জাতীয়
৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচার: হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের টিম গঠন করেছিল দুদক। ওই টিমকেই বাজারের অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঘুস ও দুর্নীতির অভিযোগে একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিষয়ে একটি প্রাথমিক তদন্ত করে। ২০১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বনাম রিজভী আহমেদ মামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম প্রথম নজরে আসে। ওই গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে সজীব ওয়াজেদ জয়ের গুরুতর আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়টি উন্মোচিত হয়।
গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প নামের একটি ওয়েবসাইটে গত ১৭ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে হাসিনা পরিবারের ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার আত্মসাতের কথা বলা হয়। সেখানেও উঠে আসে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
চিরকুট লিখে মুক্তিযোদ্ধার আত্মহত্যা
ক্যান্সারের কষ্ট সইতে না পেরে সন্তানদের কাছে আবেগঘন সুইসাইড নোট লিখে নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেছেন মুক্তিযোদ্ধা আবু সাইদ সরদার (৬৫)।
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার আগে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার ২০ নম্বর সড়কের একটি বাসায় এই ঘটনা ঘটে। তিনি ওই বাসায় তার ছেলের সঙ্গে থাকতেন।
ডবলমুরিং থানার এসআই মো. বায়েজিদ মিয়া জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই বাসার একটি কক্ষের দরজা ভেঙ্গে আবু সাইদের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এসময় মৃত্যুর আগে তার সন্তান ও নাতির উদ্দেশ্যে লেখা কয়েকটি চিঠি উদ্ধার করা হয়। চিঠি দেখে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সার রোগে ভুগছিলেন বলে জানা গেছে। তার ইমন, সাইমন নামের দুই ছেলে ও পায়েল নামের এক মেয়ে সন্তান আছে। তিনি ওই বাসায় ইমনের সঙ্গে থাকতেন।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের কক্ষ থেকে মোট ৬টি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়। যেগুলোতে তিনি সন্তান ও নাতিকে উদ্দেশ্য করে আবেগঘন কথাবার্তা লিখেছেন। একইসঙ্গে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করছেন, মৃত্যুর পর সন্তানদের কী কী করণীয়, কোথায় দাফন করা হবে- সেসব বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। নোটগুলোতে তিনি সন্তানসহ সবার কাছে ক্ষমা চান।
মেয়ে পায়েলকে লেখা সুইসাইড নোটে তিনি লিখেন, ক্যান্সার মনে হয় ফের ফিরে এসেছে। মুখে ঘা ও মাঝে মাঝে ব্যাথা করে। আসলে এ রোগের কোনো চিকিৎসা আছে বলে মনে হয় না। ইদানীং ক্যান্সারে কষ্ট পাচ্ছি।
নিহতের স্বজনদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, আবু সাইদ সরদার তার ছোট ছেলে ইমনের পরিবারের সঙ্গে ওই বাসাতে থাকতেন। তিনি আগে থেকেই হয়তো আত্মহত্যার পরিকল্পনা করছিলেন। রবিবার সন্ধ্যার আগে বাসায় কেউ না থাকার সুযোগে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন। পরে ওনার ছেলে বাসায় গিয়ে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ থাকায় ডাকাডাকি করেন। সাড়া না পেয়ে পাশের ভবনের জানালা দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় পিতাকে দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
প্লট-ফ্ল্যাট ও নগদ টাকাসহ দুদক চেয়ারম্যানের যত সম্পদ
রাজধানী ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট, স্ত্রীর সঙ্গে একটি প্লট, ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রসহ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান (দুদক) ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। যোগদান করার মাত্র ১২ দিনের মধ্যে নিজ সম্পদের হিসাব প্রকাশ করেছেন তিনি।
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সম্পদের হিসাব দেওয়ার পাশাপাশি সম্পদের উৎস উপস্থাপন করেন তিনি।
আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনে সম্পদের হিসাব দিয়েছেন জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান আবদুল মোমেন বলেন, আমরা সবাই সম্পদ বিবরণী দাখিল করব। আমি সাংবাদিকদেরও বলে যাচ্ছি। মৌখিকভাবে বলছি, প্রয়োজনে লিখিতভাবে দিতে পারব। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনাদের জানা দরকার। এ চাকরি থেকে চলে যাওয়ার পর আপনারা হিসাব করবেন সম্পদ কতটা বাড়ল বা কমল। তখন আপনারা ধরতে পারবেন, কী পরিমাণ বাড়তি কামাই করেছি বা করিনি।
দুদক চেয়ারম্যানের যত সম্পদ
নিজের সম্পদের তথ্য তুলে ধরে সাবেক সচিব আবদুল মোমেন বলেন, ঢাকার বসিলাতে আমার ১৫০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আছে। সেখানে আরও ৭০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। পূর্বাচল আমেরিকান সিটিতে স্ত্রীর সঙ্গে আমার ৫ কাঠার একটি খালি জায়গা (প্লট) আছে।
বিসিএস প্রশাসন সমিতির সদস্য হিসেবে ৮ জন সদস্য মিলে ১০ কাঠার একটি প্লট কিনেছেন জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এ প্লটের মধ্যে আমার ভাগে ১ দশমিক ২৫ কাঠা পড়বে। ২০০৭ সালে টাকা-পয়সা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত দখলে নেই, এটা অনিশ্চিত।
এ ছাড়া রাজউকের একটি প্লটের জন্য ৭৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন, এখন পর্যন্ত সেটার নিষ্পত্তি হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, যে কোনো কারণে তৎকালীন সরকার আমাকে দেয়নি (রাজউক প্লট)। এটার ব্যাপারে আবার আবেদন করব।
তিনি বলেন, এসব স্থাবর সম্পত্তির বাইরে আমার আর স্থাবর সম্পত্তি নেই। যদি আপনারা কখনও খুঁজে বের করতে পারেন তাহলে সেগুলো বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে এবং আপনারা যেভাবে ডিসপোজাল করতে চান।
এ ছাড়া অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে ২৫ সেলফ ভর্তি দেশি-বিদেশি দামি বইপত্র। বাসায় ৫ লাখ টাকার মতো আসবাবপত্র আছে বলে জানান দুদক চেয়ারম্যান।
দুটি সঞ্চয়পত্র রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ৩০ লাখ টাকার ৫ বছর মেয়াদি একটি সঞ্চয়পত্র, ২০ লাখ টাকার আরেকটি সঞ্চয়পত্র আছে। আমার জিপিএফের (সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিল) টাকা এখনও তুলেনি, সেখানে ১৭ লাখ টাকা আছে। সরকারি চাকরি যারা করেন, তাদের এই ফান্ড থাকে।
টাকার উৎসের ব্যাপারে চাকরি থেকে আয় এবং উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ রয়েছে জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান আবদুল মোমেন বলেন, পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালের একটি বড় অংশ আমাদের বাগান বাড়ি ছিল, আমাদের অনেক ভাই-বোন, সবাই মিলে সেটা বিক্রি করে যে টাকা পেয়েছি, তা দিয়ে একটা ফিক্স ডিপোজিট করেছি।
এ ছাড়া শিক্ষকতা, বক্তৃতা এবং লেখালেখি করে সম্মানির কিছু অর্থ পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, ঢাকার বেঁড়িবাধের বাইরে সাড়ে ৫ শতক একটি জমি কিনেছিলেন, সেটা বিক্রি করে কিছু টাকা পেয়েছেন। আর হাতে নগদ এবং ব্যাংক মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার মতো রয়েছে।
২০০৯ সালে সরকারি চাকরি থেকে ওএসডি হওয়ার পর চাকরি চলে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, এখন যেহেতু চাকরি ফিরে পেয়েছি সুতরাং পেনশন ও অন্যান্য বেনিফিট সব পাব। হঠাৎ করে দেখা যাবে আমার টাকার অংশ বেড়ে গেছে। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতির সমান বেতন-ভাতা পাচ্ছি। মূল বেতন এক লাখ ৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গে ৫০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, বিশেষ ভাতা এবং অন্যান্য ভাতা পাই। এর বাইরে অন্য কোনো খাতে উপার্জনের সুযোগ দেখি না।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
পুলিশ অপ্রয়োজনীয় শক্তি প্রদর্শন করবে না: সিটিটিসি প্রধান
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান মো. মাসুদ করিম বলেছেন, পুলিশের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। সে প্রত্যাশা পূরণে পুলিশ ও জনগণ একে অপরের পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে কাজ করবে।
তিনি বলেন, পুলিশ অপ্রয়োজনীয় শক্তি প্রদর্শন করবে না। পুলিশ তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য আইন অনুযায়ী পালন করবে। আমরা যেন আপনাদের (জনগণের) প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারি সেজন্য আপনাদেরকে আমাদের পাশে থাকতে হবে। আপনারা নির্ভয়ে থানায় যাবেন।
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) খিলগাঁও ফরচুন কমিউনিটি সেন্টারে পুলিশ, ছাত্র-জনতা ও খিলগাঁও থানা এলাকার নাগরিকদের মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, থানা এলাকায় কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলে থানার ওসি, সহকারী পুলিশ কমিশনার বা উপ-পুলিশ কমিশনারকে জানালে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। আপনারা আমাদের ৫ আগস্টের পর যে সহযোগিতা করেছেন, সে জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। ভবিষ্যতেও যে কোনো প্রয়োজনে আপনারা পুলিশকে সহযোগিতা করবেন।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, মাদক, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের তথ্য দিয়ে আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছাত্র-জনতা ও খিলগাঁও এলাকার নাগরিকরা অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের কাছে তাদের বিভিন্ন মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরেন।
সভায় উপস্থিত একজন বলেন, খিলগাঁওয়ে মাদক, চাঁদাবাজ, কিশোর গ্যাং বড় সমস্যা। এক্ষেত্রে পুলিশ ও জনগণ একে অন্যের সহায়ক হিসেবে কাজ করবো।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শাহরিয়ার আলী। এতে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নেতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং ছাত্র আন্দোলনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
স্বরাষ্ট্র সচিব হলেন ড. নাসিমুল গনি
রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব করা হয়েছে।
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
ড. নাসিমুল গনি বিসিএস ১৯৮২ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। ২০০৯ সালে তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করা হয়। চার বছর ওএসডি থাকার পর ২০১৩ সালে তাঁকে চাকরি থেকে অবসর দেয়া হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার তাকে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জন বিভাগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
নিজের সম্পদের হিসাব দিলেন দুদক চেয়ারম্যান
গণমাধ্যমের সামনে নিজের সম্পদ বিবরণী তুলে ধরলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি নিজের আয়-ব্যয় ও সম্পদের ফিরিস্তি জানান। সভায় দুদকের অতীত ও বর্তমান কার্যক্রম নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেন সাংবাদিকরা।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে আমার সম্পদ বিবরণী দুদক সংস্কার কমিশনের কাছে জমা দিয়েছি। অন্য কমিশনাররা তাদের সম্পদ বিবরণী জমা দিয়ে দেবেন।
নিয়োগ পাওয়ার একদিন পরই গত ১১ ডিসেম্বর কর্মস্থলে যোগ দেন মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। ওইদিন সাতদিনের মধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। ওইদিনই দুদকের নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে তাদের আয়-ব্যয় ও সম্পদ বিবরণীর তথ্য প্রকাশের আহ্বান জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
নিজের সম্পত্তির ফিরিস্তি তুলে ধরে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, বসিলায় সাড়ে সাতশো স্কয়ার ফিটের দুটি মিলিয়ে ১৫০০ স্কয়ার ফিটের একটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে। সেখানে আরও ৭০০ স্কয়ার ফিট নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। পূর্বাচল আমেরিকান সিটিতে স্ত্রীর সঙ্গে আমার একটি খালি জায়গা আছে পাঁচ কাঠা। বিসিএস প্রশাসন কমিটির সদস্য ছিলাম। সেখানে আটজন সদস্যের জন্য ১০ কাঠা জমি আছে। আমার ভাগে ১ দশমিক ২৫ কাঠা পড়বে। ২০০৭ সালে টাকা-পয়সা পেয়েছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত দখল পাইনি।
তিনি আরও বলেন, রাজউকের একটি প্লটের জন্য ৭৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলাম। আজ পর্যন্ত সেটির কোনো নিষ্পত্তি হয়নি। যে কোনো কারণে হোক সরকার আমাকে দেয়নি। আমি আবার আবেদন করবো। এর বাইরে আমার আর কোনো স্থাবর সম্পদ নেই।
অস্থাবর সম্পদের বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন আকারের ২৫টি সেলফ ভর্তি বইপত্র আছে। অনেক দামি বইপত্র আছে। আসবাবপত্র ইলেকট্রনিক সামগ্রী মিলিয়ে পাঁচ লাখ টাকার জিনিস আছে। পাঁচ বছর মেয়াদি ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আছে। আর তিন মাস অন্তর সঞ্চয়পত্র আছে ২০ লাখ টাকার। আমার জিপিএফের টাকা আমি তুলি নাই, ওখানে ১৭ লাখ টাকা আছে।
নিজের আয়ের উৎস সম্পর্কে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার চাকরিলব্ধ আয়- উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ। শিক্ষকতা করি, বক্তৃতা করি, লেখালেখি করি। সাড়ে পাঁচ শতক একটা জমি কিনেছিলাম বেড়িবাঁধের বাইরে, সেটি বিক্রি করে কিছু টাকা পেয়েছিলাম।
তিনি বলেন, আমার চাকরিজীবন অনেক দিনের। ছাত্রাবস্থা থেকেই আয় করা শুরু করি। যখন এই চাকরি থেকে চলে যাবো আপনারা হিসাব করবেন এই সম্পদ কতটা বাড়লো, কতটা কমলো।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের সৌভাগ্য আমরা এমন সময় এসেছি যখন রাজনৈতিক সরকার নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণপ্রত্যাশাকে লালন করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জনগণ এই সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। এই সরকার প্রতিষ্ঠা না হলে, ৫ আগস্টের বিপ্লব না হলে আমরা এখানে আসতাম না।
তিনি বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি যে একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও বায়তুল মোকাররমের ইমাম পালিয়েছেন। এটি একটি অদ্ভূত ঘটনা। অনেক দেশেই আন্দোলন হয়েছে, রাষ্ট্রপ্রধান পালিয়ে গেছেন, প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে গেছেন। কিন্তু পোপ বা মন্দিরের পুরোহিত পালিয়ে গেছেন, এমনটি ঘটেনি। এরকম অবিশ্বাস্য ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে। রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে ভূমিকা রাখতে হবে।
দুর্নীতিবাজরা নানা কারণে ছাড় পেয়ে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজদের যেন ছাড় দেওয়া না হয় এটি আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা অনেক সময়ই নানা কারণে সফলকাম হয় না। হয়তো আমরা যে মামলা করি, সেই মামলাটি দুর্বল। কিংবা এখানে বসে বিচার বিভাগের সমালোচনা করা সমীচীন না। কিন্তু সেই প্রশ্ন আমরা কেউ কেউ তুলে থাকি যে; সুবিচার কী হলো? সুবিচারের দায় শুধু দুদকের এটি মনে করলে হবে না।
এসময় দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, মাত্র অর্ধেক জনবল নিয়ে দুদক কাজ করছে। আমরা নির্মোহভাবে অনুসন্ধান করবো। কোথায় পক্ষপাত হবে না। আমরা জাতির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, দুদকের নিজস্ব প্রসিকিউশন বিধান প্রণীত হয়নি। আমি ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় আইন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ছিলাম। স্থায়ী প্রসিকিউশন সৃষ্টি করতে বাংলাদেশ অ্যাটর্নি সার্ভিস ডাইরেক্টরি তৈরি করা হয়েছিল। আইনও তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে রাজনৈতিক সরকার এসে এই অধ্যাদেশ নিয়ে কাজ করেনি। যার জন্য ওটা আঁতুড়েই বসে গেছে। কার্যকর হয়নি।
তিনি আরও বলেন, সিনিয়র ও যোগ্য আইনজীবীদের এই কমিশনের স্থায়ী প্রসিকিউশনে নিয়ে আসা দরকার। কিন্তু তাদের আনতে হলে তো পরিতোষক দিতে হবে। এর জন্য একটু সময় লাগবে।
দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান ফরিদ বলেন, দুদকের পেশাগত ভিত্তি অনেক শক্ত। ৪২ দিন কমিশন না থাকার পরও দুদকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিরলস কাজ করে গেছেন। পৃথিবীর কোনো মানুষের দাসত্ব করবে না দুদক।