অর্থনীতি
আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ৩৫ শতাংশ ঋণ এখন খেলাপি
ব্যাংক–বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুরবস্থা কাটছে না। উপরন্তু দিন দিন খেলাপি ঋণ বাড়ছে। আর্থিক খাতের বহুল আলোচিত ব্যক্তি প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যে অনিয়ম করে গেছেন, তার জের টানতে হচ্ছে এখন পুরো খাতকে। পি কে হালদারের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় ছিল, এমন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানেই এখন খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি। এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এ কারণে সার্বিকভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে।
গত সেপ্টেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ২৬ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। গত জুন শেষে এই খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২৪ হাজার ৭১১ কোটি টাকা, যা ছিল মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। ফলে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে ডিসেম্বরের শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা, যা ছিল ওই সময়ের মোট ঋণের ২৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি হারে খেলাপি ঋণ বাড়ছে ব্যাংকে। কারণ, ব্যাংকগুলোর লুকানো খেলাপি ঋণ এখন সামনে আসছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েক বছর ধরেই কঠোর তদারকির কারণে প্রকৃত খেলাপি ঋণ দেখিয়ে আসছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকগুলোতে তদারকি শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে। এ জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেশি বাড়ছে।
খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো অস্থিরতা কাটেনি। কয়েকটি ব্যাংকের তারল্যসংকট প্রকট হওয়ায় বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থাও খারাপ হয়েছে। কিছু ব্যাংক যখন গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়, তখন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত সরিয়ে নেন অনেক গ্রাহক। এ কারণে ওই সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ বিতরণ কমিয়ে দেয়। ফলে তাদের আমানত ও ঋণ দুই-ই কমে গেছে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের পরিমাণ ছিল ৪৭ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। গত বছরের মার্চে তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৪৭ হাজার ৩০ কোটি টাকা। জুনে আমানত আবার বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ হাজার ৯০৬ কোটি টাকায়। এরপর গত সেপ্টেম্বরে আবার আমানত কমেছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, তহবিল-সংকটের কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন সেভাবে ঋণ বাড়ছে না। গত বছরের জুন শেষে এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের স্থিতি ছিল ৭৪ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বর শেষে আরও কমে হয়েছে ৭৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, পি কে হালদার-সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এফএএস ফিন্যান্সে খেলাপি ঋণ ৯৯ দশমিক ৯২ শতাংশ, টাকার অঙ্কে যা ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। ফারইস্ট ফিন্যান্সের খেলাপি ঋণ ৯৮ শতাংশ, টাকার অঙ্কে যা ৮৭২ কোটি টাকা। ৯৭ শতাংশ ঋণ খেলাপি বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) ও পিপলস লিজিংয়ের। এ ছাড়া ৯০ শতাংশের কম-বেশি খেলাপি ঋণ ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ফার্স্ট ফিন্যান্স, আভিভা ফিন্যান্সসহ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের।
দেশের প্রথম আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো আইপিডিসি ফিন্যান্স, যেটির যাত্রা শুরু হয় ১৯৮১ সালে। বর্তমানে দেশে ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সুদহার বাড়ছে সঞ্চয়পত্রের
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত সঞ্চয় কর্মসূচিগুলোর (স্কিম) মুনাফার হার বাড়ছে। সঞ্চয়পত্রের ধরন অনুযায়ী এ হার বেড়ে হতে যাচ্ছে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত। বর্ধিত হার নির্ধারণের আদেশ জারি করতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগকে (আইআরডি) বুধবার (৮ জানুয়ারি) অনুরোধ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
আইআরডিকে অর্থ বিভাগ বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অর্থ বিভাগের তৈরি এ বিষয়ে প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। আর সুপারিশটি এসেছে অর্থসচিবের নেতৃত্বাধীন নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটি (সিডিএমসি) থেকে। এ কমিটিকে সহায়তা করেছে অর্থ বিভাগের ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ।
আইআরডিকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার নির্ধারণ করা হবে ৫ বছর মেয়াদি ও ২ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের গড় সুদের হার অনুযায়ী। তবে নতুন মুনাফার হার নির্ধারণ করতে এ দুই ধরনের ট্রেজারি বন্ডের সর্বশেষ ছয়টি নিলামকে বিবেচনায় রাখতে হবে। ছয় মাসের বন্ডের সুদের গড় হার বেরও করে দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এহার ১২ দশমিক ২৫ থেকে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ-আদায় বাড়াতে অব্যাহত থাকবে প্রণোদনা
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসএমই খাতের নারী উদ্যোক্তদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করে ১ শতাংশ প্রণোদনা সুবিধা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) এক প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এই সুবিধা অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও ২০২৪ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সুবিধা থাকার কথা ছিল।
২০১৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এই স্কিমটি চালু করে। তখন নারী-পুরুষ উদ্যোক্তারা এই ঋণ নেওয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন। তবে এটি পরে শুধুমাত্র নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ এই স্কিমের পরিমাণ দ্বিগুণ করে ৩ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করে।
ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পের নারী উদ্যোক্তারা এই প্রকল্প থেকে ঋণ নিতে পারবেন। পাশাপাশি, ব্যাংকগুলো ঋণের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ সুদ নিতে পারবে। তবে শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে কোনো প্রণোদনা দেওয়া যাবে না এমন শর্ত ছিল।
এতে আরও বলা হয়, প্রণোদনার পরিমাণ নির্ধারণের সময় সব নিয়মিত ঋণ, বিনিয়োগের পরিমাণ ও ব্যবহারের সময় বিবেচনায় নিতে হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
মূল্যস্ফীতি এখনো ঊর্ধ্বমুখী, চাপে মধ্যবিত্তরাও: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ঊর্ধ্বমুখী জানিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্নবিত্ত, শ্রমজীবী ও দিনমজুরদের ওপর চাপ বাড়ছে। মধ্যবিত্তরাও চাপে আছে।
তিনি বলেন, সবাই বলছে, মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। যেটুকু কমেছে, এটি কিন্তু কম বলা যায় না। মূল্যস্ফীতি এখনো বাড়তিই আছে।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ ব্রিফিং হয়।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, করোনা মহামারি ও গণঅভ্যুত্থানের কারণে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি একটি ক্ষতি হয়েছে। তবে সুশাসিত গণতান্ত্রিক শাসনে যদি উত্তরণ হতে পারি, তাহলে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া অসম্ভব নয়। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো, একটি ভালো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত রচনা করা।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, দেশের নদী ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা একটি পর্যালোচনা ও পরিকল্পনা তৈরি করছি। বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-উপাত্ত দরকার। তবে ডেল্টা প্ল্যান তার জায়গায় থাকবে। সেটি শত বছরের পরিকল্পনা।
‘কিন্তু শত বছরে বাংলাদেশের অবস্থা কী হবে, সেটি কোনো বিশেষজ্ঞই বলতে পারবেন না। আমাদের তাই মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার।’
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানিতে গতি ফিরেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের চেয়ে বাড়ছে। এটি আশার কথা। তবে ভোজ্যতেলে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব নয়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বেনজীরের স্ত্রী-কন্যার আয়কর নথি জব্দের আদেশ
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জা ও তার ছোট মেয়ে তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের পৃথক দুই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
এদিন দুই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কমিশনের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন তাদের আয়কর নথি জব্দ চেয়ে আবেদন করেন। দুদকের পক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত তাদের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দেন।
জীশান মীর্জার আবেদনে বলা হয়, তিনি মিথ্যা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ১৬ কোটি এক লাখ ৭১ হাজার ৩৩৬ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেন। এছাড়া ৩১ কোটি ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৯ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারার অপব্যবহার করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জীশান মির্জাকে এসব অপরাধে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় মামলা করা হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আয়কর রিটার্নসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র জব্দ করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। এ অবস্থায় আয়কর অফিস থেকে রেকর্ডপত্র জব্দ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
তাহসীন রাইসার আবেদনে বলা হয়, তাহসীন রাইসা ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৫৫ হাজান ৮৫ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রাখেন। এর মাধ্যমে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারার অপব্যবহার করেন। বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশ ও র্যাবের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তাজসীন রাইসাকে অপরাধে প্রত্যক্ষ সহায়তা করে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আয়কর রিটার্নসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র জব্দ করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
অর্থ আত্মসাৎ: এস আলমের দুই ছেলেসহ আসামি ৫৪
চট্টগ্রামের জুবিলী রোড শাখা থেকে প্রায় ৯৯৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের ছেলে আশরাফুল আলম ও আহসানুল আলমসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আসামিরা হলেন- ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও এস আলম গ্রুপের মালিকের সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম এবং অপর ছেলে ও ইনফিনিটি সিআর স্ট্রিপস লিমিটেডের মালিক আশরাফুল আলম।
এ ছাড়া মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী, বাণিজ্য বিতান কর্পোরেশনের মালিক মো. তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী, অ্যাপার্চার ট্রেডিং হাউজের মালিক এস. এম নেছার উল্লাহ, ড্রিমস্কেপ বিজনেস সেন্টারের মালিক মোহাম্মদ মহসিন মিয়াজী, এক্সিসটেন্স ট্রেড এজেন্সির মালিক মো. সালাহ উদ্দিন (সাকিব), ফেন্সিফেয়ার কর্পোরেশনের মালিক মোহা. আব্দুল মজিদ খোকন, এপিক এ্যাবল ট্রেডার্সের মালিক মো. ইকবাল হোসেন, ফেমাস ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক আরশাদুর রহমান চৌধুরী, প্রোপ্রাইটর জিনিয়াস ট্রেডিংয়ের মালিক মোহাম্মদ আবুল কালাম, গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাশেদুল আলম, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুস সবুর, ইনফিনিটি সিআর স্ট্রিপস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফারজানা বেগম, এমডি আব্দুল ওয়াহিদ, ইনিফিনিটি সিআর স্ট্রিপস লিমিটেডের হিসাব পরিচালনাকারী মনতোষ চন্দ্র রায়, চেমন ইস্পাত লিমিটেডের পরিচালক মুহা. নজরুল ইসলাম, ওই প্রতিষ্ঠানের এমডি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আনছার এন্টারপ্রাইজের মালিক আনছারুল আলম চৌধুরী, রেইনবো কর্পোরেশনের মালিক রায়হান মাহমুদ চৌধুরী, গ্রিন এক্সপোজ ট্রেডার্সের মালিক এম এ মোনায়েম, সাফরান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মাহাফুজুল ইসলাম, মেসার্স শাহ আমানত ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী চৌধুরী, সোনালী ট্রেডার্সের মালিক সহিদুল আলম ও মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গোলাম সরওয়ার চৌধুরী।
ইসলামী ব্যাংকের আসামিরা হলেন- ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী ও কে কিউ এম হাবিবুল্লাহ, সাবেক পরিচালক ও ইসি কমিটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি ও চিফ হিউম্যান রিসার্চ অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ সাব্বির, মিফতাহ উদ্দিন, সাবেক ডিএমডি আবুল ফাইয়াজ মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, সাবেক এসইভিপি ও এএমডি মো. আলতাফ হোসেন, এসইভিপি জি এম মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন কাদের, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের জুবিলী রোড শাখা প্রধান ও এসভিপি সোহেল আমান, ওই শাখার সাবেক প্রধান একজো শাহাদাৎ হোসেনসহ অন্তত ৩০ কর্মকর্তা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ঋণের নামে শুধুমাত্র ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জুবিলী রোড শাখা থেকে প্রায় এক হাজার ১১৪ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। যার নেতৃত্ব দেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলম। আত্মীয় স্বজন ও নিজ কোম্পানির বেতনভুক্ত কর্মচারীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক দেখিয়ে মাত্র তিন বছরে ওই টাকা হাতিয়ে নেয় আলোচিত গ্রুপটি।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জুবিলী রোড শাখায় মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরীকে সাপ্লায়ার হিসেবে দেখানো হয়। মূলত ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক, অন্যান্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যাংকের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে অপকর্ম ঘটিয়েছেন। অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা ব্যাংকিং অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের অনুকূলে ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বরে ৮৯০ কোটি টাকা ঋণ সুবিধা গ্রহণ করলেও তার বিপরীতে কোনো মালামাল ক্রয় এবং বিক্রয় না করে বিভিন্ন জাল কাগজপত্র তৈরি করে। এরপর ওই টাকা উত্তোলন ও বিতরণ করে রূপান্তর, স্থানান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে অপরাধ গোপন করার চেষ্টা করা হয়েছে।
ওই চক্রটি নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আবারও বিনিয়োগসীমা ৮৯০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১০০০ কোটি করে। আর ২৮টি ডিল সাজিলে চক্রটি ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ৯৯৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে। এ সব কাজের মধ্য দিয়ে ব্যাংকিং নীতিমালা এবং ইসলামী ব্যাংকের জন্য প্রচলিত শরীয়াহ নীতি লঙ্ঘন করা হয়েছে।
অন্যদিকে ২০২৩ সালে আরও নতুন করে ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত ভুয়া ডকুমেন্ট তৈরি করে চারটি ডিল সৃষ্টি করে আরও ১৮১ কোটি টাকা উত্তোলন করে নতুন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এভাবে জুবিলি রোড শাখার গ্রাহক মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের নামে ২০২২ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ইস্যুকৃত অসমন্বিত ৩২টি ডিলে মোট এক হাজার ৭৪ কোটি ৮৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা ছাড় করে যা ব্যাংকের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, অডিট প্রতিবেদন কিংবা দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বিষয়টির প্রমাণ মিলেছে। পরবর্তী সময়ে ২০২৪ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে জাল নথি তৈরি করে কৃত্রিম উপায়ে ১৩ কোটি ৫০ লাখ ৮৭ হাজার পরিশোধ দেখানো হয়েছে।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর পর্যন্ত ঋণ হিসাবে ৯৯৩ কোটি ৭০ লাখ ২৪ হাজার টাকা ও মুনাফা হিসাবে ১২০ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ মোট এক হাজার ১১৩ কোটি ৯৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ হয়েছে।