অন্যান্য
ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময়সীমা বাড়ালো ডিএনসিসি
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) হোল্ডিং ট্যাক্স রেয়াত ও সারচার্জ ব্যতীত ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময়সীমা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ডিএনসিসির জনসংযোগ বিভাগ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ডিএনসিসি এলাকাধীন করদাতা, ব্যবসায়ীদের কর পরিশোধের সুবিধার্থে বকেয়াসহ চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের চার কিস্তি হোল্ডিং ট্যাক্স একত্রে অনলাইনে পরিশোধ করা হলে হালসনের অর্থাৎ ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের চার কিস্তির ওপর শতকরা দশভাগ রেয়াতের সময়সীমা এবং সারচার্জ ব্যতীত ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময়সীমা আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯ তম অধিবেশন এবং অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফিরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশন এবং অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ঢাকায় পৌঁছেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফর সঙ্গীদের বহনকারী কাতার এয়ারওয়েজের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
বাংলাদেশের সরকার প্রধান হিসেবে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেন নোবেলজয়ী এ অর্থনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ ১২টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা গত ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক পৌঁছান। চার দিনের সফরকালে খুবই কর্মব্যস্ত সময় পার করেন তিনি।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক রেলমন্ত্রী সুজন
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলায় সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ শনিবার পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক মাহাবুল ইসলাম তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুব এ আদেশ দেন।
এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একটি দল নুরুল ইসলাম সুজনকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন দুপুরে ইমরান হাসান নামে এক শিক্ষার্থী গুলিতে নিহতের মামলায় সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলামের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। বিকেলে এ মামলায় তার উচ্চ আদালতে জামিন শুনানি হয়েছে যা আদেশের জন্য রয়েছে জানিয়ে রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেন তার আইনজীবী। পরে শুনানি শেষে আদালত তার রিমান্ড স্থগিত করেন।
এরপর গত ২২ সেপ্টেম্বর রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলায় নুরুল ইসলামকে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। ওইদিন শুনানির সময় কারাগার থেকে নুরুল ইসলামকে আদালতে হাজির করা হয়। আসামিপক্ষ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে আটকে যাচ্ছি: উপদেষ্টা আসিফ
লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে আটকে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। বৃহস্পতিবার বিকেলে আসিফ মাহমুদ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টের মাধ্যমে এ তথ্য জানান।
আসিফ মাহমুদ ওই পোস্টে ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের’ অনেকগুলো ফাইলের একটি ছবি দেন। সেখানে দেখা যায়, অফিসে ফাইলের স্তুপ জমে আছে। ছবির ওপরের ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে আটকে যাচ্ছি।’
এর আগে এক ফেসবুক স্ট্যটাসে তদবিরে বিরক্তের কথা প্রকাশ করেছিলেন আসিফ মাহমুদ। ওই স্ট্যটাসে তিনি বলেছিলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বলেছিলাম ব্যক্তিগত তদবির-আবদার নিয়ে কেউ আসবেন না।
এখনো প্রতিদিন যদি ৫০ জন দেখা করতে আসেন, তারমধ্যে ৪৮ জনই আসেন নানারকম তদবির নিয়ে। আমাদেরকেও নতুন বাংলাদেশের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়তে হবে। ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে গিয়ে দেশের স্বার্থে ত্যাগের মানসিকতা, কাজ করার মানসিকতা তৈরী করতে হবে শহীদদের স্পিরিটকে ধারণ করে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগাম ভোটগ্রহণ শুরু
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণের দিন আগামী ৫ নভেম্বর নির্ধারণ করা হলেও এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি রাজ্যে আগাম ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন বহু নাগরিক।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক মাসেরও বেশি সময় আগেই ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। যেখানে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে ভোটপ্রদান শুরু করেছে দেশটির মানুষ। স্থানীয় সময় শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) ভার্জিনিয়া, সাউথ ডাকোটা ও মিনেসোটার বাসিন্দাদের দেখা গেছে সশরীরে ভোটকেন্দ্রে হাজির হতে। খবর এএফপির।
খুব ভোরবেলায় ভার্জিনিয়ার আর্লিংটন নির্বাচন কেন্দ্রে ৫৬ বছর বয়সী টম কিকেনি ভোট দিতে এসে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আপনি এটাই অনুভব করতে পারছেন যে আমরা এই প্রক্রিয়ার অংশ।’ তার স্ত্রী ৫৫ বছর বয়সী মিশেল জানান, আগাম ভোট দিয়ে তার বন্ধু ও প্রতিবেশীর সামনে উদাহরণ তৈরি করে তিনি খুব সুখী অনুভব করছেন।
ভোট প্রদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের রয়েছে নিজস্ব নিয়মকানুন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ডাক যোগে ও সশরীরে আগাম ভোট প্রদান। এছাড়া নির্বাচনের দিন ভোটপ্রদান অথবা ওই তিনটি প্রক্রিয়ার সংমিশ্রণ। যার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন প্রার্থীরা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
জালিয়াতির মাধ্যমে ন্যাশনাল টি দখলে নেয় নাফিজ সারাফাত
জালিয়াতির মাধ্যমে শক্তিশালী সরকারি কোম্পানি মাফিয়াদের দখলে। নজিরবিহীন এ ঘটনাটি ঘটেছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টি কোম্পানিতে (এনটিসি)। এ কাজে সহযোগিতা করেছে স্বয়ং সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। সরকারকে না জানিয়ে অতি গোপনে বিতর্কিত ব্যবসায়ী চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের কাছে এ কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে দেয়। এক্ষেত্রে আইনকানুন কোনো কিছুর তোয়াক্কা করা হয়নি। আর এ শেয়ার দিয়েই কোম্পানিটি দখলে নেন নাফিজ সরাফাত ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবির হোসেন। এরপর প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু করে সরকারি শেয়ার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। এছাড়াও শেয়ার বিক্রি করা হয় আরেক চা কোম্পানি ‘ফিনলে টি’র পরিচালকের কাছে। ওই পরিচালককে আবার কোম্পানির পর্ষদেও নিয়ে আসা হয়। এরপর সব পক্ষ মিলে প্রতিষ্ঠা করা হয় দানবীয় আধিপত্য। ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) জোরপূবর্ক পদত্যাগে বাধ্য করে বেপরোয়া দুর্নীতি, কাঁচা পাতা অন্য কোম্পানির কাছে বিক্রি এবং একেকজন আলাদা বাগানগুলো দখল করে নেয়। যুক্ত করা হয় শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার নাতি পরিচয় দেওয়া রংপুরের ব্যবসায়ী সালমান তালিবকে। এক অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
সম্ভাবনাময় এ কোম্পানিটি ৫ বছরে ২২৩ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানির বর্তমান ব্যাংক ঋণ ৩৩৫ কোটি টাকা। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বছরের পর বছর লভ্যাংশ দিতে না পারায় শেয়ারবাজারে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে আইসিবির দাবি, তারা আইন মেনেই সবকিছু করেছে। নিয়মানুসারে সরকারি মালিকানাধীন কোনো কোম্পানিতে সরকারের কমপক্ষে ৫১ শতাংশ শেয়ার থাকতে হয়। বাকি সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ শেয়ার বেসরকারি খাতে ছাড়তে পারে। কিন্তু বর্তমানে এনটিসিতে সরকারের শেয়ার মাত্র ২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। বাকি ৭২ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেসরকারি খাতে। অর্থাৎ সরকারি কোম্পানির পুরো নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি খাতে। আবার সরকারি অংশে থাকা ২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে আইসিবির হাতে ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশ, সাধারণ বীমা করপোরেশন ১১ দশমিক ৫০ এবং সরকারের দুই মন্ত্রণালয় ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে থাকা ৭২ দশমিক ৫৭ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ শেয়ার আরেকটি চা কোম্পানি ‘ফিনলে টি’র উদ্যোক্তাদের দেওয়া হয়েছে। তাদের আবার পরিচালনা পর্ষদেও রাখা হয়েছে। এভাবে সম্মিলিতভাবে সরকারি একটি কোম্পানি লুটপাট হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সরকারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল এনটিসি। কিন্তু বর্তমানে কোম্পানিটি দেউলিয়া। জালিয়াতির মাধ্যমে দখলের পর গত কয়েক বছরে এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা করা হয়নি। এর মধ্যে মেশিন বিক্রি করে দেওয়া, শ্রমিকদের বেতন না দেওয়া, অবৈধ প্লেসমেন্ট বিক্রি, এমডিকে জোরপূবর্ক পদত্যাগে বাধ্য করা, অবৈধ চা বিক্রি এবং কেনাকাটায় ব্যাপক লুটপাট করা হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবিরকে সামনে রেখে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত এ কাজ করেছেন। শেখ কবিরসহ গোপালগঞ্জের ৬ জন পরিচালককে কোম্পানিতে জড়ো করে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়। নাফিজ সরাফাত নিজেও শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ। তাদের কারণে সরকারি পরিচালকরাও অসহায় ছিলেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, শুরুতে ‘ন্যাশনাল টি’ আইসিবির শেয়ার ছিল ২৯ শতাংশ। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সরকারকে না জানিয়ে গোপনে ধাপে ধাপে বিক্রি করা হয়। বর্তমানে ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশে নেমে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা এড়াতে আইসিবি প্রতারণার আশ্রয় নেয়। এক্ষেত্রে আইসিবি ইউনিট ফান্ডের কাছে থাকা ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ শেয়ারও সরকারি শেয়ার হিসাবে দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবে যৌক্তিক নয়। এ শেয়ারের মালিক ও সুবিধাভোগী মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটধারীরা। এখানে মূল আইসিবির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আবার এ ১৫ শতাংশ মিলিয়েও সরকারি শেয়ার হয় ৪৩ দশমিক ০৯ শতাংশ। অর্থাৎ বেসরকারি শেয়ার বেশি।
এনটিসির মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে উদ্যোক্তা শেয়ার বিক্রি করতে হলে আইসিবিকে প্রথমে সরকার এবং সাধারণ বীমা করপোরেশনকে লিখিতভাবে চিঠি দিয়ে কেনার সুযোগ দিতে হবে। তারা অনীহা প্রকাশ করলে স্টক এক্সচেঞ্জের লিস্টিং রেগুলেশন অনুসারে ৩০ কার্যদিবস আগে ঘোষণা দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনো কিছুই মানা হয়নি। ২০২১ সালের ২২ নভেম্বর নাফিজ সরাফাতের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ফিনিক্স সফটওয়্যারের কাছে এনটিসিরি ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬০০ শেয়ার বিক্রি করে আইসিবি। একই মালিকের আরেক কোম্পানি ডাইনেস্টি হোমস ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫১৭ শেয়ার কেনে। ফলে নাফিসের কাছে কোম্পানিটির মোট শেয়ার দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৬ হাজার ১১৭টি। শতকরা হিসাবে যা ৪ শতাংশ। বিদ্যমান আইন অনুসারে কোনো কোম্পানির পরিচালক হওয়ার জন্য ওই কোম্পানির মোট শেয়ারের ২ শতাংশ থাকা বাধ্যতামূলক। সে হিসাবে ৪ শতাংশ শেয়ার দিয়ে দুইজন পরিচালক পর্ষদে আসতে পারেন। এ শেয়ারের মাধ্যমে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে কোম্পানির ৪৩তম বার্ষিক সাধারণ সভায় ফিনিক্স সফটওয়্যারের পক্ষে নাফিজ সরাফাত পরিচালক হন।
২০২১-২০২২ সালে কোম্পানির ৪৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় ডাইনেস্টি হোমসের পক্ষে পরিচালক নির্বাচিত হন নাফিজ সরাফাতের অফিসের কর্মকর্তা আতিফ খালেদ। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নাফিজ সরাফাতের ব্যাংক ও বিও অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা হয়। কিন্তু আতিফ খালেদের অ্যাকাউন্টগুলো স্থগিত করা হয়নি। এক্ষেত্রে একজন শেয়ারহোল্ডার কোম্পানিকে লিখিত নোটিশ দেন। এ নোটিশ বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছেও পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, আইসিবির সহযোগিতায় নাফিজচক্রের কারসাজির কারণে ৮০০ টাকার শেয়ার ২৬০ টাকায় নেমে আসে। এতে ব্যাপক লোকসানে পড়েন সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা। তারা কয়েকজন মিলে কোম্পানির দামি বাগানগুলো ভাগ করে নেন।
এদিকে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী কোম্পানি সিডিবিএলের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, বর্তমানে এনটিসির মোট শেয়ারের মধ্যে শাকিল রিজভীর কাছে ২ দশমিক ৩০, আইসিবি ১১ দশমিক ৫৯, আইসিবি ইউনিট ফান্ডে ১৫ দশমিক ৬৬, ফিনলে টির পরিচালক শওকত আলী চৌধুরীর ছেলে মো. জারান আলী চৌধুরীর কাছে ৫ দশমিক ৪৮, ফিনলে টির আরেকজন পরিচালক রামগর চা বাগানের মালিক নাদের খানের কাছে ৯ দশমিক ৮৪, মো. সরওয়ার কামাল ২ দশমিক ১১, ইক্যুইটি রিসোর্স ৫ দশমিক ৭৮, সাধারণ বীমা করপোরেশন ১১ দশমিক ৪৯, ফিনিক্স সফটওয়্যার ২ দশমিক ১ এবং ডাইনেস্টি হোমসের কাছে ২ দশমিক ০৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। অন্যদিকে ফিনলে টির মালিক নাদের খানকে এনটিসির পরিচালনা পর্ষদে আনার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে একটি পক্ষ। এর সঙ্গে নাফিজ সরাফাত এবং সরকারের একজন সিনিয়র সচিব জড়িত রয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, এনটিসি ও ফিনলে একই ধরনের ব্যবসা করে। ফলে ওই কোম্পানির পরিচালক সরকারি ন্যাশনাল টিতে থাকলে তারা ব্যবসায়িক গোপন পলিসি জেনে যাবে। এতে কোম্পানির ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এদিকে সরকারের শেয়ার কমে যাওয়ায় ব্যাপক সমালোচনায় পড়ে ন্যাশনাল টি কোম্পানি। এরপর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পরামর্শে ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর কোম্পানির অতিরিক্ত সভায় কোম্পানির ২ কোটি ৩৪ লাখ প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে ১০ টাকার প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ১০৯ দশমিক ৫৩ পয়সা প্রিমিয়ামসহ ইস্যুমূল্য নির্ধারণ করা হয় ১১৯ দশমিক ৫৩ টাকা। অর্থাৎ ২৭৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হবে। এতে পরিশোধিত মূলধনে যোগ হবে ২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তবে এখানেও রয়েছে বিশাল বৈষম্য। কারণ, মোট শেয়ারের ৪০ দশমিক ৭৬ শতাংশ অর্থাৎ ৯৫ লাখ ৩৯ হাজার ৫৪টি শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য। বাকি ৫৯ দশমিক ২৪ শতাংশ বা ১ কোটি ৩৮ লাখ ৬০ হাজার ৯৪৬টি শেয়ার পরিচালকদের দেওয়া হয়। অর্থাৎ উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার গোপনে বিক্রি করে বেসরকারি লোকজনকে বোর্ডে আনা হয়। এরপর প্লেসমেন্টের মাধ্যমে নতুন শেয়ার ইস্যু করে উদ্যোক্তা শেয়ার বাড়ানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরো প্রক্রিয়াটি ভয়াবহ জালিয়াতি।
এসব বিষয় জানতে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেনের সঙ্গে মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা আইনকানুন মেনেই সবকিছু করেছি। নিয়ম অনুসারে আমাদের কাছে ১০ শতাংশ শেয়ার থাকার কথা। কিন্তু এর চেয়ে বেশি আছে। এছাড়া শেয়ার বিক্রির আগে মন্ত্রণালয় এবং সাধারণ বীমা করপোরেশনকে লিখিতভাবে জানানো হয়। কিন্তু তারা কিনতে রাজি হননি। স্টক এক্সচেঞ্জে কেন ঘোষণা দেওয়া হয়নি-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইসিবি ঘোষণা ছাড়াই শেয়ার বিক্রি করতে পারে। অন্যদিকে নাফিজ সরাফাত পলাতক থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে কোম্পানিটি ক্রমেই দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানিতে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক ঋণ ৩৩৫ কোটি টাকা। এর বড় অংশই কৃষি ব্যাংকে। ৫ বছরে এনটিসির লোকসান ২২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮০ কোটি, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৮ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১ কোটি, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৭ কোটি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৭ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে।
প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়েও নাফিজ সরাফাত তৈরি করেন অনৈতিক বাণিজ্য। প্লেসমেন্টের টাকা সংগ্রহের দায়িত্ব পায় নাফিজ সরাফাতের মালিকানাধীন পদ্মা ব্যাংক এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিবি। ১৫ সেপ্টেম্বর টাকা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল। এটি বাড়ানোর জন্য বিএসইসিতে আবেদন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা ব্যাংক রুগ্ণ। এ ব্যাংকে টাকা গেলে আর ফেরত আসার কথা নয়। সূত্র জানায়, কোম্পানির বাণিজ্য বিভাগে লুটপাট চলছে। সরকারি সিদ্ধান্ত রয়েছে প্রতি কেজি চা ১৬০ টাকার কমে বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু ওই নিয়ম ভঙ্গ করে প্রতি কেজি ১ ডলারে ভারতের এক ব্যবসায়ীর কাছে এক লাখ কেজি চা বিক্রি করে। এতে কোম্পানির ১ কোটি টাকা ক্ষতি। এর ফলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট হিসাব করলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি ১৫ লাখ টাকা।
এছাড়াও পর্যাপ্ত শ্রমিক এবং উৎপাদন সক্ষমতা থাকার পরও কোম্পানির ২টি ফ্যাক্টরি বন্ধ করে চায়ের কাঁচা পাতা বিক্রয় করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো নগদ আয় করে অর্থ আত্মসাৎ। এক্ষেত্রে প্রতি কেজি পাতা বিক্রি করা হয় ২৫ টাকা ৫০ পয়সা। এক্ষেত্রে ১০ হাজার কেজি চা বিক্রি করার কথা বলা হলেও বাস্তবে বিক্রি হয় ২৫ হাজার কেজি। কিন্তু এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা উচিত। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কোম্পানিকে বলা হয়, শেখ হাসিনার স্বামী শেখ ওয়াজেদের নাতি রংপুরের সালমান তালিব এটি কিনছেন। অন্যদিকে পদাধিকার বলে কোম্পানির পর্ষদের অন্যতম সদস্য থাকেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। ২০২২ সালে কোম্পানির এমডি ছিলেন জিয়াউল আহসান। চুক্তির মেয়াদ থাকার পরও একটি বোর্ড মিটিংয়ে স্বৈরাচারী কায়দায় শেখ কবির এবং নাফিজ সরাফাত তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেন।
জিয়াউল আহসান বলেন, আমি পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলাম। এর বেশি কিছু বলার নেই। কোম্পানির ভেতরেও চরম দুর্নীতি চলছে। কোম্পানির ভেতর থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মেশিনারিজ সম্পূর্ণ ভালো থাকা সত্যেও কুরমা এবং মদনমোহনপুর বাগানের ফ্যাক্টরি বন্ধ করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল মেশিনারি স্ক্র্যাপ হিসাবে বিক্রি করা। পাশাপাশি প্লেসমেন্ট শেয়ার থেকে পাওয়া কিছু টাকা দিয়ে পুনরায় মেশিনারি ক্রয়। এক্ষেত্রে বড় অংশের কমিশন বাণিজ্য রয়েছে। এছাড়াও জামানত ছাড়াই কাঁচা পাতা দালালদের কাছে বিক্রি করা।
সূত্র: যুগান্তর