মত দ্বিমত
পুঁজিবাজারে তেজী ষাঁড়, ভালো কিছুর প্রত্যাশা

খুঁটি উপড়ে পুঁজিবাজারের তেজী ষাঁড় গত সপ্তাহে এক দৌড়ে ৫৯০.৮৭ পয়েন্ট উচ্চতার মাইল ফলক স্পর্শ করেছে। তাতে ডিএসইএক্স সূচকের গ্রাফ খাঁড়া উপরে উঠেছে। ডিএসই৩০ ও শরিয়াহ সূচকও যথাক্রমে ২৩১.৮৮ ও ১০৯.৫৩ পয়েন্ট বেড়েছে।
এভাবেই ঊর্ধ্বলাফে সূচক আগস্ট বিপ্লবকে স্যালুট জানিয়েছে। স্বাগত জানিয়েছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বতীকালীন সরকারকেও। বিশ্বের সর্বত্র পুঁজিবাজারে এ রীতিই অনুসৃত হয়।
গত সপ্তাহে বিএসইসি’র ‘আয়না ঘর’ ছিল বহিরাগত মুক্ত। লেনদেন কর্মকাণ্ডও হস্তক্ষেপ মুক্ত ছিল। তাই পুঁজিবাজার স্বাভাবিক ও স্বাচ্ছন্দের সাথে এগিয়েছে। গতিও একই কারণে। তিনদিনের লেনদেনে ডিএসইএক্স সূচক ৫৯২৪.৮১ পয়েন্ট উচ্চতায় উঠেছে। এ গতি ও সূচক অবস্থান স্বাভাবিক। অতিশয় নয়। সপ্তাহ শেষে ডিএসই’র মার্কেট পিই’র অবস্থান ছিল ১১.৪২। দারুণ ক্রয় আকর্ষক পিই অবস্থান।
গত সপ্তাহের ডিএসই’র লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সূচক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে- ব্যাংক খাত ও বহুজাতিক কোম্পানিসহ শক্ত মৌলভিত্তি নির্ভর শেয়ার সমূহ। উল্লেখিত খাত ও বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের পিই অনুপাতও কম। এসব শেয়ার পিই নির্ভর যৌক্তিক মূল্যে পৌঁছলে ডিএসইএক্স সূচকের অবস্থান ১০ হাজার পয়েন্টর ঘরও অতিক্রম করতে পারে।
পুঁজিবাজার ব্যবস্থপনা বাজার বান্ধব ও বাজারের গভীরতা বৃদ্ধি পেলে ‘হেজিং’ ইন্সট্রুমেন্ট বসতে পারে। হেজিং ব্যবস্থায় পিই অনুপাত যে কোনে উচ্চতায় যেতেই পারে। বর্তমান ব্যবস্থায় গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারের ষাঁড় যে দৌড় দিয়েছে- তাতে মূখ্য ভূমিকা ছিল মৌল ভিত্তি সম্পন্ন শেয়ারেরই।
ডিএসই’র লেনদেন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে লেনদেনে শীর্ষ দশে ছিল যথাক্রমে; বিএটিবিসি, স্কয়ার ফার্মা, সিটি ব্যাংক, ইউনিলিভার, ব্র্যাক ব্যাংক, টেকনো ড্রাগস, উত্তরা ব্যাংক, সীপার্ল, ট্রাস্ট ব্যাংক ও ররি’র শেয়ার। একটি বাদে বাকী সবগুলো শেয়ারের সূচক প্রভাবের ক্ষেত্রে যথেষ্ট শক্তিমান।
দীর্ঘদিন এসব শেয়ারগুলোর লেনদেন সীমিত ছিল। বাজারমূল্যও তেমন বাড়েনি। এসব শেয়ারের দাম যৌক্তিক অবস্থানে গেলে; সূচকের উচ্চতা বর্তমানের থেকে দ্বিগুণ হওয়া বাঞ্ছনীয়।
বিরাজমান বাজার ব্যবস্থাপনায় সূচক নিয়ন্ত্রণমূলক। এ ব্যবস্থায় বাজার ব্যবস্থাপকরাই সূচক প্রত্যাসিত উচ্চতায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে। বাজার ব্যবস্থাপকদের সাথী হয় সংবাদ মাধ্যমগুলোও। শেয়ারমূল্য ও সূচক বাড়লে সংবাদ মাধ্যমে হৈচৈ ও তালগোল পাাকিয়ে দেয়। সংবাদ শিরোনামগুলো হয় নেতিবাচক। বিষয়জ্ঞান বির্বজিত বিশেষজ্ঞদের বিজ্ঞ মতামত বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে।
এখন বিএসই’র আয়না ঘরে বাইরের লোক নেই। বাজারমূল ও সূচক বাড়লে- বাজার জ্ঞান বির্বজিত ভিন্ন পেশার লোকজন আয়না ঘরে বসতে পারে। যদি বসে, তারা সূচকের রাশ টানবেই। পুঁজিবাজার ভালো ও শক্তিশালী করতে চাইলে ওদের সশরীরে বাজারমুখী না হওয়াই ভালো। স্ব স্ব পেশাগত অবস্থান থেকেই প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ সম্ভব। বিএসইসি, ডিএসই ও সিডিবিএলের মাধ্যমেই সব পাওয়া সম্ভব। তাতে বাধা বা আপত্তি থাকবে না কারো।
গত সপ্তাহে বিএসইসিতে চেয়ারম্যানসহ তিন কমিশনার অফিসে আসেনি। দুজন এসেছে। তবে, হস্তক্ষেপ হয়নি। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বোর্ডের শীর্ষ পদে ‘বাবু সোনা’ বসে আছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। অর্থনীতি তথা পুঁজিবাজার সর্ম্পকে গভীর জ্ঞান থাকার কথা নয়। উপরন্তু ঢাবি শিক্ষক অর্থ ও পুঁজিবাজারের জন্য ভয়ঙ্কর। প্রমান- অর্থ ও পুঁজি উভয় বাজারেই আছে।
ডিএসই প্রশাসনের শীর্ষপদ গুলোতে- অযোগ্য লোকজন বসিয়ে রাখা হয়েছে। তারা আছে বছরের পর বছর জুড়ে। ডিএসই বোর্ড ও প্রশাসন মিলে গত ১৫ বছরে ডিএসই’র আওয়ামীকরণ সম্পন্ন করেছে। তাতে যা হবার তাই হয়েছে। ডিএসই ‘বি’ ক্যাটাগরিতে নেমেছে।
বিএসইসি ও ডিএসই মিলে পুঁজিবাজারে কারসাজি ও লুটপাটের লেনদেন পথ প্রশস্ত করেছে। পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের অভিশাপ, মার্জিন ব্যবস্থা এখনো বহাল রেখেছে। মার্জিন রুল সময় উপযোগী করার প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করেনি। বর্তমান ব্যবস্থায় বিনিয়োগকারীদের শরীরে পুঁজি চোষা জোঁক লেপ্টে রয়েছে। তাতে, মার্জিন ও নন মার্জিন উভয় একাউন্টের বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে বাজার ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এ পর্যন্ত কম বেশী ১৩ লাখ বিনিয়োগকারী নিঃস্ব অবস্থায় বাজার ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছর রাষ্ট্র পরিচালনায় পোড়ামাটি নীতি অনুসরণ করেছে। তাতে, রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানের কাঠামোই নড়বড়ে হয়ে গেছে। এর উদাহরণ দেশের অর্থনীতি গভীর খাতে পতিত হওয়া। ব্যাংকগুলো ফোকলা হওয়া। অর্থ ও পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট বৃদ্ধি পাওয়া। রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠানগুলোর কোথাও সুশাসন নেই। নেই কোন সুখবরও। ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও ব্যর্থতাই দেশের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক এমনকি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভঙ্গুর অবস্থানে চলে গেছে।
এখন সবার দৃষ্টি ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্ব গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দিকে। অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন সালেহ উদ্দিন আহমেদ। উভয়ই দক্ষ ব্যবস্থাপক। সামনে ভালো কিছু হবে এটাই প্রত্যাশা।
লেখক: ফজলুল বারী
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মত দ্বিমত
যুদ্ধের মাঝে ঈদ উদযাপন ও মানবিক সহায়তার এক অনন্য গল্প

ঈদ শুধু একটি উৎসব নয়, এটি এক অনুভূতি-আনন্দ, ভালোবাসা, এবং একে অপরের প্রতি সহানুভূতির প্রতীক। তবে, যখন পুরো বিশ্বে যুদ্ধ চলছে, মানুষের জীবন কঠিন সংগ্রামে কাটছে, তখন ঈদের আনন্দ কোথায় খুঁজে পাওয়া যাবে? এমন এক সময়ে, যখন অনেকেই এক মুঠো খাবারের জন্য সংগ্রাম করছে, তখন কীভাবে ঈদ উদযাপন হবে? কিন্তু, যদি আমরা আমাদের মানবিকতা দেখাই, যদি আমরা একে অপরের পাশে দাঁড়াই, তবে ঈদ শুধু খাবার আর পোশাকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং, তা মানবতার জয় এবং আমাদের ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠবে।
আমার ছোটবেলার ঈদ ছিল খুবই সাদাসিধে। বাবা-মা, ভাই-বোনদের সঙ্গে ঈদের দিনটি ছিল আনন্দের একটি নিরবচ্ছিন্ন উৎসব। প্রবাসে থেকেও, ঈদের দিনটি ছিল একান্তভাবে পরিবারের সঙ্গে কাটানো একটি আবেগঘন মুহূর্ত। তবে এবারের রমজান মাসটি ছিল একটু ভিন্ন—বিশ্বের নানা প্রান্তে যুদ্ধ চলছে, মানুষের জীবনে অস্থিরতা ও দুঃখের ছাপ পড়েছে। এমন এক পরিস্থিতিতে, আমাদের কি ঈদ উদযাপন করা উচিত? আমাদের চারপাশে অসংখ্য মানুষের কষ্টের গল্প, সংগ্রামের মাঝে ঈদের আনন্দ কীভাবে সম্ভব?
রমজানের শুরুতেই ফেসবুকে একটি পোস্ট চোখে পড়লো যা আমার মনে গভীর প্রভাব ফেললো। সেখানে লেখা ছিল, “অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় ধুকছে হার্ট ছিদ্র মেহজাবিন!” মেহজাবিনের জীবন ছিল এক অন্ধকার পথে হেঁটে চলা। জন্ম থেকেই তার হার্টে দুটি ছিদ্র ছিল, যা ভেন্ট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট নামে পরিচিত। ছোট্ট মেহজাবিনের জীবনের শুরুতেই ঘটে যায় এক অদম্য যুদ্ধ। তার বাবা-মা, যারা একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন, তাদের একমাত্র আয়ে কোনোমতে সংসার চলে। তবে মেহজাবিনের চিকিৎসার জন্য যে বিশাল অর্থের প্রয়োজন ছিল, তা তাদের জন্য ছিল এক অসীম দূরত্ব।
মেহজাবিনের বাবা-মা প্রায় তিন বছর ধরে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা চালিয়ে গেছেন, কিন্তু অর্থের অভাবে তার হার্টের অপারেশন করা সম্ভব হয়নি। অনেক দিন ধরে চিকিৎসার পর একটি ছিদ্র সেরে গেলেও, আরেকটি ছিদ্র বন্ধ করা সম্ভব হয়নি, এবং তা ছিল জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন করতে হবে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ ছিল না—তারা পুরো পৃথিবীকে একে অপরের সহায়তার জন্য ডাকছিলেন। এরই মধ্যে আমার এলাকার এক ছোট ভাই, শাহজাহান মিয়া, সে সব সময় আমার নানা ধরনের মানবিক কাজে সহযোগিতা করে থাকে। সে একজন মানবিক কর্মী, ফেসবুকে পোস্টটি শেয়ার করেছিল, যা আমার মনকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিল।
তখনই আমি অনুভব করলাম, প্রতি বছরের মতো এ ঈদেও যদি আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু করতে পারি, তবে এই অসহায় পরিবারকে সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য হবে। আলহামদুলিল্লাহ, মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায়, আমি দ্রুত ফোন করলাম আমার বন্ধু—ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাজমুলকে। কয়েক মিনিটের মধ্যে, আরেক বন্ধু, মানবিক চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার (জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকার পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট) আমাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন। তার সহায়তায় মুলত মেহজাবিনের চিকিৎসা শুরু হলো।
এভাবেই আমরা তিন বন্ধু-শাহরিয়ার, নাজমুল, এবং আমি—আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের সহযোগিতার মাধ্যমে মেহজাবিনের অপারেশন সফল করতে সক্ষম হলাম। তার হার্টের ছিদ্র বন্ধ হয়ে গেল এবং সে এখন সুস্থ। ঈদের ঠিক আগেই, আমাদের হৃদয়ে এক অদ্ভুত আনন্দ সৃষ্টি হলো, যা আসল ঈদ উদযাপনের অনুপম এক উদাহরণ হয়ে উঠল। এই অনুভূতিটি ছিল কেবল আনন্দের নয়, বরং এটি মানবতার জয় ছিল। ঈদের প্রকৃত আনন্দ তখনই আসে যখন আমরা একে অপরকে সহায়তা করি এবং মানবিকতা ও ভালোবাসার মাধ্যমে সমাজের কল্যাণে অংশ নিই।
আমার পরিবার, শাহীন, মান্নান ভাই, আমার সহধর্মিণী এবং জুলফিকার সহ যাঁরা নানা উপায়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন, তাদের প্রতি আমি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। ঈদের এই শুভ সময় আমরা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে সত্যিকারের রমজান এবং ঈদ উদযাপন করার সুযোগ পেয়েছি—এবং এটাই ছিল ঈদের প্রকৃত মানে। যে ঈদ শুধু রোজা, খাবার ও পোশাকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং রমজান একে অপরকে সাহায্য করার, ভালোবাসা দেখানোর এবং মানবতার পথে চলার সঠিক শিক্ষা দেয়।
এই রমজান মাসটি আমাদের জন্য নতুন এক শিক্ষা নিয়ে এসেছে—যখন আমরা একসাথে কাজ করতে পেরেছি, আমাদের মধ্যে কেবল ঈদের আনন্দই সৃষ্টি হয় নি, বরং একত্রিতভাবে আমরা পৃথিবীটিকে একটু সুন্দর এবং মানবিক করে তুলতে পেরেছি। মানবতা কখনো হারিয়ে যায় না—এটা আমাদের সবার জন্য একটি অমূল্য শিক্ষা, যা এবারের ঈদও আমাদের শিখিয়েছে।
যতদিন পৃথিবীতে মানুষ থাকবে, ঈদের প্রকৃত অর্থ কখনো বদলে যাবে না। ঈদ হবে সেই সময় যখন আমরা একে অপরকে সাহায্য করব, ভালোবাসা দেখাবো এবং মানবতার পথে চলবো। আসুন, ঈদের এই মুহূর্তে আমরা সবাই মিলে নিজেদের কর্তব্য পালন করি, যাতে প্রকৃত ঈদের আনন্দ আসে—এবং এটি শুধু আমাদের পরিবার, বন্ধুদের জন্য নয়, বরং সেই সব অসহায় মানুষের জন্য, যারা আমাদের সহায়তা চেয়েছে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস: যোগ্যতা, সম্ভাবনা ও বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা

জাতিসংঘের মহাসচিব এমন একজন নেতা, যিনি কেবল একটি সংস্থা পরিচালনা করেন না, বরং বৈশ্বিক শান্তি, মানবিক মূল্যবোধ এবং ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে কাজ করেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিঃসন্দেহে সেই ব্যক্তি, যিনি তার কাজ ও দর্শনের মাধ্যমে বহু আগেই বিশ্ববাসীর আস্থা অর্জন করেছেন। তিনি এমন একজন নেতা, যিনি ক্ষমতা নয়, মানুষের কল্যাণকেই সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছেন।
বিশ্ব আজ গভীর সংকটে নিমজ্জিত। যুদ্ধ, দারিদ্র্য, বৈষম্য, জলবায়ু পরিবর্তন, শরণার্থী সমস্যা এবং দুর্নীতির করাল গ্রাসে বিপর্যস্ত মানবসভ্যতা। জাতিসংঘের মতো সংস্থার প্রয়োজন কখনো এত তীব্রভাবে অনুভূত হয়নি। কিন্তু এই সংস্থার কার্যকারিতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ—অর্থবিত্ত, রাজনীতি ও ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতার কারণে এটি তার মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘকে যদি তার প্রকৃত দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা হয়, তবে এমন একজন নেতার প্রয়োজন, যিনি দূরদর্শী, নিরপেক্ষ, মানবিক এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহসী। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেই নেতা।
তিনি শুধু একজন নোবেল বিজয়ী নন, বরং দারিদ্র্য বিমোচনের একটি নতুন দর্শন প্রতিষ্ঠার কারিগর। ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে তিনি বিশ্বকে দেখিয়েছেন, কেবল দাতা সংস্থা বা সরকারি উদ্যোগই নয়, বরং সাধারণ মানুষও নিজেদের ভাগ্য গড়ে নিতে পারে যদি তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হয়। তিনি এমন এক বিশ্ব কল্পনা করেন, যেখানে কেউ দারিদ্র্যের অভিশাপে জর্জরিত থাকবে না। জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে তিনি এই দর্শনকে আরও বিস্তৃত পরিসরে প্রয়োগ করতে পারেন, যেখানে অর্থনৈতিক অসমতা হ্রাস, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন হবে বৈশ্বিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি।
তার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তিনি মানুষকে বিশ্বাস করেন, এবং মানুষ তাকে বিশ্বাস করে। রাষ্ট্রনেতারা তাকে সম্মান করেন, সাধারণ মানুষ তার কথায় আশার আলো দেখতে পান। তার প্রতি এই বিশ্বাস শুধু তার কাজের ফল নয়, বরং তার সততা, নৈতিকতা এবং গভীর মানবিক মূল্যবোধের পরিচায়ক। তিনি কখনো ক্ষমতার মোহে পরিচালিত হননি, বরং ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও শান্তিকেই তার প্রধান লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
কূটনৈতিক দক্ষতার দিক থেকে তিনি অনন্য। তিনি কখনো আগ্রাসী নন, কিন্তু তার উপস্থিতিই সমস্যার সমাধানের পথ খুলে দেয়। কল্পনা করুন, সিরিয়া বা গাজার কোনো শরণার্থী শিবিরে তিনি যখন প্রবেশ করবেন, তখন কী হবে? মানুষ তাকে কেবল একজন নেতা হিসেবে নয়, বরং একজন সহমর্মী, এক আশার প্রতীক হিসেবে দেখবে। আফ্রিকার কোনো খরাক্রান্ত গ্রামে, যেখানে শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে, তিনি সেখানে গেলে শুধু ত্রাণ নিয়ে যাবেন না, বরং একটি টেকসই অর্থনৈতিক মডেল প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবেন, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ পথ তৈরি করবে।
তার ভাষাগত দক্ষতাও তাকে আরও যোগ্য করে তুলেছে। ইংরেজিতে তার সাবলীলতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাকে স্পষ্টভাবে নিজের কথা বলার সুযোগ দিয়েছে। তিনি যেভাবে নীতিগত অবস্থান নেন, তা শুধু ভাষাগত দক্ষতার কারণেই নয়, বরং তিনি বিশ্বাস করেন যে সত্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা উচিত।
বাংলাদেশের বর্তমান সংকটেও তিনি যে দূরদর্শিতা দেখিয়েছেন, তা তাকে আরও যোগ্য প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। দেশে যখন রাজনৈতিক সংঘাত ও অনিশ্চয়তা চরমে, তখন তিনি শান্ত, দৃঢ় এবং নীতিগত অবস্থান নিয়ে সংকট মোকাবিলা করেছেন। এটি প্রমাণ করে যে, তার নেতৃত্ব কেবল তাত্ত্বিক নয়, বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে আছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব নির্বাচনে কেবল অভিজ্ঞতা নয়, বরং নৈতিকতা ও নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ড. ইউনূস কেবল জাতিসংঘের নেতৃত্ব দিতে পারবেন না, বরং এই সংস্থাটিকে তার আদর্শিক পথে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। তার নেতৃত্বে জাতিসংঘ আরও স্বচ্ছ, গণমুখী এবং কার্যকর সংস্থা হয়ে উঠতে পারে, যা সত্যিকারের বিশ্বশান্তি ও ন্যায়ের পথে এগিয়ে যাবে।
আমরা এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আছি, যখন জাতিসংঘের মতো সংস্থাগুলোর প্রয়োজন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। কিন্তু এটি তখনই কার্যকর হবে, যখন এর নেতৃত্বে একজন সত্যিকারের বিশ্বনাগরিক থাকবে, যিনি ক্ষমতা নয়, মানবতার সেবাকে অগ্রাধিকার দেবেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেই ব্যক্তি, যিনি শুধু জাতিসংঘের নেতৃত্বই দিতে পারেন না, বরং এই সংস্থাটিকে তার আসল উদ্দেশ্যের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। তিনি কেবল একজন সম্ভাব্য প্রার্থী নন, বরং এই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় নেতা।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
জুলাই বিপ্লব: জাতীয় ঐক্যমত, সংস্কার অতঃপর নির্বাচন

জুলাই-আগস্ট (২০২৪) ছাত্রজনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কাজেই এই সরকার অপরাপর গতানুগতিক রাজনৈতিক দলের গঠিত সরকারগুলোর মতো নয়। তারা দলীয় সরকার নয় বলে তাদের সামনে দলীয় মতাদর্শভিত্তিক কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডাও নেই। তাদের সামনে রয়েছে জাতীয় আকাঙ্ক্ষা, যা আন্দোলনের রাজপথ থেকে উত্থিত ও গৃহীত। যে কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রচার মাধ্যমের বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে, জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে সংস্কার ও নির্বাচন শীর্ষক বিভিন্ন সংলাপ। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে ছাত্র-জনতা আমাদেরকে দেশের নতুন দিক নিয়ে আলোচনা করার ব্যাপক সুযোগ করে দিয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান রাস্ট্র কাঠামো পূর্ণ গঠনকরার জন্য এক বিরল সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে,আশা করা যায় এর মাধ্যমে ধ্বংসের দারপ্রান্তে পৌছা রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অব্যবস্থাপনা ও দীর্ঘ সময়ের ফেসিবাদী দু:শাসন থেকে মুক্ত হয়ে গণতন্ত্র,ন্যায়বিচার ও সহনশীলতার পথে এগিয়ে যাবে। এই সুযোগ বার বার আসবে না। বিগত ৫৪ বছরে কারণে অকারণে বিভেদবান ক্ষমতাসীনরা জাতিকে সে সুযোগ দেয়নি। জুলাই-অগাস্ট যে কারণে গণবিপ্লব এর রূপ নিয়েছিল, আমাদেরকে সেই বিপ্লবের সার্থকতাকে ধরে রাখতে হলে বিভেদ-বিভাজন না করে, জাতীয় স্বার্থে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা যদি রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠন করতে না পারি আমাদের স্বাধীনতা অরক্ষিত হয়ে যাবে। আমাদের অবচেতনে পরাধীনতার গ্লানীতে ভুগতে হবে। জাতি হিসেবে আমরা মর্যাদাহীন হয়ে পড়ব।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য নতুন অধ্যায়। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরশাসক ব্যবস্থার থেকে প্রায় হাতছাড়া হতে যাওয়া সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনা আমাদের এযাবৎ কালের শ্রেষ্ঠ অর্জন। যা আজীবন ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বুক ভরা আশা-স্বপ্ন নিয়ে ৭১-এ লক্ষ শহীদের রক্তদান ও মা-বোনের পবিত্র ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতা একটি নতুন দেশের অস্তিত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আজ সেই স্বপ্নময় স্বাধীনতা রূপান্তরিত হয়েছে গ্লানী ও হতাশায়। সম্মান, জাতীয়তাবোধ, মর্যাদাবোধ, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ এসব কিছুই আজ বিধ্বস্ত। আমাদের বিবেক আজ লুপ্তপ্রায়। সুবিধাবাদ এবং অযোগ্যতার মহড়ায় গোটা জাতি আজ নীরব নিশ্চল অসহায় ও জিম্মি। তাই, ২৪ এসেছে স্বৈরশাসক এর বিরুদ্ধে মানুষের বাক স্বাধীনতা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার এক গৌরবময় বিজয় নিয়ে।
অনেক দেশের ক্ষেত্রে, বিপ্লব বা বড় রাজনৈতিক উত্থান (যেমন ১৮৩০সালে ফ্রান্সে জুলাই বিপ্লব) প্রায়ই সংস্কার এবং আলোচনার সময়কালকে উদ্বুদ্ধ করে। এই পরিস্থিতিতে, যে সঙ্কট বা অভ্যুত্থানের একটি মুহূর্ত রাজনৈতিক শক্তিগুলিকে একত্রিত হওয়ার, অর্থপূর্ণ সংলাপে জড়িত হওয়ার, এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলি নিশ্চিত করে এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সংস্কারের মঞ্চ তৈরি করতে পারে।
গত দুই দশক ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নির্বাচন ব্যবস্থায় অপ্রতুলতা তথা অবিচ্ছিন্ন সংস্কারের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। যারফলে রাস্ট্র ক্ষমতায় যারাই থাকেন তারাই স্বৈরাচারী হয়ে উঠেন। তাঁরা দেশের জনগণ, সংবিধান, আইনের রীতিনীতি অগ্রাহ্য করে জোর করে ক্ষমতা গ্রহণ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে তাঁদের অধীনস্থ করে রাখেন। মিথ্যাকে সত্যে রুপান্তরিত করার অপচেষ্ট চালিয়ে যান। বিগত ষোল বৎসর ঘটনা বহুল অনেক ইস্যু থাকার পরও রাজনৈতিক দলগুলি বা সুশীল সমাজ তেমন কিছু করতে পারে নাই। ২০২৪-এর বিপ্লবে যে পরিবর্তন এর প্রেক্ষাপট তৈরী হয়েছে তা কাজে লাগাতে হবে। এসুযোগ বারবার আসবে না।
নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সংস্কারবিহীন নির্বাচন এই দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না। দেশের শাসন ব্যবস্থায় এবং নির্বাচনে সংস্কার বিষয়ে পুরো জাতি আজ ঐকমত্য। জাতীয় ঐক্য এবং নির্বাচনী সংস্কার একে অপরের সাথে দৃঢ় সম্পর্কিত দুটি বিষয়। নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে যাতে জনগণের ভোটাধিকারের প্রতি বিশ্বাস এবং অংশগ্রহণ বাড়ানো যায় এবং এর মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট গণতান্ত্রিক ভাবে সুসংগঠিত হয়। ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন একটিকে ছাড়া অপরটি সফল হবে না। ঐক্যবিহীন সংস্কার কিংবা সংস্কারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না। সংস্কার প্রয়োজন কারণ বিগত সময়ে দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি, এর অন্যতম প্রধান কারন প্রায় সকল রাজনৈতিক দলগুলিতেই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চালু না থাকা।
বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা আপাত দৃষ্টিতে একটি স্বাধীন ব্যবস্থাপনা। যদিও নির্বাহী বিভাগের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছে বারবার। অতীতে নির্বাচনী সহিংসতা এবং ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার কারণে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের স্বাবলম্বী ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সংস্কারের প্রয়োজন। ভোটিং প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং দ্রুত ফলাফল নিশ্চিত করতে আধুনিক প্রযুক্তি র্নিভর নিবিড় পর্যবেক্ষণ দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সকল রাজনৈতিক দলের সমঝোতা এবং জনগণের জন্য নিরাপদ নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি। একতরফা নির্বাচনে জনগণের বিশ্বাস বজায় থাকে না এবং যার ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয় ও স্বৈরতান্ত্রিক সরকার আবির্ভূত হয়।
জনগণের প্রত্যাশার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে জাতিয়-আর্ন্তজাতিক ইস্যুতে ঐক্য এবং সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক যাতে জনগণের কল্যাণে একটি দীর্ঘমেয়াদি এবং সুদৃঢ় নীতি নির্ধারণ করা যায়। জাতীয় ঐক্য একমাত্র তখনই সম্ভব, যখন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের স্বার্থত্যাগ করে জনগণের কল্যাণে একত্রিত হবে।
রাজনৈতিক নেতা ও দলগুলোর মধ্যে সদিচ্ছা এবং পরস্পরের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা তৈরি হওয়া জরুরি। জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি আস্থা সৃষ্টি করতে হবে। যেকোনো রাজনৈতিক আন্দোলন বা আলোচনাইয় মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। সংস্কার এবং জাতীয় ঐক্য এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী এবং সমতাভিত্তিক হবে, এবং রাজনৈতিক দলগুলো একত্রিত হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করবে। স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র, এবং ন্যায়ের ভিত্তিতে নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনা দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে আরও শক্তিশালী এবং সুদৃঢ় করবে। স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পুনরাবির্ভাব ঠেকাতে রাষ্ট্রের সংস্কার অপরিহার্য।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ন্যূনতম যে সকল সংস্কারগুলো প্রয়োজন, সেগুলো সম্পন্ন করার সুযোগ না দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে র্নিবাচন এ বাধ্য করা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠছে অনেকে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সবকিছু সংস্কার করা হয়তো সম্ভব নয়। তার জন্য প্রয়োজন সময়ের । ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৯ সালে হওয়ার কথা। অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন যদি করতেই হয়, প্রথমে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন কাঠামোর নির্বাচন হওয়া উচিত। এতে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কতটুকু হয়েছে তা বুঝা যাবে। আর তা না হলে শুধু রাতের অন্ধকারে নয় বরং দিনের আলোর নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। কী জানি অনেকে হয়তোবা তাই চাইছে। ২০২৪-এর জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের ছয় মাসের মাথায় ষোল বৎসরের জঞ্জাল ঠিক হয়ে যাবে বা ঠিক করে ফেলা হবে এমন চিন্তা আকাশ কুসুম কল্পনা বা জুলাই বিপ্লবকে প্রশ্ন বিদ্ধ করা ছাড়া আর কিছুই নয়। কোনোভাবেই ফ্যাসিস্টের বিচার ও অর্থবহ সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করা ঠিক হবে না! সকলেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করে রাস্ট্র কাঠামো ঠিক করার দিকে নজর দিতে হবে । প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিষদ সংস্কার করে শক্তিশালী করতে হবে!
জনগণ সংস্কার চায় এবং চায় এমন একটি নির্বাচনি ব্যবস্থা যেখানে তার ভোট দেবার অধিকার থাকবে এবং সেই ভোট (ক্ষমতার) নির্ধারক হবে,জবাবদিহি ব্যবস্থা থাকবে। সর্বোপরি, ক্ষমতার যেন এককেন্দ্রীকরণ না ঘটে। জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া গণতন্ত্র ও মানবিক মর্যাদা অর্জন কখনোই সম্ভব নয়। নির্বাচন রাজনীতি ব্যবসায় রূপান্তরিত যেন আর না হয় তার জন্য সজাগ থাকতে হবে।
ভাগ্য নির্মাণের সুযোগ বার বার অসে না। সুযোগ পেলেও তা নষ্ট হয়েছ অনেক বার। ২০২৪ সালে আবার আরেকটি সুযোগ এসেছে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে। তাদের গণআন্দোলন স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ এনে দিয়েছে। যে ছাত্রসমাজ বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে, সে ছাত্রসমাজ নানা কারণে ম্রিয়মাণ হলেও যে হারিয়ে যায় নি, তা জুলাই-আগস্টের ঘটনা প্রমাণ করেছে। জাতি গঠনে তাদের পুরনো ভূমিকাকে তারা নতুন করে উজ্জীবিত ও উপস্থাপিত করেছে। বাংলাদেশের মতো রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত সমাজে অন্তত সংস্কারের বিষয়ে সকল পক্ষকেই জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। দলীয় বা গোষ্ঠীগত বিবেচনার বাইরে এসে দাঁড়াতে হবে সকল পক্ষকে। সংস্কার, জাতীয় স্বার্থ ও ঐকমত্যই হবে মূল আলোচ্য বিষয়, দলীয় দ্বন্দ্ব-সংঘাত এক্ষেত্রে যেন প্রাধান্য পেতে না পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে, এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে গ্রহণ করা। তারা যেন যুক্তি ও তথ্য দিয়ে সংস্কার প্রসঙ্গে আলোচনা করে এবং শেষ পর্যন্ত একটি ঐকমত্যে পৌঁছায়। যার ভিত্তিতে তারা নিজেদের মধ্যে এমন একটি অঙ্গীকারে উপনীত হবে যে, জনগণের ভোটের বাইারে কোনো নির্বাচন মানবো না। সংস্কার ও নির্বাচনের মাধ্যমে একটি কার্যকর্ সমন্বয় সাধিত করে ভবিষ্যতের বাংলাদেশে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য ও ঐকমত্যের পথ প্রশস্ত করবে। রাজনৈতিক ঐক্য না থাকার কারনে কথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী কিছু স্বার্থন্বেসী মানুষ লোভে পড়ে ক্রমশ হিংস্র হয়ে আন্দোলন্রত শিক্ষার্থীদের উপর র্নিবিচারে গুলি চালায়। জাতিসংঘের তদন্তেও যা প্রমানীত কি ভাবে ফেসিস্ট সরকার নিজ দেশের মানুষের প্রতি অবিচার করেছে।
জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠার পথে সহায়ক হবে। নির্বাচন সংস্কার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক দলের মধ্যে একতাবদ্ধতা দেশকে একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড় করাতে সাহায্য করবে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হবে, এতে দীর্ঘমেয়াদি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। সামাজিক উন্নয়ন এবং জনকল্যাণের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারবে, যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং বেকারত্ব দূরীকরণ। বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অব্যবস্থাপনা ও ফেসিস্টের কুশাসন থেকে মুক্ত হয়ে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, সহনশীলতা ও বৈষম্যহীনতার পথে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে । জনআকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে সংস্কার ও পরিবর্তন, ভবিষ্যতের বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ পুনরায় ফিরে আসার কাল্পনিক আকাঙ্খা রোধ করবে। অতীতের যাবতীয় ভুল ও ব্যর্থতা দূর করার মহত্তর এই সুযোগ নষ্ট হলে আমাদেরকে চড়া মাশুল দিতে হবে। অতএব, আমাদের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের পথে এই সুযোগে আমাদেরকেই নির্মাণ করতে হবে।
আন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারের নিমিত্বে যে ৬টি কমিশন গঠন করেছেন ইতিমধ্যে সবাই তাদের গঠিত সুপারিশ রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। সংস্কারের নিমিত্বে সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমযোতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি সব দলের প্রতিনিধিত্বে সমন্বয় ও মতামত জরিপে বিশেষ সভা করেছেন, যেখানে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মানে সংস্কার অপরিহার্য এবং তিনি তা সকলের মতামতের ভিত্তিতে করতে চান। এবং এই মর্মে তিনি সকল দলের নেতাদেরকে স্ব স্ব মতামত লিখিত ভাবে প্রদানের কথা স্পষ্ট করেছেন। যেখানে প্রস্তাবের যেকোন প্রসংগে তাদের পূর্ণ বা আংশিক যেকোন ভাবে দ্বিমত পোষনের একতিয়ার রয়েছে । তিনি নিশ্চিত করেছেন সকল দল সংস্কার প্রস্তাবের যে কোন বিষয়ের পক্ষে বিপক্ষে তাদের মতামত দিতে পারে তবে তা অবশ্যই লিখিত ও যথার্থভাবে স্বাক্ষরিত হতে হবে কেননে তিনি তা জনসমক্ষে তুলে ধরতে চান ওয়েবসাইট এ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরে ঐকমত্যে পৌছতে পারলে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানে বিশ্বদরবারে তা হতে পারে ২০২৪ এর বাংলার আর এক ম্যগনাকার্টা।
লেখক: অধ্যাপক সরওয়ার জাহান, টেকসই উন্নয়ন কর্মী
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি

> সন্ত্রাসী রাজনীতিবিদদের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা বোর্ড দুর্নীতির গভীরে নিমজ্জিত, এবং বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে।
> সদ্য নহাটা (মাগুরা জেলাধীন) হাইস্কুলের অ্যাডহোক সভাপতি নিয়োগে প্রধান শিক্ষকসহ যেসব বিএনপি নেতাকর্মীর নাম উঠে এসেছে, তা শিক্ষাখাতে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র স্পষ্ট করে। প্রতিবেদনে উত্থাপিত তথ্যের ভিত্তিতে, শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত, কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া শুধু জরুরি নয়, বরং সময়ের দাবিতে অবিলম্বে বাস্তবায়ন প্রয়োজন। অন্যথায়, এই অব্যাহত অনিয়ম শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও গভীর সংকটে ঠেলে দেবে।
> শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই ধরনের দুর্নীতি প্রতিরোধ ও প্রতিকার করতেই হবে, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত শিক্ষাব্যবস্থার শিকার হবে।
> এই প্রসঙ্গে একজন মন্তব্য করেছেন—
> “যেখানে স্থানীয় সমাজের সামর্থ্য নাই একটা স্কুলের সভাপতি নির্বাচনের দুর্নীতি ঠেকানোর, ওই সমাজকে সাহায্য করে লাভ কী? ওই সমাজ নিজেই তো সাবালক হয়নি।”
>
> কথাটা শোনার পর আমার বলার কিছু ছিল না। কিন্তু আমি থেমে নেই। কারণ জানেন?
> — Local concern, global solution.
রমজানের শিক্ষা ও আমার মানবিক কার্যক্রম
> রমজান আমার কাছে শুধু ধর্মীয় ইবাদতের মাস নয়; এটি আত্মশুদ্ধি, সহানুভূতি ও মানবতার সেবার এক অনন্য শিক্ষার সময়। এই মাসের শিক্ষা আমি শুধু রমজানেই নয়, বরং সারা বছর ধরে অনুসরণ করার চেষ্টা করি।
> আমি নিয়মিত আমার ইনকামের চল্লিশ শতাংশ ট্যাক্স হিসেবে প্রদান করি, যাতে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে আমার অংশগ্রহণ থাকে। বাকি অর্থের পঁচিশ শতাংশ মসজিদ ও দানের কাজে ব্যয় করি। অবশিষ্ট অংশ দিয়ে জীবনযাপন করি, তবে এর বাইরেও কিছু মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করি, যা মূলত সমাজের কল্যাণ ও ইসলামের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য।
> আমি বিশ্বাস করি, দান বা সাহায্য শুধু তৎক্ষণাৎ সহানুভূতি প্রকাশ নয়, বরং একটি সুন্দর সমাজ গড়ার প্রচেষ্টা। কয়েক বছর আগে আমি একজন শিক্ষককে একটি বাড়ি করে দিয়েছিলাম, যাতে তিনি শিক্ষার্থীদের নিয়ে নির্বিঘ্নে শিক্ষাদান করতে পারেন। উদ্দেশ্য ছিল সবাই মিলে একটি ভালো কাজ করা এবং শিক্ষার মাধ্যমে ইতিবাচক সংস্কৃতি গড়ে তোলা।
আমি প্রায়ই গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই। যখন দেখি—
> • কারো মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই,
> • কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে ধুঁকছে,
> • কারো চিকিৎসার সুযোগ নেই,
> • কেউ পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছে না,
> • অর্থের অভাবে ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে,
> • ভর্তি পরীক্ষার জন্য থাকা-খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না—
> তখন আমি যতটুকু পারি সাহায্যের চেষ্টা করি। মানবতার কল্যাণে কাজ করা, ইসলামের প্রকৃত আদর্শ বাস্তবায়ন করা এবং অন্যদের অনুপ্রাণিত করাই আমার অন্যতম দায়িত্ব বলে মনে করি।
> আমি শিখেছি, দলবদ্ধভাবে কাজ করলে যেকোনো সমস্যার মোকাবিলা করা সহজ হয়। তবে আমার প্রচেষ্টা সবসময় সফল হয়নি। দুর্নীতি সমাজে যেভাবে বিস্তার লাভ করেছে, আমার মানবিক কাজগুলো সে অনুপাতে বাড়েনি। অনেকেই মানবিক কাজকে “বিনিয়োগ” হিসেবে দেখে, স্বার্থ হাসিলের সুযোগ নেয়। কিন্তু আমি এটিকে নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা হিসেবে দেখি—মানুষের কল্যাণই আমার একমাত্র উদ্দেশ্য।
> এবারের রমজানে আল্লাহর রহমতে আমি দুটি উল্লেখযোগ্য কাজ করতে পেরেছি—
> ১. তিন বছর বয়সী শিশুর হার্ট অপারেশন করানো:
> এই শিশুর পরিবার চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে পারছিল না, তাই আমি পাশে দাঁড়াই এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। আলহামদুলিল্লাহ, সবকিছু সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
> দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় হাসপাতালে কাটিয়েছে ছোট্ট মেহজাবিন ও তার মা-বাবা। এখন সে সুস্থতার পথে, এবং ইনশাআল্লাহ, দু’-একদিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবে। আমি প্রার্থনা করি, সে বড় হয়ে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুক।
> ২. একটি স্কুলে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো:
> আমার এলাকার একটি স্কুলে সভাপতির নিয়োগ নিয়ে বিশাল দুর্নীতি হচ্ছিল। আমি এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি, যদিও পথটা সহজ ছিল না।
> শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানুষের গড়ার পবিত্র স্থান—সেখানে দুর্নীতির কোনো স্থান নেই। কিন্তু কিছু মানুষ এটিকে ক্ষমতা, লোভ ও স্বার্থের কেন্দ্রে পরিণত করতে চায়। আমি বিশ্বাস করি, এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর মতোই গুরুত্বপূর্ণ।
> আমি একা কিংবা কিছু কাছের বন্ধুদের সহযোগিতায় মানবিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তবে এই পথে বহু বাধা এসেছে। দুর্নীতি, স্বার্থপরতা ও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ নয়। তবুও আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, কারণ আমি জানি—
> অন্যায় দেখেও চুপ করে থাকা মানে সেটাকে মেনে নেওয়া।
> আমি শিখেছি, সমাজ পরিবর্তন রাতারাতি সম্ভব নয়। এটি সময়সাপেক্ষ, কিন্তু ধাপে ধাপে অগ্রসর হওয়া যায়। একা হয়তো সবকিছু করা সম্ভব নয়, কিন্তু দলবদ্ধভাবে, পরিকল্পিত উদ্যোগের মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব।
> পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগিতা থাকলে সমাজে সত্যিকারের পরিবর্তন আনা সম্ভব। আমি এখনো পুরোপুরি সফল হতে পারিনি, কিন্তু আমার লক্ষ্য থেকে এক মুহূর্তের জন্যও সরে আসিনি। যতদিন পারব, ততদিন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাব।
> তবে আমি শুধু কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করি। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ—কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত—এসবের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে, এর বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে হলে সেই মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
> আমার বিশ্বাস, আমাদের কর্মই আমাদের পরিচয়। তাই আমি যা বলি, তা কাজে করে দেখানোর চেষ্টা করি। কথার সঙ্গে কাজের মিল থাকলে তবেই সমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব।
> আমরা যদি একটি বাস্তব উদাহরণে সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন করি, তা আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে যে এই বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও অনেক অপ্রিয় সত্য এখানে তুলে ধরা হবে, তবুও আমার বিশ্বাস, এটি আমাদের জন্য ইতিবাচক হবে। কারণ, এই প্রতিবেদনটি যদি সিস্টেমের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে আমরা বিষয়টিকে ব্যক্তিগত পর্যায় না গিয়ে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার কাঠামোতে দেখতে পারব। এতে আমাদের বুঝতে সুবিধা হবে এবং ভবিষ্যতে একটি দুর্নীতি-গ্রস্ত সিস্টেমের বিরুদ্ধে কীভাবে সঠিকভাবে লড়াই করা সম্ভব, সে বিষয়ে পথপ্রদর্শন পাবে।
> আমার গত এক মাসের অভিজ্ঞতা থেকে, বিশেষত রামজান মাসে, একটি দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করতে চাই। এই প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু হল মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা গ্রামে অবস্থিত রাণী পতিত পাবনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভাপতি নিয়োগের ঘটনা এবং এর সাথে জড়িত দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব, প্রশাসনিক অনিয়ম, এবং প্রতারণার চিত্র। আমি এখানে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, গণমাধ্যমের তথ্য এবং প্রামাণ্য অডিও ক্লিপের ভিত্তিতে সুষ্ঠু ও নির্মোহ বিশ্লেষণ তুলে ধরছি। এই বিশ্লেষণ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় দুর্নীতির শেকড় কতটা গভীরে প্রোথিত, তা পরিষ্কারভাবে ফুটিয়ে তুলবে।
> নহাটা রাণী পতিত পাবনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির নিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে। স্থানীয় জনগণ, অভিভাবক এবং শিক্ষকরা অভিযোগ জানালেও, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুর্নীতির গোষ্ঠীটি সভাপতির পদ দখল করতে সক্ষম হয়েছে। এই ঘটনায় মূল ভূমিকা পালন করেছে:
> ১. স্কুলের প্রধান শিক্ষক – যিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অপকর্মের সাথে যুক্ত এবং ক্ষমতাসীন সরকারের ছায়ায় দুর্নীতি চালিয়ে এসেছেন।
> ২. বিএনপি নেতা রবিউল ইসলাম নয়ন – যিনি স্থানীয় প্রশাসনকে প্রভাবিত করে, নিজের মনোনীত প্রার্থীকে সভাপতি পদে বসিয়েছেন।
> ৩. উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসার এবং ইউএনও – দুর্নীতির সহযোগিতা করেছেন, সঠিক তদন্ত না করে।
> ৪. যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান – যিনি দায়িত্ব পালনে চরম অনীহা দেখিয়ে, দুর্নীতির প্রসারে প্রশ্রয় দিয়েছেন।
>
> স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, বিএনপি নেতা রবিউল ইসলাম নয়ন এই দুর্নীতির মূল কেন্দ্রবিন্দু। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে:
> • তিনি তারেক রহমানের নাম ব্যবহার করে প্রশাসনের উপর প্রভাব বিস্তার করেছেন।
> • স্কুল পরিচালনা কমিটিতে নিজের অনুসারীদের বসিয়ে, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি করেছেন।
> • চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে জনগণের মতামত উপেক্ষা করেছেন।
> ক্ষমতার ভয় দেখিয়ে শিক্ষকদের নিরপেক্ষ মত প্রকাশের সুযোগ বন্ধ করেছেন।
>
> নহাটা স্কুলের সভাপতির নিয়োগ নিয়ে গণমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে:
> • জেলা প্রশাসক (ডিসি) বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে তিনজন যোগ্য প্রার্থীর নাম পাঠানোর অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু প্রধান শিক্ষক তা অগ্রাহ্য করেন।
> • নয়নের সন্ত্রাসী কার্যক্রম এর বিরুদ্ধে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করেছে।
> • রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে সভাপতি নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে।
>
> শিক্ষা প্রশাসনের দুর্নীতি শুধু নহাটা স্কুলেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অবনতির প্রতিচ্ছবি।
> যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান:
> • নিয়োগ সংক্রান্ত লিখিত দরখাস্ত দাখিল করার পরও দুর্নীতি বন্ধ করতে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেননি।
> • নয়নের স্ত্রীকেই সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্নীতি এবং অপসারণযোগ্যতার চিত্র স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।
>
> এই প্রতিবেদনটি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, প্রশাসনিক দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি বাস্তব চিত্র উপস্থাপন করেছে। এখন সময় এসেছে শিক্ষাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে এবং সৎ, দক্ষ, এবং যোগ্য ব্যক্তিদের প্রশাসনিক পদে বসানোর।
> • দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
> • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দিতে হবে।
> অন্যথায়, যদি এই অনিয়ম অব্যাহত থাকে, তাহলে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তি দুর্বল হয়ে যাবে এবং জাতি একটি অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে চলে যাবে।
> রবিউল ইসলাম নয়ন—সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির কালো অধ্যায়
> মাগুরার প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণকারী রবিউল ইসলাম নয়ন আজ কোটি কোটি টাকার মালিক, কিন্তু তার এই আর্থিক অগ্রগতি আসলে কোন মেধা কিংবা পরিশ্রমের ফলাফল নয়। বরং তার অর্জিত সম্পত্তির পেছনে রয়েছে দখলদারি, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ব্যবসা ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অনিয়মের এক ভয়ঙ্কর চিত্র। এই অসাধু পথেই নয়ন মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই সমাজের এক ভয়ানক সন্ত্রাসী চরিত্রে পরিণত হয়েছেন।
> সম্প্রতি রবিউল ইসলাম নয়নকে ইসলামী ব্যাংক দখল করার চেষ্টার অভিযোগে জড়িত। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি এস আলম গ্রুপের হয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ব্যাংকটি দখল করতে গিয়েছিলেন।
> • নয়ন এবং তার অনুসারীরা জোরপূর্বক ইসলামী ব্যাংকে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন।
> • ব্যাংক কর্মকর্তারা বাধা দিলে এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয়।
> • এ ঘটনায় ৫ ব্যাংক কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
> • নয়ন ও তার দল অস্ত্রধারী ভাড়াটে বাহিনী হিসেবে কাজ করেছিলেন।
> এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, নয়ন শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা স্থানীয় রাজনৈতিক মঞ্চেই নয়, দেশের অর্থনৈতিক খাতেও ভয়ঙ্কর প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছেন।
> ইসলামী ব্যাংক দখল চেষ্টার আগেই, নয়ন আরো একটি বিতর্কিত ঘটনায় জড়িয়েছিলেন—তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকানা নিয়ে চলমান বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি একটি পক্ষকে সমর্থন দেন এবং এই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে চেষ্টা করেন।
> রবিউল ইসলাম নয়ন তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার জন্য তারেক রহমানের নাম ব্যবহার করে যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ হিসেবে নিজের পরিচিতি তৈরি করেন।
> • সাংবাদিক না হয়েও তিনি প্রেস লেখা জ্যাকেট পরিধান করে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন, যাতে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।
> • চাঁদাবাজি, দখল ও অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন।
> • দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশ তার এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে মৌন সমর্থন প্রদান করে, যার কারণে তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
> নয়ন শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ দুর্নীতির সাথে জড়িত নন, বরং তার অপরাধের ছায়া দেশের আর্থিক খাত, রাজনৈতিক অঙ্গন এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানে বিস্তৃত। তার এই ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ড দেশের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার একটি স্পষ্ট উদাহরণ।
> প্রধান শিক্ষকের অপকর্ম এবং নয়ন ও তার বাবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড
> মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা রানী পতিত পাবনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, যিনি দীর্ঘ ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার ছায়ায় থেকে ভয়াবহ দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন, সম্প্রতি যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়নের সাথে হাত মিলিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনার পুরো নিয়ন্ত্রণ দখল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
>
> ১. নিয়োগ বাণিজ্য: বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ লেনদেন হয়ে আসছে।
> ২. সরকারি অনুদান আত্মসাৎ: বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি অনুদান ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে।
> ৩. বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি নিয়ন্ত্রণ: প্রধান শিক্ষক নিজে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য নিজের পছন্দমতো লোকদের পরিচালনা কমিটিতে বসিয়েছেন।
> প্রধান শিক্ষক ও রবিউল ইসলাম নয়নের চক্রান্ত
> প্রধান শিক্ষক তার পুরনো দুর্নীতি ঢাকতে রবিউল ইসলাম নয়নকে সামনে নিয়ে আসেন। নয়ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপ প্রয়োগ করে বিদ্যালয়ের সভাপতি পদ দখল করার চেষ্টা করেন এবং স্থানীয় জনগণের মতামত উপেক্ষা করে নিজের স্বার্থে পরিচালনা কমিটি গঠন করেন।
> নয়ন তার বাবার সাথে মিলে এলাকার এক ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করেছেন। তার বাবা নিজেও একজন কুখ্যাত অপরাধী, যিনি বিভিন্ন দখলদারি, চাঁদাবাজির সাথে যুক্ত ছিলেন। বাবা-ছেলে মিলে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেন।
> বর্তমানে রবিউল ইসলাম নয়ন মাগুরার নহাটা স্কুলসহ পুরো জেলার জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে—
> • স্কুল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি
> • ভূমি দখল ও সাধারণ জনগণকে হুমকি দেওয়া
> • রাজনৈতিক নেতাদের নাম ব্যবহার করে প্রতারণা চালানো
> • অস্ত্রবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ
> এই পর্বে উঠে এসেছে কিভাবে রবিউল ইসলাম নয়ন তার রাজনৈতিক আশ্রয় ও প্রশাসনিক সহযোগিতার মাধ্যমে নিজেকে সমাজের এক ভয়ঙ্কর অপরাধী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
> প্রধান শিক্ষক তার দীর্ঘদিনের দুর্নীতি ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করার স্বার্থে রবিউল ইসলাম নয়নকে ব্যবহার করেছেন। নয়ন ইতিমধ্যেই এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছে এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণকে ভয় দেখিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনায় নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে।
> প্রধান শিক্ষক কীভাবে নয়নকে ব্যবহার করেছে?
> • বিদ্যালয়ে তার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে, নয়নের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে।
> • স্থানীয় অভিভাবক ও শিক্ষকরা যদি সভাপতির স্বচ্ছ নিয়োগের দাবি করেন, তবে নয়ন তাদেরকে ভয়ভীতি দেখায়।
> • পরিচালনা কমিটিতে যোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের আসতে না দেওয়ার জন্য, নয়ন প্রধান শিক্ষকের ইশারায় নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে সমর্থন দেয়।
> নয়নের লাভ কী?
> • বিদ্যালয়ের সভাপতি নিয়োগকে ঘিরে বড় অঙ্কের লেনদেন হয়ে থাকে, যা নয়ন ও তার সিন্ডিকেট ভাগাভাগি করে নেয়।
> • বিদ্যালয়ের প্রশাসন তার নিয়ন্ত্রণে আসার ফলে, ভবিষ্যতে আরো দুর্নীতি করার সুযোগ পায়।
> • প্রধান শিক্ষকের হাত ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতা আরও বিস্তৃত করার সুযোগ তৈরি হয়।
> উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসারের দুর্নীতি
> এই ষড়যন্ত্রের সাথে শুধু প্রধান শিক্ষক ও নয়নই যুক্ত নয়, বরং উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসারের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
> কীভাবে শিক্ষা অফিসাররা দুর্নীতিতে যুক্ত হলো কথা থাকলেও, তারা মূলত প্রধান শিক্ষকের পছন্দের নাম অন্তর্ভুক্ত করে।
> • স্থানীয় অভিভাবকদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে, তারা কেবল সিন্ডিকেটের সুবিধার কথা ভেবে সিদ্ধান্ত দেন।
> • সরকারি নিয়ম ভঙ্গ করে, একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে সচেষ্ট হন।
> উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসার কীভাবে নয়নকে সহায়তা করলো?
> • সভাপতি পদে নিরপেক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রেখে, নয়নের মনোনীত প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করেন।
> • জনগণের অভিযোগ অগ্রাহ্য করে, তদন্ত না করেই নয়নের সুবিধাজনক রিপোর্ট তৈরি করেন।
> • নয়নের সাথে যোগাযোগ রেখে নিয়োগ নিয়ে গোপন আলোচনা করেন।
> নয়ন শুধু প্রশাসনের সাথে নয়, বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতির সাথে নিজের নাম জড়িয়ে বড় নেতা হওয়ার চেষ্টা করে।
> তারেক রহমানের নাম ব্যবহার করে নয়নের প্রতারণা
> • নয়ন নিজেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দাবি করে।
> • কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে, নিজেকে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে উপস্থাপন করে।
> • প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক রেখে, তারেক রহমানের নাম ভাঙিয়ে স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করে।
> • নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও স্বৈরাচারী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক পরিচয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।
> জনগণের প্রশ্ন
> • বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব কি আদৌ নয়নের এসব কার্যকলাপে সমর্থন দিয়েছে?
> • নাকি নয়ন শুধুমাত্র তারেক রহমানের নাম ব্যবহার করে নিজের স্বার্থ হাসিল করছে?
> প্রশাসনের সহায়তায় সভাপতি পদ দখল
> এই পুরো দুর্নীতির নাটকে প্রশাসনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা দপ্তর যদি চায়, তবে দুর্নীতির সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তারা ইচ্ছাকৃতভাবে নয়নকে সহযোগিতা করেছে।
> প্রশাসনের ভূমিকা
> • নয়নের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও, প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
> • রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে নয়নের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ধামাচাপা দেওয়া হয়।
> • দুর্নীতি দমন সংস্থা (দুদক) পর্যন্ত অভিযোগ না পৌঁছাতে, প্রশাসনের লোকজনই বাধা দেয়।
> কীভাবে সভাপতি পদ দখল হলো?
> • প্রধান শিক্ষক ও নয়নের যোগসাজশে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হয়।
> • প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা অফিসাররা দুর্নীতির মাধ্যমে নয়নের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেন।
> • তারেক রহমানের নাম ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো হয়।
> প্রশাসন নিরব থেকে এই দুর্নীতিকে বৈধতা দেয়।
> এটি দেখিয়ে দেয়, কীভাবে নয়ন, প্রধান শিক্ষক, শিক্ষা অফিসার ও প্রশাসন একত্র হয়ে সভাপতি পদ দখল করেছে। রাজনৈতিক ক্ষমতা, দুর্নীতি ও প্রশাসনের সহযোগিতায় সাধারণ জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
> জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের ভূমিকা – দুর্নীতি দমন না করে নয়নের স্ত্রীকে সভাপতি নিয়োগ
> নহাটা রানী পতিত পাবনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির পদ নিয়ে দুর্নীতির চূড়ান্ত রূপ প্রকাশ পায় যখন বিদ্যালয়ের অভিভাবক, শিক্ষক ও সাধারণ জনগণ জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত দরখাস্ত দাখিল করেন।
> রমজান মাসকে সামনে রেখে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চরম নৈতিক অবক্ষয় এবং দুর্নীতির সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত সকল শ্রেণীর কর্মচারী এবং তাদের সাথে আমার গত এক মাসের অভিজ্ঞতার বর্ণনা তুলে ধরতে যাচ্ছি।
> অভিযোগের মূল বিষয়
> ১. সভাপতি পদে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া না হওয়া
> ২. প্রধান শিক্ষক, রবিউল ইসলাম নয়ন ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের দুর্নীতি
> ৩. বিদ্যালয়ের তহবিল লুটপাট ও দখলদারিত্ব
> ৪. নয়নের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ক্ষমতার অপব্যবহার
> এদিকে, অভিযোগ গোপন করে নয়নের স্ত্রীকেই সভাপতি করা হলো, যা দুর্নীতির চরম প্রমাণ!
> লিখিত দরখাস্ত ও জেলা প্রশাসনের নিরবতা
> বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও শিক্ষকরা যখন প্রধান শিক্ষক, উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং নয়নের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেন, তারা জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
> দরখাস্তে উল্লেখিত অভিযোগ
> • সভাপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নয়নের সরাসরি হস্তক্ষেপ
> • প্রধান শিক্ষকের আর্থিক দুর্নীতি
> • বিদ্যালয়ের তহবিল লুটপাট
> • বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করা ও শিক্ষকদের হয়রানি
> • প্রশাসনের দুর্নীতিতে সহযোগিতা
> জেলা প্রশাসকের প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
> • তিনি প্রথমে তদন্তের আশ্বাস দেন, কিন্তু কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেননি।
> • অভিভাবকরা দ্বিতীয় দফায় অভিযোগ দিলে প্রশাসন তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে।
> • উপজেলা শিক্ষা অফিসার তদন্তের নামে প্রহসনমূলক রিপোর্ট তৈরি করেন, যেখানে মূল অভিযোগগুলো উপেক্ষা করা হয়।
> শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের ভূমিকা
> • জেলা প্রশাসকের মতো তিনি-ও অভিযোগ গ্রহণ করেও যথাযথ তদন্ত তিনি করেননি
> • বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডিতে নয়নের স্ত্রীকে সভাপতি করার সুপারিশ করেন।
> • প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির তথ্য থাকা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি।
> দুর্নীতি দমন না করে নয়নের স্ত্রীকে সভাপতি করা হলো কেন?
> যখন অভিযোগ উঠল, তখন স্বাভাবিকভাবে তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু প্রশাসন নয়নের স্ত্রীকেই সভাপতি পদে বসিয়ে দেয়, যা চরম দুর্নীতির প্রমাণ।
> কেন নয়নের স্ত্রীকে সভাপতি করা হলো?
> ১. নয়নের রাজনৈতিক প্রভাব – বিএনপির নাম ব্যবহার করে প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করা
> ২. অর্থের লেনদেন – জেলা শিক্ষা অফিসার ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ঘুষ প্রদান
> ৩. প্রধান শিক্ষক ও নয়নের চক্রান্ত – বিদ্যালয়কে নিজেদের আয়ত্তে রাখার জন্য প্রভাবশালী ব্যক্তি নিয়োগ
> ৪. সন্ত্রাসী ভয়ভীতি – যেকোনো বিরোধী মত দমন করতে নয়নের অনুসারীদের ব্যবহার
এর ফলে কী হলো?
> • প্রতারণার মাধ্যমে সভাপতির পদ নয়নের হাতেই রয়ে গেল।
> • বিদ্যালয়ে স্বচ্ছ প্রশাসন ও উন্নয়নের বদলে আরও দুর্নীতি ও দখলদারিত্ব বেড়ে গেল।
> • বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লো।
> • স্থানীয় জনগণের ন্যায়বিচারের আশা শেষ হয়ে গেল।
> সবশেষে আমরা দেখলাম—
> • কীভাবে জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান দুর্নীতি ঢাকলেন
> • প্রশাসনের নিরবতায় নয়ন আরও শক্তিশালী হলো
> • অভিযোগ জমা দেওয়া হলেও তদন্ত না করে নয়নের স্ত্রীকে সভাপতি নিয়োগ দেওয়া হলো
> এটি শুধু একটি বিদ্যালয়ের দুর্নীতির গল্প নয়, এটি বাংলাদেশের শিক্ষা প্রশাসনের চরম দুর্নীতির একটি বাস্তবচিত্র। যেখানে ক্ষমতা, রাজনীতি ও টাকার লোভে সাধারণ মানুষের অধিকার ধ্বংস করা হয়।
> এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিভাবক, শিক্ষক ও জনগণের লড়াই কি থেমে যাবে, নাকি তারা সুবিচারের জন্য আবার সোচ্চার হবে?
> এই প্রতিবেদনে উপস্থাপিত তথ্যসমূহের সত্যতা যাচাই করা হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন, অডিও ক্লিপ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সরাসরি তথ্যের ভিত্তিতে।
> আমার সরাসরি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দুর্নীতির একাধিক প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে, যা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তদন্ত চলাকালীন, আমি মাগুরার ডিসি এবং যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ডিসির ভাষ্যমতে, তিনি মাত্র দুজন প্রার্থীর নাম পাঠিয়েছিলেন, অথচ স্কুলের পক্ষ থেকে তিনজনের নাম জমা দেওয়া হয়। এতে চেয়ারম্যানের মনে সন্দেহ তৈরি হলেও, তিনি ডিসির সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই তা অনুমোদন করেন।
>
> পরদিন আমি পুনরায় ডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং জানতে পারি যে, তিনি প্রকৃতপক্ষে কেবল দুজনের নামসহ একটি আবেদনই পাঠিয়েছিলেন, তিনজনের নয়। নিয়ম অনুযায়ী, আবেদনটি ডিসির কার্যালয় থেকে সরাসরি যশোর শিক্ষা বোর্ডে যাওয়ার কথা ছিল এবং ডিসির পাঠানো তালিকার ভিত্তিতেই শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
>
> এই অসঙ্গতি নতুন ধরনের দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয়, যা আরও একবার প্রমাণ করে যে দুর্নীতি আমাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থার বাস্তব অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে স্পষ্ট হয়েছে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি, উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসারের অসাধু ভূমিকা এবং নয়ন ও তার অনুসারীদের চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে—
> • প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের সম্পর্ক ছিল গভীর, যা তাদের দুর্নীতিকে আড়াল করতে সাহায্য করেছে।
> • শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখিয়েছেন, ফলে সঠিক নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই নয়নের স্ত্রীকে সভাপতি করা হয়েছে।
> • এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করেছে যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা বোর্ড দুর্নীতির গভীরে নিমজ্জিত এবং বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে।
> এই প্রতিবেদনে উত্থাপিত তথ্যের ভিত্তিতে, শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
> শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই ধরনের দুর্নীতি প্রতিরোধ ও প্রতিকার করতেই হবে, নয়তো ভবিষ্যত প্রজন্ম একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত শিক্ষাব্যবস্থার শিকার হবে।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
জুলাই বিপ্লব: জাতীয় ঐক্যমত, সংস্কার অতঃপর নির্বাচন

জুলাই-আগস্ট (২০২৪) ছাত্রজনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কাজেই এই সরকার অপরাপর গতানুগতিক রাজনৈতিক দলের গঠিত সরকারগুলোর মতো নয়। তারা দলীয় সরকার নয় বলে তাদের সামনে দলীয় মতাদর্শভিত্তিক কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডাও নেই। তাদের সামনে রয়েছে জাতীয় আকাঙ্ক্ষা, যা আন্দোলনের রাজপথ থেকে উত্থিত ও গৃহীত। যে কারনে প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রচার মাধ্যমের বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে, জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে সংস্কার ও নির্বাচন’ র্শীষক বিভিন্ন সংলাপ। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে ছাত্র-জনতা আমাদেরকে দেশের নতুন দিক নিয়ে আলোচনা করার ব্যাপক সুযোগ করে দিয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান রাস্ট্র কাঠামো পূর্ণ গঠনকরার জন্য এক বিরল সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে,আশা করা যায় এর মাধ্যমে ধ্বংসের দারপ্রান্তে পৌছা রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অব্যবস্থাপনা ও দীর্ঘ সময়ের ফেসিবাদী দুঃশাসন থেকে মুক্ত হয়ে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও সহনশীলতার পথে এগিয়ে যাবে। এই সুযোগ বার বার আসবে না। বিগত ৫৪ বছরে কারণে অকারণে বিভেদবান ক্ষমতাসীনরা জাতিকে সে সুযোগ দেয়নি। জুলাই-অগাস্ট যে কারণে গণবিপ্লব এর রূপ নিয়েছিল, আমাদেরকে সেই বিপ্লবের সার্থকতাকে ধরে রাখতে হলে বিভেদ-বিভাজন না করে,জাতীয় স্বার্থে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা যদি রাস্ট্র কাঠামো পূর্ণ গঠন করতে না পারি আমাদের স্বাধীনতা অরক্ষিত হয়ে যাবে। আমাদের অবচেতনে পরাধীনতার গ্লানীতে ভুগতে হবে। জাতি হিসেবে আমরা মর্যাদাহীন হয়ে পড়ব।
জুলাই গন অভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য নতুন অধ্যায়। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরশাসক ব্যবস্থার থেকে প্রায় হাতছাড়া হতে যাওয়া সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনা আমাদের এযাবৎ কালের শ্রেষ্ঠ অর্জন। যা আজীবন ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বুক ভরা আশা-স্বপ্ন নিয়ে ৭১-এ লক্ষ শহীদের রক্তদান ও মা বোনের পবিত্র ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতা একটি নতুন দেশের অস্তিত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আজ সেই স্বপ্নময় স্বাধীনতা রূপান্তরিত হয়েছে গ্লানী ও হতাশায়। সম্মান, জাতীয়তাবোধ, মর্যাদাবোধ, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ এসব কিছুই আজ বিধ্বস্ত। আমাদের বিবেক আজ লুপ্তপ্রায়। সুবিধাবাদ এবং অযোগ্যতার মহড়ায় গোটা জাতি আজ নীরব নিশ্চল অসহায় ও জিম্মি। তাই, ২৪ এসেছে স্বৈরশাসক এর বিরুদ্ধে মানুষের বাক স্বাধীনতা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার এক গৌরবময় বিজয় নিয়ে ।
অনেক দেশের ক্ষেত্রে, বিপ্লব বা বড় রাজনৈতিক উত্থান (যেমন ১৮৩০ সালে ফ্রান্সে জুলাই বিপ্লব) প্রায়ই সংস্কার এবং আলোচনার সময়কালকে উদ্বুদ্ধ করে। এই পরিস্থিতিতে, যে সঙ্কট বা অভ্যুত্থানের একটি মুহূর্ত রাজনৈতিক শক্তিগুলিকে একত্রিত হওয়ার, অর্থপূর্ণ সংলাপে জড়িত হওয়ার, এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলি নিশ্চিত করে এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সংস্কারের মঞ্চ তৈরি করতে পারে।
গত দুই দশক ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নির্বাচন ব্যবস্থায় অপ্রতুলতা তথা অবিচ্ছিন্ন সংস্কারের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। যারফলে রাস্ট্র ক্ষমতায় যারাই থাকেন তারাই স্বৈরাচারী হয়ে উঠেন। তাঁরা দেশের জনগণ, সংবিধান, আইনের রীতিনীতি অগ্রাহ্য করে জোর করে ক্ষমতা গ্রহণ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে তাঁদের অধীনস্থ করে রাখেন। মিথ্যাকে সত্যে রুপান্তরিত করার অপচেষ্ট চালিয়ে যান। বিগত ষোল বৎসর ঘটনা বহুল অনেক ইস্যু থাকার পরও রাজনৈতিক দলগুলি বা সুশীল সমাজ তেমন কিছু করতে পারে নাই। ২০২৪-এর বিপ্লবে যে পরিবর্তন এর প্রেক্ষাপট তৈরী হয়েছে তা কাজে লাগাতে হবে। এসুযোগ বারবার আসবে না ।
নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সংস্কার বিহীন নির্বাচন এই দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না। দেশের শাসন ব্যবস্থায় এবং নির্বাচনে সংস্কার বিষয়ে পুরো জাতি আজ ঐকমত্য। জাতীয় ঐক্য এবং নির্বাচনী সংস্কার একে অপরের সাথে দৃঢ় সম্পর্কিত দুটি বিষয়। নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে যাতে জনগণের ভোটাধিকারের প্রতি বিশ্বাস এবং অংশগ্রহণ বাড়ানো যায় এবং এর মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট গণতান্ত্রিক ভাবে সুসংগঠিত হয়। ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন একটিকে ছাড়া অপরটি সফল হবে না। ঐক্যবিহীন সংস্কার কিংবা সংস্কারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না। সংস্কার প্রয়োজন কারন বিগত সময়ে দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি, এর অন্যতম প্রধান কারন প্রায় সকল রাজনৈতিক দলগুলিতেই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চালু না থাকা।
বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা আপাত দৃষ্টিতে একটি স্বাধীন ব্যবস্থাপনা। যদিও নির্বাহী বিভাগের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছে বারবার । অতীতে নির্বাচনী সহিংসতা এবং ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার কারণে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের স্বাবলম্বী ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সংস্কারের প্রয়োজন। ভোটিং প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং দ্রুত ফলাফল নিশ্চিত করতে আধুনিক প্রযুক্তি র্নিভর নিবিড় পর্যবেক্ষণ দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সকল রাজনৈতিক দলের সমঝোতা এবং জনগণের জন্য নিরাপদ নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি। একতরফা নির্বাচনে জনগণের বিশ্বাস বজায় থাকে না এবং যার ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয় ও স্বৈরতান্ত্রিক সরকার আবির্ভূত হয় ।
জনগণের প্রত্যাশার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে জাতিয়-আর্ন্তজাতিক ইস্যুতে ঐক্য এবং সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক যাতে জনগণের কল্যাণে একটি দীর্ঘমেয়াদি এবং সুদৃঢ় নীতি নির্ধারণ করা যায়। জাতীয় ঐক্য একমাত্র তখনই সম্ভব, যখন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের স্বার্থত্যাগ করে জনগণের কল্যাণে একত্রিত হবে।
রাজনৈতিক নেতা ও দলগুলোর মধ্যে সদিচ্ছা এবং পরস্পরের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা তৈরি হওয়া জরুরি। জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি আস্থা সৃষ্টি করতে হবে। যেকোনো রাজনৈতিক আন্দোলন বা আলোচনাইয় মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। সংস্কার এবং জাতীয় ঐক্য এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী এবং সমতাভিত্তিক হবে, এবং রাজনৈতিক দলগুলো একত্রিত হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করবে। স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র, এবং ন্যায়ের ভিত্তিতে নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনা দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে আরও শক্তিশালী এবং সুদৃঢ় করবে। স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পুনরাবির্ভাব ঠেকাতে রাষ্ট্রের সংস্কার অপরিহার্য।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ন্যূনতম যে সকল সংস্কারগুলো প্রয়োজন, সেগুলো সম্পন্ন করার সুযোগ না দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে র্নিবাচন এ বাধ্য করা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠছে অনেকে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সবকিছু সংস্কার করা হয়তো সম্ভব নয়। তার জন্য প্রয়োজন সময়ের । ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৯ সালে হওয়ার কথা। অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন যদি করতেই হয়, প্রথমে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন কাঠামোর নির্বাচন হওয়া উচিত। এতে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কতটুকু হয়েছে তা বুঝা যাবে। আর তা না হলে শুধু রাতের অন্ধকারে নয় বরং দিনের আলোর নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। কী জানি অনেকে হয়তোবা তাই চাইছে। ২০২৪-এর জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের ছয় মাসের মাথায় ষোল বৎসরের জঞ্জাল ঠিক হয়ে যাবে বা ঠিক করে ফেলা হবে এমন চিন্তা আকাশ কুসুম কল্পনা বা জুলাই বিপ্লবকে প্রশ্ন বিদ্ধ করা ছাড়া আর কিছুই নয়। কোনোভাবেই ফ্যাসিস্টের বিচার ও অর্থবহ সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করা ঠিক হবে না! সকলেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করে রাস্ট্র কাঠামো ঠিক করার দিকে নজর দিতে হবে । প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিষদ সংস্কার করে শক্তিশালী করতে হবে!
জনগণ সংস্কার চায় এবং চায় এমন একটি নির্বাচনি ব্যবস্থা যেখানে তার ভোট দেবার অধিকার থাকবে এবং সেই ভোট (ক্ষমতার) নির্ধারক হবে, জবাবদিহি ব্যবস্থা থাকবে। সর্বোপরি, ক্ষমতার যেন এককেন্দ্রীকরণ না ঘটে। জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া গণতন্ত্র ও মানবিক মর্যাদা অর্জন কখনোই সম্ভব নয়। নির্বাচন রাজনীতি ব্যবসায় রূপান্তরিত যেন আর না হয় তার জন্য সজাগ থাকতে হবে।
ভাগ্য নির্মাণের সুযোগ বার বার অসে না। সুযোগ পেলেও তা নষ্ট হয়েছ অনেক বার। ২০২৪ সালে আবার আরেকটি সুযোগ এসেছে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে। তাদের গণআন্দোলন স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ এনে দিয়েছে। যে ছাত্রসমাজ বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে, সে ছাত্রসমাজ নানা কারণে ম্রিয়মাণ হলেও যে হারিয়ে যায়নি, তা জুলাই-আগস্টের ঘটনা প্রমাণ করেছে। জাতি গঠনে তাদের পুরনো ভূমিকাকে তারা নতুন করে উজ্জীবিত ও উপস্থাপিত করেছে। বাংলাদেশের মতো রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত সমাজে অন্তত সংস্কারের বিষয়ে সকল পক্ষকেই জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। দলীয় বা গোষ্ঠীগত বিবেচনার বাইরে এসে দাঁড়াতে হবে সকল পক্ষকে। সংস্কার, জাতীয় স্বার্থ ও ঐকমত্যই হবে মূল আলোচ্য বিষয়, দলীয় দ্বন্দ্ব-সংঘাত এক্ষেত্রে যেন প্রাধান্য পেতে না পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে, এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে গ্রহণ করা। তারা যেন যুক্তি ও তথ্য দিয়ে সংস্কার প্রসঙ্গে আলোচনা করে এবং শেষ পর্যন্ত একটি ঐকমত্যে পৌঁছায়। যার ভিত্তিতে তারা নিজেদের মধ্যে এমন একটি অঙ্গীকারে উপনীত হবে যে, জনগণের ভোটের বাইারে কোনো নির্বাচন মানবো না। সংস্কার ও নির্বাচনের মাধ্যমে একটি কার্যকর্ সমন্বয় সাধিত করে ভবিষ্যতের বাংলাদেশে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য ও ঐকমত্যের পথ প্রশস্ত করবে। রাজনৈতিক ঐক্য না থাকার কারনে কথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী কিছু স্বার্থন্বেসী মানুষ লোভে পড়ে ক্রমশ হিংস্র হয়ে আন্দোলন্রত শিক্ষার্থীদের উপর র্নিবিচারে গুলি চালায় । জাতিসংঘের তদন্তেও যা প্রমানীত কি ভাবে ফেসিস্ট সরকার নিজ দেশের মানুষের প্রতি অবিচার করেছে।
জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা , অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠার পথে সহায়ক হবে। নির্বাচন সংস্কার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক দলের মধ্যে একতাবদ্ধতা দেশকে একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড় করাতে সাহায্য করবে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হবে, এতে দীর্ঘমেয়াদি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। সামাজিক উন্নয়ন এবং জনকল্যাণের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারবে, যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং বেকারত্ব দূরীকরণ। বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অব্যবস্থাপনা ও ফেসিস্টের কুশাসন থেকে মুক্ত হয়ে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, সহনশীলতা ও বৈষম্যহীনতার পথে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে । জনআকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে সংস্কার ও পরিবর্তন, ভবিষ্যতের বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ পুনরায় ফিরে আসার কাল্পনিক আকাঙ্খা রোধ করবে। অতীতের যাবতীয় ভুল ও ব্যর্থতা দূর করার মহত্তর এই সুযোগ নষ্ট হলে আমাদেরকে চড়া মাশুল দিতে হবে। অতএব, আমাদের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের পথে এই সুযোগে আমাদেরকেই নির্মাণ করতে হবে।
আন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারের নিমিত্বে যে ৬টি কমিশন গঠন করেছেন ইতিমধ্যে সবাই তাদের গঠিত সুপারিশ রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। সংস্কারের নিমিত্বে সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি সব দলের প্রতিনিধিত্বে সমন্বয় ও মতামত জরিপে বিশেষ সভা করেছেন, যেখানে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মানে সংস্কার অপরিহার্য এবং তিনি তা সকলের মতামতের ভিত্তিতে করতে চান। এই মর্মে তিনি সকল দলের নেতাদেরকে স্ব স্ব মতামত লিখিত ভাবে প্রদানের কথা স্পষ্ট করেছেন। যেখানে প্রস্তাবের যেকোন প্রসঙ্গে তাদের পূর্ণ বা আংশিক যেকোন ভাবে দ্বিমত পোষনের একতিয়ার রয়েছে । তিনি নিশ্চিত করেছেন সকল দল সংস্কার প্রস্তাবের যে কোন বিষয়ের পক্ষে বিপক্ষে তাদের মতামত দিতে পারে তবে তা অবশ্যই লিখিত ও যথার্থভাবে স্বাক্ষরিত হতে হবে কেননে তিনি তা জনসমক্ষে তুলে ধরতে চান ওয়েবসাইট এ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরে ঐকমত্যে পৌছতে পারলে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানে বিশ্বদরবারে তা হতে পারে ২০২৪ এর বাংলার আর এক ম্যগনাকার্টা ।
অধ্যাপক সরওয়ার জাহান, টেকসই উন্নয়ন কর্মী।