অর্থনীতি
ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা সরিয়েছেন এস আলম
বেসরকারি খাতে পরিচালিত ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ঋণের নামে ১৮ হাজার কোটি টাকা এস আলম গ্রুপ একাই নিয়েছে; যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ৬৪ শতাংশ। এসব ঋণ নেওয়া হয়েছে কাল্পনিক লেনদেনের মাধ্যমে, যার জামানতও নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। আবার ব্যাংকটির মোট ঋণের ৪২ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়ছে বলে ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তারা জানিয়েছে, খেলাপি ঋণ ৪ শতাংশের কম।
নানা অনিয়মের কারণে আর্থিক বিপর্যয়ে পড়া এই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এক মাস আগে পুনর্গঠন করে এস আলমমুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক। এরপরও ব্যাংকটিতে এস আলমের প্রভাব কমেনি। ফলে পরিচালকেরা প্রকৃত চিত্র জানতে পারছেন না। ব্যাংকটি স্বয়ংক্রিয় তথ্যভান্ডার থেকে এস আলমসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের ঋণ ও লেনদেনের তথ্য সরিয়ে ফেলেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। ফলে প্রকৃত তথ্য বের করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা এস আলমের ঋণ ও আমানতের বিষয়ে তথ্য চেয়ে ঠিকমতো পাচ্ছেন না। ফলে ব্যাংকটির প্রকৃত চিত্র বের করতে পারছেন না। এস আলমের পক্ষে ব্যাংকটিতে ভূমিকা রাখছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোকাম্মেল হক চৌধুরী। ২০২০ সাল থেকে তিনি ব্যাংকটির এমডি। এর আগে তিনি এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম নিজেই।
ব্যাংক দখল, অর্থ লুটপাট ও অর্থ পাচারে সাইফুল আলমের সহযোগী হিসেবে পরিচিত মোকাম্মেল হক চৌধুরী বিদায়ী সরকারেরও ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এই তালিকায় আরও আছেন এস আলমের ছেলে আহসানুল আলম ও জামাতা বেলাল আহমেদ। তাঁরা দুজনই ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান-পরিচালক ছিলেন। পরে আহসানুল আলম ইসলামী ব্যাংক ও বেলাল আহমেদ সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হন। এসব ব্যাংকও এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী এ নিয়ে বলেন, এই ব্যাংক ডুবছিল, তা আগে থেকেই সবাই জেনেছিল। এখন পর্ষদ পরিবর্তন হলেই উন্নতি হবে, তা বলা যাবে না। পরবর্তী ধাপ হিসেবে কী করা যায়, তা এখনই ঠিক করতে হবে। ব্যাংক একীভূত করা, মূলধন জোগান দেওয়া বা অন্য কোনো ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ব্যাংকটি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁদের বিদেশযাত্রা আটকে দেওয়া যায়। তাহলে তাঁদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যাবে, জড়িত হলে বিচারের আওতায় নিতে সুবিধা হবে।
কার ব্যাংক, চালিয়েছে কে
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে ২০১২ সালে ৯টি ব্যাংক অনুমোদন হয়। এর সব কটিই রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংক একটি। ব্যাংকটির উদ্যোক্তাদের পেছনে শুরু থেকে এস আলম গ্রুপ থাকলেও সামনে রাখা হয় জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুকে। তখন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি এক জোট হয়ে সরকারে ছিল। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার শুরুতেই ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হন এস আলমের ভাই শহীদুল আলম। এতে ব্যাংকের পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে যায় এস আলম গ্রুপের কাছে। ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক লে. জেনারেল (অব.) মোল্লা ফজলে আকবর। বিভিন্ন সময় চেয়ারম্যান ও পরিচালক ছিলেন সাইফুল আলমের ভাই রাশেদুল আলম, ওসমান গনি, সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম ও জামাতা বেলাল আহমেদ। এ ছাড়া হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জিয়াউদ্দিন বাবলু ও তাঁর স্ত্রী মেহেজুবেন্নেসা রহমানও পর্ষদে ছিলেন। পর্ষদ বিলুপ্তির আগে এস আলম গ্রুপের পক্ষে ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন মো. সেলিম উদ্দিন, তিনি আগে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন।
গত ২৭ আগস্ট আগে পর্ষদ বিলুপ্ত করে নতুন পর্ষদে চেয়ারম্যান করা হয় এক্সিম ব্যাংকের সাবেক এমডি মু. ফরীদ উদ্দিন আহমদকে। তাঁর সঙ্গে থাকা অপর চার স্বতন্ত্র পরিচালক হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম জাহীদ ও হিসাববিদ শেখ জাহিদুল ইসলাম।
অনিয়মের যত ধরন
২০১৩ সালে যাত্রার পর বেসরকারি এই ব্যাংক সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানতের দিকে নজর দেয়। এরপর নামসর্বস্ব ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ঋণের নামে টাকা তুলে নেওয়া হয়। জনবল নিয়োগে এককভাবে চট্টগ্রামের পটিয়ার ব্যক্তিরা গুরুত্ব পান। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় ২০২০ সালে ব্যাংকটির এমডি হিসেবে মোকাম্মেল হক চৌধুরী যোগ দেওয়ার পর। তিনিও চট্টগ্রামের বাসিন্দা ও এস আলম পরিবারের আত্মীয়।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখার ভল্ট পরিদর্শনে গিয়ে ঘোষণার চেয়ে কম টাকা থাকার বিষয়টি দেখতে পান। কাগজপত্রে ওই শাখার ভল্টে যে পরিমাণ টাকা থাকার তথ্য রয়েছে, বাস্তবে তার চেয়ে প্রায় ১৯ কোটি টাকা কম পান। নিয়ম অনুযায়ী, ভল্টের টাকার গরমিল থাকলে তা আইনি ব্যবস্থা নিতে হয়। অথচ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি তখনকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরও কোনো ব্যবস্থা নেননি। তখন পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের সঙ্গেও ব্যাংকটির এমডি মোকাম্মেল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠতা ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২১ সালভিত্তিক ঋণের তথ্য পর্যালোচনা করে ইউনিয়ন ব্যাংককে চিঠি দিয়ে জানায়, ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ১৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা খেলাপি হওয়ার যোগ্য, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে যত ঋণ বিতরণ করেছে, তার সিংহভাগই খেলাপি বা অনিয়মযোগ্য। তখন পরিদর্শনে উঠে আসে শুধু ট্রেড লাইসেন্সের ভিত্তিতে কোম্পানি গঠন করে ঋণের বড় অংশই বের করে নিয়েছে প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠান। আবার অনেক ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সও ছিল না। কাগুজে এসব কোম্পানিকে দেওয়া ঋণের বেশির ভাগেরই খোঁজ মিলছে না এখন। ফলে এসব ঋণ আদায়ও হচ্ছে না। রাজধানীর পান্থপথ, গুলশান, বনানী, দিলকুশা, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, খাতুনগঞ্জসহ আরও কয়েকটি শাখার মাধ্যমে এই অর্থ বের করে নেওয়া হয়। এসব ঋণের যথাযথ নথিপত্রও ব্যাংকের কাছে নেই। অনেক ক্ষেত্রে ঋণ অনুমোদন ছাড়া বিতরণ করা হয়েছে।
এরপরও ইউনিয়ন ব্যাংককে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ৪২৮ কোটি টাকা উত্তোলন করার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তও হয়। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের এই ব্যাংকের শেয়ারের দাম এখন ৭ টাকা।
আর্থিক খাতের বহুল আলোচিত ব্যক্তি প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বের করতে অসংখ্য কাগুজে কোম্পানি গঠন করেছিলেন। তবে সেসব কোম্পানি যৌথ মূলধন ও কোম্পানিসমূহের পরিদপ্তরে (আরজেএসসি) নিবন্ধিত ছিল। কিন্তু ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে যেসব কোম্পানির নামে ঋণ বের করে নেওয়া হয়েছে, সেসব কোম্পানির অস্তিত্ব বলতে শুধু ট্রেড লাইসেন্স। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগেরই কোনো অস্তিত্ব নেই। এভাবে ব্যাংকটি থেকে নানা উপায়ে অর্থ বের করে নেওয়া হয়।
ব্যাংকটির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে অনেক প্রার্থীকে নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে। তারকা থেকে খেলোয়াড়—অনেকেই টাকা নেওয়ার তালিকায় ছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের নামে ঋণ তৈরি করে টাকা দেওয়া হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর এসব নথি সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঋণের ৬৫ শতাংশ নিয়েছে এস আলম গ্রুপ
গত ২৭ আগস্ট পর্ষদ পুনর্গঠনের পর এস আলম নামে ও বেনামে কত টাকা ঋণ নিয়েছে, তা জানতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি এস আলমের নামে ও বেনামে কোনো আমানত থাকলে তা উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ ছাড়া জব্দ করা হয় ব্যাংকটিতে থাকা এস আলমের নামে ও বেনামি সব শেয়ার।
ব্যাংকটির গত ৩১ আগস্টভিত্তিক অভ্যন্তরীণ এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তখন ঋণ ছিল ২৭ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ১১ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা বা ৪২ শতাংশ। এর মধ্যে ৯ হাজার ২৬২ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে ক্ষতিজনক মানে, যা আদায় করা বেশ কঠিন। যদিও ব্যাংকটি গত জুনে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়েছে, খেলাপি ঋণ মাত্র ১ হাজার ৪৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ শতাংশের কম।
২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল ব্যাংকটির এমডির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে জানায়, ‘ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের ঋণ প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। যার বেশির ভাগই কাল্পনিক লেনদেন ও এসব ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত নেই।’ ফলে ২৭ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৬৫ শতাংশই এস আলম গ্রুপের।
ব্যাংকটির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নতুন চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলেছেন, ‘গত ১৭ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইউনিয়ন ব্যাংকে এস আলমের নামে ও বেনামে ঋণের তথ্য ও নথিপত্র চায়। এটা জানতে আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ই-মেইল করি, যার অনুলিপি দেওয়া হয় এমডির কাছেও। এর পরদিন এমডি টেলিফোনে আমাকে বলেন, এরপর যেন এস আলমের ঋণের ব্যাপারে কোনো তথ্য কারও কাছে না চাওয়া হয়, নইলে তাকে সরিয়ে দেওয়া হবে। এরপর তাকে ননপারফরমার আখ্যা দিয়ে দুই দিনের মধ্যে ২৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়।’
এভাবে যারা এস আলম–সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে, তাদেরই কোণঠাসা করে ফেলছেন এমডি। মোকাম্মেল হক চৌধুরীর বক্তব্য জানতে গত এক মাসে তিন দিন ব্যাংকটিতে গেলেও তিনি দেখা দেননি। তাঁকে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও সাড়া দেননি।
ব্যাংকটি এখন তারল্য সংকটে ভুগছে। অনেক শাখার নগদ লেনদেন বন্ধ রয়েছে। নতুন পর্ষদও কোনো উদ্যোগ নিতে পারছে না। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মু. ফরীদ উদ্দিন আহমদ এ নিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক তারল্য সহায়তা না দিলে ব্যাংক চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংক সবকিছু দেখছে। তারাই বের করবে কে কত টাকা নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।’
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ইলিশের দাম ৭০০ টাকা চেয়ে আইনি নোটিশ
বাংলাদেশের জনগণের জন্য প্রতি কেজি ইলিশ মাছের খুচরা বিক্রয় মূল্য সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা নির্ধারণ চেয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার। রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ডাকযোগে ও ই-মেইলে সরকারের বিভিন্ন দফতরে এ নোটিশ পাঠান তিনি।
জানা যায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান এবং আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের প্রধান নিয়ন্ত্রক বরাবর নোটিশটি পাঠানো হয়।
নোটিশে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতি কেজি ইলিশ মাছের খুচরা বিক্রয় মূল্য সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা নির্ধারণে অনুরোধ করা হয়। পাশাপাশি ইলিশ মাছের পাইকারি ও খুচরা বাজার মনিটরিং করা, ইলিশ মাছ সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোর বাস্তবতা মেনে ভারত ও বাংলাদেশ মিলিয়ে একটি অভিন্ন সময়ে বা কাছাকাছি সময়ে ইলিশ মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার বিষয়ে লিখিতভাবে ভারতকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিতে বলা হয়।
নোটিশে বলা হয়, ভবিষ্যতে যেকোন দেশে ইলিশ মাছ রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে যেন ইলিশ মাছ রপ্তানি করা না হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। অন্যথায় উচ্চ আদালতে রিট করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বিদেশি ঋণ সংগ্রহে ড. ইউনূসের মুন্সিয়ানা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের অর্থনীতি সংস্কার কার্যক্রমে বড় পরিবর্তন এনেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার ৫০ দিনের মধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী থেকে এখন পর্যন্ত হাজার কোটি ডলারের বেশি ঋণের আশ্বাস পেয়েছেন। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার প্রথম সফরেই মিলেছে প্রায় পৌনে সাত বিলিয়ন ডলার পাওয়ার আশ্বাস। এতে দেশের রিজার্ভ বৃদ্ধির পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভবনা রয়েছে।
জানা যায়, বাংলাদেশ সংস্কারে ৩৫০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর মধ্যে নতুন ঋণ ২০০ কোটি ডলার আর বাকি ১৫০ কোটি ডলার আসবে চলমান প্রকল্প এগিয়ে নিতে। এছাড়া চলমান ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির বাইরে বাংলাদেশকে আরও ৩০০ কোটি ডলার দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে দিচ্ছে ২০ কোটি ডলারের বেশি উন্নয়ন সহায়তা।
পাশাপাশি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশকে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি খাতে সংস্কারে সংস্থাটি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ নাগাদ মিলতে পারে আরও ৫০ কোটি ডলার। আগামী তিন বছরে বাংলাদেশকে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেবে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উন্নয়নে জার্মানি আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশকে দেবে ১০০ কোটি ইউরো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের বাজেট সহায়তা ও পলিসি বেইজড ঋণ দেশের রিজার্ভ বাড়াতে ভূমিকা রাখে। নির্দিষ্ট কোনো প্রকল্পে ব্যবহারেরও বাধ্যবাধকতা থাকে না। এছাড়া সরকারের বৈদেশিক সূত্র থেকে ঋণ নেয়া দেশের বেসরকারি খাতের জন্য ভালো বলেই মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তবে, পরিশোধের চাপ সামলাতে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়াতে ঋণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতের তাগিদ তাদের।
এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, বৈদেশিক ঋণ নেয়াটা আমাদের দেশের বেসরকারি খাতের জন্য ভালো। তাহলে দেশীয় ব্যাংক খাতের ওপর চাপটা পড়ে না। তবে খেয়াল রাখতে হবে ঋণ পরিশোধ করতে গেলে রফতানির যে গ্রোথ দরকার, সেটার জন্য আমরা ইনভেস্টমেন্ট করতে পারছি কিনা বিষয়টিও দেখতে হবে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
চার দফা বৃদ্ধির পর কমলো স্বর্ণের দাম
রেকর্ড দাম হওয়ার পর দেশের বাজারে সোনার দাম কিছুটা কমানো হয়েছে। সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম ১ হাজার ২৫৯ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে এ দাম কমানো হয়েছে। রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) থেকে নতুন দাম কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
এর আগে গত ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর দু’দফা দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানো হয়। ২৬ ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম ৩ হাজার ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়। এতে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৮ টাকা। দেশের বাজারে এটিই সোনার সর্বোচ্চ দাম।
এ রেকর্ড দাম হওয়ার তিনদিনের মাথায় এখন সোনার দাম কিছুটা কমানো হলো। শনিবার বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠকে করে দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরবর্তীতে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নতুন মূল্য অনুযায়ী, সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ২৫৯ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ২০১ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৩১ হাজার ১৯৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৩৮ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ৮৭৪ টাকা কমিয়ে ৯২ হাজার ২৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে ২৬ সেপ্টেম্বর সব থেকে সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৩ হাজার ৪৪ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৮ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৮৯৩ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৪৯৬ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৯১ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ১২২ টাকা বাড়িয়ে ৯৩ হাজার ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আজ বুধবার পর্যন্ত এ দামেই সোনা বিক্রি হয়েছে।
সোনার দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ২৮৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
১৪ মাস পর চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল ভারত
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার শুক্রবার বাসমতি ব্যতিত সব ধরনের চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ভারত সরকার এর আগে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে দেশের অভ্যন্তরে চালের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। তবে এবার চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা। তারা এই পদক্ষেপকে ‘গেম চেঞ্জার’বলে উল্লেখ করেছেন।
চাল রপ্তানিকারক কোম্পানি রাইস ভিলার শীর্ষ নির্বাহী সুরজ আগারওয়াল বলেছেন, বাসমতি ব্যতিত সব ধরনের চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ভারতের এমন সিদ্ধান্ত কৃষিক্ষেত্রে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে কাজ করবে।
তিনি বলেন, এতে শুধু রপ্তানিকারকরাই নয় বরং কৃষকরাও লাভবান হবেন। এই পদক্ষেপের কারণে কৃষকরা ধান চাষে এবার লাভবান হওয়ার আশা করতে পারবেন। চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি রপ্তানির ওপর শুল্কের হারও কমানো হয়েছে। সিদ্ধ চালের ওপর রপ্তানি শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছে ভারত।
আরেক চাল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হালদার গ্রুপের কেশব কেআর হালদার অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি ভারত সরকারের এমন পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন।
বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত। বিশ্বের মোট চাহিদার ৪০ ভাগই আসে দেশটি থেকে। চাল রপ্তানির শীর্ষে থাকা অন্য দেশগুলো হলো থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর ভারত চাল রপ্তানি স্থগিতের পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের চালের দাম বাড়তে শুরু করে যা ছিল গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
চ্যালেঞ্জে সরকারের ডিম-মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ
ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও বাজারে পণ্য দুটি উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে, যা সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
ফেনীসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ১২টি জেলার বন্যায় খামার ও পশুখাদ্য নষ্ট হওয়ায় উৎপাদন কমে সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এবং ফিড ও মুরগির বাচ্চার চড়া মূল্যের কারণেই পণ্য দুটির দামে অস্থিরতা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর গত ১৫ আগস্ট প্রতিটি ডিমের দাম ১১.৮৭ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ১৮০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও খুচরা বিক্রেতা ও সুপারশপগুলোতে প্রতিটি ডিম সর্বোচ্চ ১৪.১৬ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগি ১৮০-১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ পরিস্থিতি নিয়ে ডিম ও মুরগির উৎপাদনকারীদের দুই অংশের দুই ধরনের যুক্তি দিচ্ছে।
প্রান্তিক খামারিরা বলছেন, এই দাম বেঁধে দেওয়ায় খামারিদের লোকসান হচ্ছে, কারণ ফিড ও মুরগির বাচ্চার চড়া মূল্যের কারণে প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আরও বেড়ে গেছে।
অন্যদিকে কর্পোরেট শ্রেণির উৎপাদনকারীরা বলছেন, বন্যায় অনেক খামারের মুরগি মরে যাওয়ার কারণে ডিম ও মুরগির সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ কারণে দাম কমছে না। তবে ‘ফিডের দাম ঠিক আছে’ বলে উল্লেখ করেন তারা।
অবশ্য বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনসহ সরকারি কয়েকটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, ফিডের দাম নিয়ে আরও পর্যালোচনা করার জায়গা রয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, পশুসম্পদ খাতে বন্যায় ৪৩৫.৩২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, যেখানে খামারের অবকাঠামো, মুরগি ও মুরগির খাবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন খামারের ২৫.৩৮ লাখের বেশি মুরগি মারা গেছে। তবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগে বন্যায় আক্রান্ত হওয়া মুরগির সংখ্যা ৪৬.৫১ লাখের বেশি।
উৎপাদনকারীরা বলছেন, এই লাখ লাখ মুরগি মারা যাওয়া এবং উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ডিম ও মাংসের সরবরাহ চেইনে স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা সরবরাহ কমেছে। তবে দেশে উৎপাদন এখনও চাহিদার চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ‘বন্যার কারণে যদি ২০-২৫ লাখ ডিমের উৎপাদন কমও হয়, তাতেও সমস্যা নেই। কারণ, প্রতিদিন ৪ কোটি পিস চাহিদার বিপরীতে দেশে এর আগে সাড়ে ৪ কোটি পিস ডিমের উৎপাদন ছিল।’
কর্পোরেট উৎপাদনকারীদের সমালোচনা করে সুমন বলেন, তারা প্রান্তিক খামারিদের কাছে এক বস্তা (৫০ কেজি) ফিড বিক্রি করে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকায়; কিন্তু নিজেদের চুক্তিবব্দধ খামারির কাছে বিক্রি করে ২ হাজার ৭০০ টাকায়। একইভাবে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে মুরগির বাচ্চা। এ কারণে সরকার দাম বেঁধে দিয়ে কর্পোরেট উৎপাদনকারীদের বাড়তি লাভ করার সুযোগ করে দিয়েছে।
এদিকে কাজী ফার্মসের পরিচালক কাজী জাহিন হাসান বলেন, ‘মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারিত হয় চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে। বন্যার কারণে সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারদর বেড়েছে। ২০২৩ সালে বন্যার পরেও ডিমের দাম বেড়েছিল। তাই এ বছরও বন্যার পরে একই প্রভাব দেখা স্বাভাবিক।’
তিনি আরও বলেন, কাজী ফার্মস এখনও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বেঁধে দেওয়া পাইকারি দরে ডিম বিক্রি করছে এবং সরকার-ঘোষিত মূল্যের চেয়ে কম দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করছে।
কর্পোরেট খামারিদের সংবাদ মাধ্যমে প্রাকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সরকারিভাবে ৪০০ কোটি টাকা ক্ষতির কথা বলা হলেও এটা আসলে ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের প্রায় ৮০ শতাংশ খামারি আক্রান্ত হয়েছেম এ বন্যায়। আর আক্রান্ত খামারের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার।
এদিকে গত ১ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে পোল্ট্রি খাতের সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি সভা হয়। ওই সভার কার্যবিবরনী থেকে জানা গেছে, সভাটি করা হয়েছিল বন্যার কারণে ডিম, মুরগি ও ফিডের বাজার, উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে যেসব চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে, সে বিষয়ে সবার মতামত নেওয়ার জন্য।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, ডিম উৎপাদনে ঘাটতি নেই, তবে বাজার অস্থিতিশীল রয়েছে। তিনি অবশ্য এ সময় প্রতিদিন ৬.৩০ কোটি পিস ডিমের উৎপাদনের সম্ভাব্য বাস্তবতাবিবর্জিত তথ্যও উপস্থাপন করেন।
তবে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, খামারি থেকে ভোক্তা পর্যায়েই ডিমের দামে ৩-৪ টাকার পর্থ্যক্য হয়। এই ইস্যুতে সবাই মিলে কাজ করলে ডিমের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব হবে।
ঢাকার বিভিন্ন আড়তের ডিমের পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলেন, বৃহৎ কর্পোরেট গ্রুপগুলো ডিলারদের চাহিদার চেয়ে কম পরিমাণে ডিম সরবরাহ করে। এ কারণে বাজারে ডিমের দাম বাড়ে।
একইসঙ্গে পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফিড ও মুরগির বাচ্চার বাড়তি দামের বিষয়ে অভিযোগ তুললে কাজী ফার্মস লিমিটেডের পরিচালক জাহিন হাসান বলেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে ফিডের দাম বেড়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ডিমের মূল্য কমানো এবং স্থিতিশীল রাখতে ফিডের মূল্য বিবেচনায় আনার অনার অনুরোধ জানান।