অর্থনীতি
মতিউরের আরো ১২৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, দুদকের ৩ মামলা
১২৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান, তার প্রথম স্ত্রী (লায়লা কানিজ) ও ছেলে-মেয়ের বিরুদ্ধে পৃথক আরও তিনটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা তিনটি দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউর রহমান সম্পদের হিসাব চেয়ে দুদক থেকে নোটিশ করা হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে দুদক থেকে অনুসন্ধান করে সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের সম্পদ বিবরণী দাখিল করার আদেশ করা হয়েছিল। ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যরা সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন।
প্রথম মামলার আসামি হয়েছেন লায়লা কনিজ ও মতিউর রহমান। মামলার এজাহারে বলা হয় আসামি লায়লা কানিজ ১৩ কোটি ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। পাশাপাশি লায়লা কানিজের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
অন্যদিকে তার মেয়ে ফারজানা রহমানের নামে ২ কোটি ৪৫ লাখ গোপন ও ৫৩ কোটি ৪১ লাখ টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে দ্বিতীয় মামলায়। ওই মামলায় মতিউর রহমানকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে।
আর তৃতীয় মামলায় প্রথম ঘরের ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বিরুদ্ধে ১৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা সম্পদের তথ্য গোপন ও ৪২ কোটি ২২ লাখ টাকার
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলায়ও মতিউরকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে।
এর আগে, গত ১৫ ডিসেম্বর মতিউর রহমান ও তার দ্বিতীয় স্ত্রীর (শাম্মী আখতার শিবলী) বিরুদ্ধে ১১ কোটি ১৮ লাখ ৮৬ হাজার ১২০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুই মামলা দায়ের করা হয়।
প্রথম মামলায় এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউরের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ২৮ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৯ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ ও ১ কোটি ২৭ লাখ ৬৬ হাজার ২১৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আর দ্বিতীয় মামলায় মতিউরের সঙ্গে আসামি হয়েছেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলী। শিবলীর বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৯০ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ২ কোটি ৭৫ লাখ ২৮ হাজার ৪৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ও ২৬ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
কোরবানির জন্য ১৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি ছাগল কিনতে গিয়ে আলোচনায় আসেন মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের এক যুবক। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। বলা হয়, তার বাবা এনবিআর সদস্য এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমান।
এরপর আলোচনা চলে মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের কোথায় কী পরিমাণ সম্পদ রয়েছে এসব নিয়ে। এসব আলোচনার মধ্যে একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে মতিউর পরিবারের বিপুল বিত্তবৈভবের চাঞ্চল্যকর তথ্য।
পরে গত বছরের ৪ জুন মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধানের নামে দুদক। অনুসন্ধানে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ৬৫ বিঘা জমি, আটটি ফ্ল্যাট, দুটি রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট এবং তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তথ্য পায় দুদক। মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব, মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবার হিসাব ও শেয়ারবাজারের বিও হিসাব জব্দ করা হয়।
পরে ২৪ জুন মতিউর ও তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী এবং সন্তানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
এরপর গত ২ জুলাই মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বিবরণী চেয়ে পৃথক নোটিশ পাঠায় দুদক। এসব নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ আগস্ট মতিউর, তার দুই স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়েসহ পাঁচজনের সম্পদ বিবরণী দুদকে জমা দেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ-আদায় বাড়াতে অব্যাহত থাকবে প্রণোদনা
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসএমই খাতের নারী উদ্যোক্তদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করে ১ শতাংশ প্রণোদনা সুবিধা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) এক প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এই সুবিধা অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও ২০২৪ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সুবিধা থাকার কথা ছিল।
২০১৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এই স্কিমটি চালু করে। তখন নারী-পুরুষ উদ্যোক্তারা এই ঋণ নেওয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন। তবে এটি পরে শুধুমাত্র নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ এই স্কিমের পরিমাণ দ্বিগুণ করে ৩ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করে।
ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পের নারী উদ্যোক্তারা এই প্রকল্প থেকে ঋণ নিতে পারবেন। পাশাপাশি, ব্যাংকগুলো ঋণের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ সুদ নিতে পারবে। তবে শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে কোনো প্রণোদনা দেওয়া যাবে না এমন শর্ত ছিল।
এতে আরও বলা হয়, প্রণোদনার পরিমাণ নির্ধারণের সময় সব নিয়মিত ঋণ, বিনিয়োগের পরিমাণ ও ব্যবহারের সময় বিবেচনায় নিতে হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সাবেক এমপি ও এফবিসিসিআই সভাপতি মহিউদ্দিন গ্রেপ্তার
ঢাকা-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যার ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানার একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বাসায় অবস্থান করছেন। এমন সংবাদে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ তার নিজ বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
ওসি হাফিজুর বলেন, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যার ঘটনায় মামলা রয়েছে। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
গ্রেফতার শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ২০২০ সালের ঢাকা-১০ আসনের উপ-নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী লীগপন্থি একজন ব্যবসায়ী নেতা এবং এফবিসিসিআই ও বিজিএমইয়ের সাবেক সভাপতি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
মূল্যস্ফীতি এখনো ঊর্ধ্বমুখী, চাপে মধ্যবিত্তরাও: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ঊর্ধ্বমুখী জানিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্নবিত্ত, শ্রমজীবী ও দিনমজুরদের ওপর চাপ বাড়ছে। মধ্যবিত্তরাও চাপে আছে।
তিনি বলেন, সবাই বলছে, মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। যেটুকু কমেছে, এটি কিন্তু কম বলা যায় না। মূল্যস্ফীতি এখনো বাড়তিই আছে।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ ব্রিফিং হয়।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, করোনা মহামারি ও গণঅভ্যুত্থানের কারণে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি একটি ক্ষতি হয়েছে। তবে সুশাসিত গণতান্ত্রিক শাসনে যদি উত্তরণ হতে পারি, তাহলে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া অসম্ভব নয়। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো, একটি ভালো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত রচনা করা।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, দেশের নদী ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা একটি পর্যালোচনা ও পরিকল্পনা তৈরি করছি। বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-উপাত্ত দরকার। তবে ডেল্টা প্ল্যান তার জায়গায় থাকবে। সেটি শত বছরের পরিকল্পনা।
‘কিন্তু শত বছরে বাংলাদেশের অবস্থা কী হবে, সেটি কোনো বিশেষজ্ঞই বলতে পারবেন না। আমাদের তাই মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার।’
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানিতে গতি ফিরেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের চেয়ে বাড়ছে। এটি আশার কথা। তবে ভোজ্যতেলে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব নয়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বেনজীরের স্ত্রী-কন্যার আয়কর নথি জব্দের আদেশ
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জা ও তার ছোট মেয়ে তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের পৃথক দুই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
এদিন দুই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কমিশনের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন তাদের আয়কর নথি জব্দ চেয়ে আবেদন করেন। দুদকের পক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত তাদের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দেন।
জীশান মীর্জার আবেদনে বলা হয়, তিনি মিথ্যা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ১৬ কোটি এক লাখ ৭১ হাজার ৩৩৬ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেন। এছাড়া ৩১ কোটি ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৯ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারার অপব্যবহার করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জীশান মির্জাকে এসব অপরাধে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় মামলা করা হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আয়কর রিটার্নসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র জব্দ করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। এ অবস্থায় আয়কর অফিস থেকে রেকর্ডপত্র জব্দ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
তাহসীন রাইসার আবেদনে বলা হয়, তাহসীন রাইসা ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৫৫ হাজান ৮৫ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রাখেন। এর মাধ্যমে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারার অপব্যবহার করেন। বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশ ও র্যাবের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তাজসীন রাইসাকে অপরাধে প্রত্যক্ষ সহায়তা করে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আয়কর রিটার্নসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র জব্দ করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
অর্থ আত্মসাৎ: এস আলমের দুই ছেলেসহ আসামি ৫৪
চট্টগ্রামের জুবিলী রোড শাখা থেকে প্রায় ৯৯৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের ছেলে আশরাফুল আলম ও আহসানুল আলমসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আসামিরা হলেন- ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও এস আলম গ্রুপের মালিকের সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম এবং অপর ছেলে ও ইনফিনিটি সিআর স্ট্রিপস লিমিটেডের মালিক আশরাফুল আলম।
এ ছাড়া মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী, বাণিজ্য বিতান কর্পোরেশনের মালিক মো. তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী, অ্যাপার্চার ট্রেডিং হাউজের মালিক এস. এম নেছার উল্লাহ, ড্রিমস্কেপ বিজনেস সেন্টারের মালিক মোহাম্মদ মহসিন মিয়াজী, এক্সিসটেন্স ট্রেড এজেন্সির মালিক মো. সালাহ উদ্দিন (সাকিব), ফেন্সিফেয়ার কর্পোরেশনের মালিক মোহা. আব্দুল মজিদ খোকন, এপিক এ্যাবল ট্রেডার্সের মালিক মো. ইকবাল হোসেন, ফেমাস ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক আরশাদুর রহমান চৌধুরী, প্রোপ্রাইটর জিনিয়াস ট্রেডিংয়ের মালিক মোহাম্মদ আবুল কালাম, গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাশেদুল আলম, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুস সবুর, ইনফিনিটি সিআর স্ট্রিপস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফারজানা বেগম, এমডি আব্দুল ওয়াহিদ, ইনিফিনিটি সিআর স্ট্রিপস লিমিটেডের হিসাব পরিচালনাকারী মনতোষ চন্দ্র রায়, চেমন ইস্পাত লিমিটেডের পরিচালক মুহা. নজরুল ইসলাম, ওই প্রতিষ্ঠানের এমডি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আনছার এন্টারপ্রাইজের মালিক আনছারুল আলম চৌধুরী, রেইনবো কর্পোরেশনের মালিক রায়হান মাহমুদ চৌধুরী, গ্রিন এক্সপোজ ট্রেডার্সের মালিক এম এ মোনায়েম, সাফরান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মাহাফুজুল ইসলাম, মেসার্স শাহ আমানত ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী চৌধুরী, সোনালী ট্রেডার্সের মালিক সহিদুল আলম ও মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গোলাম সরওয়ার চৌধুরী।
ইসলামী ব্যাংকের আসামিরা হলেন- ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী ও কে কিউ এম হাবিবুল্লাহ, সাবেক পরিচালক ও ইসি কমিটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি ও চিফ হিউম্যান রিসার্চ অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ সাব্বির, মিফতাহ উদ্দিন, সাবেক ডিএমডি আবুল ফাইয়াজ মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, সাবেক এসইভিপি ও এএমডি মো. আলতাফ হোসেন, এসইভিপি জি এম মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন কাদের, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের জুবিলী রোড শাখা প্রধান ও এসভিপি সোহেল আমান, ওই শাখার সাবেক প্রধান একজো শাহাদাৎ হোসেনসহ অন্তত ৩০ কর্মকর্তা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ঋণের নামে শুধুমাত্র ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জুবিলী রোড শাখা থেকে প্রায় এক হাজার ১১৪ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। যার নেতৃত্ব দেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলম। আত্মীয় স্বজন ও নিজ কোম্পানির বেতনভুক্ত কর্মচারীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক দেখিয়ে মাত্র তিন বছরে ওই টাকা হাতিয়ে নেয় আলোচিত গ্রুপটি।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জুবিলী রোড শাখায় মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরীকে সাপ্লায়ার হিসেবে দেখানো হয়। মূলত ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক, অন্যান্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যাংকের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে অপকর্ম ঘটিয়েছেন। অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা ব্যাংকিং অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের অনুকূলে ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বরে ৮৯০ কোটি টাকা ঋণ সুবিধা গ্রহণ করলেও তার বিপরীতে কোনো মালামাল ক্রয় এবং বিক্রয় না করে বিভিন্ন জাল কাগজপত্র তৈরি করে। এরপর ওই টাকা উত্তোলন ও বিতরণ করে রূপান্তর, স্থানান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে অপরাধ গোপন করার চেষ্টা করা হয়েছে।
ওই চক্রটি নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আবারও বিনিয়োগসীমা ৮৯০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১০০০ কোটি করে। আর ২৮টি ডিল সাজিলে চক্রটি ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ৯৯৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে। এ সব কাজের মধ্য দিয়ে ব্যাংকিং নীতিমালা এবং ইসলামী ব্যাংকের জন্য প্রচলিত শরীয়াহ নীতি লঙ্ঘন করা হয়েছে।
অন্যদিকে ২০২৩ সালে আরও নতুন করে ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত ভুয়া ডকুমেন্ট তৈরি করে চারটি ডিল সৃষ্টি করে আরও ১৮১ কোটি টাকা উত্তোলন করে নতুন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এভাবে জুবিলি রোড শাখার গ্রাহক মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের নামে ২০২২ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ইস্যুকৃত অসমন্বিত ৩২টি ডিলে মোট এক হাজার ৭৪ কোটি ৮৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা ছাড় করে যা ব্যাংকের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, অডিট প্রতিবেদন কিংবা দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বিষয়টির প্রমাণ মিলেছে। পরবর্তী সময়ে ২০২৪ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে জাল নথি তৈরি করে কৃত্রিম উপায়ে ১৩ কোটি ৫০ লাখ ৮৭ হাজার পরিশোধ দেখানো হয়েছে।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর পর্যন্ত ঋণ হিসাবে ৯৯৩ কোটি ৭০ লাখ ২৪ হাজার টাকা ও মুনাফা হিসাবে ১২০ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ মোট এক হাজার ১১৩ কোটি ৯৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ হয়েছে।