অর্থনীতি
সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে সম্পদের সুরক্ষা দাবি এস আলমের
দেশের ব্যাংকখাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপির দায়ে অভিযুক্ত এল আলম গ্রুপ; যার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম দাবি করেছেন, সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব এবং দেশটির সাথে বাংলাদেশের একটি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ চুক্তি থাকায় তাঁর ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক যে ভীতিপ্রদর্শন বা “হুমকি-ধামকির প্রচারণা” চালাচ্ছে তা থেকে তিনি সুরক্ষিত। বিদেশি বিনিয়োগকারী হিসেবে সম্পদের সুরক্ষা প্রদানের দাবিও করেছেন তিনি।
এমন দাবি করা হয়েছে একটি চিঠিতে, যা সাইফুল আলম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে পাঠান তাঁদের আইনজীবীরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে হুঁশিয়ারি দিয়ে চিঠিতে বলা হয়, এবিষয়ে তাঁরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে প্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বা এফটি।
কিছুদিন আগে এফটিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর অভিযোগ করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো থেকে অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা (১০ বিলিয়ন ডলার) পাচার করেছে সাইফুল আলম ও তাঁর সহযোগীরা। তারপরেই এই চিঠি দিল এস আলমের পক্ষে আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েল উরকুহার্ট অ্যান্ড সুলিভান।
এফটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিঠিতে আহসান এইচ মনসুরের বিরুদ্ধে এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে জনপরিসরে “উস্কানিমূলক ও অপ্রমাণিত মন্তব্য” করার অভিযোগ এনে বলা হয়েছে, গভর্নরের এ ধরনের আচরণ “একটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ভয়ভীতি ছড়ানোর প্রচারণার” শামিল। এই শিল্পগোষ্ঠী বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করেছে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে– শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এই সরকার দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঋণ অনিয়মের ঘটনায় জড়িত এস আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়। এরপরে সাইফুল আলমের পক্ষ থেকে এটিই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর সাবেক একজন শীর্ষ কর্মকর্তা হচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। নতুন সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগগুলোর মধ্যে তাঁর নিয়োগ ছিল অন্যতম। আগস্টে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত মাসে ব্রিটিশ গণমাধ্যম এফটিকে তিনি বলেন, প্রভাবশালী একটি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্যে সাইফুল আলম ও তাঁর সহযোগীরা দেশের শীর্ষ কয়েকটি ব্যাংকের দখল নিয়ে বিপুল অর্থ পাচার করেছে।
আহসান এইচ মনসুরের হিসেব অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো অধিগ্রহণের সময় নতুন অংশীদারদের ঋণ প্রদান ও আমদানি খরচ বেশি দেখানোর মতো কৌশল অবলম্বন করে এস আলম ও তাঁর সহযোগীরা “যেকোনো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ব্যাংক ডাকাতি করেছে।”
তবে গত মাসেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কুইন ইমানুয়েল উরকুহার্ট অ্যান্ড সুলিভানের মাধ্যমে এক বিবৃতি দেয় এস আলম গ্রুপ। এসব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে সেখানে দাবি করা হয়।
এস আলম গ্রুপের সিংহভাগ মালিকানা রয়েছে সাইফুল আলম, তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভিন ও তাঁর দুই ছেলে আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহিরের নামে। তাঁদের পক্ষ থেকে দেওয়া গভর্নর মনসুরকে দেওয়া চিঠিতে আনীত অভিযোগগুলো “স্বপ্রণোদিত মিথ্যাচার ও মানহানিকর” বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, “আপনার বিবৃতি এস আলম গ্রুপ এবং বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগকে ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিত একটি সুস্পষ্ট প্রচারণার লক্ষ্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়; এখানে উল্লেখ্য যে, আপনি সেই প্রচারাভিযানটি পরিচালনা না করলেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে।”
এই চারজন বিনিয়োগকারীর সকলেই সিঙ্গাপুরের নাগরিক বলে উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। সাইফুল আলম ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা কবে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নিয়েছেন এবং এরপরেও তাঁদের বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব ছিল কিনা– এবিষয়ে কুইন ইমানুয়েল উরকুহার্ট অ্যান্ড সুলিভানের কাছে জানতে চায় এফটি, তবে এতে সাড়া দেয়নি আইনজীবী সংস্থাটি। এবিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি সিঙ্গাপুর সরকারও।
বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি রয়েছে, যা ২০০৪ সালে করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ওই চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মনসুরের ভাষ্যকে “বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পক্ষের” বলে বিবেচনা করা যায়। অভিযুক্তরা সিঙ্গাপুরের নাগরিক এবং বাংলাদেশের ১৯৮০ সালের একটি বৈদেশিক বিনিয়োগ আইনের আওতায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের “অধিকার ও সুরক্ষা” দেওয়া হয়েছে।
এসব অধিকার সংরক্ষণে তাঁরা দরকারি সব পদক্ষেপ নেবেন উল্লেখ করা হয়। বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটস- এর দ্বারস্থ হওয়াও সম্ভাব্য আইনি পদক্ষেপের মধ্যে থাকতে পারে।
চিঠির বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এফটিকে বলেছেন, আগের সাক্ষাৎকারে তিনি ‘সম্পূর্ণরূপে প্রমাণিত’ অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, “অনেক ব্যাংকে তাঁরা বহু বছর ধরে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে এসেছে, যেসব ডকুমেন্টশনের কাজ এখনো চলছে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে কিছুটা সময় লাগবে।”
এদিকে এস আলমের আইনজীবী সংস্থার চিঠিতে বলা হয়, তাঁদের মক্কেলরা ব্যয়বহুল ও দীর্ঘ সময় ধরে আইনি প্রক্রিয়া এড়াতেই পছন্দ করবেন এবং এজন্য “আইন অনুসারে ও সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে” যেকোনো বিরোধের নিষ্পত্তি চান।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর যদি ‘মিথ্যা বিবৃতি’ প্রদানের মাধ্যমে তাঁদের মক্কেলদের ‘অধিকার ক্ষুণ্ণ করে’ – সেক্ষেত্রে এস আলম গ্রুপের কাছে আহসান এইচ মনসুরের বিরুদ্ধে ‘আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা ব্যতীত অন্য কোনো পন্থা থাকবে না’ বলেও সতর্ক করা হয়।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
জুনের মধ্যে ৬০০ কোটি ডলারের তহবিল প্রত্যাশা করছে সরকার: অর্থ উপদেষ্টা
চলতি অর্থবছরের মধ্যে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সরকার প্রায় ৬০০ কোটি ডলারের তহবিল পাওয়ার প্রত্যাশা করছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
গতকাল মঙ্গলবার উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনার পর সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে এই প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তির চতুর্থ কিস্তি ছাড়ার শর্ত পূরণের অগ্রগতি মূল্যায়ন করতে আইএমএফের তৃতীয় পর্যালোচনা মিশন মঙ্গলবার ঢাকায় পৌঁছেছে। ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও ওপেক তহবিলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এবং সরকার আগামী জুনের মধ্যে কিছু প্রতিশ্রুতি আশা করছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা অদূর ভবিষ্যতে এডিবি এবং ওপেক তহবিল থেকেও অর্থায়ন আশা করছি। প্রতিশ্রুতি আসবে, কিন্তু এক বছরেও সহায়তা সরবরাহ আসবে না।
আইএমএফ মিশন তাদের পরবর্তী কর্মপন্থা নিয়ে আরও আলোচনার জন্য আগামী বছরের মার্চ মাসে আবারও আসতে পারে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা।
চলমান ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্যাকেজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবার ১১১ কোটি ডলার ছাড় করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আইএমএফ মিশনের এই সফরে প্রাথমিকভাবে রাজস্ব খাত, রাজস্ব ঘাটতি, প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে। আমরা এখন পর্যন্ত যে কৌশলগুলো নিয়েছি এবং আগামীর জন্য যে পরিকল্পনাগুলো করেছি, তাও তারা মূল্যায়ন করবেন। ব্যাংকিং সংস্কার, খেলাপি ঋণ, আমানতকারীদের চাপসহ অন্যান্য বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করবে আইএমএফ মিশন।
পুরোপুরি না হলেও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার উন্নতি হয়েছে মন্তব্য করে সালেহউদ্দিন বলেন, বিনিয়োগ আকৃষ্ট এবং বিদেশি দাতাদের অবদান রাখতে উৎসাহিত করার এখনই সময়। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। কিছু ব্যাংকের তারল্য সহায়তার প্রয়োজন হলেও বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক—ইসলামী ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এবং অন্যান্য ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিধিনিষেধের কারণে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী থাকলেও আমদানি কম, বিশেষ করে উৎপাদনকারী উপকরণ।
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি যে, আমরা যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করবো, তা দীর্ঘমেয়াদে দেশকে উপকৃত করবে। আমরা এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্ভাব্য পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করছি।
আইএমএফ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বাস্তবসম্মত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করবে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, চলতি ঋণ প্যাকেজ নিয়ে আলোচনার পর বাড়তি অর্থায়নের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। আমরা এখন চলমান ঋণ প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা করছি, পরে অতিরিক্ত তহবিল চাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবো।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
পাকিস্তানের কাছ থেকে ২৫ হাজার টন চিনি কিনল বাংলাদেশ
পাকিস্তানের কাছ থেকে উচ্চ মানসম্পন্ন ২৫ হাজার টন চিনি কিনেছে বাংলাদেশ। আগামী মাসেই বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছাবে এই চিনি। কয়েক দশক পর এই দেশটির কাছ থেকে এতো বিপুল পরিমাণে চিনি কিনল ঢাকা। এর আগে ভারতের কাছ থেকে চিনি কিনতো বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের কাছ থেকে ২৫ হাজার টন উচ্চমানের চিনি কিনেছে বাংলাদেশ, যা আগামী মাসে করাচি বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে। কর্মকর্তাদের মতে, বহু দশক পর ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ বাংলাদেশে এত বিপুল পরিমাণে নিজেদের উৎপাচিত পণ্য পাঠাচ্ছে পাকিস্তানি চিনি শিল্প।
গত সোমবার (২ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম প্রতি টনে ৫৩০ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, এর আগে ভারত থেকে চিনি আমদানি করে আসছিল বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের অনুমোদনের পর এই বছর কমবেশি ৬ লাখ টন চিনি রপ্তানির চুক্তি করেছে পাকিস্তানের চিনি শিল্প।
এর মধ্যে ৭০ হাজার টন চিনি পাকিস্তান থেকে পাঠানো হবে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে। থাইল্যান্ড পাকিস্তানের চিনি শিল্প থেকে ৫০ হাজার টন চিনি কিনেছে। পাকিস্তানের চিনি ব্যবসায়ীদের কর্মকর্তা মজিদ মালিকের মতে, উপসাগরীয় রাষ্ট্র, আরব দেশ এবং আফ্রিকান দেশগুলোও পাকিস্তান থেকে চিনি কেনার চুক্তি করেছে।
চিনি রপ্তানি থেকে পাকিস্তান ৪০০-৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করবে। মূলত পাকিস্তানের চিনি শিল্প দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির জন্য একটি প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী শিল্প হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম বলছে, দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের যৌথ প্রচেষ্টায় দেশের চিনি শিল্পও সফলভাবে বিপুল পরিমাণ চিনি রপ্তানি করে চলেছে। এর আগে এসব চিনি আফগানিস্তানের মধ্য দিয়ে উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কাজাখস্তান এবং আজারবাইজানে পাচার হয়ে যেত।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
এলডিসি থেকে উত্তরণ ২০২৬ সালের নভেম্বরেই: বাণিজ্য উপদেষ্টা
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে ২০২৬ সালের নভেম্বরেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে চলেছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হবে এটি এবং এ পরিবর্তন বিপুল পরিমাণ সুযোগ তৈরি করবে। তবে এ জন্য আমাদের ব্যবসায়িক সংগঠন ও মানবসম্পদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিরোধ নিষ্পত্তি–সংক্রান্ত জাতীয় কর্মশালাবিষয়ক তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যসচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের পরিচালক জর্জ ক্যাস্ট্রো ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাওসার চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যম শ্রেণির কর্মচারী ও ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেন।
এর আগে গত শনিবার ঢাকা চেম্বার আয়োজিত এক বাণিজ্য সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের একাংশ ২০২৬ সালে এলডিসি তালিকা থেকে বের হওয়া পিছিয়ে দেওয়া যায় কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন।
ওই দিন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি জাভেদ আখতার বলেছিলেন, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হওয়ার দরকার আছে কি না, সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো নেওয়া যাবে কি না, এখনই তা ভেবে দেখা দরকার। অন্য ব্যবসায়ীরাও এ বিষয়ে একই ভাষায় কথা বলছিলেন।
এলডিসি থেকে উত্তরণ নিয়ে ওই দিন শেখ বশিরউদ্দীনের জবাব ছিল, এটা করতে হবে। ২০২৬ না ২০৩০, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে, কিন্তু এটা করতেই হবে। যথাযথ নীতি তৈরি করতে পারলে এটা সম্ভব।
এর আগে গত ১২ আগস্ট ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ এক বক্তব্যে বলেছিলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ ১০ বছর পিছিয়ে দেওয়া দরকার। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অর্থায়নের সুযোগ ও জিএসপি প্লাসের প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ এবং সেই বিনিয়োগের জোগান দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই দেশের ব্যাংক খাত। এ কারণেই এলডিসি থেকে উত্তরণের দরকার নেই বলে তিনি মত দেন।
এলডিসি থেকে বের হলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। গরিব বা এলডিসির তকমা থাকবে না। পুরোপুরি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিবেচিত হবে বাংলাদেশ, যাতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ হবে। ডব্লিউটিওর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এলডিসি থেকে বের হলে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর নিয়মিত হারে শুল্ক বসবে। বাড়তি শুল্কের কারণে রপ্তানি কমতে পারে বছরে ৫৩৭ কোটি মার্কিন ডলারের (প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা)।
আজ সকালে কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থায় নিরাপত্তা ও পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা যতই এগিয়ে যাব, ততই অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ), সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (সিইপিও) করার জন্য দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পাশাপাশি বহুপক্ষীয় আলোচনা করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), দক্ষিণ এশীয় উপ–আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (সাসেক) ও আসিয়ানের মতো আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কও গভীরতর করতে হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তি পাওয়া যাবে ফেব্রুয়ারি-মার্চে
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের চতুর্থ কিস্তির ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালাহউদ্দীন আহমেদ।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি সরকারের শীর্ষ পর্যায়, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আজকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল এসেছিল। তাদের সঙ্গে ঋণ প্যাকেজ ৪.৭ বিলিয়ন ডলারে মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ১.১ বিলিয়ন ডলার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে এটা পেয়ে যাব।
তিনি বলেন, আমাদের স্থিতিশীলতা কিন্তু ফিরে আসছে। সম্পূর্ণ আসে নাই, তবে এখন সময় বিনিয়োগের। আপনারা দেখবেন ফরেন এক্সচেঞ্জ রেট আগের মতো ওঠানামা করছে না। ব্যাংকিং খাতের মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের লিকুইডিটি সার্পোট লাগছে। তবে ইসলামী ব্যাংকের মতো বড় ব্যাংক কিছুটা ফিরে আসছে। ইসলাসী ব্যাংক সব বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যাংক। অন্যান্য ব্যাংকগুলোও ধীরে ধীরে ফিরে আসবে।
তিনি বলেন, রেমিট্যান্স খুবই ভালো। রপ্তানিও হচ্ছে ভালো, আমদানি একটু কম আছে। তবে আগের থেকে একটু বেড়েছে। মূলধনি যন্ত্রপাতি কিছু কম আসছে, সেটা কিছু রেস্ট্রিকশনের কারণে। সেটা আমরা চিন্তা করছি, কী করা যায়। তারা আমাদের এখানে থাকবে কিছুদিন। আমরা তাদের বলেছি আমরা এমন কিছু নেব যেটা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হয়। আমরা এমন কিছু নেব না যেটা নিজের।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, তারা কতগুলো লক্ষ্যমাত্রা দেবে সেটা করতে পারব কিনা, সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু আমি আশা করি তারা বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য সহায়তা দেবে।
অতিরিক্ত ফান্ডের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উপদেষ্টা বলেন, অতিরিক্ত ফান্ডের বিষয়ে আমরা আবার আলোচনা করে বলব। চলমান ৪.৭ বিলিয়ন ডলার তো প্রথম প্যাকেজের। কিন্তু সংস্কার করতে হলে আমাদের ফান্ড লাগবে। আমাদের অনেক কিছু সংস্কার করতে হচ্ছে, যেমন- ব্যাংকিং খাত, রাজস্ব খাত। এগুলো করতে আমাদের ফান্ড লাগবে।
তিনি বলেন, কিছুদিন পর এডিবি আসবে, ওপেক ফান্ডের টাকা আসবে। সব মিলিয়ে আগামী জুনের মধ্যে ৬ বিলিয়ন ডলার পাব।
শ্বেতপত্র নিয়ে তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আইএমএফের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি।
উল্লেখ্য, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমতে থাকার মধ্যে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। এর তিনদিন পর প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করে সংস্থাটি। এরপর গত ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়।
২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির পরবর্তীগুলোতে সমান অর্থ থাকার কথা ছিল। কিন্তু রিজার্ভ আরও কমে যাওয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তিতে বেশি অর্থ চায় বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বেশকিছু কঠিন শর্তের বাস্তবায়ন এবং আগামীতে আরও বড় সংস্কার কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সংস্থাটি তৃতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ডলারের পরিবর্তে ১১৫ কোটি ডলার দিয়েছে। এখন চতুর্থ কিস্তিতে ১.১ বিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হয়েছে। তবে মোট ঋণের পরিমাণ এবং মেয়াদ একই থাকবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ইউসিবি ও ন্যাশনাল ফাইন্যান্স চেয়ারম্যানের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির (ইউসিবি) চেয়ারম্যান শরীফ জহির ও তার ভাই ন্যাশনাল ফাইন্যান্স লিমিটেডের (এনএফএল) চেয়ারম্যান আসিফ জহিরের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার মা কামরুন নাহারের ব্যাংক হিসাব স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়ে অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে বলেছে। হিসাব জব্দ করা ব্যক্তি ও তাদের ব্যক্তি মালিকানা ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টের সব লেনদেন বন্ধ থাকবে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আয়কর আইন ২০২৩-এর ২২৩ ধারার ক্ষমতাবলে শরীফ জহির, তার ভাই আসিফ জহির ও তাদের মা কামরুন নাহার এবং সৈয়দ ইশতিয়াক ইসলাম (পিতা- সৈয়দ দিদারুল আলম) ও তাদের পরিবারের (পিতা, মাতা, ভাই, বোন, স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা) নামে পরিচালিত সব হিসাব (ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, ভল্ট লকার) অর্থসম্পদ লেনদেন স্থগিত করতে বলা হয়েছে।
শরীফ জহির ইউসিবি ব্যাংকের নবগঠিত বোর্ডের চেয়ারম্যান। তিনি পোশাক ও বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠান অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার ভাই আসিফ জহির সম্প্রতি এনএফএলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি অনন্ত গ্রুপে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া, তিনি আসিফ জহির সিন্দাবাদডটকম লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও এমডি।