অর্থনীতি
কর অবকাশ সুবিধা পুনর্বহাল করে প্রজ্ঞাপন, আজ থেকে কার্যকর

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণে কর অবকাশ সুবিধা পুনর্বহাল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) এই বাজেটে প্রণোদনা সুবিধা বহাল রেখে এনবিআর প্রজ্ঞাপন জারি করে। যা আজ সোমবার (১ জুলাই) থেকে কার্যকর হবে।
এর আগে, রবিবার (৩০ জুন) সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে।
এর আগে ২৯ মে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের কর অবকাশ (প্রণোদনা) সহ মোট ৮টি সুবিধা রহিত করেছিল। এখন সেটা পুনর্বহাল করা হয়েছে। আর সেই সাথে কোম্পানির ১০ বছরের জন্য লভ্যাংশ, মূলধনি আয়, টেকনিক্যাল নো-হাউ এবং কারিগরি সহায়তা ফির ওপর ১০ বছরের কর অব্যাহতি ছিল সেটাও পুনর্বহাল করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এস, আর, ও নং ২৪৪-আইন/আয়কর-৩৮/২০২৪ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর আইন-২০২৩ (২০২৩ সালের ১২ নং আইন), উক্ত আইনের ধারা ৭৬ এর উপ-ধারা (১) এ ক্ষমতাবলে শর্তসাপেক্ষে অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন-২০১০ (২০১০ সালের ৪২ নং আইন) এর ধারা ৫ এর অধীনে অর্থনৈতিক অঞ্চলে পণ্য উৎপাদন বা সেবা প্রদানের জন্য কেবল অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিচালিত ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত আয়ের উপর ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরুর তারিখ হতে ১ম, ২য় ও ৩য় বছরের জন্য ১০০ শতাংশ, ৪র্থ বছরের জন্য ৮০ শতাংশ, ৫ম বছরের জন্য ৭০ শতাংশ, ৬ষ্ঠ বছরের জন্য ৬০ শতাংশ, ৭ম বছরের জন্য ৫০ শতাংশ, ৮ম বছরের জন্য ৪০ শতাংশ, ৯ম বছরের জন্য ৩০ শতাংশ এবং ১০ম বছরের জন্য ২০ শতাংশ হারে আয়কর হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
শর্তগুলো হলো:
১. কোম্পানি আইন-১৯৯৪ (১৯৯৪ সালের ১৮ নং আইন) এর অধীনে নিবন্ধিত নতুন কোম্পানি এবং কোম্পানির কোনো ইউনিট হতে পারবে না।
২. ব্যবসার পুনর্গঠন, মার্জার, ডিমার্জারের ফলশ্রুত কোম্পানি হতে পারবে না।
৩. ইতোপূর্বে পণ্য বা সেবা উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়েছে এ রকম কোনো মেশিন, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কোনো শিল্প ইউনিট স্থাপনে ব্যবহার করা যাবে না।
৪ .অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাহিরে কোনো শিল্প ইউনিট পরিচালনা করতে পারবে না । সম্পূর্ণভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে থাকতে হবে।
৫. বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা ট্রেডিং কোম্পানি হতে পারবে না।
৬ বোর্ডের নিকট অব্যাহতির উপযুক্ত শিল্প হিসেবে বিবেচিত হতে হবে।
৭. অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত যেসব প্রতিষ্ঠান ভোজ্য তেল, চিনি, আটা, ময়দাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি উৎপাদন এবং সিমেন্ট, লোহা ও লৌহজাতীয় পণ্য উৎপাদন করে আয় করে সেসব প্রতিষ্ঠান এই প্রজ্ঞাপনের সুবিধা পাবে না।
৮. প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু বছর হতে ১০ বছর পর্যন্ত হ্রাসকৃত কর সুবিধা ভোগ করতে পাবে।
৯. এই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী অব্যাহতি পাওয়া কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান এই প্রজ্ঞাপনে বর্ণিত কোনো শর্ত বা শর্তাবলি পালনে ব্যর্থ হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তার অনুমোদন প্রত্যাহার করে নিবে।
১০. আয়কর আইনে-২০২৩ (২০২৩ সালের ১২ নং আইন) এর ধারা ৭৬ এর উপ-ধারা (৫) এবং (৬) সহ অন্যান্য বিধানাবলি পালন করতে হবে।
১১. কোনো আয়বর্ষে সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রতিষ্ঠানটির উপর পরিবেশ সংশ্লিষ্ট আইন ভঙের দায়ে জরিমানা আরোপ করলে সংশ্লিষ্ট করবর্ষে প্রতিষ্ঠানটি এই প্রজ্ঞাপনে কর অব্যাহতি পারে না।
১২. ২০৩৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করতে ব্যর্থ হলে এই প্রজ্ঞাপনের অধীন কোনো প্রকার অব্যাহতি সুবিধা পাবে না।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এস, আর, ও নং ১০৪-আইন/আয়কর/২০২০ (২৫ মার্চ, ২০২০) ও এস, আর, ও নং ১৫৯-আইন/আয়কর-৩৪/২০২৪ (২৯ মে, ২০২৪) এতদ্বারা রহিত করা হলো। প্রজ্ঞাপনের অধীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হবে বা হয়েছে সেই সব প্রতিষ্ঠানকে অনুচ্ছেদ ১ এর শর্ত (ক) তে উল্লিখিত শর্ত কার্যকর হবে না।
(ক) বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন-২০১০ (২০১০ সালের ৪২ নং আইন) এর ধারা ৫ এর অধীন ঘোষিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপিত কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের ইউনিট যারা ৩০ জুন ২০২৪ এর মধ্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে।
খ) বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন-২০১০ (২০১০ সালের ৪২ নং আইন) এর ধারা ৫ এর অধীন ঘোষিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প বা শিল্প ইউনিট স্থাপনের উদ্দেশ্যে যারা ৩০ জুন ২০২৪ এর মধ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের সহিত চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, এস, আর, ও নং ২৪৫-আইন/আয়কর-৩৯/২০২৪ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, আয়কর আইন-২০২৩ (২০২৩ সালের ১২ নং আইন), আইনে উল্লিখিত ধারার ৭৬ এর উপ-ধারা (১) এ ক্ষমতাবলে শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ আইন-২০১০ (২০১০ সালের ৮নং আইন) এর ধারা ২২ এর বিধান অনুযায়ী হাই-টেক পার্কে পণ্য উৎপাদন বা সেবা প্রদান করে অর্জিত আয়ের উপর ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরুর ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম বছররের জন্য ১০০% এবং ৮ম, ৯ম ও ১০ম বছরের জন্য ৭০% হারে আয়কর হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
শর্তগুলো হলো:
১. কোম্পানি আইন-১৯৯৪ (১৯৯৪ সালের ১৮ নং আইন) এর অধীন নিবন্ধিত নতুন কোম্পানি হবে।
২. ব্যবসার পুনর্গঠন, মার্জার, ডিমার্জার এর ফলশ্রুত কোম্পানি হতে পারবে না।
৩. ইতোপূর্বে পণ্য বা সেবা উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়েছে এ রকম কোনো মেশিন, যন্ত্রপাতি, ইত্যাদি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কোনো শিল্প ইউনিট স্থাপনে ব্যবহার করা যাবে না।
৪. হাই-টেক পার্কের বাহিরে কোনো শিল্প ইউনিট পরিচালনা করতে পারবে না।
৫. বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা ট্রেডিং কোম্পানি হতে পারবে না।
৬. বোর্ডের নিকট হাই-টেক শিল্প হিসেবে বিবেচিত হতে হবে।
৭.আয়কর আইন-২০২৩ (২০২৩ সালের ১২ নং আইন) এর ধারা ৭৬ এর উপ-ধারা (৫) এবং (৬) সহ অন্যান্য বিধানাবলি পালন করতে হবে।
৮) প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরুর বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত এই হ্রাসকৃত করহারের সুবিধা পাবে।
এসএম

অর্থনীতি
২০০ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলসহ চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী ঢাকায়

চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাওয়ের নেতৃত্বে দুইশ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল ঢাকা এসেছেন। এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
শনিবার (৩১ মে) প্রতিনিধিদলটি ঢাকায় পৌঁছালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশীরউদ্দীন তাদের স্বাগত জানান।
সফরের বিস্তারিত:
- ১ জুন (রবিবার): চীনা প্রতিনিধিদল বিডা (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) আয়োজিত এক সেমিনারে যোগ দেবে। এই সেমিনারে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, এবং চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এই সম্মেলনকে ‘চীন-বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্মেলন’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।
- ২ জুন (সোমবার): প্রতিনিধিদল জয়েন্ট ইকোনমিক কমিটির বৈঠকে অংশ নেবে এবং বাংলাদেশের কয়েকটি ইকোনমিক জোন পরিদর্শন করবে।
চীনা প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ঢাকা সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশীরউদ্দীন এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই সফরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে এবং বাংলাদেশে চীনা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এই সফরকে কেন্দ্র করে জানিয়েছেন, উভয় পক্ষ একটি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিনিময় অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজন করবে, যেখানে শত শত চীনা এবং বাংলাদেশি উদ্যোগ অংশগ্রহণ করবে এবং আরও সহযোগিতার সুযোগ খুঁজবে।
বিডা জানিয়েছে, এই সম্মেলনে প্রায় ১০০টি চাইনিজ প্রতিষ্ঠানের ২৫০ জন বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী অংশ নেবেন। এর মধ্যে ফরচুন ৫০০-এর অন্তর্ভুক্ত ৬-৭টি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারাও থাকবেন। এছাড়া চীনের চারটি চেম্বার অব কমার্সের শীর্ষ প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশে এই প্রথম এত বৃহৎ সংখ্যক চীনা বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী একযোগে সফরে এলেন।
উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টার সদ্য চীন সফর এবং এপ্রিলে অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রত্যক্ষ ফলাফল হিসেবে এই সম্মেলন আয়োজিত হচ্ছে। চীনা বিনিয়োগকারীদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে।
অর্থনীতি
দুর্নীতির কারণে দেশের আর্থিক খাত ‘অত্যন্ত খারাপ’: আবদুল আউয়াল মিন্টু

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু মন্তব্য করেছেন যে, বিগত ১৫ বছরের দুর্নীতি এবং চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের আর্থিক খাত ‘অত্যন্ত খারাপ’ অবস্থায় রয়েছে। শনিবার (৩১ মে) রাজধানীতে ‘বাজেট ভাবনা ২০২৫-২৬’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, “বাংলাদেশের আর্থিক খাতের দুটি সমস্যা—একটি হলো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, যারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, রাজনৈতিক সহায়তায় গত ১৫ বছর ধরে লুটপাট চালিয়েছে—এটা নিঃসন্দেহে আমরা বলতে পারি। আর দ্বিতীয়টি হলো, আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ এখন একদম আইসিইউতে আছে।” তিনি আরও বলেন, “যদি বিনিয়োগ আইসিইউতে থাকে, তাহলে যে বিনিয়োগকারী, সে তো বিনিয়োগ ফেরত নিতে পারছে না।”
আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “একটি হলো ব্যাংকের নিজস্ব অনিয়ম, নিজস্ব দুর্নীতি; আরেকটি হলো সাধারণ নিয়মে অর্থনীতির সমস্যা। সে সমস্যার কারণে যে ঋণ নিয়েছে, সে এখন ঋণটা পরিশোধ করতে পারছে না। এই সবগুলোর সমন্বয়ে আসলেই কিন্তু বাংলাদেশের আর্থিক খাত অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় আছে। যে যা-ই বলুক।”
সব জায়গায় এখনো বৈষম্য বিদ্যমান রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের কোন ক্ষেত্রে বৈষম্য নেই? আয়ের বৈষম্য, সামাজিক বৈষম্য, সম্পদের বৈষম্য, রাজনৈতিক বৈষম্য—সবই বাংলাদেশে দিন দিন বেশি হচ্ছে। সরকারের কার্যক্রম বাংলাদেশে প্রতিনিয়তই প্রতিটি ক্ষেত্রে একটা বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। আমাদের এগুলো শনাক্ত করতে হবে।”
একটি ভালো বাজেটের প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, “ভালো বাজেট বলতে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সাহায্য চাই, অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি চাই, স্থানীয় শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি চাই, উৎপাদন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করতে চাই।”
অর্থনীতি
আয়করে অর্ধশতাধিক পরিবর্তন: পুঁজিবাজার বিকাশেও প্রস্তাব

আসন্ন বাজেটে আয়কর খাতে অর্ধশতাধিক পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে কর বাড়ছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে কমছে। ব্যক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো এবং পাঁচ শতাংশ করের স্ল্যাব তুলে দেওয়ার মতো পরিবর্তন আনা হচ্ছে। করদাতার ওপর চাপ কমানো এবং পুঁজিবাজারের বিকাশেও বেশ কিছু ইতিবাচক প্রস্তাব থাকছে।
ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য ক্ষতিকর বলে বিবেচিত কর আইনের বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও খাত সংশ্লিষ্টরা প্রাক-বাজেট আলোচনায় আপত্তি তুলেছিলেন। সেই আপত্তিগুলো বিবেচনায় নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেটে বেশ কিছু ইতিবাচক প্রস্তাব করবেন বলে জানা গেছে। পাশাপাশি কর আদায় বাড়ানোর জন্যও কিছু প্রস্তাব থাকবে।
ব্যক্তিগত আয়করে পরিবর্তন: ব্যক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা ২৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, জুলাই যোদ্ধাদের করমুক্ত আয়ের সীমা হচ্ছে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ব্যক্তির কর নির্ধারণেও পরিবর্তন আসছে: ৫ শতাংশের কর স্ল্যাব বাতিল হচ্ছে, ফলে করের হার হবে আয়ের ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। অঞ্চলভেদে ন্যূনতম করের বিধান বাতিল করে সারা দেশে সবার জন্য ন্যূনতম আয়কর ৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। নতুন করদাতাদের উৎসাহ দিতে ন্যূনতম কর ১ হাজার টাকা করা হবে।
পুঁজিবাজারের জন্য প্রস্তাবনা: শেয়ারবাজার সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রস্তাব থাকছে বাজেটে, যা বাজারকে টেকসই ও গতিশীল করতে সাহায্য করবে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কর সাড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ করা হচ্ছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট কর ২২.৫ শতাংশই থাকছে, তবে এর কঠোর শর্ত শিথিল করা হচ্ছে। এই সুবিধা পেতে হলে শুধু আয় ব্যাংকের মাধ্যমে হতে হবে। এছাড়া ব্রোকারেজ হাউজের উৎসে কর কমিয়ে ০.০৩ শতাংশ করা হচ্ছে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন:
- কোম্পানি ও করদাতাদের দাবি মেনে নিয়ে অতিরিক্ত কর পরের বছরগুলোতে সমন্বয় করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
- কৃষি আয় ৫ লাখ টাকার বেশি হলে কর আরোপ করা হবে।
- বেসরকারি চাকরিজীবীদের করমুক্ত ব্যয় ৫০ হাজার টাকা বাড়ছে এবং পারকুইজিট সীমা দ্বিগুণ হচ্ছে।
- বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রীর পাশাপাশি আপন ভাই-বোনের মধ্যে দানও করমুক্ত হচ্ছে।
উৎসে কর ও আমদানি শুল্কে পরিবর্তন:
- ঠিকাদারের উৎসে কর ২ শতাংশ কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে।
- কৃষিপণ্য সরবরাহে উৎসে কর অর্ধেক হচ্ছে।
- জমি বিক্রিতে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ৫ শতাংশ কমিয়ে ১৩ শতাংশ করা হচ্ছে।
- তবে, ১৫২টি পণ্য আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হচ্ছে।
- ইন্টারনেট সেবার উৎসে কর কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে এবং সিগারেট কোম্পানির উৎসে কর বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে।
- মোবাইল অপারেটরদের টার্নওভার কর কমিয়ে দেড় শতাংশ করা হচ্ছে।
- রিসাইকেল শিল্প, গ্যাস বিতরণ, তেল পরিশোধনাগার, বিদ্যুৎ কেনায় উৎসে কর কমানো হচ্ছে।
কর অব্যাহতি ও রিটার্ন সংক্রান্ত পরিবর্তন:
- মৎস্য ও পোল্ট্রি খাতের কর অব্যাহতি বাতিল করা হচ্ছে, তবে প্রান্তিক খামারিদের উৎসাহ দিতে এ খাতের ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত থাকবে।
- সরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানকে রিটার্ন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে।
- উৎসে করের রিটার্ন প্রতিমাসের পরিবর্তে তিন মাস পরপর দিতে হবে।
- ক্রেডিট কার্ড পাওয়াসহ ১২টি সেবা পেতে রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখানোর শর্ত শিথিল করা হচ্ছে; কর নিবন্ধন থাকলেই মিলবে এসব সেবা।
অর্থনীতি
বিজিএমইএ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদের বহুল আলোচিত নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ শনিবার (৩১ মে) সকাল ৮টা থেকে ঢাকার র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেল ও চট্টগ্রামের র্যাডিসন ব্লু বে ভিউ হোটেল কেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
নির্বাচনে ফোরামের প্যানেল লিডার হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহমুদ হাসান খান। এর আগে তিনি সংগঠনের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
অন্যদিকে, সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্বে রয়েছেন চৈতি গ্রুপের এমডি মো. আবুল কালাম। তিনি আগে সংগঠনের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
এই নির্বাচনে ৩৫টি পরিচালক পদে লড়াইয়ে নেমেছে তিনটি জোট—ফোরাম, সম্মিলিত পরিষদ ও ঐক্য পরিষদ। প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমবে ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদের মধ্যে। কারণ তারা দুই কেন্দ্রেই পূর্ণ প্রার্থী দিয়েছে। ঐক্য পরিষদ মনোনয়ন দিয়েছে মাত্র ছয়টি পদে। সব মিলিয়ে এবার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬ জন।
নির্বাচনে মোট ভোটার এক হাজার ৮৬৪ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ভোট দেবেন এক হাজার ৫৬১ জন এবং চট্টগ্রামে ৩০৩ জন। আগেরবার ভোটার ছিলেন দুই হাজার ৪৯৬ জন।
অর্থনীতি
বৃষ্টির অজুহাতে বাড়ল সবজির দাম, মুরগিতে স্বস্তি

টানা দুদিন ভারি বৃষ্টির অজুহাতে সপ্তাহ ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে সবজির দাম বেড়েছে। সরবরাহ থাকলেও গত সপ্তাহের চেয়ে সব ধরনের সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। বাজারে গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মুরগি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবছরই কোরবানির ঠিক আগ মুহূর্তে মুরগির দাম কিছুটা কম থাকে, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে মুরগির দাম স্থিতিশীল থাকায় ক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি দেখা গেছে।
শুক্রবার (৩০ মে) রাজধানীর শেওড়াপাড়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। বাজারগুলোতে বেগুন প্রকারভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, কচুর লতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কচুর মুখি ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে সাজনা ১০০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, কাঁচা আম ৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে শীতকালীন সবজি ফুলকপি ছোট ৫০ টাকা পিস, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৭০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এসব বাজারে লেবুর হালি ১০ থেকে ১৫ টাকা, ধনেপাতা ২৮০ টাকা কেজি, কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০ টাকা পিস, ক্যাপসিকাম ২৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা আঁটি, পালং শাক ১৫ টাকা আঁটি, কলমি শাক ২০ টাকা আঁটি, পুঁই শাক ৩০ টাকা আঁটি ও ডাটা শাক ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে মুরগির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারগুলোতে সোনালি কক মুরগি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা ও সোনালি হাইব্রিড ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি ৩১০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা ও দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্রয়লার মুরগির দাম কমে যাওয়ায় বিক্রি বেড়েছে। তবে ঈদুল আজহার আগ মুহূর্তে মুরগির দাম বরাবরই কম থাকে বলে তারা জানান।
এ ব্যাপারে শেওড়াপাড়া বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. সোহেল বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে ব্যবসা করছি। সবসময় এই সময়টা মুরগির দাম কম থাকে। তবে মাছের চেয়ে মুরগির দাম কম থাকায় আমাদের বিক্রি বেড়েছে।
এদিকে কম দামে মুরগি কিনে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন শেওড়াপাড়া বাজারে বাজার করতে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, দাম অস্বাভাবিক থাকায় মুরগি কেনা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এখন যে দাম এটা ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে।
এসব বাজারে আলু ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ ৫৫ টাকা ও ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে আদা ১৩০ থেকে ২৮০ টাকা, রসুন দেশি ১৩০ টাকা, ইন্ডিয়ান ২২০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৮২ থেকে ৯২ টাকা, নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা ও ২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে।
অন্যদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এসব বাজারে প্রতিকেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, রুই দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙাস ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, চিংড়ি ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় কাতল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, পোয়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকা, পাঁচ মিশালি ২২০ টাকা, রুপচাঁদা ১২০০ টাকা, বড় বাইম ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দেশি কই ১২০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে ছ ৮০০ টাকা, কোরাল ৭০০ টাকা ও কাজলি মাছ ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ও খাসির মাংস ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা, হাঁসের ডিম ২২০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
কাফি