মত দ্বিমত
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি

> সন্ত্রাসী রাজনীতিবিদদের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা বোর্ড দুর্নীতির গভীরে নিমজ্জিত, এবং বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে।
> সদ্য নহাটা (মাগুরা জেলাধীন) হাইস্কুলের অ্যাডহোক সভাপতি নিয়োগে প্রধান শিক্ষকসহ যেসব বিএনপি নেতাকর্মীর নাম উঠে এসেছে, তা শিক্ষাখাতে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র স্পষ্ট করে। প্রতিবেদনে উত্থাপিত তথ্যের ভিত্তিতে, শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত, কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া শুধু জরুরি নয়, বরং সময়ের দাবিতে অবিলম্বে বাস্তবায়ন প্রয়োজন। অন্যথায়, এই অব্যাহত অনিয়ম শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও গভীর সংকটে ঠেলে দেবে।
> শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই ধরনের দুর্নীতি প্রতিরোধ ও প্রতিকার করতেই হবে, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত শিক্ষাব্যবস্থার শিকার হবে।
> এই প্রসঙ্গে একজন মন্তব্য করেছেন—
> “যেখানে স্থানীয় সমাজের সামর্থ্য নাই একটা স্কুলের সভাপতি নির্বাচনের দুর্নীতি ঠেকানোর, ওই সমাজকে সাহায্য করে লাভ কী? ওই সমাজ নিজেই তো সাবালক হয়নি।”
>
> কথাটা শোনার পর আমার বলার কিছু ছিল না। কিন্তু আমি থেমে নেই। কারণ জানেন?
> — Local concern, global solution.
রমজানের শিক্ষা ও আমার মানবিক কার্যক্রম
> রমজান আমার কাছে শুধু ধর্মীয় ইবাদতের মাস নয়; এটি আত্মশুদ্ধি, সহানুভূতি ও মানবতার সেবার এক অনন্য শিক্ষার সময়। এই মাসের শিক্ষা আমি শুধু রমজানেই নয়, বরং সারা বছর ধরে অনুসরণ করার চেষ্টা করি।
> আমি নিয়মিত আমার ইনকামের চল্লিশ শতাংশ ট্যাক্স হিসেবে প্রদান করি, যাতে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে আমার অংশগ্রহণ থাকে। বাকি অর্থের পঁচিশ শতাংশ মসজিদ ও দানের কাজে ব্যয় করি। অবশিষ্ট অংশ দিয়ে জীবনযাপন করি, তবে এর বাইরেও কিছু মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করি, যা মূলত সমাজের কল্যাণ ও ইসলামের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য।
> আমি বিশ্বাস করি, দান বা সাহায্য শুধু তৎক্ষণাৎ সহানুভূতি প্রকাশ নয়, বরং একটি সুন্দর সমাজ গড়ার প্রচেষ্টা। কয়েক বছর আগে আমি একজন শিক্ষককে একটি বাড়ি করে দিয়েছিলাম, যাতে তিনি শিক্ষার্থীদের নিয়ে নির্বিঘ্নে শিক্ষাদান করতে পারেন। উদ্দেশ্য ছিল সবাই মিলে একটি ভালো কাজ করা এবং শিক্ষার মাধ্যমে ইতিবাচক সংস্কৃতি গড়ে তোলা।
আমি প্রায়ই গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই। যখন দেখি—
> • কারো মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই,
> • কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে ধুঁকছে,
> • কারো চিকিৎসার সুযোগ নেই,
> • কেউ পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছে না,
> • অর্থের অভাবে ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে,
> • ভর্তি পরীক্ষার জন্য থাকা-খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না—
> তখন আমি যতটুকু পারি সাহায্যের চেষ্টা করি। মানবতার কল্যাণে কাজ করা, ইসলামের প্রকৃত আদর্শ বাস্তবায়ন করা এবং অন্যদের অনুপ্রাণিত করাই আমার অন্যতম দায়িত্ব বলে মনে করি।
> আমি শিখেছি, দলবদ্ধভাবে কাজ করলে যেকোনো সমস্যার মোকাবিলা করা সহজ হয়। তবে আমার প্রচেষ্টা সবসময় সফল হয়নি। দুর্নীতি সমাজে যেভাবে বিস্তার লাভ করেছে, আমার মানবিক কাজগুলো সে অনুপাতে বাড়েনি। অনেকেই মানবিক কাজকে “বিনিয়োগ” হিসেবে দেখে, স্বার্থ হাসিলের সুযোগ নেয়। কিন্তু আমি এটিকে নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা হিসেবে দেখি—মানুষের কল্যাণই আমার একমাত্র উদ্দেশ্য।
> এবারের রমজানে আল্লাহর রহমতে আমি দুটি উল্লেখযোগ্য কাজ করতে পেরেছি—
> ১. তিন বছর বয়সী শিশুর হার্ট অপারেশন করানো:
> এই শিশুর পরিবার চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে পারছিল না, তাই আমি পাশে দাঁড়াই এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। আলহামদুলিল্লাহ, সবকিছু সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
> দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় হাসপাতালে কাটিয়েছে ছোট্ট মেহজাবিন ও তার মা-বাবা। এখন সে সুস্থতার পথে, এবং ইনশাআল্লাহ, দু’-একদিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবে। আমি প্রার্থনা করি, সে বড় হয়ে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুক।
> ২. একটি স্কুলে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো:
> আমার এলাকার একটি স্কুলে সভাপতির নিয়োগ নিয়ে বিশাল দুর্নীতি হচ্ছিল। আমি এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি, যদিও পথটা সহজ ছিল না।
> শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানুষের গড়ার পবিত্র স্থান—সেখানে দুর্নীতির কোনো স্থান নেই। কিন্তু কিছু মানুষ এটিকে ক্ষমতা, লোভ ও স্বার্থের কেন্দ্রে পরিণত করতে চায়। আমি বিশ্বাস করি, এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর মতোই গুরুত্বপূর্ণ।
> আমি একা কিংবা কিছু কাছের বন্ধুদের সহযোগিতায় মানবিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তবে এই পথে বহু বাধা এসেছে। দুর্নীতি, স্বার্থপরতা ও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ নয়। তবুও আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, কারণ আমি জানি—
> অন্যায় দেখেও চুপ করে থাকা মানে সেটাকে মেনে নেওয়া।
> আমি শিখেছি, সমাজ পরিবর্তন রাতারাতি সম্ভব নয়। এটি সময়সাপেক্ষ, কিন্তু ধাপে ধাপে অগ্রসর হওয়া যায়। একা হয়তো সবকিছু করা সম্ভব নয়, কিন্তু দলবদ্ধভাবে, পরিকল্পিত উদ্যোগের মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব।
> পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগিতা থাকলে সমাজে সত্যিকারের পরিবর্তন আনা সম্ভব। আমি এখনো পুরোপুরি সফল হতে পারিনি, কিন্তু আমার লক্ষ্য থেকে এক মুহূর্তের জন্যও সরে আসিনি। যতদিন পারব, ততদিন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাব।
> তবে আমি শুধু কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করি। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ—কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত—এসবের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে, এর বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে হলে সেই মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
> আমার বিশ্বাস, আমাদের কর্মই আমাদের পরিচয়। তাই আমি যা বলি, তা কাজে করে দেখানোর চেষ্টা করি। কথার সঙ্গে কাজের মিল থাকলে তবেই সমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব।
> আমরা যদি একটি বাস্তব উদাহরণে সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন করি, তা আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে যে এই বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও অনেক অপ্রিয় সত্য এখানে তুলে ধরা হবে, তবুও আমার বিশ্বাস, এটি আমাদের জন্য ইতিবাচক হবে। কারণ, এই প্রতিবেদনটি যদি সিস্টেমের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে আমরা বিষয়টিকে ব্যক্তিগত পর্যায় না গিয়ে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার কাঠামোতে দেখতে পারব। এতে আমাদের বুঝতে সুবিধা হবে এবং ভবিষ্যতে একটি দুর্নীতি-গ্রস্ত সিস্টেমের বিরুদ্ধে কীভাবে সঠিকভাবে লড়াই করা সম্ভব, সে বিষয়ে পথপ্রদর্শন পাবে।
> আমার গত এক মাসের অভিজ্ঞতা থেকে, বিশেষত রামজান মাসে, একটি দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করতে চাই। এই প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু হল মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা গ্রামে অবস্থিত রাণী পতিত পাবনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভাপতি নিয়োগের ঘটনা এবং এর সাথে জড়িত দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব, প্রশাসনিক অনিয়ম, এবং প্রতারণার চিত্র। আমি এখানে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, গণমাধ্যমের তথ্য এবং প্রামাণ্য অডিও ক্লিপের ভিত্তিতে সুষ্ঠু ও নির্মোহ বিশ্লেষণ তুলে ধরছি। এই বিশ্লেষণ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় দুর্নীতির শেকড় কতটা গভীরে প্রোথিত, তা পরিষ্কারভাবে ফুটিয়ে তুলবে।
> নহাটা রাণী পতিত পাবনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির নিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে। স্থানীয় জনগণ, অভিভাবক এবং শিক্ষকরা অভিযোগ জানালেও, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুর্নীতির গোষ্ঠীটি সভাপতির পদ দখল করতে সক্ষম হয়েছে। এই ঘটনায় মূল ভূমিকা পালন করেছে:
> ১. স্কুলের প্রধান শিক্ষক – যিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অপকর্মের সাথে যুক্ত এবং ক্ষমতাসীন সরকারের ছায়ায় দুর্নীতি চালিয়ে এসেছেন।
> ২. বিএনপি নেতা রবিউল ইসলাম নয়ন – যিনি স্থানীয় প্রশাসনকে প্রভাবিত করে, নিজের মনোনীত প্রার্থীকে সভাপতি পদে বসিয়েছেন।
> ৩. উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসার এবং ইউএনও – দুর্নীতির সহযোগিতা করেছেন, সঠিক তদন্ত না করে।
> ৪. যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান – যিনি দায়িত্ব পালনে চরম অনীহা দেখিয়ে, দুর্নীতির প্রসারে প্রশ্রয় দিয়েছেন।
>
> স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, বিএনপি নেতা রবিউল ইসলাম নয়ন এই দুর্নীতির মূল কেন্দ্রবিন্দু। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে:
> • তিনি তারেক রহমানের নাম ব্যবহার করে প্রশাসনের উপর প্রভাব বিস্তার করেছেন।
> • স্কুল পরিচালনা কমিটিতে নিজের অনুসারীদের বসিয়ে, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি করেছেন।
> • চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে জনগণের মতামত উপেক্ষা করেছেন।
> ক্ষমতার ভয় দেখিয়ে শিক্ষকদের নিরপেক্ষ মত প্রকাশের সুযোগ বন্ধ করেছেন।
>
> নহাটা স্কুলের সভাপতির নিয়োগ নিয়ে গণমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে:
> • জেলা প্রশাসক (ডিসি) বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে তিনজন যোগ্য প্রার্থীর নাম পাঠানোর অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু প্রধান শিক্ষক তা অগ্রাহ্য করেন।
> • নয়নের সন্ত্রাসী কার্যক্রম এর বিরুদ্ধে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করেছে।
> • রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে সভাপতি নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে।
>
> শিক্ষা প্রশাসনের দুর্নীতি শুধু নহাটা স্কুলেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অবনতির প্রতিচ্ছবি।
> যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান:
> • নিয়োগ সংক্রান্ত লিখিত দরখাস্ত দাখিল করার পরও দুর্নীতি বন্ধ করতে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেননি।
> • নয়নের স্ত্রীকেই সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্নীতি এবং অপসারণযোগ্যতার চিত্র স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।
>
> এই প্রতিবেদনটি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, প্রশাসনিক দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি বাস্তব চিত্র উপস্থাপন করেছে। এখন সময় এসেছে শিক্ষাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে এবং সৎ, দক্ষ, এবং যোগ্য ব্যক্তিদের প্রশাসনিক পদে বসানোর।
> • দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
> • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দিতে হবে।
> অন্যথায়, যদি এই অনিয়ম অব্যাহত থাকে, তাহলে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তি দুর্বল হয়ে যাবে এবং জাতি একটি অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে চলে যাবে।
> রবিউল ইসলাম নয়ন—সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির কালো অধ্যায়
> মাগুরার প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণকারী রবিউল ইসলাম নয়ন আজ কোটি কোটি টাকার মালিক, কিন্তু তার এই আর্থিক অগ্রগতি আসলে কোন মেধা কিংবা পরিশ্রমের ফলাফল নয়। বরং তার অর্জিত সম্পত্তির পেছনে রয়েছে দখলদারি, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ব্যবসা ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অনিয়মের এক ভয়ঙ্কর চিত্র। এই অসাধু পথেই নয়ন মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই সমাজের এক ভয়ানক সন্ত্রাসী চরিত্রে পরিণত হয়েছেন।
> সম্প্রতি রবিউল ইসলাম নয়নকে ইসলামী ব্যাংক দখল করার চেষ্টার অভিযোগে জড়িত। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি এস আলম গ্রুপের হয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ব্যাংকটি দখল করতে গিয়েছিলেন।
> • নয়ন এবং তার অনুসারীরা জোরপূর্বক ইসলামী ব্যাংকে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন।
> • ব্যাংক কর্মকর্তারা বাধা দিলে এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয়।
> • এ ঘটনায় ৫ ব্যাংক কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
> • নয়ন ও তার দল অস্ত্রধারী ভাড়াটে বাহিনী হিসেবে কাজ করেছিলেন।
> এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, নয়ন শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা স্থানীয় রাজনৈতিক মঞ্চেই নয়, দেশের অর্থনৈতিক খাতেও ভয়ঙ্কর প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছেন।
> ইসলামী ব্যাংক দখল চেষ্টার আগেই, নয়ন আরো একটি বিতর্কিত ঘটনায় জড়িয়েছিলেন—তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকানা নিয়ে চলমান বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি একটি পক্ষকে সমর্থন দেন এবং এই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে চেষ্টা করেন।
> রবিউল ইসলাম নয়ন তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার জন্য তারেক রহমানের নাম ব্যবহার করে যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ হিসেবে নিজের পরিচিতি তৈরি করেন।
> • সাংবাদিক না হয়েও তিনি প্রেস লেখা জ্যাকেট পরিধান করে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন, যাতে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।
> • চাঁদাবাজি, দখল ও অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন।
> • দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশ তার এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে মৌন সমর্থন প্রদান করে, যার কারণে তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
> নয়ন শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ দুর্নীতির সাথে জড়িত নন, বরং তার অপরাধের ছায়া দেশের আর্থিক খাত, রাজনৈতিক অঙ্গন এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানে বিস্তৃত। তার এই ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ড দেশের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার একটি স্পষ্ট উদাহরণ।
> প্রধান শিক্ষকের অপকর্ম এবং নয়ন ও তার বাবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড
> মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা রানী পতিত পাবনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, যিনি দীর্ঘ ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার ছায়ায় থেকে ভয়াবহ দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন, সম্প্রতি যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়নের সাথে হাত মিলিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনার পুরো নিয়ন্ত্রণ দখল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
>
> ১. নিয়োগ বাণিজ্য: বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ লেনদেন হয়ে আসছে।
> ২. সরকারি অনুদান আত্মসাৎ: বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি অনুদান ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে।
> ৩. বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি নিয়ন্ত্রণ: প্রধান শিক্ষক নিজে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য নিজের পছন্দমতো লোকদের পরিচালনা কমিটিতে বসিয়েছেন।
> প্রধান শিক্ষক ও রবিউল ইসলাম নয়নের চক্রান্ত
> প্রধান শিক্ষক তার পুরনো দুর্নীতি ঢাকতে রবিউল ইসলাম নয়নকে সামনে নিয়ে আসেন। নয়ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপ প্রয়োগ করে বিদ্যালয়ের সভাপতি পদ দখল করার চেষ্টা করেন এবং স্থানীয় জনগণের মতামত উপেক্ষা করে নিজের স্বার্থে পরিচালনা কমিটি গঠন করেন।
> নয়ন তার বাবার সাথে মিলে এলাকার এক ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করেছেন। তার বাবা নিজেও একজন কুখ্যাত অপরাধী, যিনি বিভিন্ন দখলদারি, চাঁদাবাজির সাথে যুক্ত ছিলেন। বাবা-ছেলে মিলে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেন।
> বর্তমানে রবিউল ইসলাম নয়ন মাগুরার নহাটা স্কুলসহ পুরো জেলার জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে—
> • স্কুল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি
> • ভূমি দখল ও সাধারণ জনগণকে হুমকি দেওয়া
> • রাজনৈতিক নেতাদের নাম ব্যবহার করে প্রতারণা চালানো
> • অস্ত্রবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ
> এই পর্বে উঠে এসেছে কিভাবে রবিউল ইসলাম নয়ন তার রাজনৈতিক আশ্রয় ও প্রশাসনিক সহযোগিতার মাধ্যমে নিজেকে সমাজের এক ভয়ঙ্কর অপরাধী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
> প্রধান শিক্ষক তার দীর্ঘদিনের দুর্নীতি ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করার স্বার্থে রবিউল ইসলাম নয়নকে ব্যবহার করেছেন। নয়ন ইতিমধ্যেই এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছে এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণকে ভয় দেখিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনায় নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে।
> প্রধান শিক্ষক কীভাবে নয়নকে ব্যবহার করেছে?
> • বিদ্যালয়ে তার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে, নয়নের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে।
> • স্থানীয় অভিভাবক ও শিক্ষকরা যদি সভাপতির স্বচ্ছ নিয়োগের দাবি করেন, তবে নয়ন তাদেরকে ভয়ভীতি দেখায়।
> • পরিচালনা কমিটিতে যোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের আসতে না দেওয়ার জন্য, নয়ন প্রধান শিক্ষকের ইশারায় নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে সমর্থন দেয়।
> নয়নের লাভ কী?
> • বিদ্যালয়ের সভাপতি নিয়োগকে ঘিরে বড় অঙ্কের লেনদেন হয়ে থাকে, যা নয়ন ও তার সিন্ডিকেট ভাগাভাগি করে নেয়।
> • বিদ্যালয়ের প্রশাসন তার নিয়ন্ত্রণে আসার ফলে, ভবিষ্যতে আরো দুর্নীতি করার সুযোগ পায়।
> • প্রধান শিক্ষকের হাত ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতা আরও বিস্তৃত করার সুযোগ তৈরি হয়।
> উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসারের দুর্নীতি
> এই ষড়যন্ত্রের সাথে শুধু প্রধান শিক্ষক ও নয়নই যুক্ত নয়, বরং উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসারের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
> কীভাবে শিক্ষা অফিসাররা দুর্নীতিতে যুক্ত হলো কথা থাকলেও, তারা মূলত প্রধান শিক্ষকের পছন্দের নাম অন্তর্ভুক্ত করে।
> • স্থানীয় অভিভাবকদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে, তারা কেবল সিন্ডিকেটের সুবিধার কথা ভেবে সিদ্ধান্ত দেন।
> • সরকারি নিয়ম ভঙ্গ করে, একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে সচেষ্ট হন।
> উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসার কীভাবে নয়নকে সহায়তা করলো?
> • সভাপতি পদে নিরপেক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রেখে, নয়নের মনোনীত প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করেন।
> • জনগণের অভিযোগ অগ্রাহ্য করে, তদন্ত না করেই নয়নের সুবিধাজনক রিপোর্ট তৈরি করেন।
> • নয়নের সাথে যোগাযোগ রেখে নিয়োগ নিয়ে গোপন আলোচনা করেন।
> নয়ন শুধু প্রশাসনের সাথে নয়, বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতির সাথে নিজের নাম জড়িয়ে বড় নেতা হওয়ার চেষ্টা করে।
> তারেক রহমানের নাম ব্যবহার করে নয়নের প্রতারণা
> • নয়ন নিজেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দাবি করে।
> • কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে, নিজেকে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে উপস্থাপন করে।
> • প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক রেখে, তারেক রহমানের নাম ভাঙিয়ে স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করে।
> • নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও স্বৈরাচারী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক পরিচয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।
> জনগণের প্রশ্ন
> • বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব কি আদৌ নয়নের এসব কার্যকলাপে সমর্থন দিয়েছে?
> • নাকি নয়ন শুধুমাত্র তারেক রহমানের নাম ব্যবহার করে নিজের স্বার্থ হাসিল করছে?
> প্রশাসনের সহায়তায় সভাপতি পদ দখল
> এই পুরো দুর্নীতির নাটকে প্রশাসনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা দপ্তর যদি চায়, তবে দুর্নীতির সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তারা ইচ্ছাকৃতভাবে নয়নকে সহযোগিতা করেছে।
> প্রশাসনের ভূমিকা
> • নয়নের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও, প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
> • রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে নয়নের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ধামাচাপা দেওয়া হয়।
> • দুর্নীতি দমন সংস্থা (দুদক) পর্যন্ত অভিযোগ না পৌঁছাতে, প্রশাসনের লোকজনই বাধা দেয়।
> কীভাবে সভাপতি পদ দখল হলো?
> • প্রধান শিক্ষক ও নয়নের যোগসাজশে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হয়।
> • প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা অফিসাররা দুর্নীতির মাধ্যমে নয়নের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেন।
> • তারেক রহমানের নাম ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো হয়।
> প্রশাসন নিরব থেকে এই দুর্নীতিকে বৈধতা দেয়।
> এটি দেখিয়ে দেয়, কীভাবে নয়ন, প্রধান শিক্ষক, শিক্ষা অফিসার ও প্রশাসন একত্র হয়ে সভাপতি পদ দখল করেছে। রাজনৈতিক ক্ষমতা, দুর্নীতি ও প্রশাসনের সহযোগিতায় সাধারণ জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
> জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের ভূমিকা – দুর্নীতি দমন না করে নয়নের স্ত্রীকে সভাপতি নিয়োগ
> নহাটা রানী পতিত পাবনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির পদ নিয়ে দুর্নীতির চূড়ান্ত রূপ প্রকাশ পায় যখন বিদ্যালয়ের অভিভাবক, শিক্ষক ও সাধারণ জনগণ জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত দরখাস্ত দাখিল করেন।
> রমজান মাসকে সামনে রেখে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চরম নৈতিক অবক্ষয় এবং দুর্নীতির সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত সকল শ্রেণীর কর্মচারী এবং তাদের সাথে আমার গত এক মাসের অভিজ্ঞতার বর্ণনা তুলে ধরতে যাচ্ছি।
> অভিযোগের মূল বিষয়
> ১. সভাপতি পদে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া না হওয়া
> ২. প্রধান শিক্ষক, রবিউল ইসলাম নয়ন ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের দুর্নীতি
> ৩. বিদ্যালয়ের তহবিল লুটপাট ও দখলদারিত্ব
> ৪. নয়নের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ক্ষমতার অপব্যবহার
> এদিকে, অভিযোগ গোপন করে নয়নের স্ত্রীকেই সভাপতি করা হলো, যা দুর্নীতির চরম প্রমাণ!
> লিখিত দরখাস্ত ও জেলা প্রশাসনের নিরবতা
> বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও শিক্ষকরা যখন প্রধান শিক্ষক, উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং নয়নের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেন, তারা জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
> দরখাস্তে উল্লেখিত অভিযোগ
> • সভাপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নয়নের সরাসরি হস্তক্ষেপ
> • প্রধান শিক্ষকের আর্থিক দুর্নীতি
> • বিদ্যালয়ের তহবিল লুটপাট
> • বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করা ও শিক্ষকদের হয়রানি
> • প্রশাসনের দুর্নীতিতে সহযোগিতা
> জেলা প্রশাসকের প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
> • তিনি প্রথমে তদন্তের আশ্বাস দেন, কিন্তু কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেননি।
> • অভিভাবকরা দ্বিতীয় দফায় অভিযোগ দিলে প্রশাসন তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে।
> • উপজেলা শিক্ষা অফিসার তদন্তের নামে প্রহসনমূলক রিপোর্ট তৈরি করেন, যেখানে মূল অভিযোগগুলো উপেক্ষা করা হয়।
> শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের ভূমিকা
> • জেলা প্রশাসকের মতো তিনি-ও অভিযোগ গ্রহণ করেও যথাযথ তদন্ত তিনি করেননি
> • বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডিতে নয়নের স্ত্রীকে সভাপতি করার সুপারিশ করেন।
> • প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির তথ্য থাকা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি।
> দুর্নীতি দমন না করে নয়নের স্ত্রীকে সভাপতি করা হলো কেন?
> যখন অভিযোগ উঠল, তখন স্বাভাবিকভাবে তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু প্রশাসন নয়নের স্ত্রীকেই সভাপতি পদে বসিয়ে দেয়, যা চরম দুর্নীতির প্রমাণ।
> কেন নয়নের স্ত্রীকে সভাপতি করা হলো?
> ১. নয়নের রাজনৈতিক প্রভাব – বিএনপির নাম ব্যবহার করে প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করা
> ২. অর্থের লেনদেন – জেলা শিক্ষা অফিসার ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ঘুষ প্রদান
> ৩. প্রধান শিক্ষক ও নয়নের চক্রান্ত – বিদ্যালয়কে নিজেদের আয়ত্তে রাখার জন্য প্রভাবশালী ব্যক্তি নিয়োগ
> ৪. সন্ত্রাসী ভয়ভীতি – যেকোনো বিরোধী মত দমন করতে নয়নের অনুসারীদের ব্যবহার
এর ফলে কী হলো?
> • প্রতারণার মাধ্যমে সভাপতির পদ নয়নের হাতেই রয়ে গেল।
> • বিদ্যালয়ে স্বচ্ছ প্রশাসন ও উন্নয়নের বদলে আরও দুর্নীতি ও দখলদারিত্ব বেড়ে গেল।
> • বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লো।
> • স্থানীয় জনগণের ন্যায়বিচারের আশা শেষ হয়ে গেল।
> সবশেষে আমরা দেখলাম—
> • কীভাবে জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান দুর্নীতি ঢাকলেন
> • প্রশাসনের নিরবতায় নয়ন আরও শক্তিশালী হলো
> • অভিযোগ জমা দেওয়া হলেও তদন্ত না করে নয়নের স্ত্রীকে সভাপতি নিয়োগ দেওয়া হলো
> এটি শুধু একটি বিদ্যালয়ের দুর্নীতির গল্প নয়, এটি বাংলাদেশের শিক্ষা প্রশাসনের চরম দুর্নীতির একটি বাস্তবচিত্র। যেখানে ক্ষমতা, রাজনীতি ও টাকার লোভে সাধারণ মানুষের অধিকার ধ্বংস করা হয়।
> এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিভাবক, শিক্ষক ও জনগণের লড়াই কি থেমে যাবে, নাকি তারা সুবিচারের জন্য আবার সোচ্চার হবে?
> এই প্রতিবেদনে উপস্থাপিত তথ্যসমূহের সত্যতা যাচাই করা হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন, অডিও ক্লিপ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সরাসরি তথ্যের ভিত্তিতে।
> আমার সরাসরি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দুর্নীতির একাধিক প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে, যা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তদন্ত চলাকালীন, আমি মাগুরার ডিসি এবং যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ডিসির ভাষ্যমতে, তিনি মাত্র দুজন প্রার্থীর নাম পাঠিয়েছিলেন, অথচ স্কুলের পক্ষ থেকে তিনজনের নাম জমা দেওয়া হয়। এতে চেয়ারম্যানের মনে সন্দেহ তৈরি হলেও, তিনি ডিসির সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই তা অনুমোদন করেন।
>
> পরদিন আমি পুনরায় ডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং জানতে পারি যে, তিনি প্রকৃতপক্ষে কেবল দুজনের নামসহ একটি আবেদনই পাঠিয়েছিলেন, তিনজনের নয়। নিয়ম অনুযায়ী, আবেদনটি ডিসির কার্যালয় থেকে সরাসরি যশোর শিক্ষা বোর্ডে যাওয়ার কথা ছিল এবং ডিসির পাঠানো তালিকার ভিত্তিতেই শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
>
> এই অসঙ্গতি নতুন ধরনের দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয়, যা আরও একবার প্রমাণ করে যে দুর্নীতি আমাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থার বাস্তব অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে স্পষ্ট হয়েছে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি, উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসারের অসাধু ভূমিকা এবং নয়ন ও তার অনুসারীদের চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে—
> • প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের সম্পর্ক ছিল গভীর, যা তাদের দুর্নীতিকে আড়াল করতে সাহায্য করেছে।
> • শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখিয়েছেন, ফলে সঠিক নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই নয়নের স্ত্রীকে সভাপতি করা হয়েছে।
> • এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করেছে যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা বোর্ড দুর্নীতির গভীরে নিমজ্জিত এবং বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে।
> এই প্রতিবেদনে উত্থাপিত তথ্যের ভিত্তিতে, শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
> শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই ধরনের দুর্নীতি প্রতিরোধ ও প্রতিকার করতেই হবে, নয়তো ভবিষ্যত প্রজন্ম একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত শিক্ষাব্যবস্থার শিকার হবে।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মত দ্বিমত
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ: প্রশ্ন, গোপনীয়তা ও জনআস্থার সংকট

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও অস্পষ্টতা বিদ্যমান, যার কেন্দ্রে রয়েছে কিছু মৌলিক প্রশ্ন—যেগুলোর উত্তর না পাওয়া মানে জাতির সামনে একটি অন্ধকার পথ খোলা রাখা। জনমনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে: কোথায় দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, এবং কে বা কারা এখন প্রকৃত ক্ষমতার মালিক?
গণআন্দোলনের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক পর্বের অবসান ঘটলেও, নীতিনির্ধারকদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি জনগণের মধ্যে এক ধরনের অবিশ্বাস ও হতাশার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে সেনাপ্রধান এবং সংশ্লিষ্ট সামরিক নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে যেভাবে নীরবতা বজায় রাখা হয়েছে, তা শুধু দুঃখজনক নয়, বরং তা রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপর আস্থা হারানোর অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শেখ হাসিনার ‘সেফ এক্সিট’ ইস্যু, কিছু রাজনৈতিক নেতার দেশত্যাগে সেনা ক্যান্টনমেন্টের সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতা, এবং পরবর্তীতে ভারতের সঙ্গে কৃত্রিম উত্তেজনা তৈরি—সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, একটি অদৃশ্য ও অগোচর ক্ষমতাকাঠামো বাংলাদেশকে একটি নির্দিষ্ট পথে নিয়ে যেতে চায়, যেখানে গণতন্ত্রের চেয়ে “নিয়ন্ত্রিত স্থিতিশীলতা”কেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো, জাতির সামনে এই গোপন অধ্যায়গুলোর সত্য প্রকাশ করা। সত্যকে প্রকাশ্যে না আনলে ইতিহাসে যেমন বিভ্রান্তি তৈরি হয়, তেমনি জনগণের আস্থাও স্থায়ীভাবে ক্ষুণ্ন হয়। ড. ইউনূসের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের নীরবতা বা ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যেখানে তিনিই বহুবার গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলেছেন, সেখানে এই সন্ধিক্ষণে তার সক্রিয়তার অভাব বিস্ময়ের উদ্রেক করে।
নির্বাচন প্রশ্নে কিংবা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে শীর্ষ নেতৃত্বের যে অনীহা বা নিরবতা দেখা যাচ্ছে, তা কেবলমাত্র রাজনৈতিক সংকট নয়—এটি একটি রাষ্ট্রীয় নৈতিকতার সংকটও। জনগণ এখন এমন এক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে, যেখানে প্রশ্ন করা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহের সমান; অথচ প্রশ্নের উত্তর না পেলে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎই অনিশ্চিত।
সুতরাং, এখন সময় এসেছে একটি নিরপেক্ষ, শক্তিশালী এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত তদন্ত কমিশন গঠনের—যা সেনাপ্রধান, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং বিদেশি সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কিত যাবতীয় গোপন অধ্যায় জনসমক্ষে প্রকাশ করবে। একইসাথে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা ও গণমাধ্যমের স্বাধীন অভিমত প্রকাশের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
এই জাতি অনেক কিছু সহ্য করেছে, এখন সে প্রশ্ন করছে। প্রশ্নের উত্তর না দিলে ইতিহাস নিজেই একদিন তার বিচার করবে। তবে এখানে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করলেই চলবে না—দাবি করতে হবে জোর গলায়। তাই আজ সময় এসেছে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রত্যাশা ও জবাবদিহির মুখোমুখি করার।
প্রথমত, সেনাপ্রধান ও সংশ্লিষ্ট সামরিক নেতৃত্বের গোপন তৎপরতা আদৌ কি তাদের সাংবিধানিক দায়িত্বের পরিসরের মধ্যে পড়ে? যদি পড়ে না থাকে, তবে এই বিষয়ে স্পষ্ট তদন্ত হওয়া প্রয়োজন—স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে, যা কেবল সামরিক নয়, বেসামরিক পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হবে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী হিসেবে রাষ্ট্রপতির ভূমিকাও এখানে প্রশ্নবিদ্ধ। সংবিধান অনুযায়ী তিনিই সামরিক বাহিনীর প্রধান, তাহলে এই “গোপন রাষ্ট্রচালনা”র দায়ভার থেকে কি তিনি মুক্ত? তার কাছ থেকে কি কোনো জবাবদিহি আশা করতে পারি?
দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক দলগুলোর নিরবতা কী নির্দেশ করে? এটি কি ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার কৌশলগত প্রতিযোগিতা, না তারা আদৌ জানে না কীভাবে জনগণের পক্ষ নিতে হয়? একথা ভুলে গেলে চলবে না, রাজনীতি যদি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তবে তা দখল হয়ে যায় অদৃশ্য শক্তির হাতে। আজ জনগণ এই রাজনৈতিক নেতাদের কাছে জবাব চায়—তাদের ভূমিকা কি ছিলো, কোথায় তারা দাঁড়িয়ে আছেন?
তৃতীয়ত, জনগণের কী কিছুই বলার নেই? এই রাষ্ট্র তো তাদেরই; এই ভূখণ্ড, এই সংবিধান, এই পতাকা—সবই জনগণের। তাহলে কেন তারা শুধুই দর্শক হয়ে থাকবে? আমাদের দাবি করতে হবে—স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, সেনাবাহিনীর সাংবিধানিক অবস্থান পুনর্ব্যাখ্যা, রাজনৈতিক দলের জবাবদিহিতা এবং রাষ্ট্রপতির স্পষ্ট অবস্থান।
আমাদের দাবি স্পষ্ট:
১. একটি নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন হোক—যা সেনা নেতৃত্ব, শেখ হাসিনার সেফ এক্সিট, ভারতের ভূমিকা ও রাজনৈতিক দলের নিরবতা বিষয়গুলো পর্যালোচনা করবে।
২. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা ও পুনঃগঠন।
৩. রাষ্ট্রপতির একটি প্রকাশ্য বিবৃতি, যাতে তিনি তার অবস্থান পরিষ্কার করবেন—গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে তিনি দাঁড়ান, না নীরব প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে থাকবেন।
৪. রাজনৈতিক দলগুলোর যৌথ সংবাদ সম্মেলন ও অবস্থান স্পষ্ট করা।
৫. জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ—শান্তিপূর্ণভাবে, কিন্তু দৃঢ়তার সাথে—জনসভা, গণশুনানি, এবং তথ্যের দাবিতে সোচ্চার হতে হবে।
শেষ কথা, ইতিহাস অপেক্ষা করে না। যারা আজ নীরব থাকবেন, কাল ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন। আর যারা আজ প্রশ্ন করছেন, তারা আগামীর ভিত্তি নির্মাণ করছেন।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যেসব অর্জন

গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এই সরকারের ৮মাস অতিবাহিত হয়েছে। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে মানুষের বাকস্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার ফিরলেও আইনশৃঙ্খলা আর গণহত্যার বিচারে ধীরগতি নিয়ে অস্বস্তিতে অনেকেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব সমূহ ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ, আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করা, আহতদের সুচিকিৎসা করা ও নিহতদের পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে এবং নির্বাচনের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা। পাশাপাশি সকল খাতে সার্বিক সংস্কার নিশ্চিত করা। এই দাবিগুলোর প্রতি জনগণের প্রত্যাশা ছিল বিশাল এবং তা ছিল যথার্থ। তবে সরকার এই দায়িত্বসমূহ কতটুকু পালন করতে পেরেছে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। আইন শৃঙ্খলা এবং ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের বিচারে সরকারের ধীরগতিতে অসন্তুষ্ট দেশের নাগরিক সমাজ। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারের অতিরিক্ত নমনীয়তা এই দায়িত্ব সমূহ যথাযথ পালনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পতনের ঐতিহাসিক দিন। এর পরবর্তী কয়েকদিনে বিপ্লবী জনতার চাপে সরকারের পতন ঘটে। ড. ইউনূস সে সময়ে প্যারিসে ছিলেন, যার কারণে সরকারের দায়িত্ব গ্রহণে কিছুটা বিলম্ব হয়। তবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের আহ্বানে তিনি সম্মত হনএবং দেশের জনগণও তাকে সমর্থন জানায়। ৮ আগস্ট, ২০২৪-এ তিনি শপথ গ্রহণ করেন প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে, যা ইতিহাসের একটি মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর,দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল বিপর্যস্ত। শেখ হাসিনার সরকার লুটপাট ও দুর্নীতির কারণে ব্যাংকগুলোর তহবিল প্রায় খালি হয়ে গিয়েছিল,এবং ভারতসহ অন্যান্য দেশের ঋণ পরিশোধের চাপ ছিল। এরপর শুরু হয় ভয়াবহ বন্যা, ভারত ত্রিপুরার ডুমুর বাঁধ খুলে দিলে স্রোতের মতো পানি বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়,এবং একযোগে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তবে,এই দুর্দিনে সরকারের পাশাপাশি বহু সামাজিক সংগঠনও মানুষের পাশে দাঁড়ায়।
এমন অবস্থায়, বিভিন্ন ছদ্মাবরণে পতিত সরকারের সমর্থকরা দাবি আদায়ের নামে মাঠে নামে।আনসারদের কর্মসূচি থেকে শুরু করে শ্রমিকদের আন্দোলন,গার্মেন্টস ভাঙচুর,শিক্ষার্থীদের অটোপাশের দাবি- এসব কিছু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে ঘটে। এসব আন্দোলনের পেছনে দেখা যায় সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ।এর মধ্যে একটি বড় ষড়যন্ত্র শুরু হয় ইসকন নেতা চিন্ময় কৃঞ্চ দাসের গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে,যেখানে দেশি-বিদেশি চক্র সাম্প্রদায়িক অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করে। ভারতের টেলিভিশন চ্যানেল মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে এই সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়াতে থাকে। বাস্তবতা হলো, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিই মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া,ভারতীয় গণমাধ্যমসহ কিছু দেশি-বিদেশি চক্র একযোগে ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে থাকে,যা সরকারকে ব্যর্থ করতে তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা ছিল। এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে ৪৯টি ভারতীয় গণমাধ্যম ১২ আগস্ট থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এসব মিডিয়া পণ্য হিসেবে কেবল গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, যা বাস্তবতার কিছুই ছিল না। তবে,এখনো এসব ষড়যন্ত্র থেমে যায়নি। বরং নতুন নতুন আক্রমণ আসতে পারে, যার মোকাবিলা করা কঠিন।
এখন প্রশ্ন হলো, দেশের মানুষ কী চায়! দেশের মানুষ একটি সুন্দর বাংলাদেশ চায়, যেখানে মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার থাকবে। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি হবে,এবং ক্ষমতায় আসা কিংবা টিকে থাকার জন্য কোনো দল বা গোষ্ঠীর গোলামি করবে না। জনগণ স্বাধীনভাবে কথা বলবে,এবং গণমাধ্যমও ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতে সক্ষম হবে। ফ্যাসিস্ট,খুনি ও লুটেরা সবাই বিচারের মুখোমুখি হবে। নির্বাচন শিগগিরই অনুষ্ঠিত হবে এবং সৎ, যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিরা মনোনয়ন পাবে।এমন একটি বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হলে, ড. ইউনূস সরকারের দোষত্রুটি নিয়ে অযথা সময় নষ্ট না করে, ঐক্যবদ্ধভাবে গণ-অভ্যুত্থানের শক্তি একত্রিত করে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
ড. ইউনূস এই দেশের হাল ধরার পর আজ পর্যন্ত কোনো গুরুতর ভুল করতে দেখা যায় নাই। কাউকে তাচ্ছিল্য করে কোনো নোংরা ভাষাও ব্যবহার করেননি। আজ পর্যন্ত এমন কোনো কথা বলেননি যার জন্য আমরা তাঁর প্রতি কেউ বিরক্ত হবে।
ভারত হয়তো তার সোনার ডিম দেওয়া মুরগী হারালো। তবে ভারত বসে নেই । ভারত ট্রাম্পের কাছে গিয়েছে, কূটনৈতিক ভাবে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে, মিডিয়ার মাধ্যমে নানা প্রোপাগাণ্ডা চালিয়েছে। তবুও কি কোনো কূটনীতিক চাপ বাংলাদেশকে দিতে পেরেছে? কারন,ড. ইউনূস এর বৈশ্বিক ইমেজ। অনেকেই বলেছিলো সামিট গ্রুপ,এস আলম গ্রুপের ব্যাংক হিসাব জব্দ করলে অর্থনৈতিক স্থবিরতা আসবে। ড. ইউনূস তাদের সবার ব্যাংক হিসাব ক্লোজ করালেন। উল্টো মানি লণ্ডারিং এর মামলা দিলেন। অর্থনৈতিক অবস্থা আগের চেয়ে উন্নতর দিকে। ৩/৪ মাস ধরে ডলার স্থিশীল রয়েছে। লুট হওয়া ব্যাংকগুলোকে বন্ধ না করে ধিরে ধিরে বাচিঁয়ে তুলছেন !
উগ্রবাদী সংগঠন ইসকন যখন মাঠে নেমেছিলো, তখন ইসকনের উগ্র কর্মীদেরকে ভারত থেকে বিভিন্ন তথ্য দেওয়া হয়েছিলো,’ইউনূস সরকার হিন্দুদের গায়ে আঘাত দিলে তাকে ব্যবহার করে ভারত বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করবে’। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ইসকন সমর্থকরা চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর গায়ে গরম পানি ঢাললো,আইনজীবী সাইফুলকে শহীদ করলো। সরকার যারা গরম পানি ঢেলেছে তাদের সবাইকে গ্রেপতার করেছে। চিন্ময় এর মতো ’র’-এর এজেন্টকে গ্রেপ্তার করলে ভারত বড় ঝামেলা করবে, অথচ চিন্ময়ের গ্রেপতার হওয়াতে অনেক হিন্দু খুশি হয়েছিলো। ভারতকে কোন শব্দ করতে না দিয়ে উলটো পুরো ইসকনকে ঠান্ডা করে দিয়েছেন।
ড: মুহাম্মদ ইউনূস দ্রব্যমুল্যের লাগাম টেনে ধরেছেন। বাজারের সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগের চেয়ে বেশ কমেছে, এমনকি এই রোজাতেও। সয়াবিন তেল নিয়েও যে সংকট ছিলো তা রোজার প্রথম ৫ দিনে সহনশীল ছিল। সর্বশেষ কখন আমরা পিয়াজ ৩০-৩৫ টাকা, ডিমের ডজন ১২০ আর আলু ২০ টাকা, ৪০০ টাকার কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা কেজি,১০০ টাকার তরকারি এখন ৩০/৪০ টাকা ছিল তা অনেকেই ভুলে গেছি।
এদিকে রোজার শেষে ঈদুল ফিতরের উৎসবও আরও রঙিন হয়ে ধরা দিয়েছে দেশবাসীর কাছে। এদেশে চিরায়ত চিত্র সড়কে নাড়ীর টানে ঘরে ফেরা যানবাহনের যাত্রীদের ভোগান্তি। এবার সেই দুর্দশার চিত্রও উধাও! ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িফেরা মানুষের প্রধান রুট ঢাকা-উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে কোনো যানজট নেই। হাইওয়ে পুলিশ ২৪ ঘণ্টা কঠোর শ্রম দিয়ে মহাসড়ক যানজট মুক্ত রেখেছে। একই দৃশ্য দেখা গেছে অন্যান্য মহাসড়কেও। প্রশাসনের আন্তরিক তদারকির কারণে মহাসড়কে নেই যানবাহনের বাড়তি চাপ, দুই-একটি ঘটনা ছাড়া স্বস্তির ঈদযাত্রা দেখা গেছে রাজধানীর সবচেয়ে বড় বাসস্ট্যান্ডগুলোতে। গাবতলী, মহাখালী বাস টার্মিনালের যাত্রীদের অনেকে বলছেন, সড়কে যা ঘটেছে, তা বিশ্বাসই হচ্ছে না তাদের। জীবনে এত নির্বিগ্নে ঈদযাত্রা তারা কখনও করতে পারেনি। ঈদের মধ্যে গত ৪০ বছরেও এমন দৃশ্য দেখেনি দেশের মানুষ।
হাসিনা যাওয়ার সময় আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া থেকেও ঋণ নিয়ে রেখেছিলো। ড.ইউনূস আস্তে আস্তে ঋণ পরিশোধ করা শুরু করেছেন জানুয়ারি থেকে। কাতার থেকে জ্বালানি কেনা হলেও ২৫৪ মিলিয়ন ডলার বকেয়া রেখেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরের মধ্যেই ২৩ এপ্রিল বকেয়া টাকার সর্বশেষ পেমেন্ট দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বিভিন্ন সংস্থার সর্বমোট বকেয়া ছিল ৩.২ বিলিয়ন ডলার। অন্তর্বর্তী সরকার সেটি ৬০০ মিলিয়নে নামিয়ে এনেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব ৪ দিনের জন্য বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। গুতেরেসের সফর এই সরকারের বিশ্বব্যাপি স্বীকৃতি বাড়াবে৷ তাছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন আগামী বছর মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে সেখানে তাদের সাথে ইফতার করতে চান!
ড.মুহাম্মদ ইউনূসের কণ্ঠে যে মমত্ত দেখা যায় তা কৃত্তিম নয়। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক টানে উচ্চারিত তার প্রতিটি শব্দই যেন বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের হৃদয়ের গভীরতম যন্ত্রণার প্রতিধ্বনি হয়ে উঠেছিল। এ ভাষা শুধুই কথা নয়, এ ভাষা ছিল অনুভূতির। একটি হারানো শেকড়ের আহাজারি ও একটি জাতির অস্তিত্ব সংকটের নির্জন কান্না। তার কণ্ঠে কোনো জটিল রাজনীতি নাই,নেই কোনো চাতুরতা বা কূটনৈতিক ভাষা। শুধু এক প্রবীণ মানুষের মমতা আর এক নিঃস্ব জাতির বেদনার প্রতি গভীরতম সংবেদনশীলতা।
ড. ইউনুসের বক্তব্য কখনও অ-কাজের কথা বলেন না। সবচেয়ে বেশী আকর্ষণ করে সেটা হলো তিনি কখনও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করেন না, অস্বীকারও করেন না, ছোটও করেন না আবার মহাভারত বি-শা-লও বলেন না। ইতিহাস ইতিহাসের জায়গায় রেখে দেন। কারও কোন সমালোচনা বা ব্যাঙ্গ করে কথা বলেন না। তিনি কাউকে ভয় দেখান না,প্রতিশোধ নিবেন ও না। তিনি নিজেকে নিয়ে অহংকার করেন না। দুনিয়ার কারও চাটুকারিতাও করেন না। তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন না, রাগ করে কথাও বলেন না। তিনি ঠান্ডা মাথার এক দারুণ খেলোয়াড়। তিনি ভবিষ্যতের কথা বলেন।স্বপ্নের কথা বলেন। তরুণদের এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। তিনি ধর্ম নিয়ে ক্রিটিসাইজ করেন না। তিনি এক অনন্য অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। এটাকেই বলে আন্তর্জাতিক ব্যাক্তিত্ব।
ডঃ ইউনুসের সফলতা যাই হোক না কেন, সুযোগ পেলেই আমরা ড.ইউনুসকে শূলে চড়াই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করি। যেটা না সেটাও বলি। কিন্তু বিগত ৮মাসে ২০০’র অধিক আন্দোলন আর হঠাৎ করে সকল ক্ষেত্রে তীব্র বৈষম্য অনুভূত হওয়া জাতিকে নিয়ে তিনি যে কাজগুলো করছেন সেগুলোর জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোটাও জরুরী।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্জনসমূহ:
১.বিশ্বের ৭৫ তম দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক গুম বিরোধী সনদে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ।
২.আওয়ামী আমলে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির কারণে বাফুফের উপর ফিফা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো৷ বাফুফের উপর সে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ফিফা।
৩.সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ থেকে ৩২ করা হয়েছে।
৪.ধর্ষণের তদন্ত ১৫ দিন এবং বিচার ৯০ দিনের মধ্যে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
৫.সর্বশেষ ৮ মাসে দেশী বিদেশী ঋণ পরিশোধ করেছে ৬২ হাজার কোটি টাকা।
৬. রেমিট্যান্স প্রবাহ বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে । দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে ২৭.৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। যা গতবছরের এই সময়ের তুলনায় ৪ বিলিয়ন বেশি।
৭. বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পতন থেকে রক্ষা করেছেন। রিজার্ভ বেড়ে ২ হাজার ১৪০ কোটি ডলার।
৮. ডলারের দামের পতন ঠেকানো সম্ভব হয়েছে।
৯. রমজানে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার আশংকাকে আশ্চর্যজনকভাবে সফল হয়েছেন। রোজায় জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি।
১০. হাসিনা ও তার পরিবারের একাউন্ট থেকেই উদ্ধার করেছে ৬৩৫ কোটি টাকা।
১১. দেশের খাদ্যপণ্যে ভর্তুকি বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ।
১২. গত ২২ মাসের তুলনায় সর্বনিম্ন মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে এই ফেব্রুয়ারিতে।
১৩. স্কুলের বইগুলোতে হাসিনার উল্টাপাল্টা সিলেবাস আর পারিবারিক তোষামোদির গল্প বাদ দিয়ে সাজানো গোছানো সিলেবাস দেওয়া হচ্ছে।
১৪. এখন থেকে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকেরা পাবেন দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তার মর্যাদা।
১৫. লুট হওয়া ব্যাংকগুলোর নিশ্চিত ধ্বংস হতে রক্ষা করেছেন।
১৬. আদানির কাছে বিদ্যুৎ খাত ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। পুরো রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ভালো আছে।
১৭. রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১৫% এর বেশি। ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে তার সময়ে।
১৮. বিগত বছরগুলোতে বর্ডার কিলিং গড়ে বছরে ৫০০ এর অধিক ছিল। গতবছর ছিল ৫৭৭জন। (তথাকথিত বন্ধুর দ্বারা হত্যা।) ইউনুস সরকারের সময় তা ৭ মাসে ১০ জন।
১৯. দেশটাকে রাজ্য থেকে আবার রাষ্ট্রের মর্যাদায় আসীন করেছেন তিনি। তাই জুলাই বিপ্লবকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলা হয়।
২০. বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে ভারতের সাথে চোখে চোখ রেখে কথা বলার মতো সৎ সাহস একমাত্র প্রফেসর ইউনুসের আছে।
২১. সকল সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব একমাত্র তার পক্ষেই আদায় করা সম্ভব হয়েছে।
২২. বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসে একমাত্র তার আমলেই সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ও ডিজিটাল প্লাটফর্মে তুমুল সমালোচনা ও তার বিরুদ্ধে কুৎসিত ভাষায় অপপ্রচার করা যাচ্ছে। কাউকে তিনি গ্রেফতার করেন নি। যা ফ্যাসিসট জমানায় কল্পনাও করা যেত না।
২৩. প্রবাসীদের ভিআইপি মর্যাদা দিয়েছেন তিনি। ঘোষণা করেছেন রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে।
২৪. তার যোগ্য নেতৃত্বে আরব আমিরাতে বেশ কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি কারাগার থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছে।
২৫. জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে তিনি মাত্র ৭ সদস্যের প্রতিনিধি নিয়ে যোগদান করেন। ফ্যাসিস আমলে প্রতি বহরে থাকতো প্রায় ৩০০ জন। যার বিপুল খরচ জাতি বহন করতো।
২৬. বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র বক্তা তিনি যার প্রতি ঘন্টা বক্তব্যের মূল্য প্রায় কোটি টাকা।
২৭. রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে ফ্যাসিস্ট সরকার। যা মেরামত ও সংস্কার করছেন তিনি।
২৮. প্রতিটি হত্যাকান্ডের বিচার কাজ শুরু করেছেন তিনি।
২৯. রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজে দেশে পাঠানোর জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাতে আগামী ঈদ তারা নিজ ভিটা বাড়িতে করতে পারে।
৩০. বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে যোগ্য রাষ্ট্রনায়ক ড. ইউনুস। পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বাধিক সমাদৃত বাঙালি তিনি।
অনেক কিছু বলা সহজ। গালি দেওয়া সহজ ৷ নির্বাচন দ্রুত চাওয়াও সহজ ৷ হাসিনার রেখে যাওয়া রুগ্ন অর্থনীতিকে যে কারো জন্য এসে ঠিক করতে ঘাম ছুটে যেতো। পারতো কিনা সেটা নিয়েও ঢের সন্দেহ আছে। উপরন্তু, অর্থনীতি, দ্রব্যমূল্য, মুদ্রাস্ফীতি ঠিক রাখতে না পারলে ক্ষমতায় আসলেও যে টিকতে মুশকিল হবে, এটা রাজনৈতিক দলগুলো ভালো করেই জানে।
র্দুনীতিগ্রস্থ একটা দেশ আর ব্যক্তি স্বার্থকেন্দ্রিক একটা জাতিকে ঠিক করতে ড. ইউনুস হয়তো হিমশিম খাচ্ছে অনেক কিছু করতে। প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যদি সম্মত না হতেন তাহলে দ্বিতীয় অন্য কোন ব্যক্তিকে সেই জায়গায় তখন চিন্তা করতে পারিনি।
বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হলো ২০২৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, লাটভিয়া, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্লোভেনিয়া এবং সুইডেনের ভিসা আবেদন এখন থেকে করা যাবে ঢাকার সুইডেন দূতাবাস থেকে। এছাড়াও, পর্তুগাল, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও ক্রোয়েশিয়া তাদের নিজস্ব ভিসা অফিস চালু করেছে ঢাকায়, যা ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারের দক্ষ কূটনৈতিক তৎপরতার ফলে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দীর্ঘদিনের দাদাগিরির রাজনীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটিয়ে সরকার বাংলাদেশিদের জন্য সহজ, স্বচ্ছ এবং দ্রুত ভিসা প্রক্রিয়া নিশ্চিত করেছে। ফলে: ভিসা আবেদনকারী বাংলাদেশিদের জন্য সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। ভিসা প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও সহজ হবে। বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। দক্ষ জনশক্তি, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের জন্য ইউরোপে যাওয়ার পথ আরও উন্মুক্ত হবে।
ড. ইউনুস সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ বিশ্ব মঞ্চে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং জনসাধারণের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘবের এই পদক্ষেপ তার নেতৃত্বের আরেকটি সফলতা। ইউরোপের নতুন দুয়ার উন্মুক্ত হলো- এটি বাংলাদেশের জন্য এক বিশাল অগ্রগতি!
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে সেদেশের সরকার ও চীনা কম্পানিগুলোর কাছ থেকে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে দেশটির প্রায় ৩০টি কম্পানি বাংলাদেশের বিশেষ চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে। এ ছাড়া মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্পে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে চীন। চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা হিসেবে আরো ১৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। অনুদান ও অন্যান্য ঋণ সহায়তা হিসেবে আসবে বাকি অর্থ। বাংলাদেশের বিদ্যমান শুল্ক ও কোটামুক্ত রপ্তানি সুবিধা আরো দুই বছর বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছে চীন। এর আগে চীনা বাজারে ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য এই সুবিধা ছিল। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে চীনা উপ প্রধানমন্ত্রী ডিং জুয়েশিয়াংয়ের এক বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে চীনা উপ প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন।
চীন বাংলাদেশ থেকে আম নিতে আগ্রহী। বাংলাদেশও চীনে আম পাঠাতে চায়। বাংলাদেশ চীনে আম রপ্তানির জন্য ৬ বছর আগে দেশটির কাছে আবেদন করেছিল। তবে নানা জটিলতায় সেটা আর কার্যকর হয়নি। তবে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের মধ্যে দিয়ে সেদেশে আম রপ্তানির দুয়ার খুলেছে। আগামী মে-জুন মাস থেকে চীনে আম রপ্তানি শুরু হবে। এর মধ্যে দিয়ে বিদেশে বাংলাদেশি আমের চাহিদা বাড়বে।
তিস্তা নদী প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক আগেই থেকে চীনের সহায়তা চেয়ে আসছে বাংলাদেশ। এবার প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে এই প্রকল্পে সহায়তার আশ্বাস মিলেছে। তবে শুধু তিস্তা প্রকল্প নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকেননি অধ্যাপক ইউনূস। তিনি নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালনার জন্য চীন থেকে ৫০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান চেয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক চীন সফরে সেদেশের পানিসম্পদমন্ত্রী লি গোইয়িংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেসময় নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। বৈঠকে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা ও ঢাকার চারপাশের দূষিত পানি পরিষ্কারের বিষয়ে সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন ড. ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে একটি চুক্তি ও ৮টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং কারিগরি সহযোগিতা–সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের চিরায়ত সাহিত্যের অনুবাদ ও প্রকাশনা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিনিময় ও সহযোগিতা, সংবাদ বিনিময়, গণমাধ্যম, ক্রীড়া ও স্বাস্থ্য খাতে সই হয়েছে ৮টি সমঝোতা স্মারক।
ড. ইউনূস এর প্রশংসা আগে একজন সহ্য করতে পারতেন না,তিনি রোগ ছড়িয়ে পালিয়েছেন । তিনি যথযত সম্মান প্রাপ্য অথচ ড. ইউনূস দেশে র্দীঘদিন ধরে অবহেলিত ছিলেন। তাঁকে আরেকটু দেশটা গোছানোর সময় দিন। তিনি থাকার জন্য আসেন নাই। নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়ে একের পর এক চমক দেখিয়ে যাচ্ছেন। জুলাই অভ্যুত্থানের মতো এত বড় একটি ঘটনার পর সারাদেশে যেখানে বিশাল বিশৃঙ্খলা থাকার কথা, সেখানে সরকার দারুণভাবে সব পরিস্থিতি সামলে নিয়েছে। দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ড. ইউনূস একটার পর একটা সফলতা অর্জন করে চলেছেন। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে চীন ও ভারত কূটনীতিতেও তিনি দারুণ চমক দেখিয়ে এখন সারাদেশের মানুষের প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেছেন। সাধারণ মানুষের চাওয়া ড. ইউনূস আরও অন্তত: চার বছর ক্ষমতায় থাকলে দেশের অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টা যাবে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। দু-চারটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া দেশের পরিস্থিতি শুধু সামাল দেওয়াই নয়, দারুণভাবে দেশ পরিচালনা করে চলেছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার।
লেখক: অধ্যাপক সরওয়ার জাহান
উদ্দোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা
সাউদার্ণ ইউনিভার্সিটি
অর্থসংবাদ/কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
রাষ্ট্রের মালিক জনগণ—গণভবন ও সংসদ খুলে দাও

এই রাষ্ট্রে কে মালিক? সংবিধান বলে—জনগণ। বাস্তবে কি আমরা সেই মালিক? যখন একটি জাতির লক্ষ লক্ষ মানুষ খোলা আকাশের নিচে ঘুমায়, হাসপাতালের বারান্দায় মরতে মরতে পড়ে থাকে, তখন সেই রাষ্ট্রের কেন্দ্রস্থলে গণভবন, সংসদ ভবনের মতো বিলাসবহুল স্থাপনা মাসের পর মাস খালি পড়ে থাকে। যেসব ভবনের প্রতিটি ইট, কাঠ, লোহা—সবই আমাদের রক্তঘামে গড়া, সেখানে আজ বসবাস করে এমন কিছু মানুষ, যারা এই জাতির জন্য অভিশাপ ছাড়া আর কিছু নয়। দুর্নীতি, চাটুকারিতা আর পারিবারিক রাজনীতির সিঁড়ি বেয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা কেবল রাষ্ট্রযন্ত্র দখল করেনি, দখল করেছে জাতির আত্মাও।
এই রাষ্ট্রের মূলধন আসে রিকশাচালক, গার্মেন্টস শ্রমিক, কৃষক, দোকানদার, শিক্ষক, সাধারণ নাগরিকের পরিশ্রম আর ট্যাক্স থেকে। মোবাইল রিচার্জে ট্যাক্স, চাল-ডাল কেনায় ট্যাক্স, এমনকি মৃত্যুর সনদ নিতেও ট্যাক্স। এই টাকায় চলে বিলাসবহুল সংসদ ভবন, শত একরজুড়ে নিরাপত্তাবেষ্টিত গণভবন। অথচ আজ এই ভবনগুলোতে থাকেন এমন সব মানুষ, যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন না—ক্ষমতায় থাকে সেনাবাহিনী, পুলিশ, আমলা, দলীয় ক্যাডার ও দুর্নীতির জাল বুনে। এরা জনগণের মুখোমুখি আসে না, আদালতের মুখোমুখি দাঁড়ায় না, কোনো জবাবদিহি মানে না। কেবল রাষ্ট্রটাকে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি ভাবে।
প্রশ্ন হলো—কেন এই ভবনগুলো ফাঁকা পড়ে থাকবে? যখন হাজারো মানুষ বস্তিতে, ড্রেনে, ফুটপাথে, রেলস্টেশনে রাত্রিযাপন করে? যেখানে একটা শীতের চাদর নেই, বাচ্চার জন্য একটা ওষুধ নেই, সেখানে এই নেতারা এসি রুমে শুয়ে কতোটা স্বাচ্ছন্দ্যে জাতির টাকা গিলে খাচ্ছে! কেন এসব ভবন সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত হবে না? মালিক তো জনগণ! তবে কেন মালিক আজ ঘরের বাইরে, আর চোরেরা ভেতরে?
২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার জোয়ারে শেখ হাসিনার পতন হয়। গণভবন, সংসদ ভবনের মতো ‘অস্পর্শ্য’ স্থাপনাগুলোতে ঢুকে পড়ে হাজারো মানুষ। কারণ তারা বুঝে গেছে—এই রাষ্ট্রে আর কোনো ভরসা নেই। তারা কারো দয়ায় নয়, নিজেদের অধিকারে ঢুকেছে। প্রমাণ করে দিয়েছে—এই ভবন কারো পারিবারিক সম্পত্তি নয়। এগুলো করদাতা গরিব মানুষের মালিকানাধীন, যারা তিলে তিলে রাষ্ট্র গড়েছে, কিন্তু আজ রাষ্ট্র তাদের গিলে ফেলছে।
আমরা আর চুপ থাকবো না। আমরা আর চুপ থাকলে এই দুর্নীতির, বিচারহীনতার, চোর-রাজনীতির শেকড় আরও গভীরে প্রবেশ করবে। এই ‘নেতা’ নামধারী দুর্নীতিবাজরা দেশকে বিদেশে বিক্রি করে দেয়, নিজেদের ছেলেমেয়েদের লন্ডনে পাঠায়, অথচ দেশের কৃষক ধানের দাম পায় না, শ্রমিক ন্যায্য মজুরি পায় না, শিক্ষার্থী চাকরি পায় না। এই রাষ্ট্র কাদের জন্য? এই ভবন কাদের জন্য?
এখনই সময়—এই ভবনগুলো জনগণের জন্য খুলে দিতে হবে। হ্যাঁ, জনগণের। কারণ রাষ্ট্রের মালিকানা কেবল এক টুকরো ভোট নয়, এটি একটি সার্বক্ষণিক অধিকার। এই ভবনগুলোতে তৈরি হোক অস্থায়ী আবাসন, খোলা হোক কমিউনিটি কিচেন, প্রতিষ্ঠিত হোক ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প। তবেই রাষ্ট্রের হর্তাকর্তারা বুঝবে, মানুষ কীভাবে বেঁচে থাকে। তবেই তারা বুঝবে, ক্ষমতা মানে সেবা, চুরি নয়।
গণভবন ও সংসদ ভবন জনগণের ঘর হোক—গৃহহীনদের নিরাপদ আশ্রয় হোক। সেখানে কোনো দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকের থাকার অধিকার নেই। যারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসে, জনগণের অর্থে বিলাস করে, দেশকে লুটপাটের অভয়ারণ্য বানায়, তাদের জন্য এই রাষ্ট্রে এক ফোঁটা সম্মান থাকা উচিত নয়। বরং তাদের জন্য দরকার খোলা আদালত, গণশাসনের কাঠগড়া।
এটি কোনো আবেগ নয়, এটি যুক্তি। অর্থনৈতিক যুক্তি—কারণ ট্যাক্স দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। নৈতিক যুক্তি—কারণ ঘরহীনদের চেয়ে বেশি অধিকার আর কারো নেই। সাংবিধানিক যুক্তি—কারণ রাষ্ট্র বলেছে, সব ক্ষমতার উৎস জনগণ। তাই এই দাবিটিকে কেউ অবজ্ঞা করলে, সেটা হবে রাষ্ট্রদ্রোহ। আমরা মালিক, আর রাষ্ট্র আমাদের সেবা না দিলে সেটা হবে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা।
তাই আজ বলছি—এটা অনুরোধ নয়। এটি একটি আদেশ। জনগণের আদেশ। ভবনগুলো খুলে দিন। বিলাসব্যসন বন্ধ করুন। দুর্নীতিবাজদের বের করে দিন। জনগণের ঘর জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিন। নইলে যেভাবে রাজপথ দখল হয়েছে, সেভাবে ভবিষ্যতেও সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্র দখল হবে। কারণ মালিক যখন তার অধিকার ফিরে পায়, তখন আর কিছুই থামাতে পারে না।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
আমি কখন ভালো হবো? আত্ম-জিজ্ঞাসার মধ্যেই জাতিগত পুনর্জাগরণ

আমি কখন ভালো হবো?—এই প্রশ্নটি শুনতে ব্যক্তিগত মনে হলেও, আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি যেন এক জাতিগত আত্মজিজ্ঞাসা। এটি একক ব্যক্তির নয়, বরং জাতীয় চেতনাবোধে ছড়িয়ে থাকা মহাকাব্যিক বেদনার প্রতিধ্বনি। এই প্রশ্ন ঘরে-বাইরে, রাস্তায়, ক্লাসরুমে, রাজনীতির মঞ্চে—সর্বত্র প্রতিধ্বনিত হওয়া উচিত। কারণ এখন আর অপেক্ষা করার সময় নয়; সময় এসেছে নিজেকে প্রশ্ন করার—পরিবর্তন যদি প্রয়োজন হয়, তবে আমি নিজে কোথা থেকে শুরু করবো?
বাংলাদেশে আজ প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ আচরণে নিজেকে নেতা ভাবে—শুধু নেতা নয়, যেন সর্বজ্ঞানী নেতা। আমরা এমন এক জাতিতে পরিণত হয়েছি, যেখানে সবাই অন্যকে বদলাতে চায়, কিন্তু নিজেকে নয়। সমাজ বদলাক, রাষ্ট্র বদলাক, রাজনৈতিক পরিবেশ পাল্টাক—এটাই প্রত্যাশা; কিন্তু সেই পরিবর্তনের সূচনা নিজের মধ্যে কেউ করতে চায় না। প্রশ্ন উঠবেই: নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা যদি থাকে, কিন্তু দায়িত্ববোধ না থাকে—তবে সেই নেতৃত্ব জাতিকে কোথায় নিয়ে যাবে?
আজ রাজনীতি একধরনের শব্দদূষণে পরিণত হয়েছে। দিনরাত মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, আর বক্তৃতা-বিবৃতিতে শুনি—‘নির্বাচন চাই’, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন চাই’, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।’ কিন্তু এই নির্বাচনগুলো আসলে কি আমাদের জন্য কোনো গুণগত পরিবর্তন আনছে? নাকি এগুলো ক্ষমতার পালাবদলের একটি চক্রব্যূহ মাত্র? রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এবং দুর্নীতির ঘূর্ণিতে দেশের জনগণের আস্থা এবং ন্যায্যতার ভিত ভেঙে পড়েছে। একদিকে, নির্বাচন আর রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘাত জাতিকে বিভক্ত করছে; অন্যদিকে, কর্মসংস্থানের সংকট, মূল্যস্ফীতি, কৃষির দুরবস্থা সাধারণ মানুষের জীবনকে করছে দুঃসহ।
কিছুদিন আগে আমি কথা বলেছিলাম এক পলাতক রাজনীতিবিদের সঙ্গে—আজ তিনি নিঃস্ব। নেই দল, নেই ঘর, নেই ক্ষমতা। তিনি বলেছিলেন, “ভুল করেছি। মানুষকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছি, সত্যকে বিক্রি করেছি। আজ সব হারিয়ে বুঝি—আমরা আসলে কী করেছি!”
এই উপলব্ধি নিঃসন্দেহে মূল্যবান, কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়:
আপনার উপলব্ধি যখন আসে সর্বহারা হওয়ার পরে, তখন তা কার উপকারে আসে?
সময়মতো বোঝা না গেলে, বোঝার কোনো মূল্য থাকে না। না বোঝাই অনেক সময় ভালো, কারণ দেরিতে বোঝার খরচ হয় ভয়াবহ।
একটি জাতির অর্থনৈতিক ভিত্তি যদি দুর্বল হয়, তবে সেই জাতির নাগরিকরা প্রতিনিয়ত দুলতে থাকে অনিশ্চয়তার দোলনায়। আর বাংলাদেশের পুঁজিবাজার—যা হতে পারতো অর্থনৈতিক স্বপ্নের বাতিঘর—তা আজ এক ভয়ংকর কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয়েছে। টাকা ঢোকে, কিন্তু আর ফিরে আসে না।
শোনা যায়, এক দরবেশবাবা নাকি শেখ হাসিনার আমলে পুরো শেয়ারবাজার ধ্বংস করে দিয়েছিলেন! যদি তা-ই হয় তবে তিনি তো এখন জেলে, তাহলে আজ যারা বাজারের বুকে আবার মৃত্যুর ছুরি চালাচ্ছে, তারা কারা? প্রশ্নটা ফাঁকা নয়—এই বাজার বারবার কেন ভেঙে পড়ে? কেন বারবার বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হয়? কেন প্রতিবার স্বপ্ন দেখিয়ে সেই স্বপ্নকে পিষে ফেলা হয়?
পুঁজিবাজার কোনো খেলার জায়গা নয়। এটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনীতির রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থা। অথচ বাস্তবতায় দেখা যায়—অপরিকল্পিত দরপতন, মুনাফাখোর সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, হাজারো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসা। তারা স্বপ্ন দেখেছিল, বিশ্বাস করেছিল, বিনিয়োগ করেছিল—কিন্তু পেয়েছে প্রতারণা, ধোঁকা, আর লুট।
সরকারের কাছে অনুরোধ—এবার দয়া করে সত্যিকারের সংস্কারে নামুন। প্রয়োজন হলে বিদেশি বিশেষজ্ঞ আনুন। আমি নিজ উদ্যোগেও বিশ্বমানের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আপনাদের সংযোগ করাতে রাজি। কিন্তু আর কালক্ষেপণ নয়।
একটা কথা মনে রাখুন—এই বাজারকে যদি এখনই সঠিক পথে না আনা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি তুলেই দেউলিয়া হয়ে যাবে। শুধু স্লোগানে অর্থনীতি টেকে না। টিকিয়ে রাখতে দরকার গভীর পরিকল্পনা, স্বচ্ছতা, আর সর্বোচ্চ পর্যায়ের জবাবদিহিতা। পুঁজিবাজার ধ্বংস মানে শুধু টাকার ক্ষতি নয়—এটি মানুষের আস্থা, স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎকে হত্যা করে। আর এই হত্যাকাণ্ড যদি বারবার ঘটে, তবে তা শুধু অর্থনৈতিক ব্যর্থতা নয়, এটি এক প্রকার রাষ্ট্রীয় অপরাধ।
উপরের দুইটি উদ্বেগ—অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও রাজনৈতিক নৈরাজ্য—একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। দুর্নীতি আর রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রকৃত নীতি বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছে, ফলে সামাজিক উন্নয়ন থমকে গেছে, সাধারণ মানুষের জীবনে সংকট বাড়ছে। আর এই চক্র চলতে থাকলে, ভবিষ্যৎ এক অন্ধকার গলিতে পৌঁছে যাবে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এই চ্যালেঞ্জগুলো একে অন্যকে পুষ্ট করছে—মিলে তৈরি করছে এক অপ্রতিরোধ্য, বেপরোয়া সংকট। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে দরকার একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি—যেখানে রাজনৈতিক সংস্কার আর অর্থনৈতিক পুনর্গঠন হাত ধরাধরি করে এগিয়ে যাবে।
প্রিয় পাঠক, এখন আমাদের নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে হবে—সংস্কার আসবে কার থেকে? নিজের থেকে, না শুধু অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে?
আমরা প্রায় বলি, “ওরা দুর্নীতিবাজ”, “ওদের জন্যই দেশ খারাপ”—কিন্তু আমি নিজে কী করছি? আমি কি নিয়ম মানি? আমি কি ঘুষ দিই? আমি কি অন্যায় দেখলে চুপ থাকি, নাকি প্রতিবাদ করি?
এই প্রশ্নগুলো অস্বস্তিকর। কারণ এগুলো আমাদের আয়নার সামনে দাঁড় করায়। কিন্তু এই অস্বস্তি ছাড়া কোনো সত্যিকারের পরিবর্তন সম্ভব নয়। রাষ্ট্র বদলায় না—রাজনৈতিক মানুষগুলো বদলালে তবেই রাষ্ট্র বদলায়।
আজ যেসব শক্তি রাজনীতির আড়ালে কাজ করছে, তাদের অনেকেই দেশের মাটিতে নেই। কারো স্বপ্ন দিল্লি, কারো ওয়াশিংটন, আবার কেউ গোপন চুক্তির মুনাফা নিয়ে ব্যস্ত। তারা বিদেশে বসে আন্দোলনের ডাক দেয়, ত্যাগের কথা বলে। কিন্তু কখনো কি তারা বলে, “আমরা আগে নিজেদের আদর্শিকভাবে পরিষ্কার করবো, তারপর জনগণের সামনে যাবো?”—না, বলে না। কারণ সেটি কঠিন। আত্মশুদ্ধি কঠিন।
তাই আজ দরকার একটি নীরব কিন্তু শক্তিশালী বিপ্লব—যেটি শুরু হবে “আমি কখন ভালো হবো?” এই আত্মজিজ্ঞাসা দিয়ে। এই বিপ্লব হবে আমাদের পরিবারের ভেতর, পেশাগত দায়িত্বের মধ্যে, প্রতিদিনের ছোট ছোট সিদ্ধান্তে। কারণ আজ যদি আমরা না বদলাই, কাল আবার একটা অকার্যকর নির্বাচন, নতুন মুখে পুরনো ধোঁকা নিয়েই আমাদের সামনে হাজির হবে।
আমরা সবাই পরিবর্তন চাই। কিন্তু ভুলে যাই—পরিবর্তনের গভীরতম শেকড় নিজেকেই খনন করতে হয়।
আমার সময় এখন। আমার প্রতিবাদ এখন। আমার আত্মশুদ্ধি এখন।
নিজেকে প্রশ্ন করুন—আমি কখন ভালো হবো?
তবে হয়তো আপনি নিজেই হয়ে উঠবেন সেই “সুন্দর কে”, যাকে সবাই খোঁজে, কিন্তু কেউ নিজের ভেতরে খোঁজে না।
বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় আজ এক বিষণ্ণ সত্য স্পষ্ট: জাতিটি এক “নেতাগণমণ্ডলী”তে পরিণত হয়েছে। যিনি নেতা নন, তিনিও মনে করেন তিনি বিশাল নেতা। অথচ প্রকৃত নেতৃত্ব মানে বিনয়, দায়িত্ব, আত্মসংযম ও নৈতিকতা। আজ এই চারটি গুণই প্রায় অনুপস্থিত।
এই অতিনেতৃত্বপ্রবণতা আমাদের সমাজে তৈরি করেছে এক সাংস্কৃতিক দূষণ—যেটি শব্দ, চিন্তা এবং চেতনার স্তরে সক্রিয়। রাজনৈতিক নেতারা সারাবছর ধরে ‘নির্বাচন’ শব্দটি এতবার বলেন, যে তা একধরনের শব্দদূষণে পরিণত হয়েছে।
প্রশ্ন হলো: এই ‘নির্বাচন’ আসলে কী?
এটা কি জনগণের সমস্যার সমাধান? নাকি ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য কিছু অন্ধকার ঘরের চুক্তি পূরণের উপলক্ষ?
জনগণ কে?
জনগণ কি কেবল সেই মুখহীন সংখ্যা? নাকি আপনি-আমি সেই জনগণের অংশ?
আমরা যখন বলি “জনগণ কিছু করছে না,” তখন কি নিজের দায় এড়িয়ে যাই?
গণতন্ত্রে ‘জনগণ’ মানে আপনি, আমি, আমরা সবাই।
তাই প্রশ্ন নয়—“এটা হওয়া উচিত” বা “ওটা হওয়া উচিত”—
প্রশ্ন হলো: করবে কে?
আপনি যদি ভাবেন, “কেউ একজন নিশ্চয়ই করবে,” তাহলে আপনি নিজেই জটিলতার অংশ। নিজেকে বদলানোই হলো প্রকৃত কাজের শুরু।
‘সুন্দর মানুষ’ কাকে বলে?
চেহারায় নয়—মননে, নীতিতে, দৃষ্টিভঙ্গিতে। যে নিজের ভেতরে আলো জ্বালাতে পারেন, তিনিই অন্যের পথ আলোকিত করেন। সেই মানুষ আপনার পাশেই আছেন—হয়তো আপনি নিজেই। শুধু তাঁকে জাগাতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণে আজ কোনো লজ্জা বা বিবেচনা নেই। বছরের পর বছর দুর্নীতি, দখল, দমন আর দাসত্ব চালিয়ে শেষে বলা হয়: “নির্বাচন চাই, গণতন্ত্র চাই!” অথচ গণতন্ত্র মানে তো ভয়হীনতা, ভোটার-নিরাপত্তা, চিন্তার স্বাধীনতা। এসব কিছুই যেখানে নেই, সেখানে নির্বাচন মানে নতুন এক প্রহসন।
মূল কথা হলো:
যদি এই রাজনৈতিক দূষণ দূর না করা যায়, তবে কোনো নির্বাচনই স্বচ্ছ বা অর্থবহ হবে না।
কারণ, নির্বাচন একটি ‘ফল’—তাকে ফলতে হলে চাই একটি সুস্থ ‘পরিবেশ’।
যদি চারপাশের বাতাসই বিষাক্ত হয়, তবে সেই গাছে ফলও বিষাক্ত হবে।
শুধু শব্দ নয়, চাই চরিত্রের শুদ্ধি।
রাজনীতিবিদদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত:
আমি কতটা স্বচ্ছ?
আমি কি মানুষের কাছে জবাবদিহি করি?
আমি কি সত্য বলি, না সুবিধামতো চুপ থাকি?
আপনি যদি নিজেই দুর্নীতির চাষ করেন, সংবাদপত্র বন্ধ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পেটোয়া বাহিনী চালান—তাহলে আপনি যখন নির্বাচনের মুখোমুখি হবেন, তখন জনগণ কেন আপনাকে বিশ্বাস করবে? আপনাদের প্রতিটি বাক্য এখন শব্দদূষণের মতোই বিরক্তিকর—কারণ তাতে নেই আস্থা। যারা আজ নিজেকে ‘নেতা’ ভাবেন, তাঁদের আয়নায় একবার তাকানো দরকার।
নিজেকে বদলানো ছাড়া যদি আপনি সারাক্ষণ অন্যকে দোষ দেন—তবে আপনি নেতা নন, নেতৃত্বকে অপমান করছেন। যদি আপনাদের বিবেক এখনো জীবিত থাকে, তাহলে শেখ হাসিনা, তাঁর মন্ত্রিসভা, বিএনপির সিনিয়র নেতারা—সবার প্রতি এই বার্তা: ভারতে আশ্রয় নেওয়ার আগে একবার নিজের বিবেকের কাছে জবাবদিহি করুন। কারণ আজ জনগণ আর অন্ধ নয়।
তারা জানে, কারা শব্দে দেশ চালাতে চায়—আর কারা সত্য সংস্কার আনতে চায়। এই রাষ্ট্রকে বাঁচাতে হলে আগে দূষণ দূর করতে হবে— শুধু শব্দ নয়, নৈতিক দূষণ।
চিন্তা করুন, প্রশ্ন করুন, নিজেকে শুদ্ধ করুন। একজন জানতে চেয়েছিল—“কে সেই সুন্দর কে?”
উত্তর একটাই: নিজের ভেতরে যদি সত্য ও দায়িত্ববোধ জাগে, আপনি নিজেই সেই সুন্দর।
রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
rahman.mridha@gmail.com
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
পহেলা মে ও রেমিট্যান্স যোদ্ধার চোখে বাংলাদেশ: একটি নৈতিক আত্মমুক্তির দাবি

যে মানুষটি একদিন দেশের মাটি ছেড়ে বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন, তাঁর চোখে ছিল একটি স্বপ্ন—পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো, দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা। আজ সেই স্বপ্ন বহন করে দেড় কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক ছড়িয়ে আছেন বিশ্বের নানা প্রান্তে। তাঁদের রক্তঘামে আসে বছরে প্রায় ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার—বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রধান উৎস।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যুরো অফ ম্যানপাওয়ার, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (BMET)-এর তথ্য বলছে, এই অর্থে গড়ে উঠেছে গ্রামের অবকাঠামো, শিক্ষিত হয়েছে সন্তান, বদলে গেছে পরিবারের ভাগ্য। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে—দেশে ফিরে আসার পরে কি এই রেমিট্যান্স যোদ্ধারা তাঁদের প্রাপ্য সম্মান ও নিরাপত্তা পান?
অস্বীকৃত কিন্তু অবিচ্ছেদ্য অবদান
প্রবাসীরা দিনের পর দিন মরুভূমির উত্তাপে, ঠান্ডায় জমে, হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যে অর্থ পাঠান, তা দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। তাঁদের জীবনের বিসর্জনে তৈরি হয় গ্রামে নতুন ঘর, সন্তানরা পায় উচ্চশিক্ষা, শহরে গড়ে ওঠে ব্যবসা। কিন্তু এই শ্রমিকরা যে অবদানের পাহাড় গড়ে তুলেছেন, সেটি প্রায়শই রাজনৈতিক কৃতিত্বের মোড়কে হারিয়ে যায়। রাষ্ট্রের উন্নয়ন পরিকল্পনায় তাঁদের জন্য কোনো স্পষ্ট ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা চোখে পড়ে না।
রাষ্ট্রীয় অবহেলা ও অব্যবস্থাপনা: একটি নৈতিক ব্যর্থতা
বেশিরভাগ প্রবাসী শ্রমিক ২০-৩০ বছর কাজ করে দেশে ফেরেন। কিন্তু দেশে ফিরে পান না কোনো স্থায়ী সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো—না পেনশন, না সামাজিক বীমা, না মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা। বরং ফিরে পান অচেনা বাস্তবতা, অবহেলা ও একাকীত্ব। বিশ্বের বহু দেশে যেমন ফিলিপিন্সে ‘Overseas Workers Welfare Administration (OWWA)’-এর মতো প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা রয়েছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো সেখানে নীরব দর্শক। আমাদের দেশেও একটি কার্যকরী সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা কি অসম্ভব?
ভবিষ্যতের দিকে অন্ধ রাষ্ট্রযন্ত্র
বাংলাদেশে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য নেই কোনো দীর্ঘমেয়াদী রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা। তাঁরা দেশে ফিরে পড়েন প্রান্তিকতার ফাঁদে। ফলে, এই আত্মত্যাগী মানুষগুলো সমাজে হয়ে ওঠেন ‘অপ্রয়োজনীয়’ এক শ্রেণি, যাদের সম্মান নেই, পরিচর্যা নেই, গর্ব নেই। এই রাষ্ট্রীয় অন্ধত্ব একদিন আমাদের সমগ্র অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে।
নীতিগত পরিবর্তন: সময়ের দাবি
রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো এই যোদ্ধাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা। এজন্য নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা বিবেচনায় নেয়া উচিত:
১. জাতীয় রেমিট্যান্স পেনশন স্কিম: প্রবাসীদের জন্য একটি বাধ্যতামূলক পেনশন স্কিম চালু করতে হবে।
২. পুনঃবাসন ও রি-স্কিলিং প্রোগ্রাম: দেশে ফেরা প্রবাসীদের জন্য কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
৩. উদ্যোক্তা তহবিল ও বিনিয়োগ সহায়তা: রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য সহজশর্তে ঋণ ও তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে।
৪. মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যসেবা ইউনিট: অভিবাসন-পরবর্তী সংকট মোকাবেলায় বিশেষায়িত সেবা গড়ে তুলতে হবে।
৫. জাতীয় স্বীকৃতি ও সংবর্ধনা প্রথা: তাঁদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করার জন্য একটি বার্ষিক জাতীয় সম্মাননা চালু করা যেতে পারে।
নৈতিক অধঃপতন থেকে আত্মমুক্তির সময় এখন
আজকের বাংলাদেশে, যেখানে আমরা প্রতিনিয়ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আত্মসম্মান এবং মর্যাদার জন্য লড়াই করছি, সেখানে দেশের অভ্যন্তরে রাজনীতি, দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চাঁদাবাজি, এবং ভণ্ডামি আমাদের সর্বশ্রেণীর জনগণের ভবিষ্যৎকে সংকটে ফেলে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী আজ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কারণ আমরা জানি—দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্রীয় স্বার্থের অদূরদর্শী প্রতিরোধ আমাদের শক্তিশালী অর্থনীতির পথকে অস্বাভাবিকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবস্থা এখন এমন, যে কেউ আমাদের দেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নয়, বরং বরাবরই আমাদের দুর্নীতির কারণে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে।
আমরা জানি, উন্নত রাষ্ট্রসমূহ থেকে যে ধরনের বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা আসার কথা, তা নির্ভরশীল দেশীয় নীতির ওপর। আর সেই নীতি যখন দুর্নীতিগ্রস্ত, অসৎ ও অদূরদর্শী, তখন আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে আমাদের দেশের মূল্যায়ন আশানুরূপ থাকে না। আমাদের দরকার একটি নৈতিক, যোগ্য, এবং দক্ষ নেতৃত্ব, যারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী, জনগণের কল্যাণে কাজ করবে। আমরা এমন রাজনৈতিক নেতৃত্ব চাই, যারা দুর্নীতির পথ পরিহার করবে এবং জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতি পালন করবে।
এখানে স্পষ্টভাবে বলতে চাই—রাজনীতির নামে দুর্নীতি আর বাংলার মাটিতে চলবে না। মালিকদের অধিকার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের অধিকার পর্যন্ত সুষ্ঠু এবং ন্যায়সংগত পরিবেশ তৈরি করা উচিত, যেখানে কোনো ধরনের অপব্যবহার ও অশান্তি সহ্য করা হবে না। রাজনৈতিক তৎপরতা যদি জনগণের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করতে থাকে, তবে সেগুলো অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। বাংলাদেশের মাটিতে এমন পরিস্থিতি পুনরাবৃত্তি হতে আমরা আর কোনোভাবেই অনুমতি দেব না।
রাষ্ট্রযন্ত্র যদি আজও অবহেলার কূপে বন্দী থাকে, তবে ইতিহাস একদিন এই ব্যর্থ রাষ্ট্রকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেই।
রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য ন্যায়, রাষ্ট্রের জন্য আত্মশুদ্ধির ঘন্টাধ্বনি
পহেলা মে—এটি কেবল শ্রমিক দিবস নয়, এটি রাষ্ট্রের আত্মা জাগানোর দিন। আজকের এই দিনে আমরা যদি সেই পরিশ্রমী হাতগুলোর দিকে না তাকাই, যারা প্রিয়জন ছেড়ে মরুপ্রান্তরে ঘাম ঝরিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরাচ্ছে, তাহলে আমাদের বিবেক মৃত।
অন্তত পহেলা মে—শ্রমিকদের অবদানের স্বীকৃতি দেওয়ার যেমন দিন, তেমনি রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা পূর্ণ করার দিন। তাঁদের অবদানকে জাতির উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রে না রাখলে উন্নয়ন শুধু ঢাকের বাদ্য হবে—গভীরতা থাকবে না। রাষ্ট্রের উচিত, নিজের দায়িত্ববোধ থেকে এই প্রবাসী জনগণের পাশে দাঁড়ানো।
আমরা চাই না করুণা, চাই ন্যায্যতা।
আমরা চাই না সংবর্ধনার ফুল, চাই সামাজিক নিরাপত্তার শিকড়।
রাষ্ট্র যদি আজও এই শ্রেণীকে অবহেলা করে, তবে একদিন ইতিহাস তাকে জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেই।
এই লেখা একটি আবেগ নয়—এটি সময়ের গলায় চেপে বসা এক নৈতিক হুঁশিয়ারি।
আজ না হলে কাল, কাল না হলে ইতিহাস—এই রাষ্ট্রকে উত্তর দিতেই হবে।
তাই, পহেলা মে শুধুই শ্লোগান বা ফুল দেয়ার দিন নয়—
এটি হোক আত্মসমালোচনার, আত্মউন্নয়নের ও দায়িত্বশীলতার প্রতীক।
রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের অবসরকালীন জীবন যেন হয় নিরাপদ, সম্মানজনক ও মানবিক—
এটাই হওয়া উচিত আমাদের রাষ্ট্রনীতির পরবর্তী ধাপ।
যে রাষ্ট্র তার ঘামের শ্রদ্ধা দিতে জানে না,
সে উন্নয়নের মুখোশ পরে নিজের মাটিকেই অস্বীকার করে।
আমরা একটি রাষ্ট্র চাই—ক্ষমতার নয়, মর্যাদার নামেই যার পরিচয় হবে।
রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
rahman.mridha@gmail.com