অর্থনীতি
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়লো আরও ১ মাস

ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যক্তি করদাতারা রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।
আজ রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি করবর্ষের জন্য কোম্পানী ব্যতিত সকল শ্রেনীর করদাতার আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর। আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বৃদ্ধির ফলে অনলাইন ও অফলাইন উভয় প্রকার রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে কোম্পানি ব্যতীত সকল করদাতার জন্য জরিমানা ছাড়া রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, এ বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিশেষ আদেশের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে অবস্থিত সকল সরকারি কর্মচারী, সারাদেশের সকল তফশিলি ব্যাংক এর কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ, সারাদেশের সকল মোবাইল টেলিকম সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ এবং উক্ত আদেশে উল্লিখিত বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীগণের আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পেশার করদাতাগণের পক্ষ হতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ করা হয়েছে। সম্মানিত করদাতাগণের সুবিধার্থে কোম্পানি ব্যতীত সকল করদাতার অনলাইনে ই-রিটার্ণ ও অফলাইনে কাগজের রিটার্ণ দাখিল উভয় ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ণ দাখিলের সময় এক মাস বাড়িয়ে আজ ১৭ নভেম্বর তারিখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একটি আদেশ জারী করেছে। আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বৃদ্ধির ফলে অনলাইন ও অফলাইন উভয় প্রকার রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে কোম্পানি ব্যতীত সকল করদাতার জন্য জরিমানা ছাড়া রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে তিন লক্ষ পচাত্তর হাজার সম্মানিত করদাতা অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করেছেন। এ বছর সম্মানিত করদাতাগণের রিটার্ন দাখিলের অভিজ্ঞতা ঝঞ্জাটমুক্ত হবে বলে মনে করে এনবিআর।
কাফি

অর্থনীতি
এনসিটি চালাতে ৬ মাসে ৪২ কোটি টাকা চায় চট্টগ্রাম বন্দর

বহু আলোচনা-সমালোচনার পর বেসরকারি অপারেটর সাইফ পাওয়ার টেককে বাদ দিয়ে অবশেষে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনা করতে চায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে আগামী ৬ মাস এনসিটি অপারেশনের জন্য ৪২ কোটি টাকা ব্যয় অনুমোদন চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
গত ১৯ জুন এনসিটি চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার বিষয়ে অর্থনৈতিক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর চিঠি দেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এনসিটি টার্মিনালটি বর্তমানে প্রাইভেট অপারেটরের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। আগামী ৬ জুলাই অপারেটরের কার্যাদেশের মেয়াদ শেষ হবে। উক্ত মেয়াদের পরে এনসিটি পরিচালনার বিষয়ে গত ১৮ জুন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রণালয়ের ওই সভার আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এনসিটি বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অপারেশনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।
সিনিয়র সচিবকে দেওয়া ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, টার্মিনালটি আপাতত ৬ মাস অপারেশনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের ওই সভায় বিস্তারিত তথ্যাদি উপস্থাপন করা হয়। মন্ত্রণালয়ের সভার তথ্য অনুযায়ী এনসিটি টার্মিনালে বর্তমানে স্থিত কী-গ্যান্ট্রি ক্রেন (কিউজিসি), রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি (আরটিজি) ক্রেনসহ অন্যান্য ইক্যুইপমেন্ট পরিচালনা এবং আইটি ব্যবস্থাপনাসহ টার্মিনালটি পরিচালনায় মাসিক ৭ কোটি টাকা হারে ৬ মাসে আনুমানিক ৪২ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, যেহেতু এনসিটির অপারেটরের মেয়াদ আগামী ৬ জুলাই শেষ হচ্ছে, এতে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখার জন্য টার্মিনালটির অপারেশন সচল রাখা অত্যাবশ্যক। উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগ করা সময়সাপেক্ষ, সেহেতু সরকার পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৬ এর ৬৮ ধারা অনুসারে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে জনস্বার্থে ৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বের ক্রয়ের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশক্রমে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) প্রয়োগ করে ক্রয়কার্য সম্পন্ন করতে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বিতর্কিত অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেককে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আগামী ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বন্দরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আর চুক্তি নবায়ন করবে না বন্দর কর্তৃপক্ষ। সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনায় আপাতত নিজেদের তত্ত্বাবধানে এই টার্মিনাল অপারেট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র ও চিফ পারসোনেল অফিসার মো. নাসির উদ্দিন বলেন, এনসিটি পরিচালনায় বর্তমান অপারেটরের মেয়াদ ৬ জুলাই শেষ হবে। এরপর এনসিটির অপারেশন সচল রাখার করণীয় নির্ধারণ করতে গত ১৮ জুন মন্ত্রণালয়ে মিটিং হয়েছে। ওই মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এনসিটি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অপারেশন করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
তিনি বলেন, ‘আপাতত এনসিটি আগামী ৬ মাস বন্দর অপারেশন করবে। এজন্য ৪২ কোটি টাকা ব্যয় অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপারেটর নিয়োগের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
অর্থনীতি
জ্বালানি তেলের আমদানি কর কমিয়ে ২ শতাংশ করলো সরকার

দেশের জ্বালানি খাতে কিছুটা স্বস্তি আনার লক্ষ্যে রিফাইন্ড পেট্রোলিয়াম (পরিশোধিত জ্বালানি) আমদানির ওপর আগাম কর হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে সরকার।
রোববার (২২ জুন) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের চূড়ান্ত বাজেটে এই প্রস্তাব অনুমোদন পায়।
এই সিদ্ধান্তের ফলে জ্বালানি খাতে বিশেষ করে আমদানি নির্ভর পরিশোধিত জ্বালানির খরচ কিছুটা হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে আমদানিকারকদের ওপর করের পূর্বব্যয় কমে আসায় জ্বালানি সরবরাহ শৃঙ্খলায় স্থিতিশীলতা বাড়বে।
বর্তমানে বিপুল পরিমাণ রিফাইন্ড পেট্রোলিয়াম পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত দেশের শিল্প ও পরিবহন খাতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কারণ, জ্বালানি খরচ কমলে উৎপাদন খরচ হ্রাস পাবে এবং পরিবহন ব্যয়েও স্থিতিশীলতা আসবে।
কাফি
অর্থনীতি
১৮ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১.৮৬ বিলিয়ন ডলার

প্রবাসী আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে চলতি জুন মাসেও। এই মাসের প্রথম ১৮ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রায় ১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন বা ১৮৬ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)। সে হিসেবে প্রতিদিন রেমিট্যান্স আসছে ১০ কোটি ৩৩ লাখ ডলার।
রবিবার (২২ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে জুন মাসের ১৮ তারিখ পর্যন্ত মোট ২৯ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা তার আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স।
এর আগে সদ্য বিদায়ী মে মাসও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। পুরো মে মাসে এসেছিল ২৯৭ কোটি বা ২.৯৭ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ছিল ৩৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা। আর প্রতিদিন এসেছিল ৯ কোটি ৫৮ লাখ ডলার বা ১১৬৯ কোটি টাকা। আর দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সে এসেছিল গত মার্চ মাসে ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে আসে ২৭৫ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এব সবশেষ মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।
অর্থনীতি
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাজেট অনুমোদন

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।
আজ রবিবার (২২ জুন) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত পরিষদের বৈঠকে বাজেটের অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বাজেট অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে তা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে। এক্ষেত্রে আজই বরাদ্দ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশ এবং শুল্ক–কর সংক্রান্ত আরেকটি অধ্যাদেশ জারি করার কথা রয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গত ২ জুন সোমবার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হয় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার নতুন বাজেট।
প্রস্তাবিত এ বাজেট নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গত ১৯ জুন পর্যন্ত নাগরিকদের নিকট থেকে মতামত গ্রহণ করা হয়। এরপর কিছু সংযোজন বিয়োজন কর বাজেটের খসড়া চূড়ান্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থনীতি
এনবিআর সংস্কার না হলে রাজস্ব ঘাটতি থাকবেই: সিপিডি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার না হলে রাজস্ব ঘাটতি চলতেই থাকবে বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্কার না হওয়ায় প্রতিবছর এনবিআর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে না।
রবিবার (২২ জুন) সকালে রাজধানী গুলশানের একটি হোটেলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নিয়ে আয়োজিত ডায়ালগে এসব কথা জানান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে না.. কেনো সেটা পারেনা? কারণ সেখানে কোনো কাঠামোগত বা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এখনো হয়নি। সংস্কার ছাড়া এই ধরনের কাঠামো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে রেখে এ রকম ঘাটতি চলতেই থাকবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রতিষ্ঠানটির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ, বিজিএমইএ এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইনামুল হক খান, ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা, শ্রমিক নেতা রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সূচনা বক্তব্যে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবার বাজেটে ঘোষণার পর আমরা যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়নি, যার কারণে জনগণ ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মতামত নীতি নির্ধারকদের কাছে পৌঁছানো যায়নি। আমার কাছে মূল বিষয় হচ্ছে রাজস্ব আয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে প্রত্যক্ষ আয় বেশি, পরোক্ষ আয় কম। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো আমাদের পরোক্ষ কর যা মূলত সাধারণ জনগণের ওপর পরে সেটা বেশি। আমাদের রাজস্ব আয়ের দুই তৃতীয়াংশ হচ্ছে পরোক্ষ কর। এক তৃতীয়াংশ হচ্ছে প্রত্যক্ষ কর। কিন্তু বাজেটের দর্শন হচ্ছে পুনর্বন্টন। যাদের আয় বেশি তাদের থেকে বেশি কর আদায় করা। যারা অবহেলিত বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের ওই করের টাকা ব্যয় করা। অর্থাৎ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা। পুনর্বন্টনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে বাজেটে সে বড় ধরনের পরিবর্তন দিতে পারে নাই। অথচ জুলাই-আগস্টের পর আমাদের বড় আকাঙ্খা ছিল। এবারে ব্যতিক্রমী বাজেট হবে, আমরা দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো।
মূল প্রবন্ধে ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, অর্থনৈতিক সমস্যা ও সংকটের সময় অন্তর্বর্তী সরকার বাজেটটি দিয়েছে। গত ৩ বছর ধরে অর্থনীতি সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে। অর্থনীতির মূল সূচকগুলো নিম্নমুখী। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা দুর্বলতম অবস্থায় ছিল। উচ্চমূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ, ব্যাংকিং খাতে দুর্বলতা- সব কিছু মিলিয়ে এই বাজেটটি প্রণীত হয়েছে। সেজন্য এই বাজেটের অগ্রাধিকার ঠিক করাটা চ্যালেঞ্জের। তবে মূল চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থীতিশীলতান পুন:রুদ্ধার করা। সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোর যেসব প্রক্ষেপণ দেওয়া হয়েছে সেগুলো উচ্চাকাঙ্ক্ষী মনে হয়েছে। অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক নিম্নমুখী, এর মধ্যে রপ্তানি, রিজার্ভ, রেমিট্যান্স এইগুলো ভালোর দিকে আছে। টাকা ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগে একেবারে স্থবিরতা রয়েছে। রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না।
উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রক্ষেপণ প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২০২৬ এর জন্য সাড়ে ৫ শতাংশ বলা হচ্ছে। ২০২৫ এর রিভাইজড বাজেটে এটা ছিল ৫ শতাংশ। অন্যদিকে বিবিএস বলেছে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। ৪ শতাংশ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশ করতে গেলে বেশ কিছুটা উল্লম্ফন দরকার। এই প্রবৃদ্ধির জন্য দরকার বিনিয়োগ।
বিনিয়োগ কোথা থেকে আসবে এমন প্রশ্ন করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, মূল বিনিয়োগ সরকারি বিনিয়োগ হয়ে আসছে। কারণ ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ আসছে না। সরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপির অনুপাত সামান্য কম দেখানো হয়েছে। ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ ও জিডিপির অনুপাত দেখানো হয়েছে এখানে উন্নতি বা ২৪.৩ শতাংশ হবে। এই প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে অতিরিক্ত ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা লাগবে। সাধারণ সময়ের তুলনায় যা ১২ শতাংশ বেশি। অর্থনৈতিক সংকটের এসময় ব্যক্তিখাতের প্রবৃদ্ধি হঠাৎ এতো বেড়ে যাবে সেটা বোধগম্য না।
ফাহমিদা বলেন, মূল্যস্ফীতির প্রবণতা কিছুটা কমেছে। ২০২৬ এ সাড়ে ৬ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি মে ২০২৫ এ ১০ শতাংশের ওপরে। সেখান থেকে সাড়ে ৬ শতাংশে আনতে হলে বেশ খানিকটা প্রচেষ্টা দিতে হবে। বাজেট অন্তর্বর্তী সরকার প্রণয়ন করবে কী না আমরা জানি না। কিংবা নতুন সরকার করবে.. তারপরও যেসব অসামঞ্জস্যতা, ঘাটতি পাচ্ছি। বাজেটের একটা মধ্যবর্তী রিভিউ হওয়া প্রয়োজন। সেটা এসেসমেন্ট করে জনসম্মুখে প্রকাশ করা প্রয়োজন। বাজেটের মধ্যবর্তী একটা সংশোধন, এসেসমেন্ট ও রিভিউ করা দরকার। তারপর কাঠামোর মধ্যে থেকে পরিমার্জন করা প্রণয়ন, যাতে এর মধ্যে স্বচ্ছতা থাকে। এছাড়া বাজেট বাস্তবায়নেও নজর দেওয়া উচিত।