অর্থনীতি
বাণিজ্য মেলার স্টল বরাদ্দ এবার অনলাইনে
২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে মাসব্যাপী অনুষ্ঠেয় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ডিআইটিএফ) বিভিন্ন ধরনের স্টল, প্যাভিলিয়ন ও রেস্তোরাঁ বরাদ্দ এবার অনলাইনে হবে। মেলা আয়োজক সংস্থা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ বিষয়ে নতুন সফটওয়্যার তৈরি করেছে।
সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণে আগ্রহী স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্পেস বরাদ্দের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবে। গতকাল বুধবার ইপিবি এক বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানিয়েছে।
আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেলার স্পেস বরাদ্দ গ্রহণের জন্য উদ্ধৃত দর, মূল্য, মাশুল ইত্যাদি সোনালী ব্যাংকের পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে অনলাইনে জমা করতে হবে।
এ উপলক্ষে ইপিবি ও সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের মধ্যে গতকাল বুধবার চুক্তি হয়েছে। ইপিবির পক্ষে চুক্তিতে সই করেন সংস্থাটির সচিব বিবেক সরকার, যিনি ডিআইটিএফেরও পরিচালক। সোনালী ব্যাংকের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন মহাব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান। অনুষ্ঠানে ইপিবির ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন, সোনালী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভাষ চন্দ্র দাশ উপস্থিত ছিলেন।
ইপিবি বলেছে, সফটওয়্যারটি চালু হওয়ার ফলে মেলায় অংশগ্রহণপ্রত্যাশী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা ঘরে বসেই আবেদন করতে পারবেন। সফটওয়্যারটি ওয়েব লিংক: ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অসুবিধা দেখা দিলে হেল্পলাইনে (01966249225, 01686177828, 01711378181) ফোন করে সাহায্য নেওয়া যাবে।
পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে শুরু হতে যাচ্ছে মাসব্যাপী ২৯তম ডিআইটিএফ। দেশি-বিদেশি উৎপাদক-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৩৫০টি বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন ও স্টল বরাদ্দ দেওয়া হবে। দেশীয় পণ্যের প্রচার–প্রসার, বিপণন ও উৎপাদনে সহায়তা দেওয়াসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ১৯৯৫ সাল থেকে ডিআইটিএফ আয়োজন করে আসছে ইপিবি।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ডিজেল-কেরোসিনের দাম কমলো
ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৫০ পয়সা কমিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
ডিজেলের লিটার ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৫০ পয়সা কমিয়ে ১০৫ টাকা এবং কেরোসিনের লিটার ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৫০ পয়সা কমিয়ে ১০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে প্রতি লিটার অকটেন ১২৫ টাকা এবং পেট্রোল ১২১ টাকা অপরিবর্তিত রয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস/বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দেশে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতিমাসে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এ লক্ষ্যে প্রাইসিং ফর্মুলার আলোকে নভেম্বর মাসের জন্য তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিতে জ্বালানি তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সার্কফাইন্যান্স নেটওয়ার্কের চেয়ারপারসন হলেন ড. আহসান এইচ মনসুর
সার্কফাইন্যান্স নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
গত ২৪ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ৪৬তম সার্কফাইন্যান্স গভর্নরস গ্রুপ মিটিং থেকে আগামী এক বছরের (নভেম্বর ২০২৪-অক্টোবর ২০২৫) জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি সার্কফাইন্যান্স নেটওয়ার্কের পূর্ববর্তী চেয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে সার্কফাইন্যান্সের চেয়ার কান্ট্রি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিকেশন্স এন্ড পাবলিকেশন্সের সহকারী মুখপাত্র ও পরিচালক (এক্স ক্যাডার-প্রকাশনা) সাঈদা খানমের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুনে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ৪৫তম সার্কফাইন্যান্স গভর্নরস্ গ্রুপ মিটিং-এ সার্কভুক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের অনুরোধে সার্কফাইন্যান্স নেটওয়ার্কের চেয়ার কান্ট্রি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশ সম্মতি জানিয়েছিল।
উল্লেখ্য, সার্কফাইন্যান্স নেটওয়ার্কের টার্মস অব রেফারেন্স অনুযায়ী প্রতিবছর সার্কভুক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকসমূহের গভর্নর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ সচিবদের অংশগ্রহণে দু’টি গভর্নরস্ গ্রুপ মিটিং অনুষ্ঠিত হয়; তন্মধ্যে ১ম সভাটি সাধারণত সার্কফাইন্যান্স চেয়ার কান্ট্রিতে এবং অন্য সভাটি ইএমএফ- ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের অক্টোবর/নভেম্বর মিটিং-এর সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্র-সরকার প্রধানদের অংশগ্রহণে ১০ম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে সার্কভুক্ত আটটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ সচিবদের সমন্বয়ে ১৯৯৮ সালে সার্কফাইন্যান্স নেটওয়ার্ক গঠিত হয়। সামষ্টিক অর্থনীতির খাতসমূহের বিষয়ে বিভিন্ন নীতি নির্ধারণে সার্কভুক্ত দেশসমূহের অভিজ্ঞতা ও মতামত আদান প্রদান করাই এই নেটওয়ার্কের মূল উদ্দেশ্য।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বাড়ছে রিজার্ভ, ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অর্থনীতি: বাণিজ্য উপদেষ্টা
বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশীয় শিল্পের বিকাশে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের কনফিডেন্স বাড়ছে। পাশাপাশি আমাদের রিজার্ভ বাড়ছে এবং দেশের অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক বিশেষ পর্যালোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, তিনমাসের মধ্যে সবকিছু করা সম্ভব না। তবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আজ হোক, কাল হোক, রাষ্ট্রক্ষমতায় রাজনৈতিক সরকার আসবে। আমরা যতটুকু সময় আছি দেশের জন্য কাজ করে যাবো।
তিনি বলেন, খাদ্য, জ্বালানি, সার ও কীটনাশক খাতকে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এসব খাতের প্রাইভেট সেক্টরের জন্য সরকারের সহযোগিতা থাকবে। আমরা প্রাইভেট সেক্টরকে ডেভেলপ করার চেষ্টা করছি।
ব্যবসায়ী নেতারা সরকারের দেশীয় শিল্পের বিকাশে গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। তারা প্রাইভেট সেক্টরের সার্বিক উন্নয়নে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু, ওষুধ, চামড়া, গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত পণ্য আমদানিতে ডিউটি ট্যাক্স কমানোসহ নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম উদ্দিন, স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালের চেয়ারম্যান আব্দুল মোক্তাদির, এপেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর ও প্রাণ গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
শত শত ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হলেও বাড়ছে দর
প্রতিদিনই আমদানি হচ্ছে শত শত ট্রাক পেঁয়াজ। তারপর দুই সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের বাজার অস্থির। কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। দেশি পেঁয়াজের দর বেশি বাড়তে থাকায় এর প্রভাব পড়ছে আমদানি পেঁয়াজের ওপর।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবছর এ সময় দেশি পেঁয়াজের মজুত ফুরিয়ে আসে। এ কারণে দর বাড়ে। দেশি পেঁয়াজের এই ঘাটতি মেটাতে মূল ভরসা হয়ে ওঠে আমদানি পেঁয়াজ। তবে আমদানিকারকদের কেউ কেউ বলছেন, পেঁয়াজ নিয়ে শত শত ট্রাক ঢুকলেও বন্দরে দর বেশি। কারণ, বন্দর এলাকার বাজারে নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তদারকি জোরদার করলে দাম নিয়ন্ত্রণে আসত।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) ঢাকার কয়েকটি খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি দেশি ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। সপ্তাহ দুয়েক আগে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ১৩০ টাকার আশপাশে। এ ছাড়া দুই সপ্তাহ আগে ভারতীয় পেঁয়াজ ছিল ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। তবে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের পাশাপাশি অন্য দেশের পেঁয়াজও দেখা গেছে। এর মধ্যে খুচরা ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০, তুরস্কের পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ এবং চীনা পেঁয়াজের কেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন।
সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, গত এক মাসে দেশি পেঁয়াজের দর ৩০ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দর ৮ শতাংশ বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী এরশাদ আলী বলেন, আর কয়েক দিন পর মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসা শুরু হবে। তখন বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে। তবে এর আগ পর্যন্ত আমদানি অব্যাহত রাখতে হবে। নইলে বাজারের অস্থিরতা কাটবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হিলি স্থলবন্দরের এক শীর্ষ ব্যবসায়ী বলেন, বন্দর এলাকায় পেঁয়াজের বাজারে নিয়ন্ত্রণ নেই। মূল মুনাফা নিয়ে যান ভারতের রপ্তানিকারকরা। দর বাড়লে তাদেরই লাভ বেশি। তবে বাজার স্বাভাবিক রাখার একটা কৌশল আছে। সরকার যদি বন্দর–সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তদারকি জোরদার করে, তাহলে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
এর পেছনে যুক্তি দিয়ে এই ব্যবসায়ী জানান, প্রতি টন পেঁয়াজের এলসি খোলা হয় ৬০০ ডলারে। সেই হিসাবে প্রতি কেজির দর পড়ে ৭৩ টাকার মতো। এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক খরচ ও মুনাফা যোগ করলে পাইকারি পর্যায়ে ৭৫ টাকা হওয়ার কথা। এর চেয়ে বেশি মুনাফা করলেও পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজির দর সর্বোচ্চ ৮০ টাকা হতে পারে। তবে বন্দরেই প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা দরে। এই পেঁয়াজ ঢাকায় গেলে ১২০ টাকা হওয়া স্বাভাবিক। জোর তদারকি না থাকায় বন্দর এলাকায় কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা মুনাফা খাচ্ছেন ভারতীয় ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সভাপতি হারুনুর রশিদ জানান, এখন ভারতে দর বেশি। তবে এখানে আমরা বেশির ভাগ ব্যবসায়ী ভারতীয় পেঁয়াজে কমিশনে ব্যবসা করি। সে ক্ষেত্রে পেঁয়াজের দর বাড়লেও একই কমিশন পাই। আমদানি করা পেঁয়াজের সংকট নেই। শুধু ভারত থেকেই বিভিন্ন বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে দৈনিক অন্তত ১৫০ ট্রাক পেঁয়াজ আসে দেশে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের তদারকি দুর্বল। এ জন্য বিশৃঙ্খলা চলছে।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
উচ্চ সুদ ও জ্বালানি সংকটে চাপে শিল্প খাত
দেশের অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, উচ্চ সুদহার, জ্বালানি সংকট, ডলার সংকট, তারল্যের পাশাপাশি পুঁজিবাজারেও ব্যাপক অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে টানা দরপতনে সর্বস্ব হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। আবার অনেক ব্যাংকে আমানতের টাকাও ফেরত না পেয়ে শাখায় তালা ঝুলিয়ে দিচ্ছেন গ্রাহকরা। আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ ও গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে শিল্পের চাকা থমকে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে কঠিন সংকটের মুখোমুখি ব্যবসায়ীরা।
অর্থনীতিতে এখন সম্ভাবনার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এসব অনিশ্চয়তা সামলানো। কিন্তু শ্রম অসন্তোষ, জ্বালানি সংকট, মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি ঋণের উচ্চ সুদ ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে তুলছে। ইতিমধ্যেই উৎপাদনমুখী অনেক শিল্প লোকসানে পড়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে তারল্য কমানোর পাশাপাশি সুদহার বাড়ানো হলেও তা কাজে আসছে না। বরং তা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য সংকট আরও বাড়িয়ে তুলছে। এমন পরিস্থিতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি আরও কমিয়ে দিচ্ছে।
জুন শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি তলানিতে পৌঁছেছে বলে তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যুরো (বিবিএস)। গত সোমবার সংস্থাটি জিডিপির তথ্য প্রকাশ করে জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে দেশের প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯১ শতাংশে। এ প্রবৃদ্ধি আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও দুই দফা বন্যায় চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি আরও কমবে।
বিবিএসের তথ্য বলছে, শেষ প্রান্তিকে দেশের শিল্প খাত ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল তলানিতে। চলতি বছর জুন শেষে দেশের শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশে, অথচ আগের বছরের একই সময়ে তা ছিল ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ। শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে সেবা খাতেও। সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি কমে এ সময়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশে, এটি আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ।
২০২০ সালের এপ্রিলে সরকারের পরামর্শে ব্যাংকঋণের সুদ সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে মেয়াদি আমানতের সুদহারও বেঁধে দেওয়া হয়, সে হার ছিল ৬ শতাংশ। এরপর দীর্ঘদিন ব্যাংক খাতে ঋণ ও আমানতের ক্ষেত্রে সুদহার ৯-৬-এ সীমাবদ্ধ ছিল। উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতি নানা সংকটে পড়লে গত বছর জুলাই থেকে সুদের হার বাড়তে শুরু করে।
গত আগস্টে আহসান এইচ মনসুর গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার পর মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে নীতি সুদহার আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। এরই অংশ হিসেবে গত দুই মাসে দুই দফা নীতি সুদহার বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার নীতি সুদহার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়ানোর ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ওভারনাইট রেপো সুদহার ১০ শতাংশে উন্নীত হবে। ফলে ঋণসহ সব ধরনের ব্যাংকিং পণ্যের সুদের হার বাড়বে। বাজারে অর্থের সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নীতি সুদহার বৃদ্ধির প্রভাব পড়ে বাণিজ্যিক ঋণের সুদহারেও। এক বছরে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ঋণের সুদ হার দাঁড়িয়েছে ১৪ থেকে ১৬ শতাংশে। ফলে শিল্পে আর্থিক ব্যয় বেড়ে গিয়ে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এমনিতে গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে কারখানাগুলো পূর্ণ উৎপাদনে নেই। এর মধ্যে সুদব্যয় বাড়ায় কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমে গেছে, কোনো কোনোটি পড়েছে লোকসানে।
উচ্চ সুদহারের পাশাপাশি তারল্য সংকোচনের প্রভাবে ব্যবসায়ীরা ঋণও পাচ্ছেন না। আবার অনেক ব্যবসায়ী বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা সম্প্রসারণে যাচ্ছেন না। এতে করে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমে গেছে। গত আগস্ট পর্যন্ত মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৪১ শতাংশ। এ সময় মধ্যবর্তী পণ্য আমদানিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। ডলার সংকটের কারণে এলএনজি আমদানি কমে যাওয়ায় আগামীতে গ্যাসের সরবরাহ পরিস্থিতির যে উন্নতি হবে না, তা বলা যায়। আমদানি সীমিত থাকার মধ্যেই চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সামগ্রিক আমদানির পরিমাণ প্রায় ৭ শতাংশ কমে গেছে।
খনি ও খনন, শিল্পের উৎপাদন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সরবরাহ, অবকাঠামো এ কয়েকটি উপ-খাত রয়েছে শিল্প খাতে। জুন শেষে শুধু বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ উপ-খাতেই প্রবৃদ্ধি ভালো দেখা গেছে। গত বছর জুনে এই উপ-খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক ২ দশমিক ৬ শতাংশ, যা এবার ১০ দশমিক ১১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তবে উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। গত বছর জুন শেষে উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৩৪, এবার তা কমে ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশে নেমেছে।
এদিকে ব্যাংকগুলোয় টাকা না থাকায় এখন বড় ভোগান্তি রপ্তানিকারকদের। একসময় নামিদামি ব্যাংকগুলো এখন মুখ থুবড়ে পড়ায় এলসি খোলার মতো অর্থও নেই অনেক ব্যাংকের। বিশেষ করে ১৫টি ব্যাংকের তারল্যসংকট রয়েছে।
আবার অর্থসংকটের কারণে অন্তর্বর্তী সরকার উন্নয়ন ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। অতি প্রয়োজনীয় না হলে কোনো প্রকল্পের অনুমোদন দিচ্ছে না। অনেক মেগা প্রকল্প বন্ধ রাখা হয়েছে। তারল্যসংকটের কারণে বেসরকারি খাতের ঋণও নেমেছে তলানিতে। গত আগস্টে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি নেমেছে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে, যা ১১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
অবকাঠামোতে অর্থনীতির কার্যক্রম কমে ৬৯ হাজার ৫১৮ কোটি টাকায় নেমেছে জুন শেষে। আগের প্রান্তিকেও তা ছিল ৯২ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। তবে শেষ প্রান্তিকে উৎপাদনের কার্যক্রম কমলেও তা অতটা কমেনি। জুন শেষে উৎপাদনের কার্যক্রম কমে ২ লাখ ৬ হাজার ১৪০ কোটি টাকায় নেমেছে, আগের প্রান্তিকেও তা ছিল ২ লাখ ১৫ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।
এদিকে উচ্চ সুদহারের প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। ব্যাংকে আমানতের সুদ বেশি থাকায় ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে ব্যাংকে আমানত রাখছেন। এতে করে পুঁজিবাজারে ক্রেতাসংকট তৈরি হয়েছে। গত ১৮ আগস্ট এসইসিতে নতুন কমিশন যোগ দেওয়ার পর থেকে আড়াই মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচকটি প্রায় ১৬ শতাংশ কমে যায়। টানা পতনে ট্রিগার সেলের কারণে বিনিয়োগকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পুঁজির সর্বস্ব হারিয়েছেন।
২০২২ সালের আগস্ট থেকে বাংলাদেশ উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধকলে আছে। একই সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশ উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে গেলেও এক বছরের মাথায় প্রায় প্রতিটি দেশ তাদের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও ভারতের মতো দেশও এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রয়েছে। সর্বশেষ সেপ্টেম্বরেও বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে রয়েছে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি রয়েছে ১০ শতাংশের ওপর।
এমআই