অর্থনীতি
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস আজ
৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সুখী সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার শিরোনামে আগামী অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। বড় কোনো পরিবর্তন ছাড়াই পাস হচ্ছে প্রস্তাবিত এই বাজেট।
আজ (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। পরে তা সংসদ সদস্যদের কণ্ঠভোটে পাস হবে। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট হতে যাচ্ছে এটি।
এর আগে শনিবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে কয়েকটি সংশোধনীসহ অর্থবিল-২০২৪ পাস হয়েছে। বিলটি পাসের আগে বিলের উপর সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগ বহাল রাখা হয়। এছাড়া ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। এতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ ভাগ এবং মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে অর্থবিলের উপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও হামিদুল হক খন্দকার এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ নাথ। তবে তাদের সেই প্রস্তাব কণ্ঠ ভোটে নাকচ হয়ে যায়। বিলের উপর সরকার দলীয় সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ ও আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী সংশোধনী আনেন এবং তা গৃহীত হয়।
বিলের উপর জনমত বাছাইয়ের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাকালে জাতীয় পার্টির হামিদুল হক খন্দকার বলেন, বিলে সরকারের দ্বিমুখী অবস্থান প্রকাশ পেয়েছে। একদিকে বলছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। অন্যদিকে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রদান। যেখানে বৈধ আয়ের জন্য ৩০ শতাংশ কর দিতে হয়। সেখানে অবৈধ আয়ের জন্য ১৫ শতাংশ কর কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অথচ এই সুযোগ নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী কালো টাকা সাদা করেছেন। সরকারকে এই অনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।
তামাকজাত পণ্যের উপর সারচার্জ বাড়ানোর দাবি জানান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ নাথ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ এখনো তামাকের কারণে দেশে প্রতিদিন ৪৪১ জন মারা যান। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সারচার্জ বাড়াতে হবে।
সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম কমাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকসুদের হার বাজারভিত্তিক ও নীতি সুদহার প্রবর্তন করা হয়েছে। ডলারের দাম স্বাভাবিক রাখতে ক্রলিংপেগ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। নতুন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে নিয়ে আসা হবে।
তিনি বলেন, এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সব সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত ১১টি পদক্ষেপ পূরণে বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ হলে ২০৪১ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় হবে ১২ হাজার ৫০০ ডলার। দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। খাদ্য নিরাপত্তায় টিসিবির মাধ্যমে কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা, ওএমস কার্যক্রম চালু রাখা ও সামাজিক সুরক্ষার আওতায় খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে।
সংসদে পাস হওয়া বিলে ২০২৪ সালের পহেলা জুলাই থেকে শুরু অর্থ বছরের জন্য আর্থিক বিধান, বিদ্যমান আইন সংশোধনীসহ কর প্রস্তাবসমূহ অনুমোদন করা হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেক সংসদ সদস্য (এমপি) নতুন নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। তাদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এমপিদের গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া সম্পদশালীদের কোম্পানির কাজে ব্যবহৃত গাড়ির পরিবেশ সারচার্জ মওকুফ করা হয়েছে। এছাড়া রিটার্নে আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি আয় দেখানো হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ট্যাক্স ফাইল অডিটে ফেলবে না।
এছাড়া সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় পেনশন বাবদ আয়কে করের আওতার বাইরে রাখার বিধান যুক্ত করা হয়েছে আয়কর আইনে। হয়রানি কমিয়ে আনতে অডিটের শর্ত শিথিল করা হবে। এজন্য অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী। নতুন নিয়মে আগের বছরের চেয়ে রিটার্নে ১৫ শতাংশ আয় বেশি দেখালে ট্যাক্স ফাইল অডিটে ফেলা হবে না। সংশোধিত রিটার্নের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য থাকবে। শুধু ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা এ সুযোগ পাবেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্থাবর সম্পত্তি যেমন জমি-প্লট-ফ্ল্যাট দান বা হেবা দলিলের ওপর উৎসে কর আরোপ করা হয়েছিল বিধায় সাধারণ বেচাকেনার মতো হেবা দলিলে সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় এলাকা, জমির শ্রেণি অনুযায়ী হস্তান্তরকারীকে নির্দিষ্ট হারে আয়কর দিতে হতো। সমালোচনার মুখে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। অর্থাৎ আগের নিয়মেই উৎসে কর পরিশোধ ছাড়াই আপন ভাই-বোন, পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী, দাদা-দাদি, নানা-নানি ও নাতি-নাতনির সম্পর্কের মধ্যে সম্পত্তি হস্তান্তরে হেবা দলিল করা যাবে। বর্তমানে হেবা দলিলে ২ হাজার ৫১০ টাকা কর দিতে হয়। কোম্পানির মতো তহবিল ও ট্রাস্টের মূলধনি আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স বসানো হচ্ছে। আর শেয়ারবাজারে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্যাপিটাল গেইন করমুক্ত থাকছে। তবে মূলধনী আয় ৫০ লাখ টাকা অতিক্রম করলে গেইন ট্যাক্স দিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের কাছ থেকে দুই পদ্ধতিতে গেইন ট্যাক্স আদায় করা হবে।
বিলের বিধান অনুযায়ী, অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্কে মূলধনী যন্ত্র আমদানি শুল্কমুক্তই থাকছে। অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে এক শতাংশ শুল্কারোপের প্রস্তাব করেছিলেন তবে রপ্তানি ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর চেষ্টার অংশ হিসেবে সরকার দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলোতে বিনিয়োগে কর অবকাশ সুবিধার কথা জানিয়েছিল সরকার। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দাবির মুখে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে মূলধনী যন্ত্রপাতির ওপর এক শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব থেকে সরে আসছে সরকার।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এই শুল্কারোপের কথা বলেছিলেন। পরে ব্যবসায়ীরা তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তারা বলছিলেন, কর অবকাশ সুবিধার কথা জেনেই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ এসেছে। এই এক শতাংশ শুল্কারোপ সেই বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। বিরোধী দলগুলোও এই শুল্ক প্রস্তাবের সমালোচনা করে আসছিল। এছাড়া ২৯ মে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এনবিআর বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের কর অবকাশসহ ৮টি কর সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়। ১০ বছর মেয়াদি কর অবকাশ সুবিধা তুলে নেওয়ার ফলে শিল্পভেদে কোম্পানিগুলোর আয়ের ওপর করহার ২০-২৭.৫ শতাংশ বা এরও বেশি প্রযোজ্য হওয়ার কথা।
এছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় কারিগরি সহায়তাকারী হিসাবে কর্মরত বিদেশিদের প্রথম তিন বছরের বেতনের ওপর ৫০ শতাংশ আয়কর ছাড় পেত। সেটিও বাতিল করা হয়। এসব অঞ্চলে স্থাপিত কোম্পানির ১০ বছরের জন্য লভ্যাংশ, মূলধনী আয়, রয়্যালটি, টেকনিক্যাল নো-হাউ এবং কারিগরি সহায়তা ফির ওপরও ১০ বছরের কর অব্যাহতি ছিল, এগুলোও বাতিল করা হয়। দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের চাপে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কর অবকাশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। অর্থাৎ বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীরা আগের মতোই কর অবকাশ সুবিধা পাবে। এছাড়া কালোটাকা সাদা করার ট্যাক্স অ্যামনেস্টি বা বিশেষ সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে। ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা এবং বর্গমিটার প্রতি নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে প্লট-ফ্ল্যাট রিটার্নে প্রদর্শনের সুযোগ থাকছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বিটকয়েনের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ
একটি বিটকয়েনের দাম ১ লাখ ছুইছুই করছে। আজ শুক্রবার বিটকয়েনের দাম ৯৯ হাজার ৩৮০ ডলারে ছাড়িয়েছে। এই দাম বিটকয়েনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিটকয়েনের দাম বাড়তে থাকে। আর্থিক বাজারের প্রত্যাশা, ট্রাম্প প্রশাসন ক্রিপ্টোবান্ধব হবে। খবর রয়টার্সের
এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থাটি বলছে, চলতি বছর বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের দাম দিগুণের বেশি হয়েছে। গত ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর বিটকয়েনের দাম ২৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। গত দুই সপ্তাহের মধ্যে এটি বেড়েছে ৪৫ শতাংশের বেশি। আজ শুক্রবার একটি বিটকয়েন বিক্রি হয়েছে ৯৯ হাজার ৩৮০ ডলারে।
মূল্যবৃদ্ধির দৌড়ে বিটকয়েন পাল্লা দিচ্ছে ইলন মাস্কের টেসলার সঙ্গে। ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে টেসলার শেয়ারের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ। বিনিয়োগকারীরা মনে করেছেন, ট্রাম্পের বন্ধুরা এবং যেসব বিষয়ে তার আগ্রহ আছে, সেসব বিষয় তিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ভালো করবে।
সিডনির এটিএফএক্স গ্লোবালের প্রধান বাজার বিশ্লেষক নিক টুইডেল বলেন, ‘বিটকয়েনের দাম বাড়ছে ট্রাম্পের জন্যই। কারণ, তিনি এই শিল্পের খুবই সমর্থনকারী। এর মানে হলো, ক্রিপ্টোর মজুত ও মুদ্রা উভয়েইর চাহিদা আরও বাড়বে। নির্বাচনের ফল আসার পর বিটকয়েনের দাম প্রায় রেকর্ড পর্যায়ে ওঠার মানে হলো, এই মুদ্রার ওপরে কেবল খোলা আকাশ রয়েছে।’
গত ১০ নভেম্বর আগের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ৮০,০০০ ডলারে পৌঁছে যায়। বিশেষজ্ঞরা রুশ বার্তা সংস্থা তাসকে বলেছেন, বর্তমান বৃদ্ধির পর্যায়ে থাকলে বিটকয়েনের দাম ৩ লাখ ডলারে পৌঁছানোও অবাক করার মতো কিছু হবে না।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারকারীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার মাধ্যমে এর দাম ওঠা-নামা করে। ২০০৮ সালের নভেম্বরে সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামে বিটকয়েন কারেন্সি মার্কেটে প্রকাশ করা হয়।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ব্যাংকে কলমানি সুদহার ১০ শতাংশ ছাড়ালো
ব্যাংক খাতে কলমানি সুদহার সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। সপ্তাহের শেষ দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার কলমানি বাজারে এক দিনের জন্য ধার নেওয়া টাকার গড় সুদহার উঠেছে ১০ দশমিক ০৯ শতাংশে। ১৩ নভেম্বর থেকে এই সুদহার ১০ শতাংশ বা তার ওপরে রয়েছে। কলমানি বাজারে সুদহার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এর আগে সাম্প্রতিক সময়ে কলমানি বাজারে এক দিনের জন্য টাকা ধারের ক্ষেত্রে সুদহার ১০ শতাংশের ওপরে ওঠেনি। আবার চার দিন ও সাত দিনের জন্য টাকা ধারের ক্ষেত্রে এই সুদহার আরও বেশি। গতকাল চার দিনের ধারের ক্ষেত্রে গড় সুদহার ছিল সোয়া ১২ শতাংশ। আর সাত দিনের ধারের ক্ষেত্রে এই সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। তবে কলমানিতে বিভিন্ন মেয়াদে ধারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি টাকা লেনদেন হয় এক দিনের ধার হিসেবে।
কলমানি হচ্ছে সরকারি–বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যে টাকা ধার দেওয়া–নেওয়ার একটি ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় যেসব ব্যাংকের হাতে নগদ টাকার সংকট থাকে তারা তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে যেসব ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত তারল্য বা অর্থ থাকে তাদের কাছ থেকে টাকা ধার করে। এ জন্য সুদ দিতে হয়। সুদহার নির্ধারিত হয় চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে। ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে টাকা ধার দেওয়া–নেওয়া করলেও দিন শেষে লেনদেন ও সুদের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কলমানি বাজারের প্রতিদিনের লেনদেন ও সুদের তথ্য প্রকাশ করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ২০১৬ সাল থেকে কলমানি বাজারের তথ্য রয়েছে। সেই তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৬ সালের পর গতকালই প্রথম কলমানিতে এক দিনের ধারের ক্ষেত্রে গড় সুদহার ১০ দশমিক ০৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এদিন এক দিনের জন্য কলমানিতে ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা লেনদেন হয়, যার সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ১১ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। এক দিনের ধারের ক্ষেত্রে কলমানিতে গড় সুদহার প্রথম ১০ শতাংশে উন্নীত হয় ১৩ নভেম্বর। ওই দিন এই বাজারে এক দিনের জন্য ৩ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।
ব্যাংকাররা বলছেন, বর্তমানে কিছু ব্যাংক তীব্র তারল্যসংকটে রয়েছে। এসব ব্যাংকের সংকট এতটাই প্রকট যে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী টাকাও ফেরত দিতে পারছে না। আবার সরকারি ট্রেজারি বিল–বন্ডের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় অনেক ব্যাংক বেশি লাভের আশায় কলমানির বদলে বিল–বন্ডে অর্থ বিনিয়োগ করছে। ফলে কলমানিতে টাকা ধার দেওয়া বা এই বাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া ব্যাংকের সংখ্যা কমে গেছে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
নন-লাইফ বিমা কোম্পানির সমস্যা নিরসনে বিআইএ’র সভা
দেশের নন-লাইফ বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর সমস্যা নিরসনে করণীয় ঠিক করতে মতবিনিময় সভা করেছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীর নয়া পল্টনে অ্যাসোসিয়েশনের কনফারেস রুমে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বিভিন্ন নন-লাইফ বিমা কোম্পানির ৪২ জন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইএ’র নন-লাইফ টেকনিক্যাল সাব-কমিটির আহ্বায়ক ও রুপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির উপদেষ্টা পি কে রায়।
অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন আহমেদ (পাভেল) ও প্রথম ভাইস-প্রেসিডেন্ট হোসেন আখতার সভায় বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন। নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সৈদয় বদরুল আলম, সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান, মো. ইমাম শাহীন।
সভায় মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তারা দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নন-লাইফ বিমা কোম্পানির সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করেন এবং এসব সমস্যা নিরসনের জন্য নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেন। বিআইএ’র প্রেসিডেন্ট, প্রথম ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও নির্বাহী কমিটির সদস্যরা মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করেন।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
মুডিসের রেটিংয়ে সঠিক চিত্র উঠে আসেনি দাবি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
ঋণমান নির্ণয়কারী মার্কিন এজেন্সি মুডিস রেটিংয়ে বাংলাদেশের আর্থ-রাজনৈতিক অবস্থার সঠিক চিত্র উঠে আসেনি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান কমানোর মাত্র দুদিনের মাথায় ছটি বেসরকারি ব্যাংকের ঋণমান কমানোর পর বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাতে এমন দাবি করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এতে বলা হয়, দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি একটি বড় রূপান্তরের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে। এর ইতিবাচক ফল পেতে আরও সময় লাগবে। দেশি-বিদেশি অংশীদারদের সমর্থন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি বাড়াবে।
এর আগে, গত বুধবার (২১ নভেম্বর) ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে মুডিস।
একই সময়ে মুডিস ছটি ব্যাংকের এলটি ডিপোজিট বা দীর্ঘমেয়াদি আমানতের রেটিং পূর্বাভাস পরিবর্তন করে স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচক করেছে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সবজির দামে সুখবর নেই, স্থিতিশীল মাংস
প্রকৃতিতে ইতোমধ্যে শীতের আমেজ শুরু হয়ে গেছে, আর মৌসুমের সবজিতেও ভরে উঠেছে বাজার। এর পরও গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাতেও সবজির দামে খুব একটা হেরফের ঘটেনি, আগের মতোই রয়েছে অধিকাংশ সবজির দাম। মাংসের দামেও দর বৃদ্ধি-পতন দেখা যায়নি।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সরেজমিনে মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। পেঁয়াজ কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ফুলকপি ও পাতাকপি পিস ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ কেজি ১২০ টাকা, লাউ পিস ৮০ টাকা, কাঁচা পেঁপে কেজি ৫০ টাকা, শিম ১২০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পটল ৬০ টাকা ও টমেটো ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এর মধ্যে কিছু সবজির দাম বেড়েছে ও কমেছে। গত সপ্তাহে কুমড়ো বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি, যা এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। বেগুনের দাম ছিল ৭০ টাকা, যা এ সপ্তাহে ৬০ টাকা। আবার গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে বেড়েছে বরবটির দাম। ৬০ টাকা কেজির বরবটি এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। বেড়েছে শসার দামও। গতসপ্তাহে শসা ৬০ টাকা, এ সপ্তাহে যার দাম ১০০ টাকা।
আগ্রহ নিয়েই শীতের সবজি কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। বাজারে আসা ক্রেতা নাইমুর বলেন, আগে শীতের সবজি আরো কম দামে কিনেছি। আশা করছি শীত আসলে দাম আরেকটু কমে যাবে, তখন আমরা একটু স্বস্তিতে কেনাকাটা করতে পারবো।
এদিকে বাজারে গরু, খাসির মাংস ও মুরগির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়, সোনালির কেজি ২৮০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০, কক ৩০০ টাকা কেজি। পাশাপাশি দেশি মুরগি প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বাজার ভেদে ৭৫০ টাকা থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং খাসির মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায়।
তবে বাজারে সব ধরনের মাছ বাড়তি দামেই আটকে আছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি চাষের কই বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়, পাঙাশ মাছ প্রতি কেজি ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ টাকা, শিং ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, কাঁতল ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকা, গলসা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, ট্যাংরা প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া রুই প্রতি কেজি ৩৬০ টাকা, রুপচাঁদা ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এমআই