আন্তর্জাতিক
শেখ হাসিনা দালাই লামা নন, ভারতের উচিত তাকে সমর্থন বন্ধ করা: দ্য প্রিন্ট

গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার ১৮০তম দিনেই সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভে ভাষণ দেওয়ার ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। তার এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে— অনেকেই ভাবতে শুরু করেন তার দল আওয়ামী লীগ হয়তো প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করছে। শুরুতে যা ছিল শেখ হাসিনার একটি সাধারণ ফেসবুক পোস্ট, বাংলাদেশের হাজার হাজার তরুণরা তা কার্যত লুফে নেয়। সেইসঙ্গে ঢাকার কেন্দ্রে প্রতিবাদীদের একটি বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ হাসিনা যতক্ষণে তার বক্তৃতা শুরু করেন, ধানমন্ডি ৩২-এর ঐতিহাসিক ভবনটির সামনে আনা হয় কয়েকটি বুলডোজার, ততক্ষণে আগুনে জ্বলছিল ভবনটি। ঐতিহাসিক এই বাড়িতেই শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মুকুটহীন রাজা হিসেবে তার শেষ দিনগুলো কাটিয়েছিলেন। হলুদ বুলডোজারের বড় ধাতব ব্লেডগুলো ভবনের একের পর এক অংশ গুঁড়িয়ে দিতে শুরু করে। এই ভবন থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
ঘটনাটি অনেককে, এমনকি বাংলাদেশের এস্টাবলিস্টমেন্ট সদস্যদেরও বিস্মিত করেছে। প্রায় ৪০ জন সেনা সদস্য রাস্তার মুখে গিয়ে ওই বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তারা বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভের মুখে সেখান থেকে সরে যান।
পরদিন সূর্যোদয়ের সময় বাংলাদেশ যখন জেগে ওঠে তখন তার ল্যান্ডস্কেপে পরিবর্তন ঘটে গেছে— বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যা করতে পারেনি, তা ওই রাতের ৯ ঘণ্টায় ঘটেছিল। ৩২ নম্বর রোডের ভবনটিতে ইট ও ছাই- ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
কিন্তু ভুল বুঝবেন না। এরা বিক্ষুব্ধ জনতা বা ধর্মান্ধরা নয় যারা ইতিহাসকে নতুন করে লেখার চেষ্টা করছে বা বাংলাদেশকে ১৯৭১ সালের আগের দিনগুলোতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে যখন দেশটি পাকিস্তানের অংশ ছিল। বাড়িটি ভাঙার সাথে সাথে যারা হাততালি, উল্লাস ও সেলফি তুলছিলেন তাদের মধ্যে দেশের ইংরেজি-শিক্ষিত মধ্যবিত্ত এবং শহুরে মানুষও দাঁড়িয়েছিলেন।
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে হাসিনা ও তার দোসরদের হাতে তাদের ভোটাধিকার হরণ হতে দেখেছে তারা। বিক্ষোভেকারীদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন যারা হাসিনার শাসনামলে একের পর এক কারচুপির নির্বাচনের কারণে তাদের জীবনে কখনো ভোটই দিতে পারেননি।
অবশ্য ভোটে কারচুপি করলেও মানুষের সমর্থন পেতে হাসিনা তার বাবার উত্তরাধিকার এবং দেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর অনেক বেশি নির্ভর করেছেন। এই কাজটা তিনি এতটাই করেছেন যে- সাধারণ বাংলাদেশিরা মুজিবকে হাসিনা থেকে আলাদা ভাবতে পারেননি। উভয়ই দুঃখজনকভাবে একে অন্যের সাথে মিলে গিয়েছেন। হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে এখন ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এই আবহে ভারত এখন পররাষ্ট্রনীতির জালে আটকে পড়েছে। ঢাকায় এখন আবেগ তুঙ্গে।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ এহতেশাম হক বলেছেন, লাখ লাখ ভুক্তভোগী মানুষ তাদের নিপীড়কের প্রতীককে সম্মান করবে বলে আপনি আশা করেন? যা কিনা ইট-বালি দিয়ে তৈরি একটি বাসা মাত্র- আপনি কি আমাদের কাছ থেকে চুরি করে নেওয়া সম্পদ ফিরিয়ে দিতে পারবেন? আমাদের দেশবাসীর কাছ থেকে নৃশংসভাবে কেড়ে নেওয়া চোখ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফিরিয়ে আনতে পারবেন? আজকে ভেঙে ফেলা প্রতিটি ইট ন্যায়বিচারের প্রতীক, যা নিপীড়ক শাসকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করছে। মুজিবকে গুম, অপশাসন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতীকে পরিণত করেছেন শেখ হাসিনা। ৩২ নম্বর রোডের বাড়িটি, যাকে একসময় বাংলাদেশিদের গর্বের স্মারক হিসেবে দেখতেন, তা এখন হাসিনা নামের সমার্থক হয়ে উঠেছে।
ভারতের আওয়ামী লীগের সমস্যা
শেখ মুজিবুর রহমান যখন পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির সেন্ট্রাল জেল মিয়ানওয়ালিতে বন্দি ছিলেন তখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ। মুজিবকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর তাজউদ্দীন আহমেদসহ মোট চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয়। তাজউদ্দীনের বিধবা স্ত্রী ও সোহেল তাজের মা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন করেন এবং ১৯৭৭ সালে দলটির আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, ৩২ নম্বর রোডের বাড়িটি ধ্বংস হয়ে যাবার একদিন পরও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সোহেল তাজ কোনও সমালোচনা করেননি। কারও নাম না করে তিনি তার দলের দুঃখজনক অবস্থার জন্য ১৯৮১ সাল থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা শেখ হাসিনার ওপরই দোষারোপ করেছেন। তিনি বলেন, কেউ একজন এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যেখানে দেশের স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দলের সুনামই আজ প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
যতবারই মিডিয়ায় শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ডের খবর প্রকাশিত হয় ততবারই তার প্রতি ভারতের নিরবচ্ছিন্ন এবং অটল সমর্থনের প্রশ্নটিও সামনে এসে যায়। কয়েকদিন আগে, শেখ হাসিনা তার দলের সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন- যারা তার বিরোধিতা করেন তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দিতে। একটি অডিও ক্লিপে তাকে বলতে শোনা যায়, “তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিন।”
এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে, শেখ হাসিনা কোনও দালাই লামা নন যে, তিনি বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতকে নৈতিক সংকটে ফেলবেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন এবং আওয়ামী লীগ হচ্ছে বাংলাদেশে ভারতের একমাত্র মিত্র। কিন্তু শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে পুনর্বাসন করা এককথায় অসম্ভব, বিশেষ করে যখন সারাদেশে তার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি এখনও জনসাধারণের মনে টাটকা, সতেজ। ৩২ নম্বর রোডে মুজিবের বাড়ি ভাঙা তারই একটি বহিঃপ্রকাশ।
অবশ্য শেখ হাসিনা সেই দুর্ভাগ্যজনক বক্তৃতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তার বিরোধীরা বিশৃঙ্খল অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল- হাসিনার বিরুদ্ধে বিপ্লবের দিকে পরিচালিত আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিতে শুরু করেছিল। কিন্তু, হাস্যকরভাবে, শেখ হাসিনা সফলভাবে তার বিরোধীদের আবার একত্রিত হওয়ার রসদ যুগিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি সক্ষম হয়েছেন। যে মুহূর্তে শেখ হাসিনার ছায়া দিগন্তে আবির্ভূত হয়েছিল, নিজেদের মধ্যে সব মতবিরোধ তারা দ্রুত ভুলে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) বেশ অস্বস্তিকর অবস্থানে ফেলেছে। ভারতকে খুশি করতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে দলটি। ভারতবিরোধী বক্তব্য না দেওয়ার ও ছড়ানোর ব্যাপারেও সতর্ক রয়েছে বিএনপি। কিন্তু দিনশেষে দলটির নেতাদের নির্বাচনের সম্মুখীন হতে হবে- আর তাই বিএনপি কতদিন তার কণ্ঠ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে।
এই মুহূর্তে ভারতকে দেশের তরুণ প্রজন্মের চোখ দিয়ে বাংলাদেশকে দেখতে হবে, যারা বছরের পর বছর ধরে শেখ হাসিনার হাতে নিজেদের মৌলিক মানবিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হতে দেখেছে। হাসিনার হাতে কেবল দুটি অস্ত্র ছিল- তার বাবার উত্তরাধিকার এবং ভারতের সমর্থন। মুজিবের ঐতিহাসিক বাসা ধ্বংসকে এই আলোকে দেখা উচিত এবং বিপুলসংখ্যক জনগণের মধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে বিরাজমান ব্যাপক ক্ষোভকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝা উচিত। নয়া দিল্লিকে অবশ্যই তার গর্ব খর্ব করতে হবে এবং বুঝতে হবে যে, এটি এমন একটি দেশের স্বৈরশাসককে নির্লজ্জভাবে সমর্থন করেছে- যার সাথে রয়েছে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম স্থল সীমান্ত। শুধু প্রয়োজন সাবেক ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর মতো বাস্তব বুদ্ধি। এমনকি অতীতে যখন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল তখনও তিনি বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিজের উদ্যোগে তার হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
ট্রাম্পের লেনদেনের জগত
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন বাস্তববাদী মানুষ। তিনি লেনদেনে বিশ্বাসী। যেখানে সর্বোচ্চ দরদাতা যা চায় সেটাই পায়। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত বাংলাদেশ বৈশ্বিক দুই পরাশক্তি চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত মহাসাগরে কৌশলগতভাবে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশের অবস্থানকে প্রাণকেন্দ্রে হিসেবে দেখে চীন। যদি কখনও দক্ষিণ চীন সাগরে নৌ-অবরোধের মুখে পড়তে হয় সে ক্ষেত্রে সমুদ্রপথে যাওয়ার জন্য বার্মা বা বাংলাদেশ অথবা উভয়েরই প্রয়োজন হবে চীনের। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলেও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। বর্ষা বিপ্লব বাংলাদেশকে উভয় পরাশক্তির সাথে সঠিক দর কষাকষির সুযোগ করে দিয়েছে। যেখানে ভারতের সাউথ ব্লক বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার কল্পনায় অটল বলে মনে হচ্ছে।
এদিকে চীন ঢাকায় নতুন শাসন ব্যবস্থার প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখাচ্ছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতকে অবশ্যই বাংলাদেশে নতুন বন্ধু তৈরি করতে হবে। সাধারণ বাংলাদেশিদের পাকিস্তানের ছায়ামূর্তি হিসেবে চিত্রিত করা ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য ভালো হতে পারে এবং পশ্চিমবঙ্গে কিছু ভোট জিততে সাহায্য করতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদী এই কৌশল ক্ষতিকারক হিসেবে প্রতিভাত হবে।
বাংলাদেশের বিষয়ে চীন বরাবরের মতোই বাস্তবতা দেখিয়েছে। তবে ভারতের বাংলাদেশ নীতি ৭৭ বছর বয়সী ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, শেখ হাসিনা দেশের মাটিতে একাধিক হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছেন। ভারতের এই অবাস্তববাদী নীতির প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও উদ্বেগজনক। কারণ চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের ওপর নির্ভরশীল ওয়াশিংটন।
সূত্র: দ্য প্রিন্ট
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আন্তর্জাতিক
ভারতের ৭৭ ড্রোন গুঁড়িয়ে দিলো পাকিস্তান

চলমান সংঘাতে ভারতের ৭৭টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি করেছে পাকিস্তান। দেশটির নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় আগ্রাসনের যথাযথ জবাব দিচ্ছে।
শুক্রবার (৯ মে) পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম পিটিভি এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮ মে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৯টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়। তারপর আরও ৪৮টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। ড্রোনগুলো নজরদারি এবং পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে জানা গেছে।
পাকিস্তান আইএসপিআরের মতে, কাপুরুষোচিত হামলাগুলো নয়াদিল্লির আতঙ্ক ও কৌশলগত বিশৃঙ্খলার প্রতিফলন। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, ভারতীয় বাহিনী এলওসিতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো থেকে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে।
আইএসপিআর আরও জানায়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী শক্তিশালী ও পরিকল্পিত জবাব দিচ্ছে। শত্রুপক্ষের সব পরিকল্পনা বানচাল করে দিচ্ছে। সফট-কিল (প্রযুক্তিগত) এবং হার্ড-কিল (অস্ত্রভিত্তিক) পদক্ষেপের সমন্বয়ে সব আগত ড্রোন নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
এদিকে পাকিস্তান গত বুধবার চীনের তৈরি যুদ্ধবিমান দিয়ে ভারতের দুইটি সামরিক যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতীয় যুদ্ধবিমানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এতে অন্তত দুইটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে।
অন্যদিকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনায় হস্তক্ষেপ না করার ইঙ্গিত দিয়ে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন কোনো যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করবে না যেখানে তার কোনো স্বার্থ নেই।
ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেডি ভ্যান্স বলেন, আমরা দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করতে পারি না, তবে যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতির পথ বেছে নিতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। পরোক্ষভাবে পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত, এমন অভিযোগ তুলে বুধবার দেশটির সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় দেশটি। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। স্থগিত করে দেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্যও।
এরপর থেকে দুদেশের পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করে পরিস্থিতি, যা রীতিমতো যুদ্ধের রূপ ধারণ করেছে এখন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলার পরামর্শ

বাণিজ্যিক বিমান সংস্থাগুলোকে পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বিবিসিকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
খাজা আসিফ সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেন, বাণিজ্যিক এয়ারলাইন্সগুলো “ক্ষেপণাস্ত্র বা আকাশে ছোড়া গুলি” দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এবং এর ফলে “বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানি” হতে পারে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা কয়েক দিনের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমায় তাদের বিমান চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
এমিরেটস এয়ারলাইন্স জানিয়েছে তারা ১০ মে পর্যন্ত পাকিস্তানে বিমান চলাচল স্থগিত করছে।
এদিকে, লুফথানসা এয়ারলাইন্স এই সপ্তাহের শুরুতে বিবিসিকে জানিয়েছে যে তারা ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ পাকিস্তানের আকাশসীমায় বিমান চলাচল স্থগিত রাখছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
পাকিস্তানের ঋণ সহায়তা পর্যালোচনা করবে আইএমএফ

পাকিস্তানকে ৭০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের বিষয়টি আজ শুক্রবার বিবেচনার করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
এদিকে পাকিস্তানকে আরো ঋণ না দেওয়ার বিষয়ে ভারত চাপ সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ক্রমেই বাড়তে থাকা উত্তেজনার মধ্যে আইএমএফ-এর এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বৃহস্পতিবার বলেছেন, ভারত আইএমএফ কাছে নিজেদের মতামত তুলে ধরবে।
তিনি যোগ করেন, আইএমএফ বোর্ডের উচিত ‘গভীরভাবে চিন্তা করা’ এবং গত তিন দশক ধরে পাকিস্তানকে দেওয়া এই ঋণ সহায়তা কতটা সফল হয়েছে তা বিবেচনা করা।
আর্থিক সংকটে থাকা পাকিস্তানের জন্য এই তহবিল খুবই জরুরি, কারণ দেশটি দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও নিম্ন প্রবৃদ্ধির কষাঘাত সামলে কষ্ট করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
এই দুই প্রতিবেশী দেশের চলমান উত্তেজনার মধ্যে, বৃহস্পতিবার বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
বিশ্ব ব্যাংক জানিয়ে দিয়েছে যে তারা সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার বিষয়ে ভারতের সিদ্ধান্ত নিয়ে দুই দেশের মধ্যে হস্তক্ষেপ করবে না। সিন্ধু নদীর পানি কীভাবে ভাগ হবে তা এই চুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
অজয় বাঙ্গা ভারতের সিএনবিসি টিভি১৮ চ্যানেলকে বলেন, ‘চুক্তি স্থগিত করার কোনো ধারা নেই। এটা হয় বাতিল করতে হবে, নয়তো নতুন চুক্তি করতে হবে।’ তিনি বলেন, চুক্তিতে বিশ্ব ব্যাংকের ভূমিকা শুধুই একটি মধ্যস্থতাকারীর।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
ভারতে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, পাইলটসহ নিহত ৬

ভারতের উত্তরকাশীর গাঙ্গনানির কাছে একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ছয়জন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালে দেরাদুন থেকে গঙ্গোত্রী ধামে যাওয়ার পথে এটি বিধ্বস্ত হয়।
দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে গঙ্গোত্রী জাতীয় মহাসড়কের গাঙ্গনানির কাছে হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ, এসডিআরএফ, দমকল বিভাগ, মেডিকেল টিম এবং অন্যান্য কর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে।
জানা গেছে, হেলিকপ্টারটি হেলি অ্যারোট্রান্স কোম্পানির। সকালে সহস্ত্রধারা হেলিপ্যাড থেকে হারসিলের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করে। পাইলটসহ সাতজন আরোহী ছিল এটিতে। ঘটনাস্থলেই পাঁচজন এবং চিকিৎসাধীন একজনের মৃত্যু হয়।
পুলিশ জানায়, যাত্রীদের মধ্যে চারজন মুম্বাইয়ের ও দুজন অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন নারী ও একজন পুরুষ (পাইলট)। ৫১ বছর বয়সী অন্ধ্রপ্রদেশের এক ব্যক্তি আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন। হেলিকপ্টারটি চার ধাম যাত্রার গঙ্গোত্রী ধামে যাচ্ছিল।
এসডিআরএফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হেলিকপ্টারটি প্রায় ২০০-২৫০ মিটার গভীর খাদে পড়ে যায়। উদ্ধারকারী দল সেখানে একটি বেজ স্থাপন করে খাদে নেমে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন রবিন সিং।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে ৫ শতাধিক ফ্লাইট বাতিল

বিমান হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানে প্রায় সাড়ে পাঁচশ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। পাকিস্তানে বাণিজ্যিক ফ্লাইটের ষোল শতাংশ এবং ভারতের প্রায় তিন শতাংশ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে বলে ফ্লাইট ট্র্যাকিং সার্ভিস ফ্লাইটরাডার২৪ জানিয়েছে।
তাদের হিসেব অনুযায়ী পাকিস্তানে মোট ১৩৫টি ফ্লাইট আর ভারতে ৪১৭টি নির্ধারিত ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ওদিকে ভারতের শীর্ষস্থানীয় এয়ারলাইন্সগুলো তাদের যাত্রীদের জন্য ভ্রমণ নির্দেশিকা জারি করেছে।
এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে জম্মু, শ্রীনগর এবং লাদাখের লেহ বিমানবন্দরসহ বেশ কিছু বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করায় তারা তাদের নির্ধারিত ফ্লাইটগুলো ১০ মে সকাল পর্যন্ত বাতিল করেছে।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর পাকিস্তান দেশটির প্রধান বিমানবন্দরগুলোতে ফ্লাইট চলাচল স্থগিত করেছিল।
আট ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর লাহোর ও করাচিসহ বেশ কয়েকটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও এভিয়েশন সূত্র জানায়, লাহোর ও করাচি বিমানবন্দর থেকে একাধিক ফ্লাইট পুনরায় চালু হয়েছে। করাচি থেকে আজ দুটি আন্তর্জাতিক ও একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে, যা ধীরে ধীরে ফ্লাইট কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
লাহোর থেকে করাচিগামী প্রথম ফ্লাইটটি ছিল একটি বেসরকারি এয়ারলাইনের পিএ-৪০১, যা নির্ধারিত সময়েই ছেড়ে গেছে। অন্যদিকে করাচি থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোর সময়সূচি ছিল ভিন্নরকম। দুবাইগামী পিকে-৬০৭ নির্ধারিত সময়ের আগেই ছেড়ে যায়, তবে ইস্তাম্বুলগামী টিকে-৭০৯ ফ্লাইটটি বিলম্বিত হয়।
এছাড়া, জেদ্দা থেকে লাহোরগামী পিকে-৮৪২ ফ্লাইটটি উত্তেজনার কারণে করাচিতে অবতরণ করেছিল। আজ সকালে সেটিকে লাহোরে পাঠানো হয়েছে।
যদিও বিমানবন্দর কার্যক্রম আবার শুরু হয়েছে, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ) ১২ ঘণ্টার জন্য তাদের নিয়মিত ফ্লাইট চলাচল স্থগিত রেখেছে।
উল্লেখ্য, জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে বন্দুকধারীদের হামলার দুই সপ্তাহ পর মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত আজাদ কাশ্মীরের অন্তত ৯টি স্থানে হামলা চালিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ভারতীয় সামরিক বাহিনী মাত্র ২৫ মিনিটে অন্তত ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে পাকিস্তানে। এতে পাকিস্তানে কমপক্ষে ৭০ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ভারত।
যদিও পাকিস্তানের দাবি, ভারতের হামলায় ২৬ জন নিহত ও ৪৬ জন আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে অন্তত ১০ জন নিহত ও ৩০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
কাফি