অর্থনীতি
এনবিআরের রাজস্ব আয় বেড়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা
এক বছর আগের তুলনায় সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে বিশ্ববাজারে আমদানি পণ্যের দাম ছিল কম। তাতে বিদায়ী অর্থবছরে (২০২৩-২৪) আমদানি খরচ কমেছে। আমদানি খরচ কমলেও আমদানি পর্যায়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব আদায় বেড়ে হয়েছে প্রায় ৯৯ হাজার কোটি টাকা। আমদানি পর্যায়ে কাস্টমস শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর ও জরিমানা থেকে এই রাজস্ব আদায় হয়েছে। অর্থাৎ রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানির কাঁচামাল বাদে আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য (জাহাজভাড়া, বিমাসহ পণ্যের মূল্য) ছিল ৬ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা বা ৬ হাজার ৩২৮ কোটি ডলার। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য কমে দাঁড়ায় প্রায় ৬ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা বা ৫ হাজার ৬৪০ কোটি ডলার। অর্থাৎ ডলারের হিসাবে আমদানি মূল্য কমেছে ৬৮৭ কোটি ডলার বা প্রায় ১১ শতাংশ।
কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও শুল্ক-কর আরোপের জন্য ডলারের দাম নিয়মিত বাড়ানো হয়েছে। তাতে শুল্ক-কর বাড়েনি এমন পণ্যেও রাজস্ব আদায় বেড়ে গেছে। আবার বছরের পর বছর খেজুর, বাদামের মতো কিছু পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য হালনাগাদ করেছে কাস্টমস। তাতে সেখান থেকেও রাজস্ব আদায় বেড়েছে।
বিশ্ববাজারে দাম কমলেও অনেক পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য তাৎক্ষণিকভাবে কমানো হয়নি। এ ছাড়া আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিলাসপণ্য ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক–কর বাড়ানোর প্রভাবও পড়েছে রাজস্ব আদায়ে। তাতে সব মিলিয়ে আমদানি ব্যয় কমলেও রাজস্ব আদায় বেড়েছে।
সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম মাস গত বছরের জুলাইয়ে শুল্ক-কর আরোপের জন্য ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১০৮ টাকা ৮০ পয়সা। এরপর আট দফা বিনিময় মূল্য বাড়িয়ে গত ২৩ জুন ১১৭ টাকা ৯৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ বিদায়ী অর্থবছরে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৯ টাকা। বিনিময় মূল্য বাড়ার কারণে একই ডলারে আমদানি পণ্যের মূল্য টাকায় বেড়ে যাচ্ছে। আর শতাংশ হারে শুল্ক–কর আদায়ের কারণে রাজস্ব আদায়ও বেড়েছে।
আবার কিছু পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে শুল্ক–করও ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে বাড়তি ছিল। খেজুরের উদাহরণ দেওয়া যাক। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই পণ্যের আমদানি আগের চেয়ে ছয় হাজার টন কমেছে। আমদানি কমলেও খেজুর থেকে রাজস্ব আদায় ৭০ গুণ বেড়ে ৬৬২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
এসএম

অর্থনীতি
সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭ শতাংশে নামবে মূল্যস্ফীতি: গভর্নর

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বিশ্ববাজারে খাদ্য, তেল-গ্যাসের দর কমতির দিকে। এর সুফল পাবে। এ ছাড়া মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক করা হয়েছে। আশা করছি আগামী জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭ শতাংশে নেমে আসবে মূল্যস্ফীতি।
মঙ্গলবার (৩ জুন) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর তার এ প্রত্যাশার কথা জানান। একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতি কমলে সুদহারও কমানো হবে বলেও জানান তিনি।
গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতির বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এক্সচেঞ্জ রেট। এটা কমাতে না পারলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ত। এখন এটা স্বস্তিতে এসেছে। এক্সচেঞ্জ রেট বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরও তেমন পরিবর্তন হয়নি। এতে করে আস্থা এসেছে, মূল্যস্ফীতি একটি ভালো জায়গায় যাচ্ছে।
গভর্নর বলেন, আমরা যদি পরিসংখ্যান দেখি— খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১৪ শতাংশ ছিল, এখন তা সাড়ে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি একটু বেশি আছে, এটি কমছে, এখন ১০ শতাংশের নিচে আছে। বিশ্ববাজারে খাদ্য, তেল-গ্যাসের দর কমতির দিকে। এর সুফল পাবে। এ ছাড়া মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক করা হয়েছে। আশা করছি আগামী জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭ শতাংশে নেমে আসবে মূল্যস্ফীতি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বিদ্যুৎ জ্বালানি সড়ক সেতু ও রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বাণিজ্য, বিমান এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানসহ বিভিন্ন আর্থিক খাতের প্রধানরা।
গতকাল বিকেলে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বাজেট।
প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের (৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা) তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার হ্রাস পাওয়ার ঘটনা এটি।
কাফি
অর্থনীতি
এবারের বাজেট জনবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব: অর্থ উপদেষ্টা

এবারের বাজেট জনবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ৷ আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি৷
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সামনের পথ কঠিন৷ আমরা চেষ্টা করছি এনবিআরকে রিঅর্গানাইন করতে, বাইরে থেকে ঋণ আনার প্রক্রিয়াটাও মোটামুটি নেগোশিয়েট করে ফেলেছি৷
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি আমরা একটি জনবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব বাজেট দিতে পেরেছি৷ অনেকে বলছে তোমরা আগের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছ৷ হুট করেই যে আমরা একটা বিপ্লবী বাজেট দিয়ে দেব, সেটা তো সম্ভব না৷ বাজেটে একেবারে যে ইনোভেশন নেই, তা কিন্তু নয়৷ গতকাল বাজেট দিয়েছি, এটা ওপেন থাকবে৷ কিছু সাজেশন আসবে৷ পরবর্তীতে ফাইনাল বাজেটটা আসবে৷
তিনি আরও বলেন, সার্বিকভাবে আমি মনে করি চ্যালেঞ্জের মুখে একটু কোলাবোরেটিভ, সিমপেথেটিক হয়ে কাজ করবেন৷ সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে৷ আমরা চাই একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যে, এতো প্রতিকূলতার মধ্যেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে৷ বাজেটের নির্যাস হলো সবার জীবন যাপনকে স্বচ্ছ করা, সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানো ও জীবনমান উন্নত করা৷
বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন— শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বিদ্যুৎ জ্বালানি সড়ক সেতু ও রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টার মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বাণিজ্য বিমান বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টার শেখ বশিরউদ্দীন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানসহ বিভিন্ন আর্থিক খাতের প্রধানরা।
এর আগে সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভি সহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বাজেট।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারের বাজেটটি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, যা পূর্ববর্তী বছরগুলোর বাজেটের তুলনায় ভিন্ন।
প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের (৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা) তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার হ্রাস পাওয়ার ঘটনা।
কাফি
অর্থনীতি
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ জুলাইয়ের চেতনার পরিপন্থি: সিপিডি

রাজনৈতিক সরকারের মতো অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেটেও অপ্রদর্শিত আয় (কালোটাকা) বৈধ করার সুযোগ রাখায় কড়া সমালোচনা করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এ ধরনের পদক্ষেপ জুলাই আন্দোলনের বৈষম্যবিরোধী চেতনার পরিপন্থি।
মঙ্গলবার (৩ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর একটি হোটেলে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
ফাহমিদা বলেন, বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বহাল রাখা হয়েছে। তাতে যারা নিয়মিত নৈতিকভাবে কর দেন তাদের নৈতিকতাতে আঘাত করা হয়েছে। এতে বৈধপথে উপার্জনকারীদের সঙ্গে বৈষম্য তৈরি হবে। তাছাড়া এই পদক্ষেপে সরকারের খুব বেশি রাজস্ব আয় হবে বলেও মনে হয় না।
তিনি বলেন, আয়কর আইন-২০২৩ এর প্রথম তফসিলের আওতায় যেকোনো ব্যক্তি আবাসন বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করে নির্ধারিত বিশেষ কর দিয়ে অঘোষিত তহবিলকে বৈধতা দিতে পারেন। এই সুবিধা গ্রহণের জন্য করের হার বৃদ্ধি করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। কিন্তু সিপিডি সবসময়অঘোষিত অর্থ বৈধ করার এই সুযোগের বিরুদ্ধে। এই সুবিধা সৎ করদাতাদের জন্য নিরুৎসাহিত করে। কর কর্তৃপক্ষের কর আইন ও বিধি প্রয়োগের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত।
ফাহমিদা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবৈধ আয় ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, এই ধরনের পদক্ষেপ সাধারণ জনগণের কাছে কেবল ভুল সংকেত পাঠাতে পারে। এটি জুলাইয়ের চেতনার পরিপন্থি।
তিনি বলেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বৈষম্যের হাতিয়ার। এ ধরনের সু্বিধা বৈধভাবে আয় করা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমিয়ে দেবে। এটা বৈষম্য। যা জুলাই আন্দোলনের যে বৈষম্যবিরোধী চেতনা,তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করি।
এর আগে সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। বাজেটে বলা হয়েছে, কেউ চাইলে আবাসন খাতে বিনিয়োগ করে নির্ধারিত হারে কর দিয়ে নিজের অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করতে পারবেন। তবে এবারের বাজেটে আগের তুলনায় বেশি হারে কর দিতে হবে।
বাজেটের সামগ্রিক কাঠামো নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সিপিডি নির্বাহী পরিচালক। তার মতে, কিছু কিছু পদক্ষেপ ভালো নেওয়া হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে। কিন্তু সামগ্রিক কাঠামোগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে যে একই কাঠামোর মধ্যে এখানে একটু বেশি, ওখানে একটু কম—এ রকম করে নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাজেটের যে দর্শন, সেখানে বৈষম্যহীন সমাজের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে, সব ক্ষেত্রে সেটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
অর্থনীতি
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা নেই

প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। এতদিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
সোমবার (২ জুন) বিকেলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বাজেট ঘোষণায় বলা হয়, ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। বর্তমানে ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এসব ৪৬ সেবার মধ্যে এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই সেবা মিলবে।
বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে চায় সরকার। এ খাত থেকে এক লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা প্রস্তাব করা হয়েছিল ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
এদিকে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মোট ৮৩ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যার মধ্যে আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের পরিশোধ বাদ দিয়ে সরকারের নিট ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। তবে অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) মোট ৪৮ হাজার ৬১৫ কোটি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিক্রি হয়েছে ৩৬ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকার। একই সময়ে আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের নগদায়ন বাবদ ৪৩ হাজার ৪৭৬ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। সে হিসাবে নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৭ হাজার ১৩ কোটি টাকা।
তবে স্বস্তির বিষয় হলো ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়ম আরও সহজ করেছে সরকার। এতে স্বস্তি পাবে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও কৃষিপণ্যের আমদানিতে স্থানীয় ঋণপত্রের (এলসি) কমিশনের ওপর উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এর আওতায় পড়বে চাল, ডাল, ধান, গম, পেঁয়াজ, আলু, চিনি, ভোজ্যতেলসহ ২৫টির বেশি খাদ্যপণ্য। এছাড়া কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ, ফলমূল আমদানির ওপর কর হ্রাসের মাধ্যমে ভোক্তাদের কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের (৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা) তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার হ্রাস পাওয়ার ঘটনা।
অর্থনীতি
বছরে একবারের বেশি স্বর্ণ আনলে মিলবে না ব্যাগেজ রুলসের ছাড়

শুল্ক পরিশোধ করে বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার সুবিধা আরও সংকুচিত করলো অন্তর্বর্তী সরকার। শুল্ক পরিশোধ সুবিধার আওতায় ঘন ঘন দেশে স্বর্ণ আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে ব্যাগেজ রুলসে পরিবর্তন আনা হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে।
এখন থেকে কোনো যাত্রী বছরে একবারের বেশি ব্যাগেজ রুলসের সুবিধায় স্বর্ণ আনতে পারবেন না।
সোমবার (২ জুন) অর্থমন্ত্রী ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের রেকর্ডকৃত বক্তব্যের মাধ্যমে এই সংশোধনের ঘোষণা দেন।
বর্তমানে ঘোষণা দিয়ে একজন যাত্রী বছরে যতবার ইচ্ছা ১১৭ গ্রাম বা ১০ ভরি স্বর্ণ আনতে পারেন এবং এতে ৪০ হাজার টাকা কর দিতে হয়।
এই পরিবর্তনের ফলে কোনো যাত্রী বছরে একবারের বেশি ব্যাগেজ রুলসের সুবিধায় স্বর্ণ আনতে পারবেন না।
বাণিজ্যিকভাবে স্বর্ণ আমদানির অনুমতি থাকলেও বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) নেতারা বলছেন, আমদানির তুলনায় ব্যাগেজ রুলসের আওতায় স্বর্ণ আনা তুলনামূলক সস্তা। তাই অনেকে আমদানির বদলে যাত্রীদের মাধ্যমে ব্যাগেজ রুলস ব্যবহারে বেশি আগ্রহী।
এমনকি অনেক চোরাচালানকারীও এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরকার ২০১৮ সালে দেশে বাণিজ্যিকভাবে স্বর্ণ আমদানির অনুমতি দিলেও তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওই বছর থেকে চার বছরে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে দেশে এসেছে মাত্র ১৪৫ কেজি স্বর্ণ, যা দেশে স্বর্ণের বার্ষিক চাহিদার এক শতাংশেরও কম।
তবে ব্যাগেজ রুলসের আওতায় প্রতিদিন শত কেজির বেশি স্বর্ণ দেশে প্রবেশ করছে, যা আইনি হলেও আমদানির হিসাব ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকছে।
আগের ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী, একজন নারী যাত্রী ১০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালঙ্কার বিনা শুল্কে আনতে পারতেন।