অর্থনীতি
তেল শোধনাগার প্রকল্প থেকে বাদ গেল এস আলম গ্রুপ

জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার নির্মাণের প্রকল্পে যুক্ত থাকছে না এস আলম গ্রুপ। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর এস আলম গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার। ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রামে এটি তৈরি হয়। প্রতিষ্ঠানটি বছরে ১৫ লাখ টন জ্বালানি তেল পরিশোধন করতে পারে। এটি পরিচালনা করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীনে থাকা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। নতুন প্রকল্পে ৩০ লাখ টন সক্ষমতার আরেকটি ইউনিট করার কথা। ‘ইনস্টলেশন অব ইআরএল-২’ নামের প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১২ সালে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বছরে প্রায় ২৪ কোটি ডলার সাশ্রয় হওয়ার কথা।
কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তি না করার বিষয়ে বিপিসি ও ইস্টার্ন রিফাইনারির কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে এ প্রকল্পে এস আলম গ্রুপ যুক্ত হয়েছিল। গ্রুপটি এখানে বিনিয়োগের নামে ৫১ শতাংশ মালিকানা নিতে চেয়েছিল। এতে কেউ রাজি ছিল না।
বিপিসি ৬০ শতাংশ মালিকানা সরকারের হাতে রাখার পক্ষে মত দেয়। পরে অংশীদারত্বের বিষয়টি চূড়ান্ত না করে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের সিদ্ধান্ত হয়। সমঝোতা স্মারকের খসড়াটি ভেটিংয়ের জন্য জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে। সরকার পরিবর্তন না হলে চুক্তিটি ঠেকানো যেত না বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। এস আলম গ্রুপের অংশীদারত্বে পরিশোধনাগার নির্মাণ নিয়ে সম্মত ছিল না জ্বালানি বিভাগও।
জ্বালানি বিভাগের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চুক্তি বাতিলের প্রস্তাব করা হয়। এখন নতুন করে আবার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিষয়ে করণীয় ঠিক করা হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. নূরুল আলম জানান, জ্বালানি তেলের নতুন পরিশোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পটি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে। এটি বাস্তবায়নে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে।
নতুন প্রকল্পে ৩০ লাখ টন সক্ষমতার ইউনিট করার কথা। প্রকল্পটি নিয়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়ে এস আলম গ্রুপের বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করে ওই জাতীয় দৈনিক। তবে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিকের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিপিসির কাছে পাঠানো চিঠিতে জ্বালানি বিভাগ বলেছিল, ইস্টার্ন রিফাইনারি ও এস আলম গ্রুপের যৌথ অংশীদারত্ব চুক্তির (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) ভিত্তিতে ইআরএল-২ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমঝোতা স্মারকের আগে বিপিসি, ইস্টার্ন রিফাইনারি ও এস আলম গ্রুপ মিলে সব বিষয়ে সমঝোতা করবে। সমঝোতা চূড়ান্ত হলে ইস্টার্ন রিফাইনারি ও এস আলম গ্রুপ মিলে স্পেশাল পারপাস ভেহিকেল (এসভিপি) কম্পানি গঠন করবে।
ওই চিঠিতে আরো বলা হয়েছিল, প্রস্তাব অনুসারে ইস্টার্ন রিফাইনারির বিদ্যমান পরিশোধনাগার এলাকায় ৩০ থেকে ৫০ লাখ টনের আরেকটি পরিশোধনাগার নির্মাণ করবে এস আলম গ্রুপ। এস আলম গ্রুপের প্রস্তাবিত সমঝোতা স্মারকের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি কমিটি গঠন করে দেয় বিপিসি।
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি যৌথভাবে ইআরএল-২ বাস্তবায়নের জন্য জ্বালানি বিভাগের কাছে প্রস্তাব পাঠায় এস আলম গ্রুপ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে ইতিমধ্যে জ্বালানি বিভাগে নির্দেশনা এসেছে বলেও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। এর সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের একটি খসড়া পাঠানো হয়।
বর্তমান ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধনাগারটি নির্মাণ করেছিল ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান টেকনিপ। নতুন পরিশোধনাগারটি তাদের মাধ্যমে করার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। ইআরএল-২ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ১৯ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা ছিল। যদিও উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) বলা হয়েছিল, পরিশোধনাগার চালুর পর ৪ বছর ৯ মাসের মধ্যে এ টাকা উঠে আসবে। তবে অর্থায়ন নিশ্চিত করা যায়নি। দেশে জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা না বাড়ায় বেশি পরিমাণে ডিজেল আমদানি করতে হয়। এতে প্রতিবছর বাড়তি ডলার খরচ করতে হচ্ছে সরকারকে। বছরে ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টন জ্বালানি তেল বিক্রি করে বিপিসি। এর মধ্যে ৪৬ লাখ টন ডিজেল। দেশের একমাত্র পরিশোধনাগারটি থেকে পাওয়া যায় ছয় লাখ টন ডিজেল, বাকিটা আমদানি করতে হয়।
বিপিসি ও ইস্টার্ন রিফাইনারির সূত্র বলছে, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৮০ লাখ টন ছাড়াতে পারে। আমদানি করা জ্বালানি তেলের মাধ্যমে এ চাহিদা পূরণ করতে হলে দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ তৈরি হবে। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা যাবে না। জ্বালানি নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। দেশে পরিশোধন করা হলে প্রতি লিটার ডিজেলে ১৫ টাকার বেশি সাশ্রয় করা সম্ভব। তাই ইআরএল-২ প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিপিসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, পেট্রলের চাহিদা দেশে পূরণ করা হয়। অকটেন ৪০ শতাংশ দেশে উৎপাদিত হয়, বাকিটা আমদানি করে আনা হয়। তবে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় পরিবহনে ব্যবহৃত ডিজেল ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ফার্নেস তেল। ইস্টার্ন রিফাইনারির নতুন পরিশোধনাগার হলে ডিজেলের বড় চাহিদা দেশে পূরণ করা যাবে এবং পেট্রল রপ্তানি করার সুযোগ তৈরি হবে।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম তামিম জানান, এস আলম গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করাটা অন্যায্য ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার এটি বাতিল করে ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে করা হলে এটি আরো বেশি সাশ্রয়ী হবে। দ্রুত পরিশোধনাগারটি নির্মাণ করা উচিত। সূত্র: প্রথমআলো।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বসবে আইএমএফ

স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। শিগগির এ বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে বসবে সংস্থাটি।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আইএমএফ কার্যালয়ে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএপের বসন্তকালীন বৈঠক শুরু হবে আগামী ২১ এপ্রিল। বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
বৈঠকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯০ দেশের গভর্নর, ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা যোগ দেবেন। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা, উন্নয়ন, নীতিমালা সংস্করণ, সমসাময়িক ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিয়ে প্রতি বছর এ বৈঠকের আয়োজন করে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, এ ধরনের চুক্তি তার বর্ধিত ঋণসুবিধা, বর্ধিত তহবিল সুবিধা, টেকসই এবং স্থায়িত্ব সুবিধা বাড়াবে। এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে বাংলাদেশ ও এর জনগণকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে আইএমএফ।
আইএমএফের একটি মিশন দেশের অর্থনৈতিক ও আর্থিক নীতি পর্যালোচনা করতে ৬ থেকে ১৭ এপ্রিল ঢাকা সফর করে। মিশনটি পর্যবেক্ষণ করেছে যে, বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে রয়েছে, অর্থবছরের প্রথমার্ধে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যা এক বছর আগের একই সময়ের ৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমেছে। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান, কঠোর নীতি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা দুর্বল হওয়ার কারণে এই মন্দা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে এক দশকের সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছেছিল মূল্যস্ফীতি, ২০২৫ সালের মার্চ মাসে ৯ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ থেকে ৬ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য আইএমএফ রাজস্ব একত্রকরণ, আরও নমনীয় বিনিময় হার, উন্নত কর সম্মতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের সুপারিশ করেছে।
আইএমএফ ২০২৩ সালে বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছিল, যার বিপরীতে তিন কিস্তিতে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
তেল, পেঁয়াজ ও সবজির দাম বাড়তি, কমেছে মুরগির

শীত মৌসুম শেষ হয়েছে আরও আগে। বাজারে আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন ধরনের গ্রীষ্মের সবজি। তবে এসব সবজির দাম তুলনামূলক বেশি। একই সঙ্গে তেল, চাল, পেঁয়াজের দামও বাড়তি।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর শেওড়াপাড়া, কাপ্তান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল, কারওয়ান বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিক্রেতারা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। দাম বেড়েছে দেশি পেঁয়াজেরও। গতকাল এক কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে। গত সপ্তাহের শুরুতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে গত মাসে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে পাঁচ থেকে আট টাকা বেড়েছিল। সেই দাম কমেনি; বরং দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আরও দুই থেকে তিন টাকা করে বেড়েছে।
এ ছাড়া গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৮৯ টাকা করা হয়েছে। পাম তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ১২ টাকা। তবে কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে আলু, ডিম ও মুরগিসহ কয়েকটি পণ্যের দাম।
বাজারে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কমেছে। গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় এবং সোনালি মুরগি ২২০ থেকে ২৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগে অর্থাৎ গত মাসের শেষে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা।
নতুন করে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। শেওড়াপাড়ায় কাঁচাবাজার করতে এসে মামুন নামে এক ক্রেতা বলেন, নতুন করে কারসাজি শুরু। সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। সরকাররে দেখা উচিত।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঝিঙা প্রতি কেজি মানভেদে ৮০ থেকে ৯০ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৭০ থেকে ৮০ টাকা। বেগুন মানভেদে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, পটোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, শজনে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, গাজর ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০ থেকে ১২০ টাকা, পেঁপে ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও দেশি শসা ৮০ টাকা। প্রতি পিস চালকুমড়া ৬০ টাকা। কাঁচা পেঁপে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
চট্টগ্রামে গ্রিন ডাটা সেন্টার নির্মাণের প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন

চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) জন্য গ্রিন ডাটা সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবটিতে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের হাটহাজারি উপজেলার ফটিকা মৌজায় বিটিসিএলের ১৪৯ দশমিক ৪৮ একর অব্যবহৃত জমির ওপর পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে একটি অত্যাধুনিক গ্রিন ডাটা সেন্টার স্থাপনের জন্য প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ সৃষ্টি, কর্মসংস্থানের সুযোগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে এবং নিজস্ব চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ডাটা স্টোরেজ ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমে বিটিসিএলের রাজস্ব আয় বাড়বে। এ অবস্থায় প্রকল্পটি পিপিপি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের নীতিগত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।
জানা যায়, নীতিগত অনুমোদনের পর ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পাদনের মাধ্যমে প্রস্তাবিত প্রকল্পের কারিগরি ও আর্থিক বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হবে এবং পিপিপি গাইডলাইন অনুযায়ী উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বেসরকারি অংশীদার নির্বাচন করা হবে। প্রকল্পে এডিবি কারিগরি সহায়তা এবং ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজরি সার্ভিস দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
জুনে ছাড় হতে পারে ঋণের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তি

আগামী ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বসন্তকালীন বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে ঋণ কিস্তির বিষয়ে একটি সমঝোতা হতে পারে জানিয়েছে আইএমএফের প্রতিনিধি দল। আর ঋণের অর্থ ছাড়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে আগামী জুনে আইএমএফের বোর্ড সভায়।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) আইএমএফ প্রতিনিধি দল ১২ দিন বাংলাদেশ সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে এমনই ইঙ্গিত দেন। আইএমএফের সফরের নেতৃত্বে ছিলেন সংস্থার কর্মকর্তা ক্রিস পাপাজর্জিও।
আইএমএফ বলছে, ২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৩.৩ শতাংশ, যেখানে আগের বছর একই সময়ে তা ছিল ৫.১ শতাংশ। ছাত্রজনতার আন্দোলনের কারণে অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, বিনিয়োগও কমেছে। এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতি এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, যা চলতি বছরের মার্চে কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে। তবে তা এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার (৫-৬ শতাংশ) অনেক বেশি।
ক্রিস পাপাজর্জিও বিবৃতিতে বলেন, বহিরাগত অর্থসংকট মোকাবিলা ও মূল্যস্ফীতি কমাতে এখনই নীতিগত কড়াকড়ি প্রয়োজন। কর ব্যবস্থায় সংস্কার এনে রাজস্ব বাড়ানো ও ভর্তুকি-ভিত্তিক করছাড় কমানো জরুরি।
বাংলাদেশের অর্থনীতি নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে আইএমএফ বলেছে, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে কর ব্যবস্থার সংস্কার, বিনিময় হারে নমনীয়তা এবং আর্থিক খাতে কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে। আর্থিক সংস্কারের বিষয় বাংলাদেশ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা সঠিক পথে রয়েছে বলে জানায় সংস্থাটি।
পাপাজর্জিও মনে করেন, বাংলাদেশের রিজার্ভের পাশাপাশি বিনিময় হারও স্থিতিশীল। রিজার্ভের পরিমাণ এমনকি তাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার আরও নমনীয় হলে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বাড়বে।
করব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আইএমএফ বলেছে, করনীতি ও প্রশাসনের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য থাকা উচিত। এ ছাড়া করছাড় কমাতে হবে, করনীতিকে সহজ করতে হবে এবং রাজস্ব বৃদ্ধির টেকসই পথ খুঁজে বের করতে হবে।
ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে আইনগত সংস্কার ও কার্যকর সম্পদ মান যাচাই এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও সুশাসন জোরদারের প্রতিও গুরুত্বারোপ করে আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার জোরালো অগ্রগতি দরকার।
২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় বাংলাদেশের। এরপর তিনটি কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। একই বছরের ডিসেম্বরে পেয়েছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর ২০২৪ এর জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে। তিন কিস্তিতে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পায় বাংলাদেশ। ঋণের অর্থছাড় বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার। চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ে দেরি হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও, সরকার আশা করছে আগামী জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাওয়া যাবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা থাকবে: অর্থ উপদেষ্টা

রপ্তানি বহুমুখীকরণ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার চেষ্টা থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা চাচ্ছি, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের যেন নরমাল ট্রেড হয়। বিশেষ করে জিএসপি (অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা) আবার চালু করা যায় কি না। কারণ জিএসপি আমেরিকার বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আগামী সপ্তাহে শুল্ক আরোপ নিয়ে আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে কী প্রস্তাব দেওয়া হবে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সেখানে আমাদের যাওয়ার প্রথম উদ্দেশ্য হলো বাজেট সাপোর্ট ও কতগুলো প্রজেক্ট ওরিয়েন্টেড বিষয়ে বিশ্বব্যাংক, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং ওপেক ফান্ড আছে, তাদের সঙ্গে আলাপ করব। অর্থায়ন নিয়ে সেখানে আমাদের বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দুটি চুক্তি হতে পারে এবং ওপেক ফান্ডের সঙ্গেও হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ওখানে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেশনের সঙ্গেও আলাপ করব। তারা কক্সবাজারে কাজ করছে। এ ছাড়া ইউএসএ ট্রেজারির সঙ্গে রূপপুর প্রকল্পে পেমেন্টের বিষয়ে আলোচনা হবে। এরইমধ্যে আমরা আলাপ করেছি। নিষেধাজ্ঞা আছে, তারপরও এ প্রকল্প নিয়ে বিশেষ কিছু করা যায় কি না সে বিষয়ে আলোচনা হবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা ইউএসএয়ের সঙ্গে যতটুকু সম্ভব সরকারের লেভেল, মাল্টিল্যাটারাল লেভেল বা বাইলেটারাল লেভেল ছাড়াও প্রাইভেট খাতের সঙ্গে যোগাযোগ করব। যেমন এনার্জি খাতের দু-একজন বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আলাপ হতে পারে। আমরা এনার্জি আনব কি না সে বিষয়ে। কারণ ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে তো আমাদের ইউএসএ থেকে আমদানির বিষয়ে একটু প্রণোদনা দিতে হবে। কারণ আমরা রপ্তানি যা করি তার থেকে কম আমদানি করি। এজন্য বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যদি তাদের কাছ থেকে এনার্জি, মেশিনারিজ আমদানি করি, আমদানি বেশি করলেই তো গ্যাপটা কমবে। আমরা বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে পারি, সেক্ষেত্রে আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ করে রপ্তানি করতে পারি। একই সঙ্গে তাদের দিক থেকেও যদি আমদানি করে, তবে গ্যাপ শূন্যের কোটায় আনা সম্ভব না।
ট্রাম্প প্রশাসন ৯০ দিনের জন্য শুল্ক আরোপ স্থগিত করেছে, এরপর আমরা ভালো কিছু প্রত্যাশা করতে পারি কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, নিশ্চয়ই আমরা আলাপ করব। তবে একসঙ্গে তো সব কিছু আসবে না। ইউএসএয়ের বাণিজ্য প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে আসছে। তারাও এসব বিষয়ে আলাপ করবেন। সব মিলিয়ে অর্থায়নসহ সবকিছু আমি আসার পর জানতে পারবেন।
কাফি