অর্থনীতি
বাজেটে দাম বাড়তে পারে যেসব পণ্যের

আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে শুল্ক-করারোপ করা হতে পারে বেশকিছু পণ্য ও সেবায়। এতে বাড়তে পারে আইসক্রিম, বেভারেজ, ইট, এলইডি বাল্ব, তামাকজাতীয় দ্রব্য প্রভৃতি পণ্যের দাম।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সিগারেটের উৎপাদন পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্যস্তর বাড়ানো হতে পারে। তিন স্তরের সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়তে পারে। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার সর্বোচ্চ খুচরামূল্য ৪৮ টাকা ও একই পরিমাণ গুলের মূল্য ২৫ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। যাদের পান-জর্দা খাওয়ার অভ্যাস আছে তাদের ব্যয় বাড়বে।
বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত পানির ফিল্টার আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। দেশে উৎপাদন হওয়ায় পানির ফিল্টার আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হতে পারে। বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয়ে অনেকে বাসায় এলইডি বাল্ব ব্যবহার করেন। এলইডি বাল্ব এবং এনার্জি সেভিং বাল্ব উৎপাদনের উপকরণ আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে।
কাজুবাদাম চাষকে সুরক্ষা দেওয়ার অংশ হিসেবে খোসা ছাড়ানো কাজুবাদাম আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। ফলে আমদানি করা কাজুবাদামের দাম বাড়তে পারে। দেশে ফ্রিজ-এসি উৎপাদনে ব্যবহৃত কম্প্রেসার ও সব ধরনের উপকরণের ভ্যাট এবং শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। তাই এসি ও ফ্রিজের দাম বাড়তে পারে। এলআরপিসি তার আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হতে পারে। এফলে নির্মাণখাতে খরচ বাড়বে।
গাড়ি সিএনজি-এলপিজিতে কনভার্সনে ব্যবহৃত কিট, সিলিন্ডার ও অন্য যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। গাড়ি কনভার্সন খরচ বাড়তে পারে। আবার লোডশেডিং মোকাবিলায় বাসাবাড়ি বা শিল্পে জেনারেটরের ব্যবহার বাড়ছে। সেখানেও নজর দিয়েছে এনবিআর। জেনারেটর সংযোজন ও উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ বা যন্ত্রাংশ আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। দেশের বাজারে জেনারেটরের দাম বাড়তে পারে। বিদেশ থেকে আমদানি করা ম্যাকরেল মাছ আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর যোগ করায় দাম বাড়তে পারে।
শিল্পে ব্যবহৃত ৩৩টি আইটেমের কাঁচামাল আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক বসানো হচ্ছে। এ তালিকায় আছে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল, শিরিষ কাগজ উৎপাদনে ব্যবহৃত টিউব লিসেনিং জেল, কৃত্রিম কোরান্ডাম, অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড, প্যাট চিপস উৎপাদনে ব্যবহৃত ইথাইলিন গ্লাইকল, পানির মোটর উৎপাদনকারী অ্যালুমিনিয়াম ইনগট, ফ্লোরোসেন্ট বাতির যন্ত্রাংশ, কাচ, প্লাস্টিক, এলইডি টেলিভিশন উৎপাদনে ব্যবহৃত এলইডি বাল্ব, বাতি উৎপাদনে ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়াম অ্যালয় প্রভৃতির দাম বাড়তে পারে।
অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মূলধনী যন্ত্রাংশ ও নির্মাণসামগ্রী আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে ১ শতাংশ শুল্ক বসানো হচ্ছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে ডেভেলপারের আনা ব্যবহৃত সামগ্রীতে এক শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুযোগ বাতিল করা হচ্ছে। ফলে অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক ছাড়া অন্য শুল্ক-কর (ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, রেগুলেটরি শুল্ক) পরিশোধ করতে হবে।
ট্যুর অপারেটর সেবার ওপর বিদ্যমান মূসক অব্যাহতি প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হতে পারে। অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, থিম পার্কে মূসক ৭ দশমিক ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ফলে বাড়তে পারে ঘোরাঘুরির খরচ। নিলামকারী সংস্থা, সিকিউরিটি সার্ভিস ও লটারির টিকিটে মূসক ১০ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ করা প্রস্তাব করা হতে পারে। ইটের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুনির্দিষ্ট কর ১০ থেকে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হতে পারে। ফলে বাড়বে নির্মাণ খরচ। আইসক্রিম ও কার্বোনেটেড বেভারেজের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করা হতে পারে। ফলে আইসক্রিম ও কোমলপানীয়ের দাম বাড়বে।
মোবাইল ফোনের সিম ব্যবহারে দেওয়া সেবার বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হতে পারে। এতে মোবাইলে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বাড়তে পারে। ই-সিম সরবরাহের ক্ষেত্রে মূসক ২০০ টাকার বিপরীতে ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কিছু শর্ত প্রতিপালনসাপেক্ষে রেফারেল বা বিশেষায়িত হাসপাতাল শুল্কছাড় সুবিধায় ১ শতাংশ শুল্কে মেডিকেল যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির সুযোগ রয়েছে। বাজেটে ২০০টিরও বেশি মেডিকেল যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। ফলে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসাব্যয় আরও বাড়তে পারে।

অর্থনীতি
বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমালো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা কম। এর আগের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। অপরদিকে, সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ দশমিক ৪ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি গভর্নর, নীতিনির্ধারক পরামর্শক, প্রধান অর্থনীতিবিদ, গবেষণা বিভাগের পরিচালক এবং মুখপাত্র ও সহকারী মুখপাত্ররা উপস্থিত ছিলেন।
গত জানুয়ারিতে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ, তবে জুন শেষে অর্জিত হয়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। এর আগের ডিসেম্বরেও প্রায় একই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।
সরকারি খাতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে ২০ শতাংশ। গত অর্থবছরে এ হার ছিল ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, কিন্তু বাস্তবে অর্জন হয়েছে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।
মুদ্রা সরবরাহের দিক থেকেও সামান্য বাড়তি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত মুদ্রা সরবরাহের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ ধরা হয়েছে, যা আগের ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে সামান্য বেশি। তবে মে মাস পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, বাজারে বাস্তব মুদ্রা সরবরাহ ছিল ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাষ্য অনুযায়ী, ডলার কেনার মাধ্যমে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বেড়েছে। সেইসঙ্গে কিছু দুর্বল ব্যাংককে বিশেষ সহায়তা হিসেবে ঋণ দেওয়া হয়েছে, যার ফলে সামগ্রিক অর্থ সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে।
অর্থনীতি
নীতি সুদহার ১০ শতাংশ বহাল রেখেই নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা

মূল্যস্ফীতির হার কমে এসে গত জুনে ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে। একই সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধিও কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৪০ শতাংশে। এমন প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীরা সুদহার কমিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে আহ্বান জানান। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক আপাতত প্রধান নীতি সুদহার (রেপো) অপরিবর্তিত অর্থাৎ ১০ শতাংশে বহাল রেখেছে। চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি গভর্নর, নীতিনির্ধারক, পরামর্শক, প্রধান অর্থনীতিবিদ, গবেষণা বিভাগের পরিচালক এবং মুখপাত্র ও সহকারী মুখপাত্ররা উপস্থিত ছিলেন।
গভর্নর বলেন, যতক্ষণ না মূল্যস্ফীতির হার ৭ শতাংশের নিচে স্থায়ীভাবে নেমে আসে, ততদিন নীতি রেপো হার ১০ শতাংশ নির্ধারণ থাকবে। এছাড়া স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটির হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটির হার ৮ শতাংশ বজায় রাখা হবে।
চলতি মুদ্রানীতিতেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে আগামী বছরের জুন নাগাদ গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর রেপো সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করে। রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ধক রেখে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেয়।
নতুন মুদ্রানীতিতে স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটির হারও আগের মতো ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে, ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অর্থ রাখলে যে সুদ পায়- সেই স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটির হার গত ১৫ জুলাই ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৮ শতাংশে নামানো হয়।
অর্থনীতি
সাইবার হামলার আশঙ্কা, সতর্ক করলো বাংলাদেশ ব্যাংক

আসন্ন দিনগুলোতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো, বিশেষ করে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে সম্ভাব্য সাইবার হামলার আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে একটি জরুরি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটিডি) বিভাগ থেকে পাঠানো ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সাইবার হামলার মাধ্যমে ব্যাংক, স্বাস্থ্যসেবা, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। এতে করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হুমকির মুখে পড়তে পারে।
প্রতিরোধে যা করতে বলা হয়েছে
বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনায় সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-
সার্ভার, ডেটাবেইস ও সিস্টেমসমূহে প্রয়োজনীয় সিকিউরিটি প্যাঁচ আপডেট করা, অপ্রয়োজনীয় পার্ট বন্ধ রাখা এবং ন্যূনতম অ্যাক্সেস সুবিধা নিশ্চিত করা, ডেটা ব্যাকআপ নিশ্চিত করা ও ৩-২-১ ব্যাকআপ কৌশল অনুসরণ, সমস্ত স্তরে (ট্রানজিট, রেস্ট ও প্রসেস) ডেটা এনক্রিপশন, গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমে মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু, সন্দেহজনক কার্যক্রম যেমন lateral movement, DDoS, ও ডেটা চুরি শনাক্তে SIEM ও NIDS ব্যবহারের নির্দেশ, EDR (Endpoint Detection and Response) ও অন্যান্য সিকিউরিটি টুল ব্যবহারের পাশাপাশি থ্রেট সিগনেচার নিয়মিত আপডেট, সুনির্দিষ্ট Incident Response Plan প্রস্তুত রাখা।
এছাড়া সন্দেহজনক লগইন, অজানা ফাইল পরিবর্তন, রিমোট অ্যাকসেস ও প্রিভিলেজড অ্যাকাউন্টগুলো বিশেষভাবে নজরে রাখা, কোনো ধরনের Indicators of Compromise (IOCs) পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাংলাদেশ ব্যাংকে অবহিত করা, ২৪/৭ ভিত্তিতে সিকিউরিটি অপারেশনস সেন্টার মনিটরিং, উচ্চ পর্যায়ের রেজিলিয়েন্স নিশ্চিত করতে লোড ব্যাল্যান্সার, ফলোব্যাক প্ল্যান, বিজনেস কন্টিনিউইটি প্ল্যান ও ডিজাস্টার রিকভারি প্ল্যান বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, এই নির্দেশনা অনুসরণ করলে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাত সম্ভাব্য সাইবার হুমকি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হবে। ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন ও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পুনরায় অনুরোধ জানায় আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি।
অর্থনীতি
২৯ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২৭ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের ২৯ দিনে দেশে ২২৭ কোটি ৬০ লাখ (প্রায় ২ দশমিক ২৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) প্রায় ২৭ হাজার ৭৬৭ কোটি ২০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের প্রথম ২৯ দিনে ২২৭ কোটি ৬০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছে দেশে। গত বছরের একই সময়ে (২০২৪ সালের জুলাইয়ের ২৯ দিন) এসেছিল ১৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ে তুলনায় ৫৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা প্রায় ৬ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
এর আগে সদ্যবিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠিয়েছেন প্রায় ২৮১ কোটি ৮০ লাখ (২ দশমিক ৮২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার বেশি। আর প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ১১৪৭ কোটি টাকা।
একক কোনো মাস হিসেবে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। গত মে মাসে দেশে এসেছে ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তারও আগে গত মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল।
বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে (জুলাই থেকে জুন) মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এরপর আগস্টে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, নভেম্বরে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ডলার, মে মাসে ২৯৭ কোটি ডলার ও জুনে রেমিট্যান্স এসেছে ২৮২ কোটি ডলার।
অর্থনীতি
বাংলাদেশের শুল্ক কমার সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে: বাণিজ্য সচিব

বাংলাদেশের ওপর আরোপিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ) কমানোর বিষয়ে চূড়ান্ত দরকষাকষির প্রথম দিনে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।
ওয়াশিংটন থেকে বুধবার (৩০ জুলাই) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় তিনি বলেন, ‘এজেন্ডা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ২৯ জুলাই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে এবং বাংলাদেশের ওপর আরোপিত ট্যারিফ কমানো হবে বলে আমরা ইউনাইটেড স্টেটাস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ধারণা পেয়েছি।’
বাণিজ্য সচিব আরও বলেন, ‘আমাদের শুল্ক যথেষ্ট পরিমাণ কমবে। তবে কত হবে, তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। আজ ও আগামীকালও আমাদের মিটিং আছে। বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু হবে বলে আশা করছি।’
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক ইস্যু নিয়ে তৃতীয় ধাপের প্রথম দিনের আলোচনা শেষ হয়েছে। এ আলোচনা শুরু হয় বাংলাদেশ সময় গত রাত সাড়ে ৩ টায়।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। সঙ্গে আছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাওসার চৌধুরী। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্বে আছেন সহকারী ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ব্রেন্ডন লিঞ্চ। সঙ্গে আছেন বাণিজ্য ও শুল্ক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
শুল্ক আলোচনার পুরো বিষয়টি সমন্বয় করছে বাংলাদেশ দূতাবাস, ওয়াশিংটন ডিসি।
মার্কিন পাল্টা শুল্ক কমাতে চূড়ান্ত দফার আলোচনার আগে আগে দুদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দেশটি থেকে আগামী এক বছরের মধ্যে ১.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের গম, ডাল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। এ শুল্কহার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
সরকার ইতিমধ্যে জি-টু-জি ভিত্তিতে বছরে ৭ লাখ টন গম কেনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করেছে এবং ২.২০ লাখ টন গম কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এর বাইরে সরকারিভাবে এলএনজি আমদানি বাড়ানোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার পরিকল্পনা করছে সরকার।
এসবের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ১.৫ থেকে ২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বাড়াতে তুলা, গম, সয়াবিন ও ডাল আমদানিকারকদের একটি প্রতিনিধিদলও যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন।
সোমবার (২৮ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার আগে বাণিজ্য সচিব বলেন, বাংলাদেশ নতুন করে যে পরিমাণ আমদানির পরিকল্পনা করছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি ৩ বিলিয়ন ডলার বাড়বে।
‘আমরা আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে ১.৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। বাকিটা বেসরকারি খাত আমদানি করবে,’ বলেন তিনি।
বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে আজ মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। দেশের টেক্সটাইল মিলগুলো তুলা আমদানি করে সুতা ও ফ্যাব্রিক উৎপাদন করে। এছাড়া সয়াবিন, গম ও ডালের শীর্ষ আমদানিকারক টিকে গ্রুপ, মেঘনা ও সিটি গ্রুপ থেকেও প্রতিনিধি যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে।
বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধিদল একদিকে ইউএসটিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে দরকষাকষি করবে, অন্যদিকে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদল মার্কিন রপ্তানিকারকদের সঙ্গে ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করতে বৈঠক করবে বলে জানান বাণিজ্য সচিব। সূত্র: টিবিএস।