অর্থনীতি
ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা সরিয়েছেন এস আলম

বেসরকারি খাতে পরিচালিত ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ঋণের নামে ১৮ হাজার কোটি টাকা এস আলম গ্রুপ একাই নিয়েছে; যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ৬৪ শতাংশ। এসব ঋণ নেওয়া হয়েছে কাল্পনিক লেনদেনের মাধ্যমে, যার জামানতও নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। আবার ব্যাংকটির মোট ঋণের ৪২ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়ছে বলে ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তারা জানিয়েছে, খেলাপি ঋণ ৪ শতাংশের কম।
নানা অনিয়মের কারণে আর্থিক বিপর্যয়ে পড়া এই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এক মাস আগে পুনর্গঠন করে এস আলমমুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক। এরপরও ব্যাংকটিতে এস আলমের প্রভাব কমেনি। ফলে পরিচালকেরা প্রকৃত চিত্র জানতে পারছেন না। ব্যাংকটি স্বয়ংক্রিয় তথ্যভান্ডার থেকে এস আলমসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের ঋণ ও লেনদেনের তথ্য সরিয়ে ফেলেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। ফলে প্রকৃত তথ্য বের করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা এস আলমের ঋণ ও আমানতের বিষয়ে তথ্য চেয়ে ঠিকমতো পাচ্ছেন না। ফলে ব্যাংকটির প্রকৃত চিত্র বের করতে পারছেন না। এস আলমের পক্ষে ব্যাংকটিতে ভূমিকা রাখছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোকাম্মেল হক চৌধুরী। ২০২০ সাল থেকে তিনি ব্যাংকটির এমডি। এর আগে তিনি এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম নিজেই।
ব্যাংক দখল, অর্থ লুটপাট ও অর্থ পাচারে সাইফুল আলমের সহযোগী হিসেবে পরিচিত মোকাম্মেল হক চৌধুরী বিদায়ী সরকারেরও ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এই তালিকায় আরও আছেন এস আলমের ছেলে আহসানুল আলম ও জামাতা বেলাল আহমেদ। তাঁরা দুজনই ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান-পরিচালক ছিলেন। পরে আহসানুল আলম ইসলামী ব্যাংক ও বেলাল আহমেদ সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হন। এসব ব্যাংকও এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী এ নিয়ে বলেন, এই ব্যাংক ডুবছিল, তা আগে থেকেই সবাই জেনেছিল। এখন পর্ষদ পরিবর্তন হলেই উন্নতি হবে, তা বলা যাবে না। পরবর্তী ধাপ হিসেবে কী করা যায়, তা এখনই ঠিক করতে হবে। ব্যাংক একীভূত করা, মূলধন জোগান দেওয়া বা অন্য কোনো ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ব্যাংকটি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁদের বিদেশযাত্রা আটকে দেওয়া যায়। তাহলে তাঁদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যাবে, জড়িত হলে বিচারের আওতায় নিতে সুবিধা হবে।
কার ব্যাংক, চালিয়েছে কে
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে ২০১২ সালে ৯টি ব্যাংক অনুমোদন হয়। এর সব কটিই রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংক একটি। ব্যাংকটির উদ্যোক্তাদের পেছনে শুরু থেকে এস আলম গ্রুপ থাকলেও সামনে রাখা হয় জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুকে। তখন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি এক জোট হয়ে সরকারে ছিল। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার শুরুতেই ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হন এস আলমের ভাই শহীদুল আলম। এতে ব্যাংকের পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে যায় এস আলম গ্রুপের কাছে। ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক লে. জেনারেল (অব.) মোল্লা ফজলে আকবর। বিভিন্ন সময় চেয়ারম্যান ও পরিচালক ছিলেন সাইফুল আলমের ভাই রাশেদুল আলম, ওসমান গনি, সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম ও জামাতা বেলাল আহমেদ। এ ছাড়া হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জিয়াউদ্দিন বাবলু ও তাঁর স্ত্রী মেহেজুবেন্নেসা রহমানও পর্ষদে ছিলেন। পর্ষদ বিলুপ্তির আগে এস আলম গ্রুপের পক্ষে ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন মো. সেলিম উদ্দিন, তিনি আগে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন।
গত ২৭ আগস্ট আগে পর্ষদ বিলুপ্ত করে নতুন পর্ষদে চেয়ারম্যান করা হয় এক্সিম ব্যাংকের সাবেক এমডি মু. ফরীদ উদ্দিন আহমদকে। তাঁর সঙ্গে থাকা অপর চার স্বতন্ত্র পরিচালক হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম জাহীদ ও হিসাববিদ শেখ জাহিদুল ইসলাম।
অনিয়মের যত ধরন
২০১৩ সালে যাত্রার পর বেসরকারি এই ব্যাংক সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানতের দিকে নজর দেয়। এরপর নামসর্বস্ব ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ঋণের নামে টাকা তুলে নেওয়া হয়। জনবল নিয়োগে এককভাবে চট্টগ্রামের পটিয়ার ব্যক্তিরা গুরুত্ব পান। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় ২০২০ সালে ব্যাংকটির এমডি হিসেবে মোকাম্মেল হক চৌধুরী যোগ দেওয়ার পর। তিনিও চট্টগ্রামের বাসিন্দা ও এস আলম পরিবারের আত্মীয়।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখার ভল্ট পরিদর্শনে গিয়ে ঘোষণার চেয়ে কম টাকা থাকার বিষয়টি দেখতে পান। কাগজপত্রে ওই শাখার ভল্টে যে পরিমাণ টাকা থাকার তথ্য রয়েছে, বাস্তবে তার চেয়ে প্রায় ১৯ কোটি টাকা কম পান। নিয়ম অনুযায়ী, ভল্টের টাকার গরমিল থাকলে তা আইনি ব্যবস্থা নিতে হয়। অথচ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি তখনকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরও কোনো ব্যবস্থা নেননি। তখন পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের সঙ্গেও ব্যাংকটির এমডি মোকাম্মেল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠতা ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২১ সালভিত্তিক ঋণের তথ্য পর্যালোচনা করে ইউনিয়ন ব্যাংককে চিঠি দিয়ে জানায়, ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ১৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা খেলাপি হওয়ার যোগ্য, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে যত ঋণ বিতরণ করেছে, তার সিংহভাগই খেলাপি বা অনিয়মযোগ্য। তখন পরিদর্শনে উঠে আসে শুধু ট্রেড লাইসেন্সের ভিত্তিতে কোম্পানি গঠন করে ঋণের বড় অংশই বের করে নিয়েছে প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠান। আবার অনেক ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সও ছিল না। কাগুজে এসব কোম্পানিকে দেওয়া ঋণের বেশির ভাগেরই খোঁজ মিলছে না এখন। ফলে এসব ঋণ আদায়ও হচ্ছে না। রাজধানীর পান্থপথ, গুলশান, বনানী, দিলকুশা, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, খাতুনগঞ্জসহ আরও কয়েকটি শাখার মাধ্যমে এই অর্থ বের করে নেওয়া হয়। এসব ঋণের যথাযথ নথিপত্রও ব্যাংকের কাছে নেই। অনেক ক্ষেত্রে ঋণ অনুমোদন ছাড়া বিতরণ করা হয়েছে।
এরপরও ইউনিয়ন ব্যাংককে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ৪২৮ কোটি টাকা উত্তোলন করার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তও হয়। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের এই ব্যাংকের শেয়ারের দাম এখন ৭ টাকা।
আর্থিক খাতের বহুল আলোচিত ব্যক্তি প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বের করতে অসংখ্য কাগুজে কোম্পানি গঠন করেছিলেন। তবে সেসব কোম্পানি যৌথ মূলধন ও কোম্পানিসমূহের পরিদপ্তরে (আরজেএসসি) নিবন্ধিত ছিল। কিন্তু ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে যেসব কোম্পানির নামে ঋণ বের করে নেওয়া হয়েছে, সেসব কোম্পানির অস্তিত্ব বলতে শুধু ট্রেড লাইসেন্স। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগেরই কোনো অস্তিত্ব নেই। এভাবে ব্যাংকটি থেকে নানা উপায়ে অর্থ বের করে নেওয়া হয়।
ব্যাংকটির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে অনেক প্রার্থীকে নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে। তারকা থেকে খেলোয়াড়—অনেকেই টাকা নেওয়ার তালিকায় ছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের নামে ঋণ তৈরি করে টাকা দেওয়া হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর এসব নথি সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঋণের ৬৫ শতাংশ নিয়েছে এস আলম গ্রুপ
গত ২৭ আগস্ট পর্ষদ পুনর্গঠনের পর এস আলম নামে ও বেনামে কত টাকা ঋণ নিয়েছে, তা জানতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি এস আলমের নামে ও বেনামে কোনো আমানত থাকলে তা উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ ছাড়া জব্দ করা হয় ব্যাংকটিতে থাকা এস আলমের নামে ও বেনামি সব শেয়ার।
ব্যাংকটির গত ৩১ আগস্টভিত্তিক অভ্যন্তরীণ এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তখন ঋণ ছিল ২৭ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ১১ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা বা ৪২ শতাংশ। এর মধ্যে ৯ হাজার ২৬২ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে ক্ষতিজনক মানে, যা আদায় করা বেশ কঠিন। যদিও ব্যাংকটি গত জুনে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়েছে, খেলাপি ঋণ মাত্র ১ হাজার ৪৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ শতাংশের কম।
২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল ব্যাংকটির এমডির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে জানায়, ‘ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের ঋণ প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। যার বেশির ভাগই কাল্পনিক লেনদেন ও এসব ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত নেই।’ ফলে ২৭ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৬৫ শতাংশই এস আলম গ্রুপের।
ব্যাংকটির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নতুন চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলেছেন, ‘গত ১৭ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইউনিয়ন ব্যাংকে এস আলমের নামে ও বেনামে ঋণের তথ্য ও নথিপত্র চায়। এটা জানতে আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ই-মেইল করি, যার অনুলিপি দেওয়া হয় এমডির কাছেও। এর পরদিন এমডি টেলিফোনে আমাকে বলেন, এরপর যেন এস আলমের ঋণের ব্যাপারে কোনো তথ্য কারও কাছে না চাওয়া হয়, নইলে তাকে সরিয়ে দেওয়া হবে। এরপর তাকে ননপারফরমার আখ্যা দিয়ে দুই দিনের মধ্যে ২৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়।’
এভাবে যারা এস আলম–সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে, তাদেরই কোণঠাসা করে ফেলছেন এমডি। মোকাম্মেল হক চৌধুরীর বক্তব্য জানতে গত এক মাসে তিন দিন ব্যাংকটিতে গেলেও তিনি দেখা দেননি। তাঁকে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও সাড়া দেননি।
ব্যাংকটি এখন তারল্য সংকটে ভুগছে। অনেক শাখার নগদ লেনদেন বন্ধ রয়েছে। নতুন পর্ষদও কোনো উদ্যোগ নিতে পারছে না। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মু. ফরীদ উদ্দিন আহমদ এ নিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক তারল্য সহায়তা না দিলে ব্যাংক চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংক সবকিছু দেখছে। তারাই বের করবে কে কত টাকা নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।’
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
সয়াবিন তেলের সংকট, বেড়েছে সবজির দাম

ঈদের আগের তুলনায় অর্থাৎ প্রায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দামই কমবেশি বেড়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকার আশপাশে, যা আগের তুলনায় প্রায় ২০ টাকা বেশি।
এছাড়া বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। আগের চেয়ে নির্ধারিত দাম না বাড়লেও অনেক দোকানে সয়াবিন তেল নেই। যে কারণে অনেকে বোতলের গায়ের দামের চেয়ে কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সবজি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে বর্তমানে চাহিদার তুলনায় সবজির সরবরাহ কম। শীতের অধিকাংশ সবজি শেষ হয়ে গেছে আর গ্রীষ্মের অনেক সবজি এখনো বাজারে কম। এ কারণে দাম বেড়েছে।
রাজধানীর রামপুরা বাজারে সকালে ঢুকতেই সবজির বাড়তি দামের আঁচ পাওয়া গেল। দাম নিয়ে এক সবজি বিক্রেতার সঙ্গে তর্কে জড়ান স্থানীয় বাসিন্দা বিধান চন্দ্র। তিনি সেখান থেকে ১০০ টাকা দরে আধা কেজি বরবটি ও করলা কিনেছেন। তিনি বলেন, ঈদের আগেই সব সবজি ৬০ টাকার আশপাশে ছিল। ঈদের পরে সব বেড়ে যাচ্ছে।
ওই বাজারের পাশাপাশি মালিবাগ ও শান্তিনগর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারভেদে করলা, ঝিঙা, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা ৮০–১০০ টাকায়, পটোল, ঢ্যাঁড়স ৬০–৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজির মধ্যে দাম কম রয়েছে পেঁপের, তাও ৪০-৫০ টাকা। অবশ্য কারওয়ান বাজারের মতো বড় বাজারে সবজির এ দাম আরও কিছুটা কম।
এছাড়া খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫ টাকা বেড়ে ৩৫-৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া আলু, আদা, রসুন ও আলুর দাম আগের মতোই রয়েছে।
এদিকে, বাজারে আবারও সয়াবিন তেলের কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক দোকানেই তেল পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু দোকানে পাওয়া গেলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে। অর্থাৎ কোনো দোকানে ৫ লিটারের বোতলজাত তেল থাকলেও এক-দুই লিটারের বোতল পাওয়া যাচ্ছে না। আবার কোনো কোনো দোকানে প্রতি লিটারে নির্ধারিত দাম ১৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মালিবাগ বাজারের বিক্রেতা এনামুল বলেন, কোম্পানি তেল দেয় না। ঈদের পর থেকে অর্ডার নিচ্ছে না। যে কারণে ৫ টাকা বেশি দিয়ে বাইরে থেকে কিনে আনি।
আরেক বিক্রেতা বলেন, আজ ঈদের পর প্রথম একটা কোম্পানি তেল দিয়ে গেছে। দুই লিটারের মাত্র তিন কার্টন তেল। আর বলেছে, দাম বাড়ানোর আগে মাল দেবে না। নতুন রেট এলে নতুন তেল পাবেন।
প্রসঙ্গত, সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে একলাফে ১৮ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানার মালিকরা। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দুই দফা বৈঠকের পরও দাম বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এর আগে ঈদের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবস ২৭ মার্চ ট্যারিফ কমিশনে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে ১ এপ্রিল থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৯৩ টাকা হবে বলে জানায় পরিশোধন কারখানার মালিকদের ওই সংগঠন। সেই হিসাবে লিটারে দাম বাড়ছে ১৮ টাকা। তবে দাম বাড়ানোর জন্য সরকারের অনুমতি এখনো মেলেনি। যে কারণে দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
রিটার্ন না দিলে ব্যাংক হিসাব তলব করবে এনবিআর

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, ট্যাক্স বাড়াতে না পারলে দেশের উন্নয়নে অংশীদার হওয়া যাবে না। তাই যারা রিটার্ন দিচ্ছে না, তাদের নোটিশ দেয়া হচ্ছে এবং পরবর্তী সময়ে তাদের ব্যাংক হিসেব তলব করা হবে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) চট্টগ্রামের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটকে ব্যবসা ও শিল্পবান্ধব করতে আয়কর বিষয়ক ১৯টি, ভ্যাট বিষয়ক ৪০ ও শুল্ক বিষয়ক ৫৫টি প্রস্তাবনা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা।
গেল অর্থবছরে জমা হওয়া ৪৫ লাখ রিটার্নের মধ্যে ৩০ লাখ শূন্য রিটার্নধারী মন্তব্য করে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, মাত্র ১৫ লাখ করদাতা থেকে রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। বাংলাদেশের ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও খুবই কম। এত কম সংখ্যক লোকের থেকে রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই কর হার বাড়ানোর বিকল্প নেই।
যৌক্তিকভাবে বাড়ানো হবে করহার এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের যেন এনবিআর অফিসে ঘুরতে না হয়, সেজন্য সবকিছু অটোমেশন করা হচ্ছে। এখন সিঙ্গেল উইন্ডোর মাধ্যমে এক লাখ ৬০ হাজার সার্টিফিকেট অনলাইনে দেওয়া হয়েছে। ভ্যাট ও বন্ড সুবিধা নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমরা বন্ড সুবিধা অটোমেশনের আওতায় আনতে কাজ করছি। এছাড়া আয়করের মত ভ্যাটও যেন ঘরে বসে দেওয়া যায়, সে ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
বাজেটকে জনবান্ধব করতে ব্যবসায়ীসহ সবার মতামত নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে মো. আবদুর রহমান খান বলেন, আগামী বাজেটে ঘাটতি থাকবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি যেন না হয়, সেই দিকেও লক্ষ্য রাখা হবে। মার্কিন শুল্ক আরোপের ফলে দেশের পোশাকখাত যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে।
কর ফাঁকির বিষয়টি প্রধান প্রায়োরিটি মন্তব্য করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা যে দাবি তুলেছেন তা যৌক্তিক। বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করা হবে। বাজেট প্রণয়নে এ সুপারিশ দেওয়া হবে। তবে আমরা এখন রাজস্ব আহরণের বিষয়ে জোর দিচ্ছি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান, উইমেন চেম্বারের সভাপতি আবিদা মোস্তফা, চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি সরওয়ার জামাল নিজাম, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এরশাদ উল্লাহ, সাবেক সহ-সভাপতি বেলাল আহমেদ ও বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরীসহ অনেকে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী কানাডার কোয়েস্ট ওয়াটার গ্লোবাল

কানাডাভিত্তিক কোয়েস্ট ওয়াটার গ্লোবাল ইনক বাংলাদেশের পরিষ্কার পানিসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, চুক্তির অংশ হিসেবে কোয়েস্ট ওয়াটার গ্লোবাল ইনক বাংলাদেশে অ্যাকুয়াট্যাপ (আ্যাকুয়াটেপ) নামে একটি বিকেন্দ্রীভূত পানি সরবরাহ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সমীক্ষা পরিচালনা করবে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও বিনিয়োগ কার্যক্রম সম্প্রসারণে কাজ করবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দেড় বছর পর সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি

দেশের ১৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ১৮ হাজার ২৫০ টন সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রায় দেড় বছর পর রপ্তানির এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ৯ শর্ত মেনে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব চাল রপ্তানি করতে হবে।
গত ৮ এপ্রিল আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রক দপ্তরের কার্যালয়ের প্রধান নিয়ন্ত্রককে এ–সংক্রান্ত চিঠি দিয়ে রপ্তানির অনুমতির বিষয়টি জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি শাখা-২–এর জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব এস এইচ এম মাগফুরুল হাসান আব্বাসী বলেন, যাচাই-বাছাই শেষে ৯ শর্তে ১৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ১৮ হাজার ২৫০ টন সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে এসব সুগন্ধি চাল রপ্তানি করা হবে বলে জানান সচিব মাগফুরুল হাসান আব্বাসী। তিনি বলেন, প্রতি কেজি চাল সর্বনিম্ন ১ দশমিক ৬০ মার্কিন ডলার হিসেবে ১৯৫ টাকা রপ্তানি দর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এসব রপ্তানি এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টন পর্যন্ত চাল রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শর্ত অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো সাব-কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে চাল রপ্তানি করতে পারবে না।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বাংলাদেশে ব্যবসার সম্ভাবনা খুঁজে দেখছে পাকিস্তানের শিল্পগোষ্ঠী

পাকিস্তানের এনগ্রো হোল্ডিংসের সিইও আব্দুল সামাদ দাউদ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় তাদের আলোচনার মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বিকেলে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাতে এনগ্রোর সিইও বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ ও জ্বালানি খাতের বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং কোম্পানির কার্যক্রম প্রসারের ইচ্ছা জানান।
এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা।
সামাদ দাউদ বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের সম্ভাবনা নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী। পাশাপাশি ভোলার গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে শিল্পখাতের বিকাশে অংশগ্রহণের সুযোগও আমরা দেখছি।’
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এই আগ্রহকে স্বাগত জানিয়ে টেকসই এবং ভবিষ্যতমুখী অংশীদারিত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে মনোযোগ দিতে চাই, যা আমাদের মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।’
বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দিতে আসা দাউদ চারদিনব্যাপী এই সম্মেলনের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বিডা সামিটে এক মানবিক ছোঁয়া ছিল— এটি আন্তরিক, স্বাগতপূর্ণ এবং লক্ষ্যনির্ভর মনে হয়েছে। এক ছাদের নিচে এত শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিকে দেখে আমি অভিভূত।
অধ্যাপক ইউনূস এনগ্রোর নেতৃত্বকে বাংলাদেশে আবার আসার আমন্ত্রণ এবং বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার সুযোগ দেখার আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি আপনাকে আবার আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। বাংলাদেশ অনেক কিছু দিতে পারে— শুধু বিনিয়োগকারীদেরই নয়, পুরো বিশ্বকে।
সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজউদ্দিন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।