Connect with us

মত দ্বিমত

বাংলাদেশের উন্নয়নের নতুন দিগন্ত: গণতন্ত্র থেকে প্রশাসনতন্ত্র

Published

on

বিএটিবিসি

অনেক বছর আগে, এক দুর্লভ দিন ছিল হামিলন শহরের জন্য। এক সময় এই শহর ছিল শৃঙ্খলা, শান্তি ও সুখের প্রতীক। শহরের প্রতিটি গলি ছিল আনন্দমুখর, প্রতিটি মানুষ ছিল একে অপরের জন্য সহানুভূতিশীল। কিন্তু একদিন, এক ভয়ঙ্কর বিপদ এসে শহরটিকে লন্ডভন্ড করে দিল—ইঁদুরের এক তাণ্ডব। অদৃশ্য শত্রুর মতো, ইঁদুরের দল ছড়িয়ে পড়ল শহরের প্রতিটি কোণে, বাড়ি-বাড়ি, রাস্তায় রাস্তায়। সবার ঘরবাড়ি বিপর্যস্ত, শান্তি মিলিয়ে গেল। এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে, শহরের অভিজ্ঞানীগণ এক রহস্যময় বাঁশিওয়ালাকে ডাকলেন।

বাঁশিওয়ালা এক অদ্ভুত ব্যক্তিত্ব, হাতে ছিল এক বিশেষ বাঁশি—যেটি বাজালে ইঁদুরেরা শহর ছেড়ে চলে যাবে, এমনই ছিল তার গল্প। সুরের এক জাদুতে, বাঁশিওয়ালা যখন তার বাঁশি বাজাতে শুরু করলেন, শহরের সমস্ত ইঁদুর একে একে পালিয়ে গেল। শহর আবার ফিরে পেল শান্তি, কিন্তু বাঁশিওয়ালা যখন তার পারিশ্রমিকের দাবি তুললেন, তখন শহরের অভিজ্ঞানীগণ তার সঙ্গে প্রতারণা করল। প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও তারা তাকে কিছুই দিল না। আর তখনই বাঁশিওয়ালা তার বাঁশি আবার বাজালেন—কিন্তু এবার তিনি ইঁদুরদের নয়, শহরের শিশুদের নিয়ে চলে গেলেন। শহরের বাসিন্দারা বুঝতে পারল, তাদের নিজের ভুলে তারা সবকিছু হারিয়ে ফেলেছে।

এই কাহিনী কেবল এক পৌরাণিক গল্প নয়, বরং আমাদের বর্তমান সমাজের এক অস্পষ্ট প্রতিচ্ছবি। আমাদের সমাজে আজও মানুষের মধ্যে অজ্ঞতা, অন্ধবিশ্বাস এবং আত্মবিশ্বাসহীনতা রয়েছে। ঠিক যেমন হামিলনের বাসিন্দারা নিজেদের চোখে মুগ্ধ হয়ে বিশ্বাস করেছিল বাঁশিওয়ালার সুরে, তেমনই আমাদের দেশের জনগণ অনেক সময় নেতাদের অন্ধ বিশ্বাসে নিজেদের ভবিষ্যতকে বিপদের দিকে ঠেলে দেয়।

আজকের বাংলাদেশেও ঠিক সেইভাবে চলছে। একদিকে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি অন্ধবিশ্বাস, অপরদিকে দেশের মানুষের মনের অন্ধকারে বেড়ে ওঠা দুর্বলতা। আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার, সুযোগ-সুবিধার জন্য যে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে আশ্রয় চাই, তারা নির্বাচনের সময় উন্নয়নের স্বপ্ন দেখায়, কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর সেই আশ্বাসগুলি ফাঁকা বুলি হয়ে যায়। একদিকে নির্বাচনের মিছিলে প্রতিশ্রুতি আর ভাষণ, অন্যদিকে বাস্তবতায় দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা আর সাধারণ মানুষের ক্ষত।

হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার গল্প আমাদের শেখায়, কীভাবে এক মানুষ তার শখ ও দক্ষতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান এনে দিতে পারে, তবে যখন তার প্রতি অবিচার করা হয়, তখন তার প্রতিশোধও হতে পারে কঠিন। হামিলনের শিশুরা যেমন এর ফল ভোগ করেছিল, তেমনিভাবে আজকের পৃথিবী, বিশেষত আমাদের দেশেও রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতারণার শিকার হয়ে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

হ্যামিলনের ঘটনা যেন আমাদের দেশের আজকের পরিস্থিতিরই প্রতিফলন। জনগণের ভুল সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রতি অন্ধবিশ্বাস এবং দুর্বল শাসনব্যবস্থার মধ্যে আমরা হুমকির মধ্যে পড়ে গেছি। একদিকে, আমরা প্রতিশ্রুতি ও উন্নয়নের সুরে বিভ্রান্ত হচ্ছি, অন্যদিকে, তার আড়ালে ক্ষতি আর দুর্নীতি আমাদের জীবনে ক্রমেই গভীর হতে থাকে। হামিলনের মতো, আমাদের রাজনীতিবিদদের কাছেও কি প্রতিশ্রুতি কেবল মুখের কথা, আর বাস্তবতা কিছুই বদলায় না?

আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতা বোধহয় হামিলনের গল্পের পুনরাবৃত্তি—যেখানে প্রতারণা, ভুল সিদ্ধান্ত এবং অন্ধবিশ্বাস একে অপরকে ধারণ করে। আর তার ফলস্বরূপ, জনগণ প্রতিশোধ হিসেবে নিজেদের ভবিষ্যতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

আমাদের জনগণও বছরের পর বছর ধরে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির ফাঁদে আটকা পড়ে আছে। প্রতিবার নির্বাচনের আগে বিভিন্ন নেতা উন্নয়নের স্বপ্ন দেখান, কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর তাদের প্রতিশ্রুতি ফাঁকা বুলিতে পরিণত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিযোগিতা ও ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণে প্রশাসন দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর ফলে জনগণ সঠিক সেবা পাচ্ছে না, দুর্নীতি বেড়ে যাচ্ছে, আর অর্থনৈতিক বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।

এই বাস্তবতায়, গণতন্ত্রের প্রচলিত কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে প্রশাসনকে শক্তিশালী করা জরুরি। কেননা, দক্ষ প্রশাসন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব—
বাংলাদেশের বর্তমান সংকট ও তার কারণ, গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা ও প্রশাসনের ব্যর্থতা এবং প্রশাসনতন্ত্র কেন প্রয়োজন ও কীভাবে এটি উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে।

বিশ্বের সফল প্রশাসনিক মডেল ও বাংলাদেশের করণীয়
এই আলোচনার মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করব, কীভাবে আমরা রাজনৈতিক মিথ্যাচারের শিকার হওয়া থেকে মুক্ত হয়ে একটি শক্তিশালী, স্বচ্ছ ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি।
বাংলাদেশের সংকট, তার কারণ ও সমাধান
বাংলাদেশ কী সংকটে ভুগছে?

বর্তমানে বাংলাদেশ বিভিন্ন সংকটে জর্জরিত। মূল সমস্যা পাঁচটি—
১. রাজনৈতিক অস্থিরতা – নির্বাচন ও রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণে দেশ বারবার সংকটে পড়ে।
২. দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার – প্রশাসনের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
৩. শাসনব্যবস্থার অকার্যকারিতা – সরকারি নীতি ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে চরম অনিয়ম বিদ্যমান।
৪. শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে অব্যবস্থাপনা – জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে ব্যর্থতা রয়েছে, যার ফলে জনসংখ্যার বড় একটি অংশ দরিদ্র ও অশিক্ষিত থেকে যাচ্ছে।
৫. সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য – ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে, যার ফলে সমাজে হতাশা ও ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে।

এসব সমস্যার কারণে দেশের সাধারণ জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রাজনীতিবিদরা যখন ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত, তখন জনগণের প্রকৃত সমস্যাগুলো অবহেলিত থেকে যাচ্ছে।

এই সংকটের মূল কারণ কী?
বাংলাদেশের চলমান সংকটের পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে—
১. দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অক্ষমতা – প্রশাসন দুর্বল ও অদক্ষ হওয়ায় দুর্নীতিবাজরা রাষ্ট্রের সুবিধা লুটে নিচ্ছে।
২. নির্বাচিত প্রতিনিধিদের রাজনৈতিক স্বার্থপরতা – জনগণের কল্যাণের পরিবর্তে নেতারা নিজেদের ক্ষমতা রক্ষায় বেশি আগ্রহী।
৩. নীতিনির্ধারণে দীর্ঘসূত্রিতা ও অদক্ষতা – নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেরি হয়, ফলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সফল হয় না।
৪. জনগণের সচেতনতার অভাব ও রাজনৈতিক নেতাদের অন্ধ অনুসরণ – জনগণের শিক্ষা ও রাজনৈতিক সচেতনতা কম হওয়ায় তারা বারবার ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।

অশিক্ষার হার বাড়ছে—এর প্রভাব কী?
শিক্ষাহীনতা একটি জাতির জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যদিও বাংলাদেশে শিক্ষার হার বাড়ছে, তবুও গুণগত শিক্ষা ও কার্যকর শিক্ষাব্যবস্থার অভাবে জনগণ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এর ফলে:
•ভোটের রাজনীতি ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে – অশিক্ষিত জনগণ সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন করতে অক্ষম, যার ফলে ভোটের মাধ্যমে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।
•জনগণ রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির ফাঁদে আটকে যাচ্ছে – রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।
•নৈতিক মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়িত্ববোধ দুর্বল হচ্ছে – অশিক্ষিত সমাজে দুর্নীতি ও অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সামাজিক অস্থিরতার সৃষ্টি করছে।

গণতন্ত্রের দুর্বলতা কোথায়?
গণতন্ত্রের মূল লক্ষ্য জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া। তবে বাস্তব পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতায় আসার পর নেতারা জনগণের কল্যাণের তুলনায় নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় বেশি মনোযোগী হন, যার ফলে:
•দুর্নীতি বাড়ে,
•প্রশাসন রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়,
•উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় না।

গণতন্ত্র থেকে প্রশাসনতন্ত্রের দিকে যাওয়া কেন প্রয়োজন?
•প্রশাসন শক্তিশালী হলে উন্নয়ন নিশ্চিত করা সহজ হয়।
•নির্বাহী ক্ষমতা কার্যকর হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা কমে।
•দুর্নীতি হ্রাস পেয়ে উন্নয়নের গতিশীলতা বাড়ে।
•প্রশাসন জনগণের প্রকৃত সমস্যা সমাধানে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারে।

যদি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রশাসনের দক্ষতার উপর ভিত্তি করে না গড়ে ওঠে, তবে তা জনগণের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বর্তমানে জনগণের নিরাপত্তাহীনতা
বাংলাদেশে জনগণের নিরাপত্তাহীনতা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রধান কারণগুলো হলো:
১. অপরাধ বৃদ্ধি – দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অপরাধের হার বাড়ছে। খুন, ধর্ষণ, চুরি, ও মাদক ব্যবসা এরই অংশ।
২. আইনের শাসনের অভাব – পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কার্যকরী ভূমিকা না থাকায় অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাচ্ছে না।
৩. ভীতির পরিবেশ – রাজনৈতিক সহিংসতা এবং সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ায়, জনগণ ভয়ের মধ্যে দিনাতিপাত করছে।
৪. উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার – মুঠোফোন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপরাধীরা নিজেদের কার্যকলাপ সহজেই চালিয়ে যাচ্ছে, যা নিরাপত্তাহীনতা আরও বাড়াচ্ছে।

এর প্রভাব কী?
•জনগণের আতঙ্ক – মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয় পায়, যা তাদের সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনকে প্রভাবিত করছে।
•আর্থিক ক্ষতি – অপরাধের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতি হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসায়িক পরিবেশের জন্য অশনি সংকেত।
•বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস – নিরাপত্তাহীনতা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।

প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা
গণতন্ত্র হলো জনগণের শাসন, যেখানে জনগণের মতামতই সর্বোচ্চ। তবে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে না। এর কারণগুলো হলো:
১. প্রতিষ্ঠানিক দুর্বলতা – রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার লড়াইয়ের ফলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে।
২. অস্থিতিশীল নির্বাচন ব্যবস্থা – নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক সহিংসতা, কারচুপি এবং ভোটের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।
৩. গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অভাব – গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং সংবিধান মেনে চলার সংস্কৃতি সমাজে গড়ে ওঠেনি।

গণতন্ত্রের প্রকৃত চেহারা কী?
•স্বাধীন নির্বাচন – সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া, যেখানে জনগণ তাদের প্রতিনিধিদের স্বাধীনভাবে নির্বাচন করতে পারে।
•দুর্নীতিমুক্ত সরকার – সরকারের দায়িত্বশীলতা এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা।
•আইনের শাসন – বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং অপরাধীদের বিচার করা।

ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও মানবাধিকার
বাংলাদেশে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার এখনও অনেক জায়গায় সংকুচিত। এর মূল কারণ:
১. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা – সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধী দলের প্রতি দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাকস্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ।
২. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা – সংবাদমাধ্যমগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যা জনগণের তথ্য অধিকার হরণ করছে।
৩. ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সামাজিক বৈষম্য – সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য এবং ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।
৪. ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা – অনেক সময় ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মতপার্থক্য সহ্য করা হচ্ছে না, যা মানুষের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।

এর প্রভাব কী?
•সমাজের বিভাজন – মানুষের মধ্যে জাতি, ধর্ম বা রাজনৈতিক কারণে বিভাজন তৈরি হচ্ছে, যা সামাজিক অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।
•মানবাধিকার লঙ্ঘন – স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত অধিকার সমুন্নত রাখা যাচ্ছে না, যার ফলে আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

নেতৃত্বের ব্যর্থতা ও প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে দেশের সাধারণ জনগণ তাদের সমস্যার কার্যকর সমাধান পাচ্ছে না, বরং পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে।

গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা ও প্রশাসনের গুরুত্ব
বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে গণতন্ত্রের কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হলেও, এর কার্যকারিতা সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গণতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য জনগণের জন্য সেবা দেওয়া হলেও, আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতার সংগ্রাম এবং দলীয় সংকীর্ণতার কারণে প্রশাসন কার্যকরভাবে কাজ করতে পারছে না।

গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা
গণতন্ত্রে গণমাধ্যম, মতপ্রকাশ, নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকারের কাঠামো নির্বাচিত হয়, তবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্নীতির কারণে গণতন্ত্রের কার্যকারিতা অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ।

১. দলীয় সরকার ও পকেট রাজনীতি – নির্বাচিত সরকারগুলো তাদের দলের স্বার্থে কাজ করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় নীতিতে একগুয়ে আচরণ করছে, যা জনগণের জন্য ক্ষতিকর।
২. পাঠ্যক্রমের রাজনীতিকরণ – শিক্ষা ব্যবস্থায় দলীয় পদক্ষেপের কারণে দেশের যুব সমাজ সঠিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছে না।
৩. প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন – সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি প্রায়ই কার্যকর হয়নি, যা জনগণের মাঝে হতাশা তৈরি করেছে।

এই অবস্থায়, গণতন্ত্রের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনকে শক্তিশালী করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশাসনতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা
প্রশাসনতন্ত্র মূলত একটি দক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করে, যা সরকারের স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। এটি দলের বাইরে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেয়, ফলে জনগণের প্রতি সরকারের সেবা আরও কার্যকর হতে পারে।

বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ প্রশাসনকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে উন্নয়ন অর্জন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, সিঙ্গাপুর এবং দক্ষিণ কোরিয়া প্রশাসনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে। একইভাবে, জার্মানি ও সুইডেন তাদের প্রশাসনিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করে উন্নত নাগরিক সেবা প্রদান করছে।

বাংলাদেশে প্রশাসনতন্ত্র কেন প্রয়োজন?
১. দুর্নীতির প্রতিরোধ – দক্ষ প্রশাসন দুর্নীতি মোকাবেলা করতে পারে, কারণ তা স্বচ্ছভাবে কাজ করতে পারে এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কম থাকে।
২. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ – প্রশাসনিক কাঠামো শক্তিশালী হলে দ্রুত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়, যা উন্নয়নমূলক কাজ দ্রুত বাস্তবায়নে সাহায্য করে।
৩. প্রযুক্তি ও আধুনিকীকরণ – আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রশাসন আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর হতে পারে, যা জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করে।
৪. নৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা – একটি শক্তিশালী প্রশাসন রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সক্ষম এবং এর মাধ্যমে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

বাংলাদেশে প্রশাসনকে শক্তিশালী করার জন্য কয়েকটি করণীয় পদক্ষেপ:
১. প্রশাসনিক সংস্কার – প্রশাসনিক কাঠামো ও নীতি সংস্কার করতে হবে যাতে তা আরও স্বচ্ছ এবং দক্ষ হয়।
২. প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ – সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতার উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।
৩. দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ – দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
৪. প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি – প্রশাসনে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে সেবার মান উন্নয়ন করতে হবে।
৫. প্রশাসনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা – রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমিয়ে প্রশাসনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

গণতন্ত্রের পতন এবং দেশের ভবিষ্যত
গণতন্ত্রের পতন বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। এর কারণ:
১. রাজনৈতিক অস্থিরতা – যদি দেশে গণতন্ত্র সুসংগঠিত না হয়, তবে তা দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংঘর্ষে পরিণত হতে পারে।
২.. অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হওয়া – শক্তিশালী গণতন্ত্র থাকলে দেশ সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে, যা না হলে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে।
৩. জনগণের বিশ্বাসহীনতা – সরকার ও রাজনৈতিক দলের প্রতি জনগণের আস্থা হারানোর ফলে গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাবে।

সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ
•রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা – যদি গণতন্ত্র সঠিকভাবে কার্যকর হয়, তবে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে, যা উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয়।
•অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি – গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সফল হলে দেশের অর্থনীতি বেড়ে উঠবে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী হবে।
•শ্রেণীভেদ ও বৈষম্য কমে আসবে – গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে সমাজে বৈষম্য কমে যাবে এবং অধিকাংশ মানুষ উন্নতির সুযোগ পাবে।

সুশিক্ষিত জাতি গঠনে করণীয়: প্রযুক্তি, প্রশাসনিক সংস্কার ও আন্তর্জাতিক উদাহরণ
একটি দেশকে স্বল্পসময়ের মধ্যে উন্নত করতে হলে শিক্ষা, প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রশাসনিক সংস্কার ও সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তন জরুরি। উন্নত দেশগুলো যেমন চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও এস্তোনিয়া স্বল্পসময়ে তাদের জনগণকে শিক্ষিত ও দক্ষ করে তুলেছে। বাংলাদেশেও একই রকম পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

১. মানসম্মত শিক্ষা ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা

সবার জন্য প্রযুক্তি-ভিত্তিক শিক্ষা চালু করা
•চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ায় শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই কোডিং, রোবোটিক্স, AI ও ডাটা অ্যানালিটিক্স শেখে। বাংলাদেশেও প্রতিটি স্কুলে এসব বিষয় বাধ্যতামূলক করতে হবে।
•কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র সনদ নির্ভর না হয়ে বাস্তব কাজ শিখতে পারে।

শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি দূর করা
•শিক্ষক নিয়োগ, পরীক্ষা ও সার্টিফিকেট প্রদান ডিজিটাল করতে হবে যাতে দুর্নীতি কমে।
•শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত মনিটরিং ও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

অনলাইন শিক্ষা ও ইন্টারনেট সহজলভ্য করা
•ফ্রি ইন্টারনেট ও ডিজিটাল ল্যাব তৈরি করা, যেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও অনলাইনে শিখতে পারে।
•MOOC (Massive Open Online Courses) এর মাধ্যমে বিশ্বমানের শিক্ষা বিনামূল্যে সবার জন্য উন্মুক্ত করা।

২. জনগণের দায়িত্ববোধ ও নৈতিকতা গড়ে তোলা
‘শুধু নিতে নয়, দিতে শিখতে হবে’ – এই মানসিকতা গঠন
•সরকার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জনগণকে বোঝাতে হবে যে একটি দেশ কেবল সরকারি উদ্যোগে বদলায় না, জনগণেরও ভূমিকা রাখতে হয়।
•সামাজিক দায়িত্বশীলতা পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যেন শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে ওঠে।

ন্যাশনাল সার্ভিস চালু করা (South Korea Model)
•দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রত্যেক নাগরিককে বাধ্যতামূলকভাবে কিছু সময় জাতীয় উন্নয়নে কাজ করতে হয়।
•বাংলাদেশেও পরিচ্ছন্নতা অভিযান, দুর্নীতি বিরোধী কর্মসূচি ও কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে।

গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি
•দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়া ও ইউটিউব ব্যবহার করতে হবে।
•জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সরকারি কাজের স্বচ্ছতা মূল্যায়ন করা উচিত।

৩. প্রশাসনিক দুর্নীতি রোধ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা
প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুর্নীতির লাগাম টানা
•এস্তোনিয়া সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্রশাসন তৈরি করে দুর্নীতি প্রায় শূন্যে নামিয়ে এনেছে। বাংলাদেশেও সব সরকারি কাজ অনলাইনে করতে হবে।
•প্রতিটি সরকারি দফতরের কাজ অনলাইনে মনিটরিং করার ব্যবস্থা করতে হবে যেন কেউ দায়িত্ব অবহেলা করতে না পারে।

জনগণের অভিযোগ জানানোর সহজ ব্যবস্থা চালু করা
•একটি কেন্দ্রীয় অনলাইন অভিযোগ প্ল্যাটফর্ম চালু করতে হবে যেখানে মানুষ সরাসরি দুর্নীতির তথ্য দিতে পারবে।
•দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান কঠোর করতে হবে।

নেতা ও কর্মকর্তাদের কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা
•দক্ষিণ কোরিয়ার মতো ‘ওপেন গভর্নমেন্ট’ পদ্ধতি চালু করতে হবে, যেখানে জনগণ সরাসরি সরকারি নীতির উপর মতামত দিতে পারে।
•মন্ত্রী, আমলা ও সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতার মূল্যায়ন বাধ্যতামূলক করতে হবে।

গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা
•দুর্নীতির বিরুদ্ধে রিপোর্টিং করার জন্য সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও স্বাধীনতা দিতে হবে।
•দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তথ্য ফাঁস করলে তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৪. কত সময় লাগবে? পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কৌশল
১-৩ বছর:
•শিক্ষা ক্ষেত্রে কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।
•সরকারি কাজ ডিজিটালাইজেশন করা এবং অনলাইন সেবা নিশ্চিত করা।
৩-৫ বছর:
•দুর্নীতির বিরুদ্ধে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা।
•ন্যাশনাল সার্ভিস চালু করা এবং জনগণকে জাতীয় কাজে যুক্ত করা।
৫-১০ বছর:
•সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর প্রশাসন চালু করা।
•একটি সুশিক্ষিত, প্রযুক্তি-নির্ভর ও দায়িত্বশীল জাতি গঠন সম্পন্ন করা।
পরিশেষে

স্বল্প সময়ে দেশের উন্নতির জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার, জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি দমন এবং সুশিক্ষার বিস্তার অত্যন্ত জরুরি। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং এস্তোনিয়ার সফল উদাহরণ প্রমাণ করে যে, সঠিক পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের মাধ্যমে খুব কম সময়ে একটি দেশকে বদলে ফেলা সম্ভব। বাংলাদেশেও সুশিক্ষা, প্রযুক্তি এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে আমরা দ্রুত উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে পৌঁছাতে পারব।

বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রশাসনের শক্তিশালী ভূমিকা অপরিহার্য। প্রশাসন যদি আরও দক্ষ এবং স্বচ্ছ হয়, তবে দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যাপক উন্নতি সম্ভব। প্রশাসনকে আধুনিক, দক্ষ এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ করা হলে দেশের উন্নয়ন আরও দ্রুত এবং টেকসই হবে।

বিশ্বের অনেক দেশ প্রশাসনতন্ত্রকে শক্তিশালী করে সফল উন্নয়ন অর্জন করেছে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া এবং জার্মানি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব দেশের প্রশাসন স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ।

বাংলাদেশের জন্য এসব মডেল অনুসরণ করা জরুরি। সিঙ্গাপুরের প্রশাসনিক দক্ষতা, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি ব্যবহারের নীতি এবং জার্মানির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রশাসন পরিচালনা করতে পারলে, সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে এবং দেশের উন্নয়ন আরও দ্রুত হবে।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মত দ্বিমত

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ: প্রশ্ন, গোপনীয়তা ও জনআস্থার সংকট

Published

on

বিএটিবিসি

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও অস্পষ্টতা বিদ্যমান, যার কেন্দ্রে রয়েছে কিছু মৌলিক প্রশ্ন—যেগুলোর উত্তর না পাওয়া মানে জাতির সামনে একটি অন্ধকার পথ খোলা রাখা। জনমনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে: কোথায় দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, এবং কে বা কারা এখন প্রকৃত ক্ষমতার মালিক?

গণআন্দোলনের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক পর্বের অবসান ঘটলেও, নীতিনির্ধারকদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি জনগণের মধ্যে এক ধরনের অবিশ্বাস ও হতাশার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে সেনাপ্রধান এবং সংশ্লিষ্ট সামরিক নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে যেভাবে নীরবতা বজায় রাখা হয়েছে, তা শুধু দুঃখজনক নয়, বরং তা রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপর আস্থা হারানোর অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শেখ হাসিনার ‘সেফ এক্সিট’ ইস্যু, কিছু রাজনৈতিক নেতার দেশত্যাগে সেনা ক্যান্টনমেন্টের সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতা, এবং পরবর্তীতে ভারতের সঙ্গে কৃত্রিম উত্তেজনা তৈরি—সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, একটি অদৃশ্য ও অগোচর ক্ষমতাকাঠামো বাংলাদেশকে একটি নির্দিষ্ট পথে নিয়ে যেতে চায়, যেখানে গণতন্ত্রের চেয়ে “নিয়ন্ত্রিত স্থিতিশীলতা”কেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো, জাতির সামনে এই গোপন অধ্যায়গুলোর সত্য প্রকাশ করা। সত্যকে প্রকাশ্যে না আনলে ইতিহাসে যেমন বিভ্রান্তি তৈরি হয়, তেমনি জনগণের আস্থাও স্থায়ীভাবে ক্ষুণ্ন হয়। ড. ইউনূসের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের নীরবতা বা ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যেখানে তিনিই বহুবার গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলেছেন, সেখানে এই সন্ধিক্ষণে তার সক্রিয়তার অভাব বিস্ময়ের উদ্রেক করে।

নির্বাচন প্রশ্নে কিংবা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে শীর্ষ নেতৃত্বের যে অনীহা বা নিরবতা দেখা যাচ্ছে, তা কেবলমাত্র রাজনৈতিক সংকট নয়—এটি একটি রাষ্ট্রীয় নৈতিকতার সংকটও। জনগণ এখন এমন এক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে, যেখানে প্রশ্ন করা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহের সমান; অথচ প্রশ্নের উত্তর না পেলে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎই অনিশ্চিত।

সুতরাং, এখন সময় এসেছে একটি নিরপেক্ষ, শক্তিশালী এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত তদন্ত কমিশন গঠনের—যা সেনাপ্রধান, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং বিদেশি সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কিত যাবতীয় গোপন অধ্যায় জনসমক্ষে প্রকাশ করবে। একইসাথে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা ও গণমাধ্যমের স্বাধীন অভিমত প্রকাশের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

এই জাতি অনেক কিছু সহ্য করেছে, এখন সে প্রশ্ন করছে। প্রশ্নের উত্তর না দিলে ইতিহাস নিজেই একদিন তার বিচার করবে। তবে এখানে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করলেই চলবে না—দাবি করতে হবে জোর গলায়। তাই আজ সময় এসেছে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রত্যাশা ও জবাবদিহির মুখোমুখি করার।

প্রথমত, সেনাপ্রধান ও সংশ্লিষ্ট সামরিক নেতৃত্বের গোপন তৎপরতা আদৌ কি তাদের সাংবিধানিক দায়িত্বের পরিসরের মধ্যে পড়ে? যদি পড়ে না থাকে, তবে এই বিষয়ে স্পষ্ট তদন্ত হওয়া প্রয়োজন—স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে, যা কেবল সামরিক নয়, বেসামরিক পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হবে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী হিসেবে রাষ্ট্রপতির ভূমিকাও এখানে প্রশ্নবিদ্ধ। সংবিধান অনুযায়ী তিনিই সামরিক বাহিনীর প্রধান, তাহলে এই “গোপন রাষ্ট্রচালনা”র দায়ভার থেকে কি তিনি মুক্ত? তার কাছ থেকে কি কোনো জবাবদিহি আশা করতে পারি?

দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক দলগুলোর নিরবতা কী নির্দেশ করে? এটি কি ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার কৌশলগত প্রতিযোগিতা, না তারা আদৌ জানে না কীভাবে জনগণের পক্ষ নিতে হয়? একথা ভুলে গেলে চলবে না, রাজনীতি যদি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তবে তা দখল হয়ে যায় অদৃশ্য শক্তির হাতে। আজ জনগণ এই রাজনৈতিক নেতাদের কাছে জবাব চায়—তাদের ভূমিকা কি ছিলো, কোথায় তারা দাঁড়িয়ে আছেন?

তৃতীয়ত, জনগণের কী কিছুই বলার নেই? এই রাষ্ট্র তো তাদেরই; এই ভূখণ্ড, এই সংবিধান, এই পতাকা—সবই জনগণের। তাহলে কেন তারা শুধুই দর্শক হয়ে থাকবে? আমাদের দাবি করতে হবে—স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, সেনাবাহিনীর সাংবিধানিক অবস্থান পুনর্ব্যাখ্যা, রাজনৈতিক দলের জবাবদিহিতা এবং রাষ্ট্রপতির স্পষ্ট অবস্থান।

আমাদের দাবি স্পষ্ট:
১. একটি নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন হোক—যা সেনা নেতৃত্ব, শেখ হাসিনার সেফ এক্সিট, ভারতের ভূমিকা ও রাজনৈতিক দলের নিরবতা বিষয়গুলো পর্যালোচনা করবে।
২. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা ও পুনঃগঠন।
৩. রাষ্ট্রপতির একটি প্রকাশ্য বিবৃতি, যাতে তিনি তার অবস্থান পরিষ্কার করবেন—গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে তিনি দাঁড়ান, না নীরব প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে থাকবেন।
৪. রাজনৈতিক দলগুলোর যৌথ সংবাদ সম্মেলন ও অবস্থান স্পষ্ট করা।
৫. জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ—শান্তিপূর্ণভাবে, কিন্তু দৃঢ়তার সাথে—জনসভা, গণশুনানি, এবং তথ্যের দাবিতে সোচ্চার হতে হবে।

শেষ কথা, ইতিহাস অপেক্ষা করে না। যারা আজ নীরব থাকবেন, কাল ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন। আর যারা আজ প্রশ্ন করছেন, তারা আগামীর ভিত্তি নির্মাণ করছেন।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যেসব অর্জন

Published

on

বিএটিবিসি

গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এই সরকারের ৮মাস অতিবাহিত হয়েছে। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে মানুষের বাকস্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার ফিরলেও আইনশৃঙ্খলা আর গণহত্যার বিচারে ধীরগতি নিয়ে অস্বস্তিতে অনেকেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব সমূহ ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ, আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করা, আহতদের সুচিকিৎসা করা ও নিহতদের পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে এবং নির্বাচনের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা। পাশাপাশি সকল খাতে সার্বিক সংস্কার নিশ্চিত করা। এই দাবিগুলোর প্রতি জনগণের প্রত্যাশা ছিল বিশাল এবং তা ছিল যথার্থ। তবে সরকার এই দায়িত্বসমূহ কতটুকু পালন করতে পেরেছে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। আইন শৃঙ্খলা এবং ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের বিচারে সরকারের ধীরগতিতে অসন্তুষ্ট দেশের নাগরিক সমাজ। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারের অতিরিক্ত নমনীয়তা এই দায়িত্ব সমূহ যথাযথ পালনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পতনের ঐতিহাসিক দিন। এর পরবর্তী কয়েকদিনে বিপ্লবী জনতার চাপে সরকারের পতন ঘটে। ড. ইউনূস সে সময়ে প্যারিসে ছিলেন, যার কারণে সরকারের দায়িত্ব গ্রহণে কিছুটা বিলম্ব হয়। তবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের আহ্বানে তিনি সম্মত হনএবং দেশের জনগণও তাকে সমর্থন জানায়। ৮ আগস্ট, ২০২৪-এ তিনি শপথ গ্রহণ করেন প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে, যা ইতিহাসের একটি মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায়।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর,দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল বিপর্যস্ত। শেখ হাসিনার সরকার লুটপাট ও দুর্নীতির কারণে ব্যাংকগুলোর তহবিল প্রায় খালি হয়ে গিয়েছিল,এবং ভারতসহ অন্যান্য দেশের ঋণ পরিশোধের চাপ ছিল। এরপর শুরু হয় ভয়াবহ বন্যা, ভারত ত্রিপুরার ডুমুর বাঁধ খুলে দিলে স্রোতের মতো পানি বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়,এবং একযোগে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তবে,এই দুর্দিনে সরকারের পাশাপাশি বহু সামাজিক সংগঠনও মানুষের পাশে দাঁড়ায়।

এমন অবস্থায়, বিভিন্ন ছদ্মাবরণে পতিত সরকারের সমর্থকরা দাবি আদায়ের নামে মাঠে নামে।আনসারদের কর্মসূচি থেকে শুরু করে শ্রমিকদের আন্দোলন,গার্মেন্টস ভাঙচুর,শিক্ষার্থীদের অটোপাশের দাবি- এসব কিছু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে ঘটে। এসব আন্দোলনের পেছনে দেখা যায় সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ।এর মধ্যে একটি বড় ষড়যন্ত্র শুরু হয় ইসকন নেতা চিন্ময় কৃঞ্চ দাসের গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে,যেখানে দেশি-বিদেশি চক্র সাম্প্রদায়িক অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করে। ভারতের টেলিভিশন চ্যানেল মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে এই সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়াতে থাকে। বাস্তবতা হলো, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিই মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া,ভারতীয় গণমাধ্যমসহ কিছু দেশি-বিদেশি চক্র একযোগে ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে থাকে,যা সরকারকে ব্যর্থ করতে তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা ছিল। এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে ৪৯টি ভারতীয় গণমাধ্যম ১২ আগস্ট থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এসব মিডিয়া পণ্য হিসেবে কেবল গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, যা বাস্তবতার কিছুই ছিল না। তবে,এখনো এসব ষড়যন্ত্র থেমে যায়নি। বরং নতুন নতুন আক্রমণ আসতে পারে, যার মোকাবিলা করা কঠিন।

এখন প্রশ্ন হলো, দেশের মানুষ কী চায়! দেশের মানুষ একটি সুন্দর বাংলাদেশ চায়, যেখানে মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার থাকবে। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি হবে,এবং ক্ষমতায় আসা কিংবা টিকে থাকার জন্য কোনো দল বা গোষ্ঠীর গোলামি করবে না। জনগণ স্বাধীনভাবে কথা বলবে,এবং গণমাধ্যমও ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতে সক্ষম হবে। ফ্যাসিস্ট,খুনি ও লুটেরা সবাই বিচারের মুখোমুখি হবে। নির্বাচন শিগগিরই অনুষ্ঠিত হবে এবং সৎ, যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিরা মনোনয়ন পাবে।এমন একটি বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হলে, ড. ইউনূস সরকারের দোষত্রুটি নিয়ে অযথা সময় নষ্ট না করে, ঐক্যবদ্ধভাবে গণ-অভ্যুত্থানের শক্তি একত্রিত করে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
ড. ইউনূস এই দেশের হাল ধরার পর আজ পর্যন্ত কোনো গুরুতর ভুল করতে দেখা যায় নাই। কাউকে তাচ্ছিল্য করে কোনো নোংরা ভাষাও ব্যবহার করেননি। আজ পর্যন্ত এমন কোনো কথা বলেননি যার জন্য আমরা তাঁর প্রতি কেউ বিরক্ত হবে।

ভারত হয়তো তার সোনার ডিম দেওয়া মুরগী হারালো। তবে ভারত বসে নেই । ভারত ট্রাম্পের কাছে গিয়েছে, কূটনৈতিক ভাবে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে, মিডিয়ার মাধ্যমে নানা প্রোপাগাণ্ডা চালিয়েছে। তবুও কি কোনো কূটনীতিক চাপ বাংলাদেশকে দিতে পেরেছে? কারন,ড. ইউনূস এর বৈশ্বিক ইমেজ। অনেকেই বলেছিলো সামিট গ্রুপ,এস আলম গ্রুপের ব্যাংক হিসাব জব্দ করলে অর্থনৈতিক স্থবিরতা আসবে। ড. ইউনূস তাদের সবার ব্যাংক হিসাব ক্লোজ করালেন। উল্টো মানি লণ্ডারিং এর মামলা দিলেন। অর্থনৈতিক অবস্থা আগের চেয়ে উন্নতর দিকে। ৩/৪ মাস ধরে ডলার স্থিশীল রয়েছে। লুট হওয়া ব‍্যাংকগুলোকে বন্ধ না করে ধিরে ধিরে বাচিঁয়ে তুলছেন !

উগ্রবাদী সংগঠন ইসকন যখন মাঠে নেমেছিলো, তখন ইসকনের উগ্র কর্মীদেরকে ভারত থেকে বিভিন্ন তথ্য দেওয়া হয়েছিলো,’ইউনূস সরকার হিন্দুদের গায়ে আঘাত দিলে তাকে ব্যবহার করে ভারত বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করবে’। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ইসকন সমর্থকরা চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর গায়ে গরম পানি ঢাললো,আইনজীবী সাইফুলকে শহীদ করলো। সরকার যারা গরম পানি ঢেলেছে তাদের সবাইকে গ্রেপতার করেছে। চিন্ময় এর মতো ’র’-এর এজেন্টকে গ্রেপ্তার করলে ভারত বড় ঝামেলা করবে, অথচ চিন্ময়ের গ্রেপতার হওয়াতে অনেক হিন্দু খুশি হয়েছিলো। ভারতকে কোন শব্দ করতে না দিয়ে উলটো পুরো ইসকনকে ঠান্ডা করে দিয়েছেন।

ড: মুহাম্মদ ইউনূস দ্রব‍্যমুল‍্যের লাগাম টেনে ধরেছেন। বাজারের সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগের চেয়ে বেশ কমেছে, এমনকি এই রোজাতেও। সয়াবিন তেল নিয়েও যে সংকট ছিলো তা রোজার প্রথম ৫ দিনে সহনশীল ছিল। সর্বশেষ কখন আমরা পিয়াজ ৩০-৩৫ টাকা, ডিমের ডজন ১২০ আর আলু ২০ টাকা, ৪০০ টাকার কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা কেজি,১০০ টাকার তরকারি এখন ৩০/৪০ টাকা ছিল তা অনেকেই ভুলে গেছি।

এদিকে রোজার শেষে ঈদুল ফিতরের উৎসবও আরও রঙিন হয়ে ধরা দিয়েছে দেশবাসীর কাছে। এদেশে চিরায়ত চিত্র সড়কে নাড়ীর টানে ঘরে ফেরা যানবাহনের যাত্রীদের ভোগান্তি। এবার সেই দুর্দশার চিত্রও উধাও! ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িফেরা মানুষের প্রধান রুট ঢাকা-উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে কোনো যানজট নেই। হাইওয়ে পুলিশ ২৪ ঘণ্টা কঠোর শ্রম দিয়ে মহাসড়ক যানজট মুক্ত রেখেছে। একই দৃশ্য দেখা গেছে অন্যান্য মহাসড়কেও। প্রশাসনের আন্তরিক তদারকির কারণে মহাসড়কে নেই যানবাহনের বাড়তি চাপ, দুই-একটি ঘটনা ছাড়া স্বস্তির ঈদযাত্রা দেখা গেছে রাজধানীর সবচেয়ে বড় বাসস্ট্যান্ডগুলোতে। গাবতলী, মহাখালী বাস টার্মিনালের যাত্রীদের অনেকে বলছেন, সড়কে যা ঘটেছে, তা বিশ্বাসই হচ্ছে না তাদের। জীবনে এত নির্বিগ্নে ঈদযাত্রা তারা কখনও করতে পারেনি। ঈদের মধ্যে গত ৪০ বছরেও এমন দৃশ্য দেখেনি দেশের মানুষ।

হাসিনা যাওয়ার সময় আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া থেকেও ঋণ নিয়ে রেখেছিলো। ড.ইউনূস আস্তে আস্তে ঋণ পরিশোধ করা শুরু করেছেন জানুয়ারি থেকে। কাতার থেকে জ্বালানি কেনা হলেও ২৫৪ মিলিয়ন ডলার বকেয়া রেখেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরের মধ্যেই ২৩ এপ্রিল বকেয়া টাকার সর্বশেষ পেমেন্ট দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বিভিন্ন সংস্থার সর্বমোট বকেয়া ছিল ৩.২ বিলিয়ন ডলার। অন্তর্বর্তী সরকার সেটি ৬০০ মিলিয়নে নামিয়ে এনেছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব ৪ দিনের জন্য বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। গুতেরেসের সফর এই সরকারের বিশ্বব্যাপি স্বীকৃতি বাড়াবে৷ তাছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন আগামী বছর মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে সেখানে তাদের সাথে ইফতার করতে চান!

ড.মুহাম্মদ ইউনূসের কণ্ঠে যে মমত্ত দেখা যায় তা কৃত্তিম নয়। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক টানে উচ্চারিত তার প্রতিটি শব্দই যেন বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের হৃদয়ের গভীরতম যন্ত্রণার প্রতিধ্বনি হয়ে উঠেছিল। এ ভাষা শুধুই কথা নয়, এ ভাষা ছিল অনুভূতির। একটি হারানো শেকড়ের আহাজারি ও একটি জাতির অস্তিত্ব সংকটের নির্জন কান্না। তার কণ্ঠে কোনো জটিল রাজনীতি নাই,নেই কোনো চাতুরতা বা কূটনৈতিক ভাষা। শুধু এক প্রবীণ মানুষের মমতা আর এক নিঃস্ব জাতির বেদনার প্রতি গভীরতম সংবেদনশীলতা।

ড. ইউনুসের বক্তব্য কখনও অ-কাজের কথা বলেন না। সবচেয়ে বেশী আকর্ষণ করে সেটা হলো তিনি কখনও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করেন না, অস্বীকারও করেন না, ছোটও করেন না আবার মহাভারত বি-শা-লও বলেন না। ইতিহাস ইতিহাসের জায়গায় রেখে দেন। কারও কোন সমালোচনা বা ব্যাঙ্গ করে কথা বলেন না। তিনি কাউকে ভয় দেখান না,প্রতিশোধ নিবেন ও না। তিনি নিজেকে নিয়ে অহংকার করেন না। দুনিয়ার কারও চাটুকারিতাও করেন না। তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন না, রাগ করে কথাও বলেন না। তিনি ঠান্ডা মাথার এক দারুণ খেলোয়াড়। তিনি ভবিষ্যতের কথা বলেন।স্বপ্নের কথা বলেন। তরুণদের এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। তিনি ধর্ম নিয়ে ক্রিটিসাইজ করেন না। তিনি এক অনন্য অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। এটাকেই বলে আন্তর্জাতিক ব্যাক্তিত্ব।

ডঃ ইউনুসের সফলতা যাই হোক না কেন, সুযোগ পেলেই আমরা ড.ইউনুসকে শূলে চড়াই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করি। যেটা না সেটাও বলি। কিন্তু বিগত ৮মাসে ২০০’র অধিক আন্দোলন আর হঠাৎ করে সকল ক্ষেত্রে তীব্র বৈষম্য অনুভূত হওয়া জাতিকে নিয়ে তিনি যে কাজগুলো করছেন সেগুলোর জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোটাও জরুরী।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্জনসমূহ:
১.বিশ্বের ৭৫ তম দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক গুম বিরোধী সনদে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ।
২.আওয়ামী আমলে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির কারণে বাফুফের উপর ফিফা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো৷ বাফুফের উপর সে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ফিফা।
৩.সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ থেকে ৩২ করা হয়েছে।
৪.ধর্ষণের তদন্ত ১৫ দিন এবং বিচার ৯০ দিনের মধ্যে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
৫.সর্বশেষ ৮ মাসে দেশী বিদেশী ঋণ পরিশোধ করেছে ৬২ হাজার কোটি টাকা।
৬. রেমিট্যান্স প্রবাহ বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে । দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে ২৭.৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। যা গতবছরের এই সময়ের তুলনায় ৪ বিলিয়ন বেশি।
৭. বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পতন থেকে রক্ষা করেছেন। রিজার্ভ বেড়ে ২ হাজার ১৪০ কোটি ডলার।
৮. ডলারের দামের পতন ঠেকানো সম্ভব হয়েছে।
৯. রমজানে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার আশংকাকে আশ্চর্যজনকভাবে সফল হয়েছেন। রোজায় জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি।
১০. হাসিনা ও তার পরিবারের একাউন্ট থেকেই উদ্ধার করেছে ৬৩৫ কোটি টাকা।
১১. দেশের খাদ্যপণ্যে ভর্তুকি বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ।
১২. গত ২২ মাসের তুলনায় সর্বনিম্ন মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে এই ফেব্রুয়ারিতে।
১৩. স্কুলের বইগুলোতে হাসিনার উল্টাপাল্টা সিলেবাস আর পারিবারিক তোষামোদির গল্প বাদ দিয়ে সাজানো গোছানো সিলেবাস দেওয়া হচ্ছে।
১৪. এখন থেকে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকেরা পাবেন দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তার মর্যাদা।
১৫. লুট হওয়া ব্যাংকগুলোর নিশ্চিত ধ্বংস হতে রক্ষা করেছেন।
১৬. আদানির কাছে বিদ্যুৎ খাত ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। পুরো রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ভালো আছে।
১৭. রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১৫% এর বেশি। ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে তার সময়ে।
১৮. বিগত বছরগুলোতে বর্ডার কিলিং গড়ে বছরে ৫০০ এর অধিক ছিল। গতবছর ছিল ৫৭৭জন। (তথাকথিত বন্ধুর দ্বারা হত্যা।) ইউনুস সরকারের সময় তা ৭ মাসে ১০ জন।
১৯. দেশটাকে রাজ্য থেকে আবার রাষ্ট্রের মর্যাদায় আসীন করেছেন তিনি। তাই জুলাই বিপ্লবকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলা হয়।
২০. বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে ভারতের সাথে চোখে চোখ রেখে কথা বলার মতো সৎ সাহস একমাত্র প্রফেসর ইউনুসের আছে।
২১. সকল সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব একমাত্র তার পক্ষেই আদায় করা সম্ভব হয়েছে।
২২. বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসে একমাত্র তার আমলেই সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ও ডিজিটাল প্লাটফর্মে তুমুল সমালোচনা ও তার বিরুদ্ধে কুৎসিত ভাষায় অপপ্রচার করা যাচ্ছে। কাউকে তিনি গ্রেফতার করেন নি। যা ফ্যাসিসট জমানায় কল্পনাও করা যেত না।
২৩. প্রবাসীদের ভিআইপি মর্যাদা দিয়েছেন তিনি। ঘোষণা করেছেন রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে।
২৪. তার যোগ্য নেতৃত্বে আরব আমিরাতে বেশ কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি কারাগার থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছে।
২৫. জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে তিনি মাত্র ৭ সদস্যের প্রতিনিধি নিয়ে যোগদান করেন। ফ্যাসিস আমলে প্রতি বহরে থাকতো প্রায় ৩০০ জন। যার বিপুল খরচ জাতি বহন করতো।
২৬. বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র বক্তা তিনি যার প্রতি ঘন্টা বক্তব্যের মূল্য প্রায় কোটি টাকা।
২৭. রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে ফ্যাসিস্ট সরকার। যা মেরামত ও সংস্কার করছেন তিনি।
২৮. প্রতিটি হত্যাকান্ডের বিচার কাজ শুরু করেছেন তিনি।
২৯. রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজে দেশে পাঠানোর জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাতে আগামী ঈদ তারা নিজ ভিটা বাড়িতে করতে পারে।
৩০. বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে যোগ্য রাষ্ট্রনায়ক ড. ইউনুস। পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বাধিক সমাদৃত বাঙালি তিনি।
অনেক কিছু বলা সহজ। গালি দেওয়া সহজ ৷ নির্বাচন দ্রুত চাওয়াও সহজ ৷ হাসিনার রেখে যাওয়া রুগ্ন অর্থনীতিকে যে কারো জন্য এসে ঠিক করতে ঘাম ছুটে যেতো। পারতো কিনা সেটা নিয়েও ঢের সন্দেহ আছে। উপরন্তু, অর্থনীতি, দ্রব্যমূল্য, মুদ্রাস্ফীতি ঠিক রাখতে না পারলে ক্ষমতায় আসলেও যে টিকতে মুশকিল হবে, এটা রাজনৈতিক দলগুলো ভালো করেই জানে।

র্দুনীতিগ্রস্থ একটা দেশ আর ব্যক্তি স্বার্থকেন্দ্রিক একটা জাতিকে ঠিক করতে ড. ইউনুস হয়তো হিমশিম খাচ্ছে অনেক কিছু করতে। প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যদি সম্মত না হতেন তাহলে দ্বিতীয় অন্য কোন ব্যক্তিকে সেই জায়গায় তখন চিন্তা করতে পারিনি।

বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হলো ২০২৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, লাটভিয়া, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্লোভেনিয়া এবং সুইডেনের ভিসা আবেদন এখন থেকে করা যাবে ঢাকার সুইডেন দূতাবাস থেকে। এছাড়াও, পর্তুগাল, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও ক্রোয়েশিয়া তাদের নিজস্ব ভিসা অফিস চালু করেছে ঢাকায়, যা ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারের দক্ষ কূটনৈতিক তৎপরতার ফলে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দীর্ঘদিনের দাদাগিরির রাজনীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটিয়ে সরকার বাংলাদেশিদের জন্য সহজ, স্বচ্ছ এবং দ্রুত ভিসা প্রক্রিয়া নিশ্চিত করেছে। ফলে: ভিসা আবেদনকারী বাংলাদেশিদের জন্য সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। ভিসা প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও সহজ হবে। বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। দক্ষ জনশক্তি, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের জন্য ইউরোপে যাওয়ার পথ আরও উন্মুক্ত হবে।

ড. ইউনুস সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ বিশ্ব মঞ্চে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং জনসাধারণের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘবের এই পদক্ষেপ তার নেতৃত্বের আরেকটি সফলতা। ইউরোপের নতুন দুয়ার উন্মুক্ত হলো- এটি বাংলাদেশের জন্য এক বিশাল অগ্রগতি!

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে সেদেশের সরকার ও চীনা কম্পানিগুলোর কাছ থেকে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে দেশটির প্রায় ৩০টি কম্পানি বাংলাদেশের বিশেষ চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে। এ ছাড়া মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্পে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে চীন। চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা হিসেবে আরো ১৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। অনুদান ও অন্যান্য ঋণ সহায়তা হিসেবে আসবে বাকি অর্থ। বাংলাদেশের বিদ্যমান শুল্ক ও কোটামুক্ত রপ্তানি সুবিধা আরো দুই বছর বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছে চীন। এর আগে চীনা বাজারে ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য এই সুবিধা ছিল। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে চীনা উপ প্রধানমন্ত্রী ডিং জুয়েশিয়াংয়ের এক বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে চীনা উপ প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন।

চীন বাংলাদেশ থেকে আম নিতে আগ্রহী। বাংলাদেশও চীনে আম পাঠাতে চায়। বাংলাদেশ চীনে আম রপ্তানির জন্য ৬ বছর আগে দেশটির কাছে আবেদন করেছিল। তবে নানা জটিলতায় সেটা আর কার্যকর হয়নি। তবে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের মধ্যে দিয়ে সেদেশে আম রপ্তানির দুয়ার খুলেছে। আগামী মে-জুন মাস থেকে চীনে আম রপ্তানি শুরু হবে। এর মধ্যে দিয়ে বিদেশে বাংলাদেশি আমের চাহিদা বাড়বে।

তিস্তা নদী প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক আগেই থেকে চীনের সহায়তা চেয়ে আসছে বাংলাদেশ। এবার প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে এই প্রকল্পে সহায়তার আশ্বাস মিলেছে। তবে শুধু তিস্তা প্রকল্প নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকেননি অধ্যাপক ইউনূস। তিনি নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালনার জন্য চীন থেকে ৫০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান চেয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক চীন সফরে সেদেশের পানিসম্পদমন্ত্রী লি গোইয়িংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেসময় নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। বৈঠকে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা ও ঢাকার চারপাশের দূষিত পানি পরিষ্কারের বিষয়ে সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন ড. ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে একটি চুক্তি ও ৮টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং কারিগরি সহযোগিতা–সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের চিরায়ত সাহিত্যের অনুবাদ ও প্রকাশনা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিনিময় ও সহযোগিতা, সংবাদ বিনিময়, গণমাধ্যম, ক্রীড়া ও স্বাস্থ্য খাতে সই হয়েছে ৮টি সমঝোতা স্মারক।

ড. ইউনূস এর প্রশংসা আগে একজন সহ্য করতে পারতেন না,তিনি রোগ ছড়িয়ে পালিয়েছেন । তিনি যথযত সম্মান প্রাপ্য অথচ ড. ইউনূস দেশে র্দীঘদিন ধরে অবহেলিত ছিলেন। তাঁকে আরেকটু দেশটা গোছানোর সময় দিন। তিনি থাকার জন্য আসেন নাই। নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়ে একের পর এক চমক দেখিয়ে যাচ্ছেন। জুলাই অভ্যুত্থানের মতো এত বড় একটি ঘটনার পর সারাদেশে যেখানে বিশাল বিশৃঙ্খলা থাকার কথা, সেখানে সরকার দারুণভাবে সব পরিস্থিতি সামলে নিয়েছে। দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ড. ইউনূস একটার পর একটা সফলতা অর্জন করে চলেছেন। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে চীন ও ভারত কূটনীতিতেও তিনি দারুণ চমক দেখিয়ে এখন সারাদেশের মানুষের প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেছেন। সাধারণ মানুষের চাওয়া ড. ইউনূস আরও অন্তত: চার বছর ক্ষমতায় থাকলে দেশের অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টা যাবে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। দু-চারটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া দেশের পরিস্থিতি শুধু সামাল দেওয়াই নয়, দারুণভাবে দেশ পরিচালনা করে চলেছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার।

লেখক: অধ্যাপক সরওয়ার জাহান
উদ্দোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা
সাউদার্ণ ইউনিভার্সিটি

অর্থসংবাদ/কাফি

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

রাষ্ট্রের মালিক জনগণ—গণভবন ও সংসদ খুলে দাও

Published

on

বিএটিবিসি

এই রাষ্ট্রে কে মালিক? সংবিধান বলে—জনগণ। বাস্তবে কি আমরা সেই মালিক? যখন একটি জাতির লক্ষ লক্ষ মানুষ খোলা আকাশের নিচে ঘুমায়, হাসপাতালের বারান্দায় মরতে মরতে পড়ে থাকে, তখন সেই রাষ্ট্রের কেন্দ্রস্থলে গণভবন, সংসদ ভবনের মতো বিলাসবহুল স্থাপনা মাসের পর মাস খালি পড়ে থাকে। যেসব ভবনের প্রতিটি ইট, কাঠ, লোহা—সবই আমাদের রক্তঘামে গড়া, সেখানে আজ বসবাস করে এমন কিছু মানুষ, যারা এই জাতির জন্য অভিশাপ ছাড়া আর কিছু নয়। দুর্নীতি, চাটুকারিতা আর পারিবারিক রাজনীতির সিঁড়ি বেয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা কেবল রাষ্ট্রযন্ত্র দখল করেনি, দখল করেছে জাতির আত্মাও।

এই রাষ্ট্রের মূলধন আসে রিকশাচালক, গার্মেন্টস শ্রমিক, কৃষক, দোকানদার, শিক্ষক, সাধারণ নাগরিকের পরিশ্রম আর ট্যাক্স থেকে। মোবাইল রিচার্জে ট্যাক্স, চাল-ডাল কেনায় ট্যাক্স, এমনকি মৃত্যুর সনদ নিতেও ট্যাক্স। এই টাকায় চলে বিলাসবহুল সংসদ ভবন, শত একরজুড়ে নিরাপত্তাবেষ্টিত গণভবন। অথচ আজ এই ভবনগুলোতে থাকেন এমন সব মানুষ, যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন না—ক্ষমতায় থাকে সেনাবাহিনী, পুলিশ, আমলা, দলীয় ক্যাডার ও দুর্নীতির জাল বুনে। এরা জনগণের মুখোমুখি আসে না, আদালতের মুখোমুখি দাঁড়ায় না, কোনো জবাবদিহি মানে না। কেবল রাষ্ট্রটাকে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি ভাবে।

প্রশ্ন হলো—কেন এই ভবনগুলো ফাঁকা পড়ে থাকবে? যখন হাজারো মানুষ বস্তিতে, ড্রেনে, ফুটপাথে, রেলস্টেশনে রাত্রিযাপন করে? যেখানে একটা শীতের চাদর নেই, বাচ্চার জন্য একটা ওষুধ নেই, সেখানে এই নেতারা এসি রুমে শুয়ে কতোটা স্বাচ্ছন্দ্যে জাতির টাকা গিলে খাচ্ছে! কেন এসব ভবন সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত হবে না? মালিক তো জনগণ! তবে কেন মালিক আজ ঘরের বাইরে, আর চোরেরা ভেতরে?

২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার জোয়ারে শেখ হাসিনার পতন হয়। গণভবন, সংসদ ভবনের মতো ‘অস্পর্শ্য’ স্থাপনাগুলোতে ঢুকে পড়ে হাজারো মানুষ। কারণ তারা বুঝে গেছে—এই রাষ্ট্রে আর কোনো ভরসা নেই। তারা কারো দয়ায় নয়, নিজেদের অধিকারে ঢুকেছে। প্রমাণ করে দিয়েছে—এই ভবন কারো পারিবারিক সম্পত্তি নয়। এগুলো করদাতা গরিব মানুষের মালিকানাধীন, যারা তিলে তিলে রাষ্ট্র গড়েছে, কিন্তু আজ রাষ্ট্র তাদের গিলে ফেলছে।

আমরা আর চুপ থাকবো না। আমরা আর চুপ থাকলে এই দুর্নীতির, বিচারহীনতার, চোর-রাজনীতির শেকড় আরও গভীরে প্রবেশ করবে। এই ‘নেতা’ নামধারী দুর্নীতিবাজরা দেশকে বিদেশে বিক্রি করে দেয়, নিজেদের ছেলেমেয়েদের লন্ডনে পাঠায়, অথচ দেশের কৃষক ধানের দাম পায় না, শ্রমিক ন্যায্য মজুরি পায় না, শিক্ষার্থী চাকরি পায় না। এই রাষ্ট্র কাদের জন্য? এই ভবন কাদের জন্য?

এখনই সময়—এই ভবনগুলো জনগণের জন্য খুলে দিতে হবে। হ্যাঁ, জনগণের। কারণ রাষ্ট্রের মালিকানা কেবল এক টুকরো ভোট নয়, এটি একটি সার্বক্ষণিক অধিকার। এই ভবনগুলোতে তৈরি হোক অস্থায়ী আবাসন, খোলা হোক কমিউনিটি কিচেন, প্রতিষ্ঠিত হোক ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প। তবেই রাষ্ট্রের হর্তাকর্তারা বুঝবে, মানুষ কীভাবে বেঁচে থাকে। তবেই তারা বুঝবে, ক্ষমতা মানে সেবা, চুরি নয়।

গণভবন ও সংসদ ভবন জনগণের ঘর হোক—গৃহহীনদের নিরাপদ আশ্রয় হোক। সেখানে কোনো দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকের থাকার অধিকার নেই। যারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসে, জনগণের অর্থে বিলাস করে, দেশকে লুটপাটের অভয়ারণ্য বানায়, তাদের জন্য এই রাষ্ট্রে এক ফোঁটা সম্মান থাকা উচিত নয়। বরং তাদের জন্য দরকার খোলা আদালত, গণশাসনের কাঠগড়া।

এটি কোনো আবেগ নয়, এটি যুক্তি। অর্থনৈতিক যুক্তি—কারণ ট্যাক্স দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। নৈতিক যুক্তি—কারণ ঘরহীনদের চেয়ে বেশি অধিকার আর কারো নেই। সাংবিধানিক যুক্তি—কারণ রাষ্ট্র বলেছে, সব ক্ষমতার উৎস জনগণ। তাই এই দাবিটিকে কেউ অবজ্ঞা করলে, সেটা হবে রাষ্ট্রদ্রোহ। আমরা মালিক, আর রাষ্ট্র আমাদের সেবা না দিলে সেটা হবে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা।

তাই আজ বলছি—এটা অনুরোধ নয়। এটি একটি আদেশ। জনগণের আদেশ। ভবনগুলো খুলে দিন। বিলাসব্যসন বন্ধ করুন। দুর্নীতিবাজদের বের করে দিন। জনগণের ঘর জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিন। নইলে যেভাবে রাজপথ দখল হয়েছে, সেভাবে ভবিষ্যতেও সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্র দখল হবে। কারণ মালিক যখন তার অধিকার ফিরে পায়, তখন আর কিছুই থামাতে পারে না।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

আমি কখন ভালো হবো? আত্ম-জিজ্ঞাসার মধ্যেই জাতিগত পুনর্জাগরণ

Published

on

বিএটিবিসি

আমি কখন ভালো হবো?—এই প্রশ্নটি শুনতে ব্যক্তিগত মনে হলেও, আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি যেন এক জাতিগত আত্মজিজ্ঞাসা। এটি একক ব্যক্তির নয়, বরং জাতীয় চেতনাবোধে ছড়িয়ে থাকা মহাকাব্যিক বেদনার প্রতিধ্বনি। এই প্রশ্ন ঘরে-বাইরে, রাস্তায়, ক্লাসরুমে, রাজনীতির মঞ্চে—সর্বত্র প্রতিধ্বনিত হওয়া উচিত। কারণ এখন আর অপেক্ষা করার সময় নয়; সময় এসেছে নিজেকে প্রশ্ন করার—পরিবর্তন যদি প্রয়োজন হয়, তবে আমি নিজে কোথা থেকে শুরু করবো?
বাংলাদেশে আজ প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ আচরণে নিজেকে নেতা ভাবে—শুধু নেতা নয়, যেন সর্বজ্ঞানী নেতা। আমরা এমন এক জাতিতে পরিণত হয়েছি, যেখানে সবাই অন্যকে বদলাতে চায়, কিন্তু নিজেকে নয়। সমাজ বদলাক, রাষ্ট্র বদলাক, রাজনৈতিক পরিবেশ পাল্টাক—এটাই প্রত্যাশা; কিন্তু সেই পরিবর্তনের সূচনা নিজের মধ্যে কেউ করতে চায় না। প্রশ্ন উঠবেই: নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা যদি থাকে, কিন্তু দায়িত্ববোধ না থাকে—তবে সেই নেতৃত্ব জাতিকে কোথায় নিয়ে যাবে?

আজ রাজনীতি একধরনের শব্দদূষণে পরিণত হয়েছে। দিনরাত মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, আর বক্তৃতা-বিবৃতিতে শুনি—‘নির্বাচন চাই’, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন চাই’, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।’ কিন্তু এই নির্বাচনগুলো আসলে কি আমাদের জন্য কোনো গুণগত পরিবর্তন আনছে? নাকি এগুলো ক্ষমতার পালাবদলের একটি চক্রব্যূহ মাত্র? রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এবং দুর্নীতির ঘূর্ণিতে দেশের জনগণের আস্থা এবং ন্যায্যতার ভিত ভেঙে পড়েছে। একদিকে, নির্বাচন আর রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘাত জাতিকে বিভক্ত করছে; অন্যদিকে, কর্মসংস্থানের সংকট, মূল্যস্ফীতি, কৃষির দুরবস্থা সাধারণ মানুষের জীবনকে করছে দুঃসহ।

কিছুদিন আগে আমি কথা বলেছিলাম এক পলাতক রাজনীতিবিদের সঙ্গে—আজ তিনি নিঃস্ব। নেই দল, নেই ঘর, নেই ক্ষমতা। তিনি বলেছিলেন, “ভুল করেছি। মানুষকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছি, সত্যকে বিক্রি করেছি। আজ সব হারিয়ে বুঝি—আমরা আসলে কী করেছি!”

এই উপলব্ধি নিঃসন্দেহে মূল্যবান, কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়:
আপনার উপলব্ধি যখন আসে সর্বহারা হওয়ার পরে, তখন তা কার উপকারে আসে?
সময়মতো বোঝা না গেলে, বোঝার কোনো মূল্য থাকে না। না বোঝাই অনেক সময় ভালো, কারণ দেরিতে বোঝার খরচ হয় ভয়াবহ।

একটি জাতির অর্থনৈতিক ভিত্তি যদি দুর্বল হয়, তবে সেই জাতির নাগরিকরা প্রতিনিয়ত দুলতে থাকে অনিশ্চয়তার দোলনায়। আর বাংলাদেশের পুঁজিবাজার—যা হতে পারতো অর্থনৈতিক স্বপ্নের বাতিঘর—তা আজ এক ভয়ংকর কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয়েছে। টাকা ঢোকে, কিন্তু আর ফিরে আসে না।

শোনা যায়, এক দরবেশবাবা নাকি শেখ হাসিনার আমলে পুরো শেয়ারবাজার ধ্বংস করে দিয়েছিলেন! যদি তা-ই হয় তবে তিনি তো এখন জেলে, তাহলে আজ যারা বাজারের বুকে আবার মৃত্যুর ছুরি চালাচ্ছে, তারা কারা? প্রশ্নটা ফাঁকা নয়—এই বাজার বারবার কেন ভেঙে পড়ে? কেন বারবার বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হয়? কেন প্রতিবার স্বপ্ন দেখিয়ে সেই স্বপ্নকে পিষে ফেলা হয়?

পুঁজিবাজার কোনো খেলার জায়গা নয়। এটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনীতির রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থা। অথচ বাস্তবতায় দেখা যায়—অপরিকল্পিত দরপতন, মুনাফাখোর সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, হাজারো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসা। তারা স্বপ্ন দেখেছিল, বিশ্বাস করেছিল, বিনিয়োগ করেছিল—কিন্তু পেয়েছে প্রতারণা, ধোঁকা, আর লুট।

সরকারের কাছে অনুরোধ—এবার দয়া করে সত্যিকারের সংস্কারে নামুন। প্রয়োজন হলে বিদেশি বিশেষজ্ঞ আনুন। আমি নিজ উদ্যোগেও বিশ্বমানের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আপনাদের সংযোগ করাতে রাজি। কিন্তু আর কালক্ষেপণ নয়।

একটা কথা মনে রাখুন—এই বাজারকে যদি এখনই সঠিক পথে না আনা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি তুলেই দেউলিয়া হয়ে যাবে। শুধু স্লোগানে অর্থনীতি টেকে না। টিকিয়ে রাখতে দরকার গভীর পরিকল্পনা, স্বচ্ছতা, আর সর্বোচ্চ পর্যায়ের জবাবদিহিতা। পুঁজিবাজার ধ্বংস মানে শুধু টাকার ক্ষতি নয়—এটি মানুষের আস্থা, স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎকে হত্যা করে। আর এই হত্যাকাণ্ড যদি বারবার ঘটে, তবে তা শুধু অর্থনৈতিক ব্যর্থতা নয়, এটি এক প্রকার রাষ্ট্রীয় অপরাধ।

উপরের দুইটি উদ্বেগ—অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও রাজনৈতিক নৈরাজ্য—একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। দুর্নীতি আর রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রকৃত নীতি বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছে, ফলে সামাজিক উন্নয়ন থমকে গেছে, সাধারণ মানুষের জীবনে সংকট বাড়ছে। আর এই চক্র চলতে থাকলে, ভবিষ্যৎ এক অন্ধকার গলিতে পৌঁছে যাবে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এই চ্যালেঞ্জগুলো একে অন্যকে পুষ্ট করছে—মিলে তৈরি করছে এক অপ্রতিরোধ্য, বেপরোয়া সংকট। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে দরকার একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি—যেখানে রাজনৈতিক সংস্কার আর অর্থনৈতিক পুনর্গঠন হাত ধরাধরি করে এগিয়ে যাবে।

প্রিয় পাঠক, এখন আমাদের নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে হবে—সংস্কার আসবে কার থেকে? নিজের থেকে, না শুধু অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে?
আমরা প্রায় বলি, “ওরা দুর্নীতিবাজ”, “ওদের জন্যই দেশ খারাপ”—কিন্তু আমি নিজে কী করছি? আমি কি নিয়ম মানি? আমি কি ঘুষ দিই? আমি কি অন্যায় দেখলে চুপ থাকি, নাকি প্রতিবাদ করি?

এই প্রশ্নগুলো অস্বস্তিকর। কারণ এগুলো আমাদের আয়নার সামনে দাঁড় করায়। কিন্তু এই অস্বস্তি ছাড়া কোনো সত্যিকারের পরিবর্তন সম্ভব নয়। রাষ্ট্র বদলায় না—রাজনৈতিক মানুষগুলো বদলালে তবেই রাষ্ট্র বদলায়।

আজ যেসব শক্তি রাজনীতির আড়ালে কাজ করছে, তাদের অনেকেই দেশের মাটিতে নেই। কারো স্বপ্ন দিল্লি, কারো ওয়াশিংটন, আবার কেউ গোপন চুক্তির মুনাফা নিয়ে ব্যস্ত। তারা বিদেশে বসে আন্দোলনের ডাক দেয়, ত্যাগের কথা বলে। কিন্তু কখনো কি তারা বলে, “আমরা আগে নিজেদের আদর্শিকভাবে পরিষ্কার করবো, তারপর জনগণের সামনে যাবো?”—না, বলে না। কারণ সেটি কঠিন। আত্মশুদ্ধি কঠিন।

তাই আজ দরকার একটি নীরব কিন্তু শক্তিশালী বিপ্লব—যেটি শুরু হবে “আমি কখন ভালো হবো?” এই আত্মজিজ্ঞাসা দিয়ে। এই বিপ্লব হবে আমাদের পরিবারের ভেতর, পেশাগত দায়িত্বের মধ্যে, প্রতিদিনের ছোট ছোট সিদ্ধান্তে। কারণ আজ যদি আমরা না বদলাই, কাল আবার একটা অকার্যকর নির্বাচন, নতুন মুখে পুরনো ধোঁকা নিয়েই আমাদের সামনে হাজির হবে।

আমরা সবাই পরিবর্তন চাই। কিন্তু ভুলে যাই—পরিবর্তনের গভীরতম শেকড় নিজেকেই খনন করতে হয়।
আমার সময় এখন। আমার প্রতিবাদ এখন। আমার আত্মশুদ্ধি এখন।
নিজেকে প্রশ্ন করুন—আমি কখন ভালো হবো?

তবে হয়তো আপনি নিজেই হয়ে উঠবেন সেই “সুন্দর কে”, যাকে সবাই খোঁজে, কিন্তু কেউ নিজের ভেতরে খোঁজে না।
বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় আজ এক বিষণ্ণ সত্য স্পষ্ট: জাতিটি এক “নেতাগণমণ্ডলী”তে পরিণত হয়েছে। যিনি নেতা নন, তিনিও মনে করেন তিনি বিশাল নেতা। অথচ প্রকৃত নেতৃত্ব মানে বিনয়, দায়িত্ব, আত্মসংযম ও নৈতিকতা। আজ এই চারটি গুণই প্রায় অনুপস্থিত।
এই অতিনেতৃত্বপ্রবণতা আমাদের সমাজে তৈরি করেছে এক সাংস্কৃতিক দূষণ—যেটি শব্দ, চিন্তা এবং চেতনার স্তরে সক্রিয়। রাজনৈতিক নেতারা সারাবছর ধরে ‘নির্বাচন’ শব্দটি এতবার বলেন, যে তা একধরনের শব্দদূষণে পরিণত হয়েছে।

প্রশ্ন হলো: এই ‘নির্বাচন’ আসলে কী?
এটা কি জনগণের সমস্যার সমাধান? নাকি ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য কিছু অন্ধকার ঘরের চুক্তি পূরণের উপলক্ষ?
জনগণ কে?
জনগণ কি কেবল সেই মুখহীন সংখ্যা? নাকি আপনি-আমি সেই জনগণের অংশ?
আমরা যখন বলি “জনগণ কিছু করছে না,” তখন কি নিজের দায় এড়িয়ে যাই?
গণতন্ত্রে ‘জনগণ’ মানে আপনি, আমি, আমরা সবাই।
তাই প্রশ্ন নয়—“এটা হওয়া উচিত” বা “ওটা হওয়া উচিত”—
প্রশ্ন হলো: করবে কে?
আপনি যদি ভাবেন, “কেউ একজন নিশ্চয়ই করবে,” তাহলে আপনি নিজেই জটিলতার অংশ। নিজেকে বদলানোই হলো প্রকৃত কাজের শুরু।

‘সুন্দর মানুষ’ কাকে বলে?
চেহারায় নয়—মননে, নীতিতে, দৃষ্টিভঙ্গিতে। যে নিজের ভেতরে আলো জ্বালাতে পারেন, তিনিই অন্যের পথ আলোকিত করেন। সেই মানুষ আপনার পাশেই আছেন—হয়তো আপনি নিজেই। শুধু তাঁকে জাগাতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণে আজ কোনো লজ্জা বা বিবেচনা নেই। বছরের পর বছর দুর্নীতি, দখল, দমন আর দাসত্ব চালিয়ে শেষে বলা হয়: “নির্বাচন চাই, গণতন্ত্র চাই!” অথচ গণতন্ত্র মানে তো ভয়হীনতা, ভোটার-নিরাপত্তা, চিন্তার স্বাধীনতা। এসব কিছুই যেখানে নেই, সেখানে নির্বাচন মানে নতুন এক প্রহসন।

মূল কথা হলো:
যদি এই রাজনৈতিক দূষণ দূর না করা যায়, তবে কোনো নির্বাচনই স্বচ্ছ বা অর্থবহ হবে না।
কারণ, নির্বাচন একটি ‘ফল’—তাকে ফলতে হলে চাই একটি সুস্থ ‘পরিবেশ’।
যদি চারপাশের বাতাসই বিষাক্ত হয়, তবে সেই গাছে ফলও বিষাক্ত হবে।
শুধু শব্দ নয়, চাই চরিত্রের শুদ্ধি।

রাজনীতিবিদদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত:
আমি কতটা স্বচ্ছ?
আমি কি মানুষের কাছে জবাবদিহি করি?
আমি কি সত্য বলি, না সুবিধামতো চুপ থাকি?

আপনি যদি নিজেই দুর্নীতির চাষ করেন, সংবাদপত্র বন্ধ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পেটোয়া বাহিনী চালান—তাহলে আপনি যখন নির্বাচনের মুখোমুখি হবেন, তখন জনগণ কেন আপনাকে বিশ্বাস করবে? আপনাদের প্রতিটি বাক্য এখন শব্দদূষণের মতোই বিরক্তিকর—কারণ তাতে নেই আস্থা। যারা আজ নিজেকে ‘নেতা’ ভাবেন, তাঁদের আয়নায় একবার তাকানো দরকার।

নিজেকে বদলানো ছাড়া যদি আপনি সারাক্ষণ অন্যকে দোষ দেন—তবে আপনি নেতা নন, নেতৃত্বকে অপমান করছেন। যদি আপনাদের বিবেক এখনো জীবিত থাকে, তাহলে শেখ হাসিনা, তাঁর মন্ত্রিসভা, বিএনপির সিনিয়র নেতারা—সবার প্রতি এই বার্তা: ভারতে আশ্রয় নেওয়ার আগে একবার নিজের বিবেকের কাছে জবাবদিহি করুন। কারণ আজ জনগণ আর অন্ধ নয়।

তারা জানে, কারা শব্দে দেশ চালাতে চায়—আর কারা সত্য সংস্কার আনতে চায়। এই রাষ্ট্রকে বাঁচাতে হলে আগে দূষণ দূর করতে হবে— শুধু শব্দ নয়, নৈতিক দূষণ।
চিন্তা করুন, প্রশ্ন করুন, নিজেকে শুদ্ধ করুন। একজন জানতে চেয়েছিল—“কে সেই সুন্দর কে?”
উত্তর একটাই: নিজের ভেতরে যদি সত্য ও দায়িত্ববোধ জাগে, আপনি নিজেই সেই সুন্দর।

রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
rahman.mridha@gmail.com

কাফি

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

পহেলা মে ও রেমিট্যান্স যোদ্ধার চোখে বাংলাদেশ: একটি নৈতিক আত্মমুক্তির দাবি

Published

on

বিএটিবিসি

যে মানুষটি একদিন দেশের মাটি ছেড়ে বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন, তাঁর চোখে ছিল একটি স্বপ্ন—পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো, দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা। আজ সেই স্বপ্ন বহন করে দেড় কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক ছড়িয়ে আছেন বিশ্বের নানা প্রান্তে। তাঁদের রক্তঘামে আসে বছরে প্রায় ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার—বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রধান উৎস।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যুরো অফ ম্যানপাওয়ার, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (BMET)-এর তথ্য বলছে, এই অর্থে গড়ে উঠেছে গ্রামের অবকাঠামো, শিক্ষিত হয়েছে সন্তান, বদলে গেছে পরিবারের ভাগ্য। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে—দেশে ফিরে আসার পরে কি এই রেমিট্যান্স যোদ্ধারা তাঁদের প্রাপ্য সম্মান ও নিরাপত্তা পান?

অস্বীকৃত কিন্তু অবিচ্ছেদ্য অবদান

প্রবাসীরা দিনের পর দিন মরুভূমির উত্তাপে, ঠান্ডায় জমে, হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যে অর্থ পাঠান, তা দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। তাঁদের জীবনের বিসর্জনে তৈরি হয় গ্রামে নতুন ঘর, সন্তানরা পায় উচ্চশিক্ষা, শহরে গড়ে ওঠে ব্যবসা। কিন্তু এই শ্রমিকরা যে অবদানের পাহাড় গড়ে তুলেছেন, সেটি প্রায়শই রাজনৈতিক কৃতিত্বের মোড়কে হারিয়ে যায়। রাষ্ট্রের উন্নয়ন পরিকল্পনায় তাঁদের জন্য কোনো স্পষ্ট ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা চোখে পড়ে না।

রাষ্ট্রীয় অবহেলা ও অব্যবস্থাপনা: একটি নৈতিক ব্যর্থতা

বেশিরভাগ প্রবাসী শ্রমিক ২০-৩০ বছর কাজ করে দেশে ফেরেন। কিন্তু দেশে ফিরে পান না কোনো স্থায়ী সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো—না পেনশন, না সামাজিক বীমা, না মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা। বরং ফিরে পান অচেনা বাস্তবতা, অবহেলা ও একাকীত্ব। বিশ্বের বহু দেশে যেমন ফিলিপিন্সে ‘Overseas Workers Welfare Administration (OWWA)’-এর মতো প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা রয়েছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো সেখানে নীরব দর্শক। আমাদের দেশেও একটি কার্যকরী সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা কি অসম্ভব?

ভবিষ্যতের দিকে অন্ধ রাষ্ট্রযন্ত্র

বাংলাদেশে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য নেই কোনো দীর্ঘমেয়াদী রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা। তাঁরা দেশে ফিরে পড়েন প্রান্তিকতার ফাঁদে। ফলে, এই আত্মত্যাগী মানুষগুলো সমাজে হয়ে ওঠেন ‘অপ্রয়োজনীয়’ এক শ্রেণি, যাদের সম্মান নেই, পরিচর্যা নেই, গর্ব নেই। এই রাষ্ট্রীয় অন্ধত্ব একদিন আমাদের সমগ্র অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে।

নীতিগত পরিবর্তন: সময়ের দাবি

রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো এই যোদ্ধাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা। এজন্য নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা বিবেচনায় নেয়া উচিত:
১. জাতীয় রেমিট্যান্স পেনশন স্কিম: প্রবাসীদের জন্য একটি বাধ্যতামূলক পেনশন স্কিম চালু করতে হবে।
২. পুনঃবাসন ও রি-স্কিলিং প্রোগ্রাম: দেশে ফেরা প্রবাসীদের জন্য কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
৩. উদ্যোক্তা তহবিল ও বিনিয়োগ সহায়তা: রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য সহজশর্তে ঋণ ও তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে।
৪. মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যসেবা ইউনিট: অভিবাসন-পরবর্তী সংকট মোকাবেলায় বিশেষায়িত সেবা গড়ে তুলতে হবে।
৫. জাতীয় স্বীকৃতি ও সংবর্ধনা প্রথা: তাঁদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করার জন্য একটি বার্ষিক জাতীয় সম্মাননা চালু করা যেতে পারে।

নৈতিক অধঃপতন থেকে আত্মমুক্তির সময় এখন

আজকের বাংলাদেশে, যেখানে আমরা প্রতিনিয়ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আত্মসম্মান এবং মর্যাদার জন্য লড়াই করছি, সেখানে দেশের অভ্যন্তরে রাজনীতি, দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চাঁদাবাজি, এবং ভণ্ডামি আমাদের সর্বশ্রেণীর জনগণের ভবিষ্যৎকে সংকটে ফেলে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী আজ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কারণ আমরা জানি—দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্রীয় স্বার্থের অদূরদর্শী প্রতিরোধ আমাদের শক্তিশালী অর্থনীতির পথকে অস্বাভাবিকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবস্থা এখন এমন, যে কেউ আমাদের দেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নয়, বরং বরাবরই আমাদের দুর্নীতির কারণে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে।

আমরা জানি, উন্নত রাষ্ট্রসমূহ থেকে যে ধরনের বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা আসার কথা, তা নির্ভরশীল দেশীয় নীতির ওপর। আর সেই নীতি যখন দুর্নীতিগ্রস্ত, অসৎ ও অদূরদর্শী, তখন আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে আমাদের দেশের মূল্যায়ন আশানুরূপ থাকে না। আমাদের দরকার একটি নৈতিক, যোগ্য, এবং দক্ষ নেতৃত্ব, যারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী, জনগণের কল্যাণে কাজ করবে। আমরা এমন রাজনৈতিক নেতৃত্ব চাই, যারা দুর্নীতির পথ পরিহার করবে এবং জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতি পালন করবে।

এখানে স্পষ্টভাবে বলতে চাই—রাজনীতির নামে দুর্নীতি আর বাংলার মাটিতে চলবে না। মালিকদের অধিকার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের অধিকার পর্যন্ত সুষ্ঠু এবং ন্যায়সংগত পরিবেশ তৈরি করা উচিত, যেখানে কোনো ধরনের অপব্যবহার ও অশান্তি সহ্য করা হবে না। রাজনৈতিক তৎপরতা যদি জনগণের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করতে থাকে, তবে সেগুলো অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। বাংলাদেশের মাটিতে এমন পরিস্থিতি পুনরাবৃত্তি হতে আমরা আর কোনোভাবেই অনুমতি দেব না।

রাষ্ট্রযন্ত্র যদি আজও অবহেলার কূপে বন্দী থাকে, তবে ইতিহাস একদিন এই ব্যর্থ রাষ্ট্রকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেই।

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য ন্যায়, রাষ্ট্রের জন্য আত্মশুদ্ধির ঘন্টাধ্বনি

পহেলা মে—এটি কেবল শ্রমিক দিবস নয়, এটি রাষ্ট্রের আত্মা জাগানোর দিন। আজকের এই দিনে আমরা যদি সেই পরিশ্রমী হাতগুলোর দিকে না তাকাই, যারা প্রিয়জন ছেড়ে মরুপ্রান্তরে ঘাম ঝরিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরাচ্ছে, তাহলে আমাদের বিবেক মৃত।
অন্তত পহেলা মে—শ্রমিকদের অবদানের স্বীকৃতি দেওয়ার যেমন দিন, তেমনি রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা পূর্ণ করার দিন। তাঁদের অবদানকে জাতির উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রে না রাখলে উন্নয়ন শুধু ঢাকের বাদ্য হবে—গভীরতা থাকবে না। রাষ্ট্রের উচিত, নিজের দায়িত্ববোধ থেকে এই প্রবাসী জনগণের পাশে দাঁড়ানো।

আমরা চাই না করুণা, চাই ন্যায্যতা।
আমরা চাই না সংবর্ধনার ফুল, চাই সামাজিক নিরাপত্তার শিকড়।
রাষ্ট্র যদি আজও এই শ্রেণীকে অবহেলা করে, তবে একদিন ইতিহাস তাকে জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেই।
এই লেখা একটি আবেগ নয়—এটি সময়ের গলায় চেপে বসা এক নৈতিক হুঁশিয়ারি।
আজ না হলে কাল, কাল না হলে ইতিহাস—এই রাষ্ট্রকে উত্তর দিতেই হবে।
তাই, পহেলা মে শুধুই শ্লোগান বা ফুল দেয়ার দিন নয়—
এটি হোক আত্মসমালোচনার, আত্মউন্নয়নের ও দায়িত্বশীলতার প্রতীক।
রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের অবসরকালীন জীবন যেন হয় নিরাপদ, সম্মানজনক ও মানবিক—
এটাই হওয়া উচিত আমাদের রাষ্ট্রনীতির পরবর্তী ধাপ।
যে রাষ্ট্র তার ঘামের শ্রদ্ধা দিতে জানে না,
সে উন্নয়নের মুখোশ পরে নিজের মাটিকেই অস্বীকার করে।
আমরা একটি রাষ্ট্র চাই—ক্ষমতার নয়, মর্যাদার নামেই যার পরিচয় হবে।

রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
rahman.mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

বিএটিবিসি বিএটিবিসি
পুঁজিবাজার4 hours ago

বিএটিবিসির ইপিএস কমেছে ২৩ শতাংশ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেড (বিএটিবিসি) গত ৩১ মার্চ,২০২৫ তারিখে সমাপ্ত প্রথম...

বিএটিবিসি বিএটিবিসি
পুঁজিবাজার5 hours ago

লিন্ডে বাংলাদেশের আয় কমেছে ১৭ শতাংশ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড গত ৩১ মার্চ,২০২৫ তারিখে সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি’২৫-মার্চ’২৫) অনিরীক্ষিত...

বিএটিবিসি বিএটিবিসি
পুঁজিবাজার17 hours ago

ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপ না হলে অর্থনীতি পিছিয়ে যাবে: আনিসুজ্জামান

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপ না হলে আমাদের অর্থনীতির একটা অংশ পিছিয়ে যাবে অর্থাৎ সামগ্রিক উন্নতি হবে...

বিএটিবিসি বিএটিবিসি
পুঁজিবাজার18 hours ago

ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের আয় কমেছে ১১ শতাংশ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড গত ৩১ মার্চ, ২০২৫ তারিখে সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি’২৫-মার্চ’২৫)...

বিএটিবিসি বিএটিবিসি
পুঁজিবাজার19 hours ago

আইডিএলসি ফাইন্যান্সের আয় বেড়েছে ৪৪ শতাংশ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‌আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের কোম্পানি আইডিএলসি ফাইন্যান্স পিএলসি গত ৩১ মার্চ, ২০২৫ তারিখে সমাপ্ত...

বিএটিবিসি বিএটিবিসি
পুঁজিবাজার21 hours ago

রাশেদ মাকসুদ আ.লীগের দালাল, এই দালালকে সরাতে হবে

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অপসণের দাবিতে এক সাধারণ বিনিয়োগকারী...

বিএটিবিসি বিএটিবিসি
পুঁজিবাজার21 hours ago

রাশেদ মাকসুদকে বিএসইসিতে নয়, অন্য কোথাও বসান: প্রধান উপদেষ্টাকে বিনিয়োগকারী

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অপসণের দাবি তুলে প্রধান উপদেষ্টা...

Advertisement
Advertisement
AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সোশ্যাল মিডিয়া

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০
১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭৩০৩১
বিএটিবিসি
কর্পোরেট সংবাদ44 seconds ago

ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজের পর্ষদ সভা

বিএটিবিসি
কর্পোরেট সংবাদ3 hours ago

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ সভা

বিএটিবিসি
মত দ্বিমত3 hours ago

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ: প্রশ্ন, গোপনীয়তা ও জনআস্থার সংকট

বিএটিবিসি
আইন-আদালত3 hours ago

হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে আইভী

বিএটিবিসি
রাজনীতি4 hours ago

জুমার পর ‘বড় জমায়েতের’ ডাক হাসনাতের

বিএটিবিসি
পুঁজিবাজার4 hours ago

বিএটিবিসির ইপিএস কমেছে ২৩ শতাংশ

বিএটিবিসি
সারাদেশ4 hours ago

সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী গ্রেপ্তার

বিএটিবিসি
পুঁজিবাজার5 hours ago

লিন্ডে বাংলাদেশের আয় কমেছে ১৭ শতাংশ

বিএটিবিসি
অর্থনীতি5 hours ago

কর অব্যাহতির ক্ষমতা এনবিআরের থাকছে না

বিএটিবিসি
রাজনীতি15 hours ago

প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে এনসিপির অবস্থান

বিএটিবিসি
কর্পোরেট সংবাদ44 seconds ago

ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজের পর্ষদ সভা

বিএটিবিসি
কর্পোরেট সংবাদ3 hours ago

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ সভা

বিএটিবিসি
মত দ্বিমত3 hours ago

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ: প্রশ্ন, গোপনীয়তা ও জনআস্থার সংকট

বিএটিবিসি
আইন-আদালত3 hours ago

হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে আইভী

বিএটিবিসি
রাজনীতি4 hours ago

জুমার পর ‘বড় জমায়েতের’ ডাক হাসনাতের

বিএটিবিসি
পুঁজিবাজার4 hours ago

বিএটিবিসির ইপিএস কমেছে ২৩ শতাংশ

বিএটিবিসি
সারাদেশ4 hours ago

সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী গ্রেপ্তার

বিএটিবিসি
পুঁজিবাজার5 hours ago

লিন্ডে বাংলাদেশের আয় কমেছে ১৭ শতাংশ

বিএটিবিসি
অর্থনীতি5 hours ago

কর অব্যাহতির ক্ষমতা এনবিআরের থাকছে না

বিএটিবিসি
রাজনীতি15 hours ago

প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে এনসিপির অবস্থান

বিএটিবিসি
কর্পোরেট সংবাদ44 seconds ago

ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজের পর্ষদ সভা

বিএটিবিসি
কর্পোরেট সংবাদ3 hours ago

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ সভা

বিএটিবিসি
মত দ্বিমত3 hours ago

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ: প্রশ্ন, গোপনীয়তা ও জনআস্থার সংকট

বিএটিবিসি
আইন-আদালত3 hours ago

হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে আইভী

বিএটিবিসি
রাজনীতি4 hours ago

জুমার পর ‘বড় জমায়েতের’ ডাক হাসনাতের

বিএটিবিসি
পুঁজিবাজার4 hours ago

বিএটিবিসির ইপিএস কমেছে ২৩ শতাংশ

বিএটিবিসি
সারাদেশ4 hours ago

সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী গ্রেপ্তার

বিএটিবিসি
পুঁজিবাজার5 hours ago

লিন্ডে বাংলাদেশের আয় কমেছে ১৭ শতাংশ

বিএটিবিসি
অর্থনীতি5 hours ago

কর অব্যাহতির ক্ষমতা এনবিআরের থাকছে না

বিএটিবিসি
রাজনীতি15 hours ago

প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে এনসিপির অবস্থান