অর্থনীতি
ব্যতিক্রমী সরকারি প্রকল্প, বরাদ্দের চেয়ে ১০০ কোটি টাকা কমে বাস্তবায়ন
সরকারি প্রকল্পের কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানো এবং অপ্রয়োজনীয় কিছু ব্যয় হয়। যার ফলে সরকারি প্রকল্প নিয়ে খুব পরিচিত একটি অভিযোগ হলো, প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যয় প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে বেশি হয়।
তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) ব্যতিক্রম একটি প্রকল্পের সন্ধান পেয়েছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ব্যয় প্রাক্কলন ব্যয়ের চেয়ে ১০০ কোটি টাকা কম ব্যয় হয়েছে। যার ফলে এই প্রকল্পটিকে ব্যতিক্রম বলে অভিহিত কার হচ্ছে।
আইএমইডির এক মূল্যায়ন অনুযায়ী, ব্যতিক্রমী এই প্রকল্পটি হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ ও বিতরণ প্রকল্প। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ২০১৭ সালের মে থেকে ২০১৯ সালের জুন এই সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। এজন্য তারা ব্যয় করেছে ৩০৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। অথচ প্রকল্পটির আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছিল বা প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৪০৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির জন্য ৩৬৭ কোটি ১০ লাখ টাকা অনুমোদনের পর ‘রিভার ক্রসিং বাই হরাইজন্টাল ডাইরেকশনাল ড্রিলিং ইত্যাদি’ সংশোধনের মাধ্যমে এই ব্যয় প্রায় ৪০ কোটি টাকা বা ১১ শতাংশ বাড়িয়ে ৪০৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা করা হয়।
আইএমইডি জানিয়েছে, নানা কারণে প্রকল্পের কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনো বাড়তি ব্যয় হয়নি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বল্প ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।
মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ভালভ স্টেশনের জন্য বিনামূল্যে জমি দিয়েছে।
এছাড়া, আগে অধিগ্রহণ করা বেজার জমি কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির ২০ ফুট প্রশস্ত পাইপলাইন নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ অর্থ জমি অধিগ্রহণের জন্য কোনো অর্থের প্রয়োজন হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, পাশাপাশি নদী পারাপার ও ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন (ইপিসি) সম্পর্কিত হরাইজন্টাল ডিরেকশনাল ড্রিলিং পদ্ধতির আওতায় ক্যাথোডিক প্রোটেকশন সিস্টেম স্থাপনের কাজ প্রাক্কলিত কাজের চেয়ে কম ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যয় কম হওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ হলো পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দিয়ে বিস্তারিত সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি।
এতে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় মিরসরাই শিল্পাঞ্চল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর পর্যন্ত গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে ওই এলাকায় গ্যাস সরবরাহের অবকাঠামো তৈরি হয়েছে এবং ইতোমধ্যে ওই এলাকার তিন শিল্প গ্রাহককে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে প্রকল্পের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে বলে জানিয়েছে আইএমইডি।
তারা বলছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে নতুন নতুন শিল্পকারখানা যেমন গ্যাস সংযোগের আওতায় আসবে, তেমনি প্রকল্পের ইতিবাচক প্রভাব বাড়বে।
আইএমইডি বলেছে, প্রকল্পের বিভিন্ন প্রকিউরমেন্ট প্যাকেজের আনুমানিক খরচ বাজার দরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না, কারণ ঠিকাদার দরপত্রে আনুমানিক খরচের চেয়ে বেশি দর উল্লেখ করেছিল। ফলে বারবার দরপত্র ডাকতে হয়েছে বলে জানিয়েছে আইএমইডি।
এতে বলা হয়েছে, এছাড়াও প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার আগে তৃতীয় পক্ষ দিয়ে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি, তাই প্রকল্পের বিভিন্ন অংশের প্রাক্কলন ব্যয় ও কাজের পরিধি যথাযথ ছিল না।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সরকারের রাজস্ব সাশ্রয় করতে পেরেছে, এটি একটি ভালো উদাহরণ। কারণ বেজা জমির জন্য কোনো টাকা নেয়নি।
তিনি আরও বলেন, সাশ্রয় করা অর্থ অন্যান্য প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, যা অর্থনৈতিক সংকটের সময় গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের দক্ষতার কারণে অর্থ সাশ্রয় হয়নি, বরং বেজার উদারতার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য এ ধরনের সুযোগ ছিল। বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে সেসব প্রকল্পের অর্থ সাশ্রয় করতে পারত বলে জানান তিনি।
এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ব্যাংক নোট থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে শেখ মুজিবের ছবি
দেশের সব ধরনের ব্যাংক নোট থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দেওয়া হতে পারে বলে বাংলাদেশে ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে। সব ধরনের ব্যাংক নোটের নতুন ডিজাইন চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, নতুন নকশার ব্যাংক নোটে শেখ মুজিবের ছবি বাদ যেতে পারে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর অর্থবিভাগের ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের উপসচিব এলিশ শরমিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংককে নতুন নোটের জন্য নির্দিষ্ট নকশার প্রস্তাব পাঠাতে অনুরোধ করেছে।
অনুরোধে নতুন মুদ্রার নকশা প্রবর্তনের তত্ত্বাবধানকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা ও ডিজাইন অ্যাডভাইজরি কমিটির সুপারিশ চাওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, সরকার ব্যাংক নোটে শেখ মুজিবের ছবি রাখতে চাইলে নতুন ডিজাইনের নোট ছাপানোর কোনো প্রয়োজন হতো না।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘নতুন ডিজাইন ও বৈশিষ্ট্যের নোট প্রচলনে কী ধরনের ডিজাইন করা সমীচীন হবে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা ও ডিজাইন অ্যাডভাইজরি কমিটির সুপারিশ গ্রহণপূর্বক সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্থবিভাগে প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’
বর্তমানে বাংলাদেশের ২ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা পর্যন্ত সব কাগুজে নোটে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি রয়েছে। কোনো কোনো নোটের দুপাশে শেখ মুজিবের ছবি রয়েছে। এছাড়া ধাতব মুদ্রাগুলোতেও তার ছবি রয়েছে।
নতুন ডিজাইনের এ প্রবর্তনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে প্রতিষ্ঠিত মুদ্রামান থেকে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার মাত্র দুদিন আগে ৫০০ ও ১০০০ টাকার ব্যাংক নোটে শেখ মুজিবের ছবি আরও বেশি স্পষ্ট করে ছাপাতে নতুন দুটি ডিজাইন এবং ২০ টাকা ও ১০০ টাকার নোটের মুদ্রণ পদ্ধতি পরিবর্তন করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়।
হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাওয়ার পর বিভিন্ন নোটের নতুন ডিজাইন করে সরকারের কাছে তা জমা দিতে ছয় মাস সময় চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, মুদ্রা ও ডিজাইন অ্যাডভাইজরি কমিটির নির্দেশিকা অনুসারে প্রতিটি নোটের জন্য চারটি ভিন্ন ডিজাইন তৈরি করা হবে।
পরে এ কমিটির অনুমোদন নিয়ে ডিজাইনগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হবে। তবে নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে আসতে ২০ থেকে ২২ মাস সময় লাগতে পারে বলে জানান এক কর্মকর্তা।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শেখ মুজিবের ছবি-সম্বলিত নোট পরিবর্তন করা হবে কি না — সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
নকশার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যেই নতুন নোটের জন্য সুপারিশ সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
শেখ হাসিনা সরকারের সময় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিটি নোটের চারটি ডিজাইনের মধ্যে অন্তত একটি ডিজাইনে শেখ মুজিবের ছবি যুক্ত করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের ছবিযুক্ত নোটগুলো অনুমোদন করেছিলেন।
নতুন নোটের অনুমোদন প্রক্রিয়া একই পদ্ধতিতে হবে। চারটি নকশা তৈরি করার পর বাংলাদেশ ব্যাংক এটির ডেপুটি গভর্নর-১-এর নেতৃত্বে মুদ্রা ও ডিজাইন অ্যাডভাইজরি কমিটির কাছে নকশাগুলো জমা দেবে।
এ কমিটিতে উচ্চপদস্থ ব্যক্তি এবং চিত্রশিল্পীরা থাকেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার আগে নকশাগুলো তারা পর্যালোচনা করবেন।
মন্ত্রণালয় তারপর নকশাগুলো পর্যালোচনা করবে এবং অনুমোদন পাওয়ার পর একটি আন্তর্জাতিক দরপত্র বা সরাসরি দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে কোনো বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে নোটগুলোর জন্য নতুন প্লেট তৈরি করা হবে।
প্লেট তৈরির প্রযুক্তিগত এবং নিরাপত্তা জটিলতার কারণে নতুন নোট প্রবর্তনের পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হতে প্রায় দুই বছর সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নতুন নোটের ছাপার তদারকি করবে সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেড। এটির উচ্চ মূল্যমান নোটের (১০০, ২০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা) বর্তমান কাগজের মজুত ও আমদানিতব্য কাগজ দ্বারা আনুমানিক ১৩ মাস মুদ্রণ কার্যক্রম চলমান রাখা যাবে।
এর ফলে নতুন ডিজাইন চূড়ান্ত এবং প্রস্তুত করার সময় বর্তমান ডিজাইনের নোটগুলো বাজারে প্রচলিত থাকবে।
১৮ সেপ্টেম্বর অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদারের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ‘অনুমোদিত ১০০০, ৫০০, ১০০ ও ২০ টাকার নোটের প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়নের কার্যাবলী প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে [হাসিনা সরকারের পতন] উক্ত অনুমোদন মোতাবেক বাস্তবায়নাধীন কার্যক্রম চলমান রাখা হবে কি না, সে বিষয়ে আপনাদের মতামত প্রদানের জন্য অনুরোধ জানানো হলো।’
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এটি নতুন সরকারি নির্দেশিকাগুলোর ওপর ভিত্তি করে নকশার কাজ চালিয়ে যাবে, যার মধ্যে নোট থেকে শেখ মুজিবের ছবি সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
ব্যাংক নোটের নতুন এ সিরিজ অনুমোদিত হলে, বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চিত করবে যে, কাগজের বর্তমান স্টক এবং উচ্চ মূল্যমান নোটগুলো পর্যায়ক্রমে পরবর্তী কয়েক বছরে নতুন ডিজাইন করা নোটগুলির সঙ্গে যেন প্রতিস্থাপন করা হয়।
ঐতিহাসিকভাবে, বাংলাদেশি মুদ্রায় শেখ মুজিবের ছবি একটি বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্য। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো ১, ৫, ১০ ও ১০০ টাকার নোট বাজারে ছাড়া হয়। এসব নোটের প্রত্যেকটিতেই শেখ মুজিবের ছবি ছিল।
তবে পরবর্তী বিভিন্ন সরকারের সময়ে নতুন নতুন নোট প্রচলনের পাশাপাশি পুরোনো নোটগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে শেখ মুজিবের প্রতিকৃতি সম্বলিত ১০ ও ৫০০ টাকার নোট ছাপে। আর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ মুজিবের ছবিযুক্ত ১, ২ ও ৫ টাকার কয়েন চালু করে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।
এরপর সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সব কাগুজে নোটেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ছাপানোর প্রক্রিয়া শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে ২০১১ সালের ১১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত ২, ৫, ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোট চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সাত বছরে খেলাপি ঋণ বেড়ে তিনগুণ
গত ৭ বছরে দেশের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে তিনগুণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র ধরা পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের জুন শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। সাত বছরে তা এক লাখ ৩৭ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা বেড়ে দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা হয়েছে।
খাত হিসাবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। এরপরই রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর। আর তুলনা কম খেলাপি ঋণ বিদেশি ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, ২০২৪ সালে ১ জুলাই বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৯ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। সাত বছরে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৬৮ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ বা ২১৫ শতাংশ।
সাত বছর আগে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ছিল ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। বর্তমানে খেলাপি ঋণের হার ৮ শতাংশ।
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে পাঁচটি ব্যাংকের অবস্থা খুবই খারাপ। যাদের খেলাপি ঋণের হার ৩০ থেকে ৮৯ শতাংশ পর্যন্ত। এর মধ্যে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের অবস্থা আগে থেকেই খারাপ ছিল, এখনো খারাপ। বাকি চারটি ব্যাংকের অবস্থাও খারাপ হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ফেরত না দেওয়ার কারণে খেলাপি হয়েছে এসব ঋণ। ক্ষেত্র বিশেষে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে আরও খারাপ হয়েছে।
বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ দুই হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। সাত বছর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা।
সাত বছর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের হার ছিল ২৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। বর্তমানে এ হার ৩২ দশকিক ৭৭ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার বেশি। এর মধ্যে তিনটির ৪০ শতাংশ আর একটি খেলাপির হার ৩০ শতাংশ। সাত বছর আগেও এমন অবস্থা ছিল না রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর।
রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কিছুটা কমেছে গত সাত বছরে। দেশে কর্মরত বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার কম। এসব ব্যাংক নীতি কঠোরভাবে পরিপালন করার কারণে ঋণ খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
তথ্যে দেখা যায়, বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। সাত বছর আগে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার প্রায় একই ছিল। ব্যাংকেরগুলোর ঋণ বিতরণের পাশাপাশি খেলাপি ঋণের হার একই হারে বৃদ্ধির কারণে পরিমাণ বাড়লেও খেলাপির হার বাড়েনি।
বর্তমানে বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ তিন হাজার ২৩০ কোটি টাকা। যা সাত বছর আগে ছিল দুই হাজার ৩২১ কোটি। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাবিস্তানের বিতরণ করা ঋণের প্রায় পুরোটাই খেলাপি। অন্যদিকে কমার্শিয়াল ব্যাংক সিলনের খেলাপি ঋণের হার এক শতাংশ।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দেশে প্রথম ড্রোন কারখানা স্থাপনে চুক্তি, ব্যয় সাড়ে ৪ কোটি ডলার
বাংলাদেশি কোম্পানি স্কাই বিজ লিমিটেড ৪ কোটি ৫৯ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে (বেপজা ইজেড) মনুষ্যবিহীন আকাশযান (ইউএভি, যা মূলত ড্রোন হিসেবে পরিচিত) তৈরির কারখানা স্থাপন করবে।
বেপজাধীন ইপিজেডসমূহ ও বেপজা ইজেড এলাকায় এটি হতে যাচ্ছে ড্রোন তৈরির প্রথম কারখানা যেখানে ৫৫ জন বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এ লক্ষ্যে, বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ঢাকার বেপজা নির্বাহী দপ্তরে স্কাই বিজ লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। বেপজার সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবীর এবং স্কাই বিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসীম উদ্দিন আহমেদ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন।
প্রতিষ্ঠানটি বার্ষিক ৭ হাজার ৩১৪ পিস বিভিন্ন ধরনের ড্রোন তৈরি করবে যা কৃষিকাজে কীটনাশক স্প্রে, অগ্নিনির্বাপণ, জরুরি উদ্ধারকাজ, পণ্য সরবরাহ, সিনেমাটোগ্রাফি, ম্যাপিং প্রভৃতি কাজে ব্যবহৃত হবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে, বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় স্কাই বিজ লিমিটেডের প্রশংসা করে বলেন, বেপজা সর্বদা বৈচিত্র্যময় পণ্যে বিনিয়োগ উৎসাহিত করে। তিনি ড্রোনের মতো একটি উচ্চপ্রযুক্তির বৈচিত্র্যময় পণ্য তৈরির লক্ষ্যে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলকে বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে নির্বাচনের জন্য স্কাই বিজ লিমিটেডকে ধন্যবাদ জানান। ড্রোন তৈরির এই উদ্যোগের প্রশংসা করে নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, দেশে ড্রোন তৈরিতে বিনিয়োগের পথিকৃৎ হিসেবে এবং রপ্তানি বাস্কেটকে প্রসারিত করতে এই উদ্যোগ গুরুত্বপূণ ভূমিকা রাখবে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
পাঁচ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ড বিক্রির তারিখ ঘোষণা
বাংলাদেশ ব্যাংকে ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ট্রেজারি বন্ড বিক্রির জন্য নিলাম অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর)। বাংলাদেশ ব্যাংকের যোগাযোগ ও প্রকাশনা বিভাগ (ডিসিপি) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে মঙ্গলবার ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ট্রেজারি বন্ড বিক্রির নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। এ নিলামে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অভিহিত (লিখিত) মূল্যের বন্ড ইস্যু করা হবে। এ বন্ডের জন্য বার্ষিক কাট অব ইয়েল্ড হারে কুপন বা মুনাফা ষাণ্মাষিকভিত্তিতে পরিশোধ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানায়, নিলামে শুধু সরকারি সিকিউরিটিজের প্রাইমারি ডিলারের ভূমিকায় নিয়োগ পাওয়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিড দাখিল করতে পারবে। তবে অন্যান্য ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানও নিজস্ব খাতে তাদের ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী গ্রাহকদের জন্য প্রাইমারি ডিলারের মাধ্যমে নিলামে বিড দাখিল করতে পারবে।
অভিহিত (লিখিত) মূল্যে প্রতি ১০০ টাকা মূল্যের বন্ড ক্রয়ের জন্য কাঙ্ক্ষিত প্রাইস ও বন্ড ক্রয়ের পরিমাণ উল্লেখ করে নিলামে সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টার মধ্যে ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থাপিত এফএমআইর মাধ্যমে বিড দাখিল করতে হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
তবে বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমতি নিয়ে ম্যানুয়াল বিডস ইন সিলড কভারস পদ্ধতিতে বিড দাখিল করা যাবে।
এদিকে নিলামে অংশগ্রহণের বিস্তারিত নির্দেশনা এরই মধ্যে প্রাইমারি ডিলারসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ভারত থেকে ২২ টন নতুন আলু আমদানি
দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় দিনাজপুর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে নতুন আলু আমদানি শুরু হয়েছে। মেসার্স সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান নতুন আলুগুলো আমদানি করেছে।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে ভারত থেকে ১টি ট্রাকে ২২ মেট্রিক টন নতুন আলু আমদানি হয়। দেশের বাজারে নতুন আলুর চাহিদা থাকায় এসব আলু আমদানি করা হচ্ছে বলে জানান, আমদানিকারক।
আলু আমদানিকারক সাইফুল ইসলাম বলেন, দেশের বাজারে এই নতুন আলুর চাহিদা রয়েছে, তাই আমদানি করছি। পাইকারি বাজারে ৭০ টাকা কেজি হিসেবে দাম পাবো বলে আশা করছি। নতুন আলু এই প্রথম ভারত থেকে ১ ট্রাকে ২২ মেট্রিক টন আলু আমদানি করা হয়েছে।
এমআই