অর্থনীতি
বিদায়ী অর্থবছরে রপ্তানি আয় কমেছে ০.৪৯ শতাংশ

সদ্যবিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি করে ৫ হাজার ৫২৮ কোটি ৮১ লাখ ডলার আয় করেছে যা গত বছরেরে তুলনায় ০.৪৯ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৬৭ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানা গেছে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আজ রপ্তানি আয়ের তথ্য রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো প্রকাশ করবে। তবে তিনি বিস্তারিত বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সরকারের বেঁধে দেওয়া ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৬১ কোটি ডলার কম।
বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, রপ্তানি গন্তব্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও অর্থনীতিক সংকট এবং উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে চলতি অর্থবছরের রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে গত ৩০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২০২৪-২৫ অর্থবছর অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ৪৩ খাতের পণ্যে রপ্তানি প্রণোদনা/নগদ সহায়তা ঘোষণা করে। কিন্তু এবারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নগদ সহায়তা আগের চেয়ে অনেক কম পাবেন রপ্তানিকারকরা।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতেও পণ্যগুলোতে নগদ সহায়তা কমানো হয়েছিল। এ নিয়ে রপ্তানিতে দ্বিতীয়বারের মতো নগদ সহায়তা কমালো সরকার।
উদ্যোক্তাদের মতে, সুদহার বেড়ে যাওয়া, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং বর্ধিত মজুরি কার্যকরের ফলে নানামুখী সংকটে রপ্তানিখাত। এ অবস্থায় প্রণোদনা কমানোয় নেতিবাচক দিক তৈরি হবে রপ্তানিমুখী শিল্পে। কমে যেতে পারে বিনিয়োগ, ঝুঁকিতে পড়বে কর্মসংস্থান।
অন্যদিকে গত সোমবার (১ জুলাই) ‘রপ্তানি নীতি, ২০২৪-২৭’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তিন বছর মেয়াদি নতুন নীতির শেষ অর্থাৎ ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ১১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এসএম

অর্থনীতি
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি খুবই ভালো অবস্থায়: বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশের বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা প্রায় এক বছর আগের তুলনায় খুবই ভালো অবস্থায় আছে বলে মন্তব্য করেছে বিশ্বব্যাংক।
সচিবালয়ে রোববার (১৩ জুলাই) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এই মন্তব্য করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট।
বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বব্যাংকের মন্তব্য হচ্ছে-বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা এখন খুবই ভালো।
তিনি বলেন, প্রায় এক বছর আগে আমরা আশঙ্কা করেছিলাম, পরিস্থিতি আমাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু এখন আমরা মনে করছি আমরা সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছি।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, নতুন দায়িত্বে জোহানেস জুট এখন থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বব্যাংকের কার্যক্রম দেখবেন এবং তার অফিস ওয়াশিংটনের পরিবর্তে নয়াদিল্লিতে থাকবে।
তিনি বলেন, জোহানেস জুট বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের চলমান বিভিন্ন প্রকল্প ও বাজেট সহায়তার বিষয়ে অবহিত আছেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলে প্রায় এক বছর আগে মনে করা হলেও, বর্তমানে সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাংক সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট দেশের আর্থিক খাত, পেমেন্ট ব্যালান্স এবং বৈদেশিক মুদ্রা খাতের উন্নত অবস্থা স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, জোহানেস জুট বেসরকারি খাতের বিকাশ এবং আরও বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো বলে স্বীকার করেছেন জোহানেস জুট।
তিনি আরও বলেন, ১০ থেকে ১২ বছর আগে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে যে পরিবর্তন হয়েছে, তা জুট ইতিবাচকভাবে উল্লেখ করেছেন। বৈঠকে আইএফসি’র কার্যক্রম সম্পর্কিত বিষয়ও আলোচনা হয়।
এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিশ্বব্যাংকের কাছে চাওয়া সব সহায়তা পেয়েছে। তিনি বলেন, আগামী অক্টোবর মাসে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ গ্রুপের বার্ষিক সভায় প্রত্যাশিত সহায়তার পরবর্তী ধাপ উত্থাপন করা হবে ।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, আর্থিক খাতে, বিশেষ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) নেওয়া সংস্কার উদ্যোগে বিশ্বব্যাংক সন্তুষ্ট।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর পুনর্গঠন শুরু হয়েছে এবং এনবিআরকে দুটি পৃথক সংস্থায় বিভাজনের সিদ্ধান্তের পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে চায় বিশ্বব্যাংক, যদিও এতে কিছুটা সময় লাগবে।
সালেহউদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর, লালদিয়ায় কনটেইনার টার্মিনাল সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে এবং বিশ্বব্যাংক অবকাঠামো খাতে সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে।
মার্কিন শুল্ক ইস্যু নিয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা ও আলোচনা প্রতিনিধি দলের প্রধান দেশে ফেরার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট গতকাল ঢাকায় এসেছেন।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিশ্বব্যাংক এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৬ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে, যার বেশিরভাগই অনুদান বা স্বল্প সুদে ঋণ।
অর্থনীতি
১২ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে ১০৭ কোটি ১০ লাখ (১.০৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাস করা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (এক ডলার ১২১ টাকা ধরে) প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে ১০৭ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছে দেশে। যা গত বছরের একই সময়ে আসে (২০২৪ সালের জুলাইয়ের ১২ দিন) ৯৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেশি এসেছে।
এর আগে সদ্যবিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠিয়েছেন প্রায় প্রায় ২৮১ কোটি ৮০ লাখ (২.৮২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স। দেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার বেশি। আর প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা।
এটি একক মাস হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগে মে মাসে দেশে এসেছে ২.৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
অন্যদিকে বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত পুরো সময়ে মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে আসে ২৭৫ কোটি ডলার, মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার এবং সবশেষ জুন মাসে এসেছে ২৮২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।
অর্থনীতি
চট্টগ্রাম বন্দরে দৈনিক গড় কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে

চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডের পরিচালনার প্রথম সাত দিনে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা গেছে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে। প্রেস উইং জানায়, প্রতিদিন গড়ে ২২৫ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বেশি হয়েছে, যা একটি ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।
রবিবার প্রেস উইং আরও জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি টার্মিনালটি দীর্ঘদিন সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছিল। গত ৬ জুলাই ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বন্দরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৭ জুলাই থেকে এনসিটি টার্মিনালের দায়িত্ব গ্রহণ করে চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড। ৭ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত ৭ দিনে চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডের মাধ্যমে ১০টি জাহাজের কন্টেইনার লোডিং-আনলোডিং সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। বর্তমানে এনসিটির ৪ জেটিতে একযোগে ৪টি জাহাজে অপারেশন চলছে।
এর আগে ৭ দিনে সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ৯৫৬ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। পরবর্তী ৭ দিনে চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার ১৮১ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সম্পন্ন করেছে।
অর্থনীতি
এক সপ্তাহে ডলারের দাম কমলো ২ টাকা ৯০ পয়সা

মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান এক সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর ফলে বাজারে ডলারের দাম কমেছে ২ টাকা ৯০ পয়সা। অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলছেন, এই পতনের মূল কারণ বাজারে ডলারের চাহিদা কমে আসা এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধি।
গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বেশ কয়েকটি ব্যাংক রেমিট্যান্সের ডলারের জন্য সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত রেট দেয়। কেউ কেউ ১২০ টাকা ৬০ পয়সায় প্রতি ডলার কিনলেও বেশিরভাগ ব্যাংক দিন শেষে ১২০ টাকার বেশি দিতে রাজি হয়নি। অথচ গত সপ্তাহের শুরুতে রেমিট্যান্সের ডলারের দর ছিল ১২২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১২২ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত। সে হিসাবে এক সপ্তাহে ডলারের দরপতন হয়েছে ২ টাকা ৯০ পয়সা।
ব্যাংকাররা জানান, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর ডলার চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। অনেক ব্যাংক এখন ডলার ধরে রাখতে না চেয়ে বরং বিক্রি করে দিতে চাইছে। আমদানি এলসি কমে যাওয়া এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে বলেই তারা মনে করছেন।
এক সময় বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো থেকে ডলার কেনার জন্য ব্যাংকগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়তো। এখন উল্টো চিত্র। ডলার সরবরাহ বাড়ায় অনেক ব্যাংকই আগ্রহ হারাচ্ছে বেশি দামে কিনতে। এক বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসের কর্মকর্তা জানান, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ডলারের দর আরও কমতে পারে।
গত বছরের ডিসেম্বরে মাত্র দুই কার্যদিবসে ডলারের দাম ১২৮ টাকা ছুঁয়ে ফেলে, যা বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছিল। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে দাম কিছুটা কমে আসে। গভর্নর সে সময় মন্তব্য করেছিলেন, ‘কয়েকটি ব্যাংকের অপরিণত সিদ্ধান্ত ডলার বাজার অস্থিতিশীল করেছে’। তিনি আরও বলেন, কিছু এক্সচেঞ্জ হাউস কৃত্রিমভাবে দর বাড়াচ্ছিল।
ডলারের দাম কমার কারণ
বিশ্লেষকরা বলছেন, ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধির ফলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর ফলে আমদানির খরচ কমবে এবং মুদ্রাস্ফীতি হ্রাসে ভূমিকা রাখবে। একসময় ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে হিমশিম খেত, কিন্তু এখন ডলারের জোগান স্বাভাবিক থাকায় সেই চাপ নেই। এছাড়া খোলাবাজার ও ব্যাংকের মধ্যে ডলারের দামে পার্থক্য কমে এসেছে, যা বাজারে স্থিতিশীলতা আনছে।
রেকর্ড রেমিট্যান্স প্রবাহ
২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীরা দেশে রেকর্ড ৩০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতাগ্রহণের পর প্রতি মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসছে। এমনকি এক মাসে ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স আসে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ওই অর্থবছরের প্রতিমাসে গড়ে দুই বিলিয়ন ডলারের কম রেমিট্যান্স আসে। সে তুলনায় সদ্য বিদায়ী বছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশ বেড়েছে।
বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা
গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারভিত্তিক ডলারের বিনিময় হার চালু করে, যা আইএমএফ শর্ত অনুযায়ী গৃহীত। এই নীতির পর থেকেই ডলারের দাম ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।
বিগত বছরগুলোতে সরবরাহের তুলনায় ডলারের চাহিদা বেশি ছিল। সরকারি আমদানি বিলের ব্যাকলগ থাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ওপর ডলার ক্রয়ের চাপ ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, বর্তমান গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে বাজার থেকে ডলার সংগ্রহ করে আমদানি বিল পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ফলে তারা প্রায় সব দায় পরিশোধ করেছে। এখন রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় ভালো থাকায় ডলারের জোগান স্বাভাবিক এবং দরপতনের সম্ভাবনাই বেশি।
অর্থনীতি
অপ্রচলিত বাজারে বেড়েছে রপ্তানি, নতুন বাজারে নজর দেওয়ার পরামর্শ

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি খাতে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে এ খাতে দেশের মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশে অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যখন বিশাল চ্যালেঞ্জ তৈরি করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তখন বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে অপ্রচলিত বাজার। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বলছে, অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। অবশ্য সার্বিকভাবে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়লেও রাশিয়া, ইউএই, মালয়েশিয়ার মতো বাজারে কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ। আর তাই, নতুন বাজারে আরও মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা।
ইপিবির প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এখনও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে এই বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ১৯ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের মোট আরএমজি রপ্তানির ৫০ দশমিক ১০ শতাংশ।
অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রপ্তানির ১৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। কানাডা ও যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয়েছে যথাক্রমে ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার এবং ৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
আলাদাভাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ইইউ বাজারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং কানাডায় ১২ দশমিক ০৭ শতাংশ। এছাড়া যুক্তরাজ্যে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানি, যেখান থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। এরপর তালিকায় যথাক্রমে রয়েছে স্পেন (৩ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার), ফ্রান্স (২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার), নেদারল্যান্ডস (২ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার), পোল্যান্ড (১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার), ইতালি (১ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার) এবং ডেনমার্ক (১ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার)।
কিছু ইউরোপীয় দেশে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যেমন নেদারল্যান্ডসে ২১ দশমিক ২১ শতাংশ, সুইডেনে ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ, পোল্যান্ডে ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং জার্মানিতে ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
এদিকে নন-ট্র্যাডিশনাল বা অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের সার্বিক আরএমজি রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ; মোট রপ্তানি আয় এসেছে ৬ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এই বাজারে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত। এর মধ্যে তুরস্কে রপ্তানি বেড়েছে ২৫ দশমিক ৬২ শতাংশ, ভারতে রপ্তানি বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং জাপানে রপ্তানি বেড়েছে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।
তবে, উদ্বেগ তৈরি হয়েছে রাশিয়া, কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালয়েশিয়ায় বাজার ঘিরে। বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে এ বাজারগুলোতে। এর মধ্যে রাশিয়ায় রপ্তানি আয় ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১০ দশমিক ৯৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২৩২ মিলিয়ন ডলারে এবং মালয়েশিয়ায় ১১ দশমিক ২১ শতাংশ কমে ১৮৯ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে রপ্তানি আয়। তবে এসব অঞ্চলে আবারও প্রবেশের সুযোগ রয়েছে যদি বাংলাদেশ সুনির্দিষ্ট কৌশল গ্রহণ করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু কম দামে পোশাক সরবরাহ করে এ বাজারে টিকে থাকা যাবে না। বরং উচ্চ মানসম্পন্ন ও নতুন ডিজাইনের পোশাক, টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা এবং সাশ্রয়ী অথচ পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়া— এসবই হতে হবে ভবিষ্যতের মূল প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের চাহিদা ও বাস্তবতা দ্রুত বদলে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। ট্র্যাডিশনাল বাজারগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি এখনও শক্ত অবস্থানে রয়েছে, যেখানে মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ৮৪ শতাংশই এই বাজার থেকে আসে। তবে, নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারের অংশীদারিত্ব এখনো তুলনামূলক কম, যা মাত্র ১৬ শতাংশ।
ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের (আইটিসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক পোশাক বাজারের আকার ছিল প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারের আকার ছিল প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারে ৬ শতাংশ অংশীদারিত্ব ধরে রেখেছে, যেখানে আরও বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৪ সালে জাপানের মোট পোশাক আমদানির ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ার মোট আমদানির ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ হয়েছে বাংলাদেশ থেকে; যা ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক সম্ভাবনা নির্দেশ করে।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক বাজারে টিকে থাকতে হলে নতুন বাজার ও নতুন পণ্যের দিকে মনোযোগী হতে হবে। নতুন বাজারে প্রবেশ এবং উদ্ভাবন শুধু কৌশলগত বিষয় নয়, এটি বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একটি অপরিহার্যতা। আমাদের এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বাজার বৈচিত্র্য এবং সম্প্রসারণের দিকে এগোতে হবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, অগ্রগতি ধরে রাখতে আমাদের পণ্য উদ্ভাবন, বৈচিত্র্য ও চাহিদা অনুযায়ী বাজারভিত্তিক নতুন ডিজাইন এবং পণ্য উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে। এছাড়া অপ্রচলিত দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সুবিধা সম্প্রসারণে এফটিএ বা পিটিএ চুক্তি করা যেতে পারে। বাংলাদেশি পোশাককে ‘গুণগত মান ও ন্যায্যমূল্যের প্রতীক’ হিসেবে তুলে ধরতে হবে।