ধর্ম ও জীবন
রোজার নিয়ত ও সেহরির দোয়া

বছর ঘুরে এসেছে মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান। হিজরি সনের নবম মাসের নাম রমজান। পুরো মাসজুড়ে সিয়াম পালন মুসলমানদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। রোজা ফার্সি ও উর্দু শব্দ। আরবি ভাষার রমজ ধাতু থেকে রোজা শব্দটির উৎপত্তি। রমজ বলতে মূলত জ্বালিয়ে দেওয়া বোঝানো হয়। আভিধানিক অর্থের বাইরে রোজা পাপ কাজ ভস্মীভূত করার উপায়।
রমজানের রোজা পালনের জন্য কিছু আমল গুরুত্বপূর্ণ। চলুন জেনে নেই রোজার নিয়ত:
রোজার নিয়ত
রোজা পালনে সেহরি ও ইফতার গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি রোজার নিয়তও জরুরি। তবে এই ক্ষেত্রে রোজা রাখার উদ্দেশ্যে ঘুম থেকে ওঠা ও সাহরি খাওয়াটাই রোজার নিয়তের অন্তর্ভুক্ত।
বস্তুত মনের ইচ্ছাই হলো- নিয়ত। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। তাই কেউ মুখে নিয়ত না করলেও তার রোজাগুলো আদায় হয়ে যাবে। (সূত্র : আল-বাহরুর রায়েক : ২/৪৫২; আল-জাওহারুতুন নাইয়্যিরাহ : ১/১৭৬; রাদ্দুল মুহতার : ৩/৩৩৯, ৩৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৯৫)
রোজার যে নিয়ত প্রচলিত
বাংলাদেশে রোজার একটি আরবি নিয়ত প্রসিদ্ধ। যেটা মানুষ মুখে পড়ে থাকেন। তবে এটি হাদিস ও ফিকাহের কোনো কিতাবে বর্ণিত হয়নি। তবে কেউ চাইলে পড়তে পারেন। তবে জেনে রাখা উচিত যে, নিয়ত পড়ার চেয়ে নিয়ত করা গুরুত্বপূর্ণ।
রোজার নিয়তের বাংলা উচ্চারণ
নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
অর্থ
হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

ধর্ম ও জীবন
যানবাহনে চলাচলের তাসবিহ ও দোয়া পড়ার নিয়ম

জীবনের মূল্যবান সময়ের একটা বড় অংশ আমাদের এখন যানবাহনে কেটে যায়। ঘন্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকে থাকা ঢাকাবাসীর জন্য নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এই জ্যামে আটকে থাকা সময়গুলো মোবাইল দেখে কিংবা অহেতুক গল্পগুজবে কেটে যায়।
অথচ সময় আল্লাহ তায়ালার বড় নেয়ামত। এই নেয়ামত অহেতুক কাজে নষ্ট না করে কাজে লাগানো উচিত। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, দুটি নেয়ামত এমন রয়েছে যাতে অধিকাংশ মানুষ ধোঁকায় পড়ে নষ্ট করে থাকে। তা হলো ১. সুস্থতার নেয়ামত। ২. অবসর সময়ের নেয়ামত। (সহিহ বুখারি)
তাই জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগানোর চেষ্টা করা উচিত। যানবাহনে বসে থাকার সময়গুলোও আমরা চাইলে কাজে লাগাতে পারি। এখানে আমি কয়েকটি আমলের কথা লিখছি যা আমরা যানবাহনে ওঠা ও বসে থাকার সময়ে করতে পারি।
১. যানবাহনের দোয়া পড়ুন
যানবাহনে ওঠার পর প্রথমেই দোয়া পড়ে আল্লাহর নিরাপত্তা গ্রহণ করুন। হাদিসে এসেছে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাহনে উঠে তিনবার তাকবির বলে এই দোয়া পড়তেন,
سُبْحانَ الذي سَخَّرَ لَنا هذا وَما كُنّا له مُقْرِنِينَ وإنّا إلى رَبِّنا لَمُنْقَلِبُونَ
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাজি সাখ্খারা লানা হাজা ওয়ামা কুন্না লাহু মুকরিনিন ওয়া ইন্না ইলা রব্বিনা লামুনকলিবুন।
অর্থ: পবিত্র মহান সেই সত্তা- যিনি একে আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন করে দিয়েছেন, আমরা নিজের ক্ষমতায় একে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ছিলাম না। আমাদের অবশ্যই আমাদের প্রতিপালকের নিকট ফিরে যেতে হবে। (সহিহ মুসলিম)
২. কোনো প্রয়োজনীয় কাজ করা সম্ভব হলে করুন
নিজের প্রয়োজনীয় কোনো কাজ করা যানবাহনে বসে করা সম্ভব হলে তা করার চেষ্টা করুন। যেমন সারাদিনের কাজের পরিকল্পনা, হিসাব-নিকাশ ইত্যাদি। প্রয়োজনীয় কাজে ব্যস্ত থাকলে অহেতুক কাজ থেকে বাঁচা সহজ হয়।
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মানুষের ইসলামের সৌন্দর্য (অর্থাৎ তার উত্তম মুসলিম হওয়ার একটি চিহ্ন) হলো, অনর্থক (কথা ও কাজ) বর্জন করা। (সুনানে তিরমিজি: ২৩১৭)
৩. কোরআন তিলাওয়াত করুন
যানবাহনে বসে বসে কোরআন তিলাওয়াত করা যেতে পারে। এখন বেশিরভাগ মানুষের কাছে স্মার্টফোন থাকে। স্মার্টফোনে কোরআনের কোনো একটি এ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করে রাখলে সহজেই দেখে দেখে কোরআন পড়া যায়।
আলহামদুলিল্লাহ, গাড়িতে বসে মোবাইলে কোরআন পড়ে একাধিকবার পূর্ণ কোরআন পাঠ করার তাওফিক হয়েছে। আমার পরিচিত অনেকেই এভাবে কোরআন খতম করেছেন।
কোরআন পড়তে কষ্ট হলে কানে হেডফোন লাগিয়ে কোরআন তিলাওয়াত শোনা যেতে পারে। এটাও সাওয়াবের কাজ।
৪. আল্লাহর জিকির করুন
গাড়িতে কোরআন তিলাওয়াত করা সম্ভব না হলে বা তিলাওয়াত করতে কষ্ট হলে আল্লাহর জিকির করুন। সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, কালিমা তাইয়েবা ইত্যাদি জিকিরে মশগুল থেকে সময় পার করুন। সঙ্গে একটা ছোট্ট তাসবিহ রাখলে জিকিরের কথা মনে পড়ে এবং মনোযোগ ধরে রাখাও সহজ হয়।
৫. গুনাহ থেকে বেঁচে থাকুন
গুনাহ থেকে বেঁচে থাকুন এবং রাস্তার হক আদায় করুন। রাস্তায় চলার সময় রাস্তার হক আদায় করতে হয়। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তোমারা রাস্তার হক আদায় করো! সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! রাস্তার হক কী? তিনি বললেন, চোখ নিচু রাখা, অন্যের কষ্টের বিষয়ে সচেতন থাকা, সালাম এলে তার উত্তর দেওয়া, ভালো কাজের উপদেশ দেওয়া ও মন্দ কোন কাজ দেখলে সাধ্যমত বারণ করা। (সহিহ মুসলিম)
তাই রাস্তায় কারও বিপদ দেখলে সাধ্যমত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। কোনো অপরাধ দেখলে সম্ভব হলে বারণ করুন। পরস্পর সালাম বিনিময় করুন। পাশের সিটে বসা ব্যক্তির কষ্ট হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন। সহযাত্রী, কন্ডাক্টরসহ সবার সাথে উত্তম আচরণ করুন।
ধর্ম ও জীবন
জুমার জন্য যে ৪ কাজ জরুরি

ইয়াওমুল জুমা সপ্তাহের সেরা দিন। জুমা ছাড়াও এই দিনে অন্য অনেক ইবাদতের বিনিময়ে রয়েছে অনেক সওয়াব ও পুরস্কার। গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের এ দিনে চারটি কাজ করা যাবে না। সেই কাজগুলো কী?
১. পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে মসজিদে যাওয়া
জুমার দিন গোসল করাকে আবশ্যক বলা হয়েছে। তাছাড়া পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। গোসল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে হাদিসের দিকনির্দেশনা-
> হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিনে প্রত্যেক সাবালকের জন্য গোসল করা ওয়াজিব।’ (বুখারি)
> হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ জুমার নামাজে আসলে সে যেন গোসল করে।’ (বুখারি, মুসলিম)
> হজরত ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু জুমার দিন দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন, এমন সময় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রথম যুগের একজন মুহাজির সহাবা (জুমা পড়তে মসজিদে) এলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে ডেকে বললেন, এখন সময় কত? তিনি বললেন, আমি ব্যস্ত ছিলাম, তাই ঘরে ফিরে আসতে পারিনি। এমন সময় আজান শুনে শুধু অজু করে নিলাম। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, শুধু অজুই? অথচ আপনি জানেন যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোসলের নির্দেশ দিতেন।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)
> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবাত (নাপাকি থেকে পবিত্রতার) গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং নামাজের জন্য আগমন করে সে যেন একটি উট কোরবানি করলো। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন একটি গাভী কোরবানি করলো। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কোরবানি করলো। চতুর্থ পর্যায়ে আগমন করলো সে যেন একটি মুরগি কোরবানি করলো। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করলো সে যেন একটি ডিম কোরবানি করলো। পরে ইমাম যখন খুতবাহ দেওয়ার জন্য বের হন তখন ফেরেশতারা (ইমামের খুতবাহ) উপদেশ শোনার জন্য (মসজিদে) উপস্থিত হয়ে থাকে।‘ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)
তাই জুমার দিন সবার উচিত গোসল করা এবং মিসওয়াক করা। যদি সম্ভব হয় সুরভি লাগানো চাই। আর ভালো ও পরিচ্ছন্ন জামা পড়ে মসজিদে যাওয়া।
২. জুমার আজানের সঙ্গে কাজ ছেড়ে দেওয়া
কোরআনুল কারিমের নির্দেশনা অনুযায়ী জুমার আজানের পর নামাজের প্রস্তুতি ছাড়া অন্য কাজ করা বৈধ নয়; বরং তা গুনার কাজ। তাই জুমার আজান হওয়ার পর নামাজের প্রস্তুতিমূলক কাজ ছাড়া দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য ও জীবিকা নির্বাহসহ সব কাজ কর্মই বন্ধ করে দেয়া জরুরি।
ইসলামিক স্কলার ও ফিকহবিদদের মতে, উক্ত আয়াতে আহ্বান (আজান) বলতে মৌলিকভাবে দ্বিতীয় আজান (খুতবার আজান) উদ্দেশ্য হলেও শব্দের ব্যাপকতার মাঝে জুমার প্রথম আজানও অন্তর্ভুক্ত। তাই তাফসীরবিদ ও ফিকহবিদগণের নির্ভরযোগ্য মতানুযায়ী প্রথম আজানের পরও জুমার প্রস্তুতিমূলক কাজ ব্যতিত ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্য যে কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া উক্ত আয়াতের নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত। অতএব তা নাজায়েয ও গুনার কাজ।
সুতরাং জুমার জন্য এক আজান দেয়া হোক আর দুই আজান দেয়া হোক; আজানের পর জুমার নামাজের প্রস্তুতি ছাড়া অন্য কোনো কাজ করা বৈধ নয়। এ সময় অন্য কাজ করলে তা গুনার কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে।
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘লোকজন নিজেদের কাজকর্ম নিজেরাই করতেন। যখন তারা দুপুরের পরে জুমার জন্য যেতেন, তখন সে অবস্থায়ই চলে যেতেন। তাই তাদের বলা হলো, যদি তোমরা গোসল করে নিতে ভালো হতো।’(বুখারি ও মুসলিম) তাছাড়া আল্লাহ তাআলা মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা জীবিকা নির্বাহের ব্যাপারে পরবর্তী (১০নং) আয়াতে সুস্পষ্ট বক্তব্যও তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘অতপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা/ব্যবসা-বাণিজ্য/কাজ-কর্ম) তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমা : আয়াত ১০)
৩. জুমার খুতবায় মনোযোগী হওয়া
জুমার নামাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ খুতবা শোনা। বেশি মুসল্লি হওয়ার কারণে অথবা অন্য কোনো কারণে যদি খুতবার আওয়াজ শোনা না যায়, তবে শব্দ না করে নীরব থাকা আবশ্যক। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমভাবে অজু করে জুমার নামাজে এলো, মনোযোগ দিয়ে নীরবে খুতবা শুনলো, তার পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত আরও তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি (অহেতুক) কঙ্কর স্পর্শ করলো, সে অনর্থক, বাতিল, ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যানযোগ্য কাজ করলো।’ (মুসলিম)
৪. নিরবে খুতবা শোনা
চুপ থেকে জুমার খুতবা শুনতে হবে। খুতবা চলাকালীন কোনো আওয়াজ বা শোরগোল করা যাবে না। কারো সঙ্গে কথা বলা যাবে না। তবেই জুমার দিন হবে গুনাহ মাফের উপায়। খুতবা শোনা হবে গুনাহ মাফের উপায়। হাদিসে পাকে এসেছে-
> হজরত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গোসল করে জুমার নামাজে এলো, এরপর সাধ্যমত (সুন্নাত) নামাজ আদায় করলো, এরপর ইমামের খুতবা শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকলো; এরপর ইমামের সঙ্গে (জুমার) নামাজ আদায় করল, এতে তার দুই জুমার মধ্যবর্তী দিনসমূহ এবং আরও তিন দিন (মোট ১০ দিনের) গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’
> হজরত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গোসল করে জুমার নামাজে এলো, এরপর সাধ্যমত (সুন্নাত) নামাজ আদায় করলো, এরপর ইমামের খুতবা শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকলো; এরপর ইমামের সঙ্গে (জুমার) নামাজ আদায় করল, এতে তার দুই জুমার মধ্যবর্তী দিনসমূহ এবং আরো তিন দিন (মোট ১০ দিনের) গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’
> অন্য বর্ণনায় এসেছে, আর যে ব্যক্তি (অহেতুক) কঙ্কর স্পর্শ করল সে অনর্থক, বাতিল, ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যানযোগ্য কাজ করলো।’ (মুসলিম)
> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায়ের জন্য উত্তমরূপে অজু করে (মসজিদে) উপস্থিত হয়, এরপর চুপ করে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে, তার (ওই) জুমা থেকে (পরবর্তী) জুমা পর্যন্ত বরং অতিরিক্ত আরও তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি পাথর কুচি অপসারণ বা নাড়াচাড়া করলো সে অনর্থক কাজ করলো।’ (আবু দাউদ)
> হজরত সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, এরপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি নেবে, তারপর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, সে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, (তখন) চুপ করে মনোযোগ সহকারে তাঁর খুতবা শুনবে। দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (আবু দাউদ)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাসময়ে আগে আগে জুমার নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ধর্ম ও জীবন
সৌদির নতুন গ্র্যান্ড মুফতি ড. শায়খ সালেহ বিন হুমাইদ

সৌদি আরবের নতুন গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে ড. শায়খ সালেহ বিন হুমাইদকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পূর্ববর্তী গ্র্যান্ড মুফতি ড. আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আল শায়খের ইন্তেকালের পরই এই গুরুত্বপূর্ণ পদে তাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) মসজিদ আল-হারাম কর্তৃপক্ষের এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানা গেছে।
গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে নিয়োগলাভের পূর্বে তিনি মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববির ইমাম ও খতিবদের তত্ত্বাবধানকারী ‘প্রেসিডেন্সি অ্যাফেয়ার্স’ পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
শায়খ সালেহ বিন হুমাইদ সৌদি আরবের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় আলেম, যিনি একাধারে বিচারক, শিক্ষাবিদ, ও ইসলামি চিন্তাবিদ হিসেবেও সুপরিচিত।
সালেহ হুমাইদ ১৯৯৩ সাল থেকে সৌদি মজলিস আল শুরা (সৌদি আরবের পরামর্শদাতা পরিষদ) এর সদস্য এবং ফেব্রুয়ারী ২০০২ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০০৯ পর্যন্ত মজলিস আল শুরার স্পিকার ছিলেন।
তিনি বর্তমানে মক্কার মসজিদ আল-হারামের ইমাম। তিনি মক্কার আরবি ভাষা একাডেমির একজন সদস্য, জেদ্দায় আন্তর্জাতিক ইসলামী ফিকহ একাডেমির সভাপতি। কিং ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার থেকে ২০১৬ সালের সার্ভিস টু ইসলাম পুরস্কার জিতেছেন তিনি।
ধর্ম ও জীবন
চাঁদ দেখা গেছে, রবিউস সানি মাস শুরু বুধবার

বাংলাদেশে আজ ১৪৪৭ হিজরি সনের পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আগামীকাল বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) থেকে পবিত্র রবিউস সানি মাস গণনা শুরু হবে। এবং আগামী শনিবার (৪ অক্টোবর) পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালিত হবে।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বায়তুল মুকাররমের সভাকক্ষে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়গুলো, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৪৪৭ হিজরির ২৯ রবিউল আওয়াল, ১৪৩২ বঙ্গাব্দের ৮ আশ্বিন ও ২০২৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা গেছে।
এসিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪৪৭ হিজরি সনের পবিত্র রবিউস সানি মাস গণনা শুরু হবে। পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম আগামী ৪ অক্টোবর পালিত হবে। সভায় চাঁদ দেখা কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ধর্ম ও জীবন
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম ও মৃত্যুর পুণ্যময় দিন। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল অর্থাৎ আজকের এই দিনে তিনি আরবের মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। ৬৩ বছর বয়সে একইদিনে তিনি ইন্তেকাল করেন।
দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) নামে পরিচিত। ৫৭০ সালের এই দিনে (১২ রবিউল আউয়াল) আরবের মক্কা নগরীর সভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.) এর জন্মের আগে গোটা আরব অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। ওই সময় আরবের মানুষ মহান আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল। আরবের সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা। এ যুগকে বলা হতো ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’র যুগ। তখন মানুষ হানাহানি ও কাটাকাটিতে লিপ্ত ছিল এবং মূর্তিপূজা করত। এই অন্ধকার যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দুনিয়ায় প্রেরণ করেন।
মহানবী (সা.) অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেমে অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। ২৫ বছর বয়সে মহানবী বিবি খাদিজার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুয়ত লাভ বা মহান রাব্বুর আলামিনের নৈকট্য লাভ করেন।
পবিত্র কোরআন শরীফে বর্ণিত আছে, ‘মহানবীকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীই সৃষ্টি করতেন না’। এসব কারণে এবং তৎকালীন আরব জাহানের বাস্তবতায় এ দিনের (পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর) গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি। বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় এ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করে থাকে।
দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) সবার মধ্যে অপার শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে বলে আশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘সমগ্র মুসলিম উম্মার ঐক্য আরও সুসংহত হোক। মহানবী (সা.)-এর সুমহান জীবনাদর্শ লালন ও অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের সার্বিক কল্যাণ ও মুক্তি সুনিশ্চিত হোক, এই কামনা করি।’
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ এক বাণীতে বলেন, ‘মহানবী (সা.) মানবতার মুক্তি, সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার যে মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা আজও আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তিনি শিখিয়েছেন, ন্যায়বিচার কোনো ব্যক্তিবিশেষের জন্য সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা সমগ্র মানবজাতির মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশ একটি বহু ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির দেশ। মহানবী (সা.) তার জীবদ্দশায় মদিনার সনদের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, পারস্পরিক সহনশীলতা সহাবস্থানের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। তার এই শিক্ষা আমাদের জাতীয় জীবনে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সৌহার্দ্যের চর্চার মাধ্যমেই আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।’
এদিকে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর ওপর আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। এ উপলক্ষে বায়তুল মোকাররমে মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলার আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশও নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দিবসটি উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি।