অর্থনীতি
মূল্যস্ফীতি না কমলেও বেড়েছে অনেক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা
সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলে দফায় দফায় ঋণের সুদহার বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নীতি সুদহার ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদহারও সর্বোচ্চ ৯ থেকে বেড়ে এখন প্রায় ১৬ শতাংশে পৌছেছে। সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির পরামর্শ মানতে গিয়ে দেশে বেড়ে গিয়েছে ‘কস্ট অব ডুইং বিজনেস’ বা ব্যবসা পরিচালনার ব্যয়। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না এসে উল্টো আরো বেড়েছে।
আইএমএফের পরামর্শ দেশের সাধারণ মানুষের কোনো কল্যাণে না এলেও এর সুফল বেশ ভালোভাবেই ঘরে তুলে নিয়েছে দেশের কিছু ব্যাংক। তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে আর্থিকভাবে সবল থাকা প্রায় সব ব্যাংকেরই পরিচালন মুনাফা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কোনো কোনো ব্যাংকের মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে শতভাগেরও বেশি।
বিদায়ী বছরের লাভ-ক্ষতির হিসাব গতকালের মধ্যেই চূড়ান্ত করেছে দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির এ মুনাফা ছিল ১ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে সদ্য বিদায়ী বছর ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭২ দশমিক ২৯ শতাংশ।
গত বছর রেকর্ড ২ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে পূবালী ব্যাংক পিএলসি। ২০২৩ সালে যা ছিল ১ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। এ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংক দুটির মতো দেশের অন্যান্য সবল ব্যাংকেরও পরিচালন মুনাফায় বড় প্রবৃদ্ধির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী জানান, গত বছর দেশের ব্যাংক খাতে তারল্যের তীব্র সংকট থাকলেও পূবালীতে সেটি ছিল না। উল্টো আমাদের ব্যাংকে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার আমানত বেড়েছে। এ আমানত থেকে আমরা ৭ হাজার কোটি টাকা বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করেছি। ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসাবে বিতরণ করা হয়েছে। পূবালী ব্যাংকের আমদানি-রফতানি ব্যবসার প্রবৃদ্ধিও হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় বড় প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এসবের ভূমিকা আছে।
দেশের ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহার বৃদ্ধির সুফল ভোগ করছে কিনা জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংক এমডি বলেন, সেটি অন্য কোনো ব্যাংকের ক্ষেত্রে সত্য হতে পারে। কারণ সুদহার বাড়ানোর পরও পূবালী ব্যাংকের ৭০ শতাংশ ঋণের সুদ ১২ শতাংশের নিচে রয়েছে। ১৪ শতাংশের বেশি সুদ আছে, এমন ঋণ ১০ শতাংশও হবে না। গত ছয় মাস আমরা কোনো গ্রাহকের ঋণের সুদ বাড়াইনি।
আগের বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে ৬৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে সিটি ব্যাংক। ২০২৩ সালে প্রথম প্রজন্মের এ বেসরকারি ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ১ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। কিন্তু গত বছর এ মুনাফা বেড়ে ২ হাজার ২৮৭ কোটি টাকায় ঠেকেছে। ব্যাংকটির ইতিহাসে এটিই পরিচালন মুনাফার সর্বোচ্চ রেকর্ড।
পরিচালন মুনাফায় ৬১ দশমিক ৭১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকও। গত বছর ব্যাংকটি ২ হাজার ২৮৫ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা পেয়েছে। যেখানে ২০২৩ সালে ডাচ্-বাংলার পরিচালন মুনাফা ছিল ১ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ব্যাংক এশিয়া ১ হাজার ৭০০ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংক ১ হাজার ৬৭৫ কোটি, প্রাইম ব্যাংক ১ হাজার ৫০০ কোটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) ১ হাজার ১১০ কোটি, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ৫০ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ৯৭৫ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক ৮৫০ কোটি, ওয়ান ব্যাংক ৮৩০ কোটি, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৬৪৪ কোটি ও চতুর্থ প্রজন্মের মেঘনা ব্যাংক ২০৪ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছে।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে কেবল প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। বাকি সবক’টি ব্যাংকেরই মুনাফা বাড়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে পরিচালন মুনাফার এসব তথ্য পরে কিছুটা বাড়তে বা কমতে পারে। কেননা কিছু ব্যাংক গতকালও ২০২৪ সালের হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত করতে পারেনি। এসব ব্যাংক থেকে পাওয়া সম্ভাব্য মুনাফার তথ্য এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যে মুনাফা থাকে সেটিকেই বলা হয় পরিচালন মুনাফা। তবে এটি কোনো ব্যাংকেরই প্রকৃত মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণ এবং সরকারকে কর পরিশোধ করতে হয়। প্রভিশন ও কর-পরবর্তী এ মুনাফাকেই বলা হয় ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট মুনাফা।
কিছু ব্যাংকের মুনাফায় অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে, হাতে নগদ তারল্য বেশি থাকা ব্যাংকগুলোই মুনাফার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ভালো করেছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের প্রধান খাত ছিল সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ড। ৫-৬ শতাংশ সুদে সংগৃহীত আমানত ১২-১৩ শতাংশ সুদের বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে। পর্ষদ ভেঙে দেয়া ব্যাংকগুলো থেকে বের হয়ে যাওয়া আমানত স্বল্প সুদে টেনে নিয়েছে সবল ব্যাংকগুলো। বিল-বন্ডের পাশাপাশি স্বল্প সুদে সংগৃহীত এ আমানত থেকে ১৫-১৬ শতাংশে সুদে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এ উচ্চ স্প্রেডের (ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান) প্রভাবেই সবল ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফায় অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রেকর্ড পরিচালন মুনাফা পাওয়া সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিনও একই ধরনের পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) ভাইস চেয়ারম্যান পদে থাকা এ ব্যাংকার জানান, ‘ভালো ব্যাংকগুলোর ভালো মুনাফা করারই কথা। কারণ তাদের সবার আমানত ব্যয় তুলনামূলক কম। আবার ঋণের সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা উঠে যাওয়ার পর তাদের নিট সুদ আয় বেড়েছে। আপনি বিশ্লেষণ করলে দেখবেন, ভালো ব্যাংকগুলোর মোট সুদ আয়ের ৬০-৭০ শতাংশ আসছে ঋণ খাত থেকে। আর ২০ শতাংশের মতো সরকারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ থেকে এবং বাকিটা অন্য ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট ইত্যাদি রেখে। সেই সঙ্গে এ গোত্রের সব ব্যাংকের মোট আয়ের প্রায় ২৫ শতাংশ আসছে ফি, এলসি কমিশন ও মুদ্রা বিনিময় আয় থেকে।’
মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘দেশের ভালো ব্যাংকগুলো এখন তাদের আয়ের এক-চতুর্থাংশই সুদের বাইরে থেকে আয় করা শুরু করেছে। অর্থাৎ জনগণকে নানা সেবা দিয়ে তার বিনিময়ে সামান্য ফি-কমিশন চার্জ করে তারা আয় বাড়াতে পারছে। সুদনির্ভর ব্যালান্স শিট থেকে সেবা বাবদ অর্জিত ফি নির্ভর ব্যালান্স শিটে যেতে পারাটা সত্যিকারের আধুনিক ব্যাংকিং। আবার এটিও সত্যি যে এ বছর অনেক ব্যাংক পারফরম্যান্স খারাপ করার কারণে তুলনামূলক সুনামসম্পন্ন ব্যাংকগুলো আরো বেশি ভালো করেছে।’
প্রায় তিন বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এর মধ্যে গত দুই অর্থবছরজুড়েই দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের বেশি। বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস তথা জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ওই মাসে মূল্যস্ফীতির হার ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশে নেমে আসে বলে দাবি করে বিবিএস। এরপর সেপ্টেম্বরে আরো কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ দেখানো হয়। তবে অক্টোবর ও নভেম্বরে এ হার আবারো ঊর্ধ্বমুখী হয়। অক্টোবরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার দেখানো হয় ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর নভেম্বরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার ঠেকে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে। সরকারের দেয়া এ তথ্য আমলে নিলে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি এখন সর্বোচ্চ।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে দুই অর্থবছর ধরে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি প্রণয়ন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজারে অর্থের প্রবাহ কমাতে নীতি সুদহার (রেপো রেট) ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদহারও সর্বোচ্চ ৯ থেকে বেড়ে এখন ১৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ চাহিদা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার যে লক্ষ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারণ করেছিল, সেটি কাজে আসেনি। সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার প্রেসক্রিপশন মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)। বহুজাতিক সংস্থাটি থেকে ঋণ প্রাপ্তির শর্তের মধ্যেই সুদহার বাড়ানোর বিষয়টি জুড়ে দেয়া হয়েছিল।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সুদহার বৃদ্ধির প্রভাবে শিল্প, সেবাসহ সব খাতের পরিচালন ব্যয় বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে ডলারের বিনিময় হার। এ কারণে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না। সুদহার কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আসতে বেশ কয়েকবার তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদনও জানিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের কথা শোনেনি। এ সুযোগে ব্যাংকগুলো দফায় দফায় সুদহার বাড়িয়ে নিজেদের মুনাফার পাল্লা ভারী করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে ব্যাংক ঋণের পাশাপাশি সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহারও গত দুই বছর ধরে বেশ চড়া। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহারও ১১ থেকে ১২ শতাংশ। এ কারণে ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতকে ঋণ না দিয়ে সরকারকে ঋণ দিতে বেশি উৎসাহ দেখাচ্ছে। বেসরকারি খাত ঋণবঞ্চিত হওয়ার চিত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যেও ফুটে উঠেছে।
সংস্থাটির তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪-এর অক্টোবর পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে মাত্র ৮ দশমিক ৩০ শতাংশে, যা গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
সবল ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিল-বন্ডের ভূমিকা অনেক বেশি বলে মনে করেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘হাতে পর্যাপ্ত তারল্য থাকা ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করে ভালো মুনাফা পেয়েছে। বিল-বন্ডে এখন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকেরও প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা আছে। কিছু ব্যাংকের বিল-বন্ডে বিনিয়োগ আমাদের চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি। এ কারণে ওই ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বেড়েছে।’
সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না এলেও ব্যাংকগুলো একচেটিয়া এর সুবিধা ঘরে তুলল কিনা জানতে চাইলে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা দেখছি সুদহার বাড়ানোর পরও মূল্যস্ফীতি কমেনি। তার মানে এ নয় যে সাধারণ মানুষ কোনো সুফলই পাবে না। ব্যাংকের লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ হয়। লভ্যাংশের একটি অংশ মূলধন বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে। সে হিসাবে সাধারণ মানুষ পুরোপুরি বঞ্চিত হয়েছে, এটি বলা যায় না।’
অনিয়ম-দুর্নীতি ও সুশাসনের তীব্র ঘাটতির কারণে গত দেড় দশক ধরেই দেশের ব্যাংক খাত ধারাবাহিকভাবে দুর্বল হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ সময় গিয়েছে ২০২০ সাল থেকে। দেশের ব্যাংক খাত থেকে কয়েক লাখ কোটি টাকা লোপাট করেছেন শেখ হাসিনা সরকারের আমলে তৈরি হওয়া অলিগার্করা। বাছবিচারহীন লুটপাটে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ দেশের প্রায় দুই ডজন ব্যাংকের ভিত নাজুক পরিস্থিতিতে পড়ে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের ব্যাংক খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেয়ার পর দেশের বেসরকারি খাতের ১২টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়। পরিবর্তন আসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায়। নেতিবাচক ভাবমূর্তি, আস্থাহীনতা ও পর্ষদ ভেঙে দেয়ার প্রভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলো থেকে আমানত তুলে নিতে গ্রাহকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তবে বেশির ভাগ ব্যাংকই গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী টাকা ফেরত দিতে পারেনি। এ পরিস্থিতিতে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখতে টাকা ধার দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পর্ষদ ভঙে দেয়া একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘২০২৪ ছিল দেশের ব্যাংক খাতের জন্য ইতিহাসের সবচেয়ে নাজুক বছর। কারণ বছরটিতে গত দেড় দশকের লুটপাটের তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। আন্তরিকতার ঘাটতি না থাকলেও আমরা গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা ফেরত দিতে পারিনি। দেশের ব্যাংক খাতের ইতিহাসে এত খারাপ পরিস্থিতি অতীতে কখনই দেখিনি। আমাদের ব্যাংক থেকে টাকা তুলে গ্রাহকরা স্বল্প সুদে হলেও অন্য ব্যাংকে জমা করেছে। এ কারণে ওই ব্যাংকগুলোর মুনাফা বেড়েছে। আর আমাদের বিপর্যয় আরো গভীর হয়েছে। খেলাপি ঋণের হিসাবায়ন চূড়ান্ত না করতে পারায় গত বছরের মুনাফা পরিস্থিতিও বের করা সম্ভব হয়নি।’ সূত্র: বণিক বার্তা।
অর্থসংবাদ/
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
জুলাই-সেপ্টেম্বরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১.৮১ শতাংশ
গত চার বছরের মধ্যে এ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মোট দেশজ উপাদানের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এ হার দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৮১ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ তথ্য প্রকাশ করে।
এতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের তিন মাসে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এছাড়া শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮ দশমিক ২২ শতাংশ। সেবা খাতে গত তিন মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
মতিউরের আরো ১২৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, দুদকের ৩ মামলা
১২৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান, তার প্রথম স্ত্রী (লায়লা কানিজ) ও ছেলে-মেয়ের বিরুদ্ধে পৃথক আরও তিনটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা তিনটি দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউর রহমান সম্পদের হিসাব চেয়ে দুদক থেকে নোটিশ করা হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে দুদক থেকে অনুসন্ধান করে সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের সম্পদ বিবরণী দাখিল করার আদেশ করা হয়েছিল। ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যরা সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন।
প্রথম মামলার আসামি হয়েছেন লায়লা কনিজ ও মতিউর রহমান। মামলার এজাহারে বলা হয় আসামি লায়লা কানিজ ১৩ কোটি ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। পাশাপাশি লায়লা কানিজের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
অন্যদিকে তার মেয়ে ফারজানা রহমানের নামে ২ কোটি ৪৫ লাখ গোপন ও ৫৩ কোটি ৪১ লাখ টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে দ্বিতীয় মামলায়। ওই মামলায় মতিউর রহমানকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে।
আর তৃতীয় মামলায় প্রথম ঘরের ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বিরুদ্ধে ১৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা সম্পদের তথ্য গোপন ও ৪২ কোটি ২২ লাখ টাকার
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলায়ও মতিউরকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে।
এর আগে, গত ১৫ ডিসেম্বর মতিউর রহমান ও তার দ্বিতীয় স্ত্রীর (শাম্মী আখতার শিবলী) বিরুদ্ধে ১১ কোটি ১৮ লাখ ৮৬ হাজার ১২০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুই মামলা দায়ের করা হয়।
প্রথম মামলায় এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউরের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ২৮ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৯ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ ও ১ কোটি ২৭ লাখ ৬৬ হাজার ২১৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আর দ্বিতীয় মামলায় মতিউরের সঙ্গে আসামি হয়েছেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলী। শিবলীর বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৯০ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ২ কোটি ৭৫ লাখ ২৮ হাজার ৪৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ও ২৬ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
কোরবানির জন্য ১৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি ছাগল কিনতে গিয়ে আলোচনায় আসেন মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের এক যুবক। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। বলা হয়, তার বাবা এনবিআর সদস্য এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমান।
এরপর আলোচনা চলে মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের কোথায় কী পরিমাণ সম্পদ রয়েছে এসব নিয়ে। এসব আলোচনার মধ্যে একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে মতিউর পরিবারের বিপুল বিত্তবৈভবের চাঞ্চল্যকর তথ্য।
পরে গত বছরের ৪ জুন মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধানের নামে দুদক। অনুসন্ধানে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ৬৫ বিঘা জমি, আটটি ফ্ল্যাট, দুটি রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট এবং তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তথ্য পায় দুদক। মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব, মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবার হিসাব ও শেয়ারবাজারের বিও হিসাব জব্দ করা হয়।
পরে ২৪ জুন মতিউর ও তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী এবং সন্তানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
এরপর গত ২ জুলাই মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বিবরণী চেয়ে পৃথক নোটিশ পাঠায় দুদক। এসব নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ আগস্ট মতিউর, তার দুই স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়েসহ পাঁচজনের সম্পদ বিবরণী দুদকে জমা দেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট অব্যাহতি দিল এনবিআর
ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা গণপরিবহন মেট্রোরেলে সব ধরনের যাত্রীসেবায় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) অব্যাহতি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ সুবিধা ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।
আজ সোমবার (৬ জানুয়ারি) এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (মূসক আইন ও বিধি) ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সীর সই করা এ সংক্রান্ত বিশেষ আদেশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আদেশে বলা হয়, মেট্রোরেল বাংলাদেশের সর্বাধুনিক ও জনপ্রিয় গণপরিবহন। মেট্রোরেল যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি কর্মঘণ্টা সাশ্রয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। মেট্রোরেলকে অধিক জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে এর যাতায়াত ব্যয় সাশ্রয়ী করা প্রয়োজন।
সেখানে বলা হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ (২০১২ সনের ৪৭ নং আইন) এর ধারা ১২৬ এর উপ-ধারা (৩) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে দ্রুতগামী, নিরাপদ, সময় সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও দূরনিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর পরিবহন ব্যবস্থা মেট্রোরেল সেবার ওপর আরোপণীয় মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি প্রদান করা হলো।
এই ভ্যাট অব্যাহতি অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে আদেশ জানানো হয়েছে।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ডিসেম্বরে দেশের মূল্যস্ফীতি কমেছে
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমেছে শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেছে শূন্য দশমিক ৮৮ শতাংশ। আজ সোমবার (৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ তথ্য জানিয়েছে।
বিবিএসের সবশেষ তথ্য বলছে, দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) ডিসেম্বরে কমে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা নভেম্বরে ছিল ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
গত বছরজুড়ে ভোক্তার নাভিশ্বাস ওঠা খাদ্য মূল্যস্ফীতিও বছরের শেষ মাসে এসেছে কিছুটা কমেছে। ডিসেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক ৮৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ। নভেম্বর মাসে যেটি ছিল ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ।
এদিকে নভেম্বর মাসে সার্বিক খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ থাকলেও ডিসেম্বর মাসে সেটি কমে ৯ দশমিক ২৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া ডিসেম্বর মাসে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ০৯ শতাংশে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
আর শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে বাংলাদেশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ২২ শতাংশে, যা এক মাস আগে ছিল ১০ দশমিক ০৫ শতাংশ।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
অর্ধশত পণ্য-সেবায় ভ্যাট বাড়ানোর ব্যাখ্যা দিলো এনবিআর
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তানুযায়ী যেসব পণ্য ও সেবায় ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক এবং আবগারি শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে সেসবের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নেই বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা আল আমিন শেখ।
এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, যেসব পণ্য ও সেবায় ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও আবগারি শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে তার মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নেই। তাই সর্বসাধারণের ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না এবং মূল্যস্ফীতিতেও এর প্রভাব পড়বে না। জনস্বার্থে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির শুল্ক করহারে ব্যাপক ছাড় দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি, এসডিজি বাস্তবায়ন এবং জাতি হিসেবে স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্যে ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি ও হার যৌক্তিকীকরণের লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে এনবিআর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি ভ্যাট, আয়কর ও শুল্ক বিষয়ক গণমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু সংবাদ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নজরে এসেছে।
গত চার মাসে বাজারে নিত্যপণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে চাল, আলু, পেঁয়াজ, চিনি, ডিম, খেজুর, ভোজ্যতেল, ও কীটনাশকসহ আটটি পণ্যে আমদানি, স্থানীয় ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে জনস্বার্থে শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর ছাড় দেওয়া হয়। এজন্য রাজস্ব আদায় ব্যাপকভাবে কমে যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্যান্য খাত থেকে রাজস্ব বাড়ানো না গেলে বিপুল পরিমাণ বাজেট ঘাটতি দেখা দেবে। তাই রাজস্ব বাড়াতে ভ্যাটের আওতা বাড়ানো হচ্ছে।২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যবর্তী সময়ে এনবিআরকে বিশেষ এ পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে।
আইএমএফের চাপে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আইনে কিছু সংশোধন আনতে যাচ্ছে সরকার। যাতে ওষুধ, গুঁড়া দুধ, সিগারেট, বিমানের টিকিটসহ প্রায় অর্ধশত পণ্য ও সেবার ওপর বাড়তি মূসক ও শুল্ক আরোপ হতে পারে। এর ফলে বাজেটের আগেই এসব পণ্য ও সেবার দাম একদফা বাড়তে পারে। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইনে কিছু সংশোধন আনা হয়েছে। এসব সংশোধনীসহ মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধনী) অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়া সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে গত বুধবার (১ জানুয়ারি) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।