ব্যাংক
আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে প্রশাসক নিয়োগ করলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক
বেসরকারি খাতের আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে প্রশাসক বসিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মজিবুর রহমানকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে ২০০৬ সালেও একবার প্রশাসক নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেডের যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত ও আমানতকারীর আস্থা অক্ষুণ্ন রাখার লক্ষ্যে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাইীর ক্ষমতা প্রয়াগে ও দায়িত্ব সাময়িকভাবে পালনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মা. মজিবুর রহমানকে নিযুক্ত করা হলো। তিনি প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনের নিমিত্তে বৃহস্পতিবার কর্মদিবস শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিমুক্ত বলে গণ্য হবেন।
ওরিয়ান গ্রুপের ব্যাপক ঋণ জালিয়াতির কারণে ব্যাংকটি ধুঁকছিল। যে কারণে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেউদ্দীন আহমেদ তৎকালীন গভর্নর থাকা অবস্থায় ২০০৬ সালেও ব্যাংকটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে কোনো পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
গত বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শফিক বিন আবদুল্লাহকে অবরুদ্ধ করে বহিষ্কৃত ঘোষণা করেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা। ওই দিন সকাল ১০টা থেকে তাকে কারওয়ান বাজারের প্রধান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন ব্যাংকের ৩৩ শাখার ম্যানেজাররা।
আন্দোলনরত ব্যাংকটির ম্যানেজাররা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে (এমডি শফিক বিন আবদুল্লাহ) পুনর্নিয়োগ না দিলেও তিনি জোর করে অফিস করছিলেন। আমরা তার বহিষ্কার চাই।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
কর্পোরেট সংবাদ
চাকরিচ্যুতরা এস আলমের অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত ছিল: সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক
চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা আমরণ অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। অবস্থান নিয়েছেন ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে। আন্দোলনকারীদের দাবি, বিনা কারণে বিনা নোটিশে আমাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংক বলছে, ব্যাংকের সার্ভিস রুলস মোতাবেক এবং নিয়োগ পত্রের ধারা ১০ অনুযায়ী অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য জানিয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল)।
ব্যাংকটি বলছে, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এস আলম গ্রুপের অবৈধ নিয়োগ দেওয়া ৫৭৯ জন কর্মকর্তাকে গত ২৯ অক্টোবর চাকরিচ্যুত করে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকের সার্ভিস রুলস মোতাবেক এবং নিয়োগ পত্রের ধারা দশ অনুযায়ী শিক্ষানবিশ সময়কালে ব্যাংক যে কোনো সময় বিনা নোটিশে যেকোনো কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার অধিকার রাখে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এসব অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরিচ্যুত করা হয়।
পরবর্তী সময়ে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ চাকরি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে ব্যাংকের নিকট আবেদন করে। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যেকের সঙ্গে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে শুনানির আয়োজন করা হয়। শুনানি পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তাদেরকে চাকরি পুনর্বহাল সম্ভব নয় উল্লেখ করে পত্র প্রদান করে। এই চিঠি পাওয়ার পর গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে এবং লাগাতার ব্যাংকের সামনে অবস্থান করছে। যার ফলে ব্যাংকের গ্রাহকগণ হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং সাধারণ জনগণের স্বাভাবিক চলাফেরা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এমনকি মতিঝিলের সর্বোচ্চ স্থাপনা সিটি সেন্টারের সামনে এ ধরনের কার্যক্রম এই বিল্ডিং এ অবস্থিত অন্যান্য অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদেরও স্বাভাবিক চলাফেরা বাধাগ্রস্ত করছে।
এসআইবিএল আরও জানায়, পটিয়া এলাকার প্রায় ২০০০ কর্মকর্তা নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ পেয়ে এখনো এসআইবিএল এ কর্মরত রয়েছে। এসব কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এবং এস আলম গ্রুপের মদদে এই চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। তাদের এই পদক্ষেপ ব্যাংকিং খাত তথা রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। প্রশাসন যদি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা হতে পারে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পত্রের মাধ্যমে অবহিত করা হয় এবং তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয় দ্রুত তারা এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিয়োগপত্রের ধারা মেনেই অবৈধভাবে এস আলম গ্রুপের নিয়োগ দেওয়া কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক যে, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর এস আলমের পৃষ্ঠপোষকতায় তারা এ ধরনের বিশৃঙ্খলা করে নৈরাজ্যের সৃষ্টি করছে যা রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং সাধারণ জনগণ তথা ব্যাংকের গ্রাহকগণ এর ফলে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যা মোটেই কাম্য নয়।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় মদদে এস আলম গ্রুপ দেশের ব্যাংকিং খাতে ভয়াবহ দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে চরম অরাজকতার সৃষ্টি করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক যখন ব্যাংকিং খাত সংস্কারে ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে তখন এস আলমের মদদপুষ্ট এক গোষ্ঠী আবারও অরাজকতা তৈরিতে সক্রিয় রয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
মূল্যস্ফীতি না কমলেও বেড়েছে অনেক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা
সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলে দফায় দফায় ঋণের সুদহার বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নীতি সুদহার ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদহারও সর্বোচ্চ ৯ থেকে বেড়ে এখন প্রায় ১৬ শতাংশে পৌছেছে। সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির পরামর্শ মানতে গিয়ে দেশে বেড়ে গিয়েছে ‘কস্ট অব ডুইং বিজনেস’ বা ব্যবসা পরিচালনার ব্যয়। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না এসে উল্টো আরো বেড়েছে।
আইএমএফের পরামর্শ দেশের সাধারণ মানুষের কোনো কল্যাণে না এলেও এর সুফল বেশ ভালোভাবেই ঘরে তুলে নিয়েছে দেশের কিছু ব্যাংক। তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে আর্থিকভাবে সবল থাকা প্রায় সব ব্যাংকেরই পরিচালন মুনাফা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কোনো কোনো ব্যাংকের মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে শতভাগেরও বেশি।
বিদায়ী বছরের লাভ-ক্ষতির হিসাব গতকালের মধ্যেই চূড়ান্ত করেছে দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির এ মুনাফা ছিল ১ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে সদ্য বিদায়ী বছর ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭২ দশমিক ২৯ শতাংশ।
গত বছর রেকর্ড ২ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে পূবালী ব্যাংক পিএলসি। ২০২৩ সালে যা ছিল ১ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। এ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংক দুটির মতো দেশের অন্যান্য সবল ব্যাংকেরও পরিচালন মুনাফায় বড় প্রবৃদ্ধির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী জানান, গত বছর দেশের ব্যাংক খাতে তারল্যের তীব্র সংকট থাকলেও পূবালীতে সেটি ছিল না। উল্টো আমাদের ব্যাংকে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার আমানত বেড়েছে। এ আমানত থেকে আমরা ৭ হাজার কোটি টাকা বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করেছি। ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসাবে বিতরণ করা হয়েছে। পূবালী ব্যাংকের আমদানি-রফতানি ব্যবসার প্রবৃদ্ধিও হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় বড় প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এসবের ভূমিকা আছে।
দেশের ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহার বৃদ্ধির সুফল ভোগ করছে কিনা জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংক এমডি বলেন, সেটি অন্য কোনো ব্যাংকের ক্ষেত্রে সত্য হতে পারে। কারণ সুদহার বাড়ানোর পরও পূবালী ব্যাংকের ৭০ শতাংশ ঋণের সুদ ১২ শতাংশের নিচে রয়েছে। ১৪ শতাংশের বেশি সুদ আছে, এমন ঋণ ১০ শতাংশও হবে না। গত ছয় মাস আমরা কোনো গ্রাহকের ঋণের সুদ বাড়াইনি।
আগের বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে ৬৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে সিটি ব্যাংক। ২০২৩ সালে প্রথম প্রজন্মের এ বেসরকারি ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ১ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। কিন্তু গত বছর এ মুনাফা বেড়ে ২ হাজার ২৮৭ কোটি টাকায় ঠেকেছে। ব্যাংকটির ইতিহাসে এটিই পরিচালন মুনাফার সর্বোচ্চ রেকর্ড।
পরিচালন মুনাফায় ৬১ দশমিক ৭১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকও। গত বছর ব্যাংকটি ২ হাজার ২৮৫ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা পেয়েছে। যেখানে ২০২৩ সালে ডাচ্-বাংলার পরিচালন মুনাফা ছিল ১ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ব্যাংক এশিয়া ১ হাজার ৭০০ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংক ১ হাজার ৬৭৫ কোটি, প্রাইম ব্যাংক ১ হাজার ৫০০ কোটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) ১ হাজার ১১০ কোটি, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ৫০ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ৯৭৫ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক ৮৫০ কোটি, ওয়ান ব্যাংক ৮৩০ কোটি, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৬৪৪ কোটি ও চতুর্থ প্রজন্মের মেঘনা ব্যাংক ২০৪ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছে।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে কেবল প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। বাকি সবক’টি ব্যাংকেরই মুনাফা বাড়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে পরিচালন মুনাফার এসব তথ্য পরে কিছুটা বাড়তে বা কমতে পারে। কেননা কিছু ব্যাংক গতকালও ২০২৪ সালের হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত করতে পারেনি। এসব ব্যাংক থেকে পাওয়া সম্ভাব্য মুনাফার তথ্য এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যে মুনাফা থাকে সেটিকেই বলা হয় পরিচালন মুনাফা। তবে এটি কোনো ব্যাংকেরই প্রকৃত মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণ এবং সরকারকে কর পরিশোধ করতে হয়। প্রভিশন ও কর-পরবর্তী এ মুনাফাকেই বলা হয় ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট মুনাফা।
কিছু ব্যাংকের মুনাফায় অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে, হাতে নগদ তারল্য বেশি থাকা ব্যাংকগুলোই মুনাফার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ভালো করেছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের প্রধান খাত ছিল সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ড। ৫-৬ শতাংশ সুদে সংগৃহীত আমানত ১২-১৩ শতাংশ সুদের বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে। পর্ষদ ভেঙে দেয়া ব্যাংকগুলো থেকে বের হয়ে যাওয়া আমানত স্বল্প সুদে টেনে নিয়েছে সবল ব্যাংকগুলো। বিল-বন্ডের পাশাপাশি স্বল্প সুদে সংগৃহীত এ আমানত থেকে ১৫-১৬ শতাংশে সুদে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এ উচ্চ স্প্রেডের (ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান) প্রভাবেই সবল ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফায় অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রেকর্ড পরিচালন মুনাফা পাওয়া সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিনও একই ধরনের পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) ভাইস চেয়ারম্যান পদে থাকা এ ব্যাংকার জানান, ‘ভালো ব্যাংকগুলোর ভালো মুনাফা করারই কথা। কারণ তাদের সবার আমানত ব্যয় তুলনামূলক কম। আবার ঋণের সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা উঠে যাওয়ার পর তাদের নিট সুদ আয় বেড়েছে। আপনি বিশ্লেষণ করলে দেখবেন, ভালো ব্যাংকগুলোর মোট সুদ আয়ের ৬০-৭০ শতাংশ আসছে ঋণ খাত থেকে। আর ২০ শতাংশের মতো সরকারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ থেকে এবং বাকিটা অন্য ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট ইত্যাদি রেখে। সেই সঙ্গে এ গোত্রের সব ব্যাংকের মোট আয়ের প্রায় ২৫ শতাংশ আসছে ফি, এলসি কমিশন ও মুদ্রা বিনিময় আয় থেকে।’
মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘দেশের ভালো ব্যাংকগুলো এখন তাদের আয়ের এক-চতুর্থাংশই সুদের বাইরে থেকে আয় করা শুরু করেছে। অর্থাৎ জনগণকে নানা সেবা দিয়ে তার বিনিময়ে সামান্য ফি-কমিশন চার্জ করে তারা আয় বাড়াতে পারছে। সুদনির্ভর ব্যালান্স শিট থেকে সেবা বাবদ অর্জিত ফি নির্ভর ব্যালান্স শিটে যেতে পারাটা সত্যিকারের আধুনিক ব্যাংকিং। আবার এটিও সত্যি যে এ বছর অনেক ব্যাংক পারফরম্যান্স খারাপ করার কারণে তুলনামূলক সুনামসম্পন্ন ব্যাংকগুলো আরো বেশি ভালো করেছে।’
প্রায় তিন বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এর মধ্যে গত দুই অর্থবছরজুড়েই দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের বেশি। বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস তথা জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ওই মাসে মূল্যস্ফীতির হার ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশে নেমে আসে বলে দাবি করে বিবিএস। এরপর সেপ্টেম্বরে আরো কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ দেখানো হয়। তবে অক্টোবর ও নভেম্বরে এ হার আবারো ঊর্ধ্বমুখী হয়। অক্টোবরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার দেখানো হয় ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর নভেম্বরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার ঠেকে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে। সরকারের দেয়া এ তথ্য আমলে নিলে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি এখন সর্বোচ্চ।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে দুই অর্থবছর ধরে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি প্রণয়ন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজারে অর্থের প্রবাহ কমাতে নীতি সুদহার (রেপো রেট) ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদহারও সর্বোচ্চ ৯ থেকে বেড়ে এখন ১৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ চাহিদা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার যে লক্ষ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারণ করেছিল, সেটি কাজে আসেনি। সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার প্রেসক্রিপশন মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)। বহুজাতিক সংস্থাটি থেকে ঋণ প্রাপ্তির শর্তের মধ্যেই সুদহার বাড়ানোর বিষয়টি জুড়ে দেয়া হয়েছিল।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সুদহার বৃদ্ধির প্রভাবে শিল্প, সেবাসহ সব খাতের পরিচালন ব্যয় বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে ডলারের বিনিময় হার। এ কারণে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না। সুদহার কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আসতে বেশ কয়েকবার তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদনও জানিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের কথা শোনেনি। এ সুযোগে ব্যাংকগুলো দফায় দফায় সুদহার বাড়িয়ে নিজেদের মুনাফার পাল্লা ভারী করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে ব্যাংক ঋণের পাশাপাশি সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহারও গত দুই বছর ধরে বেশ চড়া। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহারও ১১ থেকে ১২ শতাংশ। এ কারণে ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতকে ঋণ না দিয়ে সরকারকে ঋণ দিতে বেশি উৎসাহ দেখাচ্ছে। বেসরকারি খাত ঋণবঞ্চিত হওয়ার চিত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যেও ফুটে উঠেছে।
সংস্থাটির তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪-এর অক্টোবর পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে মাত্র ৮ দশমিক ৩০ শতাংশে, যা গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
সবল ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিল-বন্ডের ভূমিকা অনেক বেশি বলে মনে করেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘হাতে পর্যাপ্ত তারল্য থাকা ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করে ভালো মুনাফা পেয়েছে। বিল-বন্ডে এখন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকেরও প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা আছে। কিছু ব্যাংকের বিল-বন্ডে বিনিয়োগ আমাদের চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি। এ কারণে ওই ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বেড়েছে।’
সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না এলেও ব্যাংকগুলো একচেটিয়া এর সুবিধা ঘরে তুলল কিনা জানতে চাইলে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা দেখছি সুদহার বাড়ানোর পরও মূল্যস্ফীতি কমেনি। তার মানে এ নয় যে সাধারণ মানুষ কোনো সুফলই পাবে না। ব্যাংকের লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ হয়। লভ্যাংশের একটি অংশ মূলধন বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে। সে হিসাবে সাধারণ মানুষ পুরোপুরি বঞ্চিত হয়েছে, এটি বলা যায় না।’
অনিয়ম-দুর্নীতি ও সুশাসনের তীব্র ঘাটতির কারণে গত দেড় দশক ধরেই দেশের ব্যাংক খাত ধারাবাহিকভাবে দুর্বল হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ সময় গিয়েছে ২০২০ সাল থেকে। দেশের ব্যাংক খাত থেকে কয়েক লাখ কোটি টাকা লোপাট করেছেন শেখ হাসিনা সরকারের আমলে তৈরি হওয়া অলিগার্করা। বাছবিচারহীন লুটপাটে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ দেশের প্রায় দুই ডজন ব্যাংকের ভিত নাজুক পরিস্থিতিতে পড়ে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের ব্যাংক খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেয়ার পর দেশের বেসরকারি খাতের ১২টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়। পরিবর্তন আসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায়। নেতিবাচক ভাবমূর্তি, আস্থাহীনতা ও পর্ষদ ভেঙে দেয়ার প্রভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলো থেকে আমানত তুলে নিতে গ্রাহকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তবে বেশির ভাগ ব্যাংকই গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী টাকা ফেরত দিতে পারেনি। এ পরিস্থিতিতে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখতে টাকা ধার দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পর্ষদ ভঙে দেয়া একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘২০২৪ ছিল দেশের ব্যাংক খাতের জন্য ইতিহাসের সবচেয়ে নাজুক বছর। কারণ বছরটিতে গত দেড় দশকের লুটপাটের তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। আন্তরিকতার ঘাটতি না থাকলেও আমরা গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা ফেরত দিতে পারিনি। দেশের ব্যাংক খাতের ইতিহাসে এত খারাপ পরিস্থিতি অতীতে কখনই দেখিনি। আমাদের ব্যাংক থেকে টাকা তুলে গ্রাহকরা স্বল্প সুদে হলেও অন্য ব্যাংকে জমা করেছে। এ কারণে ওই ব্যাংকগুলোর মুনাফা বেড়েছে। আর আমাদের বিপর্যয় আরো গভীর হয়েছে। খেলাপি ঋণের হিসাবায়ন চূড়ান্ত না করতে পারায় গত বছরের মুনাফা পরিস্থিতিও বের করা সম্ভব হয়নি।’ সূত্র: বণিক বার্তা।
অর্থসংবাদ/
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুঁজিবাজার
ঋণ শোধে আরও ৩ মাস সময় পাচ্ছে পুঁজিবাজারের পাঁচ ব্যাংক
প্রথম ধাপের ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি দুর্বল ব্যাংকগুলো। ধার পরিশোধে আরও তিন মাস সময় বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে দুর্বল পাঁচটি ব্যাংকে সবল ব্যাংক থেকে ধার নিতে গ্যারান্টি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক এবং ন্যাশনাল ব্যাংক।
দুর্বল পাঁচ ব্যাংক প্রথম ধাপে সবল ব্যাংক থেকে ৯০০ কোটি টাকার গ্যারান্টি পায়। শর্ত ছিল তিন মাসে এ ধার পরিশোধ করতে হবে। তবে তিন মাস সময় পার হয়ে গেলেও অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি দুর্বল ব্যাংকগুলো। এর ফলে ঋণ পরিশোধে আরও তিন মাস সময় বাড়িয়ে দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টি নিয়ে এখন পর্যন্ত সাতটি ব্যাংক ৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি টাকা পেয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। ব্যাংকটির ধার দুই হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ডলারের দাম নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা
নতুন বছরের শুরু থেকে ডলারের দাম আরও বাজারমুখী করতে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে অনুমোদিত ব্যাংকের শাখাগুলো তাদের গ্রাহক ও ডিলাররা নিজেরা আলোচনার মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করতে পারবে।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
এতে বলা হয়েছে, নতুন বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অনুমোদিত শাখাগুলো (এডি শাখা) থেকে প্রতিদিন দুইবার বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে পাঠাতে হবে। এক লাখ ডলারের বেশি কেনাবেচার তথ্য বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে জানাতে হবে। এছাড়া বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার পুরো তথ্য বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে জানাতে হবে। নির্ধারিত ছকে বাংলাদেশ ব্যাংককে এসব তথ্য জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ১২ জানুয়ারি থেকে বৈদেশিক মুদ্রার কেনাবেচার তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিদিনের একটি ভিত্তিমূল্য বা রেফারেন্স প্রাইস প্রকাশ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে এ ভিত্তিমূল্য প্রকাশ করা হবে।
এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে হস্তক্ষেপ বিষয়ক একটি নীতিমালা প্রকাশের ঘোষণাও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সব বৈদেশিক মুদ্রার দাম বাজারভিত্তিক রাখতে এই নীতিমালা হয়েছে। যাতে বাজারভিত্তিক দামের সুবিধা নিয়ে মুদ্রা বাজারকে কেউ অস্থিতিশীল করতে না পারে।
প্রসঙ্গত, ২০২৫ সালের মধ্যে ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। চলতি বছরের মধ্যে ডলারের দাম পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে ডলারের দাম আরও কিছুটা বাজারমুখী করতে নতুন প্রজ্ঞাপন দেওয়া হলো।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ধার শোধে আরও তিন মাস সময় পাচ্ছে দুর্বল ব্যাংক
গ্যারান্টির আওতায় ধার পাওয়া দুর্বল ব্যাংকগুলো প্রথম ধাপের ঋণ শোধ করতে পারেনি। ফলে ধার শোধে ব্যাংকগুলোকে আরও তিন মাস সময় বাড়িয়ে দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
তথ্য অনুযায়ী, গত ২২ সেপ্টেম্বর আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে দুর্বল পাঁচটি ব্যাংকে সবল ব্যাংক থেকে ধার নিতে গ্যারান্টি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকগুলো হলো- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক এবং ন্যাশনাল ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলো প্রথম ধাপে সবল ব্যাংক থেকে ৯০০ কোটি টাকার গ্যারান্টি পান। শর্ত ছিল তিন মাসে এ ধার শোধ করতে হবে। তবে তিন মাস সময় পার হয়ে গেলেও ব্যাংকগুলো অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি। ফলে ব্যাংকগুলোকে ঋণ শোধে আরও তিন মাস সময় বাড়িয়ে দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতিমধ্যে এমন একটি প্রস্তাবনা গভর্নরের কাছে উপস্থাপন করাও হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশসহ প্রায় ডজনখানেক ব্যাংক থেকে কয়েকটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠী নামে-বেনামে ঋণ বের করে নেয়। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক পলাতক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এসব ব্যাংকে অবৈধ সুবিধা দিয়ে টিকিয়ে রাখেন। তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে নতুন গভর্নর হিসেবে যোগদান করে ড. আহসান এইচ মনসুর সব অবৈধ সুবিধা বন্ধ করে দেন। এতে ব্যাংকগুলোর আসল চিত্র বেরিয়ে আসে। ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, এখন গ্রাহকের টাকাও দিতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে গত সেপ্টেম্বরে তারল্য সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে তহবিল পেতে গ্যারান্টি পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই গ্যারান্টির মাধ্যমে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো ভালো ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিতে পারে।
তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সাতটি ব্যাংক ৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা পেয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা পেয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। ব্যাংকটি ২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার তহবিল পায়। এছাড়া সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ১৭৫ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ১ হাজার কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংক ৪০০ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ২৯৫ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক ৯২০ কোটি এবং এক্সিম ব্যাংক ৭০০ কোটি টাকা তারল্য পায়।
যদিও গ্যারান্টির আওতায় পাওয়া টাকা দিয়ে ব্যাংকগুলোর সংকট কাটেনি।
ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক আবার ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাপিয়ে সহায়তা করে। যদিও ‘অতীতের মতো টাকা ছাপিয়ে সরকারকে বা কোনো ব্যাংককে অর্থ দেওয়া হবে না’ গত আগস্টে এমন মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। কিন্তু মাত্র তিন মাসের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।