আইন-আদালত
আদালতে আমুর আইনজীবীকে মারধর
হত্যা মামলার অভিযোগে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুর রিমান্ড শুনানিতে তার আইনজীবী স্বপন রায়চৌধুরী অন্য আইনজীবীদের মারধরের শিকার হয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহীন রেজার আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
এদিন রিমান্ড শুনানিতে আমুর রিমান্ডের পক্ষে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। এ সময় তার বক্তব্যটি রাজনৈতিক বলে মন্তব্য করেন আসামি আমুর আইনজীবী স্বপন রায়চৌধুরী। তখন উত্তেজিত হয়ে আদালতে উপস্থিত অন্য আইনজীবীরা তাকে মারধর শুরু করেন। মারধরের ঘটনায় তিনি আদালতের দরজার সামনে পড়ে গেলে তাকে লাথি মারা হয়। এরপর কয়েকজন আইনজীবী স্বপন রায়কে তুলে আদালত থেকে বের করে দেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আইনজীবী স্বপন রায়চৌধুরী বলেন, আদালতে শুনানি চলাকালে আমাকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আদালত কোনো ব্যবস্থা নেননি। এখানে কোনো ন্যায়বিচার নেই। আমি এর বিচার চাই।
এর আগে, রিমান্ড শুনানিতে আদালতের পিপি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, শেখ হাসিনার বাবাকে বিপথে নিয়েছিলেন আমু। ঠিক সেভাবেই শেখ হাসিনাকেও বিপথে নিয়ে গেছেন। তিনি শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমু ১৪ দল নিয়ে মিটিং করেন। তারা সিদ্ধান্ত নেয় যেকোনো মূল্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে দমাতে হবে। তারা এই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত। আমরা চাই বাংলাদেশে কোনো শেখ হাসিনা বা ফ্যাসিস্ট আর তৈরি না হোক। আমরা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই। তাদের বিচার হলে এই দেশে আর কোনো ফ্যাসিস্ট দল আসবে না।
আইনজীবীদের হট্টগোলের পর তাদের উদ্দেশে আমির হোসেন আমু বলেন, আইনজীবীরা ভাই ভাই, মিলেমিশে থাকা উচিত। এখনকার পরিবেশ কিন্তু সবসময় থাকবে না। এ সময় ফের উত্তেজিত হয়ে ওঠেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। পরে পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এদিকে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে ছয় দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের রমনা জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফ।
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। পরে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই বিকেলে নিউমার্কেট থানাধীন নীলক্ষেত এলাকায় পুলিশের গুলিতে ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ মারা যান। এ ঘটনায় তার শ্যালক আবদুর রহমান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এর আগে, বুধবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে আমুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আমির হোসেন আমু ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। ২০১৩ সালে তিনি ভূমি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পান আমির হোসেন আমু।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আইন-আদালত
এক বিজয় করেছ, আরেক বিজয় আসবে: ছাত্রদের প্রধান উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের মানুষ ছাত্রদের ওপর ভরসা করে। এ বিশ্বাস ধরে রেখো। হাতছাড়া করো না। তোমরা কখনই আশাহত হবে না। তোমরা অসম্ভবকে সম্ভব করেছো। দেশ বদলে ফেলেছো। তোমরাই পারবে। মানুষের আশা তোমাদের পূরণ করতে হবে। অন্তত সে পথে তোমাদের অগ্রসর হতে হবে। এক বিজয় অর্জন করেছো, আরেক বিজয় আসবে। তোমরা বারবার আমাদের মনে করিয়ে দেবে যেন আমরাও সতর্ক হই, সজাগ হই।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি।
এসময় শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণ, নিহতদের রাষ্ট্রীয় খেতাব দেওয়া, আহতদের সুচিকিৎসায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া এবং জুলাই গণহত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের জন্য জোর দিতে বলেন। এছাড়া গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।
প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের বলেন, বিভিন্ন সময়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আগে দেখা হয়েছে। আজকে অনেকের সঙ্গে দেখা হলো। ভালো লাগলো। তোমাদের কথা শুনতেই মূলত আজকে বসা। তোমরা সরকারের কাছে কী চাচ্ছো, আশাগুলো কী, পরামর্শ আছে কি না কোনো এটি জানতে চাওয়া।
তিনি বলেন, তোমরা রাষ্ট্রের অভিভাবক, তোমাদের কারণেই রাষ্ট্র। এ ভূমিকা ভুলে যেও না। নিজেদের ভূমিকা ভুলে যেও না। অনেকে এখানে আছে, অনেকে নেই। যারা নেই, তারাও রাষ্ট্রের অভিভাবক। তোমাদের দায়িত্ব আছে রাষ্ট্র যেন ঠিক পথে চলে, যেন বিচ্যুত না হয়। এইটুকু মনে রাখলে রাষ্ট্র ঠিক থাকবে। নিজের অভিভাবকত্ব ভুলে যেও না।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরামর্শকে স্বাগত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দ্রব্যমূল্য ঠিক থাকতে হবে। সিন্ডিকেট নাকি কী এই ধরনের ব্যাখ্যা আমরা চাই না। কতগুলো লোক বাজারমূল্য কবজা করে থাকবে সেটা হতে পারে না। আমরা চেষ্টা করছি দ্রব্যমূল্য ঠিক রাখার। আমরা দ্রব্যমূল্য স্টেবল রাখতে চাই। রমজানেও দ্রব্যমূল্য স্টেবল রাখার ব্যাপারে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিতে হবে। হঠাৎ করে যেন কোনো পরিস্থিতি না হয়।
স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার পরামর্শে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্থানীয় সরকার সংস্কারের জন্য কমিশন আছে। তারা পরামর্শ দেবে আমরা কাজ করবো। আমরা চাই স্থানীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া। খুব কম জিনিস উচ্চপর্যায়ে থাকবে। দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেম, একবার একটা ফান্ড বানিয়ে দিলে কারা যেন খেয়ে ফেলে। সেজন্য সুশৃঙ্খলভাবে সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে। যেন স্থায়ী হয়।
জুলাইয়ে শহীদদের রাষ্ট্রীয় সম্মান ও খেতাবের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পরামর্শে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। জুলাইয়ে যারা শহীদ হয়েছে তাদের অবদান আমরা ভুলবো না। তাদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হবে।
শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের এমন পরামর্শের প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। যেন বাংলাদেশে কেউ শিক্ষিত না হয়ে উঠতে পারে, দক্ষ হয়ে উঠতে না পারে সেজন্য পরিকল্পিতভাবে এটা হয়েছে। বেকারত্ব তৈরি করা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক কিছু নেই। এটা আমদের ঠিক করতে হবে। তরুণদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থার করার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। প্রধান উপদেষ্টা এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। আমাদের অর্থনীতি বিভাগে নারী শিক্ষার্থী ছিল মাত্র চারজন। তোমরা বলছো, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থী প্রায় ৫২ শতাংশ। এটি অত্যন্ত আনন্দের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে রাজনৈতিক বলয়ের মধ্যে আগে সিট বণ্টন হতো সেই দাসপ্রথা এখন ভেঙে গেছে। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।
আজকের মতবিনিময়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বারবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও গণমাধ্যমে সরকারের কাজ সঠিকভাবে প্রচার না হওয়ার বিষয়টি ওঠে আসে। শিক্ষার্থীদের এমন বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলে তারা সরকারের বিরুদ্ধে সরব এটা ঠিক। সরকারের নিজের কোনো পত্রিকা নেই। আছে শুধু প্রেস উইং। তারা পত্রিকায় প্রেস রিলিজ পাঠায়। কেউ ছাপে, কেউ ছাপে না কিংবা তাদের মনমতো শেষ পাতায় বা কোণায় ছোট করে দেয়। প্রেস উইং ওদের মতো করে চেষ্টা করছে, কাজ করছে। সরকার কোনো গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করবে না। সংবাদপত্র স্বাধীনভাবে কাজ করবে-এটাই আমাদের নীতি। আমরা এ নীতিতে থাকবো। আমি বুঝতে পারছি তোমরা কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ। এটা আসলে কিছুটা মন খারাপ হওয়ার মতো যে সরকারের কাজ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পুরো সিস্টেমটাই ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। চারদিকে চুরি-চামারি, ব্যাংক কাজ করে না। কমিটি অর্থনীতির শ্বেতপত্র দিয়েছে। আমি বলেছি, এটা একটা ঐতিহাসিক দলিল। আমি মনে করি এটা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো উচিত। দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার দায় আওয়ামী লীগের। তবে যারা উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়েছে তাদেরও ধরতে হবে।যে ধ্বংসস্তূপ রেখে গেছে সেখান থেকে বের হওয়া কঠিন। যেদিকে হাত দিই সেদিকেই ভাঙাচোরা। এ ভাঙাচোরা পরিষ্কার করেই যাচ্ছি। কাজ শুরু করতে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ-আস্থা ও সমর্থন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে সংস্কারকাজে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন। তারা জানান, দেশের মানুষ সরকারের পাশে আছে। এটি গণমানুষের সরকার। জনগণ চায় অন্তর্বর্তী সরকার যেন প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজটি সম্পন্ন করে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আইন-আদালত
সাজেক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করলো জেলা প্রশাসন
রাঙ্গামাটির পর্যটন কেন্দ্র সাজেকে পর্যটকদের ভ্রমণে আবারও নিরুৎসাহিত করেছে জেলা প্রশাসন।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সাজেক ভ্রমণে বিধি-নিষেধ দেয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাঙ্গামাটির পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার আইনশৃঙ্খলার সার্বিক পরিস্থিতি এবং এ সব এলাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে ৪ ডিসেম্বর থেকে সাজেক পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হলো।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাজেকে শীপপাড়া নামক এলাকায় মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সারা দিন দুই আঞ্চলিক দলের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
সাজেক রিসোর্ট মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিজয় ত্রিপুরা বলেন, ‘সাজেক ও মাচালংয়ের ৭নং ওয়ার্ডের শীপপাড়া এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে, যা পর্যটন কেন্দ্র থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। ওই গোলাগুলির ঘটনার কারণে বিকেলে প্রায় ১০টি পর্যটকবাহী গাড়ি সাজেক ছেড়ে যায়নি। বর্তমানে সাজেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক পর্যটক সাজেক অবস্থান করছেন। এখানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’
খাগড়াছড়ি জিপগাড়ির লাইনম্যান মো. ইয়াছিন আরাফাত জানান, সকালে সাজেক থেকে ২০ থেকে ২৫টি গাড়ি খাগড়াছড়ি ফিরেছে। দুই আঞ্চলিক দলের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বিকেলে কোনো পর্যটকবাহী গাড়ি সাজেক থেকে খাগড়াছড়ি ফেরেনি এবং পর্যটক নিয়ে কোনো গাড়ি সাজেক যায়নি।
রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, দুই আঞ্চলিক দলের গোলাগুলির ঘটনায় পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বুধবার একদিন সাজেকে পর্যটক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যারা সেখানে অবস্থান করছেন তাদের বুধবার নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হবে।
স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, এলাকা নিয়ন্ত্রণে বিগত কয়েকদিন ধরে সাজেক ও মাচালং এলাকায় সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি ও প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইপিডিএফ’র মধ্যে দফায় দফায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। তবে এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আইন-আদালত
শ্বেতপত্রের প্রতিবেদনে দুর্নীতি-লুটপাটের ভয়ংকর চিত্র
ছাত্র-জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে ব্যাপক রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট অবসান হয় আওয়ামী লীগের টানা দেড় দশকের শাসনের। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন প্রবল প্রতাপশালী শাসক হিসেবে পরিচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেড় দশকেরও বেশি সময় স্বৈরাচারী পদ্ধতিতে দেশ শাসন করা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ ছিল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লুটপাটের।
শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম এজেন্ডা ছিল তার আমলে সংঘটিত আর্থিক দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অনুসন্ধান। এর অংশ হিসেবে গত আগস্ট মাসের ২৮ তারিখে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা পর্যালোচনার জন্য বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত হয় একটি অনুসন্ধানী কমিটি।
তিন মাস বিস্তৃত গবেষণা ও তথ্য অনুসন্ধানের পর প্রতিবেদন তৈরি করে ‘অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি’ নামে অভিহিত এই অনুসন্ধানী কমিটি। খসড়া হিসেবে উপস্থাপিত ৩৯৯ পৃষ্ঠার এই সুবিশাল প্রতিবেদনের ছত্রে ছত্রে উঠে আসে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত দুর্নীতি, লুটপাট ও জনগণের অর্থ তসরুপের বিস্তৃত চিত্র।
২ ডিসেম্বর এই খসড়া শ্বেতপত্র প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সাংবাদিকদের সামনে মুখোমুখি হয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। সেখানে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত দুর্নীতির নানা চিত্র তুলে ধরেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
এ সময় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি সাংবাদিকদের জানায়, দেশে গত পনের বছরে ‘চামচা পুঁজিবাদ থেকেই চোরতন্ত্র’ তৈরি হয়েছিল, যাতে রাজনীতিক, সামরিক ও বেসামরিক আমলা, বিচার বিভাগসহ সবাই অংশ নিয়েছে। পাশাপাশি গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে পাচার হয় ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সুবিশাল খসড়া শ্বেতপত্রে দেখানো হয় বিগত সরকারের আমলে ২৮ উপায়ে সংঘটিত দুর্নীতির চিত্র। এছাড়া দেশের প্রধান প্রধান খাতকে দুর্নীতির ভয়াবহতা কোন মাত্রায় গ্রাস করে তার চিত্রও উঠে আসে এই প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনের ভূমিকায় ‘ম্যাগনিচুড অব করাপশন’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে বলা হয়, নিয়মিতভাবে কর ফাঁকি দেয়া, কর মাফের সুযোগের অপব্যবহার এবং জনগণের অর্থের অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ভূলুণ্ঠিত করে দেশের উন্নয়নকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বছরে গড়ে দেশের বাইরে অবৈধভাবে পাচার হয় ১৬ বিলিয়ন ডলার। যা দেশের মোট বৈদেশিক সাহায্য এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণের দ্বিগুণ। পাশাপাশি এই সময়ে যে কর মাফ করা হয়েছে তা দিয়ে শিক্ষা খাতের বরাদ্দকে দ্বিগুণ করা যেত এবং স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দকে তিনগুণ করা সম্ভব হতো। দুর্নীতির মাধ্যমে কিভাবে দেশের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করা হয়েছে, এই পরিসংখ্যান তার প্রমাণ।
দুর্নীতির কারণে দেশের বড় বড় প্রকল্পগুলোর ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৭০ শতাংশ, পাশাপাশি প্রকল্প সম্পন্নের সময় বিলম্বিত হয়েছে ৫ বছর। পাশাপাশি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এবং অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পে গত ১৫ বছরে বরাদ্দ হওয়া ৬০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৪ থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার লোপাট হয়েছে রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, ঘুষ এবং বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে। এছাড়া জমি অধিগ্রহণের সময় তহবিল তসরুপ এবং নিজেদের অনুগত ব্যক্তিদের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দানের মাধ্যমে সম্পদের অপচয় ঘটিয়ে অবকাঠামোগত ও সামাজিক সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা থেকে দেশকে বঞ্চিত করা হয়।
চাল, ভোজ্যতেল এবং গমের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন এবং চাহিদার তথ্যের বিকৃতির কারণে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অরাজকতা ও অস্থিতিশীলতা তৈরি হয় দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থাতেও।
শ্বেতপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, অবাস্তব ও রাজনৈতিক প্রভাবিত ক্রয় নীতির মাধ্যমে প্রভাবশালী ব্যবসায়িক গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়া হয়, যা সাধারণ ভোক্তাদের ভোগান্তিকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া মজুদের তথ্য নিয়মিতভাবে যাচাই করার ব্যবস্থাপনার অনুপস্থিতি এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকে দেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে তৈরি হওয়া অরাজক পরিস্থিতি ও লুটপাটের চিত্র উঠে আসে শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ঋণদানের প্রবণতা ব্যাংকিং খাতের সংকটকে আরও ঘনীভূত করে। ২০২৪ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংকিং খাত থেকে লোপাট হওয়া অর্থ দিয়ে দেশে ১৪টি মেট্রোরেল কিংবা ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হতো। অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণ এবং উচ্চ পর্যায়ের জালিয়াতি আর্থিক ভারসাম্যকে ভূলুণ্ঠিত করে এবং উৎপাদনমুখী খাতে বিনিয়োগ হ্রাস করে।
বিগত সরকারের আমলে অর্থ পাচারের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে জনশক্তি রফতানি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংশ্লিষ্টতা উঠে আসে শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে। গত এক দশকে ভিসা ক্রয়ের আড়ালে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশি ১৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হওয়ার তথ্য উঠে আসে শ্বেতপত্রে। যে অর্থ দিয়ে আরও চারটি ‘উত্তরা-মতিঝিল রুট’ এর সমমানের মেট্রোরেল সিস্টেম তৈরি করা সম্ভব ছিলো। এভাবে সিন্ডিকেটবাজি এবং কর্মী নিয়োগ পদ্ধতির দুর্নীতির মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীদের মানসম্মত কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়। যার ফলে কাঙ্ক্ষিত প্রবাসী আয় থেকে বঞ্চিত হয় দেশের অর্থনীতি।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সংঘটিত লুটপাট থেকে বাদ যায়নি সামাজিক নিরাপত্তা খাতও।
শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দের ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির শিকার হয়ে বঞ্চিত হন লাখ লাখ মানুষ। প্রতিবেদনে উঠে আসে, ২০২২ সাল পর্যন্ত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের মধ্যে ৭৩ শতাংশই দরিদ্র শ্রেণীভুক্ত ছিল না। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির এই অব্যবস্থাপনার ফল ভোগ করতে হয় দেশের দরিদ্র মানুষকে। মাত্র দুই দিন কাজ করতে ব্যর্থ হলেই দারিদ্যসীমার নিচে চলে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল দেশের দুই কোটি মানুষ। এই তথ্যেই উঠে আসে দুর্নীতির মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সামাজিক অসাম্য তৈরির চিত্র।
বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি ও লুটপাটের থাবা থেকে বাদ যায়নি দেশের পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতিও। জলবায়ু অভিযোজন সংক্রান্ত তহবিলে দুর্নীতির মাধ্যমে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয় বলে জানানো হয় শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আইন-আদালত
খালেদা জিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করছেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসেন তিনি।
তাদের মধ্যকার বৈঠকে নানা ইস্যু আলোচিত হতে পারে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। বৈঠক শেষে বিএনপির প্রতিনিধিদল সাংবাদিকদের ব্রিফিং করবেন বলেও জানা গেছে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এম জেড জাহিদ হোসেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য শ্যামা ওবায়েদ, বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবিএম আব্দুল সাত্তার।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আইন-আদালত
শ্রমের ডিজি ও এফডিসির এমডিকে ওএসডি
শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. তরিকুল আলম এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (এফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি দিলীপ কুমার বণিককে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) তাকে ওএসডি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
আরেক প্রজ্ঞাপনে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষের (পিপিপি) নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সচিব) হিসেবে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে।
সচিব পদে পদোন্নতির পর তাকে এই নিয়োগ দিয়ে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সচিব) মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে গত ২২ সেপ্টেম্বর ওএসডি করা হয়েছিল।