জাতীয়
লাগেজ ভর্তি টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়েছেন লোটাস কামাল!

মন্ত্রীত্ব পাওয়ার পর থেকে নিজেকে কুমিল্লা-১০ (কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) আসনের ‘একমাত্র অভিভাবক’ বলে দাবি করতেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল। এ জন্য নিজের নির্বাচনী এলাকার কোনো মানুষ অন্য দলের রাজনীতি করুক, সেটা তিনি চাইতেন না। সবাইকে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে আসার আহ্বান জানাতেন তিনি। তার এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের যেসব নেতা স্বেচ্ছায় আওয়ামী লীগের যোগ দিয়েছিলেন, দলে বড় পদ ও জনপ্রতিনিধির চেয়ারে বসিয়ে তাদের ‘পুরস্কৃত’ করেছিলেন তিনি।
সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে শিক্ষকদেরও তার রোষানলে পড়তে হয়েছে। তার কথা না শোনায় অনেককে বাড়ি ও কর্মস্থল থেকে তুলে নিয়ে প্রলোভন ও হুমকি দিতেন।
দলীয় নেতাকর্মীদের ভাষ্য- লোটাস কামাল অন্য দলের নেতাকর্মীদের নিজ দলে ভেড়াতে গিয়ে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করতেন। এ ছাড়া রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ ও লুটপাট করতে গড়ে তুলে ছিলেন সিন্ডিকেট।
যার নেপথ্যে ছিল তার দুই ভাই, ভাইজা ও পিএস।
২০১১ সালে শেয়ারবাজার লুটে স্ত্রী ও মেয়েদের কাজে লাগান সাবেক এই অর্থমন্ত্রী। দেশের টাকা পাচার করে বিদেশে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। তবে লোটাস কামাল নিজের নামে অর্থসম্পদ বেশি রাখেননি। স্ত্রী ও মেয়েদের নামে হস্তান্তর করেছেন।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই দিন রাত ১২টায় নিজের মেয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের চেয়ারপারসন নাফিসা কামালকে নিয়ে লাগেজ ভর্তি টাকা নিয়ে সিঙ্গাপুরে পালিয়ে গেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তাদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
জানা গেছে, সাবেক এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম মজুমদারের মৃত্যুর পর তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার অঙ্গীকার করে ১৯৯৪ সালে সাবেক কুমিল্লা-৯ আসনের আওয়ামী রাজনীতির হাল ধরেন ব্যবসায়ী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ১৯৯৬ সালে নৌকার টিকিটে এই আসন থেকে তিনি বিপুল টাকা খরচ করে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন। ওই সময় থেকে কালাম মজুমদারের ব্যক্তিগত সহকারী কেএম সিংহ রতনকে নিজের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেন। সাবেক এমপির ভক্তদের সমর্থন আদায় করতে ‘আবুল কালাম মজুমদার স্মৃতি সংসদ’ প্রতিষ্ঠা করেন। তার নামীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আর্থিক অনুদান দিতেথাকেন। ছাত্রলীগের সাবেক শতাধিক নেতাকে নিজের কম্পানিতে চাকরি দেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাসিক ভাতা প্রথা চালু করেন। ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সিমসহ মোবাইল ফোন উপহার দেন। এতকিছুর পরও জনবিচ্ছিন্ন থাকায় ২০০১ সালে তিনি বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরীর কাছে বিপুল ভোটে হেরে যান।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কুমিল্লা-৯ (কুমিল্লা সদর দক্ষিণ) ও কুমিল্লা-১১ (নাঙ্গলকোট) আসনকে একীভূত করে কুমিল্লা-১০ আসন করা হয়। দেশের অন্যতম বৃহৎ এই আসন থেকে ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো তিনি এমপি নির্বাচিত হন। এরপরই তিনি ভোল পাল্টাতে শুরু করেন। সাবেক এমপি কালাম মজুমদারের ঘনিষ্টদের গুরুত্ব দেওয়া কমিয়ে দেন। কালাম মজুমদারের রাজনৈতিক শত্রুদের আপন করতে শুরু করেন। তাদের আশ্রয় দিয়ে বিভিন্নভাবে পুর্নবাসনের উদ্যোগ নেন। বিএনপি-জামায়াত থেকে যোগদান করা লোকদের দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ ও জনপ্রতিনিধির চেয়ারে বসান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করে নিজের এপিএস, দুই ভাই ও ভাতিজার মাধ্যমে লুটপাটের সিন্টিকেট তৈরি করেন। পরিবারতন্ত্র কায়েমের অংশ হিসেবে ২০০৯ সালে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের সিনিয়র নেতাদের বাদ দিয়ে নিজের আপন ছোট ভাই গোলাম সারওয়ারকে চেয়ারম্যান বানিয়েছেন তিনি। জীবনে কখনও ছাত্রলীগের রাজনীতি না করলেও উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের অভিভাবক হয়ে যান গোলাম সারওয়ার। সেই সময়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মালেককে অনেকে ‘পুতুল সভাপতি’ বলতেন। তৎকালীন সময়ের পরিকল্পনামন্ত্রী লোটাস কামালের মন্ত্রীত্বের ক্ষমতা ব্যবহার করে এক পর্যায়ে নতুন কমিটি করে গোলাম সারোয়ার নিজেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ দখল করেন। আর সেই কমিটিতে ত্যাগীদের পাশাপাশি তিনি হাইব্রিডদের আওয়ামী লীগ করার সুযোগ করে দেন। সেই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক করেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত রুহুল আমীন চৌধুরীকে। এরপর থেকে উপজেলা প্রশাসন ও আওয়ামী লীগে রুহুল আমিন চৌধুরীর আধিপত্য শুরু হয়। তার আধিপত্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েন দলের ত্যাগীরা। উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম বলে রুহুল আমিন চৌধুরী ঠিকাদারদের থেকে কমিশন আদায় করতেন। ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে টিআর কাবিখার টাকা আত্মসাৎ করতেন। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়ি চালক আবদুর রাজ্জাক ও বারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম আহমেদের সহায়তায় লালমাই পাহাড়ে মাটিকাটা সিন্ডিকেট থেকে চাঁদা উঠাতেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য ও জমি অধিগ্রহণের নামে লোটাস কামালের ছোট ভাই গোলাম সারওয়ার হাতিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। চানবালিয়া খাল দখল করে মাটি বিক্রি করে তিনি বিপুল টাকা কামিয়েছেন সারওয়ার। গত ২১ মে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে হেরে যান গোলাম সারওয়ার। এরপর থেকে তিনি আর রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেননি। গত জুনের প্রথম সপ্তাহে তিনি গোপনে কানাডা পালিয়ে যান। জনশ্রুতি রয়েছে, দেশের টাকা পাচার করে লোটাস কামালের ভাই গোলাম সারওয়ার গত ১৫ বছরে কানাডাতে একাধিক বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন।
এদিকে ২০১৭ সালে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার আটটি ও লাকসামের একটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয় নতুন উপজেলা লালমাই। লোটাস কামাল নবগঠিত লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রথম কমিটিতে সভাপতি করেন তার বড় ভাই আবদুল হামিদকে আর সাধারণ সম্পাদক করেন এপিএস কেএম সিংহ রতনকে। নতুন উপজেলা সাজাতে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে লুটপাট শুরু করেন মন্ত্রীর ভাই ও এপিএস। ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে তারা টিআর কাবিখার বিপুল টাকা আত্মসাৎ করেছেন। উন্নয়ন কাজের সকল ঠিকাদার থেকে উপজেলা উন্নয়ন ফান্ডের নামে কমিশন নিতেন। তাদের লুটপাট নামের এই ব্যবসার ক্যাশিয়ার ছিলেন লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী মেহেদী হাসান বাপ্পী। তবে বিষয়টি নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করায় ২০২০ সালের শেষের দিকে পদত্যাগ করেন মন্ত্রীর ভাই ও এপিএস। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লোটাস কামাল তার ভাতিজা কামরুল হাসান শাহীনকে বানিয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক। এক বছর আগে লালমাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হন লোটাস কামালের ভাতিজা কামরুল হাসান শাহীন। ওই নির্বাচনে তার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন লালমাই সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মমিন মজুমদার। নির্বাচনে কেন্দ্র দখল ও ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে না দিয়ে লোটাস কামাল নিজের ক্ষমতায় উপজেলা চেয়ারম্যান বানান ভাতিজা শাহীনকে। শাহীন চেয়ারে বসেই তার বাবা লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল হামিদের মতো করেই ঠিকাদারদের কমিশনের জন্য চাপ দিতে থাকেন।
অভিযোগ রয়েছে, গত এক বছরে টিআর কাবিখা প্রকল্পের কোনো কাজ হয়নি। প্রকল্পের নামে টাকা উত্তোলন করে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিস নির্মাণের কথা বলে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাত করেছেন। প্রতিবছর বিপিএল খেলা শুরুর আগেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের জন্য ফান্ড সংগ্রহের নামে কোটি কোটি চাঁদা তুলেছেন এই শাহীন। তার সমর্থিতরা বাগমারা বাজার ও ভুশ্চি বাজারে সরকারি জায়গা দখল করে কয়েকশ দোকান নির্মাণ করে অবৈধভাবে ভাড়া আদায় করছেন।
এদিকে এমপি হওয়ার পর থেকে মুস্তফা কামাল দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎ, মতবিনিময় ও সভা-সমাবেশ করলেও ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তিনি নির্বাচনী এলাকায় আসা বন্ধ করে দেন। তার পক্ষে কুমিল্লা সদর দক্ষিণে ছোট ভাই গোলাম সারওয়ার, লালমাইয়ে বড় ভাই আবদুল হামিদ ও নাঙ্গলকোটে ব্যক্তিগত সহকারী কেএম সিংহ রতন নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব পান। কাগজে কলমে মুস্তফা কামাল এমপি হলেও নাঙ্গলকোটে কেএম সিংহ রতনই যেন ছায়া এমপি হয়ে যান। প্রতি শুক্রবার রতন লালমাই উপজেলার আলীশ্বর গ্রামস্থ বাড়িতে আসার খবর পেলে দলের শত শত নেতাকর্মী তার বাড়িতে অবস্থান করতেন। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা বদলির তদবির করতে তার বাড়িতে আসতেন। নিজেদের লুটপাটের স্বার্থে তাকে এই ছায়া এমপি হয়ে উঠতে সহযোগিতা করেছেন নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন কালু, নাঙ্গলকোট পৌর মেয়র আবদুল মালেকসহ লুটপাটে ব্যস্ত নেতারা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি গঠন, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, সরকারি চাকরি ও বদলির নামে ঘুষ লেনদেন করতেন লোটাস কামালের এপিএস রতন নিজেই। উন্নয়নের সকল প্রকল্পে লোটাস কামালের নামে ভাগ নিতেন রতন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরপরই গোপনে টাকার বস্তা নিয়ে সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যান সাবেক এই মন্ত্রী। তার সঙ্গে ছিলেন তার ছোট মেয়ে ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের চেয়ারপারসন নাফিসা কামালসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য। সরকার পতনের খবর পেয়ে ওইদিন সারা দেশের মতো কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোটেও মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাও রাস্তায় নেমে আসে। তারা লোটাস কামালের সিন্ডিকেট রাজনীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে। বিএনপির সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরীর নিষেধাজ্ঞার কারণে বিক্ষুব্ধ জনতা লোটাস কামালের বাড়িতে হামলা করতে গিয়ে ফিরে আসে বলে জানা গেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা বলতে থাকেন- জনবিচ্ছিন্ন এক জালিমের হাত থেকে সৃষ্টিকর্ত আমাদের রক্ষা করেছেন। লোটাস কামাল বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন দুর্নীতির টাকায়। দুদকের উচিত তদন্ত করে দেশের সম্পদ ফিরিয়ে আনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ সমর্থিত এক শিক্ষক নেতা বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল সাহেব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের চেয়েও যোগদানকৃত নেতাদের বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি সবসময় বলতেন এই আসনে কেউ অন্য দল করার দরকার নেই। বিএনপি-জামায়াতের সবাইকে আমি আমার সঙ্গে নিয়ে আসবো। প্রস্তাব দেওয়ার পর যোগ না দিলে তিনি পুলিশ দিয়ে হয়রানি করতেন। তার পরিবারতন্ত্র ও সিন্ডিকেটের কারণে গত ১৫ বছরে দলের নির্যাতিত ও ত্যাগীরা কোনো ধরনের মূল্যায়ন পায়নি। সিন্ডিকেটকে আর্থিকভাবে ম্যানেজ না করে কেউ ইউপি সদস্যও হতে পারেনি। অথচ সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে লুটপাটকারীরা পালিয়ে গেছে। তাদের অপকর্মের কারণে ত্যাগীরা এখন বাজারে উঠতেও ভয় পায়।
স্থানীয় বিএনপি কর্মী আবুল কালাম বলেন, আওয়ামী লীগে যোগদান না করায় কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেনের ওপর দুই দফা হত্যাচেষ্টা করে গুলিবিদ্ধ করেছে লোটাস কামালের ক্যাডার বাহিনী। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় বিএনপি নেতা আমান উল্যাহ আমানের বাড়ি ঘরে হামলা ভাঙচুর করা হয়েছিল। বিএনপি নেতা হাফেজ বিল্লালকে বারবার গ্রেপ্তার করে জঙ্গি বানানোর অপচেষ্টা করেছে তারা। সাবেক ইউপি মেম্বার হুমায়ুন কবির শরীফ ও জেলা যুবদল নেতা শাহ আলমকে পিটিয়ে পঙ্গু করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল কামাল বাহিনী। দলের বেশিরভাগ নেতা গত ১৫ বছর নিজের বাড়িতে ঘুমাতে পারেননি।
লালমাই উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ মিয়া বলেন, গত বছরের ২৬ আগষ্ট লালমাই উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের উন্দানিয়ায় বিএনপি নেতা মফিজুর রহমানের বাড়িতে কর্মী সভার আয়োজন করেছিল বিএনপি। খবর পেয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রীর ভাতিজা ও লালমাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা সেই বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে। হামলাকারীদের গুলিতে আমি পঙ্গুত্ববরণ করি। গুরুতর আহত হন বিএনপি নেতা মফিজুর রহমান, যুবদল নেতা আবদুর রহমান ও স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা মনির হোসেন। এই ঘটনায় বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করে উল্টো থানায় মামলা করেন বেলঘর উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম। এমন শত শত ঘটনা করেছে লোটাস কামাল বাহিনী।
লালমাই উপজেলা বিএনপি নেতা ইউছুফ আলী মীর পিন্টু বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের নির্দেশে গত ১৫ বছরে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলায় ৮৫টি গায়েবি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ১০ সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। আমাকেও ১৩টি মামলায় আসামি করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ২ আগস্ট সকালে আওয়ামী সন্ত্রাসী আয়াতুল্লাহ, আকতার, ভুট্টু ও হান্নানের নেতৃত্বে আমাকে অপহরণ করে লালমাই পাহাড়ে গুম করে। পরবর্তীতে আমার নেতা মনিরুল হক চৌধুরীর হস্তক্ষেপে র্যাবের একটি টিম অভিযান চালিয়ে আমাকে উদ্ধার করে।

জাতীয়
পাসপোর্টে ভেরিফিকেশন বাতিলে ৩ মাসে বিস্ময়কর সাফল্য

পাসপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ায় এর সুফল পাওয়া শুরু করেছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। এই সিদ্ধান্তের পর চলতি বছরে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ৯ লাখ ৩২ হাজার ৮৬টি পাসপোর্ট ইস্যু করেছে অধিদফতর। দেশে পাসপোর্টের ইতিহাসে এটি এক যুগান্তকারী সাফল্য।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভোগান্তি কিংবা দালালদের দৌরাত্ম্য কমায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছেন আবেদনকারীরা। পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ার দিন (২১ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ১ লাখ ৬৯ হাজার ১৩৮টি পাসপোর্ট আটকে ছিল। কিন্তু পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ায় এসব আবেদনকারীর কাছে পৌঁছে গেছে।
পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, গত মার্চ মাসে ইস্যু করা হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৩টি পাসপোর্ট, এপ্রিল মাসে ৩ লাখ ২২ হাজার ১৩০টি এবং মে মাসে ইস্যু করা হয়েছে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৪২৪টি।
অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নূরুল আনোয়ার বলেন, ভেরিফিকেশনের বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে দেওয়ার পর এখন আবেদন করার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছেন প্রত্যাশীরা। মাঝখানে তাদের যে সময় লাগতো, সেটি আর লাগছে না।
পাসপোর্ট অধিদফতরে সম্প্রতি সরেজমিন গেলে কথা হয় অনেক সেবা প্রত্যাশীর সঙ্গে। পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলের বিষয়ে তারা বলছেন, যেহেতু একজন নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। সেখানে আবার যাচাই-বাছাইয়ের কারণে ভোগান্তির শিকার হতে হতো। অনেক সময় পুলিশ টাকাও দাবি করতো। টাকা না দিলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা তাদের রিপোর্টও দিতো না। এতে পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা নির্ধারিত সময়ের পাসপোর্ট পেতো না। এখন আর কোনও ঝামেলা নেই। আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য দালালদের কাছেও যেতেন অনেকে। দালালকেও টাকা দিতে হতো। এখন দালাল ছাড়াই সরকারের নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে সবাই পাসপোর্ট করতে পারছেন।
পাসপোর্ট প্রত্যাশী একজনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, কোনো ঝামেলা বা দালাল ছাড়াই ১০ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পেলাম। এটি সত্যিই স্বপ্নের মতো।
কীভাবে এত দ্রুত পাসপোর্ট পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছবি ও ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার সময় লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। আর বাদবাকি সব অটো হয়ে গেছে। একজন গ্রাহক হিসেবে আমি তো ১০-১৫ মিনিট লাইনে দাঁড়াতেই পারি। আগের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়নি।
কলামিস্ট ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. কুদরাত-ই খুদা বলেন, পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ায় নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের (ডিআইপি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনের ফলে যথাসময়ে গ্রাহকের পাসপোর্ট ডেলিভারি দিতে বিলম্ব হতো। এ ক্ষেত্রে গ্রাহক পাসপোর্ট অফিসকে দোষারোপ করত। কিন্তু এখন পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া সুপার এক্সপ্রেস সার্ভিসের আওতায় যে কোনো প্রয়োজনে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নতুন পাসপোর্ট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
পাসপোর্ট নিয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী গোলাম তৌসিফ স্বাক্ষরিত পরিপত্র জারি করা হয়। এতে বলা হয়, পুলিশ ভেরিফিকেশন নয়, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের (এনআইডি) ভিত্তিতে আবেদনকারীকে পাসপোর্ট দেবে সরকার।
পরিপত্রে আরও বলা হয়, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিক এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য পাসপোর্টের নতুন আবেদনের ক্ষেত্রে অনলাইনে যাচাইকৃত জন্মনিবন্ধন সনদের তথ্যের ভিত্তিতে আবেদনকারীকে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই পাসপোর্ট দেওয়া হবে। পাসপোর্ট পুনঃ ইস্যুর ক্ষেত্রে বিদ্যমান পাসপোর্টের সঙ্গে মৌলিক তথ্যের পরিবর্তন হলে জাতীয় পরিচয়পত্রে প্রদত্ত তথ্য দিয়ে পাসপোর্ট ইস্যু করা যাবে। পাসপোর্ট আবেদনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ডেটাবেজ বা জন্মনিবন্ধন ডেটাবেজের সঙ্গে যাচাই করা হলে তা বাংলাদেশ পাসপোর্ট আদেশ ১৯৭৩ এর ৫ (২) ধারার উদ্দেশে পূরণকল্পে প্রয়োজনীয় তদন্ত শেষ হয়েছে বলে গণ্য হবে।
এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নিজ কার্যালয়ের শাপলা হলে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৫’ এর উদ্বোধনী বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এখন থেকে পাসপোর্ট পেতে আর পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না। পাসপোর্ট আমাদের নাগরিক অধিকার। জন্মসনদ ও এনআইডির মতো পাসপোর্টও এই দেশের নাগরিকদের একটি পরিচয়পত্র। জন্মসনদ ও এনআইডির জন্য আমাদের যেমন পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগেনি, তেমনি পাসপোর্টের জন্যও লাগবে না। এই দেশের নাগরিক হিসেবেই আমরা তা পাবো।’
পরে সরকারের এ সিদ্ধান্তগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয়
প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাজ্য সফরে যাচ্ছেন আগামীকাল

চারদিনের সফরে আগামীকাল সোমবার (৯ জুন) যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময়ে মর্যাদাপূর্ণ ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ডে’ ভূষিত করা হবে তাকে। এছাড়াও দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন করে পুনরুজ্জীবিত এবং অর্থনীতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ার লক্ষ্যে এই সফর অনুষ্ঠিত হবে।
সফরসঙ্গী হিসেবে তার সঙ্গে থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন।
গত বুধবার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
শফিকুল আলম বলেন, আসন্ন সফরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎসহ বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে যে টাকা পাচার করা হয়েছে সেগুলো উদ্ধারের বিষয়েও আলোচনা হবে।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বুধবার এক ব্রিফিংয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সফর। প্রধান উপদেষ্টা ৯ জুন ঢাকা থেকে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেবেন এবং ১৪ জুন দেশে ফিরবেন।’
এই সফরে অধ্যাপক ইউনুস ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গেও তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। এর বাইরেও বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে।
লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করবেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে রুহুল আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা তার যে কর্মসূচি উল্লেখ করেছেন, সে অনুযায়ী এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।’
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের গভীরতা রয়েছে। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং দেশটির বৃহত্তম প্রবাসী জনগণের আবাসস্থল।
এছাড়া, প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারের বিষয়েও উদ্যোগী হবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি জানান, যুক্তরাজ্য সফরের সময় পাচারকৃত অর্থ ও সম্পদ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
এ সফরে রাজা তৃতীয় চার্লস অধ্যাপক ইউনুসকে সম্মানজনক ‘হারমনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ পুরস্কারে ভূষিত করবেন, যা বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের আরও উন্নয়ন এবং সহযোগিতার প্রতি গভীর প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করবে।
জাতীয়
ঈদের ফিরতি যাত্রায় সবাইকে মাস্ক পরার অনুরোধ

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ট্রেনের ফিরতি যাত্রায় যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এবং মাস্ক পরার অনুরোধ জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি কোভিড-১৯ সংক্রমণ হারের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনা করে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সমাগমপূর্ণ এলাকায় সকলকে মাস্ক পরার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। বিশেষত বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ধরনের স্থান এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঈদ পরবর্তী (ঈদুল আজহার ফিরতি যাত্রা) ট্রেন যাত্রায় সব যাত্রীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য এবং মাস্ক পরিধান করার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্ত হয়। এরপর থেকে দেশে কয়েক দফায় সংক্রমণ বেড়েছে এবং জনস্বাস্থ্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সরকারিভাবে মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, এবং জনসমাগম এড়ানোসহ স্বাস্থ্যবিধি পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে সময়ের সাথে সাথে সংক্রমণ হ্রাস পাওয়ায় এসব বিধিনিষেধ অনেকাংশে শিথিল করা হয়।
সম্প্রতি দেশে আবারও কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হতে দেখা গেছে। এরপরই আবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে সরকার।
জাতীয়
চামড়া পাচার-পুশ ইন ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে বিজিবি

সীমান্তের নিরাপত্তা বিধান ও দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি কোরবানির পশুর চামড়া পাচার রোধে সীমান্ত এলাকায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
শনিবার (৭ জুন) বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো.শরীফুল ইসলাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, সীমান্তের নিরাপত্তা বিধান ও দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি কোরবানির পশুর চামড়া পাচার রোধে সীমান্ত এলাকায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। এছাড়া সীমান্ত দিয়ে ‘পুশ ইন’ প্রতিরোধেও সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি।
এরই ধারাবাহিকতায় ঈদের দিনেও বিজিবি সদস্যরা ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে সীমান্তে কঠোর নজরদারি ও টহল তৎপরতা জোরদার করে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রেখেছে বলে জানানো হয়।
জাতীয়
ঈদের দ্বিতীয় দিনেও চলছে পশু কোরবানি

ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পশু কোরবানি চলছে। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী ঈদের দিন ও পরবর্তী দুই দিন অর্থাৎ ১২ জিলহজ পর্যন্ত কোরবানি করার সুযোগ রয়েছে।
ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী সুযোগ থাকায় এবং ঈদের দিন কসাই না পাওয়ায় অনেকেই আজ কোরবানি দিচ্ছেন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ঈদের দিনের কোরবানির পশুর বর্জ্য রাতের মধ্যেই অপসারণ করা হয়েছে।
রাজধানীর বাসিন্দারা কোরবানি অব্যাহত রাখলে সোমবার (৯ জুন) পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বর্জ্য অপসারণের কাজ করবেন। এতে রাজধানীর বাসিন্দারা তাদের সুবিধামতো সময়ে কোরবানি দিতে পারছেন।
রোববার (৮ জুন) সকালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফজরের নামাজ শেষ হওয়ার অল্প পর থেকেই কোরবানির প্রস্তুতি নেন অনেকে। ঈদের আগেই পশু কিনে রেখে আজ তারা কোরবানি দিচ্ছেন।
রামপুরার বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান বলেন, ঢাকার বেশিরভাগ মানুষ ঈদের দিন কোরবানি দেন। এতে কসাইদের অনেক ব্যস্ততা থাকে। দেখা দেয় কসাই সংকট। তাই আমরা আগে থেকেই ঠিক করেছি দ্বিতীয় দিনে কোরবানি করবো।
তিনি বলেন, আজ খুব নিরিবিলি পরিবেশে কোরবানি দিতে পারছি। ফজরের নামাজের পরে হুজুর এসে গরু জবাই দিয়ে গেছেন। কসাইরা মাংস বানানোর কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আশা করছি সকল ১০টার মধ্যে সব কাজ শেষ করতে পারবো।
মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, ঈদের দিন কোরবানি দিলে যা হবে ঈদের পরের দিন কোরবানি দিলেও তাই হবে। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী তিনদিন কোরবানি দেওয়া যায়। আর কোরবানি দেওয়া প্রধান উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই কোরবানি দিচ্ছি, এখন কবুল করার মালিক তিনি নিজেই।
রামপুরার আর এক বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, ইচ্ছা ছিল ঈদের দিনই গরু কোরবানি দেবো। কিন্তু কসাই না পাওয়ায় আজ কোরবানি দিচ্ছি। শুধু আমরা না, অনেকেই কসাই সংকটে আজ কোরবানি দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ঈদের দিন কোরবানি দিতে পারিনি, তা নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই। তবে অন্যদের কোরবানি দেওয়া দেখে বাচ্চাদের মন একটু খারাপ হয়েছিল। এখন ওরা আবার হাসি খুশি। বাচ্চাদের খুশিই তো আমাদের খুশি। আর কোরবানি দেওয়া হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়। কার দোয়া, কার কোরবানি কবুল হবে আল্লাহ ছাড়া কেউ কেউ জানে না।
খিলগাঁওয়ে বাসিন্দা মো. হাসান বলেন, ঈদের দিন এবং পরের দুদিন পশু কোরবানি দেওয়া যায়। কোরবানি দেওয়া জন্য এই তিনদিনই সমান। কোনদিন সওয়াব বেশি কম হওয়ায় সুযোগ নেই। গতকাল যারা কোরবানি দিয়েছেন তাদের উদ্দেশ্য ছিলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, আজ আমরা যারা কোরবানি দিচ্ছি তাদের উদ্দেশ্যও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
তিনি বলেন, কোরবানির মাংস তিনভাগ করতে হয়। আমরা ধর্মীয় বিধান মেনে মাংস তিনভাগ করে, যার যা অংশ বুঝিয়ে দেবো। এখন কবুল করার মালিক আল্লাহ।
মো. হাসান আরও বলেন, আমাদের গরুর মাংস বানানোর কাজ যে কসাই করছে, গত বছরও এই কসাই দিয়ে কাজ করিয়েছিলাম। এদের কাজ ভালো। গতকাল ওরা অনেক ব্যস্ততা ছিলেন। বিকেলে আমাদের কাজ করতে চেয়েছিলেন। আমরা বলেছি বিকেলে না করে আজ করতে। আল্লাহর রহমতে এখন নিরিবিলি পরিবেশে কোরবানি দিতে পারছি।
এদিকে, ঈদের দিনের কোরবানির বর্জ্য রাতের মধ্যেই অপসারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। আজ ও আগামীকাল সিটি করপোরেশনের বর্জ্য অপসারণ কাজ চলমান থাকবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে জানানো হয়েছে, ঈদের দিন ৭৫টি ওয়ার্ডে এক লাখ ৩৩ হাজার ৩১৭টি পশু কোরবানি করা হয়। কোরবানি শেষ করার পর নাগরিক পর্যায় থেকে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করে প্রতিটি ওয়ার্ডের সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে স্থানান্তর করা হয়।
পরবর্তীতে ডাম ট্রাকের মাধ্যমে মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিলে চূড়ান্তভাবে ডাম্প করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৩০ হাজার টন লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ১২ হাজার টন বর্জ্য মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিলে ডাম্পিং করা হয়েছে।
কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ হাজারের অধিক জনবল মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছে। ২০৭টি ডাম্প ট্রাক, ৪৪টি কম্পেক্টর, ৩৯টি কন্টেইনার ক্যারিয়ার, ১৬টি পে-লোডারসহ বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে ৭৫টি ওয়ার্ডে মোট ২০৭৯টি যানবাহন নিয়োজিত রয়েছে।
এছাড়া নগরবাসীর মধ্যে প্রায় ৪৫ টন ব্লিচিং পাউডার, ৫ লিটার ধারণক্ষমতার ২০৭টি স্যাভলনের গ্যালন এবং এক লাখ ৪০ হাজার বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগ বিতরণ করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে জানান, উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ৭ হাজার ৮০০ টন বর্জ্য সংগ্রহ করে ডাম্পিং করা হয়েছে। যা কোরবানি উপলক্ষে উৎপন্ন হওয়া বর্জ্যের ৮৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, আগামী দুইদিনও বর্জ্য অপসারণের কাজ চলমান থাকবে। ঢাকাবাসী তাদের সুবিধা মতো সময়ে কোরবানি দেবেন। সকাল, বিকেল, রাত সব সময় আমাদের পরিষ্কার কার্যক্রম চলবে।
সন্ধ্যার মধ্যে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ ৮৫ শতাংশ বর্জ্য অপসারণের কথা জানালেও পর রাতে জানানো হয়, রাত সাড়ে নয়টার মধ্যে সব বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।