অর্থনীতি
মেট্রোরেলের সাবেক এমডির সুবিধায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা অপচয়!
নিজের সুবিধার জন্য বাসার কাছেই নেন অফিস ভাড়া। বাসা থেকে অফিসের দূরত্ব ছিল ৭০০ মিটার। শুধু অফিস ভাড়া বাবদই মাসে খরচ হতো কয়েক লাখ টাকা। মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে একচ্ছত্র ক্ষমতায় পরিচালনা করা সাবেক এমডি এম এ এন ছিদ্দিকের বিরুদ্ধে রয়েছে এমন অভিযোগ। উত্তরার দিয়াবাড়িতে বিশাল জায়গায় মেট্রোরেলের নিজস্ব ভবন থাকলেও এতদিন ভাড়া কার্যালয়ে অফিস করেছেন ছিদ্দিক। এজন্য মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে গচ্চা দিতে হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা।
ডিএমটিসিএল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সাবেক এমডি এম এ এন ছিদ্দিকের সুবিধার জন্য এতদিন অফিস স্থান্তরিত করা হয়নি। তাই এই অর্থ ভাড়া হিসেবে দেয়া লেগেছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের।
উত্তরার দিয়াবাড়িতে অবস্থিত এমআরটি লাইন-৬ এর ডিপো। সেখানে অবস্থিত ডিএমটিসিএল ভবন। ওই ভবনটি নির্মাণে চুক্তি বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর। নির্দিষ্ট সময়েই শেষ হয়েছে কাজ। এরপর ডিফেক্ট লাইবিলিটি পিরিয়ড (ডিএলপি) ছিল দেড় বছর। ২০২১ সালে ভবনের কাজ শেষ হওয়ার পরই ডিএমটিসিএলে অফিস করেছেন মেট্রোরেলের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। তবে ডিএমটিসিএল এর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ইস্কাটন রোডের প্রবাসী কল্যাণ ভবনে ভাড়া অফিসেই এতদিন কার্যক্রম চালিয়েছেন। এমআরটি লাইন-১, লাইন-৬ ও লাইন-৫ এর রুটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেখানে অফিস করেছেন। চলতি মাস থেকে এ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সাবেক এমডি এম এ এন ছিদ্দিকের কারণে এতদিন নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হতে পারেনি ডিএমটিসিএল এর অফিস। প্রবাসী কল্যাণের ভবন থেকে মাত্র ৭০০ মিটার দূরে রাজধানীর বেইলী রোডের সরকারি অফিসার্স কোয়ার্টার গুলফিশানে থাকতেন ছিদ্দিক। সেখান থেকে প্রবাসী কল্যাণ ভবন কাছাকাছি হওয়ায় এতদিন ভবনটি ভাড়া নিয়ে অফিসের কার্যক্রম চালিয়েছেন। যদিও দিয়াবাড়িতে ডিএমটিসিএল এর নিজস্ব অফিসটি দৃষ্টিনন্দন। এতদিন সেখানে অফিস না করা নিয়ে উষ্মাও রয়েছে কিছু কর্মকর্তাদের মধ্যে।
গতকাল মঙ্গলবার বেইলী রোডের গুলফিশানে গিয়ে খোঁজ নিলে জানা যায়, ডিএমটিসিএল’র সাবেক এমডি সেখানে আর নেই। ডিএমটিসিএল থেকে তার নিয়োগের চুক্তি বাতিল হওয়ার পর গুলফিশান থেকে চলে গেছেন ছিদ্দিক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রবাসী কল্যাণ ভবন ভাড়া নিয়েছে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ। এমআরটি লাইন-১ এর জন্য ১১ হাজার ৮৯০ স্কয়ারফিট জায়গায় ভাড়া নিয়েছিলো প্রবাসী কল্যাণ ভবনে। তবে দিয়াবাড়িতে ডিএমটিসিএল এর নিজস্ব ভবন নির্মাণ হওয়ার পর অর্থাৎ ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ভাড়া দিতে হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। এরমধ্যে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মাসে প্রতি স্কয়ার ফিট ভাড়া ছিল ৫৫ টাকা করে। আর ওই বছরের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রতি স্কয়ার ফিট ভাড়া ছিল ৬০ টাকা ৫০ পয়সা। এরপর থেকে গত আগস্ট পর্যন্ত ভাড়া ছিল ৬৬ টাকা ৫০ পয়সা। এ ছাড়া এমআরটি লাইন-১ এর আরও একটি ফ্লোর ভাড়া নেয়া হয় ২০২৩ সালের জুলাই মাসে। ৫ হাজার ৪৪৪ স্কয়ার ফিটের প্রতি স্কয়ার ফিটের মাসিক মূল্য ছিল ৫৫ টাকা। অর্থাৎ তখন থেকে চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত ভাড়া দিয়েছে ৪১ লাখ ৯১ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, প্রবাসী কল্যাণ ভবনে মেট্রোরেল সাউদার্ন রুটের জন্য ভাড়া নেয়া হয়েছিল ৭ হাজার ৮৫৭ স্কয়ার ফিট। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত এজন্য ভাড়া দিতে হয়েছে ১ কোটি ৬১ লাখ ১৮ হাজার টাকা। এরমধ্যে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাসে প্রতি স্কয়ার ফিট ভাড়া ছিল ৫৫ টাকা করে। আর তারপর থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত ভাড়া দিয়েছে ৬০ টাকা ৫০ পয়সা।
এ ছাড়া মেট্রোরেল লাইন-৬ এর জন্য ১৩ হাজার ৭৮৫ স্কয়ার ফুটের অফিস ভাড়া নিয়েছিল ডিএমটিসিএল। ২০২১ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত এজন্য ভাড়া দিতে হয়েছে ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মাসে প্রতি স্কয়ার ফিট ভাড়া ছিল ৫৫ টাকা। এরপর থেকে চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত ভাড়া ছিল ৬০ টাকা ৫০ পয়সা। এপ্রিল থেকে চলতি আগস্ট পর্যন্ত ভাড়া ছিল ৬৬ টাকা ৫০ পয়সা। সব মিলে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে প্রবাসী কল্যাণে অফিস ভাড়া নেয়ার জন্য ডিএমটিসিএলকে দিতে হয়েছে ৭ কোটি ৩৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা প্রায়।
ডিএমটিসিএলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ২০২১ সালের ভেতরেই দিয়াবাড়ির ভবনের কাজ হয়েছে। তারপর থেকে সেখানে অপারেশন, মেইনটেইনেন্স দলের সবাই অফিস করেছেন। চলতি মাস থেকে প্রবাসী কল্যাণের ভবনে কাজ করা কর্মকর্তারাও এখানে অফিস শুরু করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমটিসিএল’র আরেক কর্মকর্তা বলেন, সাবেক এমডি চাননি দেখে এতদিন দিয়াবাড়িতে অফিস নেয়া যায়নি। তার নিজস্ব সুবিধার কারণে প্রবাসী কল্যাণে আমাদের অফিস করতে হয়েছে। এখানে আমাদের এতদিন শুধু শুধু ভাড়া দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আগের এমডি বলেছেন, কমলাপুরের কাজ শেষ না হলে দিয়াবাড়ির অফিস আনা যাবে না। তাহলে এখন কীভাবে এনেছে। প্রবাসী কল্যাণে যখন অফিস ছিল সেখান থেকে তো দিয়াবাড়ির কাজ চালানো গেছে। তাহলে এখান থেকে কমলাপুরের কাজ চালাতে তো অসুবিধা নেই। তার ব্যক্তিগত সমস্যা ছিল সেজন্য সেখানে অফিস রাখতে হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিএমটিসিএলে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন সাবেক এমডি। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তার বাইরে কথা বলতে পারতেন না কেউই। গণমাধ্যমের সঙ্গেও তার ভয়ে কথা বলতেন না কোনো কর্মকর্তা। এমনকি জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছে সাংবাদিকরা কিছু জানতে চাইলেও সাবেক এমডি’র কাছেই জানার জন্য বলতেন। সাবেক এমডি’র ব্যবস্থাপনায় কর্মকর্তাদের মধ্যেও অসন্তোষ ছিল।
এ ব্যাপারে জানতে মঙ্গলবার ডিএমটিসিএলের সাবেক এমডি এম এ এন ছিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সিপি-০২ এর কাজ ২০২২ সালে পরিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছিল। তৎপূর্ব থেকেই ডিএমটিসিএল’র পূর্ণ অপারেশন ও কারিগরি টিম দিয়াবাড়ি কার্যালয়ে নিয়মিত অফিস করছে। অতি নগণ্য সংখ্যক অকারিগরি জনবল প্রবাসী কল্যাণ ভবনে অবস্থিত এমআরটি লাইন-৬ এর প্রকল্প অফিসের অব্যবহৃত কক্ষ ব্যবহার করেছে। ডিএমটিসিএল কখনো কোনো কক্ষ ভাড়া করেনি।
তিনি আরও বলেন, ডিএমটিসিএল’র নিজস্ব অকারিগরি জনবল কম থাকায় বিভিন্ন লাইনের (লাইন-৬, লাইন-১, লাইন-৫ (উভয় রুট) জনবলকে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালানো হয়েছে। তারা সবাই প্রবাসী কল্যাণ ভবনের স্ব স্ব প্রকল্প কার্যালয়ে বসতেন। এখান থেকে জনস্বার্থে স্বল্প ব্যয়ে মতিঝিল-কমলাপুর অংশের এবং বিনা ব্যয়ে অন্যান্য সকল লাইনে কাজের সহজ সমন্বয় করা গেছে। প্রতি মাসে সচিবালয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনুষ্ঠিত সভায় অংশগ্রহণে সময় ও ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে। সর্বোপরি অপারেশন ও কারিগরি সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম একইসঙ্গে দিয়াবাড়ি অফিসে গিয়ে নিয়মিত পরিচালনা করা হয়েছে। কাজেই কোনো ভাড়ার অপচয় হয়নি বরং সাশ্রয় হয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ডিএমটিসিএলের চাহিদা অনুযায়ী তাদের অফিস ধরাই ছিল ডিপোতে হবে। সেটা চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণ হয়ে যাওয়ার পর অস্থায়ীভাবে বসে যে অর্থ খরচ হলো সেটা বেচে যাওয়ার কথা। এজন্যই বিনিয়োগ করা হয়েছে। কেউ যদি বিনিয়োগের সদ্ব্যবহার না করে অপচয় করে তাহলে নিশ্চয়ই এখানে আইন বহির্ভূত কাজ হয়েছে। এই অর্থ অপচয়ে যদি সঙ্গত কোনো কারণ না থাকে তাহলে তদন্ত করে যার দায় তার কাছ থেকে আদায় করতে হবে। কারণ জনগণের টাকায় এটা করা হয়েছে। যারা এটা তদন্ত করবে না তারাও দায়ী থাকবে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
৯০ ও ১৮০ দিন মেয়াদি বিল চালু করলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক
দুর্বল ব্যাংকগুলোকে নিজ ভল্ট থেকে টাকা দেওয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই টাকা যাতে বাজারে মূল্যস্ফীতি উসকে না দেয়, সে জন্য নতুন করে ৯০ ও ১৮০ দিন মেয়াদি বিলের মাধ্যমের টাকা তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আজ এক প্রজ্ঞাপনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন ও তারল্য ব্যবস্থাপনাকে আরও কার্যকর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে প্রচলিত ৭, ১৪ ও ৩০ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের পাশাপাশি ৯০ ও ১৮০ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিল প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
এদিকে গতকাল ৩০ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে ৪৫২ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে অংশ নিয়েছে ১১টি ব্যাংক। এতে গড় সুদের হার ছিল ১১ দশমিক ১০।
এর আগে দুর্বল পাঁচটি ব্যাংককে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা তারল্য–সহায়তা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বেসরকারি খাতে পরিচালিত ন্যাশনাল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংককে এ তারল্য–সহায়তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর আগে গ্যারান্টির বিপরীতে দুর্বল ব্যাংকগুলো টাকা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংককে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়। তবে দুর্বল ব্যাংকগুলো অভিযোগ করছে, এ ব্যবস্থায় তারা চাহিদামতো টাকা পায়নি। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজের ভল্ট থেকে টাকা ধার দেওয়া শুরু করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, একদিকে বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দেওয়া হচ্ছে। ফলে বাজারে অতিরিক্ত টাকা সরবরাহের ঝুঁকি রোধ করা যাচ্ছে। বাজার থেকে টাকা না তুলে শুধু ধার দিলে তা মূল্যস্ফীতি উসকে দেওয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। এ জন্য সতর্কতার সঙ্গে এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
নবায়নযোগ্য শক্তির বিদ্যুৎ প্রকল্পে আরও ৫ বছরের কর সুবিধা
নবায়নযোগ্য শক্তির বিদ্যুৎ প্রকল্পে আরও ৫ বছরের কর সুবিধা দিয়েছে সরকার। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে নবায়নযোগ্য শক্তিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য আরেক দফা কর ছাড় দিয়ে বুধবার (২৭ নভেম্বর) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এখন থেকে নবায়নযোগ্য শক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্র সর্বমোট ১৫ বছরের কর অব্যাহতি পাবে। এরমধ্যে ১০ বছরের জন্য পুরো আয়কর অব্যাহতি এবং ৫ বছরের জন্য বিভিন্ন হারে আয়কর ছাড়।
এক মাসের মাথায় আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে আরও ৫ বছরের বাড়তি কর সুবিধা দেওয়ার নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করলো এনবিআর।
এর আগে, গত ২৯ অক্টোবর নবায়নযোগ্য শক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে প্রথম ৫ বছরে পুরো আয়কর অব্যাহতি এবং পরের ৫ বছরের জন্য কর ছাড় দিয়েছিল।
নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নবায়নযোগ্য শক্তির কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০৩০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে উৎপাদনে গেলে সেটি আয়ের ওপর প্রথম ১০ বছর আয়কর অব্যাহতি এবং পরবর্তী ৫ বছর বিভিন্ন হারে আয়কর ছাড় পাবে।
২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে ২০৩০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়া বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতির আওতায় নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো এ সুবিধা পাবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
এসব কোম্পানিকে প্রথম ১০ বছর আয়ের ওপর কোনো কর দিতে হবে না। পরের ৩ বছর ৫০ শতাংশ এবং এর পরের ২ বছর ২৫ শতাংশ কর অব্যাহতি মিলবে। তবে সেজন্য বাংলাদেশ বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতিতে নির্ধারিত সব শর্ত পূরণ করতে হবে।
সম্প্রতি এক সেমিনারে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) জানায়, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে, নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব দিলে অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দুই দফা কমার পর বাড়লো স্বর্ণের দাম
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আবার বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৫৪ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৮ টাকা।
স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) থেকে নতুন দাম কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সোনার দাম কিছুটা কমানো হয়। তার আগে ২৬ নভেম্বরও দাম কিছুটা কমানো হয়। দুদিনে দু-দফা সোনার দাম কমানোর পর এখন আবার দাম বাড়ানো হলো।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠকে করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরবর্তীতে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নতুন মূল্য অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ১৫৪ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৮ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৯৬ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৯৪৫ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৯১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ৮০৪ টাকা বাড়িয়ে ৯৩ হাজার ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৮২২ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫৫৪ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৬৯৪ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৩১ হাজার ৩০২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৩০৯ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ১২ হাজার ৫৪৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৯৭১ টাকা কমিয়ে ৯২ হাজার ৩৫৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আজ বুধবার এ দামেই সোনা বিক্রি হয়েছে।
সোনার দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৫৭৮ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৪৪৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম ২ হাজার ১১১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ৫৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু
ভারতের অভ্যন্তরে স্লট বুকিং বন্ধ থাকায় দিনাজপুরে হাকিমপুর উপজেলার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গত তিন দিন ধরে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। আর গতকাল মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর ১২টার পর থেকে সব ধরনের পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।
ফের স্লট বুকিং চালু করায় আজ বধুবার (২৭ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে পেঁয়াজ বোঝাই পাঁচটি ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করে। এর মধ্যমে আবারও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রম শুরু হলো। তবে পেঁয়াজ আমদানি হলেও এখনো পর্যন্ত আলু আমদানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী।
তিনি বলেন, ভারত থেকে স্লট বুকিং বন্ধ থাকায় পেঁয়াজ, আলু রপ্তানি করতে পারেননি ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এতে করে তাদের অনেক লোকসান হয়েছে। যার কারণে তারা সব ধরনের পণ্য রপ্তানি বন্ধ করেছিলেন।
হিলি কাস্টমসের তথ্য মতে, চলতি সপ্তাহে ভারত থেকে ৫৫ ট্রাকে ২ হাজার ২০০ মেট্রিকটন চাল, ১৬৬ ট্রাকে ৪ হাজার ৭০০ মেট্রিকটন আলু এবং ৪৫ ট্রাকে ১ হাজার ৩০০ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বাংলাদেশে আইএমএফ দলের সফর শুরু ৪ ডিসেম্বর
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের তৃতীয় কিস্তি অর্থ ছাড়ের শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে আলোচনা করতে একটি মিশন আগামী ৪ ডিসেম্বর ঢাকায় আসছে।
মিশনটি নতুন অন্তর্বর্তী সরকার যে আরও অতিরিক্ত ৩০০ কোটি ডলার চেয়েছে তার বিষয়েও আলোচনা করবে। মিশনটি ওয়াশিংটনে ফিরে গিয়ে প্রধান কার্যালয়ে একটি প্রতিবেদন উপম্থাপন করবে। সেই প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় ও বাড়তি সহায়তার পাওয়ার বিষয়টি।
সূত্র জানায়, আইএমএফের এবারের মিশনটি বেশ বড় হচ্ছে। কমপক্ষে ১০ সদস্যের এই মিশনটি এবার ১৪ দিন ঢাকায় অবস্থান করবে। এবারের মিশনে নেতৃত্ব দেবেন আইএমএফের গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকসের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।
এর আগের মিশনেও তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ওই সময়ে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ পেট্রোরিয়াম কর্পোরেশনসহ (বিপিসি) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে।
এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচীর অতিরিক্ত আররও ৩০০ কোটি ডলার অতিরিক্ত সহায়তা চায়। এ বিষয়ে আইএমএফ শুরুতে ইতিবাচক সাড়া দিলেও পরে তা পিছিয়ে যায়। এ বিষয়ে আইএমএফলে বার্ষিক সভার সময়েও সাইড লাইনে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি।
আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের একটি ঋণ কর্মসূচী চলমান রয়েছে। ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ এটি অনুমোদন করে। ইতিমধ্যে তিনটি কিস্তি ছাড় হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় হওয়ার কথা। এর আগে তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের সময় যেসব শর্ত বাস্তবায়নের কথা বলেছিল সেগুলো অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে। একই সঙ্হে বাড়তি অর্থ সহায়তা দেওয়ার বিষয়টিও পর্যালোচনা করবে।
এমআই