আন্তর্জাতিক
আরও অনেক বিদেশি কর্মী নিতে চায় ফিনল্যান্ড

২০২৩ সালে ফিনল্যান্ডের সরকার ‘ট্যালেন্ট বুস্ট’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে। তারা ইইউ, ইইএ ছাড়াও চারটি নির্দিষ্ট দেশ; ভারত, ব্রাজিল, ভিয়েতনাম এবং ফিলিপাইন থেকে কর্মীদের সক্রিয়ভাবে নিয়োগ করতে চায়। এই নিয়োগের জন্য ‘ট্যালেন্ট বুস্ট’ নামে পাঁচ বছরের প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে।
ফিনিশ শহর ল্যাপল্যান্ড সুমেরুবৃত্তের মধ্যে অবস্থিত, যা ফিলিপাইনের রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার থেকে অনেকটাই আলাদা। কিন্তু ল্যাপল্যান্ডে বসবাসকারী ১৪ জন ফিলিপিনো নিজের কর্মক্ষেত্রকেই বাড়ি হিসাবে ভাবেন।
স্থানীয় ফিনিশ পাবলিক সার্ভিস ব্রডকাস্টার ওয়াইএলই বুধবার এক প্রতিবেদনে বলেছে, ল্যাপল্যান্ডে রিটেল খাতে কাজ করা ফিলিপিনো কর্মীদের দেখে বোঝা যায় দেশের শ্রমশক্তি পরবর্তীতে কেমন হতে পারে। এই কর্মীরা সবাই তরুণ এবং বিদেশি।
ফিলিপাইনের নিয়োগকারী সংস্থা বারোনার সঙ্গে ল্যাপল্যান্ডের স্থানীয় রিটেল সংস্থা আরিনার একটি চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তির কারণে ল্যাপল্যান্ডে কাজ করতে এসেছেন ফিলিপিনোরা।
এই নিয়োগ কার্যক্রম এক বছর আগে শুরু হয়েছে। পাঁচ মাসের ভাষা কোর্স এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি প্রশংসাপত্র সুরক্ষিত করতে সহায়তা করে এই প্রকল্প। এর ফলে ফিনল্যান্ডে স্থানান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক দ্রুততর হয়েছে। এই প্রকল্পের ফলে নতুন বিদেশি কর্মীদের ফিনল্যান্ডে একীভূত হতে সাহায্য করা হবে। এর মাধ্যমে নতুন দেশটিতে বাসস্থান খুঁজে পেতে এবং করের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বুঝতে সাহায্য করা হয়।
আরিয়ানার মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক মিন্না স্যালোনেন ওয়াইএলইকে বলেন, ফিনল্যান্ডে ইতিমধ্যে বসবাস করছেন, এমন মেধাবী তরুণদের তারা নিয়োগ করতে চাইলেও তা কঠিন। তার কথায়, ‘‘কয়েকটা জায়গায় রিটেল খাতে চাকরির জন্য ন্যূনতম উৎসাহ নেই।’’
এ দেশে বয়স্কদের সংখ্যা অনেক বেশি। অল্পবয়সী ফিনিশ নাগরিকদের পড়াশোনা বা অন্য কোথাও কাজ করার জন্য চলে যাওয়ায় স্থানীয় প্রতিভাবান তরুণদের নিয়োগ করা যায় না। ওয়াএলইর প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিয়োগকর্তা এবং কর্মী উভয়ের জন্য ‘ট্যালেন্ট বুস্ট’ ইতিবাচক বলেই মনে করা হচ্ছে।
ল্যাপল্যান্ডের পেলো এস মার্কেটে কাজ করা ফিলিপিনো জেভ ফার্নান্দেজ বলেন, ফিনল্যান্ড আমার স্বপ্নের দেশ। আমি এখানে ক্যারিয়ার গড়ে নিতে চাই।
পেলো স্টোরের ম্যানেজার ইয়ানা ইয়ারভেনপা ফিলিপিনো কর্মীদের কাজের নীতি এবং আচরণের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘তারা কঠোর পরিশ্রমী, সুখী, হাসিখুশি। গ্রাহকরা তাদের পছন্দ করেন। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, তারা কাজের ব্যাপারে নিখুঁত।’’
• শ্রমিকের অপ্রতুলতা
অনেক ইউরোপীয় দেশের মতো ফিনল্যান্ডের রিটেল খাতে এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো টিকিয়ে রাখার জন্য প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২১ সালের শেষে, আনুমানিক এক লাখ ৯৬ হাজার পার্সোনাল কেয়ার কর্মী চাকরি পেয়েছেন ফিনল্যান্ডে। যার প্রায় ৮ দশমিক ৪ শতাংশ অর্থাৎ ১৬ হাজার ৫০০ জন বিদেশি। পরিচ্ছন্নতাকর্মী, সহায়তাকর্মীদের মধ্যে বিদেশিই বেশি ছিল।
• ট্যালেন্ট বুস্ট প্রোগ্রাম
শ্রমের ঘাটতি মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর লক্ষ্যে, ফিনিশ সরকার ‘ট্যালেন্ট বুস্ট’ প্রোগ্রাম চালু করেছে। এতে পাঁচ বছরের (২০২৩ থেকে ২০২৭) কাজ এবং ইইউ ও ইইএর পাশাপাশি চারটি রাষ্ট্রের মানুষদের আকৃষ্ট করার জন্য শিক্ষা-ভিত্তিক কর্মসূচি নেওয়া হয়। টার্গেট দেশগুলো হলো, ফিলিপাইন, ব্রাজিল, ভারত এবং ভিয়েতনাম।
উচ্চমাত্রার দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও ফিনল্যান্ডের শ্রমবাজারে দক্ষ শ্রমিকের উল্লেখযোগ্য ঘাটতি রয়েছে। এটা মোকাবেলার জন্য, প্রধানমন্ত্রী অর্পোর সরকার ফিনল্যান্ডে বসবাসকারী বেকার চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ এবং অভিবাসনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিচ্ছেন। সংশোধিত ট্যালেন্ট বুস্ট প্রোগ্রাম ইইউ ও ইইএ দেশগুলো থেকে নিয়োগকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এছাড়াও নন-ইইউ দেশগুলো থেকে আন্তর্জাতিক নিয়োগের প্রচার করছে।
প্রোগ্রামের বিভিন্ন উদ্যোগে এমন কৌশল নেওয়া হয়েছে, যা মানুষকে শুধু ফিনল্যান্ডে আসতেই সাহায্য করবে না বরং তাদের এ দেশে থাকতে উৎসাহিত করবে।
মসৃণ অভিবাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে বসবাসের অনুমতি প্রক্রিয়াকরণের সময় সংক্ষিপ্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের জন্য এক সপ্তাহে অনুমতি প্রক্রিয়াকরণ এবং অন্যান্য কর্মীদের জন্য ৩০ দিনে অনুমতির লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সিস্টেমের অপব্যবহার প্রতিরোধ এবং সরকারি নিয়ম মেনে চলা নিশ্চিতের ব্যবস্থাও বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বিদেশি কর্মীদের ফিনল্যান্ডে থাকার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে এমন বিষয়গুলো নিয়ে ভেবে দেখছে সরকার। যেমন অ্যাক্সেসযোগ্য ব্যাংকিং পরিষেবা, ইংরেজি-ভাষা শিক্ষা, এছাড়াও ফিনিশ ও সুইডিশ শেখার জন্য সহায়তা ইত্যাদি।
• বিদেশি শ্রমিক ছাড়া কাজ হবে না
কর্পোরেট জায়ান্ট এস গ্রুপ ফিনল্যান্ডের বৃহত্তম রিটেল গোষ্ঠী। বিদেশি কর্মীদের সমর্থন করছে তারা। সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের কথাও ভাবা হচ্ছে। সংস্থার ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিনের গ্রীষ্মের সংস্করণে বিদেশি কর্মীদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রচ্ছদের অনুলিপিতে লেখা ছিল, ‘‘সবসময় ফিনিশে পরিষেবা পাওয়া যাবে না। এতে অভ্যস্ত হতে হবে। ফিনল্যান্ড বিদেশি কর্মী ছাড়া কাজ করতে পারবে না।’’
এই ম্যাগাজিনের দুই লাখেরও বেশি সার্কুলেশন রয়েছে বলে জানা গেছে। ওয়াইএলইর প্রতিবেদন বলছে, কোম্পানি আরও বেশি বিদেশি কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা করছে। সংস্থাটি চায় গ্রাহকরা এই ধারণায় অভ্যস্ত হয়ে উঠুন। সংস্থার হিউম্যান রিসোর্স অধিকর্তা লেহটোভুরি ওয়াইএলইকে বলেন, গ্রাহকদের জন্য ম্যাগাজিনের বার্তা দেওয়া, যাতে তারা বিষয়টা বুঝতে পারেন।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, অনেক বিদেশি কর্মীদের ফিনল্যান্ডে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তারা এ দেশে থাকতে চান। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৪০ শতাংশ কর্মী বলেন, তারা কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের সম্মুখীন হন,আর সেটা মূলত ভাষার কারণে। ইনফোমাইগ্রেন্টস।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আন্তর্জাতিক
সৌদিতে ১৪টি নতুন তেল-গ্যাস খনির সন্ধান

দেশে ১৪টি নতুন তেল ও গ্যাসের খনির সন্ধান পেয়েছে সৌদি আরব। সৌদির জ্বালানিমন্ত্রী প্রিন্স আবদুলাজিজ বিন সালমান বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন এ তথ্য।
জ্বালানিমন্ত্রী বলেন, নতুন এই খনিগুলোর অবস্থান দেশটি পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞলীয় বিস্তীর্ণ মরুভূমি রাব আল খালি এলাকায়।
খনিগুলোতে কী পরিমাণ তেল ও গ্যাস থাকতে পারে, সে সম্পর্কিত কোনো তথ্য দেননি আবদুলাজিজ বিন সালমান জানিয়েছেন, নতুন খনিগুলোর আবিষ্কারের ফলে সৌদি আরবের জ্বালানি নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সৌদি আরব বিশ্বের সর্ববৃহৎ জ্বালানি তেল রপ্তানিকারী দেশ। দেশটির খনিগুলোতে মজুত তেলের মোট পরিমাণ ২৬ হাজার ৭০০ কোটি ব্যারেল (১ ব্যারেল=১৫৯), যা বিশ্বের মোট তেলের মজুতের ১৭ শতাংশ। প্রতিদিন ৫০ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করে সৌদি আরব।
সম্প্রতি এশীয় ক্রেতাদের জন্য প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলে ২ দশমিক ৩০ ডলার মূল্যছাড় দিয়েছে সৌদি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
শুল্ক থেকে প্রতিদিন ২ বিলিয়ন ডলার আয় করছে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, শুল্ক আদায়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদিন গড়ে ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার আয় করছে। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) হোয়াইট হাউজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই দাবি করেন তিনি। তবে এ সংক্রান্ত কোনো বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেননি ট্রাম্প।
জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ওপর নানাবিধ শুল্ক আরোপ করেছেন, বিশেষত চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ভারত ও অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারের বিরুদ্ধে। তার মতে, এই শুল্ক নীতি মার্কিন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে ও দেশের জন্য অতিরিক্ত রাজস্ব সৃষ্টি করছে। তবে, অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা তার এই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের (অর্থ মন্ত্রণালয়) দৈনিক হিসাব অনুযায়ী, কাস্টমস অ্যান্ড সার্টেইন এক্সাইজ ট্যাক্স (শুল্ক ও বিশেষ কর) বিভাগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে নিট আয় ছিল প্রায় ৭.২৫ বিলিয়ন বা ৭২৫ কোটি ডলার, যা দৈনিক গড়ে প্রায় ২৫৯ মিলিয়ন বা ২৫ দশমিক ৯০ কোটি ডলারের সমান। মার্চ মাসে এই হার দৈনিক গড়ে প্রায় ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি ডলার। অর্থাৎ, ট্রাম্পের দাবিকৃত ২০০ কোটি ডলারের সঙ্গে ট্রেজারির তথ্যের বিশাল ব্যবধান রয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের এই দাবি অতিরঞ্জিত হতে পারে। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের গবেষণা অনুযায়ী, শুল্ক থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি বড় অংশই মূলত মার্কিন ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আসে, কারণ আমদানিকৃত পণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পড়ে। এছাড়া, শুল্ক যুদ্ধের কারণে মার্কিন রপ্তানিকারকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, বিশেষত কৃষি ও শিল্প খাতে।
মার্চ মাসের জন্য ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের পূর্ণাঙ্গ বাজেট বিবরণী এই বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হবে, যা শুল্ক আয়ের সর্বশেষ চিত্র তুলে ধরবে। তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি যে কীভাবে তারা দৈনিক ২০০ কোটি ডলার আয়ের হিসাব পেয়েছেন।
ট্রাম্প মূলত এই শুল্ক নীতিকে তিনি ‘মার্কিন শ্রমিক ও শিল্পের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার’ বলে বর্ণনা করেছেন। তবে, বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা এটিকে ‘অর্থনৈতিক বিভ্রান্তি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
ট্রাম্পের শুল্ক নীতি শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বৈশ্বিক বাণিজ্যেও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। চীন ও ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য সংঘাতের কারণে বিশ্ব বাজারে পণ্যের দাম ও সরবরাহ শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক এরই মধ্যে সতর্ক করেছে যে এই নীতি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
নতুন শুল্কহারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ৭৩ শতাংশ মার্কিন নাগরিক। সম্প্রতি রয়টার্স-ইপসোসের এক জরিপে উঠে এসেছে এ তথ্য।
রোববার শেষ হওয়া তিন দিনের ওই জরিপে দেখা গেছে, ৭৩ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, প্রায় সব ধরনের আমদানির ওপর নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর আগামী ছয় মাসে তারা প্রতিদিন যেসব পণ্য কিনছেন সেগুলোর দাম বাড়বে। মাত্র ৪ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন দাম কমবে এবং বাকিদের মনে করেন দাম অপরিবর্তিত থাকবে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের অধিকাংশ দেশ থেকে আমদানির ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বেশিরভাগ মার্কিন নাগরিক ভোগ্যপণ্যের উচ্চমূল্যের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
গত সপ্তাহে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধি সংক্রান্ত ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্টের এ ঘোষণা ওয়াল স্ট্রিটকে কাঁপিয়ে দেয় অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস, নতুন ট্যারিফ পণ্যের দাম বাড়িয়ে তুলবে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ সমগ্র বিশ্বের বাকি অংশে মন্দা সৃষ্টি করতে পারে।
ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির এক চতুর্থাংশ উত্তরদাতাসহ জরিপে প্রায় ৫৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, প্রায় প্রতিটি দেশ থেকে আমদানির ওপর কমপক্ষে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণার বিরোধিতা করেন তারা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
চীনা পণ্যে ১০৪ শতাংশ শুল্ক, আজ থেকেই কার্যকর

বেশ কিছু চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১০৪ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা আজ বুধবার (৯ এপ্রিল) থেকে কার্যকর হয়েছে।
বিষয়টিকে প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে- কারণ এই পদক্ষেপ চীনের বিরুদ্ধে নতুন করে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, আজ থেকে এই শুল্ক কার্যকর করা হয়েছে।
এই শুল্ক বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের একাধিক পদক্ষেপ। গত ২ এপ্রিল, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ ন্যূনতম শুল্ক আরোপ করার ঘোষণা দেন। এরপর ৩৪ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, ফলে চীনা পণ্যের ওপর শুল্কের মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৪ শতাংশ। এর পরবর্তী দিনগুলোতে শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি দেয়ার পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট চীনের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেন।
এর আগে, ৪ এপ্রিল চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা সব পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। চীনের এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। তিনি ঘোষণা করেন, যদি চীন ৮ এপ্রিলের মধ্যে মার্কিন পণ্যের ওপর থেকে ৩৪ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তবে ৯ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর আরও অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে।
অবশেষে, চীনের কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার ফলে ট্রাম্প আজ, ৯ এপ্রিল থেকে ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পোস্টে এই পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন এবং চীনকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় শোষক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন অনেক লাভবান হচ্ছে, যা আগে চীনসহ অন্যান্য দেশগুলো থেকে শোষণ করা হতো। তেল, সুদের হার ও খাদ্যের দাম কমার পাশাপাশি কোনো ধরনের মূল্যস্ফীতি না থাকার বিষয়টিও ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন।
এই পদক্ষেপের ফলে মার্কিন বাণিজ্যিক পরিবেশে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি হওয়ার আশা করা হলেও, চীন এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের এই সিদ্ধান্ত ভুল এবং চীন কখনোই এটি মেনে নেবে না। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এটি আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতারণার পরিচায়ক। চীন এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের শুল্ক আরোপ মেনে নেয়া হবে না।”
চীনের শুল্ক আরোপের পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই শুল্ক বৃদ্ধি নতুন করে বাণিজ্যযুদ্ধকে আরো গভীর করে তুলতে পারে। এই লড়াই দুটি দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, কারণ দুটি দেশই একে অপরের প্রধান বাণিজ্যিক সঙ্গী।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
এশীয় ক্রেতাদের জন্য তেলের দাম কমানোর ঘোষণা সৌদির

আগামী মে মাস থেকে এশীয় ক্রেতাদের জন্য জ্বালানি তেলের দাম কমাচ্ছে সৌদি আরব। রোববার এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত তেল উত্তোলন ও বিপননকারী কোম্পানি সৌদি আরামকো।
বিবৃতিতে কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী ১ মে থেকে এশীয় ক্রেতারা সৌদি আরামকোর ফ্ল্যাগশিপ পণ্য আরব লাইট ক্রুডসহ অন্যান্য সব তেলে প্রতি ব্যারেলে (এক ব্যারেল=১৫৯ লিটার) ২ দশমিক ৩০ ডলার ছাড় পাবেন।
জ্বালানি তেলের বাজার পর্যবেক্ষণকারীদের মতে, করোনা মহামারির পর থেকে ডলারের মানে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ডলারের মজুত ধরে রাখতে অনেক দেশই জ্বালানি তেল ক্রয়ের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে।
এদিকে, জ্বালানি তেল উত্তোলন ও বিপননকারী দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস সম্প্রতি তেলের উত্তোলন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাজার বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তেলের বিক্রি বাড়াতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম জ্বালানি তেল রপ্তানিকারী দেশ সৌদি আরব।
এর আগেও অবশ্য এশীয় ক্রেতাদের মূল্যছাড় দিয়েছে সৌদি, কিন্তু এবারের ছাড় অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে ধাক্কা লেগেছিল, তার রেশ চলেছে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত। বস্তুত ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সালের শুরু পর্যন্ত মন্দাভাব ছিল আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে। সে সময় লোকসান ঠেকাতে ওপেক প্লাস দৈনিক তেলের উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সৌদি আরব ছিল তেলের উত্তোলন হ্রাসের প্রস্তাবক এবং তা কার্যকর করা দেশ।
বাজার পর্যবেক্ষণকারী ব্রিটিশ সংস্থা ক্যালাম ম্যাকফারসন এ প্রসঙ্গে রয়টার্সকে বলেন, “বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ইরাক ও কাজাখস্তানের তেলের সরবরাহ বাড়ছে। এ দুই দেশের ক্রেতাদের বেশিরভাগই এশীয় এবং তাদের অনেকেই এক সময় সৌদি তেলের ক্রেতা ছিল। আমার ধারণা, নিজেদের ক্রেতাদের ফিরে পেতে এই মূল্যছাড় দিয়েছে সৌদি আরব।”