অর্থনীতি
বছরে গড়ে ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার অর্থপাচার হয়েছে: ইফতেখারুজ্জামান
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে মোট কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব নয়। ব্যাংকের মতো আনুষ্ঠানিক মাধ্যম ব্যবহার করে ১৭ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচারের কথা জানা যায়। বিভিন্ন ঘটনার ভিত্তিতে ধারণা করা যায়, বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম(ইআরএফ কার্যালয়ে) ‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উপায়’ বিষয়ে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। দেশের ব্যাংক খাতকে যে খাদের কিনারায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে, তার পেছনে মূল দায়ী হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব প্রতিষ্ঠানের মৌলিক সংস্কার ও ঢেলে সাজানো ছাড়া বিকল্প নেই।
অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও সম্ভাবনার বাংলাদেশ যৌথভাবে এ সেমিনার আয়োজন করে। গ্রিনওয়াচ ঢাকার সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বলয় প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখলের মাধ্যমে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনীতি, আমলাতন্ত্র ও ব্যবসা—এই ত্রিমুখী আঁতাত মৌলিক ভূমিকা পালন করেছে। সব প্রতিষ্ঠানেই দীর্ঘ সময় ধরে দলীয়করণের চর্চা হয়েছে; গত ১৫-১৬ বছরে যার চূড়ান্ত রূপ আমরা দেখেছি। এতে আমলাতন্ত্রকে কর্তৃত্ব দিয়েছে রাজনৈতিক শক্তি আর তা বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন এজেন্সিকে। ফলে এসব জায়গায় কতটুকু পরিবর্তন আনা যাবে, তা গুরুত্বপূর্ণ। যে পরিবর্তন আসবে বলে আমরা আশা করছি, তা যেন টেকসই হয়।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত একটি দৃষ্টান্ত আছে। সেটি হলো, সিঙ্গাপুর থেকে। দেশটি থেকে ২০০৭ সালে পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং পারস্পরিক আইনি সহায়তার মাধ্যমে ২০১৩ সালে ৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৯৩০ কোটি ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয়েছিল।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব, যদিও তা অনেক কঠিন ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যেসব দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে, ওই সব দেশের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেশগুলোর সহযোগিতার মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, অর্থ পাচার বন্ধে সাপ্লাই (যে দেশ থেকে পাচার হয়) ও ডিমান্ড (যে দেশে পাচার হয়)—উভয়ের মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ থাকতে হবে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে সহযোগিতা করার জন্য বিভিন্ন দেশে বিশেষজ্ঞদের সিন্ডিকেট আছে। সে কারণে আমরা একজন সাবেক মন্ত্রীর কয়েকটি দেশে কয়েক শ অ্যাপার্টমেন্টের বিষয়ে জানতে পারছি। কিন্তু এই ঘটনা বরফখণ্ডের চূড়ামাত্র, এমন পাচারকারী আরও অনেকে আছেন।
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, অর্থ পাচার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডি, এনবিআর, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, বিএফআইইউ—এসব প্রতিষ্ঠানের পরিষ্কার পথনকশা আছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে, শুধু মুখের কথায় কাজ হবে না। অর্থ পাচার রোধে বেশ কিছু আইনেরও প্রয়োজন আছে। এ ছাড়া দুর্নীতি বন্ধে সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
কয়লা সংকটে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ
কয়লা সংকটের কারণে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটেরই উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, চলতি নভেম্বরের শেষ দিকে বিদেশ থেকে কয়লা এলে এ সংকটের নিরসন হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিচালন) মনোয়ার হোসেন মজুমদার।
এ প্রকৌশলী জানান, বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
জানা যায়, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি ইউনিট ২০২৩ সালের জুলাই ও অন্য ইউনিট ডিসেম্বরে চালু হয়। যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এখন পর্যন্ত জাপানের সুমিতমো করপোরেশনের মাধ্যমে আনা হয় ২২ লাখ ৫ হাজার টন কয়লা। সেই মজুদ পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে।
চুক্তি অনুযায়ী, সুমিতমো করপোরেশন কয়লার সর্বশেষ সরবরাহ দেয় গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে।
প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, তিন বছরের কয়লা সরবরাহের জন্য সিপিজিসিবিএল আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু সাবেক প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ একটি প্রতিষ্ঠানকে বেআইনি সুবিধা দিতে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়ায় ১০ মাস দেরি করে বলে অভিযোগ ওঠে।
তিনি বলেন, ওই অনিয়মের অভিযোগ তুলে আদালতে অপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কয়লা আমদানিতে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় গত জুলাইয়ে। সেই আদেশটি পরে উচ্চ আদালতে স্থগিত করা হলেও দীর্ঘমেয়াদে কয়লা আমদানি অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। তবে সব প্রক্রিয়া শেষ করে নভেম্বরের শেষ দিকে কয়লা আমদানি করার চেষ্টা চলছে। কয়লা আসলেই শুরু হবে উৎপাদন।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডের চিফ বিজনেস অফিসার হলেন কামরুল
এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডের চিফ বিজনেস অফিসার পদে সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়েছেন কামরুল হাসান। এর আগে তিনি বিজনেস ডিরেক্টর হিসেবে এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডের বিভিন্ন পোর্টফোলিও তত্ত্বাবধান করেছেন। বর্ণাঢ্য ২৫ বছরের কর্মজীবনের মধ্যে ২২ বছর এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডে নানা অবদান রেখেছেন তিনি।
কামরুল হাসান পোর্টফোলিওকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বহুমুখীকরণেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। লবণ শিল্পে তার অবদানের জন্য তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিত, বিশেষ করে ভ্যাকুয়াম-ইভাপোরেটেড লবণ প্রতিষ্ঠায়। তার প্রবৃদ্ধি-কেন্দ্রিক কৌশল এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগ শিল্পে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে।
ক্যারিয়ারের শুরুতে কামরুল হাসান বাংলাদেশের সফট ড্রিঙ্কস বাজারে ভার্জিন ড্রিঙ্কস স্লিম ক্যান চালু করেন, যা কোমল পানীয় শিল্পের জন্য একটি বিপ্লবী সূচনা ছিল।
এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশের প্রথম শতভাগ বিশুদ্ধ ভ্যাকুয়াম-ইভাপোরেটেড লবণ হিসেবে এসিআই পিওর সল্ট বাজারে নিয়ে আসেন, যা ভোক্তাদের জন্য এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করে। স্যাভলন অ্যান্টিসেপ্টিক, ওয়ান্ডার ডিশওয়াশিং, স্মার্ট ওয়াশিং পাউডার, শাইনেক্স ফ্লোর ক্লিনার, সেপটেক্স বার সাবান, ফ্রিডম স্যানিটারি ন্যাপকিন, টুইঙ্কল বেবি ডায়াপার, এসিআই সুগার, কোলগেট, স্পার্কল লাইটস এবং ডুলাক্স পেইন্টসের মতো ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠায় তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে, যা বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে তার দক্ষতাকে প্রমাণ করে।
কামরুল হাসান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এবং নেতৃত্বের ক্ষেত্রে তার গভীর দক্ষতা রয়েছে, যা তিনি ভারতের আইআইএম কলকাতা এবং যুক্তরাজ্যের কমন পারপাসের মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে অর্জিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ করেছেন।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
রিটার্ন জমায় রবিবার থেকে বিশেষ ব্যবস্থা
আগামীকাল রবিবার (৩ নভেম্বর) থেকে আয়কর রিটার্ন জমায় কর অফিসগুলোতে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী সেবা। সেবার মান নিশ্চিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআর চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, অনলাইনে রিটার্ন পূরণে কোনো কাগজপত্র জমা দিতে হবে না।
গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় আয়কর রিটার্ন জমা নিতে এবারও কর অফিসে বিশেষ ব্যবস্থা থাকছে করদাতাদের জন্য। নভেম্বর জুড়ে এক ছাদের নিচে মিলবে রিটার্ন পূরণ, ইটিআইএন নেওয়াসহ নানা সেবা। এ জন্য প্রস্তুত সারা দেশের ৪১ কর অঞ্চলের ৬৫০ সার্কেল। পাশাপাশি থাকবে অনলাইনে রিটার্ন পূরণের হেল্প ডেস্ক।
এবারও সরকারি কর্মচারিদের জন্য সচিবালয়ে রিটার্ন জমার বুথ বসাবে এনবিআর। যা চালু থাকবে ৩ থেকে ১৭ নভেম্বর। আর শেরেবাংলা নগরে সরকারি কর্মচারীরা এই সেবা পাবেন ১৯ থেকে ২৩ নভেম্বর। এবারো সেনা মালঞ্চে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের রিটার্ন জমা দেওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, আমরা আয়করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে উৎসাহ দিতে চাই। ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সহজেই ঘরে বসে রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। ফলে আর ট্যাক্স অফিসে যেত হলো না, ব্যাংকে যেতে হলো না। সঙ্গে সঙ্গেই পাওয়া যাবে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র।
তবে যারা কর অফিসে যেতে চান না, তাদের জন্য এবার উদার এনবিআর। কয়েক বছরের চেষ্টায় অনলাইন ট্যাক্স রিটার্ন জমার ব্যবস্থা আরও উন্নত করেছে সংস্থাটি। কর্মকর্তারা জানান, etaxnbr.gov.bd সাইটে প্রথমে নিবন্ধন করতে হবে। এরপর আয়-ব্যয়ের প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে রিটার্ন পূরণ করতে হবে। আপলোড করতে হবে না কোনো দলিলপত্র। অনলাইনেই মিলবে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র।
তিনি আরও বলেন, ওয়েবসাইটে শুধু ডাটা দিলেই সহজেই হিসাব হয়ে যাবে। করদাতাদের কোনো ঝামেলা হবে না অনলাইনে রিটার্ন দাখিলে।
এবার ঢাকার দুটিসহ চার সিটি করপোরেশনের সরকারি কর্মচারীদের অনলাইনে রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ব্যাংকসহ কিছু বহুজাতিক কোম্পানির কর্মীদের জন্যও একই নিয়ম করা হয়েছে। রিটার্ন পূরণে কোনো জটিলতা দেখা দিলে সেবা মিলবে হেল্পলাইনে।
এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
চালের সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে শুল্ক প্রত্যাহার
চালের ওপর থাকা সকল আমদানি ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে চালের সরবরাহ স্থিতিশীল থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে চালের দাম প্রতি কেজিতে অন্তত ৯.৬০ টাকা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে এনবিআর বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) একটি সংবিধিবদ্ধ নিয়ামক আদেশ (এসআরও) জারি করেছে।
আজ শুক্রবার এনবিআর’র প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চালের ওপর বিদ্যমান ১৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক এবং ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা হবে। এর ফলে চালের ওপর মোট আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমে ২ শতাংশ করা হবে।
চালের দাম কমাতে এর আগে, ৬২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করেছিল আমদানি শুল্ক। তবে, এতে ফল আশানুরূপ পাওয়া যায়নি।
আমদানি শুল্ক মওকুফ করতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) থেকে এনবিআরকে অনুরোধ জানানো হয়। এরপরেই এ সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর।
এনবিআর থেকে দাবি করা হয়, আমদানি এবং নিয়ন্ত্রণ শুল্ক মওকুফের ফলে চালের দাম স্থিতিশীল হবে এবং এটি সাধারণ ভোক্তার জন্য আরও সহজলভ্য হবে। এই পদক্ষেপ চালের সরবরাহ বৃদ্ধি করবে এবং ভবিষ্যতে দাম সাশ্রয়ী রাখবে; যাতে ভোক্তাদের কাছে প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী সহজলভ্য হয়।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
পারিবারিক বিরোধে নাসির গ্রুপের কোম্পানি অবসায়নের আবেদন
কাচ উৎপাদনের জন্য সুপরিচিত দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী নাসির গ্রুপ। গ্রুপটির এক ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠানের একটি নাসির ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড অবসায়নের আবেদন করা হয়েছে হাইকোর্টে। মূলত পারিবারিক বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছে আইনি লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে।
নাসির গ্রুপের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় ২০২২ সালে এ শিল্পগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা নাসির উদ্দিন বিশ্বাসের মৃত্যুর পর। নাসির উদ্দিনের মৃত্যুর পর তার দুই স্ত্রী এবং তাদের সন্তানরা কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন।
মূলত নাসির উদ্দিনের প্রথম স্ত্রী আনোয়ারা বিশ্বাসের সন্তানদের ব্যবস্থাপনায় চলা দুটি কোম্পানি—নাসির গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও নাসির ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে কেন্দ্র করে চলছে এ লড়াই।
বর্তমানে নাসির গ্লাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আনোয়ারা বিশ্বাসের মেয়ে নাসিমা বিশ্বাস, আর তার ভাই নাসিম বিশ্বাস আছেন নাসির ফ্লোট গ্লাসের প্রধানের দায়িত্বে।
প্রায় ২০০ কোটি টাকা পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে গত ৩০ অক্টোবর হাইকোর্টের কোম্পানি-সংক্রান্ত বেঞ্চ বিচারপতি ফরিদ আহমেদের আদালতে নাসির ফ্লোট গ্লাস অবসায়নের দাবি জানিয়ে মামলা করেছেন নাসিমা।
আবেদনকারীর আইনজীবীরা বলছেন, আদালত অবসায়ন-সংক্রান্ত মামলাটি গ্রহণ করেছেন। একইসঙ্গে আদালত এই মামলায় কেউ আইনি লড়াই করতে চাইলে তাকে নিজে বা আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে হলফনামা দাখিলের আদেশ দিয়েছেন।
এই মামলার শুনানির জন্য আগামী ১১ ডিসেম্বর দিন ধার্য রেখেছেন আদালত।
আবেদনকারীর পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী আহসানুল করিম জানান, ‘নাসির গ্রুপ অভ ইন্ডাস্ট্রিজের অধীনে অনেকগুলো কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গ্রুপটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও এমডি নাসির উদ্দিন বিশ্বাস। এই দুটি কোম্পানিও তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘নাসির ফ্লোট গ্লাস প্রতিষ্ঠার জন্য নাসির গ্লাসের কাছ থেকে বেশ কিছু টাকা নিয়ে কোম্পানি পরিচালনা করা হয়। সে হিসাবে নাসির ফ্লোট গ্লাসের কাছে নাসির গ্লাস প্রায় ১৯৭ কোটি ১৩ লাখ ৪১ হাজার ৬৭৭ টাকা পাওনাদার। এই পাওনার বিষয় দুটি কোম্পানির ব্যাংক লেনদেন ও অডিট রিপোর্টেও উল্লেখ আছে।
‘কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই এই পাওনা দাবি করা হলেও সেটি দেওয়া হচ্ছে না। এরপর টাকা চেয়ে আইনি নোটিশ ইস্যু করা হয়। নোটিশ ইস্যু করার ২১ দিনের মধ্যে টাকা না দিলে ধরে নেওয়া হয় ওই টাকা তিনি দিতে রাজি নন। ফলে গত ৩০ অক্টোবর হাইকোর্টে নাসির ফ্লোট গ্লাস অবসায়ন করে টাকা পরিশোধের মামলা করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় প্রতিটি কোম্পানি আলাদা সত্তা হিসেবে বিবেচিত হয়।
মামলার আবেদনে বলা হয়, নাসির ফ্লোট গ্লাস ২০১৯-২০, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে নাসির গ্লাসের কাছ থেকে এই ঋণ নেয়।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য নাসির ফ্লোট গ্লাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিম বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
তবে কোম্পানিটির উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) বদিউজ্জামান জানান, অবসায়নের জন্য কোনো আবেদন সম্পর্কে আমি অবগত নই। আর যদি জানতামও, তবুও কোনো মন্তব্য করতাম না; কারণ এই বিরোধ ভাইবোনদের মধ্যে।
দেশে ফ্লোট গ্লাস উৎপদনে শীর্ষে রয়েছে নাসির ফ্লোট গ্লাস; এরপরই রয়েছে আকিজ গ্লাস ও পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস। বছরে প্রায় তিন লাখ টন স্বচ্ছ, রঙিন, রিফ্লেকটিভ, টেম্পারড, শব্দনিরোধক, গাড়ির আয়নাসহ বিভিন্ন ধরনের কাচ উৎপাদন করে নাসির ফ্লোট গ্লাস।
২০০৫ সালে ময়মনসিংহের ভালুকায় দৈনিক ৪০০ টন কাচ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কারখানা চালু করে নাসির ফ্লোট গ্লাস। ২০১৮ সালে দৈনিক ৬০০ টন উৎপাদনে আরেকটি কারখানা চালু করা হয়।
কোম্পানির মালিকানা নিয়ে নাসির গ্রুপের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব
নাসির গ্রুপ অভ ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন বিশ্বাসের মৃত্যুর পর তার দুই স্ত্রী ও তাদের সন্তানদের মধ্যে গ্রুপটির ১২টি কোম্পানির মালিকানা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। সেই বিরোধ গড়ায় আদালত পর্যন্ত।
এসব কোম্পানির মালিকানা পেতে নাসির উদ্দিন বিশ্বাসের দ্বিতীয় স্ত্রী তাসলিমা সুলতানা, তার ছেলে মামুন ও নাসরান বিশ্বাস এবং মেয়ে নারিয়া বিশ্বাস হাইকোর্টে ২৫টির বেশি মামলা করেন গত তিন বছরে।
কোম্পানির নিবন্ধন ও তদারককারী প্রতিষ্ঠান যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এসব মামলার রায় ও আদেশ নিয়ে নাসির উদ্দিনের দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার সন্তানরা ১২টির মধ্যে ৮টি কোম্পানির মালিকানা দখলে নেন।
কাফি