অর্থনীতি
গভর্নরের দায়িত্ব পেলেন নুরুন নাহার

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অবর্তমানে দায়িত্ব পালন করবেন ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব আফসানা বিলকিস স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের ২ জুলাই তিনি ডেপুটি গভর্নরের দায়িত্ব নেন। ডেপুটি গভর্নর পদে যোগ দেওয়ার আগে নূরুন নাহার বাংলাদেশ ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তিনি ১৯৮৯ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন। ২০১৯ সালে তিনি নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ডেপুটি গভর্নর হিসেবে নিয়োগের আগে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ, ক্রেডিট গ্যারান্টি ডিপার্টমেন্ট ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। চাকরি জীবনে তিনি ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ, ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট, ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স ডিপার্টমেন্ট, ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমি, হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট, পূর্বতন বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ বিভাগ ও ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম ও রাজশাহী অফিসে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
ঈদযাত্রায় প্রতি মিনিটে যমুনা সেতু পাড়ি দিয়েছে ২৯ গাড়ি

যমুনা সেতুতে ঈদের আগের তিন দিন এক লাখ ২৫ হাজার ২৭৮টি গাড়ি পারাপার হয়েছে। এসব যানবাহন থেকে টোল আদায় হয়েছে ৮ কোটি ৮৫ লাখ ৪৪ হাজার ৩৫০ টাকা। এই তিনদিন প্রতি মিনিটে গড়ে ২৯টি গাড়ি সেতু পারাপার হয়েছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, প্রত্যেক বছর ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর থেকেই সেতুতে গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। তবে এবার কোনো প্রকার যানজট ছাড়াই উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ঘরে ফিরেছেন।
যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদের শেষ তিন দিনের বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে পরদিন শুক্রবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪৮ হাজার ৩৩৫টি গাড়ি সেতু পারাপার হয়। এতে টোল আদায় হয় তিন কোটি ৩৮ লাখ ৫২ হাজার ৯০০ টাকা। এর মধ্যে পূর্ব প্রান্ত থেকে উত্তরবঙ্গের দিকে ৩০ হাজার ৯৯৮টি গাড়ি এবং বিপরীত দিক থেকে ১৭ হাজার ৯৩৭টি গাড়ি পার হয়েছে। পরের দিন শুক্রবার রাত ১২টা থেকে শনিবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৪৭৮টি গাড়ি পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে তিন কোটি ২১ লাখ ৬৪ হাজার ৬০০ টাকা।
একইসঙ্গে ঈদের আগের দিন শনিবার রাত ১২টা থেকে রোববার রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত সেতু দিয়ে গাড়ি পারাপার হয়েছে ৩১ হাজার ৪৬৫টি। এর মধ্যে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনে ২১ হাজার ১২৬ ও উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকামুখী লেনে ১০ হাজার ৩৩৯ গাড়ি পারাপার হয়। এ থেকে টোল আদায় হয়েছে দুই কোটি ২৫ লাখ ২৬ হাজার ৮৫০ টাকা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ইতিহাসে প্রথমবার স্বর্ণের দাম ৩১শ ডলার ছাড়ালো

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ১০০ মার্কিন ডলারের ওপর উঠেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুসারে, সোমবার (৩১ মার্চ) বিশ্ববাজারে স্পট সোনার দাম প্রতি আউন্স রেকর্ড ৩ হাজার ১০৬ দশমিক ৫০ ডলারে পৌঁছেছে।
খবরে বলা হয়েছে, এ বছর সোনার দাম ১৮ শতাংশের বেশি বেড়েছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে সোনার দাম প্রথমবারের মতো তিন হাজার ডলার ছাড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি হলো অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং মুদ্রাস্ফীতি সম্পর্কে বাড়তি উদ্বেগের প্রতিফলন।
ওসিবিসির বিশ্লেষকরা বলেছেন, বর্তমানে, ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগ এবং শুল্কের অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে সোনার নিরাপদ আশ্রয় এবং মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে আবেদন আরও শক্তিশালী হয়েছে। চলমান বৈশ্বিক বাণিজ্য সংঘাত এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে সোনার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমরা ইতিবাচক রয়েছি।
গোল্ডম্যান স্যাশ, ব্যাংক অব আমেরিকা এবং ইউবিএস এ মাসে সোনার দামের পূর্বাভাস বাড়িয়েছে। গোল্ডম্যান স্যাশ পূর্বাভাস দিয়েছে, সোনার দাম বছরের শেষ নাগাদ ৩ হাজার ৩০০ ডলারে পৌঁছাবে। তাদের আগের পূর্বাভাসে এর পরিমাণ ৩ হাজার ১০০ ডলার বলা হয়েছিল।
এছাড়া, ব্যাংক অব আমেরিকা ২০২৫ সালে সোনার দাম ৩ হাজার ৬৩ ডলার প্রতি আউন্স এবং ২০২৬ সালে ৩ হাজার ৩৫০ ডলারে পৌঁছানোর আশা করছে, যা তাদের আগের পূর্বাভাসে যথাক্রমে ২ হাজার ৭৫০ ডলার এবং ২ হাজার ৬২৫ ডলার ছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পকে রক্ষা এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে নতুন শুল্ক পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে মধ্যে আমদানি করা গাড়ি এবং অটো যন্ত্রাংশে ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং চীন থেকে সব ধরনের আমদানিতে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি আগামী ২ এপ্রিল নতুন পারস্পরিক শুল্ক ঘোষণা করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন।
মেরেক্সের পরামর্শক এডওয়ার্ড মেইর বলেন, শুল্কের বিষয়গুলো সোনার দামকে আরও বাড়াতে থাকবে, যতক্ষণ না টিট-ফর-ট্যাট অভিযানের কোনো সমাপ্তি আসে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
যমুনা সেতুতে একদিনে টোল আদায় দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা

ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ফাঁকা রাজধানী ঢাকা। নাড়ির টানে ঘরে ফিরেছে মানুষ। তবে ঈদের আগের দিনে উত্তরবঙ্গসহ কয়েকটি রুটের ঘরমুখো এসব যাত্রীদের বহন করা বিভিন্ন গাড়ি পারি দিয়েছে যমুনা সেতু। গত ২৪ ঘণ্টায় এ সেতুর ওপর দিয়ে ৩১ হাজার ৪৬৫ টি গাড়ি চলাচল করেছে। এতে উভয় পাশে টোল আদায় হয়েছে দুই কোটি ২৫ লাখ ২৬ হাজার ৮৫০ টাকা।
সোমবার (৩১ মার্চ) ভোরে যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, শনিবার রাত ১২টা থেকে রোববার রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত যমুনা সেতু দিয়ে গাড়ি পারাপার হয়েছে ৩১ হাজার ৪৬৫ টি। এর মধ্যে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনে ২১ হাজার ১২৬ ও উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকামুখী লেনে ১০ হাজার ৩৩৯ গাড়ি চলাচল করেছে।
এরমধ্যে পূর্ব টোলপ্লাজায় এক কোটি ৪৬ লাখ ৮৮ হাজার ৬০০ টাকা ও পশ্চিম টোলপ্লাজায় আদায় হয়েছে ৭৮ লাখ ৩৮ হাজার ২৫০ টাকা।
তিনি আরও জানান গত ২৪ ঘণ্টার শুরুর দিকে গাড়ির চাপ থাকলেও পরে আস্তে আস্তে তা কমে যায়। আজ এ সংখ্যা আরও কমবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
৩০ চীনা কোম্পানির ১০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরে দেশটির সরকার এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ, অনুদান ও বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশ পেয়েছে। এর মধ্যে ১০০ কোটি ডলারের বেশি হবে বিনিয়োগ।
রবিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, চীনের ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রতিশ্রুতির কথা আমরা বলছি। এই অর্থ আগের সব বড় বড় অংকের থেকে একটি বড় কারণে ভিন্ন। কারণ আগে যে বড় অংকের অর্থ নিশ্চিত করে আসা হয়েছে সেগুলো ছিল ঋণ। ঋণের একটা ইতিবাচক দিক হলো, নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাকা চলে আসে, নেতিবাচক হলো, এই টাকা আমাদের ফেরত দিতে হয়। সুতরাং আমাদের অর্থনীতিতে এই টাকা ঢোকে এবং সুদসহ বের হয়ে যায়। সেই জায়গায় যদি বিনিয়োগ আসে, সেটি আমাদের অর্থনীতিতে থেকে যায়। এই টাকা কখনো এই দেশ থেকে যাবে না। এই বিনিয়োগের ফলে যে পরিমাণ কর্মসংস্থান হবে সেটা ঋণ থেকে কখনোই হয় না।
আশিক চৌধুরী বলেন, এবার এই ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার থেকে ১ বিলিয়নের বেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি। এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ৩০টি চীনা কম্পানি। এটি মূলত চট্টগ্রামের আনোয়ারাতে চীনা শিল্প ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের ওপর নির্ভর করে। প্রায় ৮০০ একর জমির ওপর এই শিল্পাঞ্চল তৈরির কাজ চলছে। এই জোনের কাজ অনেক আগেই শুরু হয়েছিল, কিন্তু ২০২২ সালের পর এটা নিয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত তিন মাসে আমরা এখানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি এবং অনেকগুলো বড় সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে। তাদের সঙ্গে একটা নেগসিয়েশনে এসেছে, যে কারণে বিনিয়োগকারীরা এখন খুবই কনফিডেন্ট অনুভব করছেন যে, এই বছরের কোনো এক সময় আমরা নির্মাণকাজ শুরু করব। জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, এখন আমরা নির্মাণ কাজে যাব। সেটার ওপর নির্ভর করেই কিন্তু চীনা কম্পানি আমাদের এখানে আসার চিন্তা করছে।
এবারের চীন সফরে স্বাস্থ্য সেবা একটা বড় বিষয় ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১২ শতাংশের মতো এসেছে অনুদান, যা প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলারের মতো। এর মধ্যে ১৫০ মিলিয়ন ডলার কারিগরি সহায়তার জন্য এবং ১০০ মিলিয়ন হাসপাতাল তৈরির জন্য। চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে বাংলাদেশে অত্যাধুনিক হাসপাতাল তৈরি করা এবং বাংলাদেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য যে যাত্রা ভারত-থাইল্যান্ডের দিকে হয়, আমরা চেষ্টা করছি, যাতে চীন থেকে সেই সাপোর্ট পাওয়া যায়।
তিনি আরো বলেন, চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিষয়টি কিন্তু আমাদের জন্য বড় প্রভাব রেখেছে। আমরা অনেক দিন ধরে চীনের বিনিয়োগের কথা বলছি। চীনা বিনিয়োগের যে গুরুত্ব সেটা আমরা আবারও গিয়ে অনুধাবন করেছি। আমরা এই সুযোগ আসলে খুব কম গ্রহণ করেছি। চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা এখনো আছে কিন্তু খুব স্বল্প পরিসরে আছে। আমাদের আরো বেশি হারে চীনে যেতে হবে। চীন এমন একটি মহাদেশ, যেখান থেকে আমাদের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ আসা সম্ভব। লাস্ট আগস্ট থেকে এই মার্চ পর্যন্ত ৩৪টি চীনা কম্পানি বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ-বেপজাতে। এখানে আর্থিক প্রতিশ্রুতি প্রায় ১৬০ মিলিয়ন ডলারের মতো।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক বিশেষ দূত ড. খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
পানি ব্যবস্থাপনা-শিল্পায়নে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি চীনের

পানি ব্যবস্থাপনা ও শিল্পায়নে বাংলাদেশকে চীন সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমান। তিস্তা প্রকল্পের ব্যাপারে চীন ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বলেও তিনি জানান।
রবিবার (৩০ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর নিয়ে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
ড. খলিলুর রহমান বলেন, প্রধান উপদেষ্টার এ সাপোর্টটি একটা ঐতিহাসিক সফর ছিল বিভিন্ন কারণে ঐতিহাসিক সফল। ৫ দশক ধরে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে উন্নতি হয়েছে। তারই একপর্যায়ে ৫০তম বর্ষে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা চীন সফর করলেন। তাদের সঙ্গে বৈঠকগুলো ফলপ্রসূ হয়েছে। আরও একটি কারণে এ সফরকে আমি ফলপ্রসূ বলবো আগামী কয়েক দশকে বাংলাদেশ এবং চীনের বিপাক্ষিক সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী বন্ধনে ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন আমাদের এ দুই দেশের শীর্ষ দুই নেতা। এ বিষয়ে আমি দুটো স্তম্ভের কথা বলব। প্রথম স্তম্ভ হচ্ছে পানি সম্পদ, দ্বিতীয়টি হচ্ছে শিল্পায়ন। আমরা নদীমাতৃক দেশ, পানিসম্পদ এবং আমাদের জীবন যাত্রা বহুল অংশে পানির ওপর নির্ভরশীল।
তিনি আরও বলেন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের যে পরিবর্তন আগামী ৫০ বছরে তার এ প্রভাব বাংলাদেশের জনগণের ওপর পড়বে। সেই কনসিডারেশনে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা চীনের সঙ্গে দীর্ঘ গভীর বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। রিভার সিস্টেম কিভাবে আমরা এগুলো ব্যবহার করতে পারি চীন আমাদের জন্য একটা অত্যন্ত বড় দৃষ্টান্ত। এসব বিষয়ে তারা পৃথিবীতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সহায়তা চেয়েছেন এবং তারাও সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এর পরপরই তিনি চীনের পানিসম্পদমন্ত্রী সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সে সাক্ষাতের সময় সেখানে চীনের পানি বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশে পানির যে চাহিদা এবং সেই চাহিদা পূরণে কি কি উপায় হতে পারে সেটা নিয়ে বিশাল আলোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, চীনা পক্ষ আমাদের সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নদীর পানি সংরক্ষণ বন্যার পূর্বাভাস বন্যা নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন বিষয়ে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আমি তিস্তা নদীর যে প্রকল্প সে প্রকল্পটা উল্লেখ করব। এ প্রকল্পটা আগেই নেওয়া হয়েছেছিল এবং এটার জন্য চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণের আগ্রহ আমরা ব্যক্ত করেছি। তারাও এ বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। দ্বিতীয়ত হচ্ছে শিল্পায়ন। আপনারা সবাই জানেন যখন দেং শিয়াও পিং চীনে বিস্তৃতি এবং গভীর সংস্কার সাধন করলেন তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বৈদেশিক বিনিয়োগ চীনের প্রতি আকৃষ্ট করা।
তিনি বলেন, এ সংস্কারের ফলে আমরা দেখেছি ১৯৮০ সালের থেকে শুরু হয়ে আজ পর্যন্ত বিশাল বৈদেশিক বিনিয়োগ বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চায়নাতে এসেছে যে সমস্ত কারণে এ পশ্চিমা দেশগুলো চীনে এসেছিল সে কারণগুলোর কারণেই কিন্তু আজ চীন থেকে বিনিয়োগগুলো অন্যান্য দেশে চলে যাচ্ছে। ভিয়েতনামে চলে গেছে এবং তা আমাদের দেশেও আমরা আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছি। আগামী দিনগুলোতে আমাদের যুব সমাজের যে কর্মসংস্থান তার অনেকটাই নির্ভর করবে শিল্পায়নের গতির ওপর। প্রধান উপদেষ্টা প্রেসিডেন্টকে সরাসরি আহ্বান জানিয়েছেন চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে বাংলাদেশে এসে তাদের কারখানা প্রতিষ্ঠা করে এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রেসিডেন্ট শি জবাব দিয়েছেন যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি তদারকি করবেন। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।
চীন সফরে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি চীনের আন্তরিকতার দিক তুলে ধরে খলিলুর রহমান বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট গ্রেট হল থেকে বাইরে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন আমাদের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূসকে স্বাগতম জানানোর জন্য। তিনি সাধারণত গ্রুপ ফটো তোলেন না। আমাদের সবাইকে নিয়ে ছবি তুলেছেন যেটা খুবই বিরল। তিনি বৈঠকের সময় তার নোট বাদ দিয়ে, লিখিত নোটের বাইরে গিয়ে স্মরণ করলেন ফুজিয়ানের গভর্নর থাকার সময় তিনি ক্ষুদ্র ঋণ বা মাইক্রোক্রেডিট অধ্যায়ন করেছেন, প্রয়োগ করেছেন সেই প্রদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য। এ যে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার দর্শন তিনি গ্রহণ করেছেন এটা শুনে আমরা সবাই আপ্লুত বোধ করেছি। এটা একটা বিরল ব্যাপার। রোহিঙ্গা বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা তুলেছেন এবং চীন তার সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে এবং পরিষ্কার করে চীন বলেছে তারা তাদের সাধ্যমতো সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। এটা আমাদের জন্য একটা বড় পাওয়া ছিল।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে খলিলুর রহমান বলেন, বিমসটেক এর আলোচ্য সুতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গটি নেই। আমরা ফরমাল ডিস্কাসনে এটা আলোচনা করার সুযোগ দেখছি না। কিন্তু সাইডলাইনে অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে এটি আলোচনা করব। আসিয়ানের একটি রোল আছে। বিমসটেকের একটি সদস্য দেশ থাইল্যান্ড তারাও এ সংকটের সমাধান চাইছেন। আমাদের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বৈঠক কবে। সেই বৈঠকের আলোচ্য সূচিতে এ বিষয়টি থাকবে।
এ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের আমন্ত্রণে গত ২৬ মার্চ (বুধবার) দুপুরে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশটি সফর করেন প্রধান উপদেষ্টা। শনিবার (২৯ মার্চ) রাত ৮টা ১০ মিনিটে তিনি দেশে ফিরেন৷