Connect with us

মত দ্বিমত

সমতাভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবার বিকেন্দ্রীকরণ সময়ের দাবি

Published

on

ইনফরমেশন

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৫৩ বছর অতিক্রম করলেও, দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। বরং, ক্রমবর্ধমানভাবে দেশের জনগণ প্রতিবেশী দেশগুলোর—বিশেষত ভারতের, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইংল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশের—স্বাস্থ্যসেবার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এই নির্ভরশীলতা কেবল দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ঘাটতি তৈরি করেনি, বরং দেশের অর্থনীতির ওপরও বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। চিকিৎসা সেবার জন্য প্রতিটি বছর লক্ষাধিক বাংলাদেশি বিদেশে যাত্রা করে, যার ফলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অপচয় হচ্ছে। এটি শুধু জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রেই অবনতি তৈরি করছে না, একইসঙ্গে স্থানীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়নেও বাধার সৃষ্টি করছে।

তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, এই সংকটকে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে সংকট হিসেবে গ্রহণ করা হয়নি। দেশের নেতৃবৃন্দের কাছে এটি বড় কোনো সমস্যা না হলেও, দেশের সাধারণ মানুষ প্রতিদিন এই সংকটের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছে। গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা বিশেষভাবে দুঃখজনক এবং শহুরে এলাকার মানুষও প্রতিদিন ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন। কিন্তু নেতাদের কাছ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপের দেখা মেলেনি। তাদের দৃষ্টি বিদেশি চিকিৎসকদের ওপর, কিন্তু জনস্বাস্থ্যের গুরুত্ব যেন সেখান থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে, জনগণের আস্থা ক্রমাগত ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং তাদের নিজস্ব স্বাস্থ্য সেবায় আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে।

সুইডেনের উদাহরণ: একটি সফল স্বাস্থ্যসেবা মডেল:-
উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সুইডেন স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে তার উদাহরণে অনুপ্রাণিত করে, বিশেষ করে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা এবং বিকেন্দ্রীকৃত স্বাস্থ্যসেবা মডেলের মাধ্যমে। সুইডেনে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা স্থানীয় পর্যায়ে পরিচালিত হয়। প্রতিটি এলাকার স্থানীয় কাউন্সিল বা পৌরসভাগুলো স্বাধীনভাবে তাদের জনগণের চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও উন্নয়ন নিশ্চিত করে থাকে। এই মডেল, সুইডেনের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন, জনগণের আস্থা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

এছাড়াও, সুইডেনের পাশাপাশি নেদারল্যান্ডস এবং জাপানও বিকেন্দ্রীকৃত স্বাস্থ্যসেবা মডেল প্রয়োগ করে উন্নত সেবা প্রদান করছে। এসব দেশের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে, বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে শুধু সেবার প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পায় না, বরং জনগণের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হয়। এমনকি স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা পরিচালনার ফলে কর্মক্ষেত্রেও উন্নতি আসে, যা দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কাঠামোকে শক্তিশালী করে।

বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র:-
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যব্যবস্থা অত্যধিক কেন্দ্রীভূত, যার ফলে রাজধানী ঢাকা অতিরিক্ত চাপের শিকার। প্রতি বছর ঢাকায় রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ঢাকার হাসপাতালগুলো চাপের মুখে পড়ে রীতিমতো সীমিত সামর্থ্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে বাধ্য হচ্ছে। সেখানে অত্যধিক চাপ এবং রোগীর দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে সেবা দেওয়ার গুণগত মান কমে যাচ্ছে, যা একদিকে রোগীদের জন্য একটি বড় দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অপরদিকে, গ্রামীণ এলাকার হাসপাতালগুলো অবকাঠামো এবং আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে ভুগছে। অধিকাংশ গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং উপজেলা হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি নেই, ফলে গ্রামের মানুষরা উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া চিকিৎসকদের অভাব এবং তাদের সীমিত প্রশিক্ষণ এই সমস্যাকে আরও প্রকট করছে। বিশেষ করে, গ্রামের অদূরে এবং দুর্গম এলাকায় চিকিৎসা সেবা পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমনকি যেখানে কিছু হাসপাতাল আছে, সেখানেও সেবা পর্যাপ্ত নয়, যা জনগণের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
এছাড়া, বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদদের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা দেশের স্বাস্থ্যসেবার প্রতি আস্থার ঘাটতির একটি অন্যতম উদাহরণ। দেশীয় হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা সুবিধা না পেয়ে তারা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন, যা সাধারণ জনগণের মধ্যে এক ধরনের হতাশা এবং অসন্তোষ সৃষ্টি করছে। এর ফলে স্থানীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতির জন্য যথাযথ বিনিয়োগ ও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। জনগণ দেখতে পাচ্ছে যে, দেশের রাজনৈতিক নেতারা নিজস্ব সুবিধার্থে বিদেশি চিকিৎসা ব্যবস্থা বেছে নিচ্ছেন, যার ফলে স্থানীয় স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগের উৎসাহ কমে যাচ্ছে এবং জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে। এ ধরনের সংকটের কারণেই স্বাস্থ্যসেবা খাতে পরিবর্তন ও সমাধানের জন্য বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজনীয়তা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান:-
সুইডেনের সফল স্বাস্থ্যসেবা মডেল অনুসরণ করে বাংলাদেশে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে একটি সমতাভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। বিকেন্দ্রীকরণের পথ বেছে নিলে আমরা দীর্ঘমেয়াদে দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবো। এর মাধ্যমে জনগণের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো সহজ এবং প্রভাবশালী হবে।

১. স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষমতায়ন: স্থানীয় প্রশাসনকে আরও শক্তিশালী ও সক্রিয় করতে হবে। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার এমপিদের তাদের নিজ এলাকায় বসবাস করা এবং স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। এটি তাদের সরাসরি জনগণের সমস্যার মুখোমুখি করবে এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে আরও তৎপর করে তুলবে।

২. অবকাঠামোগত উন্নয়ন: গ্রামীণ হাসপাতালগুলোতে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষিত চিকিৎসক সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে, গ্রামের মানুষও উন্নত চিকিৎসা সেবা পাবেন, যা তাদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করবে।

৩. স্বাস্থ্যসেবায় নৈতিক চর্চা প্রতিষ্ঠা: স্বাস্থ্য খাতে নৈতিকতার উন্নতি ও স্বচ্ছতার জন্য কঠোর নীতিমালা তৈরি করতে হবে। চিকিৎসকদের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফার্মেসির সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক নিরসন করতে এবং তা নিয়ন্ত্রণ করতে কড়া তদারকি প্রয়োজন। এটি জনগণের আস্থার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে এবং সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে।

৪. ঢাকার ওপর চাপ কমানো: বর্তমান পরিস্থিতিতে ঢাকায় স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং অন্যান্য মৌলিক পরিষেবাগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। তাই বিকল্প আঞ্চলিক কেন্দ্র গড়ে তুলে ঢাকার ওপর চাপ কমানো যেতে পারে। এতে উন্নত পরিষেবাগুলো শহরের বাইরেও সহজলভ্য হবে এবং গ্রামীণ অঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভব হবে।

অর্থনৈতিক উপকারিতা ও সামাজিক উন্নয়ন:-
স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন দেশের জনগণের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। উন্নত মানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হলে, দেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার পরিমাণ কমে যাবে, যা বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ করবে। প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রতিবেশী দেশ যেমন ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং অন্যান্য দেশে চলে যায়, যার ফলে দেশের অর্থনীতির উপর বিরাট চাপ পড়ে। এই অর্থ যদি দেশের মধ্যে থাকে, তবে তা দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে সহায়ক হবে এবং স্থানীয় অর্থনীতি গড়ে তোলার পথ খুলবে।

এছাড়া, স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন শহর ও গ্রামীণ এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়তা করবে। স্বাস্থ্যসেবার দ্রুত ও সহজলভ্য পৌঁছানোর মাধ্যমে জনগণের শারীরিক সুস্থতা এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

স্বাস্থ্যসেবায় আন্তঃপেশাগত সহযোগিতা ও বৈশ্বিক দক্ষতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা:-
একটি আধুনিক ও কার্যকর স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে চিকিৎসক, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, কেমিস্ট, নার্সসহ অন্যান্য পেশাজীবীদের মধ্যে সমন্বিত সহযোগিতা অপরিহার্য। এই সহযোগিতা শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে না, বরং বৈশ্বিক দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। পেশাজীবীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় পর্যায়ে কাজের সুযোগ, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা আবশ্যক। এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হলে, তারা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা প্রদানের যোগ্যতা অর্জন করবে।

এ ধরনের উন্নয়নমূলক উদ্যোগ পেশাজীবীদের জন্য দুটি উল্লেখযোগ্য সুফল বয়ে আনবে:
১. বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি: দক্ষ পেশাজীবীরা বিশ্বের যেকোনো দেশে চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের গৌরব বৃদ্ধি করবে এবং দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানকে আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত করবে।

২. রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধি: এই দক্ষ মানবসম্পদ বিদেশে কাজ করার মাধ্যমে রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য বিশাল সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। তবে এই সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ নিতে হলে, দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন ঘটানো অত্যন্ত জরুরি। দেশের মানুষ যদি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার পরিবর্তে স্থানীয় সেবা গ্রহণে আগ্রহী হয়, তবে তা স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবার প্রতি আস্থা বৃদ্ধি করবে। এর ফলে, চিকিৎসকসহ অন্যান্য পেশাজীবীরা দেশে থেকেই কাজ করতে আরও আগ্রহী হবে।

একটি সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার মাধ্যমে চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য পেশাজীবীরা একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যখাত শক্তিশালী হবে। এটি দেশের স্বাস্থ্য সেবাকে শুধুমাত্র উন্নত করবে না, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগও সৃষ্টি করবে।

উপসংহার:-
বাংলাদেশের জন্য স্বাস্থ্যসেবার বিকেন্দ্রীকরণ শুধুমাত্র একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা নয়; এটি একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের মৌলিক দায়িত্ব। দেশের প্রতিটি নাগরিক, তাদের অবস্থান যাই হোক না কেন, সমান স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রাখে। এটি একটি মানবিক ও সমতাভিত্তিক সমাজের প্রাথমিক শর্ত। সুইডেনের মতো একটি সফল মডেল অনুসরণ করে বাংলাদেশ তার স্বাস্থ্যসেবা খাতকে শক্তিশালী করতে এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে পারে।

বর্তমানে দেশে স্বাস্থ্যখাতে নানা ধরনের দুর্নীতি, সিন্ডিকেট, ভেজাল ওষুধ, মেয়াদোত্তীর্ণ যন্ত্রপাতি এবং সঠিক মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকার কারণে স্বাস্থ্যব্যবস্থার গুণগত মান একেবারে নড়বড়ে। তাই সরকারকে এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে উদ্যোগী হতে হবে এবং স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নির্মূল করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাংলাদেশের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে, রাষ্ট্রীয় ও স্থানীয় প্রশাসনকে যৌথভাবে একসাথে কাজ করতে হবে। সর্বোপরি, একটি কার্যকর মনিটরিং সিস্টেম এবং দুর্নীতি রোধকল্পে দৃঢ় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন সম্ভব। এখনই সময় সাহসী এবং সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার, যাতে আমাদের দেশের প্রতিটি নাগরিক তার প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমিতে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পায়। যেন আর কারও জন্য বিদেশে চিকিৎসার জন্য ছুটতে না হয়, বরং বাংলাদেশে তাদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সেবা পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত হয়। তাছাড়া বিদেশি চিকিৎসার উপর ভরসা করলে তো দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হবে না। এই পদক্ষেপগুলো যদি আমরা গ্রহণ করি, তবে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে একটি স্বাস্থ্যবান, সুখী জাতি—যা বিশ্বে তার উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য পরিচিতি লাভ করবে।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মত দ্বিমত

বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা কেন প্রয়োজন?

Published

on

ইনফরমেশন

বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা বহুমুখী সংকটের মুখোমুখি। সৃজনশীলতার অভাব, দক্ষতার ঘাটতি এবং স্থানীয় চাহিদার প্রতি উদাসীনতা শিক্ষাব্যবস্থার অগ্রগতিকে স্থবির করে দিয়েছে। এই সংকট শুধু শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎকেই নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নকেও বাধাগ্রস্ত করছে। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি দক্ষ, উদ্ভাবনী এবং সমাজের প্রয়োজনমাফিক শিক্ষিত প্রজন্ম গড়ে তোলার জন্য বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রচলিত এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে সবার জন্য একই পাঠ্যসূচি ও পরীক্ষার কাঠামো নির্ধারিত, সেখানে শিক্ষার্থীদের বহুমুখী প্রতিভা বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাধীনতা ও সুযোগ সীমিত। এককেন্দ্রিক ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন, পটভূমি এবং চাহিদাকে অগ্রাহ্য করে ‘সবার জন্য একই জিনিস’ (ওয়ান সাইজ ফিটস অল) ধারণা চাপিয়ে দেয়। ফলে একদিকে শিক্ষার্থীদের ভিন্নতর প্রতিভা ও যোগ্যতার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, অপরদিকে রাষ্ট্র বঞ্চিত হয় জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে পরিণত করার সুযোগ থেকে।

বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা এই সংকটের সমাধানে কার্যকর সমাধান হতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় একটি নির্ধারিত শিক্ষাক্রম কাঠামোর ভিত্তিতে স্থানীয় চাহিদা ও বৈচিত্র্য অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা ও আগ্রহের ভিত্তিতে পাঠ্যসূচি এবং উপযোগী শিক্ষণ পদ্ধতি তৈরি করা সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে এখানে ইংল্যান্ড ও ফিনল্যান্ডের বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বের নানা দেশে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, দক্ষতা এবং সৃজনশীলতা বিকাশে বিশেষ সহায়ক হয়ে ওঠেছে। এই ব্যবস্থা পড়ালেখায় শিক্ষার্থীদের নিজস্ব অগ্রগতি ও প্রয়োজন অনুযায়ী শেখার সুযোগ দেয়, যা তাদের প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে সৃজনশীল চিন্তাধারার বিকাশ এবং সমস্যার সমাধান করার দক্ষতাকে উন্নত করে।

বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার পূর্বের আলোচনায় আমরা এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিকতা, স্থানীয় সমস্যা ও সুযোগ-সুবিধার সাথে সংযোগ এবং সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশের ওপর জোর দিয়েছি। শিক্ষার মৌলিক লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রতিটি শিক্ষার্থীর শিখনধারা, আগ্রহ এবং প্রাসঙ্গিক বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য রাখা। বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিটি বিদ্যালয়, এমনকি প্রতিটি শিক্ষক, তাদের শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যসূচি ও পাঠদান পদ্ধতি নির্ধারণ করতে সক্ষম হন। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব পড়ালেখার অগ্রগতি ও ক্ষমতা অনুযায়ী শেখার সুযোগ পায় এবং প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়। এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্যপূর্ণ শিখনধারা এবং আগ্রহকে উপেক্ষা করে, যা সৃজনশীলতার বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। এর বিপরীতে বিকেন্দ্রিক ব্যবস্থায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত দক্ষতা ও প্রতিভার বিকাশে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস এবং স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে তোলার পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শুধু পরীক্ষার ফলাফলের জন্য নয়, বরং জীবনের বাস্তব প্রয়োগের জন্য জ্ঞানার্জন করতে পারে, যা একটি জাতির সামগ্রিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত জরুরি।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য একটি বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য খুবই উপযোগী ও অত্যাবশ্যক। কারণ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিদ্যমান সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যার প্রকৃতি ও চাহিদার ধরন আলাদা। যেমন চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রা, জীবিকা ও পরিবেশের চাহিদা সিলেটের চা বাগান বা পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকার শিক্ষার্থীদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর ভিত্তি করে পাঠ্যসূচি তৈরি করা যেতে পারে, যা সেখানে জীবনযাত্রা, জীবিকা এবং পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক হবে। তেমনি সিলেটের চা বাগানের শ্রমজীবী পরিবারগুলোর জন্য কৃষিভিত্তিক কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা তাদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।

একইভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত শিক্ষা বাস্তবিক চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে। বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে এসব এলাকার স্থানীয় সমস্যা এবং শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষাসূচি সাজানো সম্ভব। এই ধরনের ব্যবস্থা জন-সমাজের প্রাসঙ্গিক শিক্ষাকে নিশ্চিত করবে এবং স্থানীয় দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার একটি বড় সমস্যা হলো, এটি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল চিন্তা এবং গবেষণাধর্মী শিক্ষার বদলে মুখস্থবিদ্যার ওপর নির্ভরশীল করে তোলে। বিকেন্দ্রিক ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা প্রকল্পভিত্তিক শিক্ষা এবং গবেষণায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, চীনের কিছু গ্রামীণ বিদ্যালয়ে স্থানীয় কৃষি সমস্যার সমাধানে শিক্ষার্থীদের গবেষণামূলক কাজ করানো হয়, যা শুধু তাদের সৃজনশীলতাকেই বাড়ায় না বরং স্থানীয় সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধানও দেয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা শুধু দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে নয়, বরং ভবিষ্যতের উদ্ভাবক হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে। এককেন্দ্রিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে পরীক্ষাভিত্তিক জ্ঞানার্জনের ওপর যে অতিরিক্ত জোর দেওয়া হয়, তা শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী চিন্তার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। বিকেন্দ্রিক ব্যবস্থায়, বিশেষত প্রকল্পভিত্তিক এবং গবেষণাধর্মী শিক্ষার মাধ্যমে, শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তব সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে পায়। ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা এ ক্ষেত্রে একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ যেখানে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে নিজস্ব পদ্ধতি অনুসন্ধানের স্বাধীনতা দেওয়া হয় এবং তাদের গবেষণায় অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করা হয়। বাংলাদেশের মতো দেশে এ ধরনের উদ্যোগ শুধু উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটাবে না, বরং প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার সম্প্রসারণেও সহায়ক হবে।

বাংলাদেশের এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের চাহিদা এবং বৈচিত্র্যময় পটভূমিকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের তত্ত্বাবধানে সারা দেশের জন্য একই পাঠ্যপুস্তক নির্ধারণ করা হয়, যা বিশেষ করে শহর ও গ্রামের শিক্ষার্থীদের ভিন্নতর চাহিদা এবং বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। শহরের শিক্ষার্থীরা যেখানে উন্নত প্রযুক্তি, শিক্ষণ সামগ্রী এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকের সুবিধা পায়, গ্রামীণ শিক্ষার্থীরা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এর ফলে শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি গভীর বৈষম্য তৈরি হয়, যা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে অন্তরায় এবং আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই বৈষম্য কেবল শারীরিক সুযোগ-সুবিধার সীমাবদ্ধতা নয়; এটি শিক্ষার্থীদের চিন্তা ও দক্ষতার বিকাশকেও বাধাগ্রস্ত করে। গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন স্থানীয় বাস্তবতা এবং জীবিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত ও জীবনমুখী সংগতিপূর্ণ পাঠ্যসূচি। যেমন ভারতের কেরালা রাজ্যে স্থানীয় শিক্ষার বিকাশে একটি সমন্বিত উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে, যা গ্রামের শিক্ষার্থীদের স্থানীয় সমস্যার সমাধানে সম্পৃক্ত করে তাদের আত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।

ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা তার বিকেন্দ্রিক চরিত্র এবং শিক্ষকের স্বাধীনতার জন্য বিশ্বব্যাপী সেরা হিসেবে স্বীকৃত। এই ব্যবস্থায় শিক্ষকরা পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষাদান পদ্ধতি নির্ধরণে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করেন, যা শিক্ষার মানকে বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। শিক্ষার্থীদের তাদের আগ্রহ অনুযায়ী বিষয় বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় এবং তারা গবেষণাধর্মী কার্যক্রমে অংশ নিয়ে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন করে। ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থার এই উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, শিক্ষকদের স্বাধীনতা এবং শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত চাহিদার প্রতি মনোযোগ শিক্ষার সামগ্রিক মান উন্নত করতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং প্রযুক্তির সফল সংমিশ্রণের জন্য বিখ্যাত। জাপান তাদের শিক্ষাক্রমে স্থানীয় ঐতিহ্যকে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে। যেমন জাপানের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের স্থানীয় শিল্পকলা, কৃষি এবং পরিবেশ নিয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়, যা তাদের শিকড়ের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে। একই সঙ্গে প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করে তোলে। ফিনল্যান্ড এবং জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে আমরা দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। প্রথমত, শিক্ষকদের স্বাধীনতা এবং স্থানীয় চাহিদার প্রতি মনোযোগ প্রদান শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করে। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় ঐতিহ্য এবং প্রযুক্তির সংমিশ্রণ শিক্ষার্থীদের বাস্তবমুখী এবং কার্যকর শিক্ষা প্রদান করতে পারে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এই মডেলগুলো গুরুত্বপূর্ণ।

বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষকদের স্বাধীনতা প্রদান এবং স্থানীয় চাহিদার ওপর ভিত্তি করে শিক্ষাক্রম তৈরির মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে স্থানীয় বনজ সম্পদের ওপর ভিত্তি করে পরিবেশগত শিক্ষা, বা উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার কৌশল অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। একইসঙ্গে প্রযুক্তি ব্যবহারে বিনিয়োগ করে শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার উপযোগী করে গড়ে তোলা সম্ভব। ফিনল্যান্ড এবং জাপানের উদাহরণ থেকে দেখা যায় যে, একটি বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা কেবল শিক্ষার মান উন্নত করতেই নয়, বরং শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি জাতির ভবিষ্যৎ গড়তে কতটা কার্যকর হতে পারে।

সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে। এটি কেবল শিক্ষার মানোন্নয়নেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং প্রযুক্তি, শিল্প এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বিকেন্দ্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, দক্ষতা এবং উদ্যোক্তা মানসিকতা বিকশিত হবে, যা তাদের বৈশ্বিক চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে তুলবে। একই সাথে শিক্ষার ডিজিটালকরণ নিশ্চিত করা হলে শিক্ষার্থীদের শেখার পদ্ধতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। তারা তাদের শেখার নিজস্ব গতি ও আগ্রহ অনুযায়ী জ্ঞান অর্জন করতে পারবে, যা ব্যক্তিগত উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা চেতনার বিকাশ ঘটাবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, জাপানের শিক্ষাব্যবস্থায় যেমন স্থানীয় শিল্পের সাথে প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটানো হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশেও স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যসূচি এবং প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ডিজাইন করা সম্ভব। এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি দক্ষ জনশক্তির ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে এবং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হবে।

একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি নতুন, দক্ষ ও সৃজনশীল প্রজন্ম গড়ে তোলা সম্ভব। তাই বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হলে এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার পথে দ্রুত এগোতে হবে। ফিনল্যান্ড, জাপান বা সিঙ্গাপুরের মতো উদাহরণগুলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করে আমরা আমাদের নিজস্ব প্রেক্ষাপটের উপযোগী একটি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি। এই ব্যবস্থা কেবল শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াবে না, বরং তাদের মধ্যে উদ্ভাবনী চিন্তা, মানবিক মূল্যবোধ এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরি করবে। বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা শুধু আমাদের অকার্যকর শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের জন্য নয়, এটি আমাদের আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের ভিত্তি হিসেবেও জরুরি। এটি বাংলাদেশী হিসেবে এমন এক প্রজন্ম গড়ে তুলতে সহায়তা করবে যারা হবে আত্মনির্ভরশীল, সৃজনশীল এবং আধুনিক বিশ্বের প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষতার চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশীরা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী, প্রযুক্তিতে অগ্রসর এবং মানবসম্পদে সমৃদ্ধ একটি জাতি হিসেবে বিশ্বে স্থান করে নিতে সক্ষম হবে। শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার পথে এগিয়ে গিয়ে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে নিরাপদ এবং উজ্জ্বল করে তুলতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

ড. মাহরুফ চৌধুরী, ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য। mahruf@ymail.com

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

খেলাধুলা

জাতীয় দলে আর খেলবেন না তামিম

Published

on

ইনফরমেশন

আগামী মাসের ১৯ তারিখ পাকিস্তানের মাটিতে পর্দা উঠবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। এই টুর্নামেন্টের আগে আবারও আলোচনায় এসেছে তামিম ইকবালের দলে ফেরার ইস্যু। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদও জানিয়েছেন তামিম যেহেতু অবসর নেননি নির্বাচকরা যদি তামিমকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে প্রয়োজন হয় তাহলে তাকে নিতে পারে।

তবে এর মাঝেই জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে মুখ খুলেছেন তামিম। পাকিস্তানি কিংবদন্তি শহিদ আফ্রিদি অবসর প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে তামিম বলেন, ‘জাতীয় দলে আর খেলছি না।’

বিপিএলে এবার চিটাগং কিংসের মেন্টর হিসেবে এসেছেন আফ্রিদি। তামিম খেলছেন ফরচুন বরিশালের হয়ে। একই হোটেলে থাকার সুবাদে নিয়মিত হচ্ছে আড্ডা। আফ্রিদি তার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে তেমন এক আড্ডা ও খাওয়া-দাওয়ার ভিডিও প্রকাশ করেছেন।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) প্রকাশিত ভিডিওতে ফরচুন বরিশালের আফগান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবির সঙ্গে নৈশভোজ করতে দেখা যায় আফ্রিদিকে। এ সময় পাশে বসে ছিলেন তামিম এবং শাহিন আফ্রিদিও। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তামিম, আফ্রিদি ও নবিরা।

তারই মাঝে আফ্রিদি তামিমের কাছে জানতে চান, তামিম, তুমি কি পুরোপুরি অবসর নিয়ে ফেললে? (আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার) শেষ? জবাবে বলেন,‘ জাতীয় দল থেকে…জাতীয় দলে আর খেলছি না।’ সুতরাং জাতীয় দলে না ফিরলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও খেলা হচ্ছে না তামিমের।

পরে একপর্যায়ে তামিমও আফ্রিদিকে জিজ্ঞেস করেন—তার রাজনীতিতে আসার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না! জবাবে পাক কিংবদন্তি মজা ও খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘আরে তোমাদের অবস্থা তো দেখতেছি, আমি (রাজনীতিতে) আসতেছি না।’ তখন সবাই সমস্বরে হেসে ওঠেন।

২০২৩ সালে আফগানিস্তান সিরিজ চলাকালীন আচমকা সব ধরণের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নেন তামিম। তখন তিনি ছিলেন দলের অধিনায়ক। এই সময় তুমুল আলোড়ন তৈরি করে এই ঘটনা। পরদিন ঢাকায় তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন তিনি, বেরিয়ে এসে জানান সিদ্ধান্ত বদলের কথা।

এরপর ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে দুই ম্যাচ খেলেন তিনি। তবে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তার দূরত্বের খবর ঘটনা অন্য দিকে মোড় নিয়ে নেয়। তামিকে ছাড়াই বিশ্বকাপ খেলতে যায় বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

খেলাধুলা

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সূচি প্রকাশ, বাংলাদেশের ম্যাচ কবে-কোথায়

Published

on

ইনফরমেশন

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত-পাকিস্তান হাইভোল্টেজ ম্যাচের সূচি ফাঁস হয়ে গিয়েছিল আগেই। একই গ্রুপে থাকায় বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের দুটি ম্যাচ কবে, জানা গিয়েছিল। মঙ্গলবার পুরো সূচি প্রকাশ করেছে আইসিসি।

১৯ ফেব্রুয়ারি করাচিতে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠবে ওয়ানডে ফরম্যাটের এবারের আসরের। বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ পরের দিনই, ২০ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে।

বাংলাদেশ তাদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে ২৪ মার্চ রাওয়ালপিন্ডিতে, প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। ২৭ ফেব্রুয়ারি একই ভেন্যুতে পাকিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচ খেলবে টাইগাররা।

আট দলের এই টুর্নামেন্টে হবে মোট ১৫ ম্যাচ, পাকিস্তান ও দুবাইয়ের ভেন্যুতে হবে খেলা। পাকিস্তান রাওয়ালপিন্ডি, লাহোর ও করাচিতে হবে গ্রুপের তিনটি করে ম্যাচ। লাহোরে হবে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল।

ভারত উঠলে ৯ মার্চ ফাইনাল হবে দুবাইয়ে। ভারত না থাকলে সেটি হবে পাকিস্তানের লাহোরে। দুই সেমিফাইনাল ও ফাইনালের জন্য রাখা হয়েছে রিজার্ভ ডে।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচি
১৯ ফেব্রুয়ারি: পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড, করাচি, পাকিস্তান
২০ ফেব্রুয়ারি: বাংলাদেশ-ভারত, দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত
২১ ফেব্রুয়ারি: আফগানিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা, করাচি, পাকিস্তান
২২ ফেব্রুয়ারি: অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড, লাহোর, পাকিস্তান

২৩ ফেব্রুয়ারি: পাকিস্তান-ভারত, দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত
২৪ ফেব্রুয়ারি: বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড, রাওয়ালপিন্ডি, পাকিস্তান
২৫ ফেব্রুয়ারি: অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা, রাওয়ালপিন্ডি, পাকিস্তান
২৬ ফেব্রুয়ারি: আফগানিস্তান-ইংল্যান্ড, লাহোর, পাকিস্তান

২৭ ফেব্রুয়ারি: বাংলাদেশ-পাকিস্তান, রাওয়ালপিন্ডি, পাকিস্তান
২৮ ফেব্রুয়ারি: আফগানিস্তান-অস্ট্রেলিয়া, লাহোর, পাকিস্তান
১ মার্চ: দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড, করাচি, পাকিস্তান
২ মার্চ: নিউজিল্যান্ড-ভারত, দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত
৪ মার্চ: প্রথম সেমিফাইনাল, দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত
৫ মার্চ: দ্বিতীয় সেমিফাইনাল, লাহোর, পাকিস্তান

ফাইনাল
৯ মার্চ: লাহোর, পাকিস্তান (ভারত উঠলে ফাইনাল দুবাইয়ে)।

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

খেলাধুলা

সপরিবারে ভারত ছাড়ছেন কোহলি

Published

on

ইনফরমেশন

ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার বিরাট কোহলি। দেশের জার্সিতে একের পর এক কীর্তি গড়েছেন এই ডানহাতি ব্যাটার। তবে ভারত ছেড়ে লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি— এমন দাবি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর।

কোহলির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তার ছেলেবেলার কোচ রাজকুমার শর্মা জানিয়েছেন, ভারত ছেড়ে লন্ডনে সংসার পাতবেন কোহলি। স্ত্রী আনুশকা শর্মা, কন্যা ভামিকা ও পুত্র অকায়কে নিয়ে সেখানেই থাকবেন তিনি।

রাজকুমার বলেন, ক্রিকেট ছাড়া বাকি সময়টা কোহলি পরিবারের সঙ্গেই কাটাতে ভালোবাসে। অবসরের পরে বাকি জীবনটা ও লন্ডনে কাটাতে চায়।

হঠাৎ করে কেন লন্ডনে যেতে চান কোহলি এমন প্রশ্ন করা হয় এই কোচকে। জবাব তিনি জানিয়েছেন, সেখানে অনেক স্বাভাবিকভাবে জীবন কাটাতে পারেন তিনি। সেই কারণেই এই ভাবনা।

তিনি বলেন, ওখানকার পরিবেশ ওদের ভালো লাগে। ভারতে থাকলে যেভাবে সারাক্ষণ ওদের নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে ঘুরতে হয় সেটা লন্ডনে দরকার পড়ে না। ওখানে অনেক স্বাভাবিকভাবে জীবন কাটাতে পারে ওরা।

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

খেলাধুলা

ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ

Published

on

ইনফরমেশন

সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য শেষ ম্যাচ ছিল মান বাঁচানোর লড়াই। ঘরের মাঠে ক্যারিবিয়ানরা সেটা রক্ষা করতে পারল না। শেষ ম্যাচে ৮০ রানের ব্যবধানে উইন্ডিজকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা।

২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডের পর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রতিপক্ষকে তাদের মাঠে ধবলধোলাইয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। ভারত, পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ডের পর চতুর্থ দল হিসেবে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাই করল বাংলাদেশ।

সেন্ট ভিনসেন্টে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৮৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। দলের হয়ে ৪১ বলে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৭২ রান করেন জাকের আলি। জবাবে খেলতে নেমে ১৬ ওভার ৪ বলে ১০৯ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

১৯০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন তাসকিন আহমেদ। দ্বিতীয় বলেই ব্রান্ডন কিংকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এই পেসার। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। সিরিজের সবগুলো ম্যাচেই তাসকিনের শিকার হয়েছেন কিং।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের ০.৫ ওভারে খেলার পরই হানা দেয় বৃষ্টি। তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মিনিট বিশেক পরই আবার খেলা শুরু হয়। দ্বিতীয় ওভারেই স্পিন আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। নতুন বলে আরো একবার দুর্দান্ত শুরু করেন শেখ মেহেদি। নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই উইকেটের দেখা পান। এই ডানহাতি অফ স্পিনারকে লং অন দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে বদলি ফিল্ডার আফিফ হোসেনের হাতে ধরা পড়েন জাস্টিন গ্রিভস। তাতে ৭ রান তুলতেই ২ উইকেট হারায় উইন্ডিজ।

এরপর নিকোলাস পুরাণ ও জনসন চার্লস জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। তবে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে গিয়ে ফেরেন পুরাণ। এই অভিজ্ঞ ব্যাটারকে বোকা বানিয়েছেন মেহেদি। অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে নিচু হয়ে ভেতরে ঢোকা বলে লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন পুরাণ। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১০ বলে ১৫ রান।

পাঁচে নেমে ডাক খেয়েছেন রোস্টন চেইস। চার বল খেলে রানের খাতা খোলার আগেই হাসান মাহমুদের বলে মেহেদির হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। এক প্রান্ত আগলে রাখা চার্লস ফিরেছেন রান আউটের শিকার হয়ে। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৮ বলে ২৩ রান। তাতে দলীয় ফিফটির আগেই ৫ উইকেট হারায় উইন্ডিজ।

এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি স্বাগতিকরা। লোয়ার মিডল অর্ডারে রভম্যান পাওয়েল-গুড়াকেশ মোতিরাও ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। খানিকটা ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল রোমারিও শেফার্ড। তবে তার ২৭ বলে ৩৩ রানের ইনিংস কেবলই জয়ের ব্যবধান কমিয়েছে।

বাংলাদেশের হয়ে ২১ রানে ৩ উইকেট শিকার করে ইনিংসের সেরা বোলার রিশাদ হোসেন। তাছাড়া তাসকিন ও মেহেদি দুটি করে উইকেট পেয়েছেন। আর একটি করে উইকেট পেয়েছেন তানজিম সাকিব ও হাসান মাহমুদ।

এর আগে লিটনের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করতে নেমে রীতিমতো ঝড় তোলেছিলেন পারভেজ হোসেন ইমন। তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে উড়ন্ত শুরু পায় বাংলাদেশ। অফফর্মে থাকা লিটনকেও আজ বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল। দারুণ কিছু শটও খেলেছেন। তবে ১৪ রানের বেশি করতে পারলেন না। অধিনায়ক ফেরায় ভাঙে ৪৪ রানের উদ্বোধনী জুটি।

লিটন ফেরার পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ইমন। দুর্দান্ত ব্যাটিং করা এই ওপেনার আলজারি জোসেফকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন জাস্টিন গ্রেভসের হাতে। সাজঘরে ফেরার আগে ২১ বলে ৩৯ রান করেন তিনি। যেখানে ৪টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন ইমন। ইমনের দুর্দান্ত ইনিংসে ভর করে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ ২ উইকেটে ৫৪ রান তোলে।

তিনে নেমে ভালো শুরুর আভাস দিলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি তানজিদ তামিম। এক ছক্কায় ৯ বলে ৯ রান করেছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার।

৬৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা ব্যকফুটে গেলে আরো একবার দলের হাল ধরেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও জাকের আলি। চতুর্থ উইকেট জুটিতে শুরুতে দুজনে কিছুটা রক্ষণাত্মক ব্যাটিং করেছেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাত খুলেছেন। আর রানের গতি বাড়াতে গিয়েই ফিরেছেন মিরাজ। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৩ বলে ২৯ রান।

এদিন ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন দেওয়া হয় শামিম হোসেনকে। কিন্তু গত দুই ম্যাচে দারুণ ব্যাট করলেও আজ তার ভাগ্য সহায় হয়নি। ২ রান করে জাকেরের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়েছেন। একই পথে হেটেছেন শেখ মেহেদিও।

দুই ব্যাটারের রান আউটের সঙ্গেই ছিল জাকেরের নাম। তাই বাড়তি দায়িত্ব ছিল তার ওপর। সেটা ভালোভাবেই পুষিয়ে দিয়েছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। শুরুতে কিছুটা ধীরগতির ব্যাটিং করলেও ফিনিশিংটা করেছেন দুর্দান্ত। এক প্রান্তে রীতিমতো টর্নেডো বইয়ে দিয়ে ৩ চার ও ৬ ছক্কায় ৪১ বলে করেছেন অপরাজিত ৭২ রান।

জাকেরকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন তানজিম সাকিব। এক চার ও এক ছক্কায় ১২ বলে ১৭ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে।

শেয়ার করুন:-
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

ইনফরমেশন ইনফরমেশন
পুঁজিবাজার7 minutes ago

ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্কের আয় কমেছে ৬৭ শতাংশ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক লিমিটেড গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকের...

ইনফরমেশন ইনফরমেশন
পুঁজিবাজার17 minutes ago

মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের দ্বিতীয় প্রান্তিক প্রকাশ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকের...

ইনফরমেশন ইনফরমেশন
পুঁজিবাজার27 minutes ago

মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের দ্বিতীয় প্রান্তিক প্রকাশ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত দ্বিতীয়...

ইনফরমেশন ইনফরমেশন
পুঁজিবাজার33 minutes ago

শ্যামপুর সুগারের লোকসান বেড়েছে ৬ শতাংশ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি শ্যামপুর সুগার মিলস লিমিটেড গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকের...

ইনফরমেশন ইনফরমেশন
পুঁজিবাজার42 minutes ago

সোনালী আঁশের আয় কমেছে ৩৬ শতাংশ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকের...

ইনফরমেশন ইনফরমেশন
পুঁজিবাজার46 minutes ago

হা-ওয়েল টেক্সটাইলের আয় বেড়েছে

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হা-ওয়েল টেক্সটাইল বিডি লিমিটেড গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকের...

ইনফরমেশন ইনফরমেশন
পুঁজিবাজার51 minutes ago

জুট স্পিনার্সের লোকসান বেড়েছে ১৩ শতাংশ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জুট স্পিনার্স লিমিটেড গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকের (অক্টোবর’২৪-ডিসেম্বর’২৪)...

ইনফরমেশন ইনফরমেশন
পুঁজিবাজার59 minutes ago

জেএমআই সিরিঞ্জের আয় বেড়েছে ১৩০০ শতাংশ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইস লিমিটেড গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত...

Central Pharma Central Pharma
পুঁজিবাজার1 hour ago

সেন্ট্রাল ফার্মার লোকসান বেড়েছে ৫৫ শতাংশ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকের (জুলাই’২৪-ডিসেম্বর’২৪)...

ইনফরমেশন ইনফরমেশন
পুঁজিবাজার1 hour ago

মুনাফায় ডমিনেজ স্টিল

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং সিস্টেম লিমিটেড গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত দ্বিতীয়...

Baraka Power Baraka Power
পুঁজিবাজার1 hour ago

মুনাফা থেকে লোকসানে বারাকা পাওয়ার

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বারাকা পাওয়ার লিমিটেড গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকের (অক্টোবর’২৪-ডিসেম্বর’২৪)...

ইনফরমেশন ইনফরমেশন
পুঁজিবাজার1 hour ago

ভিএফএস থ্রেড ডাইংয়ের আয় কমেছে ৬৮ শতাংশ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ভিএফএস থ্রেড ডাইং লিমিটেড গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকের...

ইনফরমেশন ইনফরমেশন
পুঁজিবাজার1 hour ago

এপেক্স ফুডসের আয় কমেছে ৬৪ শতাংশ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এপেক্স ফুডস লিমিটেড গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকের (জুলাই’২৪-ডিসেম্বর’২৪)...

ইনফরমেশন ইনফরমেশন
পুঁজিবাজার2 hours ago

বিবিএসের লোকসান কমেছে ১৯ শতাংশ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস পিএলসি গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকের...

ইনফরমেশন ইনফরমেশন
পুঁজিবাজার2 hours ago

বেস্ট হোল্ডিংসের আয় কমেছে ৭২ শতাংশ

অর্থসংবাদ whatsapp চ্যানেল ফলো করুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বেস্ট হোল্ডিংস পিএলসি গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকের (জুলাই’২৪-ডিসেম্বর’২৪)...

Advertisement
Advertisement

Advertisement

সোশ্যাল মিডিয়া

২০১৮ সাল থেকে ২০২৩

অর্থসংবাদ আর্কাইভ

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১