অর্থনীতি
শিগগিরই ব্যাংকিং কমিশন গঠন, ফিরবে আর্থিকখাতে স্থিতিশীলতা: গভর্নর
শিগগিরই একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হবে, যার ভিত্তিতে আর্থিকখাতে স্থিতিশীলতা আনায়নে প্রয়োজনীয় রোডম্যাপ প্রণয়ন করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
বুধবার (২৭ আগস্ট) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদের নেতৃত্বে পরিচালনা পর্ষদ গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিদ্যমান মূল্যস্ফীতি আগামী ৬-৭ মাসের মধ্যে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হলে, নীতি সুদ হার এবং ব্যাংক ঋণের সুদের হার হ্রাসসহ অন্যান্য বিষয়সমূহে ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হবে। ব্যাংকের আমানত সংগ্রহের প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে উন্নয়ন একান্ত অপরিহার্য।
গভর্নর আরো বলেন, শিগগিরই একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হবে, যার ভিত্তিতে আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনায়নে প্রয়োজনীয় রোডম্যাপ প্রণয়ন করবে। এছাড়াও তিনি নতুন বিনিয়োগকারীদের অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে বিনিয়োগ করার পরামর্শ প্রদান করেন।
এসএমইদের ক্রেডিট গ্যারান্টি ফেসিলিটিগুলোকে আরো সচল করার ওপর গভর্নর জোরারোপ করেন। এক্ষেত্রে বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে সরকারি ঋণ গ্রহণের হার সীমিতকরণ করা হবে।
তিনি ট্রেড ক্রেডিট পাওয়ার জন্য উদ্যেক্তাদের পেমেন্ট হিস্ট্রির উন্নয়ন এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
সাক্ষাৎকালে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, সুদের হার বৃদ্ধি পেলে বিশেষ করে এসএমইদের জন্য ঋণ প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এসএমইদের অর্থায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশকিছু স্কীম রয়েছে, যেগুলোর কার্যক্রম বেগবান করতে পারলে এসএমইদের অর্থায়ন প্রক্রিয়া আরো সহজতর হবে।
এছাড়াও সভায় বৈদেশিক ট্রেড ক্রেডিট প্রক্রিয়া ও বৈদেশিক ঋণ প্রক্রিয়া সহজতর করা, ব্যাংকসমূহে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি। সর্বোপরি এসএমইদের ঋণ প্রাপ্তিতে বিদম্যান সুদের চাপ কীভাবে আরো হ্রাস করা যায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান ঢাকা চেম্বার সভাপতি।
নীতি সুদহার বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতিসুদহার বাড়ানো একটি প্রচলিত প্রক্রিয়া, তবে এটি সাময়িক সময়ের জন্য প্রযোজ্য।
আশরাফ আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত থাকুক এটা আমাদেরও প্রত্যাশা, কারণ মূল্যস্ফীতির ফলে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবসায়িদের কর্মকাণ্ড পরিচালন ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া ব্যাংকের মন্দঋণের পরিমাণ হ্রাস করা সম্ভব হলে নীতিসুদ হারও হ্রাস পাবে বলে মন্তব্য করে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, এসএমই খাতের বিকাশের লক্ষ্যে সুদের হার বৃদ্ধির চাপ মোকাবেলা এবং ঋণের প্রবাহ বজায়ে রাখায় সহায়তা প্রয়োজন।
এ সময়ে ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী, সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার এবং ড. মো. হাবিবুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দেশে পাঁচ দিনে প্রবাসী আয় ৫০৯৬ কোটি টাকা
দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেড়েছে। চলতি অক্টোবরের প্রথম পাঁচ দিনে বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় এসেছে ৪২ কোটি ৪৭ লাখ ২০ হাজার ডলার। প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে দেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ পাঁচ হাজার ৯৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
রোববার (০৬ অক্টোবর) এ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তথ্য অনুযায়ী, মাসের প্রথম পাঁচ দিনের প্রতিদিন গড়ে প্রবাসী আয় এসেছে আট কোটি ৪৯ লাখ ৪৪ হাজার ডলার, যা আগের মাস সেপ্টেম্বর এবং আগের বছরের অক্টোবরের তুলনায় বেশি।
আগের মাস সেপ্টেম্বরে প্রতিদিন প্রবাসী আয় আসে আট কোটি এক লাখ ৫৯ হাজার ৬৬৬ ডলার। আর আগের বছরের অক্টোবরে প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছিল ছয় কোটি ৫৭ লাখ ১৪ হাজার ৩৩৩ ডলার।
সেই হিসাবে চলতি বছরের অক্টোবরে প্রবাসী আয়ের শুভ সূচনা হলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মাসের প্রথম পাঁচ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসে ১০ কোটি ৮০ লাখ ২০ হাজার ডলার।
কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে এক কোটি ৫০ লাখ ২০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩০ কোটি ২ লাখ ডলার। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
কাঁচা মরিচের কেজি ফের ৪০০ টাকা!
সপ্তাহজুড়ে টানা বৃষ্টিতে কাঁচা মরিচের দাম ফের বেড়েছে। বর্তমানে বাজারভেদে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি দরে। অথচ সপ্তাহখানেক আগেও বাজারে ১৮০-২২০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ কেনা যেত। শুধু মরিচ নয়, বাজারে ডিম-মুরগিসহ অন্যান্য সবজিরও দাম বেড়েছে।
আজ রোববার রাজধানীর শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউনহল বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
বর্তমানে বাজারে আমদানি করা ও দেশীয়—উভয় ধরনের কাঁচা মরিচই বিক্রি হচ্ছে। গরম, বন্যা বা অতিবৃষ্টির কারণে গত তিন-চার মাসে বাজারে বেশ কয়েকবার কাঁচা মরিচের দাম ওঠানামা করেছে। তবে বেশির ভাগ সময় ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে মরিচ বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহেও ১৮০-২২০ টাকা দরে মরিচ বিক্রি হয়েছে। এরপর ক্রমাগত দাম বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গতকাল বাজারে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে ৫০০ টাকায় পৌঁছায়। যদিও আজ কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কমেছে; কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকা দরে।
বাজারে অন্যান্য সবজির দামও বেড়েছে। বেশির ভাগ সবজি ৮০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে বরবটি কেনা যেত ৮০-১২০ টাকা কেজি দরে। আজ বাজারভেদে প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হয়েছে ১৪০-১৫০ টাকায়। বেগুনের দাম কেজিপ্রতি ৬০ টাকা বেড়ে ১৬০-১৮০ টাকা হয়েছে। টমেটো, পটোল, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, করলা, ঢ্যাঁড়স, লাউসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে।
বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি ডিম এখনো চড়া। আজ বড় বাজারগুলোয় এক ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৭০-১৭৫ টাকা দরে। পাড়া-মহল্লায় এই দাম ১৮০ টাকা বা তারও বেশি। সেই হিসাবে প্রতি পিছ ডিমের দাম হয় ১৫ টাকা। ফার্মের মুরগির সাদা ডিমের দামও একই রকম।
বাজারে ব্রয়লার মুরগির দামও দ্বিশতক ছুঁয়েছে। আজ প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা দরে। সাত দিন আগেও এ দাম ১০-২০ টাকা কম ছিল। সোনালি মুরগি কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ২৬০-২৮০ টাকা দরে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ডিম-মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ২৮০ কোটি টাকা লোপাট
বাজারে ডিম এবং মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে গত ২০ দিনে ২৮০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।
শনিবার (৫ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন অভিযোগ তুলেছেন সংগঠনটির সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার।
অভিযোগ করে বলা হয়, বাজারে প্রতিটি ডিমে ২ টাকা করে বেশি নেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন ৪ কোটি ডিমে ৮ কোটি টাকা বেশি লাভ করা হচ্ছে। এভাবে গত ২০ দিনে ১৬০ কোটি টাকা ভোক্তাদের পকেট থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। আবার প্রতিটি মুরগির বাচ্চা গত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা। কিন্ত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে একই বাচ্চা বিক্রয় হচ্ছে ৪০-৫৬ টাকায়। আর ডিমের মুরগির বাচ্চা বিক্রয় হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। প্রতিদিন সব ধরনের ৩০ লাখ মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয়। প্রতিটি বাচ্চায় যদি ২০ টাকা বেশি ধরা হয়, প্রতিদিন ৬ কোটি টাকা বেশি আয় হয়। ফলে গত ২০ দিনে প্রান্তিক খামারিদের সঙ্গে প্রতারণা করে কোম্পানিগুলো ১২০ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে। সব মিলিয়ে ২৮০ কোটি টাকা লুট করা হয়েছে গত ২০ দিনে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রান্তিক খামারি ডিম এবং মুরগি উৎপাদন করে, কিন্তু দাম নির্ধারণ করতে পারে না। দাম নির্ধারণ করে করপোরেট গ্রুপ ও তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি। তাদের সুবিধামতো যে দাম নির্ধারণ করে সে দামে প্রান্তিক খামারিদের ডিম, মুরগি বিক্রয় করতে হয়। যখন দাম বাড়িয়ে দেয় তখন খামারি ন্যায্য মূল্য পায়। যখন কমিয়ে দেয় তখন উৎপাদন খরচ থেকে কম দামে বিক্রয় করে লস হওয়ার কারণে উৎপাদন থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। ডিম-মুরগির বাজারে অস্থিরতার কারণ করপোরেট গ্রুপ ও তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ীদের আধিপত্য বিস্তার করে। এরা বারবার বাজারে সিন্ডিকেট করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিলেও তাদের শাস্তি না হওয়ায় বাজারে অস্থিরতা বেড়েই চলছে।
এতে আরও বলা হয়, করপোরেট গ্রুপ ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোর সিন্ডিকেট শক্তিশালী হওয়ার কারণে বারবার একই পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। ফিড বাচ্চার দাম নির্ধারণ না করে, বিগত দিনের সিন্ডিকেটকারীদের সঙ্গে নিয়ে ডিম-মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় করপোরেট গ্রুপদের সিন্ডিকেট করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে পুরোনো সিন্ডিকেট মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এতে বাজারে অস্থিরতা হবে এটাই স্বাভাবিক বিষয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ডিম-মুরগির দাম নির্ধারণ করা হয়। যেখানে বলা হয়, উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিম ১০.৫৮ টাকায় বিক্রয় করতে পারবে, যা ভোক্তা পর্যায়ে ১২ টাকায় বিক্রয় হওয়ার কথা। কিন্তু যাদের সঙ্গে নিয়ে দাম নির্ধারণ করা হলো তারা কেউ সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রয় করেননি। প্রতিটি ডিম উৎপাদক পর্যায়ে তারা প্রতারণার মাধ্যমে প্রতিটি ডিম বিক্রয় করেছেন ১১.৮০ থেকে ১২.৫০ টাকা পর্যন্ত, যা খুচরা বাজারে বিক্রয় হচ্ছে ১৪-১৫ টাকায়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
আর্থিক খাতে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না: অর্থ উপদেষ্টা
স্বচ্ছতা না থাকলে অনেকেই পার পেয়ে যায়। তবে একটা মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করব আর্থিক খাতে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
শনিবার (৫ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে ১১তম আইসিএসবি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বিগত সময়ে অনেক অপরাধ হয়েছে। আমরা কিছুদিনের জন্য এসেছি। সব কাজ করতে পারবো না। তবে আমরা নিশ্চিত করবো যাতে সবাই শাস্তি পায়। আমরা একটা ম্যাসেজ দিতে চেষ্টা করছি, অন্যায় করে কেউ কিন্তু পার পাবেন না। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আসবেন।
বাংলাদেশের পুরো সুশাসন নিয়েই আমরা চিন্তিত জানিয়ে এই উপদেষ্টা বলেন, সরকারি কোনো অর্থই যেন অপচয় না হয়। অনেক অর্থের অপচয় হয়েছে, জবাবদিহিতা ছিল না। গত সময়ে অনেকেই অনেক কিছু করেছে। সবাইকে হিসাব দিতে হবে। পার্থিব ও পরকালে দুই জায়গায় হিসাব দিতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে বড় রোল প্লে করে বেসরকারি খাত। কোম্পানির উপর যদি আস্থা না থাকে তাহলে বিদেশি বিনিয়োগের তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। এক্ষেত্রে আপনাদের ভূমিকা অনেক। হিসাব প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত থাকেন তারা আসলে থার্ড আই হিসেবে কাজ করেন। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য কোম্পানি সেক্রেটারি বা অ্যাকাউন্টেন্টদের অনেক ভূমিকা রয়েছে।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, আমাদের যে জনশক্তি আছে তাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনীতি দ্রুত সময়ে ঘুরে দাঁড়াবে। এরই মধ্যে অনেক সম্পদ নষ্ট করা হয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে অনেক সম্পদ লুট করা হয়েছে। ব্যক্তিগত হোক আর দেশের সম্পদ হোক, অপচয় বা দুর্নীতি করা যাবে না। যেসব দুর্নীতি হয়েছে সেগুলো খুঁজে বের করতে হবে। এতদিন কোনো জবাবদিহি ছিল না। অনেক অনিয়ম হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। কারণ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বেশির ভাগই হয় বেসরকারি খাতে। আমাদের আস্থা ধরে রাখতে হবে। ব্যাংকিং খাতে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা এর নেতিবাচক ফলাফল লক্ষ্য করছি। বিনিয়োগের পরিবেশ ধরে রাখতে হবে। যদি আস্থা না থাকে তাহলে বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আসবে না।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, বাণিজ্য সচিব সেলিম উদ্দিন এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন করপোরেট গভর্ন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান এবং আইসিএসবি-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এম নুরুল আলম প্রমুখ।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ব্যাংক নোট থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে শেখ মুজিবের ছবি
দেশের সব ধরনের ব্যাংক নোট থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দেওয়া হতে পারে বলে বাংলাদেশে ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে। সব ধরনের ব্যাংক নোটের নতুন ডিজাইন চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, নতুন নকশার ব্যাংক নোটে শেখ মুজিবের ছবি বাদ যেতে পারে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর অর্থবিভাগের ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের উপসচিব এলিশ শরমিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংককে নতুন নোটের জন্য নির্দিষ্ট নকশার প্রস্তাব পাঠাতে অনুরোধ করেছে।
অনুরোধে নতুন মুদ্রার নকশা প্রবর্তনের তত্ত্বাবধানকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা ও ডিজাইন অ্যাডভাইজরি কমিটির সুপারিশ চাওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, সরকার ব্যাংক নোটে শেখ মুজিবের ছবি রাখতে চাইলে নতুন ডিজাইনের নোট ছাপানোর কোনো প্রয়োজন হতো না।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘নতুন ডিজাইন ও বৈশিষ্ট্যের নোট প্রচলনে কী ধরনের ডিজাইন করা সমীচীন হবে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা ও ডিজাইন অ্যাডভাইজরি কমিটির সুপারিশ গ্রহণপূর্বক সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্থবিভাগে প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’
বর্তমানে বাংলাদেশের ২ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা পর্যন্ত সব কাগুজে নোটে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি রয়েছে। কোনো কোনো নোটের দুপাশে শেখ মুজিবের ছবি রয়েছে। এছাড়া ধাতব মুদ্রাগুলোতেও তার ছবি রয়েছে।
নতুন ডিজাইনের এ প্রবর্তনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে প্রতিষ্ঠিত মুদ্রামান থেকে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার মাত্র দুদিন আগে ৫০০ ও ১০০০ টাকার ব্যাংক নোটে শেখ মুজিবের ছবি আরও বেশি স্পষ্ট করে ছাপাতে নতুন দুটি ডিজাইন এবং ২০ টাকা ও ১০০ টাকার নোটের মুদ্রণ পদ্ধতি পরিবর্তন করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়।
হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাওয়ার পর বিভিন্ন নোটের নতুন ডিজাইন করে সরকারের কাছে তা জমা দিতে ছয় মাস সময় চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, মুদ্রা ও ডিজাইন অ্যাডভাইজরি কমিটির নির্দেশিকা অনুসারে প্রতিটি নোটের জন্য চারটি ভিন্ন ডিজাইন তৈরি করা হবে।
পরে এ কমিটির অনুমোদন নিয়ে ডিজাইনগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হবে। তবে নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে আসতে ২০ থেকে ২২ মাস সময় লাগতে পারে বলে জানান এক কর্মকর্তা।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শেখ মুজিবের ছবি-সম্বলিত নোট পরিবর্তন করা হবে কি না — সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
নকশার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যেই নতুন নোটের জন্য সুপারিশ সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
শেখ হাসিনা সরকারের সময় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিটি নোটের চারটি ডিজাইনের মধ্যে অন্তত একটি ডিজাইনে শেখ মুজিবের ছবি যুক্ত করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের ছবিযুক্ত নোটগুলো অনুমোদন করেছিলেন।
নতুন নোটের অনুমোদন প্রক্রিয়া একই পদ্ধতিতে হবে। চারটি নকশা তৈরি করার পর বাংলাদেশ ব্যাংক এটির ডেপুটি গভর্নর-১-এর নেতৃত্বে মুদ্রা ও ডিজাইন অ্যাডভাইজরি কমিটির কাছে নকশাগুলো জমা দেবে।
এ কমিটিতে উচ্চপদস্থ ব্যক্তি এবং চিত্রশিল্পীরা থাকেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার আগে নকশাগুলো তারা পর্যালোচনা করবেন।
মন্ত্রণালয় তারপর নকশাগুলো পর্যালোচনা করবে এবং অনুমোদন পাওয়ার পর একটি আন্তর্জাতিক দরপত্র বা সরাসরি দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে কোনো বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে নোটগুলোর জন্য নতুন প্লেট তৈরি করা হবে।
প্লেট তৈরির প্রযুক্তিগত এবং নিরাপত্তা জটিলতার কারণে নতুন নোট প্রবর্তনের পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হতে প্রায় দুই বছর সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নতুন নোটের ছাপার তদারকি করবে সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেড। এটির উচ্চ মূল্যমান নোটের (১০০, ২০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা) বর্তমান কাগজের মজুত ও আমদানিতব্য কাগজ দ্বারা আনুমানিক ১৩ মাস মুদ্রণ কার্যক্রম চলমান রাখা যাবে।
এর ফলে নতুন ডিজাইন চূড়ান্ত এবং প্রস্তুত করার সময় বর্তমান ডিজাইনের নোটগুলো বাজারে প্রচলিত থাকবে।
১৮ সেপ্টেম্বর অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদারের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ‘অনুমোদিত ১০০০, ৫০০, ১০০ ও ২০ টাকার নোটের প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়নের কার্যাবলী প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে [হাসিনা সরকারের পতন] উক্ত অনুমোদন মোতাবেক বাস্তবায়নাধীন কার্যক্রম চলমান রাখা হবে কি না, সে বিষয়ে আপনাদের মতামত প্রদানের জন্য অনুরোধ জানানো হলো।’
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এটি নতুন সরকারি নির্দেশিকাগুলোর ওপর ভিত্তি করে নকশার কাজ চালিয়ে যাবে, যার মধ্যে নোট থেকে শেখ মুজিবের ছবি সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
ব্যাংক নোটের নতুন এ সিরিজ অনুমোদিত হলে, বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চিত করবে যে, কাগজের বর্তমান স্টক এবং উচ্চ মূল্যমান নোটগুলো পর্যায়ক্রমে পরবর্তী কয়েক বছরে নতুন ডিজাইন করা নোটগুলির সঙ্গে যেন প্রতিস্থাপন করা হয়।
ঐতিহাসিকভাবে, বাংলাদেশি মুদ্রায় শেখ মুজিবের ছবি একটি বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্য। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো ১, ৫, ১০ ও ১০০ টাকার নোট বাজারে ছাড়া হয়। এসব নোটের প্রত্যেকটিতেই শেখ মুজিবের ছবি ছিল।
তবে পরবর্তী বিভিন্ন সরকারের সময়ে নতুন নতুন নোট প্রচলনের পাশাপাশি পুরোনো নোটগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে শেখ মুজিবের প্রতিকৃতি সম্বলিত ১০ ও ৫০০ টাকার নোট ছাপে। আর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ মুজিবের ছবিযুক্ত ১, ২ ও ৫ টাকার কয়েন চালু করে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।
এরপর সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সব কাগুজে নোটেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ছাপানোর প্রক্রিয়া শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে ২০১১ সালের ১১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত ২, ৫, ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোট চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কাফি