অর্থনীতি
বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে ৪.১ শতাংশে নামবে: বিশ্বব্যাংক
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে ৪ দশমিক ১ শতাংশে নামবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এই অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য সংকটের মুখোমুখি হবে দেশের অর্থনীতি।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক বাণিজ্যে মন্দা, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি এবং ঋণসেবা ব্যয়ের চাপসহ অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক নানা কারণ এই সংকটের জন্য দায়ী। কোভিড-১৯ মহামারি-পরবর্তী ধাক্কা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রধান চালিকাশক্তি তৈরি পোশাকশিল্প। কিন্তু ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের অর্ডার কমে যাওয়ায় রপ্তানি আয় হ্রাস পাচ্ছে। দেশের মূল্যস্ফীতি ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে এবং টাকার অবমূল্যায়নের ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে।
এদিকে রাজস্ব ঘাটতির কারণে বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ছে। অবকাঠামো উন্নয়ন ও সামাজিক সুরক্ষায় সরকারি বিনিয়োগ কমে গেছে। গ্রামীণ অর্থনীতি দুর্বল হওয়ায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরো বেশি সংকটে পড়ছে।
সংকট কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ সরকারের জন্য কয়েকটি সুপারিশ করেছে বিশ্বব্যাংক। এর মধ্যে আছে রাজস্ব ব্যবস্থায় সংস্কার, রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনা, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি কার্যকর করা, অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানো।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইন্দরমিত গিল বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকটময় অবস্থায় রয়েছে। নীতিনির্ধারকদের উচিত দ্রুত কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, যাতে অর্থনীতির গতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা যায়। বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এবং রাজস্ব বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে স্বল্পমেয়াদে সংকট মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ প্রয়োজন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে
২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে দেশে ও বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে। নভেম্বরে দেশের বাইরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ হয়েছে ৪৩১ কোটি টাকা, যা অক্টোবরে ছিল ৪৯৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
আর দেশের অভ্যন্তরে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, অক্টোবরে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। ফলে এক মাসের ব্যবধানে দেশের মধ্যে লেনদেন কমেছে ৭৩ কোটি এবং দেশের বাইরে ৬৮কোটি টাকা।
প্রতিবেশী ভারত থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই), অস্ট্রেলিয়া ও আয়ারল্যান্ডে খরচ কমে যাওয়ায় সার্বিকভাবে মে মাসে বিদেশে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে।
নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন কমলেও ব্যয়ের শীর্ষ তালিকায় রয়েছে দেশটি।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বর মাসে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডধারীরা খরচ করেন ৬৮ কোটি টাকা। এর আগের মাস অক্টোবরে দেশটিতে খরচ হয়েছিল ৮৪ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে ১৬ কোটি টাকা।
দেশের ক্রেডিট কার্ড ইস্যুকারী ৪৪টি ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিসংখ্যান বিভাগ। মাস ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিবেদনটিতে দেশের ভেতর এবং বাইরের বাংলাদেশি নাগরিকদের এবং দেশের ভেতরে বিদেশি নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের তথ্য তুলে ধরে থাকে।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, মে মাসে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে ভারতে ও আরব আমিরাতে। ভারতে অক্টোবরের চেয়ে নভেম্বরে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমেছে ৬ কোটি টাকা। অক্টোবরে ভারতে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেছিলেন ৫৪ কোটি টাকা, যা নভেম্বর মাসে কমে ৪৭ কোটি টাকায় নেমে আসে।
একই সময়ে আরব আমিরাতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে ৪ কোটি টাকা। অক্টোবরে আমিরাতে যেখানে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেছিলেন ২০ কোটি টাকা, সেখানে নভেম্বর মাসে তা কমে হয় ১৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বর মাসে ২ কোটি টাকা এবং আয়ারল্যান্ডে এক কোটি টাকা কম খরচ করেন এ দেশের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীরা।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভারতের ভিসা অনেকে পাচ্ছেন না। আবার অনেকে এই অস্থিরতার মধ্যে যেতে চাচ্ছে না। এজন্য ভারতে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে ব্যবহার কমেছে। এছাড়া অন্যান্য কিছু দেশে অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে বাংলাদেশিরা কম ভ্রমণ করেছেন। এ কারণে সেসব দেশে ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে।
বিদেশের পাশাপাশি দেশেও ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমেছে। অক্টোবরে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে এ দেশের নাগরিকরা খরচ করেন ২ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা, যা নভেম্বর মাসে কমে হয় ২ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক মাসে দেশের ভেতরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে ৭৩ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের অভ্যন্তরে মোটাদাগে ১১টি খাতে ক্রেডিট কার্ড বেশি ব্যবহৃত হয়। এসব খাতের মধ্যে রয়েছে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, খুচরা কেনাকাটা, বিভিন্ন পরিষেবার বিল প্রদান, নগদ উত্তোলন, ওষুধ ও ফার্মেসি, পোশাক কেনাকাটা, অর্থ স্থানান্তর, পরিবহণ খাতে ব্যয়, বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও পেশাদারি সেবা এবং সরকারি সেবার বিল প্রদানে। এসব খাতের মধ্যে শুধু নগদ উত্তোলনা ছাড়া নভেম্বর মাসে অন্য সব খাতে কম খরচ করেছেন ক্রেডিট কার্ডধারীরা।
নভেম্বরে দেশের মধ্যে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এর আগের মাস অক্টোবরে এখাতে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে খরচ হয়েছিল ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য খাতগুলোর মধ্যে নভেম্বরে খুচরা কেনাকাটায় ৪০৬ কোটি টাকা, বিভিন্ন পরিষেবার বিল প্রদানে ২৪৬ কোটি টাকা, নগদ উত্তোলন ১৯৬ কোটি টাকা, ওষুধ ও ফার্মেসিতে ১৬৪ কোটি টাকা, পোশাক কেনাকাটায় ১৪৮ কোটি টাকা, অর্থ স্থানান্তরে ৭৬ কোটি টাকা, পরিবহণ খাতে ব্যয় ৯৯ কোটি টাকা, বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও পেশাদারি সেবা ৭৯ কোটি টাকা এবং সরকারি সেবার বিল প্রদানে ৪৩ কোটি টাকা ক্রেডিট কার্ডে খরচ হয়েছে।
স্থানীয় কার্ডধারীদের পাশাপাশি বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকেরাও নভেম্বর মাসে ক্রেডিট কার্ডে কম খরচ করেছেন। এ দেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকরা অক্টোবরে খরচ করেন ১২৯ কোটি টাকা। নভেম্বর মাসে তারা খরচ করেছেন ২০২ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে বিদেশি নাগরিকেরা এ দেশে ক্রেডিট কার্ডে ৭৩ কোটি টাকা বা ৩৬ দশমিক ১৩ শতাংশ খরচ বেশি খরচ করেছেন।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সাবেক পরিচালক লতিফ খানের মৃত্যুতে ডিসিসিআইয়ের শোক
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক পরিচালক নূহের লতিফ খান (৪১) গত ১৪ জানুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
তার মৃত্যুতে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
নূহের লতিফ খান ২০১৮-২০ মেয়াদে ঢাকা চেম্বারের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিশিষ্ট উদ্যোক্তা নূহের লতিফ খান জুলস পাওয়ার লিমিটেড এবং টেকনাফ সোলারটেক এনার্জি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন এবং তার প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে তিনি একজন অন্যতম অগ্রদূত।
এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। টেকসই জ্বালানি এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়ন, সংস্কারের পাশাপাশি এ খাতের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দাম বেড়েছে পেঁয়াজ-তেল-মুরগির, নাগালে সবজি
এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। মাসখানেক পর ব্রয়লার ও সোনালী মুরগির দাম বেড়েছে। তেলের দাম ২-৭ টাকা বেড়েছে। চালের বাজার আগের মতো থাকলেও আলুর দাম কিছুটা কমেছে। তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি।
গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজার, হাতিরপুল, শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, ও তেজগাঁওয়ের কলমীলতা বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
খুচরা পর্যায়ে গতকাল প্রতি কেজি দেশি নতুন পেঁয়াজ ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দিন দশেক আগে এর দাম ছিল ৪০-৫০ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরে।
পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা জানান, বাজারে এখন দেশি নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। বিদেশ থেকে আমদানি করা কমেছে। অন্যদিকে সরবরাহ বেশি থাকায় সম্প্রতি পেঁয়াজের দাম কমে ৪০-৫০ টাকায় নেমেছিল। তবে এতে পেঁয়াজ চাষিরা তেমন লাভ পাচ্ছিলেন না। এ কারণে চাষিরা পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়িয়েছেন।
ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি এক মাসের বেশি সময় ধরে বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারভেদে বর্তমানে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩২০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগে এ দাম ৩০-৪০ টাকা কম ছিল।
কারওয়ান বাজারের এক মুরগি বিক্রেতা বলেন, সাধারণত মুরগির দাম কয়েক দিন পরপর ওঠানামা করে। কিন্তু এবার এক মাসের বেশি সময় ধরে এক জায়গায় দাম স্থির হয়ে আছে। তবে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম তুলনামূলক কম রয়েছে। গতকাল এক ডজন ডিম ১২৫-১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বর্তমানে আমনের ভরা মৌসুম চলছে। তবে এর মাঝেও চালের দাম বাড়তি। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, খুচরা পর্যায়ে এখন মোটা চাল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা, মাঝারি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং সরু চাল ৭০ থেকে ৭৪ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবির হিসাবে, এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালে ৩-৪ টাকা, মাঝারি চালে ২ টাকা ও সরু চালে ২-৪ টাকা বেড়েছে। তবে খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, টিসিবির হিসাবের চেয়ে বাজারে চালের দাম আরও কিছুটা বেশি।
বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তবে খুচরা দোকানগুলোতে এখনো চাহিদা অনুসারে তেল সরবরাহ করছেন না ডিলাররা। গতকাল ঢাকার চারটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ দোকানে স্বল্পসংখ্যায় এক-দুটি ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল রয়েছে। বিক্রেতারা জানান, বোতলজাত সয়াবিন তেলের এই সরবরাহ-সংকট প্রায় দুই মাস ধরে চলছে। আর টিসিবির হিসাবে, বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২-৭ টাকা বেড়েছে।
সবজির ভরা মৌসুম হওয়ায় কয়েক সপ্তাহ ধরে তুলনামূলক কমেছে সবজির দাম। তবে কিছু সবজির মৌসুম না হওয়ায় নির্দিষ্ট সেই সবজিগুলোর দাম তুলনামূলক বেশি। এর মধ্যে রয়েছে বরবটি, করলা। এগুলোই এখন বাজারের সবচেয়ে বেশি দামি সবজি। বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকায়। বাকিগুলোর দাম তুলনামূলক কম।
আজকের বাজারে প্রতি কেজি লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০, গোল বেগুন ৫০ টাকায়। এ ছাড়া ঝিঙা ৬০ টাকা কেজি, পেঁয়াজের ফুল প্রতি মুঠো ১০ টাকা, শসা ৪০ টাকা কেজি, শালগম প্রতি কেজি ২০, মূলা ২০ টাকা কেজি, টমেটো ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
আর বরবটি কেজিপ্রতি ৮০, করলা ৮০ টাকা, বিচিওয়ালা শিম ৬০ টাকা, সাধারণ শিম ৩০ টাকা, মটরশুঁটি ১০০ টাকা কেজি, ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ২০ টাকা, আলু ৩০ টাকা কেজি, পেঁপে ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা, ক্ষিরা ৪০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা এবং কাঁচা টমেটো প্রতি কেজি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দাম নিয়ে রাজধানীর মহাখালী বাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী অনি আতিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, অন্যান্য সময়ের চেয়ে বাজারে এখন সবজির দাম তুলনামূলক কম। যে কারণে বেশি করে সবজি কিনতে পারছি। তবে দুই একটি সবজির দাম এখনও বাড়তি। যদিও বিক্রেতারা বলছেন, এটার এখন মৌসুম না, সে কারণে দাম বেশি। বাকিগুলোর দাম সহনীয় পর্যায়ে আছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
পরিবার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না যুগ্ম নামে
এখন থেকে পরিবার সঞ্চয়পত্র যুগ্ম নামে কেনা যাবে না। প্রতিষ্ঠানের টাকাও এই সঞ্চয়পত্রে খাটানো যাবে না। একইসঙ্গে একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকার এই সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে সই করেছেন উপসচিব মকিমা বেগম। এ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২০১২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন বলা হয়েছে, সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের যোগ্যতা ১৮ বছর এবং তার বেশি বয়সের যেকোনো বাংলাদেশি নারী, যেকোনো বাংলাদেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী (পুরুষ ও নারী) এবং ৬৫ ও তার বেশি বয়সের বয়োজ্যেষ্ঠ যেকোনো বাংলাদেশি পুরুষ নির্ধারিত ফরমে এই সঞ্চয়পত্র কেনার আবেদন করতে পারবেন।
এতে আরও বলা হয়েছে, একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকার এই সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। এই সঞ্চয়পত্র যুগ্ম নামে কেনা যাবে না এবং প্রতিষ্ঠানের টাকাও এই সঞ্চয়পত্রে খাটানো যাবে না।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
১০ শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ সমন্বিত তদন্তের পরামর্শ গভর্নরের
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবার এবং ১০ শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অর্থপাচারে সমন্বিত তদন্ত প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত ‘মানিলন্ডারিং অপরাধ অনুসন্ধানে গঠিত যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্ত দলের কার্যক্রম বিষয়ে আলোচনা’ বিষয়ক বৈঠকে এ পরামর্শ দেন তিনি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবার এবং ১০ শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘুস, দুর্নীতি, মুদ্রা পাচার, কর ও শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ অনুসন্ধানে ১১টি তদন্ত দল গঠন করেছে সরকার।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সমন্বয়ে গঠিত দলগুলোর সঙ্গে এদিন বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিএফআইইউ’র নতুন প্রধান শাহিনুল ইসলাম, উপ-প্রধান এ কে এম এহসান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী এবং ড. কবির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, মানিলন্ডারিং অপরাধ অনুসন্ধানের জন্য ১১টি যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। দলগুলো আলাদা আলাদা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তদন্ত করবে। আগামী সপ্তাহ থেকে তদন্ত কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অফিস শুরু করবে। যাদের জন্য আলাদা স্থান বরাদ্দ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবার ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ও ট্রাস্টের বাইরে যে ১০ শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে, সেগুলো হলো- সাইফুজ্জামান চৌধুরী (আরামিট গ্রুপ), এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, নাসা, সিকদার, বসুন্ধরা, সামিট, ওরিয়ন, জেমকন ও নাবিল গ্ৰুপ। এসব গ্রুপের মালিক, স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও তদন্তের আওতায় থাকবে।
এদিন আনুষ্ঠানিক ১১টি তদন্ত কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন গভর্নর। সেখানে নিজ নিজ তদন্তের অগ্রগতি অবহিত করেছে দলগুলো। পরে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে জটিলতা দূর এবং তদন্ত প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করতে পরামর্শ দিয়েছেন গভর্নর।
তদন্ত কমিটি সম্প্রতি মন্ত্রিত্ব হারানো ব্রিটিশ নাগরিক টিউলিপ সিদ্দিকের বিষয়েও গুরুত্ব দিচ্ছে। শেখ হাসিনা পরিবারের দুর্নীতির সঙ্গেই তার দুর্নীতি, অর্থপাচার, ঘুস বাণিজ্য এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করবে তদন্ত দলটি।
দলগুলোকে বেশকিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ আইন ও বিধিমালা মেনে অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে হবে। তদন্ত দলকে অনুসন্ধান ও কার্যক্রমের তথ্যাদির গোপনীয়তা ও সংবেদনশীলতা কঠোরভাবে রক্ষা করতে হবে। প্রতিটি দলের প্রধানকে নিজ নিজ সংস্থার অনুমোদন নিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে হবে। যৌথ অনুসন্ধান দলের তদন্ত কার্যক্রম সমন্বয় করে তার অগ্রগতি ও পরবর্তী কার্যক্রম অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানাবে।
সম্প্রতি এসব বিষয় নিয়ে দুদক, সিআইডি ও কাস্টমস গোয়েন্দাকে দেওয়া বিএফআইইউ’র চিঠিতে বলা হয়, এসব গ্রুপ ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাৎ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঘুস, দুর্নীতিসহ অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাছাড়া এসব ব্যবসায়ী গ্রুপের বিরুদ্ধে কর ও শুল্ক ফাঁকি, বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অবৈধ পন্থায় বিদেশে অর্থপাচারের তথ্য রয়েছে। অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রমের হালনাগাদ প্রতিবেদন সময়-সময় সংস্থাগুলোকে বিদেশে পাচার করা সম্পদ বাংলাদেশে ফেরত আনা ও ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স ও বিএফআইইউতে সরবরাহ করতে হবে বলে চিঠিতে বলা হয়।
তদন্তের আওতায় আসা গ্রুপগুলোর বেশির ভাগের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বিএফআইইউ। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ, ঋণের ব্যবহার, অর্থের গতিপথ, তাদের ব্যবসায়িক ও অন্যান্য লেনদেন, ঋণের সুবিধাভোগীসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ (ইউএই) বিভিন্ন দেশে তাদের সম্পদের বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।