অর্থনীতি
জুন প্রান্তিকে ভারতের প্রবৃদ্ধিতে ভাটা

গত এপ্রিল থেকে জুন প্রান্তিকে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি কমেছে। গত পাঁচ প্রান্তিকের মধ্যে সমাপ্ত জুন প্রান্তিকে ভারতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সর্বনিম্ন।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) ভারতের ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিস (এনএসও) জানিয়েছে, এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। গত বছর একই প্রান্তিকে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ২। মূলত কৃষি খাতের গতি কমে যাওয়ায় জিডিপির সূচক নিম্নমুখী হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। খবর ইকোনমিক টাইমসের
কয়েক দিন আগেই রয়টার্সের এক জরিপে বলা হয়েছিল, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ভারতের প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাবে। এবার ভারতের সরকারি পরিসংখ্যানেই জানা গেল, প্রবৃদ্ধি কমেছে।
করোনা মহামারির শুরুতে ২০২০ সালে ভারতের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছিল। এরপর দেশটি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। এমনকি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবও বেশ ভালোভাবে মোকাবিলা করেছে দেশটি। গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ৪ ছাড়িয়ে যায়। তখন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, এটাই ভারতের অর্থনীতির সক্ষমতা।
সেই সঙ্গে গত কয়েকটি প্রান্তিকে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশের ওপর বা তার আশপাশে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি-মার্চে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে এ বছর এপ্রিল-জুন অর্থবছরে চীনের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪ দশমিক ৭। ফলে এই প্রান্তিকে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার কমলেও এখনো তারা বিশ্বের বড় অর্থনীতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল।
এনএসওর তথ্যানুযায়ী, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ভারতে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেছে; এই সময় দেশটির কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ শতাংশ। আগের প্রান্তিকে যা ছিল ৩ দশমিক ৭। উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের আশপাশে আছে; যদিও আবাসন ও কর্মক্ষেত্রে জিভিএ (দেশের বাজারে উৎপাদিত পণ্য ও পরিষেবার মোট মূল্য) ১২ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমে ৭ দশমিক ১ শতাংশে নেমেছে।
অর্থনীতিবিদেরা বলেন, জিডিপির চেয়ে জিভিএর হিসাব দিয়ে অর্থনীতির চালচিত্র বেশি বোঝা যায়। জিভিএর সঙ্গে কর ও ভর্তুকির নিট ফলাফল যোগ করে জিডিপির হিসাব পাওয়া যায়। ধরা যাক, দেশে গত বছর ১০০ টাকা মূল্যের পণ্য তৈরি হয়েছিল। এ বছরও ১০০ টাকা মূল্যের পণ্য তৈরি হয়েছে। জিভিএর হিসাব বলবে, বৃদ্ধির হার শূন্য। কিন্তু ওই পণ্যের ওপর যদি এ বছর ২০ টাকা কর চাপে, তাহলে গত বছরের জিডিপি ১০০ টাকা হলেও এ বছর তা ১২০ টাকা হবে। সে ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ২০ শতাংশ।
এ ছাড়া বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও অন্যান্য লাভজনক ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৪ থেকে বেড়ে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে। নির্মাণ খাতে গত বছর একই সময়ে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ৬। এই প্রান্তিকে তার হার ১০ দশমিক ৫। হোটেল, পরিবহন ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার কমেছে; নেমে এসেছে ৪ শতাংশে। যদিও চলতি বছর প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের কাছাকাছিই থাকবে বলে আশাবাদী বিশেষজ্ঞেরা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের চার প্রান্তিকেই ভারতের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ শতাংশের বেশি। গত বছরের এপ্রিল-জুন থেকে শুরু করে প্রথম তিনটি প্রান্তিকে তা ছিল ৮ শতাংশের ওপরে। ফলে গত অর্থবছরে বিশ্বের বড় অর্থনীতিগুলোর মধ্যে দ্রুততম প্রবৃদ্ধির দেশ ছিল ভারত। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, চলতি বছর হয়ে যাওয়া নির্বাচনে জিতে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে মোদি সরকার বিপুল পরিমাণে অর্থ ব্যয় করেছে। কিন্তু নির্বাচনের পর সরকারি ব্যয় কমেছে। সে কারণেই প্রবৃদ্ধির গতি কমেছে। আশঙ্কা আছে, প্রবৃদ্ধির হার আরও কমে যেতে পারে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
২৮০ কোটি টাকার তেল-ডাল কিনবে সরকার

স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ও ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে দুটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এসব তেল ও ডাল কিনতে মোট ব্যয় হবে ২৮০ কোটি ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকা।
আজ মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়। এ সময় কমিটির সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল (৫০ কেজির বস্তায়) ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে চারটি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। তার মধ্যে তিনটি দরপ্রস্তাব কারিগরিভাবে ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশ অনুযায়ী রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান শেখ অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ এসব মসুর ডাল সরবরাহ করবে। প্রতি কেজি ৯২.৭৫ টাকা হিসেবে ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কিনতে ব্যয় হবে ৯২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে মসুর ডাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত ১ লাখ ৫২ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অপর এক প্রস্তাবে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহের জন্য মাত্র একটি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। দরপ্রস্তাবটি আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশ অনুযায়ী রেসপনসিভ একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান থাইল্যান্ডের লাইফ অ্যান্ড হেলথ (থাইল্যান্ড) এসব তেল সরবরাহ করবে। প্রতি লিটার ১৫৬.১৬ টাকা হিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কিনতে ব্যয় হবে ১৮৭ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার টাকা।
দরপত্রে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহের চাহিদা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহের আগ্রহ প্রকাশ করে।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ভোজ্য তেল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ২৮ কোটি লিটার। এ পর্যন্ত কেনা হয়েছে ১৫ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার লিটার।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
শুল্ক আরোপের ঘটনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ: অর্থ উপদেষ্টা

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘটনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। এতে উভয়পক্ষ লাভবান হবে। উইন উইন সিচুয়েশন।
আজ মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দরপত্র উন্মুক্ত করে দেয়ায় প্রতিযোগিতা বাড়ছে। আগের চেয়ে কম দামে চাল, ডালসহ অন্যান্য পণ্য কেনা যাচ্ছে।
এদিকে বৈঠক শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন করে আরও ১০০ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়ায় লাভবান হবে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক কমাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া চিঠির প্রেক্ষিতে পজেটিভ সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বণিজ্য উপদেষ্টা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশাধিকার ও পারস্পরিক শুল্ক ভারসাম্য তৈরির লক্ষ্যে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারকে একটি চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক কমানোর বিষয়ে পজেটিভ সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে বাণিজ্য ঘাড়তি কমিয়ে আনতে কাজ চলছে। বাণিজ্য বাড়াতে নানা বিষয় উল্লেখ করে পাঠানো চিঠির বিষয়ে তিনি বলেন, এই চিঠির বিষয়ে এখনও কোনও উত্তর মেলেনি।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ইউএসটিআরে চিঠি: যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আরও ১০০ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে বাংলাদেশ। সরকারে এমন উদ্যোগের কথা জানিয়ে সোমবার (০৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে চিঠি লিখেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা বাড়তি ৩৭ শতাংশ তিন মাসের জন্য স্থগিত চেয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যে অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা প্রত্যাহার করে। এরপর থেকে বাংলাদেশের সকল রপ্তানি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়। অথচ বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর গড়ে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। উল্লেখ্য, কাঁচা তুলা ও লোহার স্ক্র্যাপের ক্ষেত্রে আমাদের শুল্ক হার যথাক্রমে শূন্য ও এক শতাংশ।
চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় তুলা আমদানিকারক দেশ, যা দিয়ে তৈরি পোশাক শিল্প চালিত হয়। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের পণ্যগুলোর ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের শুল্ক তালিকায় ১৯০টি পণ্যের ওপর শুল্ক হার শূন্য এবং আরও ১০০টি পণ্যকে শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত করার চিন্তাভাবনা চলছে।
এতের আরও বলা হয়, ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) অনুযায়ী, উভয় দেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পথে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা যৌথভাবে দূর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ সব সময় গঠনমূলক সংলাপ ও সহযোগিতায় বিশ্বাসী। যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিতে যদি কোনো বাধা থাকে তা দূর করতে প্রস্তুত। এ বিষয়ে ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের বাণিজ্য শাখার সঙ্গে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার শুল্ক হার কমানো, সব ধরনের অশুল্ক বাধা দূর করা এবং পারস্পারিক বাণিজ্যকে আরও লাভজনক করতে বিভিন্ন সংস্কারমূলক উদ্যোগ নিয়েছে। এসব উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে: আমদানি নীতির হালনাগাদ, কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজীকরণ, মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ, ট্রেডমার্ক ও পেটেন্ট সুরক্ষা ইত্যাদি।
এছাড়া আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি চুক্তি, মার্কিন অটো নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সয়াবিন, গম, তুলা ইত্যাদি বড় আকারে আমদানির উদ্যোগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাতকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সেবামূলক খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
চিঠিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, তার বিশ্বাস এসব উদ্যোগ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ভারসাম্য আনতে এবং উভয় দেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হবে। প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং তাঁর সরকারসহ বাণিজ্য উপদেষ্টা ব্যক্তিগতভাবে ইউএসটিআর দপ্তরের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক আরও মজবুত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বেশির দেশের পণ্যে এমন শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। যে দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য–ঘাটতি বেশি, সেই দেশের ওপর বেশি হারে শুল্ক আরোপ হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। বাংলাদেশেও সরকারের উচ্চমহল ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ প্রধান উপদেষ্টা ও বাণিজ্য উপদেষ্টা এ বাড়তি শুল্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে দুই চিঠি দেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
শুল্কারোপ ইস্যুতে ট্রাম্পকে প্রধান উপদেষ্টার চিঠি

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ৩৭ শতাংশ শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত চেয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (৭ এপ্রিল) এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চিঠিতে বলা হয়, আমরা আপনাকে আশ্বস্ত করছি, আপনার বাণিজ্য এজেন্ডা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নে সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশে। আপনার ঘোষণার পর আমি আমার উচ্চ প্রতিনিধিকে ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠিয়েছি যাতে ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে আমেরিকান রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো যায়। আমরাই প্রথম দেশ যারা এ ধরনের ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছি।
‘আমরাই প্রথম দেশ যারা রপ্তানির ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য বহু বছরের চুক্তি করেছি। আমাদের কর্মকর্তারা তখন থেকেই বাংলাদেশে আমেরিকান রপ্তানি দ্রুত বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা চিহ্নিত করতে কাজ করছেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা আমাদের বিশদ কার্যক্রম নিয়ে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারে কাজ করবেন।’
চিঠিতে বলা হয়, আমাদের কর্মপরিকল্পনার মূল ফোকাস তুলা, গম, ভুট্টা, সয়াবিনসহ এ জাতীয় মার্কিন পণ্যগুলির আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো, যা মার্কিন কৃষকদের আয় ও জীবিকা নির্বাহে অবদান রাখবে। মার্কিন তুলার বাজারে গতি বাড়াতে আমরা বাংলাদেশে বন্ডেড ওয়্যারহাউজিং (গুদামজাতকরণ) সুবিধা চূড়ান্ত করছি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে।
ড. ইউনূস চিঠিতে বলেন, দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বেশিরভাগ মার্কিন রপ্তানিতে বাংলাদেশের শুল্ক রয়েছে। আমরা উপরোক্ত মার্কিন কৃষিপণ্য ও স্ক্র্যাপ ধাতুর ওপর শূন্য শুল্ক দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা শীর্ষ মার্কিন রপ্তানি পণ্য গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমানোর জন্য কাজ করছি।
‘আমরা এরই মধ্যে বাংলাদেশে স্টারলিংক চালু করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি সম্পন্ন করেছি। ইন্টারনেটের এই গতি বেসামরিক বিমান চলাচল এবং প্রতিরক্ষাসহ বেশ কয়েকটি উন্নত প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশে মার্কিন ব্যবসার জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করবে।’
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
৯ মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১০.৬৩ শতাংশ

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) বাংলাদেশের রপ্তানি খাত প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। এসময়ে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৭ দশমিক ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেখানে পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের ৩৩ দশমিক ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
দেশের রপ্তানি কর্মক্ষমতা নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে৷
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ২০২৫ সালের মার্চ মাসে ৪ দশমিক ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে, যা ২০২৪ সালের মার্চের ৩ দশমিক ৮১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।
প্রথাগতভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত তার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ এই নয় মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি খাত থেকে ৩০ দশমিক ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ বৃদ্ধির প্রতিফলন।
এর মধ্যে শুধু মার্চেই এই খাতে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের মার্চে ছিল ৩ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
তৈরি পোশাক ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি খাত সামগ্রিক রপ্তানি বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে বলে জানিয়েছে এনবিআর।