ব্যাংক
যুক্তরাজ্যে পোস্টিং নিয়ে চাকরি ছাড়লেন সোনালী ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা
সোনালী ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি সোনালী বাংলাদেশ ইউকে লিমিটেডে কাজ করার সুবাদে ৪ বছর আগে পোস্টিং নিয়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান ব্যাংকটির ২ কর্মকর্তা। সেখানে গিয়ে সে দেশের পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট স্ট্যাটাস (স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা) লাভের পর এক কর্মকর্তা চলতি বছরের এপ্রিলে এবং আরেক কর্মকর্তা জুনে সোনালী ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এরপরেও, ওই দুই কর্মকর্তাকে এখন একই শাখায় বিদেশি কর্মী হিসাবে পুনরায় নিযুক্ত করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিমের কাছে জুলাই মাসের প্রথম দিকে এসব নিয়োগের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। তবে সোনালী ব্যাংক এ ব্যাপারে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
সোনালী ব্যাংকের অন্যান্য বিদেশি শাখা ও প্রতিনিধি অফিসে কর্মরত পদায়ন ও নিয়োগ নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, এসব কারণে ব্যাংকের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের শতভাগ মালিকানাধীন একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি হলো সোনালী ব্যাংলাদেশ ইউকে লিমিটেড। ঢাকা থেকেই প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ মোট পাঁচজন কর্মকর্তাকে ঢাকা থেকে পাঠানো হয়। বাকি কর্মীরা যুক্তরাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা। এর পরিচালনা পর্ষদও ঢাকায় গঠিত।
সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চ মাসে সোনালী ব্যাংলাদেশ ইউকে লিমিটেডে দায়িত্বরত সোনালী ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) ফারজানা হক যুক্তরাজ্য থেকে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেওয়ার আবেদন পাঠান। গত ১ এপ্রিল থেকে তার ইস্তফা কার্যকর করেছে সোনালী ব্যাংক।
একইভাবে সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার সুজা উদ্দিন আল রেজা গত ২৬ জুন যক্তরাজ্যে চাকরি থেকে ইস্তফা চেয়ে আবেদন করেন। ১ জুলাই থেকে তাকে ইস্তফা দেওয়া হয়েছে। এই দুজন কর্মকর্তাকে ঢাকা থেকে যুক্তরাজ্যে পোস্টিং দেওয়া হয়েছিল।
সূত্র বলছে, উভয়ই এখন যুক্তরাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার পরেও ব্যাংকটিতে একই পদে নিযুক্ত আছেন।
সোনালী ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকা থেকে যাদেরকে যুক্তরাজ্যে পোস্টিং দেওয়া হয় দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে, এসব কর্মকর্তারা পরিবার অর্থাৎ, স্বামী বা স্ত্রী ও সন্তানদের ওই দেশে নিয়ে যেতে পারেন। কর্মকর্তার যাওয়া, থাকার খরচ বহন করে সোনালী ব্যাংক। কমপক্ষে তিন বছরের জন্য তাদেরকে যুক্তরাজ্যে পোস্টিং দেওয়া হয়ে থাকে।
সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পোস্টিংয়ের সুযোগে যুক্তরাজ্যে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ নিচ্ছেন কোনো কোনো কর্মকর্তা- এটি অনৈতিক। সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হল এই কর্মকর্তারা আবার পরে বিদেশি কর্মী হিসেবে একই জায়গায় পুনরায় নিয়োগ পাচ্ছেন।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সোনালী ব্যাংকের অন্যান্য বিদেশি শাখায়ও যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী পোস্টিং হচ্ছে না। এক্ষেত্রে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পছন্দের কর্মকর্তারা পোস্টিং পাচ্ছেন।
“যেকারণে ওইসব কর্মকর্তা ব্যাংকের স্বার্থের চেয়ে নিজেদের সুবিধা বেশি প্রাধান্য দেন। এতে ব্যাংক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে,” যোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জেনারেল ম্যানেজার (পারসোনাল ডিভিশন) মো. সাফায়েত হোসেন পাটোয়ারী বলেন, “যেকোনো কর্মীই চাকরি ছাড়তে পারেন। চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী কোনো আপত্তি না থাকলে চাকরি ছাড়ার আবেদন গ্রহণও করতে হবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তবে বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় সোনালী বাংলাদেশ ইউকে লিমিটেডে পোস্টিং বা নিয়োগ বিধিমালায় কিছু পরিবর্তন আনার কথা ভাবা হচ্ছে।”
সোনালী বাংলাদেশ (ইউকে) লিমিটেড ছাড়াও সোনালী ব্যাংকের ভারতের কলকাতা ও শিলিগুড়িতে শাখা রয়েছে। এছাড়া প্রতিনিধি অফিস রয়েছে জেদ্দা ও কুয়েতে। এর আগেও শাখা ও প্রতিনিধি অফিসে পোস্টিংয়ে নিয়ম না মানার অভিযোগ করেন এই কর্মকর্তা।
তিনি জানান, “ব্যাংকের একজন সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার দুই ভাগ্নেকে জেদ্দা ও যুক্তরাজ্যে যোগ্যতা না থাকার পরও পদায়ন করেন । বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বললেও উনি ব্যবস্থা না নিয়ে তাদেরকে স্বপদে বিদেশে বহাল রেখেছেন।”
অতিরিক্ত লোকবল, আর্থিক চাপ
সূত্র জানায়, বছরের পর বছর আর্থিক ক্ষতির কারণে সোনালী ব্যাংক ইউকে লিমিটেডকে সোনালী বাংলাদেশ ইউকে লিমিটেডে রূপান্তর করা হয়। লন্ডনে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি সেখানে থাকা বাংলাদেশিদের বাণিজ্য-অর্থ সহায়তা প্রদান করে।
জানা গেছে, সোনালী বাংলাদেশ (ইউকে) লিমিটেড মুলধন ঘাটতিতে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রয়োজনীয় আমানত সংগ্রহ করতে পারছে না। যেকারণে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ৩.৫০ শতাংশ সুদে ৫৮.৭৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে রেখেছে। ২০২৩ সালে সহায়ক এই প্রতিষ্ঠান লাভ করে ১.৯ মিলিয়ন পাউন্ড।
তবে সামগ্রিকভাবে কর্মকর্তাদের দক্ষতার ঘাটতি, দায়িত্বপালনে আন্তরিকতার অভাবে বিদেশে থাকা এই সাবসিডিয়ারি কোম্পানি সোনালী ব্যাংকের জন্য আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে।
সোনালী ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, ২০০১ সালে ২৪ জন কর্মী নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় সোনালী ব্যাংক ইউকে লিমিটেড। এরপর থেকেই ক্রমাগত লোকসান হতে থাকায় এটি বন্ধ হয়ে যায় এবং এর পরিবর্তে ২০২২ সালের আগস্টে চালু হয় সোনালী বাংলাদেশ ইউকে লিমিটেড।
এমন ধারাবাহিক লোকসানের একটি অন্যতম কারণ হলো অতিরিক্ত জনবল নিয়োগের কাঠামো— যা অবশ্য পরবর্তীতেও বহাল থাকে। নতুন প্রতিষ্ঠান আমানত সংগ্রহ বা বিনিয়োগে জড়িত না থাকলেও বিদেশি বিল এবং বন্ড সমন্বয় করে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে, ২৪ জন কর্মী সেখানে কাজ করছেন। এরমধ্যে ঢাকা থেকে অতিরিক্ত দুই কর্মকর্তাকে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে গত ১৩ মে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ দুই নতুন কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য সাক্ষাৎকার (ভাইভা) নিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সোনালী ব্যাংকের বিদেশি শাখা ও প্রতিনিধি অফিসগুলো ব্যাংকিং কার্যক্রমের চেয়ে তাদের সফরের সময় ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা, ঢাকা থেকে আগত বোর্ড সদস্য এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রটোকল সেবা প্রদানে বেশি ব্যস্ত থাকে।
এছাড়া, সোনালী ব্যাংক ইউকেতে সোনালী পে নামে আরেকটি এনটিটি রয়েছে, যেটি ২০২২ সালে রেমিট্যান্স হাউস হিসাবে লাইসেন্স পেয়েছিল। ওই কোম্পানিতে ৫ জন নিয়োগ পেয়েছেন এবং কোম্পানিটি লোকসানের ওপরেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
বেতন এবং অন্যান্য খরচ বাবদ কোম্পানির ১ মিলিয়ন পাউন্ডের প্রাথমিক মূলধন ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। ফলে সোনালী পে এখন অতিরিক্ত আরও ১ মিলিয়ন পাউন্ড মূলধন পেতে অনুরোধ জানিয়েছে।
এদিকে, সোনালী ব্যাংক এই অতিরিক্ত অর্থায়নের অনুমোদন নিতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে বলেও সূত্র জানায়।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ডলার
এক সপ্তাহের ব্যবধানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার বেড়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন তথ্য প্রকাশ করেছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, এক সপ্তাহের ব্যবধানে রিজার্ভ ছয় কোটি ১০ লাখ বেড়ে এক হাজার ৮৪৯ কোটি কোটি ৪০ লাখ ডলারে দাঁড়াল। বর্তমানে বিভিন্ন তহবিলসহ গঠিত মোট রিজার্ভ দুই হাজার ৪২৭ কোটি ডলার।
আগের সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দুই মাসের বিল পরিশোধের পর নভেম্বরের মাঝামাঝি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।
আকু হলো আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তির ব্যবস্থা। এর সদস্যদেশ হলো বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি এ তালিকা থেকে বাদ পড়েছে শ্রীলঙ্কা।
আকুর বিল পরিশোধ ছাড়াও রিজার্ভ থেকে দৈনন্দিন ভিত্তিতে বিদেশি ঋণ ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয় বাংলাদেশকে। সরকারের জরুরি আমদানি ব্যয় পরিশোধে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিও করতে হয়।
অন্যদিকে বৈদেশিক ঋণ, অনুদান, প্রবাসী আয়ের নির্দিষ্ট অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ হিসেবে জমা হয়।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ব্যাংক
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের নতুন ডিএমডি আবু জাফর
এস এম আবু জাফর আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক পিএলসিতে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। ২০২১ সাল থেকে ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে উত্তরা মডেল টাউন শাখায় দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে যোগদানের পূর্বে তিনি এক্সিম ব্যাংক এবং ইউসিবিএল ব্যাংকে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন।
আজ (মঙ্গলবার) ব্যাংকটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আবু জাফর এক্সিম ব্যাংকে ২০০০ সালে ম্যানেজমেন্ট ট্র্রেইনি হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার ব্যাংকিং কর্মজীবন শুরু করেন। দীর্ঘ ২৪ বছরের ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে শাখা পর্যায়ে বৈদেশিক বাণিজ্য প্রধান, অপারেশন ম্যানেজার এবং তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কর্পোরেট ও এডি শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সফলতার সাথে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি তিনবার “চেয়ারম্যানস্ গোল্ড মেডেল” অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। এ ছাড়াও ২০১৭ সালে তিনি শুদ্ধাচার পুরস্কার লাভ করেন।
তিনি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বহু প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাংকিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং দেশে ও বিদেশে অনুষ্ঠিত ব্যাংকিং এবং আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। প্রথিতযশা এ ব্যাংকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দুর্বল তিন ব্যাংককে আরও ২৬৫ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা
তারল্য ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোকে সচল করতে কাজ করছে সরকার। তাতে সবল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত সপ্তাহে বড় অঙ্কের তারল্য সহায়তার পর এবার দুর্বল তিন ব্যাংককে আরও ২৬৫ কোটি টাকার সহায়তা দিয়েছে সবল চার ব্যাংক।
সহায়তা দেওয়া ব্যাংকগুলো হলো- ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, সহায়তার পাশাপাশি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব কৌশল থাকা উচিত। কারণ গ্যারান্টি সহায়তা দিয়ে যে কোনো ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। ঋণ আদায়ে তাদের নিজস্ব কৌশল থাকতে হবে। যদিও কিছু ব্যাংক ঋণ আদায়ে খুব ভালো করছে। তাদের মতো অন্যদেরও উদ্যোগী হতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তার আশাই সব ঠিক হবে না।
এর আগে গত সপ্তাহে তারল্য ঘাটতি মেটাতে দুর্বল সাত ব্যাংকে ৬ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকার সহায়তা দিয়েছে সবল ১০ ব্যাংক। ওই সময় এসব ব্যাংক থেকে চাওয়া হয়েছিল ১১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এসব ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহায়তা পেয়েছে ইসলামী ব্যাংক। সাতটি থেকে ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক পেয়েছিল ২ হাজার ৯৫ কোটি টাকা।
সহায়তা পাওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে ছিল- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ছয় ব্যাংক থেকে পেয়েছে ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ছয় ব্যাংক থেকে ১ হাজার কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক ৯২০ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ৭০০ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংক ৪০০ কোটি এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পেয়েছে ২৯৫ কোটি টাকা। আর যেসব ব্যাংক তারল্য সহায়তা দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্র মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক, বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক ও বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক।
এর আগে গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ১৭টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে সভা করেন। সভায় দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তা অব্যাহত রাখতে শক্তিশালী ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ করেন গভর্নর।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৩ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব
এস আলম গ্রুপ ও তার সহযোগীদের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানে এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৩ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বরাবর অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক ইয়াছির আরাফাত সই করা তলবি চিঠিতে তাদেরকে আগামী ২০ ও ২১ নভেম্বর দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চিঠিতে কর্মকর্তাদের হাজির হওয়ার পাশাপাশি তাদের পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। এছাড়া চিঠিতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চাকতাই শাখার গ্রাহক মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজ, জুবিলি রোড শাখার গ্রাহক ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স, খাতুনগঞ্জ শাখার গ্রাহক সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস নামীয় ঋণ পরিদর্শন ও মনিটরিং সংক্রান্ত কর্মকর্তা ভূমিকার বিষয়ের বিস্তারিত তথ্যসহ হাজির হতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে ২০ নভেম্বর যাদের তলব করা হয়েছে- বাংলাদেশ ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের যুগ্মপরিচালক সুনির্বাণ বড়ুয়া, অনিক তালুকদার, অতিরিক্ত পরিচালক শংকর কান্তি ঘোষ, ছলিমা বেগম, উপপরিচালক মো. জুবাইর হোসেন ও রুবেল চৌধুরী।
২১ নভেম্বর যাদের তলব করা হয়েছে- বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক সৈয়দ মু. আরিফ-উন-নবী, অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, মো. শোয়েব চৌধুরী, মো. মঞ্জুর হোসেন খান ও মো. আব্দুর রউফ, উপ-পরিচালক লেনিন আজাদ পলাশ এবং পরিচালক মো. সরোয়ার হোসাইন।
একই ঘটনায় এর আগে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ২৩ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল সংস্থাটি।
অভিযোগ রয়েছে, মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী গোলাম সারওয়ার চৌধুরী, জুবিলি রোড শাখার গ্রাহক ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স, খাতুনগঞ্জ শাখার গ্রাহক সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টসসহ অন্যান্যরা ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ইসলামী ব্যাংকে থেকে আত্মসাৎ করেছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার কোটি টাকা
গত তিন মাসে (জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর) খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৭৩ হাজার কোটি টাকা। আর চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২১ কোটি। সেই হিসাবে খেলাপি মোট ঋণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। শুধু তাই নয় গত ১৬ বছরের মধ্যে বিতরণ করা ঋণ ও খেলাপি ঋণের সর্বোচ্চ রেকর্ড এটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যের প্রতিবেদন থেকে এ বিষয়টি জানা গেছে।
তথ্য বলছে, গত বছরের জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এতদিন যা স্বার্থান্বেষী মহলগুলোর কারসাজিতে চাপা পড়েছিল।
এর আগে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। সেদিন গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। মূলত তার পদত্যাগের পর ব্যাংক খাতের প্রকৃত তথ্য সামনে আসতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০০৮ সালের নির্বাচনে যখন আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে তখন ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। এরপর থেকে আওয়ামী সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও কেলেঙ্কারি বাড়তে থাকে। ফলে খেলাপি ঋণও ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। এদিকে সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ১১১ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণ করা ঋণের ৪০ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বা বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে। কারণ তারা ধারণা করছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো ভুয়া দলিল ও অনিয়মের মাধ্যমে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছিল। শুধু এস আলম ও তার সহযোগীরা একাই ছয়টি ব্যাংক থেকে ৯৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে। ইতোমধ্যে এসব ঋণ মন্দ ঋণে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক অবস্থাকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে অনেকে ঋণ পরিশোধ করতে চান না। তাদের এই প্রবণতা মন্দ ঋণের বোঝা আরও বাড়াতে পারে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা অধিকাংশ ঋণ অনিয়ম ও কেলেঙ্কারির মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। ফলে এসব ঋণ আদায় করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
কাফি