জাতীয়
বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের মিডিয়ায় ভয়াবহ প্রোপাগান্ডা
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে দেশজুড়ে অস্থিরতা চলছে। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও পুলিশের কর্মবিরতি অস্থিরতাকে অরাজকতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, এমনকি লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। এর বেশিরভাগ রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক, আবার কিছু ঘটনা সুযোগসন্ধানী অপশক্তি ঘটিয়েছে। তবে এ সহিংসতা ঘিরে ভারতের কতিপয় গণমাধ্যম প্রচার করছে উসকানিমূলক প্রতিবেদন। আর ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার), টিকটক ও ইউটিউবের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে ভয়াবহ প্রোপাগান্ডা ও গুজব। সাম্প্রদায়িক রং মাখিয়ে বানানো এসব গুজব-প্রোপ্রাগান্ডার ঢেউ এসে পড়ছে বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সোশ্যাল প্লাটফর্মেও। ফলে অস্থিরতা আরও উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে।
স্রোতের মতো ছড়াতে থাকা এসব প্রোপাগান্ডা ধরে ধরে শনাক্তে হিমশিম খাচ্ছেন ফ্যাক্ট-চেকাররা। বেশিরভাগ প্রোপাগান্ডাই যে ভয়াবহ এবং পরিকল্পিত সে কথাও বলছেন কেউ কেউ। রিউমার স্ক্যানার, ডিসমিসল্যাবের মতো ফ্যাক্ট-চেকিং বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমও এসব প্রোপাগান্ডা-গুজব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
রিউমার স্ক্যানার গত শুক্রবার (৯ আগস্ট) রাতে জানায়, তারা ভারতীয়দের ছড়ানো ২০টিরও বেশি গুজব শনাক্ত করেছে। পরে শনিবার (১০ আগস্ট) জানা যায়, ভারতীয়দের ছড়ানো মারাত্মক পর্যায়ের গুজব শনাক্ত হয়েছে ৩০টির বেশি।
তারা জানায়, গত ৭ আগস্ট বিকেলে এক্সে মোহন গৌড়া নামে আইডি থেকে একটি ছবি পোস্ট করে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ-আসাম সীমান্তে শরণার্থীদের ভিড় তৈরি হয়েছে’। অথচ যে ছবি পোস্ট করা হয়েছে, সেটি ২০১৮ সালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে দুই দেশে বসবাসরত বিচ্ছিন্ন আত্মীয়দের মিলনমেলার ছবি।
৭ আগস্ট বিকেলেই এক্সে সালওয়ান মোমিকা নামে আইডি থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে ইরাকের মতো হিন্দু নারীদের বন্দি করে বিক্রি করা হচ্ছে’। অথচ ওই ভিডিওটি বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেত্রীকে বেঁধে রাখার সময়ের।
সেদিন সন্ধ্যায় ‘দ্য জয়পুর ডায়লগস’ নামে ভেরিফায়েড এক্স আইডিতে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে হিন্দু নারীদের ধর্ষণ ও হত্যা করা হচ্ছে। তারা গণহত্যার ঝুঁকিতে’। অথচ ওই ভিডিও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের বিচারের দাবিতে মৌন প্রতিবাদী নাটকের।
৭ আগস্ট সকালে ‘সুদর্শন নিউজ’ নামে ভেরিফায়েড এক্স আইডিতে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, ‘লক্ষ্মীপুরে রাজন চন্দ্র নামে এক হিন্দুর দোকান আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে’। অথচ ওই ভিডিও লক্ষ্মীপুরেরই মজুচৌধুরীর একটি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের।
৬ আগস্ট ‘র্যান্ডমসেনা’ নামে ভেরিফায়েড এক্স আইডিতে একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হয়, ‘আরেকটি হিন্দু মন্দিরে আগুন দেওয়া হয়েছে’। অথচ ওই ভিডিও সাতক্ষীরার রাজপ্রাসাদ রেস্টুরেন্টে আগুনের ঘটনার।
৬ আগস্ট দুপুরে ‘বাবা বেনারস’ নামে ভেরিফায়েড এক্স আইডিতে একটি পোস্টে দাবি করা হয়, ‘রংপুরে দুই শিশুসহ ৬ নারীকে ধর্ষণের পর পুড়িয়ে মারা হয়েছে’। অথচ রংপুরে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
ছবি: রিউমার স্ক্যানার৫ আগস্ট রাতে ‘হিন্দুত্ব নাইট’ নামে এক্স আইডিতে একটি ভিডিও পোস্ট করে লেখা হয়, ‘বাংলাদেশের হিন্দু ক্রিকেটার লিটন দাসের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে’। অথচ ওই ভিডিওটি মাশরাফির বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনার। তাছাড়া, লিটন নিজে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, তার বাড়িতে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তিনি নিরাপদে ও ভালো আছেন।
৬ আগস্ট মধ্যরাতে ওই একই আইডিতে আরেকটি ভিডিও দিয়ে পোস্টে দাবি করা হয়, ‘হিন্দু বৃদ্ধকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ’ অথচ ওই ভিডিওটি ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম হিরণের মৃতদেহের।
এছাড়া চাঁদপুরের আলোচিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খানের মৃতদেহের ভিডিওকে প্রচার করা হয়েছে হিন্দু ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারার ভিডিও বলে। ২০১২ সালে রামুতে বৌদ্ধ বিহারে সহিংসতার ভিডিওকে প্রচার করা হয়েছে সাম্প্রতিক ঘটনা হিসেবে।
এদিকে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাবও শনাক্ত করেছে কিছু গুজব। এর মধ্যে, ৫ আগস্ট রাতে একটি গুজব এক্স-এর ‘ডেইলি লেটেস্ট আপডেটস’ নামে ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়িয়েছে। সেই অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করে বলা হয়, চট্টগ্রামের নবগ্রহ মন্দিরে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়েছে।
এক্স-এর তথ্য অনুসারে, অ্যাকাউন্টটি ভারত থেকে পরিচালিত হয়। যাচাইয়ে নেমে সাঈদ খান সাগর নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টে বলা হয়, নবগ্রহ মন্দিরে হামলার দাবিটি একটি প্রোপাগান্ডা। যোগাযোগ করা হলে পোস্টদাতা জানান, চট্টগ্রামের লালদিঘী পাড় সংলগ্ন নবগ্রহ মন্দিরে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। তাকে এক্সে প্রচারিত ভিডিওটি পাঠানো হলে, তিনি বলেন যে এটি মূলত মন্দিরের কাছাকাছি অবস্থিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুরের ঘটনায় সৃষ্ট আগুন। তিনি অক্ষত মন্দিরের ছবি পাঠিয়ে জানান, মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক স্বপন দাসও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। একই ভিডিওটি প্রচার হতে দেখা যায় ভারতের গণমাধ্যম রিপাবলিক টিভিতে। ৬ আগস্টে রিপাবলিক বাংলার অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিওর শিরোনাম করা হয়, “চট্টগ্রামে লালদিঘি পাড় নবগ্রহ মন্দির ভাঙচুর #shorts। ” অথচ খবরটি পুরোপুরি বানোয়াট।
অন্যদিকে এএফপির বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেকবিষয়ক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশিরও কিছু গুজব-প্রোপাগান্ডা শনাক্ত করে তার ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করেছেন।
এর মধ্যে একটি হলো, ‘গত কয়েকদিন ধরে একটি কথিত মেসেজ কনভারসেশনের স্ক্রিনশট পোস্ট করে দেখানো হচ্ছে যে, কোটা আন্দোলন চলাকালে কোনো মেসেজ গ্রুপে একটি হিন্দু মেয়েকের ধর্ষণের ছবি দিয়ে গর্বভরে প্রচার করছে মৌ/লবাদী স/ন্ত্রাসীরা। তবে যাচাই করে দেখা যাচ্ছে, একই রকম ছবি ২০২১ সালে ভারতে একজন নারীর ধর্ষিত হওয়ার খবরের সাথে প্রকাশিত হয়েছিল। ’
এছাড়া, নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় এক নারীকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তোলার একটি ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এক হিন্দু তরুণীকে অপহরণ করা হয়েছে।
তবে দেশের মূলধারার গণমাধ্যম প্রতিবেদন করে জানিয়েছে, ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক হামলা বা সহিংসতার ঘটনা ছিল না। ওই নারীকে অপহরণের চেষ্টা করেছিলেন তার স্বামী। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দাম্পত্য বিরোধের জেরে স্বামীর ঘর থেকে বাবার বাড়িতে চলে এসেছিলেন ওই নারী। তাকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তার স্বামীসহ কয়েকজন ব্যক্তি। তখন ওই নারীর চিৎকার শুনে গ্রামবাসী এগিয়ে আসেন। তারা মাইক্রোবাসটি ভাঙচুর করেন। এ সময় ওই নারীর স্বামীসহ তিনজনকে তারা আটক করেন। আটক ব্যক্তিদের সেনাবাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হয় বলে জানায় গ্রামবাসী।
কদরুদ্দিন শিশিরও বিষয়টি তার আইডিতে শেয়ার করেছেন। এক্ষেত্রে বিদেশে থাকা এক ব্যক্তির একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেন।
সিলেটে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর আক্রমণেরও একটি খবর ছড়ানো হয়। রিউমার স্ক্যানারের সিনিয়র ফ্যাক্ট-চেকার সোহানুর রহমান একটি সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানান, সিলেটে যে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা হয়েছে, তারা আওয়ামী লীগের নেতা। এই তথ্য দিয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। ওই সংগঠনের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমি এখন পর্যন্ত জানি, কোনো নিরীহ হিন্দু সিলেটে আক্রান্ত হননি। যারা হয়েছেন, তারা আওয়ামী লীগের নেতা।
গণমাধ্যমের নাম দিয়ে মিথ্যা প্রচারণা
এদিকে ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি দেশের সোশ্যাল মিডিয়াতেও চলছে গুজব-প্রোপাগান্ডা। সম্প্রতি প্রথম আলোর বরাত দিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যেখানে লেখা হয়, ‘প্রথম দিনেই ৬২ হাজার গ্রামে লুটপাট। ’
খোদ প্রথম আলো এই পোস্টের বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দেয়। তারা ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় একটি পোস্ট দিয়ে জানায়, এটি মিথ্যা প্রচারণা। প্রথম আলোর নামে ছড়ানো তথ্যটি নকল এবং তাদের প্রকাশিত নয়।
ফ্যাক্ট-চেকার ও গবেষকরা যা বলছেন
গুজবের এই রমরমা কারবার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাবের গবেষক মিনহাজ আমান বলেন, ‘গুজবের সীমান্ত পার হওয়া কোনো নতুন ঘটনা নয়। খবর যেমন বৈশ্বিক, ভুয়া খবরও বৈশ্বিক। এর আগেও ২০২১ সালে কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সময়েও বাংলাদেশের ভুয়া খবর ভারতে ছড়িয়েছে। ভারত-বাংলাদেশে ভুয়া খবর দ্রুত সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার কারণ আমাদের মধ্যে ভাষা সংস্কৃতি ধর্মের সাদৃশ্য আছে। ফলে বাংলাদেশ বা ভারত যে কেউ অশান্ত হলে ভুয়া খবর দুই পক্ষকেই খুব জলদি আক্রান্ত করতে পারে। এজন্যে সবার আগে ভুয়া খবর কেন কীভাবে ছড়ায় সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা উচিত। এছাড়া সামাজিক মাধ্যমগুলোর মধ্যে ফেসবুক বা টিকটকে ভুয়া খবর রোধ করার যে আয়োজন বা চেষ্টা আছে, এক্স বা ইউটিউবে নেই। তার মানে কোনো কোনো সামাজিক মাধ্যমে বেশি অপতথ্য ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে, তার ইশারা পাওয়া যায়। ’
তিনি বলেন, ‘ভুয়া খবর থেকে রক্ষা পাওয়ার আরেকটি মোক্ষম উপায় আছে, মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর যথাযথ ভেরিফিকেশন প্রসেস অনুসরণ করা। তাহলে ব্যবহারকারীরা খুব জলদি সঠিক তথ্য পেতে পারে, বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ কমে যায়। গবেষণা বলে, যে কোনো সামাজিক রাজনৈতিক উত্তেজনার সময়ে যথাযথ তথ্য প্রবাহের অভাব ঘটলেই সেখানে ভুয়া খবর তৈরি হয়। এদিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। ’
রিউমার স্ক্যানারের সিনিয়র ফ্যাক্ট-চেকার সোহানুর রহমান বলেন, সরকারের পতনের পরে যে ঘটনাগুলি ঘটেছে তা মূলত প্রতিশোধপরায়ণ সহিংসতা। ধর্মীয়ভাবে ভাগ করে বললে আওয়ামী লীগের মুসলিম নেতা-কর্মী এবং হিন্দু নেতা-কর্মী উভয়ের ওপর হামলা হয়েছে। তবে সমাজিক মাধ্যম বিশেষ করে এক্সে চেরি-পিক করে আওয়ামী লীগের হিন্দু নেতা-কর্মীদের ওপর রাজনৈতিক কারণে হওয়া হামলার ঘটনাগুলি সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে এবং এই অ্যান্টি-আওয়ামী লীগ ভায়োলেন্সকে অ্যান্টি-হিন্দু ভায়োলেন্স হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। হিন্দুদের ওপর আক্রমণের সব ঘটনাকেই সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন পুরনো ও ভিন্ন ঘটনার ছবি/ভিডিও সাম্প্রতিক হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। এমনকি বেশ কিছু উদাহরণ দেখেছি, যেখানে মুসলিম ধর্মের ভুক্তভোগীকে হিন্দু হিসেবে তুলে ধরে প্রচার করা হয়েছে। এভাবে পরিস্থিতির একটা ভুল চিত্রায়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলার ঘটনাগুলির অধিকাংশ রাজনৈতিক। অর্থাৎ এসব হামলা হিন্দু হওয়ার কারণে নয়, হয়েছে আওয়ামী লীগের লোক হওয়ার কারণে। তবে এর পাশাপাশি আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে যেগুলোর মধ্যে সাম্প্রদায়িক কারণও রয়েছে। আমাদের বর্তমান সংকটটা রাজনৈতিক। কিন্তু এক্সে প্রচার দেখলে মনে হবে সমস্যাটা যেন ধর্মীয়। যেখানে অধিকাংশ ঘটনাই রাজনৈতিক সেখানে সব ঘটনাই সাম্প্রদায়িক বলে প্রচার করা হচ্ছে।
ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচার ধরা পড়ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে
ভারতীয় সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই প্রোপাগান্ডা বা গুজবের বিষয়টি ধরা পড়ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের চোখেও। এরই মধ্যে কাতারের আল জাজিরা একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন করেছে, এতে বলা হয়েছে, ভারতীয় গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মে বিভ্রান্তিকর নিবন্ধ ও ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
টাইমস গ্রুপের মালিকানাধীন মিরর নাও এর ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিওতে চারটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার খবর দৃশ্যায়ন করা হয়েছে। যেখানে ঘটনাটি সনাতনীদের ওপর হামলা বলে বর্ণনা করা হয়েছে। অথচ ওই চার বাড়ির দুটি মুসলিম মালিকানাধীন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভিডিওতে জনতার হাতে ২৪টি জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারার কথা বলা হয়েছে, যা স্পষ্টতই বিভ্রান্তিকর। আল জাজিরা এ বিষয়গুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করে বলেছে, এক্ষেত্রে ভারতীয় গণমাধ্যমের মিথ্যাচার প্রমাণিত হয়েছে। এ পর্যন্ত দুই হিন্দু মারা গেছেন। তাদের কাউকেই হিন্দু বলে প্রাণ দিতে হয়নি। ওই দুই হিন্দুর মধ্যে একজন ছিলেন পুলিশ এবং অন্যজন শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের লোক। দুজনই মূলত ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যদিকে ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের সহিংসতায় তিন শতাধিক আন্দোলনকারী প্রাণ হারিয়েছেন।
বিজেপিঘনিষ্ঠ ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই সেদেশের এক ছাত্র নেতাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, এ দেশে অভ্যুত্থান ইসলামপন্থিরা ঘটিয়েছে। অথচ এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। আর শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশের মূলধারা সব সংবাদমাধ্যম বিষয়টিকে ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান’ বা ‘ছাত্র-জনতার বিজয়’ বলেই উল্লেখ করে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি নিবন্ধেও দাবি করা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। যা মিথ্যা বলেই প্রতীয়মান হয় ঢাকার মূলধারার গণমাধ্যমের খবরে।
খোদ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশই বলছে, ‘একতরফা বিদ্বেষমূলক ও বিভ্রান্তিকর প্রচার’
বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতীয় গণমাধ্যমে সাম্প্রদায়িক রঙ মাখিয়ে উসকানিমূলক প্রতিবেদনকে ‘নিয়ম পরিপন্থী’ বলছে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশও।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ৬ আগস্ট রাতে এক পোস্টে বলা হয়, ‘কিছু স্থানীয় টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে যেভাবে রিপোর্টিং হচ্ছে, তা খুবই দৃষ্টিকটুভাবে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক এবং ভারতের প্রেস কাউন্সিলের নিয়মাবলীর পরিপন্থী। ’
এতে আরও বলা হয়, ‘দর্শকদের অনুরোধ, এ ধরনের কভারেজ দেখার সময় নিজস্ব বিচার-বিবেচনা প্রয়োগ করুন এবং মাথায় রাখুন যে চ্যানেলের দেখানো ফুটেজের সত্যতা কিন্তু কোনো নিরপেক্ষ তৃতীয় সংস্থা দিয়ে যাচাই করা নয়। একতরফা বিদ্বেষমূলক এবং বিভ্রান্তিকর প্রচারের ফাঁদে পা দেবেন না। শান্ত থাকুন, শান্তি বজায় রাখুন। ’
ভারতীয় মিডিয়া মিথ্যাচার করছে: হিন্দু মহাজোট
ভারতের মিডিয়ায় বাংলাদেশের হিন্দু সমাজের ওপর হামলা নিয়ে মিথ্যাচার করছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোবিন্দ প্রামাণিক।
তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরে এদেশের হিন্দু সমাজ মনে করেছিল যে তাদের ওপর হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটবে। কিন্তু জামায়াত ও বিএনপির নেতারা তাদের সব নেতাকর্মীদের হিন্দুদের বাড়িতে হামলা-লুটপাট যাতে না হয় এবং মন্দিরে যেন পাহারার ব্যবস্থা করা হয় সেই নির্দেশ দেন। তারা পাহারা দিয়েছেন। যে কারণে সাধারণভাবে হিন্দুদের ওপর কোনো ধরনের হামলা হয়নি বা কোনো মন্দিরে ভাঙচুর হয়নি।
গোবিন্দ প্রামাণিক আরও বলেন, কিছু আওয়ামী লীগ হিন্দু নেতা রয়েছেন, যারা বিভিন্ন সময়ে লম্ফঝম্প করেছিলেন, তাদের বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ হয়েছে। একই সাথে মুসলমান আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তবে গুটিকয়েক সুযোগ সন্ধানী লোক মন্দিরে হামলা করেছে। সেটা তেমন কোনো বিষয় না।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আইন-আদালত
জ্বালানি খাতে ৩ মাসে সাশ্রয় ৩৭০ কোটি টাকা: জ্বালানি উপদেষ্টা
জ্বালানি খাতের সরকারি ক্রয়ে গত তিন মাসে ৩৭০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে শিল্প খাতে জ্বালানি সংকট নিয়ে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির আলোচনা সভায় এ কথা জানান তিনি।
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে এগিয়ে যেতে হবে। চলতি সপ্তাহে ৪০টি নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের দরপত্র দেওয়া হবে।
পাবলিক সেক্টরে প্রতিযোগিতার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, টিকে থাকতে হলে ঘুষ বাণিজ্য থেকে বের হতে হবে। সরকারি ক্রয়কে প্রতিযোগিতার মধ্যে আনার প্রয়োজন রয়েছে। সরকারের সঙ্গে সখ্য করে আর ব্যবসা হবে না। ভালো ব্যবসায়ীদের জন্যই উপযোগিতা তৈরি করা হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আইন-আদালত
অক্টোবরে সড়ক-রেল-নৌপথে ঝরলো ৫৭৫ প্রাণ
বিদায়ী অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে ৪৫২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন নিহত এবং ৮১৫ জন আহত হয়েছেন। ওই মাসে রেলপথে ৬৩টি দুর্ঘটনায় ৭৬ জন নিহত এবং ২৪ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৯টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত, ৩৬ জন আহত এবং ৯ জন নিখোঁজ হয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৫৩৪টি দুর্ঘটনায় ৫৭৫ জন নিহত এবং ৮৭৫ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার (২৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
অক্টোবরে ১৩৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৩ জন নিহত এবং ২৩৯ জন আহত হয়েছেন, যা মোট দুর্ঘটনার ৩০ দশমিক ৫৩ শতাংশ, নিহতের ৩৪ দশমিক ৩১ শতাংশ ও আহতের ২৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।
সংগঠনটি জানিয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৭ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ১৪৯ জন চালক, ১৩৭ জন পথচারী, ৫১ জন পরিবহন শ্রমিক, ৭৩ জন শিক্ষার্থী, ১৮ জন শিক্ষক, ৭৬ জন নারী, ৬২ জন শিশু, ৫ জন চিকিৎসক, ৯ জন সাংবাদিক এবং ১৩ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
দুর্ঘটনার শিকার হওয়া যানবাহনের মধ্যে ২৪ দশমিক ৪১ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ বাস, ১৭ দশমিক ৯১ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা এবং ৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস।
দুর্ঘটনার কারণগুলো হলো- ৪৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ গাড়িচাপা দেওয়া, ২৫ দশমিক ২৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়া, দশমিক ২৫ শতাংশ ট্রেনের সঙ্গে অন্য যানবাহনের সংঘর্ষ, দশমিক ৭৫ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচানো এবং ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ অন্যান্য কারণ।
অক্টোবরে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩৮ দশমিক ২৯ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩০ দশমিক ৩৯ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৪ দশমিক ৬২ শতাংশ ফিডার রোডে হয়েছে।
সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে ও ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে এবং দশমিক ২৫ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে হয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আইন-আদালত
জুলাই বিপ্লবে আহত বাবুকে নেওয়া হচ্ছে থাইল্যান্ড
জুলাই বিপ্লবে আহত মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমানের ছেলে মো. বাবুকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হচ্ছে থাইল্যান্ড। আজ শনিবার (২৩ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তাকে থাইল্যান্ডে পাঠানো হবে।
বাবুর বয়স ৩৬ বছর। কাজ করতেন নয়াপল্টনের ছাপাখানায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বন্ধ হয়ে যায় ছাপাখানা। কিন্তু বাসায় বসে থাকেননি তিনি। জড়িয়ে পড়েন স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে। শনির আখড়ায় বাসা হওয়ায় সেখানে প্রতিদিন আন্দোলনে যেতেন।
জানা যায়, ২০ জুলাই সকালের দিকে আন্দোলনে যোগদান করেন বাবু। গলি থেকে মিছিল নিয়ে প্রধান সড়কে যান। এ সময় হেলিকপ্টার দিয়ে টহল দিচ্ছিল বিজিবি। হঠাৎ হেলিকপ্টার থেকে গুলি শুরু হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবু ৫-৬ হাত দূরে ছিটকে পড়ে। পুলিশ তাকে ঘিরে ধরে রাখে। রক্তে ভিজে যায় রাস্তা। পরিচিত একজন তার বোনকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে আসতে বলে। বোন বাবুর চার বন্ধুসহ ভাইকে উদ্ধার করতে আসে। কিন্তু পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রাস্তায় পড়ে থাকে বাবু।
৫-৬ ঘণ্টা পর বোনের জামাই এসে বাবুকে স্থানীয় একটি মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। সেখানেও শুরু হয় বিড়ম্বনা। কেন হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে? এ অভিযোগে চিকিৎসা শুরু করতেও দেরি হয়। এদিকে রক্তশূন্য হয়ে বাবু মৃতপ্রায়।
মুক্তিযোদ্ধা বাবা এদিন চিকিৎসকদের পায়ে পর্যন্ত ধরেন।
এদিকে মেয়ে হাজতে বন্দি। তাকে ছাড়াতে যান মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান। পুলিশ তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। পরে রাতে পুলিশ ফোন করে স্বামীকে চার হাজার টাকা নিয়ে যেতে বলে। ধারদেনা করে টাকা দিলে মুক্তি মেলে বাবুর বোনের। আর বাবুর বন্ধুদের পাঠানো হয় কারাগারে।
আহত বাবুর পেটের নিচের অংশ দিয়ে ঢুকে কোমরের পেছন দিয়ে বের হয়ে যায় বুলেট। গুলি ছিন্নভিন্ন করে বাবুর খাদ্যনালি, মূত্রথলি, কোমরের হাড়।
চিকিৎসকরা তার পেটে দুইবার অপারেশন করেছেন। তার খাদ্যনালির অনেকাংশ কেটে ফেলতে হয়। বাকি অংশ পেটে ফুটো করে আলাদা করে মলত্যাগের রাস্তা বানানো হয়। কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি হয় না। পরে সেপ্টেম্বর মাসে তাকে বিএমএমইউতে স্থানান্তরিত করা হয়। কিছুদিন পর অবস্থা আরও খারাপ হয় বাবুর। মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয় দেশের বাইরে পাঠানোর। ১৫ দিন আগে থাইল্যান্ডের চিকিৎসক এসে বাবুর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। পরে তারা তাকে থাইল্যান্ডে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন।
মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমকে জানানো হলে তিনি দ্রুত বাবুকে থাইল্যান্ডে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ডা. মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নির্দেশে আমরা বাবুকে দ্রুত বিদেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করি। শুক্রবার তার টিকিট পাওয়া যায়। আজ বেলা ১১টার বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে তাকে থাইল্যান্ডে পাঠানো হবে। দেশটির বেজথানি হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে বাবুকে। এরই মধ্যে গণবিপ্লবে আহত আরও চারজন ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আইন-আদালত
এলডিসি দেশগুলোতে ডলার বরাদ্দের প্রস্তাবে সমর্থন চাইলো বাংলাদেশ
জলবায়ু সংকটের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দের প্রস্তাবে সমর্থন জানাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) আজারবাইজানের বাকুতে কপ-২৯-এর চূড়ান্ত ফলাফলের বিষয়ে এলডিসি মন্ত্রী এবং ইইউ মন্ত্রীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এই আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকে অবশিষ্ট সমস্যার সমাধানে উভয় পক্ষের সহযোগিতার মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও সমতাভিত্তিক চুক্তি অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি বলেন, অনেক সমস্যা এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তিনি উভয় পক্ষকে একযোগে কাজ করার মাধ্যমে কপ২৯-এ একটি অর্থবহ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক চুক্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
বৈঠকে এলডিসি মন্ত্রীরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আর্থিক ও কারিগরি সহায়তার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তাদের মূল অবস্থান তুলে ধরেন।
ইইউ মন্ত্রীরা এলডিসি দেশগুলোর উদ্বেগের বিষয়গুলো স্বীকার করেন এবং জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে জলবায়ু অর্থায়ন, অভিযোজন, নির্গমন হ্রাস এবং গ্লোবাল স্টকটেক প্রক্রিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
অরবিসের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বাংলাদেশ: ড. ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশে চোখের যত্ন ও পরিষেবা সম্প্রসারণের জন্য অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অরবিস ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে কাজ ও সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
অরবিস ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট ও সিইও ডেরেক হডকির সাথে এক বৈঠকে তিনি বলেন, বাংলাদেশে চোখের যত্নের সেবা সম্প্রসারণ করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে আরা অরবিস ইন্টারন্যাশনালের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হড, অরবিস ফ্লাইং আই হাসপাতালের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ডেরেক বাংলাদেশ সফর করছেন। এখন চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ চলছে। ডেরেকে গত বুধবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীতে অধ্যাপক ইউনূসের সাথে তার কার্যালয়ে দেখা করেন।
অরবিস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. মুনির আহমেদ প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাতের সময় ডেরেকের সাথে ছিলেন। অরবিস প্রেসিডেন্ট প্রধান উপদেষ্টাকে ফ্লাইং আই হাসপাতালের একটি মডেল সংস্করণ উপস্থাপন করেন। অধ্যাপক ইউনূস এটির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
ডেরেক অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কাজ সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবিহিত করেন। অরবিস ১৯৮২ সালে বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি-সংরক্ষণ কর্মসূচি শুরু করেছিল। অরবিস গত ৩৯ বছর ধরে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে কাজ করছে।
ডেরেক বলেন, এই সময়ের মধ্যে, অরবিস এ পর্যন্ত কমিউনিটি আউটরিচ ইভেন্টে ৭.৮ মিলিয়নেরও বেশি চোখের স্ক্রিনিং পরিচালনা করেছে, প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে ৪.৫ মিলিয়নেরও বেশি ব্যক্তিকে ওষুধ ও অপটিক্যাল চিকিৎসা প্রদান করেছে, ২৫৮,০০০টিরও বেশি চোখের সার্জারি করেছে এবং বাংলাদেশের ৪০ হাজারের বেশি লোককে চোখের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে প্রশিক্ষিত করেছে।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে চক্ষু স্বাস্থ্য খাতে অরবিসের অবদানের কথা স্বীকার করেন এবং ফ্লাইং আই হাসপাতালের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অরবিস এখন বাংলাদেশে ১১তম প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ড. ইউনূস বলেন, আমি অরবিসকে ভালোবাসি। আমি ফ্লাইং আই হসপিটালকে ভালোবাসি। তিনি উল্লেখ করেন যে, অরবিস বাংলাদেশে চোখের স্বাস্থ্য খাতে ভূমিকা পালনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম।
ডেরেক বলেন, অরবিস ব্যক্তি, পরিবার ও জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করার জন্য বিশ্বব্যাপী ২ শতাধিক দেশ ও ভূখণ্ডে দৃষ্টি সংরক্ষণের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
বিশ্বজুড়ে প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ সম্পূর্ণভাবে পরিহারযোগ্য অন্ধত্ব ও দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের সমস্যা নিয়ে বসবাস করছে উল্লেখ করে ডেরেক বলেন, চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অরবিস জোরদার ও টেকসই চোখের যত্ন ব্যবস্থা নিয়ে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।
অরবিস প্রেসিডেন্ট বলেন, অলাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটি আফ্রিকা, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় বিশেষ কর্মসূচি পরিচালনা করছে এবং প্রশিক্ষণ প্রদান ও প্রযুক্তির প্রয়োগ করছে।
তিনি বলেন, গত চার দশক ধরে অরবিস শিশুদের চোখের যত্ন, মাইক্রোসার্জারি, রেটিনাল সার্জারি, কর্নিয়ার রোগ, প্রিম্যাচুরিটি রেটিনোপ্যাথি এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির ওপর গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের স্থানীয় অংশীদারদের দক্ষতা ও জ্ঞানের উন্নতিতে সাহায্য করেছে।
ডেরেক এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে আরও অবিহিত করেন, অরবিস সারা দেশে বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় ৪২টি দৃষ্টি সেবা কেন্দ্র স্থাপন করে চোখের যত্নের সাথে জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করেছে; ১৭টি সেকেন্ডারি হাসপাতাল, চারটি তৃতীয় হাসপাতাল, দুটি ওয়েট ল্যাব, একটি মানসম্পন্ন রিসোর্স সেন্টার ও একটি ডিজিটাল ট্রেনিং হাব প্রতিষ্ঠা বা উন্নতিতে সহায়তা করেছে।
এছাড়া, অরবিস ৪০০টি কমিউনিটি ক্লিনিককে ভিশন স্ক্রিনিং টুলস দিয়ে সজ্জিত করেছে এবং শৈশব অন্ধত্বের একটি প্রধান কারণ, প্রিম্যাচুরিটি রেটিনোপ্যাথির স্ক্রিনিং ও ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্দেশিকা তৈরি করেছে।