অর্থনীতি
বাণিজ্য ঘাটতি ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে বিভিন্ন শর্ত দেওয়া আছে। এর প্রভাবে আমদানি কমেছে। তবে একই সময় রপ্তানি আয়ও কমে গেছে। আশানুরূপ হারে বাড়েনি রেমিট্যান্স। যার কারণে এখনো বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হচ্ছে। বাণিজ্য ঘাটতির সঙ্গে চলতি হিসাবের ঘাটতি বাড়ছে। সঙ্গে সামগ্রিক বৈদেশিক লেনদেনেরও বিশাল ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তবে রপ্তানি আয় সমন্বয় হওয়ায় আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ( ২৫ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে পর্যন্ত সময়ের বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের (ব্যাল্যান্স অব পেমেন্ট) পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে মাস পর্যন্ত সময়ে তিন হাজার ৭৩৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এ সময় আমদানি হয়েছে ৫ হাজার ৭৫৬ কোটি ডলারের পণ্য। এতে অর্থবছরের ১১ মাসে ২ হাজার ২২ কোটি ( ২০.২২ বিলিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার ১১৮ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা। যদিও তার আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময় বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২৬ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।
ডলার সংকট কাটাতে নানা উপায়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। একই সঙ্গে তুলনামূলক কম প্রয়োজন বা বিলাসী পণ্যের এলসি খোলার সময় শতভাগ পর্যন্ত নগদ মার্জিনের শর্ত দেওয়া আছে। এসব কারণে আমদানি কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জানানো হয়, আগে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের মধ্যে বড় ধরনের ফারাক ছিল, যা এখন সমন্বয় করা হয়েছে। এতে করে আর্থিক হিসাবে এই উদ্বৃত্ত তৈরি হয়েছে। গত অর্থবছরের ১১ মাসে বৈদেশিক বাণিজ্যের আর্থিক হিসাবে ২০৮ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত আছে, যা তার আগের অর্থবছরের একই সময়ের এ উদ্বৃত্ত ছিল ৫৫১ কোটি ডলার। তবে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
চলতি হিসাবের ভারসাম্য (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স)
কোনো দেশের চলতি হিসাব মূলত বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য এবং মানুষের আয় কেন্দ্রিক আয়-ব্যয়ের হিসাব। চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো।
সবশেষ তথ্য বলছে, গত অর্থ বছরের ১১ মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতি ৫৯৮ কোটি ডলার। তার আগের অর্থবছরে একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ১ হাজার ২০২ কোটি ডলার।
ওভার অল ব্যাল্যান্স
সামগ্রিক লেনদেনে (ওভারঅল ব্যাল্যান্স) বড় ঘাটতিতে আছে বাংলাদেশ। জুলাই-মে মাসে সামগ্রিক লেনদেনের (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮৮ কোটি ডলার। এই সূচকটি আগের বছর একই সময় ঘাটতি ছিল ৮৮০ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি বেড়ে যাওয়া মানে বিভিন্ন উৎস থেকে দেশে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসছে, তার চেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিশোধ ঝুঁকি এড়াতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রচুর পরিমাণ ডলার বিক্রি করছে।
রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি
গত অর্থবছর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১ হাজার ২৬৯ কোটি ডলার বা ১২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার (১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন) বিক্রি করা হয়েছিল। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি হয় ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন বা ৭৬২ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে তিন অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৩৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দুই হাজার ১৩৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। আগের বছর একই সময় পাঠিয়েছিলেন ১ হাজার ৯৪১ কোটি ডলার।
বিদেশি বিনিয়োগ
দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-মে বাংলাদেশ যেখানে ৪০৭ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল। গেল অর্থবছরের একই সময় সেখানে এসেছে ৩৮১ কোটি ডলার। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নেট এফডিআই বলা হয়।
আলোচ্য অর্থবছরে নেট বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। এই সূচকটি আগের বছরের চেয়ে দশমিক ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ১৫৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার হয়েছে। আগের অর্থবছরে নেট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১৫০ কোটি ২০ লাখ ডলার।
একই সঙ্গে আলোচিত সময়ে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) নেতিবাচক অবস্থা অব্যাহত আছে। গত অর্থবছরের ১১ মাসে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নেট) যা এসেছিল তার চেয়ে ১১ কোটি ১০ লাখ ডলার চলে গেছে। তার আগের অর্থবছরের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ঋণাত্মক ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

অর্থনীতি
মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮.৫৫ শতাংশ

দীর্ঘ সময় পর গত জুনে স্বস্তি ফিরেছিল মূল্যস্ফীতিতে। তবে জুলাইয়ে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার শূন্য দশমিক ০৭ শতাংশ বেড়েছে। ফলে জুনের ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ থেকে বেড়ে জুলাইয়ে তা হয়েছে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
বিবিএস জানায়, জুলাইয়ে বেড়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতিও। মাসটিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। জুনে যা ছিল ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
এছাড়া জুনে সার্বিক খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ থাকলেও জুলাইয়ে সেটি বেড়ে ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বেড়েছে শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ।
জুলাইয়ে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক ০৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
আর শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
অর্থনীতি
সঞ্চয়পত্রে আগ্রহ কমছে, বিল-বন্ডে বিনিয়োগ বেড়ে পাঁচ গুণ

দেশে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের সঞ্চয় করার সামর্থ্য কমে গেছে। একই সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের সুদহার নিয়ে বিভ্রান্তি, নিয়মের জটিলতা এবং ব্যাংক ও সরকারি বিল-বন্ডে উচ্চ সুদের হার—এসব কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে আগ্রহ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। বিপরীতে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। গত জুন শেষে সরকারি এ উপাদানে ব্যক্তি, কর্পোরেট বডি, প্রভিডেন্ট, পেনশন ফান্ডের বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের জুন শেষে যা ছিল মাত্র ২৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। গত দুই বছরে বেড়ে প্রায় পাঁচ গুণ হয়েছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, টানা তিন অর্থবছর ধরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিট বিক্রি কমেছে ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। এর ফলে সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৩৮ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকায়। আগের দুই অর্থবছরেও যথাক্রমে ২১ হাজার ১২৪ কোটি এবং ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ কমেছিল।
একসময় বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র ছিল সরকারের অন্যতম নির্ভরযোগ্য উৎস। চলতি অর্থবছরের জন্য সঞ্চয়পত্র থেকে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে ১৪ হাজার কোটি করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০১৯ সালে ‘জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ চালুর পর সঞ্চয়পত্র কেনার প্রক্রিয়া অনেক কঠোর হয়ে যায়। একই নামে বড় অঙ্কে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ কমে যায়, এক লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে টিআইএন বাধ্যতামূলক হয়।
পাশাপাশি প্রতি ছয় মাস অন্তর সুদহার পরিবর্তনের নতুন নিয়মে সর্বশেষ জুলাই মাসে সুদহার ৪৭ থেকে ৫৭ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত কমেছে। বর্তমানে সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি ও কম বিনিয়োগে আলাদা সুদহার প্রযোজ্য হয়, যা অনেকের কাছে জটিল মনে হচ্ছে।
ফলে বিনিয়োগকারীরা এখন বেশি ঝুঁকছেন ট্রেজারি বিল ও বন্ডের দিকে। যেখানে ব্যাংক, প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন ফান্ড এবং ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়োগ দ্রুত বাড়ছে। ২০২৩ সালের জুন শেষে এ খাতে মোট বিনিয়োগ ছিল ২৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা, যা ২০২৫ সালের জুন শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ১৫৯ কোটি টাকায়—মাত্র দুই বছরে বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রেজারি বিল-বন্ডে এখন ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া যাচ্ছে, যা করমুক্ত এবং নিরাপদ। সময়মতো মুনাফা পাওয়ার নিশ্চয়তা ও সেকেন্ডারি বাজারে বিক্রির সুযোগ থাকায় এটি এখন ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় খাতে পরিণত হয়েছে।
অর্থনীতি
সিআরআর ঘাটতিতে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংককে জরিমানা

তারল্য সংকটে পড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) রাখতে পারেনি আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক। এজন্য দণ্ডসুদ হিসেবে জরিমানা গুনতে হয়েছে শরিয়াহভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি এ অর্থ পরিশোধ করেছে ব্যাংকটি।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পাঠানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক নির্ধারিত নগদ জমা (সিআরআর) রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। নিয়ম অনুসারে ৯ শতাংশ হারে দণ্ডসুদ বাবদ ১৯ কোটি ১৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা ১৪ দিনের মধ্যে ( ৬ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত স্থানে জমা দিতে হবে। সময়মতো না দিলে ব্যাংকের হিসাব থেকে টাকা কেটে নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এবিষয় জানতে চাইলে ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) কামাল হোসেন বলেন, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে কিছুটা অস্থিরতা তৈরি হয়, যার প্রভাবে নির্ধারিত হারে সিআরআর বজায় রাখা সম্ভব হয়নি। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমাদের ব্যাংকের বিরুদ্ধে আর্থিক জরিমানা আরোপ করা হয়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক চিঠির মাধ্যমে করা জরিমানা পরিশোধের জন্য ১৪ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করে। আমরা নির্ধারিত সময়সীমার আগেই ৪ আগস্ট, জরিমানার অর্থ পরিশোধ করেছি।
প্রধান অর্থ কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে আমাদের ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্থিতিশীল। এখন ঋণের প্রবাহ তুলনামূলকভাবে কম, বিপরীতে আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সিআরআর সংরক্ষণসহ অন্যান্য আর্থিক বাধ্যবাধকতা যথাযথভাবে পূরণ করতে কোনো সমস্যা নেই।
গত বছর ক্ষমতার পালাবদলের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এস আলম গ্রুপের সত্তাধীন ব্যাংকগুলোর ওপর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। এর প্রেক্ষাপটে, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এস আলমের ভাই আবদুস সামাদ নিজেই পদত্যাগ করেন। পরে ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন সেলিম রহমান, যিনি কেডিএস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা খলিলুর রহমানের ছেলে। ব্যাংক খাতে খলিলুর রহমান ও এস আলমের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরে সেপ্টেম্বরে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা বেসরকারি আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা শাহরিয়ার। তার সঙ্গে পর্ষদের চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক হন। তারা হলেন— বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. শাহীন উল ইসলাম, এনআরবি ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল ওয়াদুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ এবং হিসাববিদ মোহাম্মদ আশরাফুল হাছান।
বর্তমান ২২৬টি শাখা, ৮৭টি উপশাখা, প্রায় ৭৫০টির মতো এজেন্ট আউটলেট নিয়ে কার্যক্রম চলছে। গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩৬ লাখ। আমানত রয়েছে ৫১ হাজার কোটি টাকা এবং ৪৬ হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ রয়েছে।
এদিকে গত এপ্রিলে ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং বিভাগের অর্থ তছরুপ করার অভিযোগে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফরমান আর চৌধুরী, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ নাদিমসহ চার কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। অপর দুই কর্মকর্তা হলেন ব্যাংকটির ডিএমডি ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রধান আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া ও ট্রেজারি বিভাগের প্রধান মো. আব্দুল মবিন।
অর্থনীতি
মোংলা ইপিজেডে ৮০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করবে দ. কোরিয়া

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান ওসিএফ কোম্পানি লিমিটেড ৮০ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগে মোংলা ইপিজেডে একটি তাঁবু ও তাঁবু অ্যাক্সেসরিজ, ক্যাম্পিং ফার্নিচার, ফার্নিচার অ্যাক্সেসরিজ ও ব্যাগ তৈরির কারখানা স্থাপন করতে যাচ্ছে।
এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বুধবার (৬ আগস্ট) ঢাকাস্থ বেপজা নির্বাহী দপ্তরে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
বেপজার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বেপজার সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবীর এবং ওসিএফ কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাইয়ুন গিল কিম নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠানটি তাঁবু, তাঁবু ও ফার্নিচার অ্যাক্সেসরিজ, ক্যাম্পিং চেয়ার ও টেবিল, অ্যালুমিনিয়াম, কার্বন, স্কি ও ট্রেকিং পোল, মাউন্টেন ও ওয়াকিং স্টিক, বেড কট, স্ট্যান্ড, পেট ফার্নিচার, অ্যারো এবং ব্যাগ তৈরি করবে যার ফলে ৮২০ জন বাংলাদেশি নাগরিকের
কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
অনুষ্ঠানে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, বেপজা সবসময় বৈচিত্র্যময় উৎপাদনে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে। যেহেতু এটি বেপজার অধীন প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় প্রকল্প, তিনি ওসিএফ কোম্পানি লিমিটেডকে বেপজার প্রতি আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বিশেষ করে ইপিজেডগুলোতে দক্ষিণ কোরিয়ার আরও বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে ‘অ্যাম্বাসেডর’ হিসেবে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। তিনি বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ প্রদানে বেপজার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
এ সময় হাইয়ুন গিল কিম বেপজার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং আগামী বছরের মধ্যে নতুন কারখানায় উৎপাদন শুরু করতে পারার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেপজার সদস্য (প্রকৌশল) মো. ইমতিয়াজ হোসেন, সদস্য (অর্থ) আ ন ম ফয়জুল হক, নির্বাহী পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. তানভীর হোসেন, নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) এ এস এম আনোয়ার পারভেজসহ প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থনীতি
নির্বাচনের জন্য যত টাকা লাগবে, দেওয়া হবে: অর্থ উপদেষ্টা

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে যত টাকা লাগবে, তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বুধবার (৬ আগস্ট) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ও অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে নির্বাচনের বাজেট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় জানান প্রধান উপদেষ্টা। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন করতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরেকটু কমলে ভালো হতো বলেও মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ওরা (যুক্তরাষ্ট্র) যেটা করেছে মোটামুটি। স্বস্তির জায়গা বলব না। এমনিতেই বিশ্ব অনেক চ্যালেঞ্জে। তবে অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশ খুব খারাপ অবস্থানে নেই।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, যেটা হয়েছে, আমাদের পোশাক ও নিট পোশাক খাত তাড়াতাড়ি সমন্বয় করে ফেলতে পারবে। বস্ত্র খাতের বোনায় (উইভিং) একটু সমস্যার মধ্যে পড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আবার দর-কষাকষিতে যাওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, হ্যাঁ। ইউএস চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছি। বাংলাদেশের বিষয়ে তাদের মনোভাব খুবই ভালো। শেভরন ও মেটলাইফের অর্থ দিয়ে দেওয়ার কারণে বলেছে, তোমরা তো টাকা আটকে রাখো না।
চুক্তি এখনও সই হয়নি জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, একটা আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই হবে। কোন কোন জায়গায় আমাদের শুল্ক কমাতে হবে, কী কী আমদানি করতে হবে, তা দেখতে হবে। তিনি আরও বলেন, যখন উভয় পক্ষের নিবিড় (ওয়ান টু ওয়ান) দর-কষাকষি হয়, অনেক কথা বলা হয় না। এটা বহুপক্ষীয় দর-কষাকষি না। এটা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) নয়, জাতিসংঘ নয়, যে সবাই জানবেন। তা ছাড়া ভিয়েতনাম আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। আবার চীন, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান সবাই আছে। কিছু জিনিস আছে বলা যায় না।
এক বছরে খাদের কিনারা থেকে দেশের অর্থনীতি অনেকটাই ওপরে উঠে এসেছে বলেও মন্তব্য করেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এটা দেখার জন্য দৃষ্টি ও অন্তর্দৃষ্টি লাগে। ভাসা–ভাসা দেখলাম, ভাসা–ভাসা বলে দিলাম, তা না। অনেক কিছুই হয়েছে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান, জ্বালানি, শুল্কসহ অনেক চ্যালেঞ্জ আছে সামনে। বড় চ্যালেঞ্জ ব্যবসায়ীদের আস্থা আনা এবং ধীরগতির ব্যবসা-বাণিজ্যে আরও গতি সঞ্চার করা।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটা একটু স্বস্তির জায়গায় আসছে। একটু সময় লাগবে।
সংস্কারের বিষয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কিছু জিনিস আমরা করে ফেলেছি। কতগুলো আছে মধ্য মেয়াদে ও দীর্ঘ মেয়াদে করা হবে। যেমন ব্যাংক রেজল্যুশন। একটু সময় লাগবে। বাংলাদেশ ব্যাংক একটা পথনকশা করছে। পুঁজিবাজার মোটামুটি চেষ্টা করছে। এনবিআরের অধ্যাদেশ কিছুটা সংশোধন করা হবে।
কাফি