অর্থনীতি
জুন পর্যন্ত স্থিতি: সরকারের ঋণ ১৮ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত সরকারের দেশি-বিদেশি মোট ঋণের স্থিতি ছিল ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। গত কয়েক বছর এ ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। তাই গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ট্রেজারি ও ঋণব্যবস্থাপনা শাখা থেকে সরকারি ঋণের এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুন শেষে দেশি-বিদেশি ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশীয় উৎস থেকে নেওয়া হয়েছে ১০ লাখ ২০ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। বিদেশি উৎস থেকে নেওয়া হয় ৮ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। শুধু ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি যখন সরকারের দায়িত্ব নেয়, তখন দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা।
বিপুল ঋণ নেওয়ার কারণে আসল ও সুদ পরিশোধের চাপ বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সুদের হারও অনেক বেড়েছে। দুই বছর আগে সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার ছিল ১ থেকে ৬ শতাংশ। বর্তমানে গড় সুদহার ১২ শতাংশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যার মধ্যে দেশি ঋণের সুদই ৯৩ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ৪২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। যা পরিচালন ব্যয়ের অর্ধেকেরও বেশি। আর সরকারের মোট ব্যয়ের ৪৪ দশমিক ০৪ শতাংশ। এ সময়ে পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় ছিল ৮২ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। উন্নয়নসহ মোট ব্যয় ছিল ৯৬ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা।
সুদ পরিশোধের এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে শুধু সুদ পরিশোধেই প্রয়োজন হবে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আগের অর্থবছর চেয়ে সরকারের ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় বাড়ে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ফলে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঋণের সুদ পরিশোধ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়, যা সরকারের মোট ব্যয়ের ২৮ শতাংশ। অর্থাৎ পরিচালন খাতে সর্বোচ্চ ব্যয় হয়েছে সরকারের নেওয়া দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আগের সরকারের যথাযথ ঋণ ব্যবস্থাপনা না থাকায় দেশি উৎস থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নেওয়া হয়েছে। যদিও স্বল্প সুদের বিদেশি ঋণ নেওয়া যৌক্তিক মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী: ডিসিসিআই সভাপতি
শুল্ক, করহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এবং শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) মতিঝিল ডিসিসিআই কার্যালয়ে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ‘দেশের সমসাময়িক অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি এবং ২০২৫ সালে ডিসিসিআইর বর্ষব্যাপী কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডিসিসিআই সভাপতি অর্থনীতির ১১টি বিষয়ের ওপর বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ২০২৫ সালে ডিসিসিআই’র কর্মপরিকল্পনার ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় অর্থনীতিতে এর প্রভাব, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি খরচ বৃদ্ধি, উচ্চ জ্বালানি ব্যয় ও নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ঋণ প্রাপ্তিতে বাধা ও সুদের উচ্চ হার, উচ্চ শুল্কহার, ভ্যাট হার বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে দেশের বেসরকারিখাত এমনিতেই বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় অর্থনীতির বিদ্যমান চ্যালেঞ্জের মধ্যে শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধিসহ বেশকিছু পণ্যের করহার বৃদ্ধি এবং শিল্পে গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর উদ্যোগ আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ সামগ্রিক অর্থনীতর জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি বলেন, শিল্প ও ক্যাপটিভের প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম সম্প্রতি ৩০ টাকা ও ৩১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে যথাক্রমে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা বাড়িয়ে দ্বিগুণের বেশি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রায় ৪৩টি পণ্যের ওপর ভ্যাট ও শুল্ককর দ্বিগুণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমান সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম বাহন মোটরসাইকেল, অতি প্রয়োজনীয় রেফ্রিজারেটর, কম্প্রেসার শিল্পের আয়কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর।
তিনি বলেন, আমাদের শিল্পে কী এমন ম্যাজিক আছে যেখানে ঘন ঘন জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়, প্রস্তাব করা হয়। গত তিন বছরে গ্যাসের দাম ৩০০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। প্রস্তাবিত দর কার্যকর হলে তা ৪০০ শতাংশ বেড়ে যাবে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব এবং বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভ্যাট-করহার বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। উৎপাদন ব্যাহত করবে, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস করবে। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে করে বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ উত্তরণে সরকারের পাশাপাশি স্টেকহোল্ডারদের সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি। ব্যবসা পরিচালন ব্যয় ও মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ কমাতে এ মুহূর্তে ভ্যাট এবং করহার বাড়ানোর উদ্যোগটি পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাই।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, নতুন বছরের নতুন বোর্ডের প্রথম সভা আমাদের। আমরা পোশাকখাতসহ বিভিন্ন রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য নতুন নতুন বাজার তৈরিতে কাজ করতে চাই। পোশাকের বাজার লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার সঙ্গে কাজ করবো, যেখানে আরও যাবে পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া, কৃষি, খেলনা, ইলেকট্রিক পণ্য। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অতি ক্ষুদ্রশিল্প নিয়ে কাজ করতে চাই। আমাদের বড় বড় শিল্পে যেখানে খেলাপি বেশি, সেখানে সিএসএমইএ শিল্পে খেলাপি নেই। তাদের জন্য কিছু করতে চাই।
বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে তিনি বলেন, কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ দেশে বিনিয়োগ করতে এলে তাকে অনেক দপ্তর ও শাখার অনুমোদন নিতে হয়। দেশীয় কোনো উদ্যোক্তা উদ্যোগ তৈরিতেও ৩১টি কাগজ সাবমিট করতে হয়। আমরা চাই এটা যেন সহজ হয়, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করবো। এটা করতে না পারলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না, আবার দেশীয় বিনিয়োগও তৈরি হবে না।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের রাজনীতি ও অর্থনীতি আলাদা করে রাখতে হবে। রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতি না মেলানোর জন্য সবার সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাই।
তিনি জানান, এ বছর ঢাকা চেম্বার সুদের হার কমানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সুশাসন প্রতিষ্ঠার কারণে অর্থ পাচার বন্ধ হয়েছে: গভর্নর
সুশাসন প্রতিষ্ঠার কারণে দেশ থেকে অর্থ পাচার বন্ধ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মুনসুর।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেল ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।
গভর্নর বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ায় দেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স প্রবাহ স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এ সময় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আনতে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ায় বছরে সরকারের ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে বলেও জানান ড. আহসান এইচ মুনসুর।
প্রবাসীদের সরাসরি ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, সৌদি আরবকে টপকে রেমিট্যান্স পাঠানোয় শীর্ষে উঠেছে দুবাই। এটা ভালো লক্ষণ নয়। কারণ, সৌদি আরব থেকে অর্থ প্রথমে দুবাই আসছে। সেখান থেকে বাংলাদেশে আসছে। দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান এই সুযোগে মুদ্রা বিনিময় হার ম্যানুপুলেট করার চেষ্টা করছে।
উল্লেখ্য, সদ্য বিদায়ী ডিসেম্বর মাসে দেশে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার। একক মাস হিসাবে আগে কখনোই এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি দেশে। এ ছাড়া সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সালে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ৬৮৮ কোটি ৯১ লাখ মার্কিন ডলার, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৪৯৭ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ২২.৬৮ শতাংশ বেশি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দাম বাড়ছে সব ধরনের পোশাকের
টেইলারিং শপ ও টেইলার্সে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বাড়িয়েছে সরকার। যার ফলে সব ধরণের পোশাকের দাম বাড়ছে। পোশাক বানাতে দরজিকে দিতে হবে বাড়তি টাকা। সেই সঙ্গে ব্র্যান্ড ও নন–ব্র্যান্ড সব ধরনের তৈরি পোশাকের দোকানেও ভ্যাট বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। এসব পণ্যের মধ্যে পোশাকও রয়েছে।
এদিন এ-সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। অধ্যাদেশ দুটি হলো, ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ এবং ‘দ্য এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’। এই দুটি অধ্যাদেশ জারির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ ওই দিনেই এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। ফলে এই অধ্যাদেশের পরিবর্তনগুলো সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে গেছে।
জানা গেছে, এতদিন টেইলারিং শপ ও টেইলার্সে থাকা ১০ শতাংশ ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে টেইলারিং শপ ও টেইলার্সে ২ হাজার টাকার একটি পোশাক বানাতে ৩০০ টাকা ভ্যাট দিতে হবে। এতদিন সেটি ছিল ২০০ টাকা। খরচ বেড়েছে ১০০ টাকা।
অন্যদিকে, ব্র্যান্ড ও নন–ব্র্যান্ড সব ধরনের তৈরি পোশাকের দোকানেও ভ্যাট বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। আগে এসব দোকানে ভ্যাট ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। এখন সেটি ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। তার মানে পোশাক কেনা কিংবা বানানো উভয় ক্ষেত্রেই ভোক্তার খরচ বাড়ল।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ছুটির দিনে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বাণিজ্য মেলা
সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় প্রাণ ফিরছে বাণিজ্য মেলায়। সকাল থেকেই দর্শনার্থীদের ঢল শুরু হয়। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে আবার কেউ প্রয়োজনীয় কেনাকাটার উদ্দেশ্যে মেলায় এসেছেন।
মিরপুর থেকে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বাণিজ্য মেলায় এসেছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অন্যান্য দিন মেলায় আসা হয় না, অফিস থাকে। তাই পাঁচ বছরের মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে আজ ছুটির দিনে এসেছি। সাধ্য অনুযায়ী কেনাকাটা ও খাওয়া-দাওয়া করব। বাচ্চাটাকে নাগরদোলাসহ বিভিন্ন রাইডে চড়াবো। সবশেষে আল্লাহ চাইলে সন্ধ্যায় নিজের মোটরসাইকেলে করে বাসায় ফিরবো।
বেসরকারি একটি ব্যাংকে চাকরি করেন মনজুরুল করিম। তিনি এসেছেন মা ও বোনের জন্য শীতের গরম কাপড়, বিশেষ করে কাশ্মীরি শাল কেনার জন্য।
তিনি বলেন, সারা সপ্তাহে অফিসের কাজে দম ফেলার সুযোগ থাকে না। এদিকে মা-বোনের জন্য শালও কেনা দরকার। তাই ভাবলাম আজ যেহেতু শুক্রবার, সাপ্তাহিক ছুটির দিন- তাই আজ যাওয়াটাই ভালো হবে। তাই এলাম। তবে বেশ কয়েকটি দোকানঘুরে যা মনে হলো, দামটা একটু চড়া। আরেকটু কম হলে মানুষ সহজেই কিনতে পারবে।
দেখা গেছে, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ছে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড়। স্টলে-স্টলে চলছে হরেক রকমের অফার। কর্মীরা হাঁক-ডাকে তুলে ধরছেন নিজেদের পণ্যের কথা।
কথা হলো তেমনই একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ননস্টিক ফ্রাইপ্যান, ওভেনসহ নানা জিনিস বিক্রি করছি। অফারও আছে। কিন্তু সেই অর্থে ক্রেতা নেই। অনেকে আসছেন, ঘুরে দেখছেন, দরদাম করছেন, আবার চলে যাচ্ছেন।
সাইদ নামের এই বিক্রয়কর্মী আরও বলেন, আশা করছি জুমার নামাজের পর থেকে ক্রেতা সমাগম আরও বাড়বে। সেই সঙ্গে বাড়বে বেচাকেনাও।
মেলায় কসমেটিকস পণ্য নিয়ে স্টল সাজিয়েছেন ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, অন্যান্য দিন সেভাবে না জমলেও আজ ছুটির দিনে মেলা জমবে। তবে সেটা বিকেলের দিকে।
একই সুর জামা-কাপড় ব্যবসায়ী রহমত উল্লাহর মুখেও। তিনি বলেন, আজ অনেক লোকসমাগম হবে। কারণ, সাপ্তাহিক ছুটির দিন। এদিনে সবাই মেলায় আসেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। তাই বেচাকেনাটাও অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি হবে।
মেলার টিকিট কাউন্টারেও দেখা গেলো, দর্শনার্থীদের ভিড়। সারিবদ্ধভাবে সবাই টিকিট কিনছেন। সেখানে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়।
শ্রেয়সী নামে এক স্কুলছাত্রী বলেন, অন্যান্য দিন কোচিং-ক্লাসের চাপ থাকে। চাইলেই সময় বের করা যায় না। তাই শুক্রবার ছুটির দিনে আসা। ইচ্ছে আছে মেকাপের কিছু জিনিসপত্র কেনা। এখন টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকবো। তারপর মনমতো কেনাকাটা করবো।
এটিএম বুথের সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন আনোয়ার হোসেন। তিনি সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে এসেছেন মেলায়।
তিনি বলেন, ছেলে বায়না ধরেছিলো ছুটির দিনে মেলায় আসবে, কিছু কেনাকাটা করবে। তাই এসেছি। এখন টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকে প্রথমেই তার পছন্দের জিনিসপত্র কিনবো, তারপর বাপ-বেটা মিলে মেলা ঘুরে বিকেলে বাসায় যাবো।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মেলার পরিচালক বিবেক সরকার জানান, ছুটির দিনে স্বাভাবিকভাবে লোকসমাগম বেশি হয়। তাই আজও লোকসমাগম স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি হবে।
প্রসঙ্গত, এবারের মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩৬২টি প্যাভিলিয়ন ও স্টল রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫১টিই দেশীয় প্রতিষ্ঠানের স্টল-প্যাভিলিয়ন। বাকি ১১টি স্টল ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও মালয়েশিয়া—এই ৭ দেশের।
মাসব্যাপী এ মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন খোলা থাকবে রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সবজির বাজারে স্বস্তি, মাছ-মুরগির দাম চড়া
শীত বাড়ার সাথে সাথে নতুন টাটকা সবজিতে ভরে গেছে বাজার। কমেছে দামও। বাজারে এই মুহূর্তে শীতকালীন সব সবজির দামই ভোক্তা সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল আছে ডিমের দামও। তবে, অস্বস্তি বিরাজ করছে চাল, মুরগি ও মাছের বাজারে।
আজ শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাজধানীর মিরপুর, কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি এলাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন পরিস্থিতি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতকালীন সবজির সরবরাহ অনেক বেড়েছে। ফুলকপি, বাঁধাকপি ও টমেটোর দাম কেজিতে কমেছে ১০ টাকা করে। বাকি সবজিগুলোও বিক্রি হচ্ছে বেশ সহনীয় দামে।
প্রতি কেজি গোল ও লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা দরে। প্রতি কেজি মুলা ১৫-২০টাকা, পেঁপে ও শালগম ২০-৩০ টাকা, প্রতি পিস ফুলকপি ও বাধাকপি ১০-২০ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৩০-৫০ টাকা ও কলার হালি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৬০-৮০ টাকা, শিম ৩০-৫০ টাকা, শসা ও ক্ষিরা ৩০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সে তুলনায় করলা, পটল, ঝিঙা ও ধুন্দলের দাম কিছুটা বেশি; প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকায়। এছাড়া চিচিঙা ৫০-৬০ টাকা, গাজর ৪০-৬০ টাকা ও টমেটো ৪০- ৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। সেইসঙ্গে লালশাক, পালং শাক, কলমি শাক ও কুমড়া শাকসহ বিভিন্ন শাকের আঁটি মিলছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়।
স্বস্তি ফিরেছে আলুর দামেও। গত সপ্তাহে যে আলু ৫৫-৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। ঝাঁঝ কমেছে পেঁয়াজের বাজারেও। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ এখন ৫০-৫৫ টাকা এবং ইন্ডিয়ান নতুন পেঁয়াজ ৫৫-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে, রসুন এবং আদা এখনো কিনতে হচ্ছে চড়া দাম দিয়েই। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) দেশি রসুন কেজি প্রতি ২৫০ টাকা ও ইন্ডিয়ান রসুন কেজি প্রতি ২২০ টাকা এবং চীনা আদা কেজি প্রতি ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এদিকে গত সপ্তাহের মতো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭০০-৭৮০ টাকা এবং খাসির মাংস প্রতি কেজি ১১০০-১১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে, চরম অস্বস্তি বিরাজ করছে মুরগির বাজারে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এখন। আর সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৩৪০ টাকা দরে।
এ ছাড়া মাছের বাজারেও নেই কোনও সুসংবাদ। আকারভেদে প্রতিকেজি পাবদা মাছ ৩৫০-৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ টাকা, ছোট রুই ২৫০-৩০০ টাকা, ৪ থেকে ৫ কেজি ওজনের রুই ৪০০-৪৫০ টাকা, টেংরা ৬৫০ টাকা, চাষের শিং ৪৫০ টাকা ও পাঙাশ আকারভেদে ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে।
ভরা মৌসুমে ভেলকি দেখাচ্ছে চালের বাজারও। প্রতি কেজি নাজিরশাইল ৮০-৯০ টাকা, মান ভেদে মিনিকেট ৮৫-৯০ টাকা, বিআর- ২৮ চাল ৬০- ৬৫ টাকায়, মোটা চাল (গুটি স্বর্ণা) ৫৫- ৫৮ টাকা, পুরোনো আটাশ ৬৫ টাকা, পাইজাম ৬০ টাকা, কাটারিভোগ ৮৫ টাকা, বাসমতি ৯৪- ৯৮ টাকা, পোলাওর চাল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা ও আমন ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চালের দামের এই ঊর্ধ্বগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভোক্তারা। তাদের প্রশ্ন, ৭০ টাকার নিচে ভালো কোনো চাল নেই। ভরা মৌসুমে চালের এতো দাম হলে, সামনের রোজায় কী হবে? অভিযোগ করে অনেকে বলেন, বাজার মনিটরিং না থাকার কারণেই যাচ্ছেতাইভাবে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
কাফি