অর্থনীতি
বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমেছে ভারতে, বেড়েছে থাইল্যান্ডে
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারেও পরিবর্তন এসেছে। দেশের বাইরে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহার এখন থাইল্যান্ডে। সম্প্রতি ভারতের পরিবর্তে থাইল্যান্ডে খরচ বেড়েছে বাংলাদেশিদের।
এর আগে ভারতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতেন বাংলাদেশিরা। প্রতি বছরই প্রতিবেশি দেশটিতে চিকিৎসা, কেনাকাটা ভ্রমণসহ বিভিন্ন কাজে অসংখ্য বাংলাদেশি ভারতে যান। এতে ক্রেডিট কার্ডে ভারতেই সব থেকে বেশি খরচ করতেন বাংলাদেশিরা। এখন সেই জায়গা দখলে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ড। এর ফলে ক্রেডিট কার্ডে ভারতে বাংলাদেশিদের ব্যয় তিন নম্বরে চলে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, দেশের বাইরে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহার এখন থাইল্যান্ডে। এক মাসের ব্যবধানে দেশটিতে ক্রেডিট কার্ডে খরচ বেড়েছে ১৬ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেছিলেন ৪২ কোটি টাকা। অক্টোবরে খরচের পরিমাণ একলাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ কোটি টাকায়। এর ফলে বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে দেশটি। যেখানে গত সেপ্টেম্বরেও দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ভারত।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটক ভিসা বন্ধ রেখেছে ভারত। ভিসা চালুর আশ্বাসও পাওয়া যায়নি। প্রতি বছরই সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি পর্যটক ভারতের কলকাতা, দিল্লি, দার্জিলিং, সিকিম, মেঘালয়ে যেতেন। ভিসা জটিলতার কারণে ভারতের পরিবর্তে এখন থাইল্যান্ডের দিকে ঝুঁকেছে বাংলাদেশি পর্যটকরা। এর ফলে ভারতের পরিবর্তে থাইল্যান্ডে খরচও বেড়েছে।
দেশের ক্রেডিট কার্ড ইস্যুকারী ৪৪টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের এবং দেশের ভেতরে বিদেশি নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের তথ্য তুলে ধরা হয় এ প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অক্টোবরে দেশে-বিদেশে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। দেশের অভ্যন্তরে এক মাসের ব্যবধানে ক্রেডিট কার্ডে খরচ বেড়েছে ১৯৭ কোটি টাকা বা সাড়ে ৭ শতাংশ আর বিদেশে খরচ বেড়েছে ৭৮ কোটি টাকা বা সাড়ে ১৮ শতাংশের বেশি। অক্টোবরে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ করা হয়েছে ২ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। যা তার আগের মাস সেপ্টেম্বরে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। অক্টোবরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিরা খরচ করেছেন ৪৯৯ কোটি টাকা। আগের মাস সেপ্টেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ৪২১ কোটি টাকা। বিদেশে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের সর্বোচ্চ ব্যবহার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। অক্টোবরে আমেরিকায় খরচ হয়েছে ৮৪ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে যার পরিমাণ ছিল ৭৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে খরচ বেড়েছে ৭ কোটি টাকা বা ৮ শতাংশের বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদেশে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে যত অর্থ খরচ করেন তার ২৮ শতাংশের বেশি খরচ হয় যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডে। অক্টোবর মাসে বিদেশের মাটিতে খরচ হওয়া ৪৯৯ কোটি টাকার মধ্যে ১৪১ কোটি টাকায় খরচ হয়েছে এই দুই দেশে। ক্রেডিট কার্ডে খরচের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। অক্টোবরে ভরতে বাংলাদেশিরা খরচ করেছেন ৫৪ কোটি টাকা, যা আগের মাসের চেয়ে চার কোটি টাকা বেশি।
বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে খরচের দিক থেকে এরপরে রয়েছে সিঙ্গাপুর। দেশটিতে অক্টোবরে বাংলাদেশিরা খরচ করেছেন ৪৩ কোটি টাকা যা তার আগের মাস সেপ্টেম্বরে ছিল ৩০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে সিঙ্গাপুরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ ১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে। গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে ১২৯ কোটি টাকা খরচ করেছেন। তার আগের মাস সেপ্টেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ১১১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে বিদেশিদের খরচ বেড়েছে ১৮ কোটি টাকা। এ দেশে বিদেশিরা ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি করেন নগদ অর্থ তোলার ক্ষেত্রে। অক্টোবরে ১২৯ কোটি টাকা খরচের মধ্যে ৪৭ কোটি টাকায় বিদেশিরা নগদে উত্তোলন করেছেন বলে প্রতিবেদনে উঠে আসে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বাতিল হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ ৪০ প্রকল্প
পতিত হাসিনা সরকারের নেওয়া প্রকল্পের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় ও মন্ত্রী-এমপিদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রকল্পই বেশি। এসব অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বাতিল হতে যাচ্ছে মৌলভীবাজারে সাবেক পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের বন ধ্বংস করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক তৈরির প্রকল্প। পাশাপাশি আরও ৪০টি প্রকল্প পর্যায়ক্রমে বাতিল করা হবে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা আগামী ২৩ ডিসেম্বর হবে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের ৫ম একনেক সভা। এ সভায় সাফারি পার্ক প্রকল্পটি বাতিল হবে।
কার্যতালিকা সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের ৫ম একনেক সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মোট ১৫টি প্রকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। এরমধ্যে ৮টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য এবং পরিকল্পনা উপদেষ্টা কর্তৃক অনুমোদিত ৬টি প্রকল্প প্রস্তাব একনেক সভাকে অবহিত করার জন্য উপস্থাপন করা হবে। বাকি একটি অনুমোদিত প্রকল্প বাতিলের জন্য প্রস্তাব করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, মৌলভীবাজারের লাঠিটিলা বনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক শীর্ষক প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি গত বছরের নভেম্বরে একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। এবার একনেক সভায় এটি বাতিলের অনুমোদন দেওয়া হবে।
শুধু এ প্রকল্প নয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া, অলাভজনক ও অগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাতিল করতে যাচ্ছে সরকার। যেগুলো বাতিলের পাশাপাশি অর্থায়ন স্থগিত অথবা ব্যয় কাটছাঁট করা হবে। এরই মধ্যে প্রায় ৪০টির অধিক প্রকল্প বাতিল অথবা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেগুলো ধারাবাহিকভাবে একনেক সভায় উত্থাপন করা হবে।
বাতিলের অপেক্ষায় থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- সুনামগঞ্জ জেলার সঙ্গে নেত্রকোনার সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে হাওরে উড়ালসড়ক নির্মাণের প্রকল্প। সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আগ্রহে নেওয়া প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
ফরিদপুর টেপাখোলা পার্ক স্থাপন প্রকল্পটি বাতিল হচ্ছে। সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন মন্ত্রী থাকার সময় নিজ নির্বাচনী এলাকায় পার্কটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন।
নেত্রকোনায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, যশোরে শেখ জহুরুল হক পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, খুলনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার এবং বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের জন্য ছয়টি ছাদখোলা ট্যুরিস্ট বাস সংগ্রহ প্রকল্প স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে যেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে সেগুলোর সময় না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি বাস্তবায়নে মেয়াদ থাকলেও কিছু প্রকল্পও স্থগিত করা হচ্ছে।
ঢাকার হেমায়েতপুর থেকে আফতাবনগর হয়ে দাশেরকান্দি পর্যন্ত মেট্রোরেলের সাউদার্ন রুট প্রকল্প (এমআরটি লাইন-৫) আপাতত বাদ রাখছে সরকার। এর বদলে সরকার গাবতলী থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত মেট্রোরেল (লাইন-২) নির্মাণে জোর দিচ্ছে। সংসদ সদস্যদের পছন্দ অনুযায়ী গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণের প্রকল্পটিও বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কাজে না লাগাই দুর্যোগকালে মানুষের আশ্রয়ের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ৫৫০টি মুজিব কিল্লা (আশ্রয়কেন্দ্র) নির্মাণকাজটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া ৩০টি সাইলো নির্মাণ, মুজিব কিল্লা, বজ্রনিরোধক দণ্ড বসানো, ১২টি আধুনিক তথ্য কমপ্লেক্স, ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন, পল্লি সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু, ঢাকা বিভাগে উপজেলা ও ইউনিয়নে সড়ক, আমার গ্রাম-আমার শহর, রংপুর সিটি করপোরেশন উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পগুলো বাতিল হচ্ছে।
এছাড়া ফেনী, চাঁদপুর ও টাঙ্গাইল জেলায় কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট নির্মাণ, ১২ জেলায় হাইটেক পার্ক, ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন, মোবাইল গেম অ্যাপ্লিকেশন, শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার এবং প্রান্তিক পর্যায়ে উন্নয়ন প্রচার বাতিল হচ্ছে। এছাড়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক সাবেক সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসানের নির্বাচনী এলাকায় নেওয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নের দুটি প্রকল্প বাতিল হচ্ছে বলে জানায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বাংলাদেশকে ৬০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে এডিবি
দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে ৬০ কোটি ডলার ঋণ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রতি ডলার সমান ১২০ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) নগরীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) স্ট্রেনদেনিং ইকোনমিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স প্রোগ্রামের আওতায় এই ঋণচুক্তি হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী ও এডিবি’র পক্ষে অফিসার্স ইন চার্জ জিংবো নিং এই ঋণচুক্তি সই করেন। ঋণচুক্তি অনুযায়ী এ কর্মসূচির পূর্বশর্তসমূহ এরই মধ্যে অর্জিত হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন এবং যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর, পরিকল্পনা কমিশনের আওতাধীন কার্যক্রম বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে।
এ কর্মসূচিটির নীতি সংস্কারের উদ্দেশ্য হলো দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ এবং বেসরকারি খাতের উন্নয়নে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদারকরণ।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
আরও ১ বিলিয়ন ডলার সহায়তার ইঙ্গিত আইএমএফের
চলমান চার দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রকল্পের সঙ্গে আরও নতুন ১ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার ইঙ্গিত দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন ডলারের জন্য কিছু নতুন শর্ত জুড়ে দিয়েছে সংস্থাটি। নতুন ঋণ ছাড়ের জন্য বাড়তি ৬ মাস সময় চেয়েছে আইএমএফ।
সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে দর কষাকষির পর ২০২৬ সালের পরবর্তী ছয় মাসে নতুন ঋণ দিতে সায় দিয়েছে আইএমএফ। তবে অর্থ উপদেষ্টার নতুন করে চাওয়া ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ বিষয়ে আইএমএফ আপাতত আগ্রহ দেখায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানায়, গত ৫ আগস্ট সরকার বদলের পরেই অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আইএমএফের কাছে নতুন করে ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণের প্রস্তাব দেন। এই ঋণ নিয়ে আইএমফের ঢাকায় সফররত মিশনের সঙ্গে কথা হয়। তারা চলমান ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণের বাইরে নতুন করে ঋণে আগ্রহ দেখায়নি। তবে আইএমএফ প্রাথমিকভাবে এক বিলিয়নের একটি বিকল্প প্রস্তাব দেয়। এতে তারা চলমান ঋণের কিস্তি শেষ হওয়ার পরে বাড়তি ৬ মাস সময় চায়।
একই সঙ্গে নতুন ঋণ ছাড়ের জন্য কিছু নতুন সংস্কার প্রস্তাব দেয়। আইএমএফের চলমান মিশনের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে শর্ত পূরণে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্মতি জ্ঞাপন করে। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য রেপ-আপ বৈঠকে এসব বিষয়ে চুক্তি হতে পারে বলে সূত্র নিশ্চিত করে।
অপর একটি সূত্র জানায়, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গত অক্টোবরে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক বৈঠকের ফাঁকে বিদ্যমান ঋণ কর্মসূচির অধীনে ওয়াশিংটনভিত্তিক বহুপাক্ষিক ঋণদাতা সংস্থার কাছে নতুন করে ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চেয়েছিলেন। আলোচনার পর বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ও বিদ্যমান ঋণের চতুর্থ কিস্তির কাঠামোগত সংস্কার শর্ত পালন নিয়ে পর্যালোচনা করতে মাসের শুরুতে ১৩ সদস্যের একটি আইএমএফ মিশন বাংলাদেশে আসে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজন জানান, ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়টি মিশনের সঙ্গে আলোচনার পর অতিরিক্ত সংস্কার শর্তের বিনিময়ে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান ঋণ কর্মসূচির অধীনে বাকি চারটি ধাপের প্রতিটিতে ১ বিলিয়ন ডলার করে আসবে।
এর আগে গত বছরের জানুয়ারিতে, আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে। এ পর্যন্ত ৩ কিস্তিতে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন দিয়েছে আইএমএফ। এদিকে আইএমএফ মিশন বিভিন্ন পলিসি ডকুমেন্টস চূড়ান্ত করতে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়। পলিসি ডকুমেন্টসের মধ্যে রয়েছে- সরকারের অর্থনৈতিক ও আর্থিক নীতির স্মারকলিপি, লেটার অব ইনটেন্ট, টেকনিক্যাল মেমোরেন্ডাম ও সমঝোতা স্মারক। আইএমএফ অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগে সন্তুষ্ট হলেও পরবর্তী ঋণের কিস্তির জন্য নির্দিষ্ট শর্ত আরোপ করবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, এবার আইএমএফ রাজস্ব আদায় বাড়ানো, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও সার খাতে ভর্তুকি কমানো এবং ব্যাংকিং খাতের সুশাসনের ওপর জোর দিয়েছে। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আগামী অর্থবছরের বাজেটে কর অব্যাহতি সংক্রান্ত সরকারের পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। তাছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পলিসি ও প্রশাসনকে আলাদা করতে এবং একাধিক ভ্যাট হার কমানোর শর্ত আরোপ করতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং ব্যাংকিং খাতের ক্ষেত্রে আইএমএফ বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ, ব্যাংক কোম্পানি আইন এবং দেউলিয়া আইন সংশোধনের জন্য বিভিন্ন শর্ত আরোপ করতে পারে। ভর্তুকি কমানো এবং মূল্য সমন্বয়ে সরকারের পরিধি কমিয়ে আনতে শর্তও দিতে পারে আইএমএফ।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকায় সফররত আইএমএফ মিশন চলতি ঋণ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। মিশন অনেক বিষয়ে ইতিবাচক। নতুন করে চাওয়া ৩ বিলিয়ন ঋণের বিষয়ে বলার মতো কিছু ঘটেনি। তবে চলমান ঋণের সঙ্গে নতুন এক বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। বুধবার শেষ বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে খোলসা করা জানানো হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
আদানি প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানি কমেছে এক তৃতীয়াংশ
ভারতীয় ব্যবসায়ী গৌতম আদানির মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কোম্পানি আদানি পাওয়ার থেকে গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানি প্রায় এক তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) ভারতের সরকারি এক পরিসংখ্যানে এই তথ্য জানা গেছে বলে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
ঝাড়খণ্ডের এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ হঠাৎ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বকেয়া সংক্রান্ত বিরোধ।
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়ে ২০১৭ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদী একটি বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তি স্বাক্ষর করে আদানি পাওয়ার। গড্ডায় অবস্থিত আদানির এই কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ রপ্তানি করা হয়, তা দেশটির মোট বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ।
বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি দেখা দেওয়ায় সম্প্রতি আদানিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ মূল্য পুনর্বিবেচনা করতে বলছে বাংলাদেশ। দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা অন্যান্য সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাঝে আদানির বিদ্যুতের দাম সর্বোচ্চ।
ভারতের ইস্টার্ন রিজিওনাল পাওয়ার কমিটির তথ্য অনুসারে, গত নভেম্বর মাসে গড্ডা প্ল্যান্ট বাংলাদেশে ৪৫০ মিলিয়ন কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুৎ রপ্তানি করেছে। যা বার্ষিক হিসাবের তুলনায় ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ কম। এই পতন মাসিক বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে গত বছরের ডিসেম্বরের পর সর্বনিম্ন।
শীতের মৌসুম শুরু হওয়ায় বাংলাদেশে বিদ্যুতের ব্যবহার ও চাহিদা কম থাকলেও বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আদানির কাছ থেকে আমদানি কমে যাওয়ায় বিদ্যুতের বার্ষিক চাহিদা মেটাতে জ্বালানি তেলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে ঝুঁকছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তেলের ব্যবহার গত নভেম্বরে ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। টানা ২১ মাস ধরে হ্রাস পাওয়ার পর পরপর তিন মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তেলের ব্যবহার বৃদ্ধি ঘটেছে।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎশক্তি সঞ্চালন প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, টানা পাঁচ মাস পতনের পর গত নভেম্বরে প্রাকৃতিক গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। অন্যদিকে, কয়লা-চালিত বিদ্যুতের উৎপাদন টানা তৃতীয় মাসের মতো হ্রাস পেয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
টানা তৃতীয়বার সিডিপির সদস্য হলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসিতে (সিডিপি) টানা তৃতীয়বারের মতো নিয়োগ পেয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সিডিপিতে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের তৃতীয় দফা নিয়োগ অনুমোদন দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। আগামী ১ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে এই নিয়োগ কার্যকর হবে। ২০১৮ সালে প্রথম ড. দেবপ্রিয় সিডিপিতে নিয়োগ পান।
কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) হলো জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশে দেশে উন্নয়নের ঝুঁকি নিরসনে সরকারকে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিয়ে থাকে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জন করতে সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে এই প্রতিষ্ঠান কাজ করে আসছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ক্ষেত্রেও এ প্রতিষ্ঠান অনন্য ভূমিকা পালন করে থাকে।
২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তরণের ক্ষেত্রে প্রদত্ত শর্তাবলি পরিপালন করছে কি না তাও দেখবে সিডিপি।