জাতীয়
৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে পুনর্নির্বাচনের সুপারিশ

জাতীয় অথবা স্থানীয় সরকার যেকোনো নির্বাচনেই ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে আবারও ভোটগ্রহণ করার সুপারিশ করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এছাড়াও সরকারের সামনে আরও একগুচ্ছ সুপারিশ রাখা হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য বিভিন্ন সুপারিশ সংবলিত ৯ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ড. বদিউল আলম মজুমদার নেতৃত্বাধীন এ কমিশন।
প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
নির্বাচন ব্যবস্থা:
(ক) নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিধান বাতিল করা।
(খ) নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করা ।
(গ) কোনো আসনে মোট ভোটারের ৪০% ভোট না পড়লে পুন:নির্বাচন করা।
(ঘ) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন বন্ধ করা, রাজনৈতিক দলগুলোকে সৎ, যোগ্য এবং ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দেওয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচনে ‘না-ভোটের’ বিধান প্রবর্তন করা। নির্বাচনে না-ভোট বিজয়ী হলে সেই নির্বাচন বাতিল করা এবং পুন:নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাতিলকৃত নির্বাচনের কোনো প্রার্থী নতুন নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারার বিধান করা।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন:
(ক) ঋণ-বিল খেলাপিদের প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা।
(খ) কোনো আদালত কর্তৃক ফেরারি আসামি হিসেবে ঘোষিত ব্যক্তিদের প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা।
(গ) বেসরকারি সংস্থার কার্যনির্বাহী পদে আসীন ব্যক্তিদের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ওই পদ থেকে তিন বছর আগে অবসর গ্রহণ সংক্রান্ত আরপিওর ধারা বাতিল করা।
(ঘ) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৬(২)(ঘ) এর অধীনে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে বিচারিক আদালতে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার শুরু থেকেই সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য করা।
(ঙ) আইসিটি আইনে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে) শাস্তি প্রাপ্তদের সংসদ নির্বাচনে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার শুরু থেকেই সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য করা।
(চ) গুরুতর মানবাধিকার (বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অমানবিক নির্যাতন, সাংবাদিকদের/মানবাধিকারকর্মী ওপর হামলা, ইত্যাদি) এবং গুরুতর দুর্নীতি, অর্থপাচারের অভিযোগে গুম কমিশন বা দুর্নীতি দমন কমিশন বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কর্তৃক অভিযুক্ত হলে তাদেরকে সংবিধানের ৬৬(২)(ছ) অনুচ্ছেদের অধীনে একটি বিশেষ আইন প্রণয়ন করে সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য করা। (সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্যতার মাপকাঠি উচ্চতর হওয়া দরকার এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা দরকার। এ ক্ষেত্রে ‘ট্রানজিশান্যার জাস্টিসের’ যুক্তিও উত্থাপন করা যেতে পারে।)
(ছ) স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পদত্যাগ না করে সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য করা।
(জ) তরুণ, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য শতকরা ১০ ভাগ মনোনয়নের সুযোগ তৈরির বিধান করা।
(ঝ) স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ১% শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দেওয়ার বিধানের পরিবর্তে ৫০০ ভোটারের সম্মতির বিধান করা এবং এ ক্ষেত্রে একক কিংবা যৌথ হলফনামার মাধ্যমে ভোটারদের সম্মতি জ্ঞাপনের বিধান করা।
(ঞ) একাধিক আসনে কোনো ব্যক্তির প্রার্থীর হওয়ার বিধান বাতিল করা।
(ট) হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের প্রেক্ষাপটে আপিল প্রক্রিয়ায় অনুচ্ছেদ ১২৫(গ) বহাল রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা। কোনো আদালত, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হইয়াছে এরূপ কোনো নির্বাচনের বিষয়ে, নির্বাচন কমিশনকে যুক্তিসংগত নোটিশ ও শুনানির সুযোগ প্রদান না করিয়া, অন্তর্বর্তী বা অন্য কোনোরূপে কোনো আদেশ বা নির্দেশ প্রদান করিবেন না ।
(ঠ) হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কিংবা তথ্য গোপনের কারণে আদালত কর্তৃক কোনো নির্বাচিত ব্যক্তির নির্বাচন বাতিল করা হলে ভবিষ্যতে তাকে নির্বাচনে অযোগ্য করার বিধান করা।
মনোনয়নপত্র:
(ক) বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আইনি হেফাজতে থাকা ব্যতীত সব প্রার্থীর সশরীরে মনোয়নপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি করা ।
(খ) নির্বাচনী তফসিলে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় বৃদ্ধি করা, যাতে হলফনামা যাচাই-বাছাই করা ও আপিল নিষ্পত্তি জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারণার সময় কমানো, যাতে প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় সাশ্রয় হয়।
(গ) প্রার্থিতা চূড়ান্তকরণের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করা। এ লক্ষ্যে আদালতের হস্তক্ষেপের বিষয়টি শুধু ‘কোরাম নন জুডিস’ ও ‘ম্যালিস ইন ল’-এর ক্ষেত্রে সীমিত করা।
(ঘ) মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ৫ বছরের আয়কর রিটার্নের কপি জমা দেওয়ার বিধান করা।
(ঙ) নির্বাচনী তফসিলে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় বৃদ্ধি করা, যাতে হলফনামা যাচাই-বাছাই করা ও আপিল নিষ্পত্তি জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারণার সময় কমানো, যাতে প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় সাশ্রয় হয়।
২.৩ হলফনামা:
(ক) প্রার্থী কর্তৃক মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রত্যেক দল তার প্রার্থীদের জন্য প্রত্যয়নপত্রের পরিবর্তে দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা অনুরূপ পদধারী ব্যক্তি কর্তৃক হলফনামা জমা দেয়ার বিধান করা, যাতে মনোনীত প্রার্থীর নামের পাশাপাশি মনোনয়ন বাণিজ্য না হওয়ার ও দলীয় প্যানেল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ থাকে।
(খ) পরবর্তী নির্বাচনের আগে যেকোনো সময় নির্বাচন কমিশন নির্বাচিত ব্যক্তির হলফনামা যাচাই-বাছাই করতে এবং মিথ্যা তথ্য বা গোপন তথ্য পেলে তার নির্বাচন বাতিল করা।
নির্বাচনী ব্যয়:
(ক) সংসদীয় আসনের ভোটার প্রতি ১০ টাকা হিসেবে নির্বাচনী ব্যয় নির্ধারণের বিধান করা।
(খ) সব নির্বাচনী ব্যয় ব্যাংকিং ব্যবস্থা বা আর্থিক প্রযুক্তির (যেমন, বিকাশ, রকেট) মাধ্যমে পরিচালনা করা।
(গ) নির্বাচনী আসনভিত্তিক নির্বাচনী ব্যয় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবিড়ভাবে নজরদারিত্ব করা।
(ঘ) প্রার্থী এবং দলের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাবের রিটার্নের নিরীক্ষা এবং হিসাবে অসঙ্গতির জন্য শাস্তির বিধান করা।
২.৬ নির্বাচনী অভিযোগ ব্যবস্থাপনা:
(ক) বিদ্যমান ‘নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি’কে অনুসন্ধান বা তদন্ত করার ক্ষমতা প্রদানের পাশাপাশি বিচার-নিষ্পত্তির ক্ষমতা প্রদান করে’ ‘নির্বাচনী অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটি নামে একটি পূর্ণাঙ্গ বিচারিক সত্তা/বডি গঠন করা।’
(খ) নির্বাচনী অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটির আওতায় প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে সদস্য করা। এর পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত কমিটিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০ ধারা মতে বিচারার্থে অপরাধ আমলে নেওয়ার এবং সংক্ষিপ্ত বিচার পদ্ধতিতে অপরাধের বিচার করার ক্ষমতা অর্পণ করা।
(গ) সংসদ নির্বাচন চলাকালে নির্বাচনী অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটিগুলোর কার্যাবলি তদারকি করার নিমিত্তে নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরে একটি উচ্চ পর্যায়ের ‘নির্বাচনী অনুসন্ধান ও বিচারিক কার্যক্রম তদারকি কমিটি’ একজন নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে গঠন করা।
(ঘ) কার্যকালীন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার স্বার্থে অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটিগুলো প্রশাসনিকভাবে নির্বাচনী অনুসন্ধান ও বিচারিক কার্যক্রম তদারকি কমিটির আওতায় আনা। বিচারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এগুলোকে স্বাধীন করা।
(ঙ) হাইকোর্ট বিভাগে নির্বাচনি মামলার চাপ কমাতে এবং শুধু নির্বাচনি বিরোধ সংশ্লিষ্ট মামলা (ইলেকশন পিটিশন) দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য জেলা পর্যায়ে ‘সংসদীয় নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল’ স্থাপন এবং ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিলের সুযোগ রাখা।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার কাছে নিজেদের সংস্কারের সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে আরও তিনটি কমিশন। এগুলো হলো সংবিধান, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন।
সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই আলোচনার মাধ্যমে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হবে। ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই আলোচনা হবে বলে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে।
কাফি

জাতীয়
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের পাশে ১১ দেশ

রোহিঙ্গা সংকট জটিল হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমারের পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের চলমান মানবিক সংকটের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। বিশেষ করে আগামী মাসে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এক সঙ্গে কাজ করবে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আট বছরপূর্তিতে পশ্চিমা বিশ্বের ১১টি দেশ বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে। অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, যুক্তরাজ্য, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও ফিনল্যান্ড এক যৌথ বিবৃতিতে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আজ সোমবার সকালে ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস তাদের এক্স হ্যান্ডেল এবং ফেসবুক পেইজে যৌথ বিবৃতিটি দিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের দৃঢ়তা ও সহনশীলতাকে সাধুবাদ জানাই, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কঠিন বাস্তবতা ও বাস্তুচ্যুতি সহ্য করে চলেছেন। বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যের বর্তমান অবনতিশীল নিরাপত্তা ও মানবিক পরিস্থিতির মধ্যেও দৃঢ়তা দেখিয়ে চলেছেন তাঁরা।’
১১টি দেশের বিবৃতিতে বল হয়েছে, ‘আমরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং সাধারণ মানুষের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, যাঁরা রোহিঙ্গাদের, বিশেষ করে নতুন করে আসা লোকজনদেরও আশ্রয় ও নিরাপত্তা দিয়ে চলেছেন এবং জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।’
যৌথ বিবৃতিতে ১১ দেশ বলেছে, ‘এই শর্ত পূরণ করতে হলে বাস্তুচ্যুতির মূল কারণগুলোর সমাধান প্রয়োজন, যার জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল মিয়ানমার আবশ্যক। তাই আমরা স্বীকার করছি, এখনই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তাই, সব পক্ষের প্রতি একটি প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য জরুরিভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।’
বিবৃতিতে ১১টি দেশ বলেছে, ‘আমরা মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংঘটিত সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর তীব্র নিন্দা জানাই। সহিংসতা বন্ধ এবং মানবিক সহায়তা অবাধে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টির জন্য আবারও আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা অন্যায়ভাবে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিও পুনর্ব্যক্ত করছি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
যৌথ বিবৃতি দেওয়া দেশগুলো বলেছে, ‘আমরা আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আরও স্থায়ী সমাধানের পক্ষে। বিশেষ করে যখন রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মানবিক সহায়তার তহবিল কমে আসছে, তেমন পরিস্থিতিতে তাদের ভবিষ্যৎ প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও বলছি। আমরা কক্সবাজারের স্থানীয় বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীকেও সমর্থন দিয়ে যাব, যারা উদারভাবে শরণার্থীদের আতিথেয়তা জানাচ্ছেন।’
বিবৃতিতে দেশগুলো বলেছে, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের অর্থবহ অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার গুরুত্ব তুলে ধরছি, যাতে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে ক্ষমতাবান হতে পারে এবং বাংলাদেশে অবস্থানকালে নিরাপদ, সম্মানজনক ও গঠনমূলক জীবন যাপন করতে পারে। আট বছর পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে এখনো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও বাংলাদেশের পাশে অটলভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা এই সংকটের মূল কারণগুলো সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
জাতীয়
রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের একার পক্ষে সমাধান অসম্ভব: প্রধান উপদেষ্টা

রোহিঙ্গা সংকটের দায় শুধু বাংলাদেশের নয়, এটা বিশ্বমহলের বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু এ সংকটের দীর্ঘস্থায়ী সমাধান কেবল বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত উদ্যোগ ও কার্যকর চাপের মাধ্যমেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব।
সোমবার (২৫ আগস্ট) কক্সবাজারের ইনানীতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সংলাপের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক নয়, তাদের স্বদেশ মিয়ানমার। আট বছর ধরে বাংলাদেশ তাদের মানবিক সহায়তা দিচ্ছে, কিন্তু সমস্যার মূলোৎপাটন হচ্ছে না। এই অবস্থায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে, নতুবা এ অঞ্চল দীর্ঘমেয়াদে অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে।
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন, খাদ্য সহায়তা জোরদার করা এবং রোহিঙ্গাদের মনোবল ধরে রাখতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। সেখান থেকে তিনি সরাসরি সম্মেলনস্থল ‘হোটেল বে ওয়াচে’ যান এবং মঞ্চে ওঠেন।
‘টেক অ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শীর্ষক তিন দিনের সম্মেলন রোববার (২৪ আগস্ট) শুরু হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং রোহিঙ্গা ইস্যু বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের দপ্তর যৌথভাবে এ আয়োজন করেছে। এতে অংশ নিচ্ছেন জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে সক্রিয় সব স্টেকহোল্ডারসহ অন্তত ৪০টি দেশের প্রতিনিধি।
সম্মেলনের প্রথম দিনে রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল সরাসরি বিদেশি অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করে নিজেদের অভিজ্ঞতা, নির্যাতনের কাহিনি ও প্রত্যাবাসনের আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরেন।
এসময় একজন রোহিঙ্গা তরুণ বলেন, আমরা বাংলাদেশে আশ্রিত, কিন্তু এখানে আমাদের ভবিষ্যৎ নেই। মিয়ানমারকে আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
জাতিসংঘের এক প্রতিনিধি সভায় বলেন, রোহিঙ্গা সংকট এখন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়া ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্যই এ সমস্যার সমাধান জরুরি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি জানান, তাদের পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে। তবে সমাধানের জন্য মিয়ানমারের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়াতে হবে।
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, তিন দিনের এই সম্মেলন থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য কার্যকর রূপরেখা প্রণয়নের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ফান্ড গঠন, গণহত্যার বিচার, খাদ্য ও মানবিক সহায়তা এবং রোহিঙ্গাদের মানসিক শক্তি ও মনোবল বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেও জোর দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) শেষ দিনে বিদেশি অতিথিরা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। সেখানে তারা সরাসরি বাস্তব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে বর্তমান দুঃসহ জীবনের কথা শুনবেন।
কূটনৈতিক মহল মনে করছে, উচ্চপর্যায়ের এই সম্মেলন থেকে নতুন কোনো আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার বা উদ্যোগ ঘোষিত হলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা নিরসনে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
জাতীয়
সাত জেলায় নতুন পুলিশ সুপার, ৬ কর্মকর্তাকে বদলি

দেশের সাত জেলায় নতুন পুলিশ সুপার নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এ ছাড়া একই প্রজ্ঞাপনে আরও ছয় কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
সোমবার (২৫ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে সই করেছেন উপসচিব মো. মাহবুবুর রহমান।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বরগুনা, বাগেরহাট, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মেহেরপুর, নড়াইল ও নাটোরে নতুন পুলিশ সুপার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, জনস্বার্থে এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে।
জাতীয়
৬ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ

দেশের ৬ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে সরকার। জেলাগুলো হলো- পটুয়াখালী, কুষ্টিয়া, কুড়িগ্রাম, মেহেরপুর, নেত্রকোনা ও খুলনা। সোমবার (২৫ আগস্ট) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এর মধ্যে পটুয়াখালীর ডিসি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনকে কুষ্টিয়া, কুষ্টিয়ার ডিসি মো. তৌফিকুর রহমানকে খুলনা এবং মেহেরপুরের ডিসি সিফাত মেহনাজকে কুড়িগ্রামের ডিসি হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী পটুয়াখালী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল ছালাম মেহেরপুর এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার (উপসচিব) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান নেত্রকোনার ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
সরকারের উপসচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। জেলা পর্যায়ে ডিসি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন।
ডিসি জেলার সাধারণ প্রশাসনিক কার্যক্রম, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং কালেক্টর হিসেবে ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়গুলো দেখেন। এছাড়া নির্বাচিত সরকারের বিশেষ কর্মসূচি এবং চলমান সব উন্নয়নমূলক কাজে জেলা প্রশাসক তদারকি করেন।
জাতীয়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসায় ভাসছে বাংলাদেশ সরকার

মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেইসাথে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যাওয়া এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোরও প্রশংসা করেছে ওয়াশিংটন।
স্থানীয় সময় রোববার (২৪ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া এক প্রেস বিবৃতিতে একথা বলেন দপ্তরের প্রিন্সিপাল ডেপুটি স্পোকসপারসন টমাস “টমি” পিগট।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়েছে, যার মধ্যে সহিংসতা ও বাস্তুচ্যুতির শিকার রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীও রয়েছে। পাশাপাশি, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে (যুক্তরাষ্ট্র) ধন্যবাদ জানিয়েছে এবং এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোরও প্রশংসা করেছে, যারা মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়। এর আগে থেকেই বাংলাদেশে ছিল চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা।
এছাড়া প্রতি বছর নতুন করে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিচ্ছে ক্যাম্পগুলোতে। সম্প্রতি নতুন করে আসা হাজার হাজার রোহিঙ্গাসহ বর্তমানে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন বাংলাদেশে।