অর্থনীতি
বিটকয়েনের দামে নতুন রেকর্ড

নতুন রেকর্ড গড়েছে ক্রিপ্টোমুদ্রা বিটকয়েন। ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর মূল্যবৃদ্ধির যে ধারা শুরু হয়েছে, তা এখনো অব্যাহত আছে। সেই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার বিটকয়েনের দাম কিছু সময়ের জন্য ১ লাখ ৬ হাজার ডলারে উঠে যায়।
গত ৫ নভেম্বর মার্কিন নির্বাচনের পর এ নিয়ে ক্রিপ্টোমুদ্রা বিটকয়েনের দাম ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এই দৌড় কোথায় গিয়ে থামবে, সে কথা এখন কেউ ভাবতেও পারছেন না। গতকাল বিটকয়েনের দাম নতুন রেকর্ড গড়ার পর কিছুটা কমেছে—আজ সোমবার সকালে এশিয়ার বাজারে বিটকয়েনের দাম ১ লাখ ৪ হাজার ৫০০ ডলারে নেমে আসে।
ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর বিটকয়েনের এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে সবাই এখন কমবেশি অবগত। সেটা হলো, বাইডেন প্রশাসনের তুলনায় ট্রাম্প অনেক বিটকয়েনবান্ধব। এমনকি তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র হবে বিটকয়েনের রাজধানী; সেই সঙ্গে তাঁর প্রশাসনে আছেন বিটকয়েনপ্রেমী ও বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন এক ঘোষণা দিয়েছেন। সেটা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত তেল রিজার্ভের মতো ডিজিটাল মুদ্রার রিজার্ভ গড়ে তুলবেন তিনি।
চলতি মাসের শুরুর দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প সিলিকন ভ্যালির উদ্যোক্তা ও পেপলের সাবেক নির্বাহী ডেভিড স্যাক্সকে ক্রিপ্টোমুদ্রা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই স্যাক্স শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের বেশ ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এ ছাড়া ট্রাম্প সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রধান হিসেবে ক্রিপ্টোমুদ্রাবান্ধব পল অ্যাটকিন্সকে নিয়োগ দেবেন।
এদিকে গত মিসে এসইসির বর্তমান প্রধান গ্যারি জেন্সলার বলেছেন, ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প যেদিন শপথ নেবেন, সেদিন তিনি পদত্যাগ করবেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘আমার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ধন্যবাদ; এই পদে থাকাকালে এসইসি ভয়ভীতি ছাড়াই আইন প্রয়োগ করেছে।’
এর আগে অবশ্য ট্রাম্প বলেছিলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার পর প্রথম দিনেই তিনি জেন্সলারকে বরখাস্ত করবেন। কারণ আর কিছু নয়, সেটা হলো, জেন্সলার ক্রিপ্টো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।

অর্থনীতি
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাজেট অনুমোদন

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।
আজ রবিবার (২২ জুন) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত পরিষদের বৈঠকে বাজেটের অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বাজেট অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে তা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে। এক্ষেত্রে আজই বরাদ্দ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশ এবং শুল্ক–কর সংক্রান্ত আরেকটি অধ্যাদেশ জারি করার কথা রয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গত ২ জুন সোমবার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হয় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার নতুন বাজেট।
প্রস্তাবিত এ বাজেট নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গত ১৯ জুন পর্যন্ত নাগরিকদের নিকট থেকে মতামত গ্রহণ করা হয়। এরপর কিছু সংযোজন বিয়োজন কর বাজেটের খসড়া চূড়ান্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থনীতি
এনবিআর সংস্কার না হলে রাজস্ব ঘাটতি থাকবেই: সিপিডি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার না হলে রাজস্ব ঘাটতি চলতেই থাকবে বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্কার না হওয়ায় প্রতিবছর এনবিআর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে না।
রবিবার (২২ জুন) সকালে রাজধানী গুলশানের একটি হোটেলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নিয়ে আয়োজিত ডায়ালগে এসব কথা জানান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে না.. কেনো সেটা পারেনা? কারণ সেখানে কোনো কাঠামোগত বা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এখনো হয়নি। সংস্কার ছাড়া এই ধরনের কাঠামো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে রেখে এ রকম ঘাটতি চলতেই থাকবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রতিষ্ঠানটির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ, বিজিএমইএ এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইনামুল হক খান, ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা, শ্রমিক নেতা রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সূচনা বক্তব্যে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবার বাজেটে ঘোষণার পর আমরা যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়নি, যার কারণে জনগণ ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মতামত নীতি নির্ধারকদের কাছে পৌঁছানো যায়নি। আমার কাছে মূল বিষয় হচ্ছে রাজস্ব আয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে প্রত্যক্ষ আয় বেশি, পরোক্ষ আয় কম। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো আমাদের পরোক্ষ কর যা মূলত সাধারণ জনগণের ওপর পরে সেটা বেশি। আমাদের রাজস্ব আয়ের দুই তৃতীয়াংশ হচ্ছে পরোক্ষ কর। এক তৃতীয়াংশ হচ্ছে প্রত্যক্ষ কর। কিন্তু বাজেটের দর্শন হচ্ছে পুনর্বন্টন। যাদের আয় বেশি তাদের থেকে বেশি কর আদায় করা। যারা অবহেলিত বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের ওই করের টাকা ব্যয় করা। অর্থাৎ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা। পুনর্বন্টনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে বাজেটে সে বড় ধরনের পরিবর্তন দিতে পারে নাই। অথচ জুলাই-আগস্টের পর আমাদের বড় আকাঙ্খা ছিল। এবারে ব্যতিক্রমী বাজেট হবে, আমরা দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো।
মূল প্রবন্ধে ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, অর্থনৈতিক সমস্যা ও সংকটের সময় অন্তর্বর্তী সরকার বাজেটটি দিয়েছে। গত ৩ বছর ধরে অর্থনীতি সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে। অর্থনীতির মূল সূচকগুলো নিম্নমুখী। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা দুর্বলতম অবস্থায় ছিল। উচ্চমূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ, ব্যাংকিং খাতে দুর্বলতা- সব কিছু মিলিয়ে এই বাজেটটি প্রণীত হয়েছে। সেজন্য এই বাজেটের অগ্রাধিকার ঠিক করাটা চ্যালেঞ্জের। তবে মূল চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থীতিশীলতান পুন:রুদ্ধার করা। সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোর যেসব প্রক্ষেপণ দেওয়া হয়েছে সেগুলো উচ্চাকাঙ্ক্ষী মনে হয়েছে। অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক নিম্নমুখী, এর মধ্যে রপ্তানি, রিজার্ভ, রেমিট্যান্স এইগুলো ভালোর দিকে আছে। টাকা ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগে একেবারে স্থবিরতা রয়েছে। রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না।
উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রক্ষেপণ প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২০২৬ এর জন্য সাড়ে ৫ শতাংশ বলা হচ্ছে। ২০২৫ এর রিভাইজড বাজেটে এটা ছিল ৫ শতাংশ। অন্যদিকে বিবিএস বলেছে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। ৪ শতাংশ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশ করতে গেলে বেশ কিছুটা উল্লম্ফন দরকার। এই প্রবৃদ্ধির জন্য দরকার বিনিয়োগ।
বিনিয়োগ কোথা থেকে আসবে এমন প্রশ্ন করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, মূল বিনিয়োগ সরকারি বিনিয়োগ হয়ে আসছে। কারণ ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ আসছে না। সরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপির অনুপাত সামান্য কম দেখানো হয়েছে। ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ ও জিডিপির অনুপাত দেখানো হয়েছে এখানে উন্নতি বা ২৪.৩ শতাংশ হবে। এই প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে অতিরিক্ত ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা লাগবে। সাধারণ সময়ের তুলনায় যা ১২ শতাংশ বেশি। অর্থনৈতিক সংকটের এসময় ব্যক্তিখাতের প্রবৃদ্ধি হঠাৎ এতো বেড়ে যাবে সেটা বোধগম্য না।
ফাহমিদা বলেন, মূল্যস্ফীতির প্রবণতা কিছুটা কমেছে। ২০২৬ এ সাড়ে ৬ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি মে ২০২৫ এ ১০ শতাংশের ওপরে। সেখান থেকে সাড়ে ৬ শতাংশে আনতে হলে বেশ খানিকটা প্রচেষ্টা দিতে হবে। বাজেট অন্তর্বর্তী সরকার প্রণয়ন করবে কী না আমরা জানি না। কিংবা নতুন সরকার করবে.. তারপরও যেসব অসামঞ্জস্যতা, ঘাটতি পাচ্ছি। বাজেটের একটা মধ্যবর্তী রিভিউ হওয়া প্রয়োজন। সেটা এসেসমেন্ট করে জনসম্মুখে প্রকাশ করা প্রয়োজন। বাজেটের মধ্যবর্তী একটা সংশোধন, এসেসমেন্ট ও রিভিউ করা দরকার। তারপর কাঠামোর মধ্যে থেকে পরিমার্জন করা প্রণয়ন, যাতে এর মধ্যে স্বচ্ছতা থাকে। এছাড়া বাজেট বাস্তবায়নেও নজর দেওয়া উচিত।
অর্থনীতি
কালোটাকা সাদা করার সুবিধা থাকছে না: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুবিধা তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তবে অপ্রদর্শিত অর্থ হিসেবে বাজেটে কিছু সুযোগ থাকতে পারে বলে জানান তিনি।
শনিবার (২১ জুন) দুপুরে গবেষণা প্রতিষ্ঠান র্যাপিড আয়োজিত বাজেট আলোচনায় তিনি এসব কথা জানান।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ খুব একটা কাজে আসে না। পাঁচ কোটি টাকা দিয়ে কিনে কেউ যদি এক কোটিও দেখাতে না পারে, তাহলে এটা থাকার তো কোনো দরকার নেই। এতই যখন আলোচনা হয়েছে, তা তুলে দেওয়া হোক।
এ সময় তৈরি পোশাকশিল্প মালিকরা বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন বা উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের বিষয়টি একটি প্রস্তুতিহীন পরিকল্পনা। তারা এজন্য প্রস্তুত নন।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলেন, এটি একটি প্রস্তুতিহীন পরিকল্পনা, আমরা কোনোমতেই এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুত নই।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, গ্র্যাজুয়েশন-পরবর্তী প্রযুক্তির ব্যবহারে শিল্পখাতে কর্মসংস্থান কমার শঙ্কা আছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় বাড়াতে হবে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, গ্র্যাজুয়েশন আমাদের হয়ে গেছে ২০২১ সালে। এখন আমরা প্রথম তিন বছরের পর দুই বছর এক ধরনের গ্রেস পিরিয়ডে আছি। এখন নতুন করে যদি তিন বা পাঁচ বছর চাওয়া হয়–এটা এক ধরনের আবদার হতে পারে।
অর্থনীতি
আমদানি ও সেবা ব্যয় পরিশোধে ১ লাখ ডলার পর্যন্ত বিদেশে পাঠানো যাবে

ব্যবসায়ীরা এখন থেকে চলতি লেনদেনের মাধ্যমে পণ্য আমদানি ও সেবার ব্যয় মেটাতে সর্বোচ্চ এক লাখ ডলার পর্যন্ত বিদেশে পাঠাতে পারবেন। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
নতুন এই নির্দেশনার ফলে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বিদেশে অর্থ পাঠানো আরও সহজ ও দ্রুত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এখন থেকে বিদ্যমান শিল্পনীতির আওতায় থাকা সব খাতের কোম্পানি তাদের বার্ষিক বিক্রির ১ শতাংশ অথবা সর্বোচ্চ ১ লাখ মার্কিন ডলার, যেটি বেশি হবে, তা বিদেশে পাঠাতে পারবে, যদি তা চলতি হিসাবে লেনদেন হয়।
আগে এই সুবিধা শুধু উৎপাদন ও শিল্পনীতি অনুযায়ী তালিকাভুক্ত সেবা খাতের জন্য প্রযোজ্য ছিল। নতুন নির্দেশনায় এই সুবিধা আরও বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে, এখন থেকে ট্রেডিংসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়িক লেনদেনেও প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ পাঠানো যাবে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ব্যাংক, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানি, পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের মতো আর্থিক খাতগুলো এই নতুন নির্দেশনার বাইরে থাকবে।
এছাড়াও, রয়্যালটি, কারিগরি সহায়তা, টেকনিক্যাল নলেজ ফি এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি সংক্রান্ত রেমিট্যান্সও এই বিশেষ সুবিধার আওতায় পড়বে না। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা অনুযায়ী পূর্বের মতোই নির্ধারিত অনুমোদনের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
এই পদক্ষেপ কি দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে আপনি মনে করেন?
অর্থনীতি
বাংলাদেশের জন্য ৫০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন দিলো বিশ্বব্যাংক

নতুন করে বাংলাদেশের জন্য ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। এই ঋণের মূল উদ্দেশ্য হলো- বাংলাদেশের স্বচ্ছতা, সরকারি খাতের জবাবদিহিতা এবং আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করা। প্রতি ডলার সমান ১২২ টাকা ৩৭ পয়সা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এ ঋণের পরিমাণ ৬ হাজার ১১৮ কোটি টাকা।
শনিবার (২১ জুন) বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস এ তথ্য জানায়।
সংস্থাটি জানায়, সরকারের শাসন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতিস্থাপকতা উন্নয়নে এই ঋণ সহায়তা করবে। সরকারি ও আর্থিক খাতের সংস্কারকে সমর্থন করবে এই ঋণ, যা টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই সংস্কারগুলো ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের জন্য উন্নত পরিষেবার ভিত্তিও স্থাপন করবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি টেকসইভাবে বৃদ্ধির জন্য সরকারি অর্থায়ন কীভাবে পরিচালিত হয় তার উন্নতি গুরুত্বপূর্ণ। সরকার তার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও উন্মুক্ত এবং জবাবদিহিতামূলক করার জন্য উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ নিচ্ছে, যাতে তারা জনগণকে আরও ভালো সেবা দিতে পারে। এই অর্থায়ন সরকারের নীতিমালা এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামোকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে যাতে একটি শক্তিশালী, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি গড়ে তোলা যায়। যা সবার উপকার করে। গত সপ্তাহে অনুমোদিত আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে, আমরা এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়নে সরকারকে সহায়তা করছি।
সংস্থাটি জানায়, বর্তমানে, মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত সবচেয়ে কম, যা জনগণের কাছে মানসম্পন্ন পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত করে। এই কর্মসূচি অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহের উন্নতির লক্ষ্যে সংস্কারগুলোকে সমর্থন করে। এই সংস্কারগুলো আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম অনুশীলনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে কর প্রশাসন এবং নীতি নির্ধারণকে আরও স্বচ্ছ এবং দক্ষ করে তুলবে। এছাড়াও, এটি কর ছাড় পরিচালনার জন্য আরও কৌশলগত, নিয়মতান্ত্রিক এবং স্বচ্ছ পদ্ধতিতে যাওয়ার জন্য সংস্কারগুলোকে সমর্থন করবে যার জন্য সমস্ত ছাড়ের জন্য সংসদীয় অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। তবে বর্তমানে অ্যাডহক অনুশীলন থেকে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে সমস্যা নেই হবে। অর্থায়ন আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে আর্থিক প্রতিবেদনকে সামঞ্জস্য করে এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করে কর্পোরেট গভর্নেন্স এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কাঠামোকেও শক্তিশালী করবে। এটি ব্যাংকিং খাতে দুর্বলতা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংককে সম্পূর্ণ সমাধান ক্ষমতা দিয়ে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা উন্নত করতে সহায়তা করবে।
সংস্থাটি সরকারকে কিছু শর্ত দিয়ে জানায়, সংস্কারের তৃতীয় ধাপটি সরকারি খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং দক্ষতা উন্নত করবে। ২০২৭ সালের মধ্যে, সমস্ত সরকারি প্রকল্প মূল্যায়ন নথি জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করতে হবে। প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতির ঝুঁকি কমাতে সরকারি ক্রয় ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক সরকারি ক্রয় (ই-জিপি) ব্যবহার, সুবিধাভোগীর মালিকানা প্রকাশ এবং মূল্যসীমা অপসারণ বাধ্যতামূলক করা হবে। সরকারি খাতে আর্থিক জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা উন্নত করার জন্য, নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক কার্যালয়ের নিরীক্ষণ ক্ষমতা জোরদার করা হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর স্বাধীনতা তথ্য স্বচ্ছতা উন্নত করবে, যার ফলে নাগরিকদের জন্য উন্নত পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে। পরিশেষে, একটি গতিশীল সামাজিক রেজিস্ট্রি কার্যকর করার মাধ্যমে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণদের জন্য নগদ স্থানান্তর কর্মসূচি আরও কার্যকর করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ধ্রুব শর্মা বলেন, এই অর্থায়ন নাগরিকদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ, আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও শাসনব্যবস্থা এবং সরকারি খাতের কর্মক্ষমতা উন্নত করার জন্য বাংলাদেশের উচ্চাকাঙ্ক্ষী সংস্কারকে সমর্থন করি। তথ্য ব্যবস্থার উন্নতি এবং সুবিধাভোগীদের উন্নত নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়ার মাধ্যমে সরকারি সম্পদ কার্যকরভাবে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোতে পৌঁছাবে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক ধাক্কা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়।
এই অর্থায়নের মাধ্যমে, বিশ্বব্যাংকের চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রতি মোট নতুন প্রতিশ্রুতি ৩ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সহায়তাকারী অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশকে ৪৬ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান, সুদমুক্ত এবং ছাড়মূলক ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
কাফি