Connect with us

মত দ্বিমত

বাংলাদেশের উন্নয়নের নতুন দিগন্ত: গণতন্ত্র থেকে প্রশাসনতন্ত্র

Published

on

কর্মকর্তা

অনেক বছর আগে, এক দুর্লভ দিন ছিল হামিলন শহরের জন্য। এক সময় এই শহর ছিল শৃঙ্খলা, শান্তি ও সুখের প্রতীক। শহরের প্রতিটি গলি ছিল আনন্দমুখর, প্রতিটি মানুষ ছিল একে অপরের জন্য সহানুভূতিশীল। কিন্তু একদিন, এক ভয়ঙ্কর বিপদ এসে শহরটিকে লন্ডভন্ড করে দিল—ইঁদুরের এক তাণ্ডব। অদৃশ্য শত্রুর মতো, ইঁদুরের দল ছড়িয়ে পড়ল শহরের প্রতিটি কোণে, বাড়ি-বাড়ি, রাস্তায় রাস্তায়। সবার ঘরবাড়ি বিপর্যস্ত, শান্তি মিলিয়ে গেল। এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে, শহরের অভিজ্ঞানীগণ এক রহস্যময় বাঁশিওয়ালাকে ডাকলেন।

বাঁশিওয়ালা এক অদ্ভুত ব্যক্তিত্ব, হাতে ছিল এক বিশেষ বাঁশি—যেটি বাজালে ইঁদুরেরা শহর ছেড়ে চলে যাবে, এমনই ছিল তার গল্প। সুরের এক জাদুতে, বাঁশিওয়ালা যখন তার বাঁশি বাজাতে শুরু করলেন, শহরের সমস্ত ইঁদুর একে একে পালিয়ে গেল। শহর আবার ফিরে পেল শান্তি, কিন্তু বাঁশিওয়ালা যখন তার পারিশ্রমিকের দাবি তুললেন, তখন শহরের অভিজ্ঞানীগণ তার সঙ্গে প্রতারণা করল। প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও তারা তাকে কিছুই দিল না। আর তখনই বাঁশিওয়ালা তার বাঁশি আবার বাজালেন—কিন্তু এবার তিনি ইঁদুরদের নয়, শহরের শিশুদের নিয়ে চলে গেলেন। শহরের বাসিন্দারা বুঝতে পারল, তাদের নিজের ভুলে তারা সবকিছু হারিয়ে ফেলেছে।

এই কাহিনী কেবল এক পৌরাণিক গল্প নয়, বরং আমাদের বর্তমান সমাজের এক অস্পষ্ট প্রতিচ্ছবি। আমাদের সমাজে আজও মানুষের মধ্যে অজ্ঞতা, অন্ধবিশ্বাস এবং আত্মবিশ্বাসহীনতা রয়েছে। ঠিক যেমন হামিলনের বাসিন্দারা নিজেদের চোখে মুগ্ধ হয়ে বিশ্বাস করেছিল বাঁশিওয়ালার সুরে, তেমনই আমাদের দেশের জনগণ অনেক সময় নেতাদের অন্ধ বিশ্বাসে নিজেদের ভবিষ্যতকে বিপদের দিকে ঠেলে দেয়।

আজকের বাংলাদেশেও ঠিক সেইভাবে চলছে। একদিকে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি অন্ধবিশ্বাস, অপরদিকে দেশের মানুষের মনের অন্ধকারে বেড়ে ওঠা দুর্বলতা। আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার, সুযোগ-সুবিধার জন্য যে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে আশ্রয় চাই, তারা নির্বাচনের সময় উন্নয়নের স্বপ্ন দেখায়, কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর সেই আশ্বাসগুলি ফাঁকা বুলি হয়ে যায়। একদিকে নির্বাচনের মিছিলে প্রতিশ্রুতি আর ভাষণ, অন্যদিকে বাস্তবতায় দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা আর সাধারণ মানুষের ক্ষত।

হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার গল্প আমাদের শেখায়, কীভাবে এক মানুষ তার শখ ও দক্ষতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান এনে দিতে পারে, তবে যখন তার প্রতি অবিচার করা হয়, তখন তার প্রতিশোধও হতে পারে কঠিন। হামিলনের শিশুরা যেমন এর ফল ভোগ করেছিল, তেমনিভাবে আজকের পৃথিবী, বিশেষত আমাদের দেশেও রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতারণার শিকার হয়ে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

হ্যামিলনের ঘটনা যেন আমাদের দেশের আজকের পরিস্থিতিরই প্রতিফলন। জনগণের ভুল সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রতি অন্ধবিশ্বাস এবং দুর্বল শাসনব্যবস্থার মধ্যে আমরা হুমকির মধ্যে পড়ে গেছি। একদিকে, আমরা প্রতিশ্রুতি ও উন্নয়নের সুরে বিভ্রান্ত হচ্ছি, অন্যদিকে, তার আড়ালে ক্ষতি আর দুর্নীতি আমাদের জীবনে ক্রমেই গভীর হতে থাকে। হামিলনের মতো, আমাদের রাজনীতিবিদদের কাছেও কি প্রতিশ্রুতি কেবল মুখের কথা, আর বাস্তবতা কিছুই বদলায় না?

আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতা বোধহয় হামিলনের গল্পের পুনরাবৃত্তি—যেখানে প্রতারণা, ভুল সিদ্ধান্ত এবং অন্ধবিশ্বাস একে অপরকে ধারণ করে। আর তার ফলস্বরূপ, জনগণ প্রতিশোধ হিসেবে নিজেদের ভবিষ্যতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

আমাদের জনগণও বছরের পর বছর ধরে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির ফাঁদে আটকা পড়ে আছে। প্রতিবার নির্বাচনের আগে বিভিন্ন নেতা উন্নয়নের স্বপ্ন দেখান, কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর তাদের প্রতিশ্রুতি ফাঁকা বুলিতে পরিণত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিযোগিতা ও ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণে প্রশাসন দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর ফলে জনগণ সঠিক সেবা পাচ্ছে না, দুর্নীতি বেড়ে যাচ্ছে, আর অর্থনৈতিক বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।

এই বাস্তবতায়, গণতন্ত্রের প্রচলিত কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে প্রশাসনকে শক্তিশালী করা জরুরি। কেননা, দক্ষ প্রশাসন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব—
বাংলাদেশের বর্তমান সংকট ও তার কারণ, গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা ও প্রশাসনের ব্যর্থতা এবং প্রশাসনতন্ত্র কেন প্রয়োজন ও কীভাবে এটি উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে।

বিশ্বের সফল প্রশাসনিক মডেল ও বাংলাদেশের করণীয়
এই আলোচনার মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করব, কীভাবে আমরা রাজনৈতিক মিথ্যাচারের শিকার হওয়া থেকে মুক্ত হয়ে একটি শক্তিশালী, স্বচ্ছ ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি।
বাংলাদেশের সংকট, তার কারণ ও সমাধান
বাংলাদেশ কী সংকটে ভুগছে?

বর্তমানে বাংলাদেশ বিভিন্ন সংকটে জর্জরিত। মূল সমস্যা পাঁচটি—
১. রাজনৈতিক অস্থিরতা – নির্বাচন ও রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণে দেশ বারবার সংকটে পড়ে।
২. দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার – প্রশাসনের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
৩. শাসনব্যবস্থার অকার্যকারিতা – সরকারি নীতি ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে চরম অনিয়ম বিদ্যমান।
৪. শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে অব্যবস্থাপনা – জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে ব্যর্থতা রয়েছে, যার ফলে জনসংখ্যার বড় একটি অংশ দরিদ্র ও অশিক্ষিত থেকে যাচ্ছে।
৫. সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য – ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে, যার ফলে সমাজে হতাশা ও ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে।

এসব সমস্যার কারণে দেশের সাধারণ জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রাজনীতিবিদরা যখন ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত, তখন জনগণের প্রকৃত সমস্যাগুলো অবহেলিত থেকে যাচ্ছে।

এই সংকটের মূল কারণ কী?
বাংলাদেশের চলমান সংকটের পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে—
১. দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অক্ষমতা – প্রশাসন দুর্বল ও অদক্ষ হওয়ায় দুর্নীতিবাজরা রাষ্ট্রের সুবিধা লুটে নিচ্ছে।
২. নির্বাচিত প্রতিনিধিদের রাজনৈতিক স্বার্থপরতা – জনগণের কল্যাণের পরিবর্তে নেতারা নিজেদের ক্ষমতা রক্ষায় বেশি আগ্রহী।
৩. নীতিনির্ধারণে দীর্ঘসূত্রিতা ও অদক্ষতা – নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেরি হয়, ফলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সফল হয় না।
৪. জনগণের সচেতনতার অভাব ও রাজনৈতিক নেতাদের অন্ধ অনুসরণ – জনগণের শিক্ষা ও রাজনৈতিক সচেতনতা কম হওয়ায় তারা বারবার ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।

অশিক্ষার হার বাড়ছে—এর প্রভাব কী?
শিক্ষাহীনতা একটি জাতির জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যদিও বাংলাদেশে শিক্ষার হার বাড়ছে, তবুও গুণগত শিক্ষা ও কার্যকর শিক্ষাব্যবস্থার অভাবে জনগণ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এর ফলে:
•ভোটের রাজনীতি ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে – অশিক্ষিত জনগণ সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন করতে অক্ষম, যার ফলে ভোটের মাধ্যমে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।
•জনগণ রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির ফাঁদে আটকে যাচ্ছে – রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।
•নৈতিক মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়িত্ববোধ দুর্বল হচ্ছে – অশিক্ষিত সমাজে দুর্নীতি ও অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সামাজিক অস্থিরতার সৃষ্টি করছে।

গণতন্ত্রের দুর্বলতা কোথায়?
গণতন্ত্রের মূল লক্ষ্য জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া। তবে বাস্তব পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতায় আসার পর নেতারা জনগণের কল্যাণের তুলনায় নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় বেশি মনোযোগী হন, যার ফলে:
•দুর্নীতি বাড়ে,
•প্রশাসন রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়,
•উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় না।

গণতন্ত্র থেকে প্রশাসনতন্ত্রের দিকে যাওয়া কেন প্রয়োজন?
•প্রশাসন শক্তিশালী হলে উন্নয়ন নিশ্চিত করা সহজ হয়।
•নির্বাহী ক্ষমতা কার্যকর হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা কমে।
•দুর্নীতি হ্রাস পেয়ে উন্নয়নের গতিশীলতা বাড়ে।
•প্রশাসন জনগণের প্রকৃত সমস্যা সমাধানে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারে।

যদি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রশাসনের দক্ষতার উপর ভিত্তি করে না গড়ে ওঠে, তবে তা জনগণের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বর্তমানে জনগণের নিরাপত্তাহীনতা
বাংলাদেশে জনগণের নিরাপত্তাহীনতা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রধান কারণগুলো হলো:
১. অপরাধ বৃদ্ধি – দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অপরাধের হার বাড়ছে। খুন, ধর্ষণ, চুরি, ও মাদক ব্যবসা এরই অংশ।
২. আইনের শাসনের অভাব – পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কার্যকরী ভূমিকা না থাকায় অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাচ্ছে না।
৩. ভীতির পরিবেশ – রাজনৈতিক সহিংসতা এবং সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ায়, জনগণ ভয়ের মধ্যে দিনাতিপাত করছে।
৪. উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার – মুঠোফোন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপরাধীরা নিজেদের কার্যকলাপ সহজেই চালিয়ে যাচ্ছে, যা নিরাপত্তাহীনতা আরও বাড়াচ্ছে।

এর প্রভাব কী?
•জনগণের আতঙ্ক – মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয় পায়, যা তাদের সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনকে প্রভাবিত করছে।
•আর্থিক ক্ষতি – অপরাধের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতি হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসায়িক পরিবেশের জন্য অশনি সংকেত।
•বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস – নিরাপত্তাহীনতা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।

প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা
গণতন্ত্র হলো জনগণের শাসন, যেখানে জনগণের মতামতই সর্বোচ্চ। তবে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে না। এর কারণগুলো হলো:
১. প্রতিষ্ঠানিক দুর্বলতা – রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার লড়াইয়ের ফলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে।
২. অস্থিতিশীল নির্বাচন ব্যবস্থা – নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক সহিংসতা, কারচুপি এবং ভোটের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।
৩. গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অভাব – গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং সংবিধান মেনে চলার সংস্কৃতি সমাজে গড়ে ওঠেনি।

গণতন্ত্রের প্রকৃত চেহারা কী?
•স্বাধীন নির্বাচন – সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া, যেখানে জনগণ তাদের প্রতিনিধিদের স্বাধীনভাবে নির্বাচন করতে পারে।
•দুর্নীতিমুক্ত সরকার – সরকারের দায়িত্বশীলতা এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা।
•আইনের শাসন – বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং অপরাধীদের বিচার করা।

ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও মানবাধিকার
বাংলাদেশে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার এখনও অনেক জায়গায় সংকুচিত। এর মূল কারণ:
১. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা – সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধী দলের প্রতি দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাকস্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ।
২. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা – সংবাদমাধ্যমগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যা জনগণের তথ্য অধিকার হরণ করছে।
৩. ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সামাজিক বৈষম্য – সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য এবং ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।
৪. ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা – অনেক সময় ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মতপার্থক্য সহ্য করা হচ্ছে না, যা মানুষের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।

এর প্রভাব কী?
•সমাজের বিভাজন – মানুষের মধ্যে জাতি, ধর্ম বা রাজনৈতিক কারণে বিভাজন তৈরি হচ্ছে, যা সামাজিক অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।
•মানবাধিকার লঙ্ঘন – স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত অধিকার সমুন্নত রাখা যাচ্ছে না, যার ফলে আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

নেতৃত্বের ব্যর্থতা ও প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে দেশের সাধারণ জনগণ তাদের সমস্যার কার্যকর সমাধান পাচ্ছে না, বরং পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে।

গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা ও প্রশাসনের গুরুত্ব
বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে গণতন্ত্রের কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হলেও, এর কার্যকারিতা সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গণতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য জনগণের জন্য সেবা দেওয়া হলেও, আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতার সংগ্রাম এবং দলীয় সংকীর্ণতার কারণে প্রশাসন কার্যকরভাবে কাজ করতে পারছে না।

গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা
গণতন্ত্রে গণমাধ্যম, মতপ্রকাশ, নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকারের কাঠামো নির্বাচিত হয়, তবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্নীতির কারণে গণতন্ত্রের কার্যকারিতা অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ।

১. দলীয় সরকার ও পকেট রাজনীতি – নির্বাচিত সরকারগুলো তাদের দলের স্বার্থে কাজ করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় নীতিতে একগুয়ে আচরণ করছে, যা জনগণের জন্য ক্ষতিকর।
২. পাঠ্যক্রমের রাজনীতিকরণ – শিক্ষা ব্যবস্থায় দলীয় পদক্ষেপের কারণে দেশের যুব সমাজ সঠিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছে না।
৩. প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন – সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি প্রায়ই কার্যকর হয়নি, যা জনগণের মাঝে হতাশা তৈরি করেছে।

এই অবস্থায়, গণতন্ত্রের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনকে শক্তিশালী করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশাসনতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা
প্রশাসনতন্ত্র মূলত একটি দক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করে, যা সরকারের স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। এটি দলের বাইরে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেয়, ফলে জনগণের প্রতি সরকারের সেবা আরও কার্যকর হতে পারে।

বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ প্রশাসনকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে উন্নয়ন অর্জন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, সিঙ্গাপুর এবং দক্ষিণ কোরিয়া প্রশাসনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে। একইভাবে, জার্মানি ও সুইডেন তাদের প্রশাসনিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করে উন্নত নাগরিক সেবা প্রদান করছে।

বাংলাদেশে প্রশাসনতন্ত্র কেন প্রয়োজন?
১. দুর্নীতির প্রতিরোধ – দক্ষ প্রশাসন দুর্নীতি মোকাবেলা করতে পারে, কারণ তা স্বচ্ছভাবে কাজ করতে পারে এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কম থাকে।
২. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ – প্রশাসনিক কাঠামো শক্তিশালী হলে দ্রুত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়, যা উন্নয়নমূলক কাজ দ্রুত বাস্তবায়নে সাহায্য করে।
৩. প্রযুক্তি ও আধুনিকীকরণ – আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রশাসন আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর হতে পারে, যা জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করে।
৪. নৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা – একটি শক্তিশালী প্রশাসন রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সক্ষম এবং এর মাধ্যমে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

বাংলাদেশে প্রশাসনকে শক্তিশালী করার জন্য কয়েকটি করণীয় পদক্ষেপ:
১. প্রশাসনিক সংস্কার – প্রশাসনিক কাঠামো ও নীতি সংস্কার করতে হবে যাতে তা আরও স্বচ্ছ এবং দক্ষ হয়।
২. প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ – সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতার উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।
৩. দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ – দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
৪. প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি – প্রশাসনে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে সেবার মান উন্নয়ন করতে হবে।
৫. প্রশাসনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা – রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমিয়ে প্রশাসনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

গণতন্ত্রের পতন এবং দেশের ভবিষ্যত
গণতন্ত্রের পতন বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। এর কারণ:
১. রাজনৈতিক অস্থিরতা – যদি দেশে গণতন্ত্র সুসংগঠিত না হয়, তবে তা দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংঘর্ষে পরিণত হতে পারে।
২.. অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হওয়া – শক্তিশালী গণতন্ত্র থাকলে দেশ সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে, যা না হলে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে।
৩. জনগণের বিশ্বাসহীনতা – সরকার ও রাজনৈতিক দলের প্রতি জনগণের আস্থা হারানোর ফলে গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাবে।

সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ
•রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা – যদি গণতন্ত্র সঠিকভাবে কার্যকর হয়, তবে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে, যা উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয়।
•অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি – গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সফল হলে দেশের অর্থনীতি বেড়ে উঠবে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী হবে।
•শ্রেণীভেদ ও বৈষম্য কমে আসবে – গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে সমাজে বৈষম্য কমে যাবে এবং অধিকাংশ মানুষ উন্নতির সুযোগ পাবে।

সুশিক্ষিত জাতি গঠনে করণীয়: প্রযুক্তি, প্রশাসনিক সংস্কার ও আন্তর্জাতিক উদাহরণ
একটি দেশকে স্বল্পসময়ের মধ্যে উন্নত করতে হলে শিক্ষা, প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রশাসনিক সংস্কার ও সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তন জরুরি। উন্নত দেশগুলো যেমন চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও এস্তোনিয়া স্বল্পসময়ে তাদের জনগণকে শিক্ষিত ও দক্ষ করে তুলেছে। বাংলাদেশেও একই রকম পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

১. মানসম্মত শিক্ষা ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা

সবার জন্য প্রযুক্তি-ভিত্তিক শিক্ষা চালু করা
•চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ায় শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই কোডিং, রোবোটিক্স, AI ও ডাটা অ্যানালিটিক্স শেখে। বাংলাদেশেও প্রতিটি স্কুলে এসব বিষয় বাধ্যতামূলক করতে হবে।
•কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র সনদ নির্ভর না হয়ে বাস্তব কাজ শিখতে পারে।

শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি দূর করা
•শিক্ষক নিয়োগ, পরীক্ষা ও সার্টিফিকেট প্রদান ডিজিটাল করতে হবে যাতে দুর্নীতি কমে।
•শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত মনিটরিং ও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

অনলাইন শিক্ষা ও ইন্টারনেট সহজলভ্য করা
•ফ্রি ইন্টারনেট ও ডিজিটাল ল্যাব তৈরি করা, যেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও অনলাইনে শিখতে পারে।
•MOOC (Massive Open Online Courses) এর মাধ্যমে বিশ্বমানের শিক্ষা বিনামূল্যে সবার জন্য উন্মুক্ত করা।

২. জনগণের দায়িত্ববোধ ও নৈতিকতা গড়ে তোলা
‘শুধু নিতে নয়, দিতে শিখতে হবে’ – এই মানসিকতা গঠন
•সরকার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জনগণকে বোঝাতে হবে যে একটি দেশ কেবল সরকারি উদ্যোগে বদলায় না, জনগণেরও ভূমিকা রাখতে হয়।
•সামাজিক দায়িত্বশীলতা পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যেন শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে ওঠে।

ন্যাশনাল সার্ভিস চালু করা (South Korea Model)
•দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রত্যেক নাগরিককে বাধ্যতামূলকভাবে কিছু সময় জাতীয় উন্নয়নে কাজ করতে হয়।
•বাংলাদেশেও পরিচ্ছন্নতা অভিযান, দুর্নীতি বিরোধী কর্মসূচি ও কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে।

গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি
•দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়া ও ইউটিউব ব্যবহার করতে হবে।
•জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সরকারি কাজের স্বচ্ছতা মূল্যায়ন করা উচিত।

৩. প্রশাসনিক দুর্নীতি রোধ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা
প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুর্নীতির লাগাম টানা
•এস্তোনিয়া সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্রশাসন তৈরি করে দুর্নীতি প্রায় শূন্যে নামিয়ে এনেছে। বাংলাদেশেও সব সরকারি কাজ অনলাইনে করতে হবে।
•প্রতিটি সরকারি দফতরের কাজ অনলাইনে মনিটরিং করার ব্যবস্থা করতে হবে যেন কেউ দায়িত্ব অবহেলা করতে না পারে।

জনগণের অভিযোগ জানানোর সহজ ব্যবস্থা চালু করা
•একটি কেন্দ্রীয় অনলাইন অভিযোগ প্ল্যাটফর্ম চালু করতে হবে যেখানে মানুষ সরাসরি দুর্নীতির তথ্য দিতে পারবে।
•দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান কঠোর করতে হবে।

নেতা ও কর্মকর্তাদের কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা
•দক্ষিণ কোরিয়ার মতো ‘ওপেন গভর্নমেন্ট’ পদ্ধতি চালু করতে হবে, যেখানে জনগণ সরাসরি সরকারি নীতির উপর মতামত দিতে পারে।
•মন্ত্রী, আমলা ও সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতার মূল্যায়ন বাধ্যতামূলক করতে হবে।

গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা
•দুর্নীতির বিরুদ্ধে রিপোর্টিং করার জন্য সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও স্বাধীনতা দিতে হবে।
•দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তথ্য ফাঁস করলে তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৪. কত সময় লাগবে? পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কৌশল
১-৩ বছর:
•শিক্ষা ক্ষেত্রে কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।
•সরকারি কাজ ডিজিটালাইজেশন করা এবং অনলাইন সেবা নিশ্চিত করা।
৩-৫ বছর:
•দুর্নীতির বিরুদ্ধে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা।
•ন্যাশনাল সার্ভিস চালু করা এবং জনগণকে জাতীয় কাজে যুক্ত করা।
৫-১০ বছর:
•সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর প্রশাসন চালু করা।
•একটি সুশিক্ষিত, প্রযুক্তি-নির্ভর ও দায়িত্বশীল জাতি গঠন সম্পন্ন করা।
পরিশেষে

স্বল্প সময়ে দেশের উন্নতির জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার, জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি দমন এবং সুশিক্ষার বিস্তার অত্যন্ত জরুরি। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং এস্তোনিয়ার সফল উদাহরণ প্রমাণ করে যে, সঠিক পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের মাধ্যমে খুব কম সময়ে একটি দেশকে বদলে ফেলা সম্ভব। বাংলাদেশেও সুশিক্ষা, প্রযুক্তি এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে আমরা দ্রুত উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে পৌঁছাতে পারব।

বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রশাসনের শক্তিশালী ভূমিকা অপরিহার্য। প্রশাসন যদি আরও দক্ষ এবং স্বচ্ছ হয়, তবে দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যাপক উন্নতি সম্ভব। প্রশাসনকে আধুনিক, দক্ষ এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ করা হলে দেশের উন্নয়ন আরও দ্রুত এবং টেকসই হবে।

বিশ্বের অনেক দেশ প্রশাসনতন্ত্রকে শক্তিশালী করে সফল উন্নয়ন অর্জন করেছে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া এবং জার্মানি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব দেশের প্রশাসন স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ।

বাংলাদেশের জন্য এসব মডেল অনুসরণ করা জরুরি। সিঙ্গাপুরের প্রশাসনিক দক্ষতা, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি ব্যবহারের নীতি এবং জার্মানির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রশাসন পরিচালনা করতে পারলে, সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে এবং দেশের উন্নয়ন আরও দ্রুত হবে।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মত দ্বিমত

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ: কোথায় গণতন্ত্র?

Published

on

কর্মকর্তা

মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নহাটা রাণী পতিত পাবনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি নিয়োগকে কেন্দ্র করে চরম অনিয়ম ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর মতে, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার জাতির মূল্যবোধ, স্বাধীনতার চেতনা এবং গণতান্ত্রিক নীতিমালার উপর সরাসরি আঘাত।

অভিযোগের কেন্দ্রে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক: একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাদিউজ্জামান, যিনি অতীতের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. সাইফুজ্জামান শিখরের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। অভিযোগ অনুসারে, তিনি অতীতের কুকর্ম ও দুর্নীতিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বর্তমান রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে এডহক কমিটির সভাপতি পদটি নিজের মনোনীত ব্যক্তির হাতে রেখে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোকে কুক্ষিগত করার অপচেষ্টা করছেন।

শহীদের রক্তের দাগ শুকানোর আগেই স্বৈরাচারী শাসনের পদধ্বনি: ১৯৭১ সালে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে দেশ স্বাধীন হয়েছে এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে প্রায় ২ হাজার ছাত্র-জনতা শহীদ হয়ে দেশকে ফ্যাসিস্ট শাসক মুক্ত করেছে, সেখানে আবারও স্বৈরাচারী শাসনের পদধ্বনি জাতির জন্য চরম অমর্যাদাকর।

নহাটা রাণী পতিত পাবনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি বিগত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রভাবের অধীনে ছিল, যেখানে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার চরম আকার ধারণ করেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিদ্যালয়ের সম্পদ লুটপাট করেছেন এবং রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে নিজেকে সুরক্ষিত রেখেছেন। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ভেঙে পড়েছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অশনি সংকেত।

এডহক কমিটির সভাপতি নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব ও অনিয়ম: এডহক কমিটির সভাপতি পদে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র যুবদল নেতা নয়নের স্ত্রী শাম্মী আকতারের নাম জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে, যা স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরিপন্থী। তিনি ঢাকায় বসবাস করেন এবং বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন।

এছাড়া আরও জানা গেছে, জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই যুবদল নেতা নয়নের স্ত্রীকে সভাপতি হিসেবে আমন্ত্রণপত্র বিতরণ করা হয়েছে এবং বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে সভাপতির চেয়ারে বসিয়ে পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে, যা আইনের চরম লঙ্ঘন।

স্থানীয় রাজনীতির কালো ছায়া: নহাটা তথা মহম্মদপুর উপজেলায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে এমন এক ধরনের নেতার উত্থান ঘটেছে, যারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও ব্যবহার করতে পিছপা হচ্ছেন না। স্থানীয় বিএনপি নেতারা যুবদল নেতা নয়নের স্ত্রীকে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করেছেন বলে একাধিক সূত্রের দাবি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাদিউজ্জামান জানান, “জেলা প্রশাসক মহোদয় এডহক কমিটির সভাপতি নিয়োগের জন্য এলাকার ৩ জন শিক্ষানুরাগীর (সুশিক্ষিত এবং নির্দলীয়) ব্যক্তির নাম পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু এই এলাকার বিএনপি নেতারা যুবদল নেতা নয়নের স্ত্রী শাম্মী আকতারের একক নাম পাঠাতে আমাকে বাধ্য করেছেন।”

বিএনপির হাইকমান্ডের সমীপে জবাবদিহিতার দাবি সংবলিত প্রতিবেদন: এই ঘটনার বিশ্লেষণে উঠে আসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর অভ্যন্তরীণ সংকট ও নেতৃত্বের দুর্বলতা। দলটি দীর্ঘদিন ধরে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কার্যক্রম ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে জনগণের আস্থা হারাচ্ছে।

নহাটা রাণী পতিত পাবনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এডহক কমিটির সভাপতি নিয়োগে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে দলীয় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, যা প্রমাণ করে বিএনপি অতীতের গণতান্ত্রিক আদর্শ থেকে দূরে সরে গিয়ে অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে।

প্রশ্নবিদ্ধ গণতন্ত্র ও স্বচ্ছতা: যদি বিএনপি সত্যিই জনগণের জন্য লড়াই করতে চায়, তবে কেন তাদের আচরণ স্বৈরতান্ত্রিক শাসকদের মতো? জনগণ কি আবারও ক্ষমতার অপব্যবহারের শিকার হবে?

পারিবারিক ক্ষমতা ও গণতন্ত্রের প্রশ্ন: নহাটা স্কুলের ঘটনাটি বাংলাদেশের পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির একটি নিকৃষ্ট উদাহরণ, যেখানে স্থানীয় জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সভাপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সত্যিকারের রাজনীতি: সেবা নাকি ক্ষমতার মোহ? রাজনীতি মূলত জনগণের সেবার জন্য, ক্ষমতা ভোগের জন্য নয়। কিন্তু বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে, দলটি ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে পড়েছে।

দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার: নহাটা স্কুলের ঘটনায় জনমত উপেক্ষা করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো দুর্নীতিরই একটি রূপ। বিএনপি যদি সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাহলে তাদের নিজেদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার উপায়: ১. গণতন্ত্রের চর্চা: অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক নীতিমালা প্রতিষ্ঠা। ২. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: অর্থ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জনগণের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করা। ৩. যোগ্য নেতৃত্ব: পরিবারতন্ত্রের বাইরে গিয়ে দক্ষ ও আদর্শবান নেতৃত্ব বেছে নেওয়া। ৪. দুর্নীতি দমন: বিএনপির ভেতরে যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা। ৫. জনগণের মতামত: জনগণের মতামতকে অগ্রাধিকার দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

উপসংহার: “রাজনীতি ক্ষমতার জন্য নয়, জনগণের জন্য”- এই সত্য বিএনপির নেতারা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন, ততই মঙ্গল। নহাটা স্কুলের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, বিএনপি এখনও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে যথাযথভাবে ধারণ করতে পারেনি।

লেখক: রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক

অর্থসংবাদ/কাফি

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

শোল মাছ আর লাউয়ের ঝোল

Published

on

কর্মকর্তা

সেদিন বাংলা গ্রোসারি সুপারমার্কেটে গিয়েছিলাম অনেকদিন পর। গ্রোসারি বাজার, আমেরিকান সুপারমার্কেটে বাজার, আর অন্যান্য কেনাকাটা আমার সহধর্মিণীই অনেক বছর যাবৎ করে আসছে। আমি কচিৎ কিঞ্চিৎ তার সাথে যাই সময় পেলে।

গেলেই আমার পছন্দের দু‘একটা আইটেম কিনে নিয়ে আসি। নিজে নিজে রান্না করে খাবো বলে। কখনো কখনো সেটা রান্না করা হয়। বাকি গুলো সময়ের অভাবে পড়ে থাকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ফ্রিজে। তারপর সেটা সহধর্মিণী রান্না করে রাখে।

এবার ভাবলাম বেশি কিছু কিনব না আমার জন্যে। একটা মাত্র আইটেম কিনব। প্রথমেই চোখে পড়লো শোল মাছের একটা প্যাকেট। তাজা শোল মাছ না। ফ্রোজেন শোল মাছ, পিচ পিচ করে কেটে, পরিষ্কার করে প্যাকেটজাত করা। এক প্যাকেটে পাঁচ পিচ। প্যাকেটে আছে ৫০০ গ্রাম। দাম ৭ আমেরিকান ডলার! ঘুরে গিয়ে শাক-সবজি যেখানে রাখে সেখানে গিয়ে দেখলাম লাউ আছে কিনা। মিলে গেল। দেখলাম বেশ সুন্দর সতেজ লাউ আছে। লাউ দিয়ে শোল মাছের ঝোল অনেকদিন খাইনি। যেমন চিন্তা, তেমন কাজ। ভাবলাম, আজ আমার যত কাজই থাকুক না কেন, শোল মাছের ঝোল রান্না করে খাওয়া খুবই জরুরী।

শোল মাছের ঝোল লাউ দিয়ে দু‘ভাবে রান্না করা যায়। প্রথমটা হল, লাউ কুচি কুচি করে কেটে নিতে হবে। তারপর সেটাকে অনেকটা ঘণ্ট রান্না করার মত করে ভাজা শোল মাছের সাথে রান্না করতে হবে। ঘন্টই হবে, তবে একটু অল্প ঝোল ঝোল হবে।

আর দ্বিতীয় রকম হলো, ঢাকার বিক্রমপুরের স্টাইলে। এই স্টাইলে রান্না করতে গেলে লাউ কাটতে হবে বড় বড় করে। আলু-কফির তরকারীতে আলু যেমন বড় করে কেটে দেয়া হয় সেরকম। আমি রেধেছি ঢাকার বিক্রমপুর স্টাইলে।

নিজের প্রশংসা না করে পারছিনা! দারুণ হয়েছে রান্না। বেশ হয়েছে খেতে। একদম যেরকম মনে মনে ভেবে ছিলাম, সেই রকম। খেয়ে পুরোটাই সাবার করে দিয়েছি এক দিনে! কিন্তু একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম যে শোল মাছের প্যাকেটে যে লেবেল আছে তাতে বাংলায় ‘শোল’ লেখা। কিন্তু মাছটা এসেছে ভিয়েতনাম থেকে। ভোক্তার চাহিদা এবং ভোক্তার সুরক্ষা দুটোই খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভোক্তা যখন তার চাহিদাকে বড় করে দেখবে তখন যে সরবরাহকারীর কোনো ত্রুটি থাকলে সরবরাহকারী আস্তে আস্তে মরে যাবে। ত্রুটিপূর্ণ সরবরাহকারী ছিটকে পড়ে যাবে, নতুন সরবরাহকারীদের আবির্ভাব হবে।

আপনারা হয়তো জানেন কিনা জানিনা, আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমেরিকাতে বছর দশেক আগে থেকেই বাংলাদেশের আইশবিহীন যত মাছ আছে সেগুলো আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধুমাত্র আইশওয়ালা মাছগুলোই আমদানি করা যাবে বাংলাদেশ থেকে। কারণ আমেরিকার খাদ্য ও ঔষধ গবেষণা এবং নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এফডিএ যখন টেস্ট করে দেখতে পায় যে বাংলাদেশের মাছে ফরমালিন এবং অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ দিয়ে প্রিজার্ভ বা সংরক্ষণ করা হয়, যা কিনা শরীরের জন্য বিভিন্নভাবে ক্ষতিকারক। এ সব রাসায়নিক পদার্থ খেলে ক্যান্সার হয়, ডায়াবেটিস বাড়ায় এবং মানুষের মস্তিষ্কে বিভিন্ন রকম সমস্যা হয়। সেজন্যেই তারা বাংলাদেশ থেকে ওই ধরনের মাছগুলো আমদানী করতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিয়েছে।

এখন সেই সুযোগটা নিয়েছে যারা দুর্নীতি পরায়ণ না, যারা নিয়ম মেনে চলে, যারা ভোক্তার অধিকারকে সম্মান দেয় এবং ভোক্তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্যাপারগুলোকে গুরুত্ব দেয়। তাই ভিয়েতনাম সেই জায়গাটা বা সেই শূন্যতা দখল করে নিয়েছে। যদি আমেরিকায় এক লক্ষ লোক মাসে ১ প্যাকেট করে শোল মাছ কেনে তাহলে সেই এক লক্ষ লোকের মাসে ৭ লক্ষ ডলারের শোল মাছ বিক্রি হবে। তার অর্থ হল, বছরে ৮৪ লক্ষ ডলারের শোল মাছ বিক্রি হবে। যেটা কিনা বাংলাদেশী টাকায় ১০০ কোটি টাকার সমতুল্য। প্রতিবছরে এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ শুধু শোল মাছ থেকে। কারণ বলতে তাদের দুর্নীতি, অমানবিকতা এবং অসৎপরায়ণতাই প্রথমে মনে আসছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শুধু শোল মাছ নয়, আরো অনেক রকম মাছ রপ্তানী করতে না পেরে।

মোদ্দা কথা হচ্ছে, আমার মত শোল মাছ যারা পছন্দ করে, তাদের খাওয়া কিন্তু বন্ধ নেই এবং এটার সরবরাহ কিন্তু এসে যাচ্ছে কোনো না কোনোভাবে। যারা সৎ পথে চলে, তাদের জন্য অসৎ মানুষেরা অনেক দরজা খুলে দেয়। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা হল, ভোক্তা অধিকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা ভোক্তা অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবে না, যারা ভোক্তাকে সম্মান দেবে না, তারা আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাবে বাজার থেকে, এটাই এক ধরনের কঠোর বাজার অর্থনীতি।

অমিয় দাশ, ফ্লোরিডা, আমেরিকা

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা কেন প্রয়োজন?

Published

on

কর্মকর্তা

বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা বহুমুখী সংকটের মুখোমুখি। সৃজনশীলতার অভাব, দক্ষতার ঘাটতি এবং স্থানীয় চাহিদার প্রতি উদাসীনতা শিক্ষাব্যবস্থার অগ্রগতিকে স্থবির করে দিয়েছে। এই সংকট শুধু শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎকেই নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নকেও বাধাগ্রস্ত করছে। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি দক্ষ, উদ্ভাবনী এবং সমাজের প্রয়োজনমাফিক শিক্ষিত প্রজন্ম গড়ে তোলার জন্য বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রচলিত এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে সবার জন্য একই পাঠ্যসূচি ও পরীক্ষার কাঠামো নির্ধারিত, সেখানে শিক্ষার্থীদের বহুমুখী প্রতিভা বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাধীনতা ও সুযোগ সীমিত। এককেন্দ্রিক ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন, পটভূমি এবং চাহিদাকে অগ্রাহ্য করে ‘সবার জন্য একই জিনিস’ (ওয়ান সাইজ ফিটস অল) ধারণা চাপিয়ে দেয়। ফলে একদিকে শিক্ষার্থীদের ভিন্নতর প্রতিভা ও যোগ্যতার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, অপরদিকে রাষ্ট্র বঞ্চিত হয় জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে পরিণত করার সুযোগ থেকে।

বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা এই সংকটের সমাধানে কার্যকর সমাধান হতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় একটি নির্ধারিত শিক্ষাক্রম কাঠামোর ভিত্তিতে স্থানীয় চাহিদা ও বৈচিত্র্য অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা ও আগ্রহের ভিত্তিতে পাঠ্যসূচি এবং উপযোগী শিক্ষণ পদ্ধতি তৈরি করা সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে এখানে ইংল্যান্ড ও ফিনল্যান্ডের বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বের নানা দেশে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, দক্ষতা এবং সৃজনশীলতা বিকাশে বিশেষ সহায়ক হয়ে ওঠেছে। এই ব্যবস্থা পড়ালেখায় শিক্ষার্থীদের নিজস্ব অগ্রগতি ও প্রয়োজন অনুযায়ী শেখার সুযোগ দেয়, যা তাদের প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে সৃজনশীল চিন্তাধারার বিকাশ এবং সমস্যার সমাধান করার দক্ষতাকে উন্নত করে।

বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার পূর্বের আলোচনায় আমরা এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিকতা, স্থানীয় সমস্যা ও সুযোগ-সুবিধার সাথে সংযোগ এবং সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশের ওপর জোর দিয়েছি। শিক্ষার মৌলিক লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রতিটি শিক্ষার্থীর শিখনধারা, আগ্রহ এবং প্রাসঙ্গিক বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য রাখা। বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিটি বিদ্যালয়, এমনকি প্রতিটি শিক্ষক, তাদের শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যসূচি ও পাঠদান পদ্ধতি নির্ধারণ করতে সক্ষম হন। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব পড়ালেখার অগ্রগতি ও ক্ষমতা অনুযায়ী শেখার সুযোগ পায় এবং প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়। এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্যপূর্ণ শিখনধারা এবং আগ্রহকে উপেক্ষা করে, যা সৃজনশীলতার বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। এর বিপরীতে বিকেন্দ্রিক ব্যবস্থায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত দক্ষতা ও প্রতিভার বিকাশে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস এবং স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে তোলার পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শুধু পরীক্ষার ফলাফলের জন্য নয়, বরং জীবনের বাস্তব প্রয়োগের জন্য জ্ঞানার্জন করতে পারে, যা একটি জাতির সামগ্রিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত জরুরি।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য একটি বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য খুবই উপযোগী ও অত্যাবশ্যক। কারণ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিদ্যমান সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যার প্রকৃতি ও চাহিদার ধরন আলাদা। যেমন চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রা, জীবিকা ও পরিবেশের চাহিদা সিলেটের চা বাগান বা পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকার শিক্ষার্থীদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর ভিত্তি করে পাঠ্যসূচি তৈরি করা যেতে পারে, যা সেখানে জীবনযাত্রা, জীবিকা এবং পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক হবে। তেমনি সিলেটের চা বাগানের শ্রমজীবী পরিবারগুলোর জন্য কৃষিভিত্তিক কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা তাদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।

একইভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত শিক্ষা বাস্তবিক চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে। বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে এসব এলাকার স্থানীয় সমস্যা এবং শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষাসূচি সাজানো সম্ভব। এই ধরনের ব্যবস্থা জন-সমাজের প্রাসঙ্গিক শিক্ষাকে নিশ্চিত করবে এবং স্থানীয় দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার একটি বড় সমস্যা হলো, এটি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল চিন্তা এবং গবেষণাধর্মী শিক্ষার বদলে মুখস্থবিদ্যার ওপর নির্ভরশীল করে তোলে। বিকেন্দ্রিক ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা প্রকল্পভিত্তিক শিক্ষা এবং গবেষণায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, চীনের কিছু গ্রামীণ বিদ্যালয়ে স্থানীয় কৃষি সমস্যার সমাধানে শিক্ষার্থীদের গবেষণামূলক কাজ করানো হয়, যা শুধু তাদের সৃজনশীলতাকেই বাড়ায় না বরং স্থানীয় সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধানও দেয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা শুধু দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে নয়, বরং ভবিষ্যতের উদ্ভাবক হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে। এককেন্দ্রিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে পরীক্ষাভিত্তিক জ্ঞানার্জনের ওপর যে অতিরিক্ত জোর দেওয়া হয়, তা শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী চিন্তার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। বিকেন্দ্রিক ব্যবস্থায়, বিশেষত প্রকল্পভিত্তিক এবং গবেষণাধর্মী শিক্ষার মাধ্যমে, শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তব সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে পায়। ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা এ ক্ষেত্রে একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ যেখানে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে নিজস্ব পদ্ধতি অনুসন্ধানের স্বাধীনতা দেওয়া হয় এবং তাদের গবেষণায় অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করা হয়। বাংলাদেশের মতো দেশে এ ধরনের উদ্যোগ শুধু উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটাবে না, বরং প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার সম্প্রসারণেও সহায়ক হবে।

বাংলাদেশের এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের চাহিদা এবং বৈচিত্র্যময় পটভূমিকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের তত্ত্বাবধানে সারা দেশের জন্য একই পাঠ্যপুস্তক নির্ধারণ করা হয়, যা বিশেষ করে শহর ও গ্রামের শিক্ষার্থীদের ভিন্নতর চাহিদা এবং বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। শহরের শিক্ষার্থীরা যেখানে উন্নত প্রযুক্তি, শিক্ষণ সামগ্রী এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকের সুবিধা পায়, গ্রামীণ শিক্ষার্থীরা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এর ফলে শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি গভীর বৈষম্য তৈরি হয়, যা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে অন্তরায় এবং আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই বৈষম্য কেবল শারীরিক সুযোগ-সুবিধার সীমাবদ্ধতা নয়; এটি শিক্ষার্থীদের চিন্তা ও দক্ষতার বিকাশকেও বাধাগ্রস্ত করে। গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন স্থানীয় বাস্তবতা এবং জীবিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত ও জীবনমুখী সংগতিপূর্ণ পাঠ্যসূচি। যেমন ভারতের কেরালা রাজ্যে স্থানীয় শিক্ষার বিকাশে একটি সমন্বিত উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে, যা গ্রামের শিক্ষার্থীদের স্থানীয় সমস্যার সমাধানে সম্পৃক্ত করে তাদের আত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।

ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা তার বিকেন্দ্রিক চরিত্র এবং শিক্ষকের স্বাধীনতার জন্য বিশ্বব্যাপী সেরা হিসেবে স্বীকৃত। এই ব্যবস্থায় শিক্ষকরা পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষাদান পদ্ধতি নির্ধরণে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করেন, যা শিক্ষার মানকে বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। শিক্ষার্থীদের তাদের আগ্রহ অনুযায়ী বিষয় বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় এবং তারা গবেষণাধর্মী কার্যক্রমে অংশ নিয়ে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন করে। ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থার এই উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, শিক্ষকদের স্বাধীনতা এবং শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত চাহিদার প্রতি মনোযোগ শিক্ষার সামগ্রিক মান উন্নত করতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং প্রযুক্তির সফল সংমিশ্রণের জন্য বিখ্যাত। জাপান তাদের শিক্ষাক্রমে স্থানীয় ঐতিহ্যকে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে। যেমন জাপানের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের স্থানীয় শিল্পকলা, কৃষি এবং পরিবেশ নিয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়, যা তাদের শিকড়ের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে। একই সঙ্গে প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করে তোলে। ফিনল্যান্ড এবং জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে আমরা দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। প্রথমত, শিক্ষকদের স্বাধীনতা এবং স্থানীয় চাহিদার প্রতি মনোযোগ প্রদান শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করে। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় ঐতিহ্য এবং প্রযুক্তির সংমিশ্রণ শিক্ষার্থীদের বাস্তবমুখী এবং কার্যকর শিক্ষা প্রদান করতে পারে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এই মডেলগুলো গুরুত্বপূর্ণ।

বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষকদের স্বাধীনতা প্রদান এবং স্থানীয় চাহিদার ওপর ভিত্তি করে শিক্ষাক্রম তৈরির মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে স্থানীয় বনজ সম্পদের ওপর ভিত্তি করে পরিবেশগত শিক্ষা, বা উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার কৌশল অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। একইসঙ্গে প্রযুক্তি ব্যবহারে বিনিয়োগ করে শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার উপযোগী করে গড়ে তোলা সম্ভব। ফিনল্যান্ড এবং জাপানের উদাহরণ থেকে দেখা যায় যে, একটি বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা কেবল শিক্ষার মান উন্নত করতেই নয়, বরং শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি জাতির ভবিষ্যৎ গড়তে কতটা কার্যকর হতে পারে।

সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে। এটি কেবল শিক্ষার মানোন্নয়নেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং প্রযুক্তি, শিল্প এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বিকেন্দ্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, দক্ষতা এবং উদ্যোক্তা মানসিকতা বিকশিত হবে, যা তাদের বৈশ্বিক চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে তুলবে। একই সাথে শিক্ষার ডিজিটালকরণ নিশ্চিত করা হলে শিক্ষার্থীদের শেখার পদ্ধতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। তারা তাদের শেখার নিজস্ব গতি ও আগ্রহ অনুযায়ী জ্ঞান অর্জন করতে পারবে, যা ব্যক্তিগত উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা চেতনার বিকাশ ঘটাবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, জাপানের শিক্ষাব্যবস্থায় যেমন স্থানীয় শিল্পের সাথে প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটানো হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশেও স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যসূচি এবং প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ডিজাইন করা সম্ভব। এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি দক্ষ জনশক্তির ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে এবং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হবে।

একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি নতুন, দক্ষ ও সৃজনশীল প্রজন্ম গড়ে তোলা সম্ভব। তাই বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হলে এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার পথে দ্রুত এগোতে হবে। ফিনল্যান্ড, জাপান বা সিঙ্গাপুরের মতো উদাহরণগুলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করে আমরা আমাদের নিজস্ব প্রেক্ষাপটের উপযোগী একটি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি। এই ব্যবস্থা কেবল শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াবে না, বরং তাদের মধ্যে উদ্ভাবনী চিন্তা, মানবিক মূল্যবোধ এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরি করবে। বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা শুধু আমাদের অকার্যকর শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের জন্য নয়, এটি আমাদের আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের ভিত্তি হিসেবেও জরুরি। এটি বাংলাদেশী হিসেবে এমন এক প্রজন্ম গড়ে তুলতে সহায়তা করবে যারা হবে আত্মনির্ভরশীল, সৃজনশীল এবং আধুনিক বিশ্বের প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষতার চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশীরা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী, প্রযুক্তিতে অগ্রসর এবং মানবসম্পদে সমৃদ্ধ একটি জাতি হিসেবে বিশ্বে স্থান করে নিতে সক্ষম হবে। শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার পথে এগিয়ে গিয়ে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে নিরাপদ এবং উজ্জ্বল করে তুলতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

ড. মাহরুফ চৌধুরী, ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য। mahruf@ymail.com

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

সমতাভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবার বিকেন্দ্রীকরণ সময়ের দাবি

Published

on

কর্মকর্তা

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৫৩ বছর অতিক্রম করলেও, দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। বরং, ক্রমবর্ধমানভাবে দেশের জনগণ প্রতিবেশী দেশগুলোর—বিশেষত ভারতের, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইংল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশের—স্বাস্থ্যসেবার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এই নির্ভরশীলতা কেবল দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ঘাটতি তৈরি করেনি, বরং দেশের অর্থনীতির ওপরও বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। চিকিৎসা সেবার জন্য প্রতিটি বছর লক্ষাধিক বাংলাদেশি বিদেশে যাত্রা করে, যার ফলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অপচয় হচ্ছে। এটি শুধু জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রেই অবনতি তৈরি করছে না, একইসঙ্গে স্থানীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়নেও বাধার সৃষ্টি করছে।

তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, এই সংকটকে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে সংকট হিসেবে গ্রহণ করা হয়নি। দেশের নেতৃবৃন্দের কাছে এটি বড় কোনো সমস্যা না হলেও, দেশের সাধারণ মানুষ প্রতিদিন এই সংকটের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছে। গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা বিশেষভাবে দুঃখজনক এবং শহুরে এলাকার মানুষও প্রতিদিন ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন। কিন্তু নেতাদের কাছ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপের দেখা মেলেনি। তাদের দৃষ্টি বিদেশি চিকিৎসকদের ওপর, কিন্তু জনস্বাস্থ্যের গুরুত্ব যেন সেখান থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে, জনগণের আস্থা ক্রমাগত ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং তাদের নিজস্ব স্বাস্থ্য সেবায় আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে।

সুইডেনের উদাহরণ: একটি সফল স্বাস্থ্যসেবা মডেল:-
উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সুইডেন স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে তার উদাহরণে অনুপ্রাণিত করে, বিশেষ করে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা এবং বিকেন্দ্রীকৃত স্বাস্থ্যসেবা মডেলের মাধ্যমে। সুইডেনে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা স্থানীয় পর্যায়ে পরিচালিত হয়। প্রতিটি এলাকার স্থানীয় কাউন্সিল বা পৌরসভাগুলো স্বাধীনভাবে তাদের জনগণের চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও উন্নয়ন নিশ্চিত করে থাকে। এই মডেল, সুইডেনের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন, জনগণের আস্থা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

এছাড়াও, সুইডেনের পাশাপাশি নেদারল্যান্ডস এবং জাপানও বিকেন্দ্রীকৃত স্বাস্থ্যসেবা মডেল প্রয়োগ করে উন্নত সেবা প্রদান করছে। এসব দেশের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে, বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে শুধু সেবার প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পায় না, বরং জনগণের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হয়। এমনকি স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা পরিচালনার ফলে কর্মক্ষেত্রেও উন্নতি আসে, যা দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কাঠামোকে শক্তিশালী করে।

বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র:-
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যব্যবস্থা অত্যধিক কেন্দ্রীভূত, যার ফলে রাজধানী ঢাকা অতিরিক্ত চাপের শিকার। প্রতি বছর ঢাকায় রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ঢাকার হাসপাতালগুলো চাপের মুখে পড়ে রীতিমতো সীমিত সামর্থ্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে বাধ্য হচ্ছে। সেখানে অত্যধিক চাপ এবং রোগীর দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে সেবা দেওয়ার গুণগত মান কমে যাচ্ছে, যা একদিকে রোগীদের জন্য একটি বড় দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অপরদিকে, গ্রামীণ এলাকার হাসপাতালগুলো অবকাঠামো এবং আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে ভুগছে। অধিকাংশ গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং উপজেলা হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি নেই, ফলে গ্রামের মানুষরা উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া চিকিৎসকদের অভাব এবং তাদের সীমিত প্রশিক্ষণ এই সমস্যাকে আরও প্রকট করছে। বিশেষ করে, গ্রামের অদূরে এবং দুর্গম এলাকায় চিকিৎসা সেবা পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমনকি যেখানে কিছু হাসপাতাল আছে, সেখানেও সেবা পর্যাপ্ত নয়, যা জনগণের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
এছাড়া, বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদদের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা দেশের স্বাস্থ্যসেবার প্রতি আস্থার ঘাটতির একটি অন্যতম উদাহরণ। দেশীয় হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা সুবিধা না পেয়ে তারা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন, যা সাধারণ জনগণের মধ্যে এক ধরনের হতাশা এবং অসন্তোষ সৃষ্টি করছে। এর ফলে স্থানীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতির জন্য যথাযথ বিনিয়োগ ও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। জনগণ দেখতে পাচ্ছে যে, দেশের রাজনৈতিক নেতারা নিজস্ব সুবিধার্থে বিদেশি চিকিৎসা ব্যবস্থা বেছে নিচ্ছেন, যার ফলে স্থানীয় স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগের উৎসাহ কমে যাচ্ছে এবং জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে। এ ধরনের সংকটের কারণেই স্বাস্থ্যসেবা খাতে পরিবর্তন ও সমাধানের জন্য বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজনীয়তা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান:-
সুইডেনের সফল স্বাস্থ্যসেবা মডেল অনুসরণ করে বাংলাদেশে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে একটি সমতাভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। বিকেন্দ্রীকরণের পথ বেছে নিলে আমরা দীর্ঘমেয়াদে দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবো। এর মাধ্যমে জনগণের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো সহজ এবং প্রভাবশালী হবে।

১. স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষমতায়ন: স্থানীয় প্রশাসনকে আরও শক্তিশালী ও সক্রিয় করতে হবে। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার এমপিদের তাদের নিজ এলাকায় বসবাস করা এবং স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। এটি তাদের সরাসরি জনগণের সমস্যার মুখোমুখি করবে এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে আরও তৎপর করে তুলবে।

২. অবকাঠামোগত উন্নয়ন: গ্রামীণ হাসপাতালগুলোতে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষিত চিকিৎসক সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে, গ্রামের মানুষও উন্নত চিকিৎসা সেবা পাবেন, যা তাদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করবে।

৩. স্বাস্থ্যসেবায় নৈতিক চর্চা প্রতিষ্ঠা: স্বাস্থ্য খাতে নৈতিকতার উন্নতি ও স্বচ্ছতার জন্য কঠোর নীতিমালা তৈরি করতে হবে। চিকিৎসকদের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফার্মেসির সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক নিরসন করতে এবং তা নিয়ন্ত্রণ করতে কড়া তদারকি প্রয়োজন। এটি জনগণের আস্থার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে এবং সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে।

৪. ঢাকার ওপর চাপ কমানো: বর্তমান পরিস্থিতিতে ঢাকায় স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং অন্যান্য মৌলিক পরিষেবাগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। তাই বিকল্প আঞ্চলিক কেন্দ্র গড়ে তুলে ঢাকার ওপর চাপ কমানো যেতে পারে। এতে উন্নত পরিষেবাগুলো শহরের বাইরেও সহজলভ্য হবে এবং গ্রামীণ অঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভব হবে।

অর্থনৈতিক উপকারিতা ও সামাজিক উন্নয়ন:-
স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন দেশের জনগণের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। উন্নত মানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হলে, দেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার পরিমাণ কমে যাবে, যা বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ করবে। প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রতিবেশী দেশ যেমন ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং অন্যান্য দেশে চলে যায়, যার ফলে দেশের অর্থনীতির উপর বিরাট চাপ পড়ে। এই অর্থ যদি দেশের মধ্যে থাকে, তবে তা দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে সহায়ক হবে এবং স্থানীয় অর্থনীতি গড়ে তোলার পথ খুলবে।

এছাড়া, স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন শহর ও গ্রামীণ এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়তা করবে। স্বাস্থ্যসেবার দ্রুত ও সহজলভ্য পৌঁছানোর মাধ্যমে জনগণের শারীরিক সুস্থতা এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

স্বাস্থ্যসেবায় আন্তঃপেশাগত সহযোগিতা ও বৈশ্বিক দক্ষতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা:-
একটি আধুনিক ও কার্যকর স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে চিকিৎসক, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, কেমিস্ট, নার্সসহ অন্যান্য পেশাজীবীদের মধ্যে সমন্বিত সহযোগিতা অপরিহার্য। এই সহযোগিতা শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে না, বরং বৈশ্বিক দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। পেশাজীবীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় পর্যায়ে কাজের সুযোগ, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা আবশ্যক। এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হলে, তারা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা প্রদানের যোগ্যতা অর্জন করবে।

এ ধরনের উন্নয়নমূলক উদ্যোগ পেশাজীবীদের জন্য দুটি উল্লেখযোগ্য সুফল বয়ে আনবে:
১. বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি: দক্ষ পেশাজীবীরা বিশ্বের যেকোনো দেশে চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের গৌরব বৃদ্ধি করবে এবং দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানকে আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত করবে।

২. রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধি: এই দক্ষ মানবসম্পদ বিদেশে কাজ করার মাধ্যমে রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য বিশাল সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। তবে এই সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ নিতে হলে, দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন ঘটানো অত্যন্ত জরুরি। দেশের মানুষ যদি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার পরিবর্তে স্থানীয় সেবা গ্রহণে আগ্রহী হয়, তবে তা স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবার প্রতি আস্থা বৃদ্ধি করবে। এর ফলে, চিকিৎসকসহ অন্যান্য পেশাজীবীরা দেশে থেকেই কাজ করতে আরও আগ্রহী হবে।

একটি সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার মাধ্যমে চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য পেশাজীবীরা একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যখাত শক্তিশালী হবে। এটি দেশের স্বাস্থ্য সেবাকে শুধুমাত্র উন্নত করবে না, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগও সৃষ্টি করবে।

উপসংহার:-
বাংলাদেশের জন্য স্বাস্থ্যসেবার বিকেন্দ্রীকরণ শুধুমাত্র একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা নয়; এটি একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের মৌলিক দায়িত্ব। দেশের প্রতিটি নাগরিক, তাদের অবস্থান যাই হোক না কেন, সমান স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রাখে। এটি একটি মানবিক ও সমতাভিত্তিক সমাজের প্রাথমিক শর্ত। সুইডেনের মতো একটি সফল মডেল অনুসরণ করে বাংলাদেশ তার স্বাস্থ্যসেবা খাতকে শক্তিশালী করতে এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে পারে।

বর্তমানে দেশে স্বাস্থ্যখাতে নানা ধরনের দুর্নীতি, সিন্ডিকেট, ভেজাল ওষুধ, মেয়াদোত্তীর্ণ যন্ত্রপাতি এবং সঠিক মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকার কারণে স্বাস্থ্যব্যবস্থার গুণগত মান একেবারে নড়বড়ে। তাই সরকারকে এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে উদ্যোগী হতে হবে এবং স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নির্মূল করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাংলাদেশের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে, রাষ্ট্রীয় ও স্থানীয় প্রশাসনকে যৌথভাবে একসাথে কাজ করতে হবে। সর্বোপরি, একটি কার্যকর মনিটরিং সিস্টেম এবং দুর্নীতি রোধকল্পে দৃঢ় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন সম্ভব। এখনই সময় সাহসী এবং সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার, যাতে আমাদের দেশের প্রতিটি নাগরিক তার প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমিতে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পায়। যেন আর কারও জন্য বিদেশে চিকিৎসার জন্য ছুটতে না হয়, বরং বাংলাদেশে তাদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সেবা পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত হয়। তাছাড়া বিদেশি চিকিৎসার উপর ভরসা করলে তো দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হবে না। এই পদক্ষেপগুলো যদি আমরা গ্রহণ করি, তবে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে একটি স্বাস্থ্যবান, সুখী জাতি—যা বিশ্বে তার উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য পরিচিতি লাভ করবে।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

খেলাধুলা

জাতীয় দলে আর খেলবেন না তামিম

Published

on

কর্মকর্তা

আগামী মাসের ১৯ তারিখ পাকিস্তানের মাটিতে পর্দা উঠবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। এই টুর্নামেন্টের আগে আবারও আলোচনায় এসেছে তামিম ইকবালের দলে ফেরার ইস্যু। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদও জানিয়েছেন তামিম যেহেতু অবসর নেননি নির্বাচকরা যদি তামিমকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে প্রয়োজন হয় তাহলে তাকে নিতে পারে।

তবে এর মাঝেই জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে মুখ খুলেছেন তামিম। পাকিস্তানি কিংবদন্তি শহিদ আফ্রিদি অবসর প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে তামিম বলেন, ‘জাতীয় দলে আর খেলছি না।’

বিপিএলে এবার চিটাগং কিংসের মেন্টর হিসেবে এসেছেন আফ্রিদি। তামিম খেলছেন ফরচুন বরিশালের হয়ে। একই হোটেলে থাকার সুবাদে নিয়মিত হচ্ছে আড্ডা। আফ্রিদি তার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে তেমন এক আড্ডা ও খাওয়া-দাওয়ার ভিডিও প্রকাশ করেছেন।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) প্রকাশিত ভিডিওতে ফরচুন বরিশালের আফগান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবির সঙ্গে নৈশভোজ করতে দেখা যায় আফ্রিদিকে। এ সময় পাশে বসে ছিলেন তামিম এবং শাহিন আফ্রিদিও। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তামিম, আফ্রিদি ও নবিরা।

তারই মাঝে আফ্রিদি তামিমের কাছে জানতে চান, তামিম, তুমি কি পুরোপুরি অবসর নিয়ে ফেললে? (আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার) শেষ? জবাবে বলেন,‘ জাতীয় দল থেকে…জাতীয় দলে আর খেলছি না।’ সুতরাং জাতীয় দলে না ফিরলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও খেলা হচ্ছে না তামিমের।

পরে একপর্যায়ে তামিমও আফ্রিদিকে জিজ্ঞেস করেন—তার রাজনীতিতে আসার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না! জবাবে পাক কিংবদন্তি মজা ও খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘আরে তোমাদের অবস্থা তো দেখতেছি, আমি (রাজনীতিতে) আসতেছি না।’ তখন সবাই সমস্বরে হেসে ওঠেন।

২০২৩ সালে আফগানিস্তান সিরিজ চলাকালীন আচমকা সব ধরণের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নেন তামিম। তখন তিনি ছিলেন দলের অধিনায়ক। এই সময় তুমুল আলোড়ন তৈরি করে এই ঘটনা। পরদিন ঢাকায় তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন তিনি, বেরিয়ে এসে জানান সিদ্ধান্ত বদলের কথা।

এরপর ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে দুই ম্যাচ খেলেন তিনি। তবে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তার দূরত্বের খবর ঘটনা অন্য দিকে মোড় নিয়ে নেয়। তামিকে ছাড়াই বিশ্বকাপ খেলতে যায় বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

কর্মকর্তা কর্মকর্তা
পুঁজিবাজার3 hours ago

কর্মকর্তারা যার পদত্যাগ চান, তাকেই সমাধানের দায়িত্ব দিচ্ছে সরকার: অর্থ উপদেষ্টা

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন,...

কর্মকর্তা কর্মকর্তা
পুঁজিবাজার8 hours ago

সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে, এক চুল পরিমাণ নড়বো না: রাশেদ মাকসুদ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন...

কর্মকর্তা কর্মকর্তা
পুঁজিবাজার9 hours ago

লিন্ডে বাংলাদেশের পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভা...

কর্মকর্তা কর্মকর্তা
পুঁজিবাজার9 hours ago

এসিআই’য়ের এমডির শেয়ার ক্রয় সম্পন্ন

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এসিআই লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেয়ার ক্রয় সম্পন্ন করেছেন। ডিএসই সূত্রে এ...

কর্মকর্তা কর্মকর্তা
পুঁজিবাজার10 hours ago

আলহাজ টেক্সটাইলসের সর্বোচ্চ দরপতন

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৪ কোম্পানির মধ্যে...

কর্মকর্তা কর্মকর্তা
পুঁজিবাজার10 hours ago

বিএসইসির চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারের কার্যালয়ে যোগদান ৩টায়

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন...

কর্মকর্তা কর্মকর্তা
পুঁজিবাজার10 hours ago

বিএসইসির অস্থিরতায় গভীর উদ্বেগ, দ্রুত সমাধান চায় বিএমবিএ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন দেশের পুঁজিবাজারের প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অভ্যন্তরে চলমান অনাকাংখিত উদ্বুদ্ধ...

Advertisement
Advertisement

Advertisement

সোশ্যাল মিডিয়া

২০১৮ সাল থেকে ২০২৩

অর্থসংবাদ আর্কাইভ

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১  
কর্মকর্তা
জাতীয়2 hours ago

চেক জালিয়াতির মামলায় মাহমুদুল ইসলাম গ্রেফতার

কর্মকর্তা
পুঁজিবাজার3 hours ago

কর্মকর্তারা যার পদত্যাগ চান, তাকেই সমাধানের দায়িত্ব দিচ্ছে সরকার: অর্থ উপদেষ্টা

কর্মকর্তা
কর্পোরেট সংবাদ3 hours ago

এই রমজানে পাঠাওয়ের বিশেষ অফার

কর্মকর্তা
অর্থনীতি4 hours ago

বিসিএমইএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হলেন মামুনুর রশীদ

কর্মকর্তা
জাতীয়4 hours ago

সব সময় বাহিনী দিয়ে ‘মব’ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কর্মকর্তা
জাতীয়4 hours ago

স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন ৮ জন

কর্মকর্তা
জাতীয়5 hours ago

রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সংস্কার চাইলে জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা

কর্মকর্তা
পুঁজিবাজার8 hours ago

সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে, এক চুল পরিমাণ নড়বো না: রাশেদ মাকসুদ

কর্মকর্তা
কর্পোরেট সংবাদ9 hours ago

৬৪০ জন দুস্থ মহিলাকে সঞ্চয়কৃত অর্থ ফেরত দিলো সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক

কর্মকর্তা
কর্পোরেট সংবাদ9 hours ago

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের মধ্যে চুক্তি

কর্মকর্তা
জাতীয়2 hours ago

চেক জালিয়াতির মামলায় মাহমুদুল ইসলাম গ্রেফতার

কর্মকর্তা
পুঁজিবাজার3 hours ago

কর্মকর্তারা যার পদত্যাগ চান, তাকেই সমাধানের দায়িত্ব দিচ্ছে সরকার: অর্থ উপদেষ্টা

কর্মকর্তা
কর্পোরেট সংবাদ3 hours ago

এই রমজানে পাঠাওয়ের বিশেষ অফার

কর্মকর্তা
অর্থনীতি4 hours ago

বিসিএমইএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হলেন মামুনুর রশীদ

কর্মকর্তা
জাতীয়4 hours ago

সব সময় বাহিনী দিয়ে ‘মব’ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কর্মকর্তা
জাতীয়4 hours ago

স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন ৮ জন

কর্মকর্তা
জাতীয়5 hours ago

রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সংস্কার চাইলে জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা

কর্মকর্তা
পুঁজিবাজার8 hours ago

সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে, এক চুল পরিমাণ নড়বো না: রাশেদ মাকসুদ

কর্মকর্তা
কর্পোরেট সংবাদ9 hours ago

৬৪০ জন দুস্থ মহিলাকে সঞ্চয়কৃত অর্থ ফেরত দিলো সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক

কর্মকর্তা
কর্পোরেট সংবাদ9 hours ago

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের মধ্যে চুক্তি

কর্মকর্তা
জাতীয়2 hours ago

চেক জালিয়াতির মামলায় মাহমুদুল ইসলাম গ্রেফতার

কর্মকর্তা
পুঁজিবাজার3 hours ago

কর্মকর্তারা যার পদত্যাগ চান, তাকেই সমাধানের দায়িত্ব দিচ্ছে সরকার: অর্থ উপদেষ্টা

কর্মকর্তা
কর্পোরেট সংবাদ3 hours ago

এই রমজানে পাঠাওয়ের বিশেষ অফার

কর্মকর্তা
অর্থনীতি4 hours ago

বিসিএমইএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হলেন মামুনুর রশীদ

কর্মকর্তা
জাতীয়4 hours ago

সব সময় বাহিনী দিয়ে ‘মব’ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কর্মকর্তা
জাতীয়4 hours ago

স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন ৮ জন

কর্মকর্তা
জাতীয়5 hours ago

রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সংস্কার চাইলে জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা

কর্মকর্তা
পুঁজিবাজার8 hours ago

সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে, এক চুল পরিমাণ নড়বো না: রাশেদ মাকসুদ

কর্মকর্তা
কর্পোরেট সংবাদ9 hours ago

৬৪০ জন দুস্থ মহিলাকে সঞ্চয়কৃত অর্থ ফেরত দিলো সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক

কর্মকর্তা
কর্পোরেট সংবাদ9 hours ago

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের মধ্যে চুক্তি