জাতীয়
পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ হচ্ছে রাত থেকে
আসন্ন ঈদুল আজহায় ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা বজায় রাখা এবং শিডিউল বিপর্যয় নিরসনে আজ (শুক্রবার) রাত থেকে বন্ধ হচ্ছে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল।
সম্প্রতি ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের নেওয়া কর্মপরিকল্পনা থেকে এ তথ্য জানা যায়।
কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়, ১৪ জুন রাত ১২টার পর থেকে ঈদের পরের দিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কনটেইনার ও জ্বালানি তেলবাহী ট্রেন ছাড়া অন্যান্য সব গুডস ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হবে। এছাড়া আন্তঃদেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস, মৈত্রী এক্সপ্রেস ও বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
আরও বলা হয়, ঈদুল আজহার দিন বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কতিপয় মেইল এক্সপ্রেস বা বিশেষ ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। তবে কোনো আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে না।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আইন-আদালত
ঋণের প্রলোভনে শাহবাগে লাখো মানুষের সমাবেশের চেষ্টা
ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে রাজধানীর শাহবাগে জনসমাগমের চেষ্টা করেছে একটি সংগঠন। সমাবেশে আসা লোকদের এক লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে লোভ দেখায় সংগঠনটি। প্রলোভনে পড়া লোকজন ও শাহবাগ থানা-পুলিশ এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রলোভনে পড়া লোকজন বলছেন, ‘অহিংস গণ–অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। শাহবাগে যাঁরা উপস্থিত হবেন, তাঁদের এক লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে।
পুলিশ ও শাহবাগে আসা লোকজন বলছেন, এমন প্রলোভনে পড়ে গতকাল রোববার দিবাগত রাত একটার পর সারা দেশ থেকে বাস, পিকআপ ও মাইক্রোবাসে সাধারণ মানুষ ঢাকায় আসতে শুরু করেন।
পরে পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আসা লোকজনকে বুঝিয়ে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেন।
আজ সোমবার সকাল সাতটার দিকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচণ্ড যানজট দেখা যায়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পুলিশ আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেন। পরে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
বাসে আসা বেশ কিছু ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের বেশির ভাগই জানেন না, শাহবাগে ঠিক কী হবে। তাঁরা বলেন, তাঁদের এক লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে, এমন কথা বলা হয়েছে। এ জন্যই তাঁরা এসেছেন।
কয়েকজন ব্যক্তির ভাষ্য, তাঁদের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ এক হাজার করে টাকা নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন শাহিন বলেন, ‘অহিংস গণ–অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন শাহবাগে অনেক মানুষ জমায়েত করার জন্য অনুমতি চেয়েছিল। পুলিশ অনুমতি দেয়নি।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আইন-আদালত
যৌক্তিক মামলা না নিলে ওসিকে সাসপেন্ড: ডিএমপি কমিশনার
যৌক্তিক মামলা না নেওয়ার অভিযোগ আসলে ওসিকে এক মিনিটে সাসপেন্ড (বরখাস্ত) করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নবনিযুক্ত কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) ডিএমপি সদর দপ্তরে অটোরিকশা, অটোভ্যান ও ইজিবাইক চালকদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
বৈঠকে একজন রিকশাচালক বলেন, আমাকে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় রোববার মারধর করা হয়। এমন অভিযোগে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আপনি মামলা করেননি কেন? মামলাযোগ্য হলে অবশ্যই ওসিদের মামলা নিতে হবে। মামলা না নিলে সেই থানার ওসিকে এক মিনিটে সাসপেন্ড (বরখাস্ত) করা হবে।
চাঁদাবাজির বিষয়ে সাজ্জাত আলী বলেন, গরীবদের কষ্টার্জিত অর্থ কেউ নিতে পারবে না। রিকশা-ভ্যানে কোনো চাঁদাবাজি হবে না। কোনো পুলিশ চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকলে রক্ষা নেই। গরিবের কষ্টার্জিত টাকা কেউ নিলেই ব্যবস্থা।
এ সময় রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিয়ে কোনো মন্তব্য না করে তিনি বলেন, আপনাদের বিষয়টি বিকেলেই চেম্বার আদালতে উঠবে। সুতরাং আপনাদের বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আইন-আদালত
বিদেশ যেতে মতিউরের রিট, খারিজ করলো আদালত
ছাগলকাণ্ডে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য পদ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্টের পদ হারানো মতিউর রহমানের বিদেশ যেতে চেয়ে করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে, গত ২১ অক্টোবর ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালত মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকি ও ছেলে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।
ওইদিন দুদকের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এ আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কামিজ ও ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণবের দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ের জন্য ছয় সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশ গমন রহিত করার জন্য পুনরায় আদেশ দেওয়া আবশ্যক।
আনোয়ার হোসেনের এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
সেটা চ্যালেঞ্জ করে সোমবার (২৫ নভেম্বর) হাইকোর্টে আসেন মতিউর ও তার স্ত্রী। পরে তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম শামীম হোসাইন এর ওপর রিট করেন। পরে শুনানিতে রিটটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে তা খারিজ করে দেন আদালত।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আইন-আদালত
আইজিপির বাসভবনে প্রবেশে ‘নিষেধাজ্ঞা’
বর্তমান আইজিপি দায়িত্ব নেওয়ার পর বদলি-পদোন্নতি তদবিরের জন্য তার বাসভবনে অনুমতি ছাড়া প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তার বাসভবনে যাওয়ার আগে অনুমতি গ্রহণ করতে হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আইজিপির বাসায় প্রায় সময় পুলিশ সদস্যদের ভিড় থাকত। পুলিশ সদস্যরা তাদের বিভিন্ন দাবি কিংবা তদবির নিয়ে যেতেন আইজিপির বাসায়। এক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতো। বর্তমানে সেই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনুমতি ছাড়া এখন কেউ আইজিপির বাসভবনে যেতে পারবেন না।
পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি মিয়া মাসুদ করিম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আদেশে বলা হয়, পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) সাক্ষাতের জন্য বাসভবনে যেতে হলে পূর্বানুমতি প্রয়োজন। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের সকল সদস্যকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
আদেশের কপিটি পাঠানো হয়েছে- পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন), র্যাব মহাপরিচালক, সিআইডি প্রধান, পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর, রেলওয়ে পুলিশের প্রধান, হাইওয়ে পুলিশের প্রধান, আর্মড পুলিশের প্রধান, সারদা পুলিশ একাডেমি, নৌ পুলিশের প্রধান, ডিএমপি কমিশনার, ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান, এসবি প্রধান, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, পিবিআই প্রধান, এটিইউ প্রধান, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল।
এছাড়াও সকল রেঞ্জ ডিআইজি, সকল মেট্রোপলিটন কমিশনার, সকল অতিরিক্ত ডিআইজি, সকল জেলা পুলিশ সুপারদেরকে আদেশের কপি পাঠানো হয়েছে।
গত ২০ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে আইজিপি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় বাহারুল আলমকে।
বাহারুল আলম ২০০৭-০৮ সালে এসবি প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। পরে পুলিশ সদরদপ্তরে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘ সদরদপ্তরের শান্তিরক্ষা বিভাগে পুলিশ লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৫ সালে আফগানিস্তানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের সিনিয়র পুলিশ অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করেন। এর আগে ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, কসোভো ও সিয়েরা লিওনে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
দুই দফা পদোন্নতিবঞ্চিত বাহারুল আলম ২০২০ সালে অবসরে যান। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায়।
এদিকে সরকার পতনের দিন গত ৫ আগস্ট আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আত্মগোপনে চলে যান। পরদিন মধ্যরাতে নতুন পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব পান মো. ময়নুল ইসলাম।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আইন-আদালত
এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে সরকার গৃহীত কার্যক্রমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের টেকসই উন্নয়নের ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্ব যুক্ত করার চিন্তা করছে সরকার।
সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে এই তত্ত্বের কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা সহজ হবে বলে মনে করছেন সরকারের নীতি-নির্ধারকরা।
‘থ্রি-জিরো তত্ত্ব’ আর্থিক স্বাধীনতা, কর্মঠ জনশক্তি তৈরি এবং পরিবেশ উন্নয়নে বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কার্যকর একটি মডেল। এটি একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, যা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। সেগুলো হচ্ছে- জিরো দারিদ্র্য, জিরো বেকারত্ব ও জিরো নেট কার্বন নিঃসরণ। আর তা অর্জনে প্রয়োজন তারুণ্য, প্রযুক্তি, সুশাসন ও সামাজিক ব্যবসা।
গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবর্তক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বজুড়ে আলাদা সম্মান পেয়েছেন তার এই থ্রি জিরো তত্ত্বের জন্য।
এসডিজির লক্ষ্যগুলোর মূল পরিকল্পনায় রয়েছে- সবার জন্য কল্যাণকর পৃথিবী এবং টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণ।
থ্রি জিরো তত্ত্বের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ বলেন, ‘আমরা এজডিজির সঙ্গে থ্রি জিরো তত্ত্ব যুক্ত করার চেষ্টা করছি। এসডিজির ওপর সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে আমাদের একটি কর্মশালা চলছে, সেখানে এই তত্ত্বের বিষয়ে আলোচনা করছি। আমরা চাই টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে সব পর্যায়ে থ্রি জিরো তত্ত্বের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি হোক।’
তিনি উল্লেখ করেন, এসডিজির লক্ষ্য পূরণের কার্যক্রমের মধ্যে থ্রি জিরো তত্ত্ব রাখা হয়েছে, তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস কারোর ওপর এই তত্ত্বের প্রয়োগ চাপিয়ে দিতে চান না। আমাদের উদ্দেশ্য হলো- যার ভালো লাগবে তিনি এটি গ্রহণ করবেন এবং কাজে লাগাবেন। এ কারণে এসডিজির বাইরে সরকারের কোনো বড় পর্যায়ে থ্রি জিরো তত্ত্ব নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
থ্রি জিরো তত্ত্বের মূল ভিত্তি হলো- দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা। এই তত্ত্বের ব্যাপারে অধ্যাপক ইউনূসের ভাষ্য, ‘বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিজেই দারিদ্র্য সৃষ্টি করে এবং এই ব্যবস্থার অধীনে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব নয়। মানুষ এককভাবে দারিদ্র্যতা তৈরি করে না, আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামোর ভেতরেই তৈরি হয় দারিদ্র্য।’
তার মতে, ভালো চাকরি না খুঁজে উদ্যোক্তা তৈরিতে জোর দিতে হবে। তিনি বিভিন্ন সময় তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘আমরা জন্মেছি সমস্যা সমাধানের জন্য, কারো অধীনে চাকরি করার জন্য নয়। তাই তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোক্তা হতে হবে। কারো অধীনে নয়, বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে হবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েই।’
সম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে বাসযোগ্য নিরাপদ পৃথিবী ও নতুন সভ্যতা গড়ে তুলতে ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্বকে বৃহৎ পরিসরে তুলে ধরেছেন অধ্যাপক ইউনূস।
তিনি সম্মেলনে নিজের ভাষণে এই তত্ত্ব উপস্থাপন করে বলেছেন, এটি এক নতুন সভ্যতার জন্ম দেবে। গড়ে তুলবে এক নতুন পৃথিবী, যা সবার জন্য বাসযোগ্য হবে।
তিনি এও বলেছেন, এই তত্ত্ব প্রয়োগ করে জীবনশৈলী পাল্টানো সম্ভব। পরিবেশের নিরাপত্তার জন্যই দরকার এই নতুন জীবনধারা বা ‘লাইফস্টাইল’। সেই যাপন চাপিয়ে দেওয়া হবে না। তা পছন্দ করতে হবে। যুব সম্প্রদায় তা আনন্দের সঙ্গে ভালবেসে গ্রহণ করবে। এভাবে যুবসমাজের প্রত্যেকে নিজেদের ‘থ্রি জিরো পারসন’ হিসেবে গড়ে তুলবে।
‘থ্রি জিরো পারসন’ কেমন, তার ব্যাখ্যায় শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সেই ব্যক্তি কার্বন নিঃসরণ করবে না। অর্থাৎ সে হবে ‘জিরো কার্বন’। সে সম্পদের একক মজুতদার হবে না। তার সম্পদ হবে সামাজিক ব্যবসাভিত্তিক। অর্থাৎ সে হবে ‘জিরো দরিদ্র’ এবং এভাবেই তারা প্রত্যেকে উদ্যোগী হয়ে পূরণ করবে ‘জিরো বেকারত্বের’ তৃতীয় শর্ত। অর্থাৎ মুহাম্মদ ইউনূসের মতে, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামাতে পারলে দুশ্চিন্তামুক্ত ও বাসযোগ্য এক নতুন পৃথিবী গড়ে উঠবে।
থ্রি জিরো পারসন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে থ্রি জিরো ক্লাব বিশেষ ভূমিকা পালন করে বলে উল্লেখ করেন কর্মজীবনে অধ্যাপক ইউনূসের দীর্ঘদিনের সহকর্মী লামিয়া মোরশেদ। তিনি মনে করেন এই ক্লাবের সদস্যরা থ্রি জিরো তত্ত্ব সম্পর্কে সচেতন হন এবং একসময় নিজেরা থ্রি জিরো পারসন হিসেবে গড়ে ওঠেন।
ইউনূস সেন্টারের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা লামিয়া মোরশেদ বলেন, সারা পৃথিবীজুড়ে বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার ৬০০টি থ্রি জিরো ক্লাব রয়েছে, যার প্রতিটি অধ্যাপক ইউনূসের নতুন সভ্যতার স্বপ্নে অনুপ্রাণিত। এসব ক্লাবের বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গড়ে উঠেছে।
বিশ্বের অসংখ্য বিভিন্ন নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে থ্রি জিরো ক্লাব গড়ে উঠলেও বাংলাদেশে এই ক্লাব সমানভাবে গড়ে উঠেনি। ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী বা অন্য কোনো ব্যক্তির পক্ষে এই থ্রি জিরো ক্লাব তৈরির আগ্রহ দেখানোটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। অধ্যাপক ইউনূসের থ্রি জিরো তত্ত্বের বিষয়ে সচেতনতা তৈরির কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রেও প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করতে হয়েছে।
এ বিষয়ে লামিয়া মোরশেদ বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় বাংলাদেশে থ্রি জিরো ক্লাব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনেকের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল, এখন সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়ায় দিন দিন এর পরিসর বাড়ছে। এখন অনেকে এগিয়ে আসছেন। বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ইদানীং থ্রি জিরো তত্ত্ব নিয়ে কর্মশালা অনেক বেড়ে গেছে। এটা কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো উদ্যোগ নয়, এটা যে যার অবস্থান থেকে নিজ উদ্যোগে করছেন। শুধু নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে তারা জানিয়ে দেন যে আমরা এটা করছি।’
তিনি জানান, থ্রি জিরো ক্লাব ইচ্ছে করলেই কেউ রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে না এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় দেখা হয়। তারা যে কাজগুলো করছে সেগুলো গুরুত্ব সহকারে করছে কি-না এবং সেটি টেকসই কি-না, এসব দেখার পরেই রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়।
টেকসই উন্নয়নের অন্যতম প্রবক্তা অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে লামিয়া মোরশেদ বলেন, ‘ স্যার সবসময় বলেন আমাদের সমাজে যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো আমরা নিজেরাই সৃষ্টি করেছি। এসব সমস্যার সমাধানের জন্য তরুণরা উপযুক্ত ব্যক্তি, কারণ তাদের মাথায় অনেক নতুন নতুন আইডিয়া আছে, তারা সেটা কাজে লাগিয়ে সমস্যার সমাধান করে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে। এজন্য ১২ থেকে ৩৫ বছর বয়সী যারা রয়েছেন, তাদেরকে তিনি বলেন তোমরা থ্রি জিরো ক্লাব করতে পারো।’ ৪ থেকে ৫ জন মিলে এই ক্লাব করা যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
লামিয়া মোরশেদ মনে করেন নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের থ্রি জিরো তত্ত্বকে প্রকৃতপক্ষে কার্যকর করার ক্ষেত্রে সামাজিক ব্যবসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, মাইক্রোক্রেডিট ও মাইক্রো ফাইন্যান্সের পর ড. ইউনূসের নবীন প্রোগ্রাম হলো সামাজিক ব্যবসা। এই ধারণার মূল বিষয় হলো একজন তার নিজের চাকরির ব্যবস্থা করবে পাশাপাশি অন্যদের চাকরির সুযোগ করে দেবে। অর্থাৎ আমি একটি ঋণ নিয়ে একটি কাজ শুরু করলাম যেখানে আরও তিন-পাঁচজন লোক কাজ করবে তাদের কর্মসংস্থান হবে। এই ব্যবসা থেকে যে মুনাফা আসবে তা জনকল্যাণে ব্যয় হবে।
মুনাফার অর্থ স্বাস্থ্য, শিক্ষা কিংবা পরিবেশের উন্নয়নে ব্যয় হতে পারে। এভাবে আমরা টেকসই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক ইউনূস সবসময় দারিদ্র বিমোচন, উদ্যোক্তা তৈরি ও পরিবেশ দূষণ কমানোর ওপর জোর দেন উল্লেখ করে লামিয়া মোরশেদ বলেন, ‘ড. ইউনূস সবসময় বলেন যদি একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকে তাহলে আমরা সামনে এগিয়ে যাবো কীভাবে। তাই প্রতিটি কাজের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবে। তার যে উন্নয়ন তত্ত্ব তা কেবল বাংলাদেশকে ঘিরে নিয়ে নয়, সেটি সারা বিশ্বের কল্যাণ এবং ভবিষ্যতকে কেন্দ্র করে।’
এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আরও বলেন, অধ্যাপক ইউনূসের সামাজিক ব্যবসার মূল থিম হচ্ছে-এখান থেকে আমি কোন লাভ করব না তবে আমার মূল টাকা ফেরত আসতে হবে। যাতে করে ওই অর্থ আবার অন্য আরেকটি সামাজিক কার্যক্রমে ব্যবহার করা যায়। মুহাম্মদ ইউনূস আগে থেকেই বলতেন মাইক্রোক্রেডিটের সঙ্গে সামাজিক কার্যক্রম চালু রাখতে হবে। সামাজিক কার্যক্রম মনকে অনেক তৃপ্তি দেয়, কারণ এতে মানুষ অনেক উপকৃত হয়।
তিনি জানান, বিশ্বের ৩৯টি দেশের ১১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার রয়েছে। যেখানে মাইক্রোক্রেডিটের বিজনেস গুলো শিখানো হয়। তাদের আগ্রহে থ্রি জিরো ক্লাব তৈরি হচ্ছে। এ ক্লাবের মূল লক্ষ্য হলো শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য কার্বন নিঃসরণ অর্জন করা।
লামিয়া মোরশেদ জানান, আগামী জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য যুব সম্মেলনে (ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল) থ্রি জিরো বিষয়টা রাখা হবে। খেলাধুলা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিনোদনের অংশ হিসেবে কাজ করে, এটাকে কীভাবে সামাজিক কার্যক্রমের অংশ বানানো যায়, সেটা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। একটা টুর্নামেন্টে অনেক মানুষ অংশগ্রহণ করে, সেখানে যদি আমরা একটি থিম দেয় যে আমরা জিরো ওয়েস্ট এর দিকে এগিয়ে যাবো, আমরা প্লাস্টিক ব্যবহার করব না, আমরা রাস্তায় ময়লা ফেলবো না। এই বিষয়ে যদি আমরা সচেতনতা তৈরি করতে পারি তাহলে সমাজে অনেক বড় পরিবর্তন আসবে।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, মেসির মতো খেলোয়াড় যদি বলেন যে আমরা জিরো ওয়েস্ট করব তাহলে এই বার্তাটি পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। থ্রি জিরো তত্ত্বের বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে আমরা এ ধরনের কিছু কাজ করার চেষ্টা করছি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের থ্রি জিরো তত্ত্ব পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন কমনওয়েলথ সচিবালয়ের আন্তর্জাতিক ট্রেড বিভাগের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং গবেষণা সংস্থা র্যাপিড এর চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক।
তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নের সব সূচকে অভীষ্ট অর্জনের ক্ষেত্রে ‘থ্রি জিরো থিওরি’ অনুঘটন হিসেবে কাজ করবে বলে আমার বিশ্বাস। তিনি মনে করেন থ্রি জিরো তত্ত্বের ধারণা বাংলাদেশে তরুণদের ক্ষমতায়ন, প্রযুক্তির ব্যবহার, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে কৃষিসহ অন্যান্য খাতে একটি নতুন বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা রাখে। আমাদের দেশে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে না, অথচ উদ্যোক্তা বিকাশ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন কোনোভাবে সম্ভব নয়।
ড. রাজ্জাক বলেন, থ্রি জিরো তত্ত্ব কাজে লাগানো গেলে দেশে সর্বস্তরে উদ্যোক্তা গড়ে উঠবে এবং অর্থনীতির কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জন করা যাবে।