অর্থনীতি
ইউনূস ম্যাজিকে আসছে সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার
আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি আর লুটপাটে দেশের আর্থিক খাত যখন ভয়াবহ চ্যালেঞ্জে, ঠিক সে মুহূর্তে ত্রাণকর্তা হিসেবে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিশেষ করে, অর্থ পাচার আর ডলার সংকটে যখন দেশের রিজার্ভ তলানিতে, সেই সময় আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর সহায়তায় রিজার্ভের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করছেন তিনি। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইএসডিবি) ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাসহ (ইউএসএআইডি) বেশ কয়েকটি সংস্থা ও দেশ বাংলাদেশকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। এসব অর্থ পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ডলার সংকট ও রিজার্ভের পতন থেমে দেশের আর্থিক খাত ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দেশ যখন আর্থিক সংকটে পড়ে, সে সময় আইএমএফ থেকে বাজেট সহায়তা হিসেবে ঋণ চায়। সংস্থাটি ওই প্যাকেজের আওতায় ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও দেশের আর্থিক খাতে বড় ধরনের সংস্কারের শর্ত জুড়ে দেয়। এমনকি বারবার সফরে এসে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেওয়ায় দেশের আর্থিক খাতে অনেকটাই অস্বস্তি দেখা দেয়। অথচ ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঋণ চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ঋণ দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হচ্ছে। এটি সম্ভব হয়েছে শুধু আন্তর্জাতিক বিশ্বে ড. ইউনূসের ভাবমূর্তির কারণেই।
বর্তমানে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন ড. ইউনূস। সেখানে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বড় অঙ্কের ডলার পাওয়ার আশ্বাস এসেছে। এর বাইরেও চীনের প্রস্তাবে বড় বিনিয়োগের সোলার প্লান্ট স্থাপন, নেপালের পক্ষ থেকে জলবিদ্যুৎ, জ্বালানি আমদানিসহ বিভিন্ন খাতে সহায়তারও আশ্বাস এসেছে বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে। এর আগেও ড. ইউনূস বিভিন্ন সময়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন অধিবেশনে যুক্ত হয়েছেন। তবে সে সময় তিনি একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে সেখানে যুক্ত হন। তবে এবারই প্রথম বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে জাতিসংঘে গেলেন তিনি। এ জন্য বিশ্বে নেতাদের মধ্যে তাকে নিয়ে দেখা গেছে উচ্ছ্বাস।
এরই মধ্যে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েবা, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং উইসহ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রনায়ক ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সবাই কমবেশি নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
দেশের আর্থিক খাতের দুরবস্থা বিবেচনায় প্রত্যেক বৈঠকেই উঠে এসেছে আর্থিক সহায়তার বিষয়টি। আর সব ক্ষেত্রেই এসেছে ইতিবাচক সাড়া। যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের জন্য ২০ কোটি ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সংস্কারের যে কোনো উদ্যোগে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ প্রায় সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ড. ইউনূস ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গার বৈঠকে বাংলাদেশকে সংস্কারে খরচের জন্য সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে। এর মধ্যে দুই বিলিয়ন ডলার দেবে একেবারে নতুন ঋণ হিসেবে আর বাকি দেড় বিলিয়ন ডলার দেবে আগের প্রকল্পগুলো চালিয়ে নেওয়ার অংশ হিসেবে। মোটাদাগে সরকার এই অর্থ ডিজিটাইজেশন, তারল্য সহায়তা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা এবং পরিবহনে খরচ করতে পারবে।
আর আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েবার সঙ্গে করা বৈঠকেও এসেছে নতুন ঋণের আশ্বাস। এমন একসময় ড. ইউনূস আইএমএফপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যখন ঋণ দেওয়ার জন্য সংস্থাটির একটি মিশন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এরই মধ্যে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে আইএমএফ। এরপরও সংস্থাটি ড. ইউনূসের নেতৃত্বের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আরও তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে চায়। আইএমএফ মনে করে, একটি বিশেষ সময়ে ক্ষমতায় আসা নতুন সরকার অনেক খাতে সংস্কার করবে। এ জন্য তারা পাশে থাকতে চায়। এ অর্থ বাজেট সহায়তা হিসেবে সরকার খরচ করতে পারবে।
তথ্য বলছে, চীন বাংলাদেশে একটি বড় বিনিয়োগের সোলার উৎপাদন প্লান্ট বসাতে চায়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সোলার প্যানেল বানিয়ে সারা বিশ্বে রপ্তানির লক্ষ্য দেশটির। এতে দেশে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রার জোগান বাড়বে। এতে সৃষ্টি হবে বহু লোকের কর্মসংস্থান। চীন মনে করে, সোলার প্যানেলে বাংলাদেশ বিশ্বের বড় রপ্তানিকারক হতে পারবে। আর নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা দেশটির বিপুল জলবিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি জ্বালানি, পর্যটন, শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে উভয় দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন। এ ছাড়া ইউএসএআইডির প্রধান সামান্তা পাওয়ার সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সিইও মার্ক সুজম্যানও বাংলাদেশের পাশে থাকতে চান বলে জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম বলেন, এই ঋণগুলো না নিয়ে সরকারের কোনো উপায় ছিল না। কারণ, এটি ছাড়া রিজার্ভের পতন থামানোর আর কোনো উপায় ছিল না। শুধু তাই নয়, দেশের ব্যাংকিং খাতের অবস্থা খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এখান থেকে কয়েক লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। ফলে এ ঋণগুলো পাওয়া গেলে ব্যাংকিং খাত একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে আসবে। সেইসঙ্গে রিজার্ভ বাড়বে এবং ডলারের দামও স্থিতিশীল হবে। এভাবেই দেশের পুরো অর্থনীতি একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে আসবে।
বিভিন্ন বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী তিন বছরে একটা প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশকে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে আইএসডিবি। বিভিন্ন খাতের জন্য এ অর্থ দেবে তারা। এ ছাড়া, ডিসেম্বরের মধ্যে বাজেট সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশকে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে এডিবি। সংস্থাটি ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি খাতে সংস্কারের জন্য দেবে ৫০ কোটি ডলার। এটা পাওয়া যাবে ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে। এর বাইরে জ্বালানি খাতের উন্নয়নেও এডিবির কাছে ১০০ কোটি ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ। সংস্থাটি চলমান প্রকল্পগুলো অব্যাহত রাখবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে। সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে ২০ কোটি ডলারের বেশি উন্নয়ন সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে। সব মিলিয়ে দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ১ হাজার ৩৬০ কোটি বা সাড়ে ১৩ বিলিয়নের বেশি ঋণ সহায়তা পাওয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ডলার সংকট কাটাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে কোনো মূল্যে ডলারের মজুদ বাড়াতে চাচ্ছে। নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। বরং রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়িয়ে ডলারের মজুদ বাড়াতে চাচ্ছেন। এরই মধ্যে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়েছে। ইতোমধ্যেই রিজার্ভ ২০ বিলিয়নের কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার আশ্বাসে বোঝাই যাচ্ছে যে, ড. ইউনূস সেখানে বেশ সমীহ পাচ্ছেন। তাকে সবাই আগে থেকে চেনেন, নতুন করে চেনানোর কিছু নেই। তবে এবার তিনি একটি বাড়তি পরিচয় নিয়ে সেখানে গেছেন। সেটি হলো বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ড. ইউনূসের নেতৃত্বগুণে উচ্চপর্যায়ে একটি সাফল্য পাওয়া গেছে। এখন এই ঋণ পাওয়ার জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। আর্থিক খাত, জ্বালানি খাত, রাজস্ব খাত, ব্যাংকিং নীতিমালাসহ বেশ কিছু জরুরি সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য একটি সময়োপযোগী কর্মসূচি তৈরি করে তাদের দিতে হবে। অর্থ বিভাগকে এখন এটি করতে হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে এস আলমের ১৮ কোম্পানি!
কর স্বর্গ ও গোপন (শেল) কোম্পানি খোলার অন্যতম কেন্দ্র বলে পরিচিত ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে বাংলাদেশের বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস. আলমের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের সন্ধান মিলেছে। এই গ্রুপের অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্তকারীদের মতে, ২০১১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে – ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে – মূলত অর্থপাচারের উদ্দেশ্যে ১৮টি গোপন কোম্পানি খুলেছেন এস আলমের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম মাসুদ। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমতিও নেননি তিনি।
২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশ শাসন করেছে আওয়ামী লীগ, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্টে আওয়ামী সরকারের পতন হয়। এরপর পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা এস আলমসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা সংঘটিত দুর্নীতি ও আর্থিক অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। যা আরও জোরদার করার মধ্যে এই তথ্য উঠে এসেছে।
বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। গত ১৭ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের সাথে জড়িত সন্দেহে ১৫০ ব্যক্তির একটি তালিকা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৭৯ জনের বিষয়ে এরমধ্যেই তদন্ত করা হচ্ছে।
এর কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, পাচার হওয়া সম্পদ ফেরানোর প্রাথমিক কাজ এরমধ্যে শুরু হয়েছে। ‘তবে জাল ফেলা হয়েছে, এখন গোটানো বাকি।’
এই প্রচেষ্টার সাথে জড়িত টাস্কফোর্সের একজন সদস্য জানান, পাচার হওয়া সম্পদ শনাক্ত ও উদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকার দৃঢ়সংকল্প, যেকারণে ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে এস আলমের বিনিয়োগের খোঁজ পাওয়া গেছে।
এর আগে গত অক্টোবর মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ঘনিষ্ঠ ধনকুবের ও ব্যবসায়ীরা ব্যাংকখাত থেকে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন। এরমধ্যে কেবল এস আলম-ই অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন।
সম্পদ উদ্ধারে দরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকখাতকে ধবংস করার জন্য দায়ী দুজন ব্যবসায়ী – এস আলম ও সালমান এফ রহমান। বিগত সরকারও যেখানে মূল ভূমিকা রেখেছে।
“গভর্নর বলেছেন, কেবল এস আলমই ১০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে। এসব অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকারকে সব ধরনের চেষ্টা করতে হবে। সিঙ্গাপুর-সহ যেসব দেশে অর্থপাচার হয়েছে, ফিরিয়ে আনতে সহায়তা চেয়ে— সেসব দেশের সরকারের সাথে আলোচনার উদ্যোগ নিতে পারে” – বলেন তিনি।
সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সাইপ্রাস ও ইউরোপে এস আলম গ্রুপের বিপুল বিনিয়োগের কথা জানা যাচ্ছে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন যে, “এই প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ, এবং তাতে অনেক বছর লাগতে পারে। এরমধ্যে আগামী নির্বাচনে হওয়া যেকোনো রাজনৈতিক পরিবর্তনও বিষয়টিকে জটিল করে তুলতে পারে। বিশেষত অর্থপাচারের সাথে জড়িত ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো নির্বাচিত সরকারের সাথে আঁতাত করে তাদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টাও হয়তো করবে।”
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ-সম্পদ পুনরুদ্ধারে গত ১৯ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় বৈঠক করে আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স। বৈঠকে এস আলম-সহ অন্যান্য শিল্পগোষ্ঠীর বৈদেশিক সম্পদের বিবরণ তুলে ধরা হয়। টাস্কফোর্সের সঙ্গে কাজ করা দেশি-বিদেশি কর্মকর্তাদের সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
ভার্জিন আইল্যান্ডসে এস আলমের যেসব কোম্পানি
টাস্কফোর্সের সূত্রমতে, ২০১১ সালে প্রথম এস আলমের নামে ক্যানালি লজিস্টিকস পিটিই লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি গঠন করা হয় ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে। এরপর এস আলমের মালিকানায় ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আরও ১০টি কোম্পানি খোলা হয়। এগুলো হলো – হানিওয়েল ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, গোল্ডেন ট্রেইলস ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, হ্যামিলটন ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, হ্যাজেল ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, লিভোনিয়া পিটিই লিমিটেড, লু শুই ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, পিটসডেল ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, স্পিংফিল্ড ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, চিং শুই ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড এবং ট্রিভোলি ট্রেডিং পিটিই লিমিটেড।
এছাড়া, ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত আরও ছয়টি কোম্পানি গঠন করা হয়। এগুলো হলো – আদাইর ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, গ্রিনিচ ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, লিনিয়ার ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, ম্যারিকো ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড, ওয়েভপ্যাক ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড এবং জেনিতা ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড।
এছাড়া, ২০১৯ সালের ২২ মে তারিখে এস আলমের মালিকানায় পিকক প্রোপার্টি হোল্ডিংস লিমিটেড নামে আরেকটি কোম্পানি গঠিত হয়।
হ্যাজেল ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেডে ৭০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাইফুল আলমের নামে, বাকি ৩০ শতাংশের মালিক তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন।
বিদেশে বিনিয়োগ করতে হলে, যেকোনো বাংলাদেশি ব্যক্তি বা সংস্থাকে আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। এস আলম গ্রুপকে এধরনের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।
২০১৭ সালে ফাঁস হওয়া প্যারাডাইস পেপারে বিশ্বের অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তির বিদেশে সম্পদ পাচারের তথ্য উঠে আসে, যেখানে কর স্বর্গ হিসেবে ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জের দিকেও আলোকপাত করা হয়।
সিঙ্গাপুর থেকে ১৭ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই অঞ্চলটি সেখানে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক কর সুবিধা দেয়, যার মধ্যে রয়েছে কোনোপ্রকার আয়কর, বাণিজ্যিক কর, বা মূলধনী আয়ের ওপর কর না থাকা। এছাড়া, বিনিয়োগকারীর গোপনীয়তার অধিকারও দেয় সেখানকার কর্তৃপক্ষ, যার ফলে প্রকাশ্যে তাদের শেয়ারহোল্ডার বা পরিচালকদের নাম আনুষ্ঠানিক নথিতে প্রকাশ না করেও সেখানে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে বিভিন্ন কোম্পানি।
কর স্বর্গের ব্যবহার হয় কেন?
অর্থপাচার ও নানান ধরনের দুর্নীতির জন্য খোলা হয় শেল বা গোপন কোম্পানি। করফাঁকি এবং আয়ের উৎস গোপন করতে দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তারা কর স্বর্গ বা ট্যাক্স হ্যাভেন বলে পরিচিত বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এসব প্রতিষ্ঠান খুলে থাকে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ন্যূনতম কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে সম্পদ ধারণ বা তা লেনদেনের মাধ্যমে অন্যত্র স্থানান্তর করতে শেল কোম্পানি খোলা হয়, যাদের জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা হচ্ছে কর স্বর্গগুলো। কারণ সেখানে কর যেমন স্বল্প, তেমনি আইন ও বিধিমালাও শিথিল। পায় গোপনীয়তা রক্ষার সুবিধাও। কর সুবিধা লাভ এবং গোপন কার্যক্রম পরিচালনায় আগ্রহী ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে জনপ্রিয় কয়েকটি কর স্বর্গের মধ্যে নাম করা যায় – কেম্যান আইল্যান্ডস, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, বারমুডা ও চ্যানেল আইনল্যান্ডস এর।
ইন্টারন্যাশল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) এর এক অনুসন্ধানে এসব কর স্বর্গের ব্যাপক সুবিধা গ্রহণের চিত্র উঠে এসেছে। বিভিন্ন শেল কোম্পানি ব্যবহার করে কীভাবে কর ফাঁকি দেওয়া, অর্থ পাচার ও প্রকৃত মালিকানা গোপন রাখা হচ্ছে তা-ও উঠে আসে এতে।
সম্পদ ফিরিয়ে আনা কঠিন, তবে সম্ভব
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)- এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং তাঁদের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ– বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে নিশ্চয় প্রমাণ আছে যে অর্থপাচার হয়েছে, কারণ তারাও জড়িত ছিল। “পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা অসম্ভব না, তবে এটি জটিল ও দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া।”
তিনি বলেন, প্রথমে এটা আইনিভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে এস আলমের কোম্পানিগুলোর অর্থায়ন করা হয়েছে। “এটাকে পাচার হওয়া টাকা বললেও– আইনিভাবে প্রমাণ না করতে পারলে, কোনো দেশই তা ফেরত দেবে না। তবে একবার আইনিভাবে প্রমাণ করা গেলে– সম্পদ ফিরিয়ে আনতে তখন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করা যাবে।”
এই লক্ষ্য অর্জনে বিএফআইইউ, দুদক, সিআইডি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় – গুরুত্বপূর্ণ এই পাঁচটি সংস্থার সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিদেশে এস আলমের যেসব সম্পদ
২০০৯ সাল থেকে গত এক দশকে এস আলম নিজের এবং তার স্ত্রীর নামে বিভিন্ন কোম্পানি স্থাপন করে সিঙ্গাপুরে ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে শুরু করেন।
সরেজমিন তদন্তে দেখা গেছে, এস আলম একটি শপিং মলে ৩টি হোটেল ও রিটেইল স্পেস কেনার জন্য প্রায় ৭০০ মিলিয়ন সিঙ্গাপুরি ডলার (বর্তমান ডলারমূল্যে ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকার সমান) বিনিয়োগ করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন গোপনীয় নথি অনুযায়ী দেখা যায়, ভুয়া কগজে প্রতিষ্ঠান খুলে নামে-বেনামে ঋণের মাধ্যমে দেশের প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা লুট করেছেন এই এস. আলম।
এসব ঋণের অর্থ শত শত আমদানি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মোড়কে এলসির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএফআইইউয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্রেগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সাবেক মন্ত্রী কামরুলের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য কামরুল ইসলামের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বুধবার (২০ নভেম্বর) দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বিএফআইইউ।
চিঠিতে তার ও তার ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো ব্যাংক হিসাব থাকলে আগামী ৩০ দিনের জন্য তা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, রাজধানীর নিউমার্কেট থানা এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় বুধবার কামরুল ইসলামের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
এদিন তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা জোনাল টিমের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিপ তার ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
এসময় আসামিপক্ষে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৭ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব
ঋণের নামে ইসলামী ব্যাংকের ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৭ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দুদকের উপপরিচালক ইয়াছির আরাফাতের সই করা এক চিঠিতে এ তলব করেন।
চট্টগ্রামের মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. গোলাম সরওয়ার চৌধুরী ও অন্য ব্যবসায়ী গ্রুপ জাল-জালিয়াতি করে ওই পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে দুদকে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়। দুদক সূত্রে এই খবর জানা গেছে।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ইয়াছির আরাফাতের নেতৃত্বে তিন সদস্যের টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে। ১৭ কর্মকর্তার বিষয়ে ও অভিযোগ সম্পর্কে তথ্য চেয়ে উপপরিচালক ইয়াছির আরাফাত স্বাক্ষরিত চিঠি এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে ওইসব কর্মকর্তার জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি পাঠাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংক চট্টগ্রামের চাকতাই শাখার গ্রাহক মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজ, জুবিলী রোড শাখার গ্রাহক ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স, খাতুনগঞ্জ শাখার গ্রাহক সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টসের ঋণ পরিদর্শন বা মনিটরিং নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভূমিকার যৌক্তিকতা সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, গত ১১ নভেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওইসব কর্মকর্তাদেরকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিলো। তারা ওইদিন হাজির না হওয়ায় তাদেরেক দুদকে হাজির হয়ে ঋণ-সংক্রান্ত পরিদর্শন রেকর্ডপত্র ও লিখিত বক্তব্য জমা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ওই ১৭ কর্মকর্তা হলেন- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের উপপরিচালক মে. জুবাইর যেসেন, উপপরিচালক খোরশেদুল আলম, রুবেল চৌধুরী, দেবাশীষ বিশ্বাস, মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বাবলু, যুগ্ম পরিচালক সুনির্বাণ বড়ুয়া, অনিক তালুকদার, কোল হোসেন, সৈয়দ মু আরিফ-উন-নবী, অতিরিক্ত পরিচালক ছলিমা বেগম, শংকর কান্তি ঘোষ, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও মো. সোয়াইব চৌধুরী।
বাংলাদেশ ব্যাংক ঢাকা অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আব্দুর রউফ, উপপরিচালক লেনিন আজাদ পলাশ, পরিদর্শন দলের নেতা ও অতিরিক্ত পরিচালক মো. মঞ্জুর হোসেন খান।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
খেজুরের আমদানিতে কমলো শুল্ক, থাকছে না অগ্রিম কর
রমজানে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে খেজুর আমদানিতে আমদানি শুল্ক ও সমুদয় অগ্রিম কর কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সই করা প্রজ্ঞাপন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। নতুন ওই সুবিধা ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পবিত্র রমজান মাসে খেজুরকে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য খেজুর আমদানির ওপর বিদ্যমান কাস্টমস ডিউটি ২৫ শতাংশ হতে হ্রাস করে ১৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৩ শতাংশ এবং বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে অর্থাৎ মোট করভার ৬৩ দশমিক ৬০ শতাংশ হতে হ্রাস করে ৩৮ দশমিক ৭০ শতাংশ করা হয়েছে।
এর আগে ১৭ নভেম্বর খেজুর আমদানি শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর (এআইটি) কমানোর প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। খেজুর আমদানিতে আগাম আয়কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ, আগাম কর ৫ শতাংশ পুরোপুরি বাতিল এবং আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার সুপারিশ করে ট্যারিফ কমিশন।
এনবিআর মনে করে, খেজুর আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক-কর হ্রাস করার ফলে মানভেদে প্রতি কেজি খেজুরের আমদানি ব্যয় প্রায় ৬০ টাকা হতে ১০০ টাকা হ্রাস পেতে পারে। আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর হ্রাসের ফলে খেজুরের আমদানি বৃদ্ধি পাবে, বাজারে খেজুরের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে এবং খেজুরের বিক্রয় মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম
দেশের বাজারে আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। ভরিতে এবার সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯৯৪ টাকা বাড়িয়ে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দাম বাড়ানোর ফলে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম হবে এক লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা। যা আজকেও ছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বাজুস জানায়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার দাম বেড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামীকাল (২২ নভেম্বর) থেকে সোনার নতুন দাম কার্যকর হবে।
কাফি