আইন-আদালত
শ্বেতপত্রের প্রতিবেদনে দুর্নীতি-লুটপাটের ভয়ংকর চিত্র

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে ব্যাপক রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট অবসান হয় আওয়ামী লীগের টানা দেড় দশকের শাসনের। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন প্রবল প্রতাপশালী শাসক হিসেবে পরিচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেড় দশকেরও বেশি সময় স্বৈরাচারী পদ্ধতিতে দেশ শাসন করা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ ছিল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লুটপাটের।
শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম এজেন্ডা ছিল তার আমলে সংঘটিত আর্থিক দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অনুসন্ধান। এর অংশ হিসেবে গত আগস্ট মাসের ২৮ তারিখে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা পর্যালোচনার জন্য বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত হয় একটি অনুসন্ধানী কমিটি।
তিন মাস বিস্তৃত গবেষণা ও তথ্য অনুসন্ধানের পর প্রতিবেদন তৈরি করে ‘অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি’ নামে অভিহিত এই অনুসন্ধানী কমিটি। খসড়া হিসেবে উপস্থাপিত ৩৯৯ পৃষ্ঠার এই সুবিশাল প্রতিবেদনের ছত্রে ছত্রে উঠে আসে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত দুর্নীতি, লুটপাট ও জনগণের অর্থ তসরুপের বিস্তৃত চিত্র।
২ ডিসেম্বর এই খসড়া শ্বেতপত্র প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সাংবাদিকদের সামনে মুখোমুখি হয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। সেখানে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত দুর্নীতির নানা চিত্র তুলে ধরেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
এ সময় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি সাংবাদিকদের জানায়, দেশে গত পনের বছরে ‘চামচা পুঁজিবাদ থেকেই চোরতন্ত্র’ তৈরি হয়েছিল, যাতে রাজনীতিক, সামরিক ও বেসামরিক আমলা, বিচার বিভাগসহ সবাই অংশ নিয়েছে। পাশাপাশি গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে পাচার হয় ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সুবিশাল খসড়া শ্বেতপত্রে দেখানো হয় বিগত সরকারের আমলে ২৮ উপায়ে সংঘটিত দুর্নীতির চিত্র। এছাড়া দেশের প্রধান প্রধান খাতকে দুর্নীতির ভয়াবহতা কোন মাত্রায় গ্রাস করে তার চিত্রও উঠে আসে এই প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনের ভূমিকায় ‘ম্যাগনিচুড অব করাপশন’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে বলা হয়, নিয়মিতভাবে কর ফাঁকি দেয়া, কর মাফের সুযোগের অপব্যবহার এবং জনগণের অর্থের অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ভূলুণ্ঠিত করে দেশের উন্নয়নকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বছরে গড়ে দেশের বাইরে অবৈধভাবে পাচার হয় ১৬ বিলিয়ন ডলার। যা দেশের মোট বৈদেশিক সাহায্য এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণের দ্বিগুণ। পাশাপাশি এই সময়ে যে কর মাফ করা হয়েছে তা দিয়ে শিক্ষা খাতের বরাদ্দকে দ্বিগুণ করা যেত এবং স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দকে তিনগুণ করা সম্ভব হতো। দুর্নীতির মাধ্যমে কিভাবে দেশের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করা হয়েছে, এই পরিসংখ্যান তার প্রমাণ।
দুর্নীতির কারণে দেশের বড় বড় প্রকল্পগুলোর ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৭০ শতাংশ, পাশাপাশি প্রকল্প সম্পন্নের সময় বিলম্বিত হয়েছে ৫ বছর। পাশাপাশি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এবং অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পে গত ১৫ বছরে বরাদ্দ হওয়া ৬০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৪ থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার লোপাট হয়েছে রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, ঘুষ এবং বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে। এছাড়া জমি অধিগ্রহণের সময় তহবিল তসরুপ এবং নিজেদের অনুগত ব্যক্তিদের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দানের মাধ্যমে সম্পদের অপচয় ঘটিয়ে অবকাঠামোগত ও সামাজিক সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা থেকে দেশকে বঞ্চিত করা হয়।
চাল, ভোজ্যতেল এবং গমের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন এবং চাহিদার তথ্যের বিকৃতির কারণে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অরাজকতা ও অস্থিতিশীলতা তৈরি হয় দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থাতেও।
শ্বেতপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, অবাস্তব ও রাজনৈতিক প্রভাবিত ক্রয় নীতির মাধ্যমে প্রভাবশালী ব্যবসায়িক গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়া হয়, যা সাধারণ ভোক্তাদের ভোগান্তিকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া মজুদের তথ্য নিয়মিতভাবে যাচাই করার ব্যবস্থাপনার অনুপস্থিতি এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকে দেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে তৈরি হওয়া অরাজক পরিস্থিতি ও লুটপাটের চিত্র উঠে আসে শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ঋণদানের প্রবণতা ব্যাংকিং খাতের সংকটকে আরও ঘনীভূত করে। ২০২৪ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংকিং খাত থেকে লোপাট হওয়া অর্থ দিয়ে দেশে ১৪টি মেট্রোরেল কিংবা ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হতো। অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণ এবং উচ্চ পর্যায়ের জালিয়াতি আর্থিক ভারসাম্যকে ভূলুণ্ঠিত করে এবং উৎপাদনমুখী খাতে বিনিয়োগ হ্রাস করে।
বিগত সরকারের আমলে অর্থ পাচারের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে জনশক্তি রফতানি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংশ্লিষ্টতা উঠে আসে শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে। গত এক দশকে ভিসা ক্রয়ের আড়ালে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশি ১৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হওয়ার তথ্য উঠে আসে শ্বেতপত্রে। যে অর্থ দিয়ে আরও চারটি ‘উত্তরা-মতিঝিল রুট’ এর সমমানের মেট্রোরেল সিস্টেম তৈরি করা সম্ভব ছিলো। এভাবে সিন্ডিকেটবাজি এবং কর্মী নিয়োগ পদ্ধতির দুর্নীতির মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীদের মানসম্মত কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়। যার ফলে কাঙ্ক্ষিত প্রবাসী আয় থেকে বঞ্চিত হয় দেশের অর্থনীতি।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সংঘটিত লুটপাট থেকে বাদ যায়নি সামাজিক নিরাপত্তা খাতও।
শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দের ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির শিকার হয়ে বঞ্চিত হন লাখ লাখ মানুষ। প্রতিবেদনে উঠে আসে, ২০২২ সাল পর্যন্ত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের মধ্যে ৭৩ শতাংশই দরিদ্র শ্রেণীভুক্ত ছিল না। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির এই অব্যবস্থাপনার ফল ভোগ করতে হয় দেশের দরিদ্র মানুষকে। মাত্র দুই দিন কাজ করতে ব্যর্থ হলেই দারিদ্যসীমার নিচে চলে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল দেশের দুই কোটি মানুষ। এই তথ্যেই উঠে আসে দুর্নীতির মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সামাজিক অসাম্য তৈরির চিত্র।
বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি ও লুটপাটের থাবা থেকে বাদ যায়নি দেশের পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতিও। জলবায়ু অভিযোজন সংক্রান্ত তহবিলে দুর্নীতির মাধ্যমে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয় বলে জানানো হয় শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে।

আইন-আদালত
আবু সাঈদ হত্যা মামলা: ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

জুলাই অভ্যুত্থানে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাইদ হত্যা মামলার অভিযোগ আমলে নিয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ দেয়।
এর আগে, এ মামলায় ৩০ জনকে আসামি করে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। পরে ট্রাইব্যুনালে আবু সাঈদ হত্যার ভিডিও দেখানো হয় এবং আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পড়ে শোনান চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। অভিযোগ আমলে নিয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।
আলোচিত এ মামলায় ৪ আসামি কারাগারে রয়েছেন। তারা হলেন সরাসরি গুলি করা পুলিশ সদস্য আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র, বেরোবির সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন আবু সাঈদ। ২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিরস্ত্র আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদেই সোচ্চার হন বহু মানুষ, যাতে আরও গতিশীল হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।
কাফি
আইন-আদালত
সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল ৩ দিনের রিমান্ডে

রাষ্ট্রদ্রোহ ও প্রহসনের নির্বাচন করার ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এ রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
এদিন মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কাজী হাবিবুল আউয়ালকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার এ আবেদন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ড মঞ্জুর চেয়ে শুনানি করেন পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী। অন্যদিকে আসামির রিমান্ড বাতিল ও জামিনের আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত।
বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর মগবাজার থেকে হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেফতার করে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন না করে উল্টো ভয়ভীতি দেখিয়ে জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে গত ২২ জুন একটি মামলা করে বিএনপি। সংগঠনের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন খান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। পরে ২৫ জুন এ মামলায় নতুন করে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ধারা যুক্ত করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার মো. আব্দুল মোবারক, আবু হানিফ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী, শাহ নেওয়াজ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, তৎকালীন পুলিশের আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, তৎকালীন ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার, সাবেক ডিজি র্যাব ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক এসবি প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, সাবেক ডিজিএফআই প্রধান (নাম অজ্ঞাত), সাবেক এনএসআই প্রধান ও সাবেক ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল আলম, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব, আলমগীর হোসেন, আনিছুর রহমান ও তৎকালীন নির্বাচন সচিব (নাম অজ্ঞাত)।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, ওই তিন নির্বাচনে গায়েবি মামলা, গণগ্রেফতার, অপহরণ, গুম খুন ও নির্যাতন চালিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়। সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও সংবিধান লঙ্ঘন, সরকারি কর্মচারী হয়েও অবৈধভাবে ভোটে হস্তক্ষেপ, ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটের কাজ সম্পন্ন করা ও জনগণের ভোট না পেলেও সংসদ সদস্য হিসেবে মিথ্যাভাবে বিজয়ী ঘোষণা করে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ করেন নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য আসামিরা।
এ ঘটনার সাক্ষী সকল ভোটকেন্দ্র এলাকার ভোটাররা এবং ভোটারদের মধ্যে যারা ভোট প্রদান করতে বঞ্চিত হয়েছেন তারাসহ ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য। এছাড়া ভোটকেন্দ্রে অনেক সৎ প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশ কর্মকর্তাসহ স্থানীয় লোকজনসহ আরও অনেকে ঘটনার সাক্ষী হবে। এছাড়া ব্যালট পেপারে যে সিল ও স্বাক্ষর রয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃতভাবে তারা ভোট দিয়েছে কি না, সে বিষয়ে উল্লিখিত ঘটনার সঠিক রহস্য তদন্তে সত্য উদঘাটিত হবে।
আইন-আদালত
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি ১ জুলাই

জুলাই অভ্যুত্থান দমন করতে গিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ১ জুলাই নির্ধারণ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেয়। শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন গাজী মোনাওয়ার হোসাইন তামিম।
এর আগে ১৬ জুন ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে এক সপ্তাহের মধ্যে হাজির হতে দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়। ১৭ জুন দেওয়া হয় আত্মসমর্পণের নির্দেশ।
বিগত বছরের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলাটি গঠিত হয়। মামলায় অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনা ছিলেন এ সব ঘটনার ‘পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা’।
২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর এই মামলার তদন্ত শেষ করার জন্য দুই মাস সময় নির্ধারণ করে আদালত। পরে ২০২৫ সালের ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ওই প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাকে ‘জুলাই গণহত্যার নির্দেশদাতা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
১ জুন ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ আমলে নেয়। ওইদিন নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের বিরুদ্ধে। আদালতে অভিযোগ পড়ে শোনান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, আব্দুস সোবহান তরফদার ও মিজানুল ইসলাম।
কাফি
আইন-আদালত
বিদেশে এস আলমের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজের নির্দেশ

আলোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে বিদেশে থাকা স্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুদকের পৃথক তিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেন।
দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক এসব সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তা মঞ্জুর করেন।
এসব সম্পত্তির মধ্যে সাইপ্রাসে সাইফুল আলমের নামে থাকা দোতলা একটি আবাসিক ভবন রয়েছে। এ ছাড়া ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে থাকা ১৮টি কোম্পানির শেয়ার ফ্রিজ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব কোম্পানির মধ্যে হাজেল ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লি. ও পিকক প্রপার্টি হোল্ডিংস লি. সম্পূর্ণ এস আলম পরিবারের মালিকানাধীন। বাকি ১৬ কোম্পানির শেয়ার শুধুমাত্র সাইফুল আলমের নামে।
এর বাইরে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের অধীন দ্বীপ অঞ্চল জার্সিতে সাইফুল আলম এবং তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন প্রতিষ্ঠিত ছয়টি ট্রাস্টের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এই ট্রাস্টগুলো জার্সি ভিত্তিক একটি ট্রাস্ট কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, এই ছয়টি ট্রাস্টের মধ্যে ‘ম্যাপল ট্রাস্ট’-এ মালয়েশিয়ার রেনেসাঁ হোটেল এবং ফোর পয়েন্টস বাই শেরাটনে ২১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে। অন্য ট্রাস্টগুলোর সম্পদের পরিমাণ এখনো অজ্ঞাত।
আইন-আদালত
সাবেক সিইসি নুরুল হুদা ৪ দিনের রিমান্ডে

‘প্রহসনের নির্বাচনের’ অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার (২৩ জুন) বিকেল ৩টার দিকে তাকে আদালতে আনা হয়। এসময় তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।
এর আগে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানি শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রোববার (২২ জুন) সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিন স্থানীয় জনগণ তাকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, লুঙ্গি পরিহিত নূরুল হুদাকে আটক করে জুতার মালা পরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
এর আগে, রোববার সকালে শেরেবাংলা নগর থানায় দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনাকারী কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নুরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি। দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ২৪ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়।