অর্থনীতি
তৌফিক-ই-ইলাহীর ব্যাংক হিসাব তলব
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছে বিএফআইইউ। বিএফআইইউয়ের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
লেনদেন হিসাব তলব করা ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী ইত্যাদি চিঠি দেওয়ার তারিখ থেকে ২ কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউতে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা সংশ্লিষ্ট ধারা প্রযোজ্য হবে বলে বিএফআইইউয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে তলব করা ব্যক্তির নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
চটপটির দোকানে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ঋণ ২৩৪ কোটি টাকা
চট্টগ্রামে নওরোজ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তাদের একটি চটপটির দোকান ও দুটি রেস্তোরাঁ রয়েছে দেখিয়ে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৩টি শাখা থেকে ২৩৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক নাজমি নওরোজ।
এর মধ্যে ইট অ্যান্ড ট্রিট নামের চটপটির দোকানটি নগরীর আসকার দিঘির পাড়ে। এর পাশেই ফিউশন ইটস নামের একটি রেস্তোরাঁ ও অপরটি লা এরিস্টোক্রেসি নামের রেস্তোরাঁটি তিনবার জায়গা বদল করে এখন নগরীর আগ্রাবাদে।
জানা গেছে, সামান্য ব্যবসার বিপরীতে এত বিপুল পরিমাণ ঋণ নেওয়া সম্ভব হয়েছে খোদ ব্যাংক মালিকের বিশেষ আগ্রহে। ফলে ঋণ শোধ না করে দিব্যি বিলাসী জীবনযাপন চালিয়ে আসছেন তিনি। এ ছাড়া ঋণ শোধ না করে তিনি ব্যাংক কর্মকর্তাদের খুশি রাখতেন ‘জোরপূর্বক উপহার’ দিয়ে। ব্যাংকের মালিকপক্ষও ঋণ পরিশোধ না করার সুবিধাটি অব্যাহত রাখতে তা খেলাপি না দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অশ্রেণিবদ্ধ (আনক্লাসিফায়েড) করে রাখে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লা এরিস্টোক্রেসি রেস্তোরাঁটির নামে ২ কোটি টাকার ঋণসীমা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও নাজমি নওরোজ উত্তোলন করেছেন ৭০ কোটি টাকা, যা সুদ-আসলে ১১৭ কোটি টাকা হয়েছে। তিনি এই টাকা নিয়েছেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের আসকার দিঘির পাড়ের মহিলা শাখা থেকে। একই প্রতিষ্ঠানের নামে নগরীর প্রবর্তক মোড়ে অবস্থিত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক শাখা থেকে তিনি ঋণ নেন ৫৪ কোটি টাকা, যা সুদে-আসলে এরই মধ্যে ৯০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা হয়েছে। এর বাইরে ব্যাংকটির চকবাজার শাখা থেকে ২৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। তবে চকবাজার শাখার পুরো টাকা এস এলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যাংকটির মালিক সাইফুল আলম মাসুদ নিয়ে নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন নাজমি নওরোজ।
আসকার দিঘির পাড়ের মহিলা শাখার মাধ্যমে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে ২০১১ সাল থেকে লেনদেনের শুরু হয় নাজমি নওরোজের। বর্তমানে এই ঋণ সুদে আসলে ১১৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। ব্যাংকের চাপাচাপিতে ২০২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিনি শুধু ১ কোটি ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। তবে ঋণের টাকা অশ্রেণিবদ্ধ (আনক্লাসিফায়েড) তালিকায় দেখানো হয়।
ব্যাংক সূত্র জানায়, মালিকপক্ষ চায়নি বলে নাজমি নওরোজকে ঋণ খেলাপি হিসেবে দেখানো হয়নি। তাই ঋণটিকে অশ্রেণিবদ্ধ করে রাখা হয়। অবশেষে গত আগস্ট মাসে তাকে ঋণ খেলাপি হিসেবে দেখানো হয় এবং পাওনা আদায়ে মামলা করা হয়।
ব্যাংক সূত্র জানায়, নাজমি নওরোজ ব্যাংক থেকে যে টাকা উত্তোলন করেন, বছর শেষে তা পরিশোধ না হওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে কোনো কথা বলেনি। তবে ব্যাংকের টাকা ফেরত না পাওয়ায় শাস্তি হিসেবে আটকে দেওয়া হয় একাধিক কর্মকর্তার পদোন্নতি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকটির এক কর্মকর্তা বলেন, নাজমি নওরোজ ব্যাংকের কিস্তি জমা দেন না। কিন্তু মাঝেমধ্যে উপহার নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে আসেন। কর্মকর্তারা এসব উপহার গ্রহণ করতে না চাইলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দিয়ে প্রচণ্ডভাবে ধমকাতেন।
নাজমি নওরোজ বলেন, আমি যে পরিমাণ সম্পদ ব্যাংকে জামানত দিয়েছি তাতে ৪০ কোটি টাকাও পাওয়ার কথা নয়। যা কিছু হয়েছে সবই মাসুদ সাহেবের ইচ্ছায় হয়েছে। আমি যে আকিজ উদ্দিনকে টাকা দিয়েছি, সেই প্রমাণ আমার কাছে আছে। ব্যাংকের নতুন পর্ষদ গত রোববার আমার সঙ্গে বসেছে। আমি তাদেরকে এসব জানিয়েছি।
তাহলে ব্যাংকের এত টাকার দায় দেনা কে পরিশোধ করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমি নওরোজ বলেন, কেন? মাসুদ সাহেব শোধ করবেন?
নাজমি নওরোজ উল্টো প্রশ্ন করেন, টাকা জামানত ছাড়া আমি এত বিপুল পরিমাণ টাকা কীভাবে তুলতে পারলাম? পারলাম ওই ব্যাংকের মালিক মাসুদ সাহেবের ইচ্ছায়।
ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ ও তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আকিজ উদ্দিনের বিশেষ আগ্রহে সামান্য চটপটির দোকান ও রেস্তোরাঁর নামে নাজমি নওরোজ এত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যাংক থেকে তোলার সুযোগটি পান।
নাজমি নওরোজের কাছে চটপটির দোকান ও রেস্তোরাঁর বছরে আয় কত? ব্যক্তিগত চলাফেরার গাড়ির দাম ও বিদেশে সন্তানদের লেখাপড়া সংক্রান্ত আরও কয়েকটি প্রশ্নের জবাব চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।
নাজমি নওরোজ ২০১২ সালে ৮১, শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ রোড ঠিকানায় লা এরিস্টোক্রেসি নামে একটি রেস্তোরাঁর ব্যবসা শুরু করেন। এখানে কম-বেশি ১০০ জনের বসার ব্যবস্থা ছিল। ২০২০ সালে হঠাৎ লা এরিস্টোক্রেসি নামের রেস্তোরাঁটি সেখান থেকে সরিয়ে প্রথমে শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ রোডের কর্ণফুলী টাওয়ারে (এস আলম টাওয়ার) এবং পরে নগরীর আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার ১০৫ হোসাইন চেম্বারের নিচতলায় স্থানান্তর করেন। আর লা এরিস্টোক্রেসি হোটেলটির নতুন নাম দেন ফিউশন ইট। দামপাড়া পুলিশ লাইনের কাছে কেক বিক্রিরও একটি দোকান তিনি খুলেছিলেন, যেটি এখন নেই। নগরীর একমাত্র পাঁচতারা হোটেল রেডিসন ব্লু’র প্রবেশপথের বিপরীত পাশেও তিনি ইট অ্যান্ড ট্রিট নামের একটি চটপটির দোকান খুলেন। কয়েক মাসের মধ্যে বন্ধও করে দেন।
এভাবে নানা জায়গায় বারবার দোকান খোলা এবং বন্ধ করার কারণ জানতে চাইলে ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা দিয়েছেন চাঞ্চল্যকর তথ্য। তারা বলেছেন, লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে ব্যাংক থেকে অধিক হারে ঋণ বরাদ্দের জন্য তিনি এই কৌশল নেন। অর্থের উৎস গোপন করা হয় এই প্রক্রিয়ায়। যেমন একটি ব্যাংক হিসাব থেকে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে অর্থ স্থানান্তর, বিদেশে অর্থ পাচার, ট্রাভেলার্স চেকে রূপান্তর, একটি ব্যাংক হিসাব থেকে অন্যান্য শাখায় বিভিন্ন নামে অর্থ সরানোর জন্য এই কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়। নাজমি নওরোজ রেস্তোরাঁ ব্যবসায় আয় উন্নতি যা-ই হোক না কেন, তিনি বারবার শাখা বাড়ানো বা নাম পরিবর্তন করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরের কূট কৌশলের আশ্রয় নেন।
একটি ভাতের হোটেল এবং একটি চটপটির দোকানে বিক্রি-বাট্টা কত- তা নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের রয়েছে প্রশ্ন। তবে নাজমি নওরোজের বিলাসী জীবনের সঙ্গে এই দুইটি দোকান মেলানো অসম্ভব। তার নিজস্ব চলাফেরার জন্য আছে একটি টয়োটা ক্রাউন সেডান কার। নগরীর অভিজাত এলাকা নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে আছে দুটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছেন লন্ডন ও কানাডায়।
এ বিষয়ে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের আঞ্চলিক প্রধান (উত্তর) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, নাজমি নওরোজের বিরুদ্ধে আমরা আদালতে মামলা করেছি। ঋণের টাকা আদায়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত আছে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ভল্টে উপচে পড়ছে টাকা, ট্রাকভর্তি হয়ে ফিরছে বাংলাদেশ ব্যাংকে
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে ব্যাংক খাতের লুটপাটের চিত্র। এ পরিস্থিতিতে তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছে আওয়ামী সুবিধাভোগীদের লুটপাটের শিকার ব্যাংকগুলো। ব্যাংক লুটপাটের তথ্য প্রকাশিত হতে শুরু করলে ডজনখানেক ব্যাংক গ্রাহকের টাকা উত্তোলনের চাপ সামাল দিতে পারছে না। বিভিন্ন উৎস থেকে ধার করে চলতে হচ্ছে তাদের।
অন্যদিকে আবার আমানতের চাপে কোনো কোনো ব্যাংকের ভল্টে টাকা রাখার জায়গা নেই। সীমার বেশি টাকা জমা পড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিচ্ছে এসব ব্যাংকের অনেক শাখা। গত দুই সপ্তাহে বিভিন্ন ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ৮৫ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা জমা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিটি ব্যাংকের শাখায় ভল্টের একটি নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারিত।
সীমার বেশি টাকা এলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সোনালী ব্যাংকের চেস্ট শাখায় জমা করতে হয়। সরকার পতনের পর কয়েক দিন নিয়মিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছিল ব্যাংকগুলো। দৈনিক চাহিদা মেটাতে অন্য ব্যাংক থেকেও ধার করেছে। তবে গেল দুই সপ্তাহে ব্যাংকগুলো যত টাকা নিয়েছে, জমা করেছে তার চেয়ে বেশি।
গত ১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে জমা হয়েছে আট হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তা ছিল ছয় হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা হয়েছে ৮৫ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা। এসব টাকা ট্রাক ভর্তি করে প্রতিদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিয়ে যাচ্ছে ব্যাংকগুলো। তবে নতুন করে ৮৩ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা ধার নিয়েছে সংকটে থাকা কিছু ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমানে নোটস ইন সার্কুলেশন বা প্রচলনে থাকা টাকার পরিমাণ কমে গত ৩ অক্টোবর তিন লাখ ১০ হাজার কোটিতে নামে। গত ১৫ আগস্ট তা ছিল তিন লাখ ২২ হাজার ৬১ কোটি টাকা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে টাকা উত্তোলনের চাপ বেড়েছিল ব্যাংকে। তাই ওই সময় মানুষের হাতে টাকার পরিমাণ বেড়েছিল। সেটি আবারও ব্যাংকিং চ্যানেলে ফেরত আসতে শুরু করেছে। সাধারণত নোটস ইন সার্কুলেশন বা মানুষের হাতে প্রচলিত টাকার পরিমাণ থাকে দুই লাখ ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি। ব্যাংকের ওপর আস্থা ধীরে ধীরে বাড়লে টাকা আরো ফেরত আসবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, সার্কুলেশনে থাকা নোটের মধ্যে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে সারা দেশে ১১ হাজারের মতো ব্যাংক শাখার ভল্টে ১৬ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার মতো জমা থাকে। সার্কুলেশনে থাকা বাকি টাকা রয়েছে নাগরিকদের পকেট, ঘরের আলমারি, সিন্দুক কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে।
জানা গেছে, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন উপায়ে অর্জিত অর্থ নানা উপায়ে অনেকে ঘরে রেখেছিলেন। তবে সরকার পরিবর্তনের পর তাঁদের বেশির ভাগ পলাতক। ঘরে টাকা রেখে তাঁদের কেউ কেউ বর্তমানে বিপদে আছেন। ফলে নিরাপদ বোধ না করায় বিভিন্ন উপায়ে তাঁরা ভালো ব্যাংকে টাকা জমা রাখছেন।
আবার সরকার পতনের পর থেকে বড় অঙ্কের নগদ টাকা তুলতে পারছে না মানুষ। এর কারণ, সরকার পতনের প্রথম সপ্তাহে দিনে সর্বোচ্চ এক লাখ, দ্বিতীয় সপ্তাহে দুই লাখ এবং তৃতীয় সপ্তাহে তিন লাখ টাকা নগদ উত্তোলনের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এখন অবশ্য সেই সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। তার পরও সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক থেকে অনেকে বড় অঙ্কের আমানত তুলতে পারছে না। বিশেষ করে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, বাংলাদেশ কমার্স ও ইউনিয়ন ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের পে-অর্ডার নগদায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগের মতো টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দেবে না। তবে ব্যাংকগুলো আন্ত ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহের মাধ্যমে এ সহায়তা নিতে পারে।
জানা গেছে, নামে-বেনামে ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে পাচারের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা। নামে-বেনামে টাকা বের করে নেওয়ায় তীব্র তারল্যসংকট তৈরি হয়েছে ব্যাংকগুলোয়।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি বন্ধ ৬ দিন
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে টানা ছয় দিন পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে সকল প্রকার আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বন্ধের এই সময়ে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত স্বাভাবিক থাকবে।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাবান্ধা আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের আহ্বায়ক রেজাউল করিম শাহিন।
জানা গেছে, বুধাবার (৯ অক্টোবর) শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হওয়ায় উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ১৫ অক্টোবর (মঙ্গলবার) সকাল থেকে বন্দরের কার্যক্রম আবারো চালু হবে।
এ বিষয়ে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অমৃত অধিকারী বলেন, দুর্গাপূজার ছুটিতে বন্দরে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বন্দর ও ইমিগ্রেশন এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই সময়ে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত স্বাভাবিক থাকবে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির অর্থে সবুর খানের স্ত্রী-কন্যার নামে শেয়ার ক্রয়
বিগত সরকারের কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপির ঘনিষ্ঠতায় কোন জবাবদিহি ছাড়া সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির মাত্রা অতিক্রম করেছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান। তিনি ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) পরিচালক ও সাবেক সভাপতি ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির তৎকালীন বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্যকে অবৈধভাবে বাদ দিয়ে ইউজিসি থেকে দ্রুততম সময়ে রেজুলেশন বের করে দায়িত্ব ছিনিয়ে নেন প্রথম জীবনে কম্পিউটারের পার্টস বিক্রি করা এই সবুর খান। এরপর থেকেই তিনি শুরু করেন দেশের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষায় দুর্নীতি। পরিচালকসহ বিভিন্ন পদে স্বজনদের বসিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলের অর্থ ব্যক্তিগত খরচে ব্যবহার করতে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিকে অনিয়মের আখড়া বানিয়েছেন সবুর খান। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া টিউশন ফির অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ব্যয় না করা, সরকারি জমি দখল, কর ফাঁকি, বিদেশে অর্থপাচার করে বাড়ি-ব্যবসা সবকিছুই করতে নানান কৌশল ও প্রতারণার আশ্রয় নেন তিনি। এছাড়াও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের বিষয়ে নানান অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে সবুর খানের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করে নিজের এবং স্ত্রী-কন্যার ব্যক্তিগত নামে একটি ওষুধ কোম্পানির বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনেছেন সবুর খান। এই তিনজনের নামে এরই মধ্যে নভো হেলথ কেয়ার অ্যান্ড ফার্মা লিমিটেডের ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করা হয়েছে। যার মোট মূল্য ১৯ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর এই অর্থের পুরোটাই দেওয়া হয়েছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক হিসাব থেকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও ব্যবহারিক শিক্ষার সুবিধার জন্য একটি ওষুধ কোম্পানির শেয়ার কেনার প্রস্তাব দেন সবুর খান। নভো হেলথ কেয়ারের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনায়ও এ বিষয়টি সামনে আনা হয়েছিল। তবে শেয়ার হস্তান্তরের চূড়ান্ত পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে সবুর খান, তার স্ত্রী সাহানা খান এবং মেয়ে সামিহা খানের নামে সব কাগজপত্র তৈরি করেন। চুক্তিপত্রে দেখা যায়, ওষুধ কোম্পানিটির মোট ৮ লাখ ৬৮ হাজার শেয়ারের মধ্যে ৪ লাখের মালিক এখন সবুর খান, যা মোট শেয়ারের ৪৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। তার স্ত্রী সাহানা খান এবং মেয়ে সামিহা খানের নামে কেনা হয়েছে ৫০ হাজার করে মোট ১ লাখ শেয়ার। এই দুজন এখন কোম্পানিটির ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ করে মোট ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ শেয়ারের অধিকারী। সব মিলিয়ে কোম্পানিটির ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ শেয়ারের মালিক এখন এই পরিবার।
জানা গেছে, প্রথম জীবনে কম্পিউটারের পার্টস বিক্রির ব্যবসা করা এই সবুর খান বিএনপি সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ও তৎকালীন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিনের বদৌলতে তার সঙ্গে যৌথভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্র সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে ১/১১ এর পটপরিবর্তনের সময় বিএনপির সাথে সে সমস্ত সম্পর্ক ছিণ্ণ করার ঘোষণা দেয় এবং ইউজিসির তৎকালীন ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পাশ করা রেজুলেশনে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির অন্যতম সদস্য বিএনপির নেতা শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন বিদেশে চলে যাওয়ায়, এই সুযোগকে ট্রাস্টি বোর্ড থেকে অবৈধভাবে তাকে বাদ দিয়ে ইউজিসি থেকে দ্রুততম সময়ে পুণরায় রেজুলেশন বের করেন মো. সবুর খান।
বর্তমানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি পরিচালনার জন্য রয়েছে ১১ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ড। এর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা মো. সবুর খান। পাশাপাশি তার স্ত্রী সাহানা খান ভাইস চেয়ারম্যান, কন্যা সামিহা খান, মা রওশন আরা বেগম এবং শ্যালক মো. ইমরান হোসেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে রয়েছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসারে, এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় হবে অলাভজনক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। ট্রাস্ট আইন অনুসারেও ট্রাস্টের কোনো সদস্য প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যক্তিগতভাবে সুবিধা নিতে পারবেন না। এদের মধ্যে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকসহ বিভিন্ন পদে চাকরি করেন। যেখান থেকে তারা মাসে বেতন-ভাতা নেন। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় সম্মানীর নামে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। যদিও আইন অনুযায়ী তাদের এসব সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো এটিকে দাতব্য প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর অধিনে প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করতে হবে। এছাড়াও সিন্ডিকেট, একাডেমিকসহ আরো বেশ কিছু কমিটি থাকবে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো বিশ্ববিদ্যালয়কে অবশ্যই অলাভজনক এবং দাতব্য মডেলে পরিচালনা করতে হবে। এসব শর্ত থাকা স্বত্তেও সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র নিজের আত্মীয় স্বজনদের নিয়োগ দিয়ে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান সবুর খানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। একইসঙ্গে তার মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আনোয়ার হাবিব কাজলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি অর্থসংবাদকে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও ব্যবহারিক শিক্ষার সুবিধার জন্য বোর্ড ট্রাস্টির কাছে একটা ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। এই প্রস্তাবনার প্ররিপ্রেক্ষিতে ট্রাস্ট্রি বোর্ড ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমের একটি সংবাদের সূত্র ধরে ট্রাস্টি বোর্ড হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়। বিচারপতি মমতাজউদ্দিনসহ তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ গত জুন মাসের ২৭ তারিখে রায় দেয়। রায় অনুযায়ী, ওষুধ কোম্পানি টাকাটা ফেরত দেবে। এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয় এবং ট্রাস্ট্রি বোর্ডের কোন সম্পর্ক থাকবে না।
অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সবুর খানের শ্যালক-দুলাভাইসহ আত্মীয়-স্বজন নিয়োগ দিয়ে একক রাজত্ব্য কায়েম করেছেন। আত্মীয়করণের এই প্রক্রিয়ায় অযোগ্যদের হাতে পড়ে বিনষ্ট হচ্ছে একটি সম্ভাবনাময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশে আইটি শিক্ষার প্রসারে সরকারের অগ্রাধিকার থাকলেও এমন কিছু অযোগ্য মালিক ও কর্তৃপক্ষের হাতে পড়ে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার মানে নিম্নগামী হচ্ছে। তবে তথ্যপ্রযুক্তির ধুয়া তুলে উৎসাহী তরুণ-তরুণীর কাছ থেকে নিয়ে নিচ্ছে কাড়িকাড়ি টাকা।
এদিকে স্ক্যামের মহাযজ্ঞকে বাস্তবায়ণ করতে সবুর খান আরো প্রতিষ্ঠা করেন ড্যাফোডিল পরিবার। গ্রুপ অব কোম্পানির আদলে এই ড্যাফোডিল পরিবারে রয়েছে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে ডিসিএল, ওভাল ফার্নিচার, ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল, সবুজ প্রিন্টার্স, ডিওএল, বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল লিমিটেড, স্কিল জবস, গ্রিন গার্ডেন, ড্যাফোডিল এডুকেশন নেটওয়ার্কসহ অনেক প্রতিষ্ঠান।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনোক্ষেত্রেই উন্মুক্ত টেন্ডার আহ্বান করা হয় না। মূলত এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই ফলস টেন্ডার সাবমিশনের মাধ্যমে কাজ পায় ড্যাফোডিল পরিবারেরই কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠান। যার মাধ্যমে বাজারমূল্যের থেকে বেশি দামে পণ্য কিংবা সেবা দেখিয়ে সরানো হয় বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ডে জমা পড়া শিক্ষার্থীদের টাকা।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
টাকা পাচ্ছে না গ্রাহকেরা, নিজেদের সব টাকা তুলে নিলো দুই ব্যাংকের এমডি
স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখা টাকা নগদে উত্তোলন ও অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া ইউনিয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের গ্রাহকদের। চেক নিয়ে ব্যাংক দুটির এক শাখা থেকে আরেক শাখা ঘুরেও তুলতে পারছেন না টাকা। এমন সংকটের মধ্যেও ব্যাংক দুটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা (এমডি) তাঁদের বেতনের পুরো টাকা ঠিকই তুলে ফেলেছেন। তাঁদের ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, দুটি ব্যাংকই নিজ নিজ কর্মকর্তাদের বেতনের টাকা তোলার সীমা বেঁধে দিয়েছে। কেউ ১০ হাজার, আবার কেউ ২০ হাজার টাকা তুলতে পারেন। তবে ব্যাংক দুটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা (এমডি) তাঁদের বেতনের পুরো টাকা ঠিকই তুলে ফেলেছেন। এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরী ২ ও ৩ অক্টোবর তুলে নিয়েছেন ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। কমার্স ব্যাংকের এমডি তাজুল ইসলাম গত ২৬ সেপ্টেম্বর একবারে তুলেছেন ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
ইউনিয়ন ব্যাংকে গ্রাহক জ্যেষ্ঠ নাগরিক কামরুন নাহার জানান, তিন বছর আগে প্রায় এক কোটি টাকা স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখেন। গত জুলাই থেকে তিনি সেই টাকা নগদে উত্তোলন ও অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন। এখন পর্যন্ত কোনো টাকা তিনি তুলতে পারেননি। শুধু তিনি নন, ব্যাংকটি কোনো গ্রাহকেরই টাকা ফেরত দিতে পারছে না। তবে মাঝেমধ্যে পরিচিত গ্রাহকদের ১০-১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দেয়।
ব্যাংক দুটি এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংক দুটির পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। স্বতন্ত্র পরিচালকেরা এখন দুই ব্যাংকের চেয়ারম্যান। এর মধ্যে কমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান হয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক আতাউর রহমান। তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অবসরের পর প্রায় পাঁচ বছর এস আলমের মালিকানাধীন ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন।
দেখা গেছে, কমার্স ব্যাংকের এমডি তাজুল ইসলামের হিসাবে ২৫ আগস্ট বেতনের ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা জমা হয়। এরপর ২৯ আগস্ট তিনি আগের জমাসহ ১৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা অন্য ব্যাংকের হিসাবে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে বিশেষ ব্যবস্থায় পয়লা সেপ্টেম্বর সেই টাকা অন্য হিসাবে নিতে সক্ষম হন। ২৫ সেপ্টেম্বর তাঁর হিসাবে ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা বেতন বাবদ জমা হওয়ার পরদিনই তিনি পুরো টাকা তুলে ফেলেন।
জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমি আয়কর দেওয়ার জন্য পে-অর্ডার করেছিলাম। এ ছাড়া খরচের জন্য বেতনের টাকা তোলা হয়েছে। ব্যাংকে টাকার সংকট রয়েছে। এ জন্য অনেকে টাকা পাচ্ছেন না। ভবিষ্যতে এটি ঠিক হয়ে যাবে। আমরা ঋণ আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছি। আজও ১০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।
কমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, কবে তারল্যসংকট মিটবে, এটা বলতে পারব না।
ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরী তাঁর ব্যাংক হিসাব থেকে পয়লা সেপ্টেম্বর ২ লাখ টাকা ও ৫ সেপ্টেম্বর ৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর তাঁর হিসাবে ৫০ লাখ টাকা জমা হয়। একই দিন মাসের বেতনের ১০ লাখ ৮ হাজার ২৪২ টাকা জমা হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর ওই হিসাবে জমা হয় ৪২ লাখ টাকা। এরপর তিনি ২৯ সেপ্টেম্বর ৫০ হাজার টাকা, ২ অক্টোবর ৫০ লাখ টাকা এবং ৩ অক্টোবর ৫০ লাখ ও ৫৩ লাখ টাকা তোলেন।
এবিষয়ে মন্তব্য জানতে এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরীকে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ফরীদ উদ্দীন আহমদকেও ফোনে পাওয়া যায়নি।