অর্থনীতি
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো ৮ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা
নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারির ১১ দিনে ৭৩ কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ৮ হাজার ৯৮৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রতিদিন আসছে ৮১৬ কোটি টাকার বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জানুয়ারি মাসের প্রথম ১১ দিনে এসেছে ৭৩ কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স। এভাবে রেমিট্যান্স আসার গতি অব্যাহত থাকলে চলতি মাসেও দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে রেমিট্যান্স। আলোচিত সময়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ২০ কোটি ১৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ২ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৫০ কোটি ৭৩ লাখ ৩০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২৫ লাখ ডলারের বেশি।
এর আগে সদ্যবিদায়ী ডিসেম্বর মাসে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার বা ২৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকার বেশি।
একক মাস হিসাবে আগে কখনই এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। এর আগে করোনাকালীন ২০২০ সালের জুলাই ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এবার সেই রেকর্ড ভাঙলো ২০২৪ সালের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি। গত বছরের ডিসেম্বরে এসেছিল ১৯৯ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুলাই মাস বাদে বাকি ১১ মাসই দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বরে) এক হাজার ৩৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার বেশি এসেছে। গত অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৮০ কোটি ডলার।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৪১ শতাংশ
বিদায়ী বছরের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি আগের বছরের চেয়ে ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। দেশটিতে ৬১৩ দশমিক ৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ।
সম্প্রতি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা)।
অটেক্সার তথ্য মতে, গত বছরের শুরুতেই রপ্তানিতে ধাক্কা খায় বাংলাদেশের পোশাক খাত। ওই বছরের জানুয়ারিতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ। এর পর মার্চে প্রবৃদ্ধি কমে আরও ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে ৬১৩ দশমিক ৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৩৩ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন ডলার।
জানা যায়, গত বছরের নভেম্বরে পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল বছরের অন্য যেকোনো মাসের চেয়ে বেশি। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মোট পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির পরও ২০২৩ সালের বেশিরভাগ মাসের তুলনায়ই তা কম ছিল। ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির ব্যবধান ছিল সামান্য, ০ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
তথ্য অনুযায়ী, বছরের শেষ প্রান্তিকে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে গতি ফেরে। সেপ্টেম্বরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ ও অক্টোবরে ছিল ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
তবে নভেম্বরে রেকর্ড পরিমাণ প্রবৃদ্ধির পরও ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ০ দশমিক ৪৪ শতাংশ কম ছিল। যেখানে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৬ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেখানে গত বছরের একই সময়ে এটি ছিল ৬ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এ বিষয়ে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল জানান, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিতে উল্লেখজনক বৃদ্ধি দেখেছি। তবে এ বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত যে ২০২৩ সালের নভেম্বরে আমদানির পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কম ছিল।
সূত্র বলছে, একই সময়ে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের পোশাক খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পোশাক রপ্তানি ১৩ দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়েছে। ভারত স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে আরও বেশি পোশাক রপ্তানি করতে পেরেছে।
অটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম ১১ মাসে বাংলাদেশ ২ দশমিক ১৭ বিলিয়ন বর্গমিটার সমপরিমাণ পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে। সে হিসাবে আগের বছরের তুলনায় এটি ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে একই সময়ে ভারত রপ্তানি করেছে ১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন বর্গমিটার সমপরিমাণ পোশাক, যার মূল্য ৪ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের একই সময়ে এটি ছিল ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন বর্গমিটার, যার মূল্য ছিল ৪ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার।
ভিয়েতনাম থেকেও যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরে দেশটি পোশাক রপ্তানি থেকে ১৩ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ১৩ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। দেশটির রপ্তানির পরিমাণ ৯ দশমিক ০২ শতাংশ বেড়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পোশাক রপ্তানি থেকে আয় ০ দশমিক ৩০ শতাংশ কমেছে। সার্বিকভাবে গত বছরের প্রথম ১১ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির পরিমাণ ছিল ৭২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ০ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী: ডিসিসিআই সভাপতি
শুল্ক, করহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এবং শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) মতিঝিল ডিসিসিআই কার্যালয়ে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ‘দেশের সমসাময়িক অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি এবং ২০২৫ সালে ডিসিসিআইর বর্ষব্যাপী কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডিসিসিআই সভাপতি অর্থনীতির ১১টি বিষয়ের ওপর বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ২০২৫ সালে ডিসিসিআই’র কর্মপরিকল্পনার ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় অর্থনীতিতে এর প্রভাব, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি খরচ বৃদ্ধি, উচ্চ জ্বালানি ব্যয় ও নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ঋণ প্রাপ্তিতে বাধা ও সুদের উচ্চ হার, উচ্চ শুল্কহার, ভ্যাট হার বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে দেশের বেসরকারিখাত এমনিতেই বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় অর্থনীতির বিদ্যমান চ্যালেঞ্জের মধ্যে শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধিসহ বেশকিছু পণ্যের করহার বৃদ্ধি এবং শিল্পে গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর উদ্যোগ আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ সামগ্রিক অর্থনীতর জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি বলেন, শিল্প ও ক্যাপটিভের প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম সম্প্রতি ৩০ টাকা ও ৩১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে যথাক্রমে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা বাড়িয়ে দ্বিগুণের বেশি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রায় ৪৩টি পণ্যের ওপর ভ্যাট ও শুল্ককর দ্বিগুণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমান সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম বাহন মোটরসাইকেল, অতি প্রয়োজনীয় রেফ্রিজারেটর, কম্প্রেসার শিল্পের আয়কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর।
তিনি বলেন, আমাদের শিল্পে কী এমন ম্যাজিক আছে যেখানে ঘন ঘন জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়, প্রস্তাব করা হয়। গত তিন বছরে গ্যাসের দাম ৩০০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। প্রস্তাবিত দর কার্যকর হলে তা ৪০০ শতাংশ বেড়ে যাবে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব এবং বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভ্যাট-করহার বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। উৎপাদন ব্যাহত করবে, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস করবে। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে করে বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ উত্তরণে সরকারের পাশাপাশি স্টেকহোল্ডারদের সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি। ব্যবসা পরিচালন ব্যয় ও মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ কমাতে এ মুহূর্তে ভ্যাট এবং করহার বাড়ানোর উদ্যোগটি পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাই।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, নতুন বছরের নতুন বোর্ডের প্রথম সভা আমাদের। আমরা পোশাকখাতসহ বিভিন্ন রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য নতুন নতুন বাজার তৈরিতে কাজ করতে চাই। পোশাকের বাজার লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার সঙ্গে কাজ করবো, যেখানে আরও যাবে পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া, কৃষি, খেলনা, ইলেকট্রিক পণ্য। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অতি ক্ষুদ্রশিল্প নিয়ে কাজ করতে চাই। আমাদের বড় বড় শিল্পে যেখানে খেলাপি বেশি, সেখানে সিএসএমইএ শিল্পে খেলাপি নেই। তাদের জন্য কিছু করতে চাই।
বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে তিনি বলেন, কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ দেশে বিনিয়োগ করতে এলে তাকে অনেক দপ্তর ও শাখার অনুমোদন নিতে হয়। দেশীয় কোনো উদ্যোক্তা উদ্যোগ তৈরিতেও ৩১টি কাগজ সাবমিট করতে হয়। আমরা চাই এটা যেন সহজ হয়, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করবো। এটা করতে না পারলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না, আবার দেশীয় বিনিয়োগও তৈরি হবে না।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের রাজনীতি ও অর্থনীতি আলাদা করে রাখতে হবে। রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতি না মেলানোর জন্য সবার সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাই।
তিনি জানান, এ বছর ঢাকা চেম্বার সুদের হার কমানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সুশাসন প্রতিষ্ঠার কারণে অর্থ পাচার বন্ধ হয়েছে: গভর্নর
সুশাসন প্রতিষ্ঠার কারণে দেশ থেকে অর্থ পাচার বন্ধ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মুনসুর।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেল ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।
গভর্নর বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ায় দেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স প্রবাহ স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এ সময় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আনতে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ায় বছরে সরকারের ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে বলেও জানান ড. আহসান এইচ মুনসুর।
প্রবাসীদের সরাসরি ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, সৌদি আরবকে টপকে রেমিট্যান্স পাঠানোয় শীর্ষে উঠেছে দুবাই। এটা ভালো লক্ষণ নয়। কারণ, সৌদি আরব থেকে অর্থ প্রথমে দুবাই আসছে। সেখান থেকে বাংলাদেশে আসছে। দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান এই সুযোগে মুদ্রা বিনিময় হার ম্যানুপুলেট করার চেষ্টা করছে।
উল্লেখ্য, সদ্য বিদায়ী ডিসেম্বর মাসে দেশে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার। একক মাস হিসাবে আগে কখনোই এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি দেশে। এ ছাড়া সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সালে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ৬৮৮ কোটি ৯১ লাখ মার্কিন ডলার, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৪৯৭ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ২২.৬৮ শতাংশ বেশি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
জুন পর্যন্ত স্থিতি: সরকারের ঋণ ১৮ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত সরকারের দেশি-বিদেশি মোট ঋণের স্থিতি ছিল ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। গত কয়েক বছর এ ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। তাই গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ট্রেজারি ও ঋণব্যবস্থাপনা শাখা থেকে সরকারি ঋণের এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুন শেষে দেশি-বিদেশি ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশীয় উৎস থেকে নেওয়া হয়েছে ১০ লাখ ২০ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। বিদেশি উৎস থেকে নেওয়া হয় ৮ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। শুধু ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি যখন সরকারের দায়িত্ব নেয়, তখন দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা।
বিপুল ঋণ নেওয়ার কারণে আসল ও সুদ পরিশোধের চাপ বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সুদের হারও অনেক বেড়েছে। দুই বছর আগে সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার ছিল ১ থেকে ৬ শতাংশ। বর্তমানে গড় সুদহার ১২ শতাংশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যার মধ্যে দেশি ঋণের সুদই ৯৩ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ৪২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। যা পরিচালন ব্যয়ের অর্ধেকেরও বেশি। আর সরকারের মোট ব্যয়ের ৪৪ দশমিক ০৪ শতাংশ। এ সময়ে পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় ছিল ৮২ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। উন্নয়নসহ মোট ব্যয় ছিল ৯৬ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা।
সুদ পরিশোধের এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে শুধু সুদ পরিশোধেই প্রয়োজন হবে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আগের অর্থবছর চেয়ে সরকারের ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় বাড়ে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ফলে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঋণের সুদ পরিশোধ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়, যা সরকারের মোট ব্যয়ের ২৮ শতাংশ। অর্থাৎ পরিচালন খাতে সর্বোচ্চ ব্যয় হয়েছে সরকারের নেওয়া দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আগের সরকারের যথাযথ ঋণ ব্যবস্থাপনা না থাকায় দেশি উৎস থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নেওয়া হয়েছে। যদিও স্বল্প সুদের বিদেশি ঋণ নেওয়া যৌক্তিক মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দাম বাড়ছে সব ধরনের পোশাকের
টেইলারিং শপ ও টেইলার্সে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বাড়িয়েছে সরকার। যার ফলে সব ধরণের পোশাকের দাম বাড়ছে। পোশাক বানাতে দরজিকে দিতে হবে বাড়তি টাকা। সেই সঙ্গে ব্র্যান্ড ও নন–ব্র্যান্ড সব ধরনের তৈরি পোশাকের দোকানেও ভ্যাট বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। এসব পণ্যের মধ্যে পোশাকও রয়েছে।
এদিন এ-সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। অধ্যাদেশ দুটি হলো, ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ এবং ‘দ্য এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’। এই দুটি অধ্যাদেশ জারির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ ওই দিনেই এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। ফলে এই অধ্যাদেশের পরিবর্তনগুলো সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে গেছে।
জানা গেছে, এতদিন টেইলারিং শপ ও টেইলার্সে থাকা ১০ শতাংশ ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে টেইলারিং শপ ও টেইলার্সে ২ হাজার টাকার একটি পোশাক বানাতে ৩০০ টাকা ভ্যাট দিতে হবে। এতদিন সেটি ছিল ২০০ টাকা। খরচ বেড়েছে ১০০ টাকা।
অন্যদিকে, ব্র্যান্ড ও নন–ব্র্যান্ড সব ধরনের তৈরি পোশাকের দোকানেও ভ্যাট বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। আগে এসব দোকানে ভ্যাট ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। এখন সেটি ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। তার মানে পোশাক কেনা কিংবা বানানো উভয় ক্ষেত্রেই ভোক্তার খরচ বাড়ল।
কাফি