জাতীয়
একটি নতুন দেশ নির্মাণ শুরু করতে হবে: ড. ইউনূস
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি ফোন কল আসে। তাকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়। সেই ফোন কলের এই দায়িত্ব নেওয়াকে জীবনের গতিপথ পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন তিনি।
মার্কিন পাবলিক ব্রডকাস্টিং সংস্থা এনপিআরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্ষমতায় আসার বিষয়ে এমনটাই বর্ণনা করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার (৩০ সেপ্টম্বর) এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে এনপিআর।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক সিটিতে এনপিআর-এর মর্নিং এডিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, এটি ছিল ‘ঘটনার খুব অদ্ভুত পরিবর্তন’।
ড. ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বক্তৃতা করার পরে এনপিআর-এর মিশেল মার্টিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় বসেছিলেন। তাদের আলাপচারিতায় ছিল—
মিশেল মার্টিন : গত গ্রীষ্মে যখন আমরা কথা বলেছিলাম আপনি দুর্নীতির অভিযোগে বিচারাধীন ছিলেন এবং এখন আপনি বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এসব কিছুই ঘটনার পালাবদল। নিজেকে এই অবস্থানে পেয়ে অবাক হচ্ছেন কি?
মুহাম্মদ ইউনূস: ঘটনার খুবই অদ্ভুত পালাবদল। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে আমি প্যারিসে ছিলাম, আমি দেখার চেষ্টা করছিলাম যে আমি ফিরে যাব কি-না, আমাকে গ্রেপ্তার করা হবে, কারণ তিনি (শেখ হাসিনা) আমার ওপর রাগান্বিত হবেন এবং আমাকে জেলে পাঠাবেন। তাই ভাবছিলাম ফিরতে দেরি করব। আর হঠাৎ বাংলাদেশ থেকে একটা ফোন পেলাম যে তিনি (শেখ হাসিনা) এখন চলে গেছেন। আমরা চাই আপনি সরকারপ্রধান হন। এটি একটি বড় চমক ছিল।
মার্টিন: আপনি যখন ফোনটি পেয়েছিলেন তখন আপনার মনে কী হয়েছিল?
ড. ইউনূস: দেশ পরিচালনায় আমার আদৌ যুক্ত হওয়া উচিত কি-না। এটা খুবই কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতি। কিন্তু যখন ছাত্ররা আমাকে ডেকে ব্যাখ্যা করল যে পরিস্থিতি কী। অবশেষে আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, তোমরা এর জন্য জীবন দিয়েছ। তোমরা যদি জীবন দিতে পার, তবে আমি আমার অন্যান্য সব বিবেচনা বাদ দিতে পারি। আমি তোমাদের সেবা করতে পারি। আমি এটা করব।’
মার্টিন: এবং আপনি যখন বলেন যে আপনি জীবন দিয়েছেন আপনি অতিরঞ্জিত করেননি এবং এটি কোনো রূপক নয়।
ড. ইউনূস: না, এটা কোনো রূপক নয়। মানুষ মারা যায়। প্রায় এক হাজার যুবক মারা গেল, বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে বুলেটে বুক পেতে দিলো। আক্ষরিক অর্থে, যুবকরা এসে আত্মাহুতি দিয়েছে। তারা যখন বিক্ষোভে যোগ দিতে তাদের বাড়ি থেকে বের হচ্ছিল, তারা তাদের বাবা-মাকে বিদায় জানাচ্ছিল, তারা তাদের ভাই-বোনদের বিদায় বলছে, ‘আমি হয়তো ফিরে আসব না।’ এটাই সেই চেতনা যার মধ্যে পুরো ব্যাপারটা ঘটেছে এবং অবশেষে, এটি এতটাই অবিশ্বাস্য ছিল, প্রধানমন্ত্রী দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন, কারণ পুরো জনতা তার বাড়ির দিকে আসছিল।
মার্টিন: একদিকে, এসব বিক্ষোভ আন্দোলনে খুবই অজনপ্রিয় কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত নেতার প্রস্থানের পথ প্রশস্ত করেছিল। সেইসব বিশৃঙ্খলতার প্রথম দিনগুলোতে, আহমদিয়া ও হিন্দুদের ওপর হামলা হয়েছিল। এ সব ঘটনার কিছু অংশ ছিল শেখ হাসিনার দলের প্রতি তাদের আনুগত্যের কারণে। এর কিছু ঘটনা কেবলমাত্র সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আক্রমণ বলে মনে হয়েছে। সেসব ঘটনাও কমে গেছে। কিন্তু তারপর থেকে, আরও হামলা হয়েছে, এইবার সুফি মাজারে। আমাদের প্রতিবেদন অনুসারে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে ২০টিরও বেশি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, উত্তেজিত জনতার হাতে হত্যা হয়েছে। কেন এমন হচ্ছে?
ড. ইউনূস: জনগণ বিপ্লবের মেজাজে আছে। সুতরাং এটি একটি বিপ্লবী পরিস্থিতি। তাদের অনেককে হত্যা করা হয়েছে। তাই তারা এমন লোকদের খুঁজছে যারা তাদের সহযোদ্ধাদের মৃত্যু ঘটিয়েছে। তাই জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলের অনুসারীদের ওপর হামলা চালাচ্ছিল। আপনি যখন বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হচ্ছে, সেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায় শেখ হসিনার সঙ্গে যুক্ত ছিল। সুতরাং আপনি পার্থক্য করতে পারবেন না যে, তারা শেখ হাসিনার অনুসারী হওয়ার কারণে তাদের ওপর হামলা হয়েছে, নাকি তারা হিন্দু বলে তাদের ওপর হামলা হয়েছে। কিন্তু তাদের ওপর হামলা হয়েছে, এটা নিশ্চিত। কিন্তু তারপর আমরা সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করি। আমি সবাইকে বলতে থাকি যে আমাদের মতভেদ থাকতে পারে; এর মানে এই নয় যে আমাদের একে অপরকে আক্রমণ করতে হবে।
মার্টিন: আপনি কি মনে করেন যে আপনি জনগণকে প্রতিশোধের পরিবর্তে সংস্কারের দিকে মনোনিবেশ করার পথে ফিরিয়ে আনতে পারেন?
ড. ইউনূস: প্রতিশোধের সময় মাত্র কয়েক সপ্তাহ ছিল। কিন্তু তারপর স্বাভাবিকতা ফিরে আসতে শুরু করে। তাই আমরা দেশ চালাচ্ছি। কিন্তু বিক্ষোভ আছে, প্রতিশোধমূলক বিক্ষোভ নয়। বেশিরভাগ বিক্ষোভ তাদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে, তাদের চাকরির দাবিতে, যাদের সরকার আগে বরখাস্ত করেছিল।
তাই তারা বলেছিল, অতীতের সরকার আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে এবং আমরা বিনা কারণে আমাদের চাকরি হারিয়েছি। কারণ আমরা অন্য রাজনৈতিক দলের সদস্য। তাই বঞ্চিতরা সবাই তাদের দাবি মেটানোর চেষ্টা করছে। আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম। দেখুন এগুলো আপনাদের ১৫ বছরের ক্ষোভ। আমরা ১৫ দিনের মধ্যে এটি সমাধান করতে পারি না। আমাদের কিছু সময় দিন যাতে আমরা ফিরে যেতে পারি। আপনারা একটি খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন এবং আমাদের এটি এমনভাবে সমাধান করতে হবে যাতে এটি পদ্ধতিগতভাবে সম্পন্ন হয়।
মার্টিন: সময়ের কথা বলছি, সেনাবাহিনী আপনার পেছনে রয়েছে। সামরিক নেতারা বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ১৮ মাস শাসন করতে হবে। বিরোধী দলগুলো তা চায় না। তারা নভেম্বরে নির্বাচন চেয়েছিল। আপনার যা করতে হবে তা করার জন্য কি ১৮ মাস যথেষ্ট সময় আছে?
ড. ইউনূস: জনগণ এই সংখ্যাগুলো বিবেচনা করছে না। কত মাস, কত বছর তাদের প্রয়োজন মনে হয়। কেউ কেউ বলে যে এটি দ্রুত করা উচিত, কারণ আপনি যদি দীর্ঘায়িত করেন আপনি অজনপ্রিয় হবেন এবং সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে। কেউ কেউ বলেন যে না, আপনাকে সংস্কার শেষ করতে হবে। সুতরাং আপনি দীর্ঘ সময় ধরে থাকুন। কারণ আমরা সবকিছু ঠিক না করে বাংলাদেশ ২.০-এ যেতে চাই না। তাই এই নিয়ে বিতর্ক চলছে।
মার্টিন: আপনি জানেন, আপনি প্রায় সুশীল সমাজের মতো করে সম্পূর্ণ পুনর্গঠনের কথা বলছেন।
ড. ইউনূস: সংস্করণ ২-এর অর্থ ঠিক এটাই। আমরা পুরনো স্টাইলে ফিরে যেতে চাই না। তাহলে এত জীবন দেওয়ার মানে কী? এর কোনো মানে নেই কারণ আমরা যা করেছি, সবকিছু ধ্বংস করেছি। তাই একটি নতুন দেশ নির্মাণ আমাদের শুরু করতে হবে।
মার্টিন: আপনি জানেন, এটি চ্যালেঞ্জিং কিন্তু উত্তেজনাপূর্ণ, তাই না?
ড. ইউনূস: এটা খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। আপনি নেতিবাচক দিক দেখছেন। আমি এটাকে খুবই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি। আমি বলেছিলাম এই জাতি সবচেয়ে বড় সুযোগ পেয়েছে। এসব মানুষ, দেশ একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ; আমাদের পরিবর্তন দরকার।
মার্টিন: আপনি ৮৪ বছর বয়সী। আমি জানি না যে আপনি কখনও নিজেকে সরকারপ্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ভেবেছেন কি-না। আপনি কি মনে করেন যে আপনি বাংলাদেশকে সেই দেশে পরিণত হতে দেখবেন যা আপনি আশা করেন, আপনার জীবদ্দশায়?
ড. ইউনূস: সব কিছু নয়। তবে আমি খুব খুশি হবো, এটি হওয়ার পথে। প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক আছে। নীতি সঠিক। তরুণেরা বিশ্বকে পরিবর্তন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে তারা দেশের মধ্যে এবং বিশ্বব্যাপী ভূমিকা পালন করে। জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বললে, আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ভুক্তভোগী। তবে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমি সবসময় তরুণদের গুরুত্ব দেই কারণ তারাই ভবিষ্যৎ গড়বে এবং যেভাবেই হোক তাদের নেতৃত্বের অবস্থানে থাকা উচিত। কারণ তাদের উত্তরাধিকারসূত্রে এই গ্রহে থাকতে হবে। আপনি উল্লেখ করেছেন যে আমি ৮৪ বছর বয়সী। আমার সামনে দীর্ঘ সময় নেই, তাদের সামনে পুরো জীবন রয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
আসিয়ান সংলাপে অংশীদার হতে মালয়েশিয়ার সমর্থন চান ড. ইউনূস
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্থা আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার সমর্থন চেয়েছেন অর্ন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ২০২৫ সালে আসিয়ানের আসন্ন সভাপতি পদে মালয়েশিয়াকে অভিনন্দন জানাই। আমরা আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা আঞ্চলিক ফোরামে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির জন্য মালয়েশিয়ার সক্রিয় ভূমিকার অপেক্ষায় রয়েছি।
দুই দেশের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্মরণ করে মালয়েশিয়াকে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আনোয়ার ইব্রাহিমের সফর বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দুই মাস আগে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রীর এটি হচ্ছে প্রথম বাংলাদেশ সফর। এই সফর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি মালয়েশিয়ার সমর্থনের স্বীকৃতি।
দুই নেতার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা উভয়েই দীর্ঘদিনের দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলো জোরদার করতে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
ড. ইউনূস বলেন, আলোচনায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বিপ্লব নজিরবিহীন গণআন্দোলন বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
শিক্ষার্থীরা তাদের স্বাধীনতা ও বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য তাদের জীবন বিসর্জন দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়বিচারপূর্ণ বাংলাদেশ গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে আমরা আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ মালয়েশিয়ার অবিচল সমর্থন ও সহযোগিতার প্রশংসা করি।
অভিন্ন মূল্যবোধ, আস্থা ও জনগণের কল্যাণের স্বীকৃতির মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তারা সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করেছেন।
সরকারপ্রধান বলেন, তারা মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে নিরাপদ প্রত্যাবাসন করার বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত রোহিঙ্গা ইস্যুটি সমাধানের জন্য তিনি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ইস্যুটি আসিয়ান ফোরামে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে নিয়মিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করার বিষয়ে সম্মত হয়েছি।
ঢাকায় অনুষ্ঠেয় চতুর্থ যৌথ কমিশনের বৈঠকের কথা উল্লেখ করে তিনি দুই দেশের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সইয়ের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, তারা কৃষি, জ্বালানি, যোগাযোগ, সুনীল অর্থনীতি, বিজ্ঞান, উদ্ভাবন ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনা অন্বেষণ এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা করেছেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে একটি নতুন উচ্চতায় উন্নীত করতে নিবিড়ভাবে কাজ করতে আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার ও সংকল্প ব্যক্ত করেছি।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে সরকারি সফরে আজ বিকেলে ঢাকায় আসেন।
আনোয়ার ইব্রাহিম দুপুর ২টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলে প্রধান উপদেষ্টা তাকে স্বাগত জানান এবং সেখানে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
ঢাকা ছাড়লেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী
সংক্ষিপ্ত সফর শেষে ঢাকা ছেড়ে গেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে বহনকারী বিমান মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করে।
এদিন দুপুর ২টায় ইসলামাবাদ হয়ে ঢাকায় আসেন আনোয়ার ইব্রাহিম। তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে তারা সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন। পরে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ফের বৈঠক করেন তারা। বৈঠক শেষে যৌথ প্রেস কনফারেন্স করেন দুই শীর্ষ নেতা। বিকেলে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সফররত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, প্রায় ১১ বছর পর মালয়েশিয়ান কোনো প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করলেন। শুধু তাই নয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম কোনো শীর্ষ নেতা হিসেবে ঢাকা সফরে এলেন আনোয়ার ইব্রাহিম। সফরকালে তার সঙ্গে ছিল মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ৫৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
আরও জনশক্তি রপ্তানিতে মালয়েশিয়ার সহযোগিতা চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি
বাংলাদেশ থেকে যাতে আরও দক্ষ ও আধা দক্ষ জনশক্তি মালয়েশিয়ায় যেতে পারে সে ব্যাপারে দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সহযোগিতা চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে বঙ্গভবনে মালয়েশিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রপতি এ সহযোগিতা চান বলে তার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা জানানো হয়েছে।
এর আগে বঙ্গভবনে পৌঁছালে মালয়েশিয়ায় প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি।
মালয়েশিয়ায় প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, তার এ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আগামীতে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। সাক্ষাৎকালে তারা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় বিশেষ করে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য-বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা, শ্রমবাজার এবং রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে মালয়েশিয়ায় সহযোগিতা চান।
মালয়েশিয়া আসিয়ানের সভাপতি হওয়ায় আনোয়ার ইব্রাহিমকে অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ আশিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে আগ্রহী। মালয়েশিয়া এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনশক্তি রপ্তানির গন্তব্য। আগামীতে যাতে আরও দক্ষ জনশক্তি মালয়েশিয়ায় যেতে পারে সে বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সহযোগিতা কামনা করেন রাষ্ট্রপতি।
সাক্ষাৎকালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। বাংলাদেশি জনশক্তি মালয়েশিয়ার আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে তিনি মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।
এসময় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
সাক্ষাৎকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং রাষ্ট্রপতির সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
মালয়েশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে চাই: ড. ইউনূস
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যকার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হবে।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। তার আগে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।
ড. ইউনূস বলেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে চাই। দুই দেশই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সম্মত হয়েছি। অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। তাছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনশক্তি রপ্তানি, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কর্মসংস্থান তৈরি, ভিসা সহজীকরণের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, প্রতিদিন চারশ থেকে পাঁচশ রোহিঙ্গা প্রবেশ করছে, এটা উদ্বেগের বিষয়। তবে এটির সমাধান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হাতে। এ সংকটে কেবল বাংলাদেশই নয়, মালয়েশিয়াও ভুক্তভোগী। এটি নিরসনে একসঙ্গে কাজ করছি। বিভিন্ন আঞ্চলিক জোটকে এতে সম্পৃক্ত করার কথাও জানান তিনি।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, মানুষের মর্যাদা রক্ষায় ড. ইউনূসের ভূমিকা আমরা জানি। তাকে ব্যক্তিগতভাবে আমি চিনি। তাই তার ওপর ভরসা রাখছি। বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন থাকবে।
এসময় ড. ইউনূস বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ায় যেসব কর্মী ঝামেলায় পড়েছে, প্রথম দফায় এমন ১৮ হাজার জনকে সহায়তার বিষয়ে সম্মত হয়েছি। বাংলাদেশের কর্মীরা আধুনিক দাস নয়। বাংলাদেশের শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়ে কাজ করছি।
এসময় বাংলাদেশে সেসব মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, তাদের সুবিধা দেওয়ার আহ্বান জানান আনোয়ার ইব্রাহিম।
এর আগে শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান আনোয়ার ইব্রাহিম। তাকে স্বাগত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। সেখানেই দুজনের একান্ত বৈঠক হয়।
আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৫৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
তিন দেশ থেকে বুলগেরিয়ান ভিসার আবেদন করতে পারবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা
ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় বুলগেরিয়ায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও কাজাখস্তানে বুলগেরিয়ান দূতাবাসে আবেদন করতে পারবে।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুকে এক পোস্টে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের পোস্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা বুলগেরিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছে কিন্তু নয়াদিল্লিতে বুলগেরিয়ান দূতাবাসে তাদের ভিসার আবেদন জমা দিতে পারেনি তাদের হ্যানয় (ভিয়েতনাম), ইসলামাবাদ (পাকিস্তান) বা আস্তানা (কাজাখস্তানে) বুলগেরিয়ান দূতাবাসে আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, মেডিকেল ভিসা ছাড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ভিসা বন্ধ রেখেছে ভারত।