিশ্বাস করেন যে সত্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা উচিত।

বাংলাদেশের বর্তমান সংকটেও তিনি যে দূরদর্শিতা দেখিয়েছেন, তা তাকে আরও যোগ্য প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। দেশে যখন রাজনৈতিক সংঘাত ও অনিশ্চয়তা চরমে, তখন তিনি শান্ত, দৃঢ় এবং নীতিগত অবস্থান নিয়ে সংকট মোকাবিলা করেছেন। এটি প্রমাণ করে যে, তার নেতৃত্ব কেবল তাত্ত্বিক নয়, বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে আছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব নির্বাচনে কেবল অভিজ্ঞতা নয়, বরং নৈতিকতা ও নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ড. ইউনূস কেবল জাতিসংঘের নেতৃত্ব দিতে পারবেন না, বরং এই সংস্থাটিকে তার আদর্শিক পথে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। তার নেতৃত্বে জাতিসংঘ আরও স্বচ্ছ, গণমুখী এবং কার্যকর সংস্থা হয়ে উঠতে পারে, যা সত্যিকারের বিশ্বশান্তি ও ন্যায়ের পথে এগিয়ে যাবে।

আমরা এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আছি, যখন জাতিসংঘের মতো সংস্থাগুলোর প্রয়োজন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। কিন্তু এটি তখনই কার্যকর হবে, যখন এর নেতৃত্বে একজন সত্যিকারের বিশ্বনাগরিক থাকবে, যিনি ক্ষমতা নয়, মানবতার সেবাকে অগ্রাধিকার দেবেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেই ব্যক্তি, যিনি শুধু জাতিসংঘের নেতৃত্বই দিতে পারেন না, বরং এই সংস্থাটিকে তার আসল উদ্দেশ্যের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। তিনি কেবল একজন সম্ভাব্য প্রার্থী নন, বরং এই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় নেতা।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

শেয়ার করুন:-

মত দ্বিমত

যদি সত্যিই রাষ্ট্রের মালিক হতে চান, তবে নিজের ভোট বিক্রি করবেন না

Published

on

এক্সিম ব্যাংক

আপনার একটি মাত্র ভোটই আপনাকে এই দেশের মালিক বানিয়েছে। আপনি হচ্ছেন কমান্ড ইন চার্জ। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে, যখন আপনি প্রলোভনে পড়ে আপনার ভোটটি বিক্রি করে দেন, আপনি আর মালিক থাকেন না—আপনি হয়ে যান একজন নিঃস্ব গোলাম। এবং সেই গোলামত্বের খেসারত দিতে হয় আপনাকে—দিনের পর দিন, বছরের পর বছর—দুর্নীতি, দমন-পীড়ন আর অবিচারের যন্ত্রণা সহ্য করে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন: পাঁচশো টাকার বিনিময়ে আপনি কি নিজের ভবিষ্যৎ বিক্রি করবেন? নিজের সন্তানের শিক্ষার অধিকার, চিকিৎসার সুযোগ, নিরাপত্তা ও সম্মান—এসব কি আপনি তুলে দেবেন তাদের হাতে, যারা মিথ্যাচার করে, লুটপাট চালায়, ক্ষমতার আসনে বসে জনগণকে তুচ্ছ করে?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ভোট কোনো কাগজ নয়—এটা একটি চুক্তি, একটি জবাবদিহির সেতু, একটি আত্মমর্যাদার প্রতিচ্ছবি। আপনি যাকে ভোট দিচ্ছেন, তাকে আপনি আপনার প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। যদি সেই প্রতিনিধি হয় অসৎ, লোভী ও স্বৈরাচারী, তবে তার অন্যায় ব্যবস্থার দায়ও পড়ে আপনার কাঁধে। আপনি তাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতা দিয়েছেন—এখন সে আপনার উপরই শাসন করবে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বাংলাদেশের মতো একটি গরিব ও সংগ্রামী দেশে গণতন্ত্রের মূল্যবোধ, নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক নৈতিকতা আজ ভণ্ডামির এক মরীচিকা মাত্র। সংবিধানে লেখা ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’, বাস্তবে সেটি হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাধরদের তামাশার পুঁজি। যাদের দেশের উন্নয়নে কোনো অবদান নেই—যারা লুটপাট, খুন, সন্ত্রাস, ডাকাতি, দুর্নীতি আর রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয়ে নিমজ্জিত—তাদের হাতে আপনি আর কতবার নিজের মাটি, নিজের মাতৃভূমি, নিজের বিবেক তুলে দেবেন সামান্য টাকার বিনিময়ে?

আপনি যদি এই অন্যায় জানেন, যদি এই অমানবিক কাজ বুঝেও করেন, তাহলে জানবেন—এই জাতি ধ্বংস হবে আপনার নীরবতা ও দুর্বলতার কারণে। আপনি হয়তো তখন চেয়ে দেখবেন, কিছু বলার থাকবে না। আপনার সন্তান, ভাই, প্রতিবেশী—সবাই হয়রানির শিকার হবে, অথচ আপনি নিজেই সেই শাসনের বীজ বপন করেছেন।

এখনও সময় আছে। সময় আছে নিজেকে জাগানোর, সময় আছে অন্যকে জাগিয়ে তোলার। ভণ্ডদের মুখোশ ছিঁড়ে ফেলার, ভোটের রাজনীতিকে কলঙ্কমুক্ত করার।

আপনার একটি ভোটের ভুল সিদ্ধান্তই দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিতে পারে। আবার, একটি বিবেকবান, সাহসী ভোট—পরিবর্তনের পথ খুলে দিতে পারে। স্মরণ রাখুন, গণতন্ত্র কাগজে নয়, বিবেকে বাঁচে। আপনার বিবেক জাগিয়ে তুলুন। ভোট দিন সৎ মানুষকে, নিজের জন্য—জাতির জন্য। আর দেরি নয়। এখনই সময়। সতর্ক হোন, সাহসী হোন, প্রতিবাদী হোন। এবারের ভোট হোক অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনার প্রথম বিদ্রোহ।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

উন্নত দেশে সন্তান সংকট, বাংলাদেশ কি সুযোগ নিতে পারবে?

Published

on

এক্সিম ব্যাংক

সুইডেন-বিশ্বের অন্যতম উন্নত ও মানবকল্যাণমুখী রাষ্ট্র। এখানে নাগরিকদের জন্য রয়েছে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, দীর্ঘমেয়াদী মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটি, সন্তানের জন্মের পর আর্থিক ভাতা, উন্নতমানের ডে-কেয়ার সুবিধা, এমনকি সন্তান পালনের সময় চাকরি হারানোর আশঙ্কাও নেই। তারপরও, আশ্চর্যজনকভাবে, এই দেশটিতেই জন্মহার আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

২০২৪ সালে প্রতি নারী গড়ে মাত্র ১.৫৩টি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, যা জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ২.১-এর অনেক নিচে। জনসংখ্যাবিদরা (demografiska experter) সতর্ক করে বলছেন—এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে সুইডেনও পড়বে এক মারাত্মক শ্রমশক্তি সংকটে। বয়স বেড়ে যাওয়া জনগোষ্ঠীর ভারে ভেঙে পড়তে পারে তাদের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়: কেন এই জন্মহ্রাস?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

গবেষণা বলছে, শুধু আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ালেই মানুষ সন্তান নিতে আগ্রহী হবে—এই ধারণা এখন আর বাস্তবসম্মত নয়। আধুনিক জীবনের জটিল বাস্তবতা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা, ক্যারিয়ার ও আত্ম-সিদ্ধির প্রতিযোগিতা, পারস্পরিক সম্পর্কের অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ—এসব মিলিয়ে তরুণ প্রজন্মের কাছে সন্তান নেওয়া হয়ে উঠেছে এক বিব্রতকর সিদ্ধান্ত।

অনেকেই এখন মনে করেন, সন্তান নেওয়া আর শুধু সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি কঠিন ও গভীর ব্যক্তিগত বিবেচনার বিষয়, যা জীবনের ছন্দ ও স্বাধীনতা পুরোপুরি পাল্টে দিতে পারে। সুইডেনের মতো সমাজে যেখানে “স্বাধীন জীবনধারা” ও “ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্য” খুবই গুরুত্বপূর্ণ—সেখানে সন্তান জন্মদানের সিদ্ধান্ত নিতে মানুষ দারুণ দ্বিধায় পড়ে যায়।

একটি ঘোলাটে পৃথিবীর মুখোমুখি তরুণ প্রজন্ম

এই বাস্তবতা শুধু ব্যক্তিগত নয়—এটি বিশ্ব ব্যবস্থার প্রতিফলন। আজকের তরুণরা প্রশ্ন করছে: “এই পৃথিবী কি আদৌ নতুন প্রাণকে স্বাগত জানানোর জন্য উপযুক্ত?” বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুদ্ধ, জলবায়ু সংকট, নিরাপত্তাহীনতা, দুর্নীতি ও লুটপাট, পরিবেশের ভয়াবহ অবনতি, এবং সর্বশেষ কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাত—সব মিলিয়ে পৃথিবীর চিত্র হয়ে উঠেছে অনিশ্চিত, বিভ্রান্তিকর ও ভীতিকর। এমন এক বাস্তবতায় অনেক তরুণই সন্তান নেওয়ার কথা চিন্তা করেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

সুইডেনের মতো শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের তরুণরাও প্রশ্ন তুলছে: “আমি কি সন্তান আনবো এমন এক পৃথিবীতে, যেখানে মানুষ মানুষের জন্য নিরাপদ নয়? যেখানে রাজনীতি হয়ে উঠেছে এক ব্যক্তিগত প্রজেক্ট, এবং ভবিষ্যৎ যেন এক অন্ধকার গুহা?”

এই মানসিকতা আজ সমগ্র পশ্চিমা সমাজেই ছড়িয়ে পড়ছে। সন্তান জন্মদান এখন আর শুধু একটি জৈবিক সিদ্ধান্ত নয়—এটি হয়ে উঠেছে এক নৈতিক দ্বন্দ্ব। নতুন জীবন আনতে গেলে প্রথমে প্রশ্ন করা হচ্ছে—এই পৃথিবী কি আদৌ তার যোগ্য?

বাংলাদেশের জন্য কী শিক্ষা?

বাংলাদেশে এখনো জন্মহার তুলনামূলকভাবে বেশি, যদিও তা ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো: আমরা কি শুধুই সংখ্যায় বড় হতে চাই, নাকি গুণে বড় হতে চাই?

সুইডেনের অভিজ্ঞতা আমাদের শেখায়—শুধু ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বা অনুপ্রেরণামূলক পোস্টার দিয়ে সন্তান নেওয়ার হার বাড়ানো যায় না। প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মনোভাবের পরিবর্তন, মানসিক নিরাপত্তা, নারী-পুরুষের দায়িত্ব ভাগাভাগির সংস্কৃতি এবং মাতৃত্ব-পিতৃত্বকে সম্মান করার প্রবণতা। বাংলাদেশে আজও বহু নারী সন্তান নেওয়ার পর কর্মজীবন থেকে ছিটকে পড়েন। শহরে সীমিত পরিসরে কিছু ডে-কেয়ার থাকলেও গ্রামে সেগুলোর অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। একজন শিক্ষিত নারী মাতৃত্ব গ্রহণ করলেই যেন তার সামাজিক ও পেশাগত পরিচয় মুছে যায়। এই বাস্তবতা পাল্টাতে না পারলে শুধু ‘সংখ্যা’ দিয়ে দেশ গড়া সম্ভব নয়।

আমাদের করণীয় কী?

পারিবারিক সহায়তার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে, যেখানে মাতৃত্ব কেবল নারীর একক দায়িত্ব নয়, বরং পরিবার ও সমাজের সম্মিলিত দায়িত্ব। নারীর কর্মক্ষেত্রে অধিকার ও সুযোগ বাড়াতে হবে, বিশেষত মাতৃত্বকালীন সময় ও পরে। প্রজনন স্বাস্থ্য, যৌন শিক্ষা ও দায়িত্বশীল পিতৃত্ব বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে, যাতে সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় সচেতন, যৌথ ও পরিকল্পিত। শিশুদের জন্য মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে হবে—ডে-কেয়ার, পুষ্টি, প্রাথমিক শিক্ষা ও নিরাপত্তা।

কিন্তু সংকটের মাঝেই সম্ভাবনার দরজা

যেখানে পশ্চিমা বিশ্ব ধীরে ধীরে কর্মক্ষম জনসংখ্যার সংকটে নিপতিত হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের রয়েছে বিশাল ও তরুণ জনগোষ্ঠী—যেটি একদিকে যেমন সম্ভাবনা, তেমনি আরেকদিকে বিশাল দায়িত্ব।

কিন্তু যদি আজই আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে—
• সময়োপযোগী ও চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা,
• প্রযুক্তিনির্ভর ও বহুভাষিক দক্ষতা,
• নৈতিকতা ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতায় কার্যকর প্রস্তুতি
দিয়ে গড়ে তুলতে পারি—তবে বাংলাদেশ হতে পারে ভবিষ্যতের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানবসম্পদ সরবরাহকারী দেশ।

জার্মানি, সুইডেন, জাপান, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া বা চীন—এই দেশগুলো আগামী দশকে অভিবাসী কর্মীর জন্য চাহিদায় পরিপূর্ণ হবে। তখন বাংলাদেশ যদি প্রস্তুত থাকে, তবে শুধু রেমিট্যান্সের প্রবাহ নয়, বিশ্বব্যবস্থায় নেতৃত্ব দেওয়ারও সুযোগ তৈরি হবে।

ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হলেও নেতৃত্বের সম্ভাবনা এখনই

একটি তরুণ শ্রমশক্তির জাতি হয়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ চাইলে দুটি কাজ একসাথে করতে পারে- নিজস্ব শ্রমবাজারে উৎপাদনশীলতা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো, এবং বিশ্বের জনসংখ্যা সংকটে সহানুভূতিশীল, দক্ষ, মানবিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শ্রমশক্তি রপ্তানি করা।

এই যুগে যারা নেতৃত্ব দিতে চায়, তাদের শুধু সমস্যা দেখা যথেষ্ট নয়—সমাধান খুঁজে নেয়ারও সাহস থাকতে হয়। বাংলাদেশ সেই সাহস দেখাতে পারে। যেখানে বিশ্ব ভবিষ্যতের দোটানায় দিশেহারা, বাংলাদেশ সেখানে হয়ে উঠতে পারে আশা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। যেখানে অন্যরা নৈরাশ্যে স্তব্ধ, আমরা সেখানে হতে পারি সাহস, সদিচ্ছা ও সম্ভাবনার প্রতিনিধি।

শেষ কথা

সন্তান নেওয়া আজ আর নিছক ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি এক গভীর সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও নৈতিক প্রশ্ন। সুইডেনের অভিজ্ঞতা আমাদের শেখায়—আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি, ভবিষ্যৎকে সত্যিই বাসযোগ্য করে তুলতে না পারলে নতুন প্রাণের আগমনে মানুষ দ্বিধায় পড়বেই। তবে বাংলাদেশের সামনে আজ এক দুর্লভ সুযোগ—এই ঘোলাটে বিশ্বে যদি আমরা নিজেদের প্রস্তুত করতে পারি, তবে আমরাই হয়ে উঠতে পারি সেই জাতি, যে বিশ্বকে শুধু শ্রমশক্তি নয়, নেতৃত্ব ও নৈতিকতার আলোকবর্তিকা দেবে। সারাদিন দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের পেছনে সময় নষ্ট না করে নিজের ভবিষ্যতের কথা ভাবুন। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে হলে প্রয়োজন আত্মনির্ভরতা। গড়ে তুলুন নিজেকে একজন গ্লোবাল নাগরিক হিসেবে—ভাষায়, দক্ষতায় ও মানসিকতায়। এখনই সচেষ্ট হোন। দেখবেন, ভাগ্যের দরজা আপনার জন্য খুলে গেছে।

রহমান মৃধা
সুইডেন প্রবাসী বাংলাদেশি
গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

আগে ছিল ঘুষখোর, পরে দুর্নীতিবাজ, এখন হয়েছে চাঁদাবাজ: উন্নয়নের উল্টো পদচিহ্ন

Published

on

এক্সিম ব্যাংক

বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের গল্প আজকাল পত্রিকার পাতায়, টেলিভিশনের ঘোষণায় কিংবা নেতার মুখে মুখে শোনা যায়—‘দেশ বদলে গেছে’, ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান’, ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়েছে’, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তব’। কথাগুলো শুনতে যেমন চমকপ্রদ, বাস্তবে তেমনই একটা নির্মম প্রশ্নও উঁকি দেয়—এই উন্নয়নের সুবিধাভোগী কারা? এবং উন্নয়ন বলতে আমরা কি কেবল ভবন, সেতু, কিংবা GDP বুঝি, নাকি মানুষ ও মনুষ্যত্বেরও কোনো মানদণ্ড আছে? একসময় যাদের আমরা বলতাম ঘুষখোর, তারা ছিল লোকচক্ষুর আড়ালে; একটা টেবিলের নিচে টাকার খাম গলিয়ে দিতো, লজ্জা একটু ছিল, ভয়ও ছিল আইনের। তারপর তারা হলো দুর্নীতিবাজ—পদে বসে ক্ষমতার খোলস গায়ে দিয়ে টেন্ডার ভাগাভাগি, ব্যাংক লোন লুট, প্রজেক্ট বাজেট ফাঁকি—সবই নীতির নামে বৈধ করে ফেললো। এখন তারা চাঁদাবাজ, যারা আর লুকায় না, প্রকাশ্যেই বলে—‘এক্সট্রা দিতে হবে ভাই, নাহলে কাজ হবে না।’ এটা শুধু দুর্নীতির বিবর্তন নয়, এটা একটা জাতির বিবেক হারানোর ইতিহাস।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বাংলাদেশের সংবিধানে লেখা আছে— ‘রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব হবে জনগণের কল্যাণ সাধন।’ কিন্তু বাস্তবে রাষ্ট্র যেন এক সিন্ডিকেট চালিত পণ্যবাজার—যেখানে প্রশাসন, পুলিশ, রাজনীতি, ব্যবসা এমনকি বিচারব্যবস্থাও অনেক ক্ষেত্রে একটি জালায় বাঁধা, যার মধ্যে সৎ থাকতে গেলে ডুবে যেতে হয়। ১৯৭১-এর যুদ্ধ ছিল একটি মুক্তির স্বপ্ন। তখন সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদ ছিল মেজর জেনারেল, সীমিত শক্তি, সীমিত সুযোগ, কিন্তু ছিল একরকম দেশপ্রেম। সময়ের সাথে সাথে যখন পদোন্নতি হলো—লেফটেন্যান্ট জেনারেল, তারপর জেনারেল—তখন কি শুধু দপ্তর বড় হলো, নাকি লোভও বড় হলো? একদিকে জিপি লাইন, পাজেরো, প্রটোকল, অন্যদিকে গরিব রিকশাচালক, অসুস্থ কৃষক, চাকরির জন্য হাহাকার করা তরুণ। উন্নয়নের তুলাদণ্ড কি দু’পাশে সমান ভার বহন করেছে? রাষ্ট্র যখন নাগরিকের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়, তখন নাগরিক হয় নিঃস্ব—অথবা বিক্রি হয়ে যায়। আজকের যুবক চাকরির আশায় ঘুষ দেয়, শিক্ষকতা পেতে ঘুষ দেয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হতে ঘুষ দেয়। তারপর যখন সে চাকরিটা পায়, তখন প্রথম কাজ হয় সেই ঘুষের টাকা সুদে আসলে তুলতে হবে—ঘুষ খেতে হবে, চাঁদা তুলতে হবে, মানুষকে জিম্মি করতে হবে। এভাবে দুর্নীতি একটা চাকরির অনুষঙ্গ হয়ে যায়, আর চাঁদাবাজি হয়ে যায় নৈতিকতার পরিণতি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

যে রাষ্ট্রের হাসপাতাল অচল, শিক্ষাব্যবস্থা লুটেরাদের হাতে, বিচারব্যবস্থা পক্ষপাতদুষ্ট, গণমাধ্যম ভীত, সেই রাষ্ট্র কিসের উন্নয়ন দেখাচ্ছে? রাষ্ট্র যদি মানুষকে সুশিক্ষা, সুবিচার, এবং নিরাপদ জীবন দিতে না পারে, তাহলে সেটা কেবল একটি ক্ষমতার যন্ত্র—যা দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, আর চাঁদাবাজদের জন্য অপারেশনাল। একটা সময় ছিল—স্কুলের দেওয়ালে লেখা থাকত, “জ্ঞানই শক্তি”, কিংবা “কৃষিই জাতির মেরুদণ্ড”। কিন্তু আজকে এই কথাগুলো কেবল দেয়ালে রয়ে গেছে, বাস্তবতায় তারা মুছে গেছে। বরং এখন যেন রাষ্ট্রের অদৃশ্য সংবিধান হচ্ছে—‘ঘুষ দাও, চাঁদা দাও, অন্যথায় তোমার অস্তিত্ব থাকবে না।’

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আমরা যে প্রজন্ম তৈরি করছি, তারা চোখ থাকতেও অন্ধ। একদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁস, অন্যদিকে স্কুলশিক্ষকের গায়ে হাত তোলা—এই সবই একই সমাজের চিত্র। আজকের শিক্ষা ব্যবস্থায় নেই নৈতিকতা, নেই চিন্তার স্বাধীনতা, নেই কর্মমুখী দিকনির্দেশনা।

বিশ্ববিদ্যালয় এখন দলীয় অফিসে রূপ নিয়েছে, আর ছাত্ররাজনীতি মানে অস্ত্র, দখল আর ভয় দেখানো। শিক্ষক হয়ে উঠেছেন শোষণ ও নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র, আর ছাত্র হয়ে উঠেছে ক্ষমতাবানের ভবিষ্যৎ বাহিনী।

জেনে হোক কিংবা না জেনে, আমরা গড়ে তুলছি এক নিষ্প্রভ, মেধাহীন ও চাটুকার প্রজন্ম—যাদের হাতে তুলে দিচ্ছি প্রশ্নফাঁস, গাইড বই, কোচিং নির্ভরতা, ঘুষ দিয়ে পাওয়া নিয়োগপত্র, আর ক্যাম্পাসজুড়ে দলীয় ক্যাডারতন্ত্র। যে শিক্ষার হাত ধরে জাতি গড়ার কথা ছিল, সেই শিক্ষাই আজ জাতি ভাঙার কারখানায় পরিণত হয়েছে।

আমরা মুখে সৃজনশীলতার কথা বলি, অথচ পাঠ্যবই মুখস্থ ছাড়া পাসের সুযোগ নেই। আমরা নৈতিকতার কথা বলি, অথচ শিক্ষকের চাকরি হয় টাকার বিনিময়ে। যেখানে শিক্ষকই ঘুষ দিয়ে আসেন শ্রেণিকক্ষে, সেখানে ছাত্র কেন শিখবে সততার পাঠ? আর যখন রাষ্ট্র নিজেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ‘তেল মন্ত্রণালয়’তে রূপ দেয়, তখন তরুণ প্রজন্মের মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়াটাই তো স্বাভাবিক।

আমরা দেশজ উৎপাদনের চেয়ে আমদানিকে বড় করে তুলেছি। কৃষক যখন মাঠে ফসল পচিয়ে ফেলে দেয়, তখনই বাজারে ঢুকে পড়ে বিদেশি চাল, ডাল, পেঁয়াজ। কৃষকের পাশে দাঁড়ায় না কেউ—না সরকার, না মিডিয়া, না ব্যাংক। ঘুষ দিয়ে তাকে কিনতে হয় সেচের পানি, দালালের কাছ থেকে নিতে হয় সরকারি বীজ-সার। আর সে ফসল যখন ফলায়, তখন বাজারে দাম থাকে না।

শিল্পখাতের চিত্র আরও করুণ। একের পর এক কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, দক্ষ জনশক্তি পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে—দেশে রয়ে যাচ্ছে শুধু অব্যবস্থা আর আমলাতন্ত্রের জঞ্জাল। আমরা এখন একটা “ভোগী জাতি”—নিজে কিছু উৎপাদন না করেই শুধু ভোগ করতে চাই। চীন, ভারত কিংবা তুরস্কের ওপর নির্ভর করেই চলছে আমাদের অর্থনীতি। অথচ সরকার বলে—“আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছেছি।” প্রশ্ন হলো—এই উন্নয়ন কার জন্য? যেখানে গার্মেন্টস শ্রমিক ১২ ঘণ্টা খেটে ১২ হাজার টাকা পায়, আর এক প্রকল্প পরিচালক ১ কোটি টাকায় গাড়ি কেনে—সেটি কি উন্নয়ন, নাকি লুণ্ঠনের ছদ্মবেশ? সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র যুবসমাজে। তারা শিক্ষিত হচ্ছে, কিন্তু কর্মসংস্থান পাচ্ছে না। মেধাবী যুবক যখন মাসের পর মাস, বছরের পর বছর বেকার থাকে, তখন একসময় সে বাধ্য হয় বিকল্প খুঁজতে—আর সেই বিকল্পের নাম হয় ‘যুবলীগ’ বা ‘যুবদল’। সেখানে চাকরি নেই, কিন্তু পিস্তল আছে; বেতন নেই, কিন্তু চাঁদা আছে; ভবিষ্যৎ নেই, কিন্তু মাদক আছে। রাষ্ট্র তার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শক্তি—তরুণ সমাজকে—নিজেই অস্ত্র তুলে দিচ্ছে, গডফাদারদের ছত্রছায়ায় গড়ে তুলছে একেকটি সন্ত্রাসী ইউনিট।

আজকের ছাত্র রাজনীতি মানেই চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, টিকটকে ‘লাইভ মারামারি’। একজন তরুণ যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেও তিন বছর ধরে চাকরি খুঁজে পায় না, তখন তার স্বপ্ন আর কৃষি, স্টার্টআপ, প্রযুক্তি কিংবা শিল্পের দিকে যায় না—গিয়ে পড়ে রাজনৈতিক ছত্রছায়ার বন্দুকের নিচে। রাষ্ট্র যখন তার যুবসমাজকে স্বপ্ন না দিয়ে অস্ত্র দেয়, তখন সে রাষ্ট্র কেবল মেরুদণ্ডহীনই হয় না—সে আত্মঘাতী হয়ে ওঠে।

গণতন্ত্রে বলা হয়, “মানুষই মালিক।” কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় সাধারণ মানুষ যেন কেবল ভোটের দিনই মানুষ, তারপর সে হয়ে যায় এক নির্বাক, অধিকারহীন ভিখারি। রাস্তা বানানো হয় ভিআইপি’র জন্য, হাসপাতালের উন্নয়ন হয় বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য, আর নীতি নির্ধারিত হয় কর্পোরেট ক্লাবের কাচঘেরা কক্ষে বসে। কৃষক, শ্রমিক, প্রবাসী শ্রমজীবী—তারা যেন কেবল উন্নয়নের ভাষণকে অলংকৃত করার জন্য ব্যবহৃত হয়, কিন্তু নীতির কেন্দ্রে নয়।

প্রশ্নটা বারবার ফিরে আসে—এই রাষ্ট্রটা কার? যাদের ঘামে পথ তৈরি হয়, গায়ে রোদ লাগে, তারাই কি এই রাষ্ট্রের মালিক? না কি তারা, যাদের টাকা সুইস ব্যাংকে, সন্তান বিদেশে পড়ে, বছরে একবার দেশে আসে, আর টকশোতে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে? রাষ্ট্র হওয়া উচিত সেই মানুষের, যিনি অন্যের ঘর তৈরি করতে গিয়ে নিজের ঘর বানাতে পারেন না। রাষ্ট্র হওয়া উচিত সেই শিক্ষকের, যিনি ছাত্রকে স্বপ্ন দেখান অথচ বেতন পান দেরিতে। রাষ্ট্রের কাজ হলো অসম্ভবকে সম্ভব করা, প্রতিভাকে জায়গা করে দেওয়া, শ্রমিকের ঘামে মাথা উঁচু করা। কিন্তু আজ রাষ্ট্র বন্দি—ধনীদের হাতে, ক্ষমতাবানদের শিকলে। আর যারা রাষ্ট্র চালায়, তারা মানুষকে দেখে ভোটের সংখ্যা হিসেবে, হৃদয়ের সত্তা হিসেবে নয়।

এই প্রশ্ন আজ আমাদের সামনে দাঁড় করিয়েছে—আমরা কাদের জন্য রাষ্ট্র গড়ছি? এমন এক রাষ্ট্র, যেখানে ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না, হাসপাতালে সেবা নয় বরং রাজনৈতিক সভার জন্য স্টেজ বানানো জরুরি, যেখানে মেধার চেয়ে পরিচয়, সততার চেয়ে সদস্যপদ বেশি কার্যকর। সেই রাষ্ট্রের কোনো গর্ব থাকতে পারে না। কেন এক সৎ শিক্ষক হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করেন, আর এক চাঁদাবাজ যুবক জনপ্রতিনিধি হয়ে ওঠে? কেন উন্নয়ন মানেই হয় ভবন, রাস্তা, ব্যানার আর বিজ্ঞাপন—কিন্তু সেই উন্নয়নে থাকে না সাধারণ মানুষের স্বপ্ন, কান্না, জীবন?

আমরা চাই এমন এক রাষ্ট্র, যেখানে শিক্ষক হবেন জাতির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, যুবক হবে হিরো, কৃষক হবে গর্বের প্রতীক। যেখানে পুলিশ হবে মানুষের রক্ষক, কোনো দলের নয়। বিশ্ববিদ্যালয় হবে আলোর মিনার, যেখানে ছড়াবে জ্ঞানের শক্তি, মাদকের ভয় নয়। এখন সময় প্রশ্ন তোলার। এখন সময় “না” বলার। না ঘুষকে, না দুর্নীতিকে, না চাঁদাবাজিকে। রাষ্ট্র যদি মানুষের না হয়—তবে মানুষকেই রাষ্ট্র হয়ে উঠতে হবে।

আসুন, আমরা ভণ্ড মুখোশটা সরাই। জিডিপি নয়, আমরা বিচার করি—মানুষ হাসছে কি না। যদি মানুষ না থাকে, তাহলে উন্নয়ন কিসের জন্য? আজ দুর্নীতি আর অপরাধ নয়, সামাজিক দক্ষতা হয়ে উঠেছে। সৎ মানুষকে আমরা বলি বোকা, নির্লজ্জ চাঁদাবাজকে বলি স্মার্ট। এই মানসিকতা না বদলালে ‘উন্নয়ন’ কেবল কাগজে থাকবে—মানুষের জীবনে আসবে না।

আজ প্রয়োজন একটি নৈতিক মুক্তিযুদ্ধ—একটি সাহসী, সৎ ও গণমুখী সংগ্রাম, যেখানে চাঁদাবাজিকে ঘৃণা করা হবে, ঘুষখোরদের জনতার কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে, আর রাষ্ট্র একদিন সাহস করে নিজের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলবে— জনগণ রাষ্ট্রের কর্মচারীদের সেবক নয়, বরং কর্মচারীরাই জনগণের সেবক; এটাই একটি মানবিক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সত্যিকার আত্মা। যদি প্রতিজ্ঞা করি—আমি আবার জনগণের রাষ্ট্র হতে চাই। আমরা কি প্রস্তুত সেই প্রতিশ্রুতি পালন করতে?

রহমান মৃধা, সুইডেন প্রবাসী বাংলাদেশি, গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

রিজার্ভ বাড়ছে অথচ রেমিট্যান্স যোদ্ধারা উপেক্ষিত: কৃতজ্ঞতার মুখোশে জাতীয় বিস্মরণ?

Published

on

এক্সিম ব্যাংক

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি অর্থনৈতিক মাইলফলক। কিন্তু এই সাফল্যের পেছনে যারা দিনরাত ঘাম ঝরিয়ে, প্রবাসের মাটিতে কষ্ট সয়ে একেকটি ডলার পাঠাচ্ছেন, সেই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের যথার্থ স্বীকৃতি কোথায়? কে তাদের নাম উচ্চারণ করছে? কে তাদের জন্য দাঁড়াচ্ছে?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

রাজনীতিবিদরা যখন এ অর্জনের কৃতিত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে ব্যস্ত, তখন প্রকৃত নায়করা থেকে যাচ্ছেন অগোচরে, অবহেলিত এক শ্রেণি হিসেবে। রাষ্ট্র যেন ইচ্ছাকৃতভাবেই ভুলে যাচ্ছে, এই অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি আসলে কারা।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

প্রবাসজীবনের প্রতিটি দিনই যুদ্ধ—অচেনা সমাজে টিকে থাকার যুদ্ধ, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতার কষ্ট, বৈষম্য ও দুর্ব্যবহার সহ্য করার লড়াই। এই যোদ্ধারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠান, তাতেই সচল থাকে আমাদের বাজেট, উন্নয়নের রাস্তাঘাট, প্রকল্প আর জনকল্যাণ। অথচ, এর বিনিময়ে তারা পান না রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, সামাজিক সম্মান কিংবা ভবিষ্যতের কোনও নিরাপত্তা।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আজও তারা ভোট দিতে পারেন না—যেন দেশের ভাগ্য নির্ধারণে তাদের কোন অধিকার নেই। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হওয়া উচিত ছিল এই অধিকার নিশ্চিত করা, কিন্তু বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও সেই ন্যূনতম মানবাধিকারটুকু তারা পাচ্ছেন না। এটি কি কেবল প্রশাসনিক ব্যর্থতা, নাকি পরিকল্পিত উপেক্ষা?

তাদের পরিবারগুলোর দিকেও রাষ্ট্রের নজর খুবই কম। দেশে থাকা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের পরিবারের আর্থিক সহায়তা, চিকিৎসা, শিক্ষা, কিংবা জীবননিরাপত্তা — এসব নিয়ে কোনো সুসংহত পরিকল্পনা কি সরকারের আছে? যদি থাকে, তবে তা কি আমরা জানি? আর যদি না থাকে, তাহলে কেন নেই?

সরকার কি কখনও পেনশন পরিকল্পনার কথা ভাবছে এই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য? তাদের সন্তানদের জন্য কি কোনো বিশেষ সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষা বৃত্তি, কোটা বা রাষ্ট্রীয় সহায়তা রয়েছে? যদি থাকে, তাহলে তা জনসম্মুখে প্রকাশ হোক। আর না থাকলে, এখনই সময় তাদের প্রাপ্য সম্মান ও নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য একটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীল অবস্থান গ্রহণ করার।

এই বাস্তবতায় প্রশ্ন জাগে—বাংলাদেশ কি সত্যিই কৃতজ্ঞ? নাকি কেবল সেই কৃতজ্ঞতার মুখোশ পরে বসে আছে, যেটার নিচে লুকিয়ে আছে চরম স্বার্থপরতা?

রিজার্ভের সংখ্যা বাড়া বড় কথা নয়—কৃতজ্ঞতা, সম্মান আর ন্যায়ের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র নির্মাণ করাই বড় কথা। এই রেমিট্যান্স যোদ্ধারা যদি আজ না থাকতেন, তবে আমাদের বাজেটের অঙ্কগুলো কেমন হতো, সে প্রশ্ন আমাদের প্রতিটি নীতিনির্ধারক ও নাগরিকের নিজেকে জিজ্ঞেস করা উচিত।

আমরা কি শুধু সুযোগসন্ধানী এক জাতি? নাকি সত্যিকার অর্থেই শ্রদ্ধাশীল, কৃতজ্ঞ ও ন্যায়বোধসম্পন্ন জাতি হয়ে উঠতে চাই?

রহমান মৃধা
গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com 

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

চ‍্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে ঢাকাতেই বসবাস করতে হবে

Published

on

এক্সিম ব্যাংক

এখন যদি নিরাপত্তাহীনতা, অব্যবস্থা বা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভাবি—তবে বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে যাবে। কারণ গোটা বিশ্বেই আজ স্থিতি ও শান্তির অভাব। ইউক্রেন, গাজা, আফগানিস্তান, সুদান—প্রত্যেকটি অঞ্চল আমাদের শেখাচ্ছে: আজ কোথাও নিরাপদ আশ্রয় নেই। তবুও, যখন গাজার বুলেটবৃষ্টি দেখি, মনে হয় আমরা যারা ঢাকায় বা অন্য কোথাও থাকি, তারা তুলনায় অনেক ভালো আছি। কিন্তু কতদিন?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কয়েক দিন আগেই ঢাকার বিমান দুর্ঘটনায় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের করুণ মৃত্যু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে—আমরা যেন এক ঘুণে ধরা রাষ্ট্রে বসবাস করছি, যেখানে দুর্নীতি শুধু একটি শব্দ নয়, বরং এটি রক্তের মধ্যেও মিশে গেছে। এই দুর্ঘটনা কোনো দুর্ঘটনা ছিল না—এটি ছিল একটি অপরাধ, একটি মৃত্যুর পূর্বঘোষণা, যা রক্ষণাবেক্ষণের নামে লুটপাট, নিরাপত্তার নামে অবহেলা, আর দায়িত্বের নামে দুর্নীতির হাত ধরে আসছিল বহুদিন ধরে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

দুর্নীতি কীভাবে প্রতিরক্ষা বাহিনী পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, সেটাই এখন আরেকটি বড় প্রশ্ন। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে সামরিক বাহিনীর ভেতরের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থায়ও আজ প্রশ্নের জন্ম হচ্ছে। দুর্নীতি, গাফিলতি ও অপেশাদারিত্ব মিলিয়ে আজ পুরো নিরাপত্তা খাতটাই নৈতিকভাবে ভেঙে পড়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তাহলে কে রক্ষা করবে বাংলাদেশকে? সরকার? বিরোধী দল? সামরিক বাহিনী? বুদ্ধিজীবী সমাজ? নাকি সেই সাধারণ মানুষ, যারা প্রতিদিন টিকে থাকার লড়াই লড়ছে? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো এখনো মেলেনি। কিন্তু আরেকটি প্রশ্ন আজকের বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে তুলছে—

কী পরিমাণ দুর্নীতি হলে একটি দেশের হাসপাতাল থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা বাহিনী পর্যন্ত রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুণে ধরে?
আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন?

যখন—
• হাসপাতাল রোগী মারে,
• চিকিৎসক হয়ে ওঠে দালাল,
• শিক্ষক হয়ে ওঠে সেশন ফি ব্যবসায়ী,
• প্রশাসন হয়ে ওঠে চাঁদাবাজ,
• মসজিদে উঠে আসে রাজনীতির চোরাগলি,
• মন্দিরে বাজে তদবিরের সুর,
• ঘরে নেই শান্তি,
• বাইরে নেই নিরাপত্তা,
• আর কবর পর্যন্ত নিতে হয় ঘুষ—

তখন বলুন, কোথায় যাবেন আপনি? আর কোথায় আপনি নিরাপদ? এই দেশ, এই রাষ্ট্র, এই ঢাকা—সবই কি কিছু সুবিধাভোগী আর দুর্নীতিবাজদের জন্যই? নাকি এখনো কিছু মানুষ বাকি আছে, যারা বলবে—না, আর না। এবার সত্যকে ঢেকে রাখব না। এবার জেগে উঠতেই হবে। এতকিছুর পরেও কি সবকিছু ঢাকতেই থাকবে, হতে থাকবে? নাকি এবার ঢাকায় থেকেই আমরা বলব—এখান থেকেই শুরু হবে পরিবর্তনের ঝড়?

বিশ্বের কোথাও এখন আর শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ বা ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থার নিশ্চয়তা নেই। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, গাজা-ইসরায়েল সংঘাত, আমেরিকার অভ্যন্তরীণ বিভাজন, ফ্রান্সের দাঙ্গা, আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলোর অভ্যুত্থান—সবকিছু বলে দিচ্ছে, নিরাপত্তাহীনতা এখন কেবল কোনো একটি দেশের সমস্যা নয়—এটি এক বৈশ্বিক ব্যাধি। কিন্তু এই প্রেক্ষাপটের মধ্যেই বাংলাদেশের পরিস্থিতি আলাদা, কারণ এখানে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, অব্যবস্থা ও নৈতিক দেউলিয়াপনা রাষ্ট্রকে ভিতর থেকে গিলে খাচ্ছে।

এবং এই গিলে খাওয়ার প্রক্রিয়া এখন আর রাজনৈতিক গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নেই। এটি ঢুকে পড়েছে প্রশাসন, প্রতিরক্ষা, পরিবহন, চিকিৎসা, শিক্ষা—সব খাতে। সবচেয়ে বড় কথা, এখন দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও জাতীয় আত্মার ভেতরেও।

সুতরাং, যদি আমরা কিছু না করি, তাহলে কী দাঁড়াবে শেষটায়?
• দুর্নীতি অব্যাহত থাকবে
• অব্যবস্থাপনার কারণেই মৃত্যু ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে ধামাচাপা পড়বে
• গাজা আমাদের জন্য এক রূপক হয়ে উঠবে — “আমরাও এক অন্তর্জাত যুদ্ধক্ষেত্র”
• রাষ্ট্র ক্রমশ তার আত্মাকে হারাবে, নাগরিক হারাবে বিশ্বাস, আশা, এবং সর্বোপরি—জীবনের অর্থ

আপনি যদি প্রশ্ন করেন—কে রক্ষা করবে বাংলাদেশকে? উত্তর একটাই—আপনি। আপনার বিবেক, আপনার কণ্ঠস্বর, আপনার প্রতিবাদই পারে এই দেশকে রক্ষা করতে। বাকি কেউ আসবে না।

এতকিছুর পরেও সব কিছু কী ঢাকতেই থাকতে হবে, হতে হবে? একটি দেশের আকাশে আগুন জ্বলে—আর আমরা তার ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করি। একটি পাইলট মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেন শহর বাঁচাতে—কিন্তু তার আত্মত্যাগ ধামাচাপা পড়ে যায় দায়সারা তদন্ত আর অপ্রকাশিত রিপোর্টের আড়ালে। আমাদের চারপাশে প্রতিদিনই ঘটে যাচ্ছিল ছোট ছোট বিপর্যয়—আর আমরা বলছিলাম, “এটাই তো বাংলাদেশ!”

কিন্তু আজ যখন এই মৃত্যুর কণ্ঠস্বর আমাদের ঘুম ভাঙায়, তখন অন্তত প্রশ্নটা তোলা জরুরি হয়ে পড়ে:

এতকিছুর পরেও কি সবকিছু ঢাকতেই থাকবে? সরকারি বিবৃতি দিয়ে? সামরিক গোপনীয়তার নামে? জাতীয় ভাবমূর্তির কথা বলে? না কি জনতার নিরবতা দিয়ে? বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কি শুধুই ঢাকার উপর নির্ভর করবে—অর্থাৎ, রাজধানী ঢাকার, কিছু ক্ষমতাবান ব্যক্তির, কিছু নামমাত্র প্রতিষ্ঠানের দয়া বা দৌরাত্ম্যের ওপর? না কি সেই ঢাকা একদিন সত্যিই হবে বিবেকের রাজধানী—যেখানে প্রতিটি মৃত্যু প্রশ্ন তোলে, প্রতিটি অন্যায় প্রতিরোধ পায়, প্রতিটি নাগরিক জবাবদিহি দাবি করে?

আমরা কী শুধুই একটি দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবস্থার ভেতরে বেঁচে থাকবো? নাকি বেছে নেবো বেঁচে ওঠার সাহস? এই লেখার শেষ পঙক্তি যদি আপনি মন দিয়ে পড়েন—তবে এটিই আপনার কাছে আমার অনুরোধ, আমার আহ্বান:

তথ্য ঢেকে রাখার সংস্কৃতি শেষ হোক। সত্য কথা বলার সাহস শুরু হোক। বাংলাদেশের প্রাণটুকু যেন শুধু ঢাকায় আটকে না থাকে-সে ছড়িয়ে পড়ুক জনগণের চেতনায়, হৃদয়ে, এবং শেষমেশ—প্রতিবাদে।

রহমান মৃধা
গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com 

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

এক্সিম ব্যাংক এক্সিম ব্যাংক
আইন-আদালত4 hours ago

এক্সিম ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ক্রোকের নির্দেশ

ব্যাংক এশিয়ার প্রায় ৩৮৯ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মামলায় এক্সিম ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ক্রোক (জব্দ) করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার...

এক্সিম ব্যাংক এক্সিম ব্যাংক
পুঁজিবাজার22 hours ago

ব্লকে ১১ কোটি টাকার লেনদেন

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্লকে মোট ২৪টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মোট ২৬ লাখ ১৬ হাজার...

এক্সিম ব্যাংক এক্সিম ব্যাংক
পুঁজিবাজার22 hours ago

নগদ লভ্যাংশ পাঠিয়েছে ম্যারিকো বাংলাদেশ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড গত ৩১ ডিসেম্বর,২০২৫ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য ঘোষিত নগদ লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রেরণ করেছে। ...

এক্সিম ব্যাংক এক্সিম ব্যাংক
পুঁজিবাজার23 hours ago

নগদ লভ্যাংশ পাঠিয়েছে মার্কেন্টাইল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মার্কেন্টাইল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স পিএলসি গত ৩১ ডিসেম্বর,২০২৪ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য ঘোষিত নগদ লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রেরণ করেছে।...

এক্সিম ব্যাংক এক্সিম ব্যাংক
পুঁজিবাজার23 hours ago

ট্রাস্ট ব্যাংকের সর্বোচ্চ দরপতন

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি। সোমবার (০৪ আগস্ট)...

এক্সিম ব্যাংক এক্সিম ব্যাংক
পুঁজিবাজার23 hours ago

দর বৃদ্ধির শীর্ষে তিতাস গ্যাস

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৭ কোম্পানির মধ্যে ১২২টির শেয়ারদর বেড়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে...

এক্সিম ব্যাংক এক্সিম ব্যাংক
পুঁজিবাজার24 hours ago

লেনদেনের শীর্ষে যমুনা ব্যাংক

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে যমুনা ব্যাংক পিএলসি। আজ কোম্পানিটির ৩১ কোটি...

Advertisement
AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সোশ্যাল মিডিয়া

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
৩১  
এক্সিম ব্যাংক
জাতীয়18 minutes ago

ঢাকায় পৌঁছেছে ছাত্র-জনতা বহনকারী ৬ ট্রেন

এক্সিম ব্যাংক
জাতীয়42 minutes ago

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত

এক্সিম ব্যাংক
রাজনীতি57 minutes ago

জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ

এক্সিম ব্যাংক
জাতীয়1 hour ago

রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

এক্সিম ব্যাংক
জাতীয়2 hours ago

ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতির পুনর্জন্মের দিন ৫ আগস্ট: প্রধান উপদেষ্টা

এক্সিম ব্যাংক
অর্থনীতি2 hours ago

উদ্বোধনের দিনেই ১০ হাজারের বেশি ই-রিটার্ন জমা

এক্সিম ব্যাংক
অর্থনীতি2 hours ago

রপ্তানি আয় ২৫ শতাংশ বেড়ে ৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার

এক্সিম ব্যাংক
জাতীয়3 hours ago

প্রথমবার শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করলো বিমান

এক্সিম ব্যাংক
অর্থনীতি3 hours ago

ব্যাংকের পর্ষদ সভায় দ্বিমত–পর্যবেক্ষণ কার্যবিবরণীতে লিপিবদ্ধের নির্দেশ

এক্সিম ব্যাংক
রাজনীতি4 hours ago

৫ আগস্টের ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন: তারেক রহমান

এক্সিম ব্যাংক
জাতীয়18 minutes ago

ঢাকায় পৌঁছেছে ছাত্র-জনতা বহনকারী ৬ ট্রেন

এক্সিম ব্যাংক
জাতীয়42 minutes ago

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত

এক্সিম ব্যাংক
রাজনীতি57 minutes ago

জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ

এক্সিম ব্যাংক
জাতীয়1 hour ago

রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

এক্সিম ব্যাংক
জাতীয়2 hours ago

ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতির পুনর্জন্মের দিন ৫ আগস্ট: প্রধান উপদেষ্টা

এক্সিম ব্যাংক
অর্থনীতি2 hours ago

উদ্বোধনের দিনেই ১০ হাজারের বেশি ই-রিটার্ন জমা

এক্সিম ব্যাংক
অর্থনীতি2 hours ago

রপ্তানি আয় ২৫ শতাংশ বেড়ে ৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার

এক্সিম ব্যাংক
জাতীয়3 hours ago

প্রথমবার শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করলো বিমান

এক্সিম ব্যাংক
অর্থনীতি3 hours ago

ব্যাংকের পর্ষদ সভায় দ্বিমত–পর্যবেক্ষণ কার্যবিবরণীতে লিপিবদ্ধের নির্দেশ

এক্সিম ব্যাংক
রাজনীতি4 hours ago

৫ আগস্টের ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন: তারেক রহমান

এক্সিম ব্যাংক
জাতীয়18 minutes ago

ঢাকায় পৌঁছেছে ছাত্র-জনতা বহনকারী ৬ ট্রেন

এক্সিম ব্যাংক
জাতীয়42 minutes ago

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত

এক্সিম ব্যাংক
রাজনীতি57 minutes ago

জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ

এক্সিম ব্যাংক
জাতীয়1 hour ago

রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

এক্সিম ব্যাংক
জাতীয়2 hours ago

ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতির পুনর্জন্মের দিন ৫ আগস্ট: প্রধান উপদেষ্টা

এক্সিম ব্যাংক
অর্থনীতি2 hours ago

উদ্বোধনের দিনেই ১০ হাজারের বেশি ই-রিটার্ন জমা

এক্সিম ব্যাংক
অর্থনীতি2 hours ago

রপ্তানি আয় ২৫ শতাংশ বেড়ে ৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার

এক্সিম ব্যাংক
জাতীয়3 hours ago

প্রথমবার শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করলো বিমান

এক্সিম ব্যাংক
অর্থনীতি3 hours ago

ব্যাংকের পর্ষদ সভায় দ্বিমত–পর্যবেক্ষণ কার্যবিবরণীতে লিপিবদ্ধের নির্দেশ

এক্সিম ব্যাংক
রাজনীতি4 hours ago

৫ আগস্টের ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন: তারেক রহমান