শিল্প-বাণিজ্য
বিশ্ববাজারে টানা দুই বছর কমবে পণ্যের দাম

বিশ্ববাজারে এ বছর পণ্যের দাম নিম্নমুখী থাকবে, একই ধারাবাহিকতায় আগামী বছরও দাম কমবে। তবে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে বা যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে দাম বেড়ে যেতে পারে। পণ্যবাজার নিয়ে বিশ্বব্যাংকের এক পূর্বাভাসে এমন দাবি করা হয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমবে ৩ শতাংশ, ২০২৫ সালে কমবে ৪ শতাংশ।
তবে এ দাম এখনো ২০১৫ এবং করোনা-পূর্ববর্তী ২০২০ সালের গড় দামের চেয়ে ৩৮ শতাংশ বেশি। যদিও ২০২৪ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে ২ শতাংশ এবং সোনা ও তামার দাম বাড়বে যথাক্রমে ৮ শতাংশ ও ৫ শতাংশ। পূর্বাভাসে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০২২ সালের মধ্যভাগ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যভাগ পর্যন্ত বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমেছে ৪০ শতাংশ। এর মধ্যে রয়েছে তেল, গ্যাস ও গম। এর ফলে ওই সময়ে বিশ্ববাজারে মূল্যস্ফীতি কমেছিল ২ শতাংশীয় পয়েন্ট।
পূর্বাভাসে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় আবশ্যকীয় পণ্যের বাজারে উচ্চমুখী চাপ তৈরি করেছে। বিশেষত তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ছে। এর পাশাপাশি তামার দাম বেড়েও দুই বছরে সর্বোচ্চ হয়েছে। এতে সরবরাহ উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
এদিকে বিশ্ববাজারে বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের জন্য এই সুখবর খুব বেশি স্বস্তির বার্তা বয়ে আনতে পারবে না। কারণ জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, তুলার মতো বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান আমদানি পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়বে বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে দেশে আগামী দু-এক বছর মূল্যস্ফীতি কতটা কমবে তা নিয়ে সংশয় আছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, ওই ১০টি পণ্যের মধ্যে ছয়টি পণ্যের দাম কমবে, আর বাকি চারটির দাম বাড়বে।
দাম কমতে পারে এমন ছয়টি পণ্য হলো ইউরিয়া সার, কয়লা, এলএনজি, চিনি, গম ও ভুট্টা। আর দাম বাড়তে পারে জ্বালানি তেল, পামতেল, সয়াবিন তেল ও তুলার। দেশের প্রধান আমদানি পণ্য তালিকায় এই ১০টি পণ্য বিশাল জায়গা দখল করে আছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২৩ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের গড় দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি সাড়ে ৮২ ডলার। চলতি বছরে তা বেড়ে ৮৪ ডলার হতে পারে। তবে আগামী বছর তা কমে ৭৯ ডলার হতে পারে। জ্বালানি তেল আমদানিতেই সরকার সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের হিসাবে ৪৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানি হয়েছিল। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, এ বছর এই খরচ আরো বাড়তে পারে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ আমদানিপণ্য হলো তুলা। এটি বস্ত্র খাতের মূল কাঁচামাল। বিশ্বব্যাংক বলছে, আগামী দুই বছর তুলার দাম বাড়বে। এ বছর প্রতি কেজি তুলার দাম উঠতে পারে ২.১৫ ডলারে। আগামী বছর তা আরো পাঁচ সেন্ট বাড়তে পারে। গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের তুলা আমদানি হয়েছে।
পামতেল ও সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, চলতি বছরে প্রতি টন পামতেলের দাম ২০-২১ ডলার বাড়তে পারে। প্রতি টন তেলের গড় দাম হতে পারে ৯০৫ ডলার। অন্যদিকে সয়াবিন তেলের দামও বাড়ার কথা বলছে বিশ্বব্যাংক। বর্তমানের টনপ্রতি এক হাজার ১১৯ ডলার থেকে বেড়ে এক হাজার ১৩০ ডলার হতে পারে সয়াবিন তেলের দাম। দেশে প্রতিবছর গড়ে ৩০-৩৫ লাখ টন পামতেল ও সয়াবিন তেল আমদানি হয়। গত অর্থবছরে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার পামতেল ও সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে কোন পণ্যের কত দাম কমছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরিয়া সারের দাম টনপ্রতি ৩৫৮ ডলার থেকে কমে ৩৫০ ডলার হতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার সার আমদানি হয়েছে। এবার একটু কম খরচ হতে পারে। একইভাবে এলএনজি এবং কয়লার দামও কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, কয়লার দাম ব্যাপক কমতে পারে। ২০২৩ সালে প্রতি টন কয়লার গড় দাম ছিল প্রায় ১৭৩ ডলার। চলতি অর্থবছরে এর গড় দাম হতে পারে ১২৫ ডলার। অন্যদিকে প্রতি বিএমএমটিইউ এলএনজির দাম ১৪ ডলার থেকে কমে সাড়ে ১২ ডলার হতে পারে।
চিনি হলো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নিত্যপণ্য। দেশে চিনির চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানি করে মেটাতে হয়। বিশ্বব্যাংক বলছে, চিনিতে সুখবর আছে। প্রতি কেজি ০.৫২ থেকে কমে ০.৫০ ডলার হতে পারে। একইভাবে প্রতি টন গমের দামও ৩৪০ থেকে কমে ২৯০ ডলার হতে পারে। পোলট্রি ফিডের জন্য বিপুল পরিমাণ ভুট্টা আমদানি করা হয় বাংলাদেশে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভুট্টার দামও কমতে পারে।

অর্থনীতি
চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন মাশুল কার্যকর, গড়ে খরচ বাড়লো ৪১ শতাংশ

চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন মাশুল নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ গেজেট প্রকাশিত হয়। নতুন এ মাশুল সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে কার্যকর হবে বলে গেজেটে উল্লেখ করা হয়।
প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী, প্রত্যেকবার বন্দর এলাকায় প্রবেশের জন্য প্রতি গ্রজ টনের জন্য পয়েন্ট ৩০৬ ডলার, পোর্ট লিমিটের মধ্যে লাইটার ও ট্যাংকারের ভ্যাসেল ওয়ার্কিং চার্জ ধরা হয়েছে প্রতি গ্রজ টনে পয়েন্ট জিরো ১৭ ডলার। এরসঙ্গে ডেঞ্জারাজ গুডস ভ্যাসেলের ক্ষেত্রে ঘোষিত চার্জের ২৫ শতাংশ, ডেড ভ্যাসেলের জন্য ৫০ শতাংশ, লাইটারেজের জন্য ৫০ শতাংশ, ডিলে/ওভার স্টে চার্জ হিসেবে ৫ শতাংশ অতিরিক্ত মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে।
বন্দরে জাহাজ প্রবেশের জন্য জাহাজের প্রতি মুভমেন্টের জন্য সর্বনিম্ন পাইলটিং চার্জ ধরা হয়েছে ৮০০ ডলার। তাছাড়া ১০ হাজার গ্রজ টনের উপরের ভ্যাসেলের জন্য প্রতি গ্রজটনে পয়েন্ট জিরো ৮ ডলার চার্জ ধরা হয়েছে। এরসঙ্গে ব্রেকিং জার্নি হলে ঘোষিত চার্জের সঙ্গে ৫০ শতাংশ, ডেড ভ্যাসেলের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ, প্রবেশ বাতিলের জন্য প্রতিবারের জন্য ২০০ ডলার, নাইট নেভিগেশন ভ্যাসেলের জন্য ২৫ শতাংশ, বার্থ শিফটিংয়ের জন্য প্রতি মুভমেন্টে ৮০ ডলার, কর্ণফুলী নদীর বাইরের অংশে পাইলটিংয়ের জন্য ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত মাশুল নির্ধারণ করা হয়।
টাগ ব্যবহারের চার্জ হিসেবে প্রত্যেক মুভমেন্টে প্রতি ২০০টন থেকে ৫ হাজার গ্রজটনের জন্য কর্ণফুলী নদীর মধ্যে ৬১৫ ডলার, বাইরে ১২৩০ ডলার, ৫০০০ টন থেকে ১০ হাজার গ্রজটনের জন্য কর্ণফুলীর মধ্যে ১২৩০ ডলার, বাইরে ২৪৬০ ডলার, ১০হাজার থেকে ২০ হাজার গ্রজটনের জন্য ভেতরে ২০৫০ ডলার, বাইরে ৪১০০ ডলার এবং ২০ হাজার গ্রজটনের ওপরের জন্য ভেতরে ৩৪১৫ ডলার ও বাইরের জন্য ৬৮৩০ ডলার নির্ধারণ করা হয়। এরসঙ্গে ডিজেবল কিংবা ডেব ভ্যাসেলের ক্ষেত্রে মূল চার্জের বাইরে ১০০ শতাংশ. বাতিলের জন্য ৫০ শতাংশ, শিফটিংয়ের জন্য ৫০ শতাংশ, কর্ণফুলী নদীর মধ্যে ৪ ঘণ্টার বেশি সার্ভিসের জন্য ২৫ শতাংশ, কর্ণফুলী নদীর বাইরে ৬ ঘণ্টার বেশি সার্ভিসের জন্য ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত চার্জ ধরা হয়েছে।
জাহাজ বন্দরের জেটিতে বার্থিংয়ের জন্য প্রতি গ্রজটনে প্রতি ঘণ্টায় পয়েন্ট জিরো জিরো ৪ ডলার, প্রতিবারে বার্থিং আনবার্থিংয়ের জন্য ৯৪ পয়েন্ট ৩২ ডলার, সমুদ্রগামী জাহাজের ক্ষেত্রে প্রতি জাহাজে দৈনিক ২২৪ দশমিক ৮৫ ডলার এবং সমুদ্রগামী নন এমন জাহাজের ক্ষেত্রে জাহাজপ্রতি দৈনিক ২২ দশমিক ৪৯ ডলার মাশুল নির্ধারণ করা হয়। এরসঙ্গে নোটিশ করার পর বার্থ ত্যাগ না করলে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ১০০ শতাংশ ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ৩০০ শতাংশ, ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ৪০০ শতাংশ, ৩৬ ঘণ্টার বেশি ডিলে করলে ৯০০ শতাংশ অতিরিক্ত চার্জ নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে শিফটিংয়ের জন্য প্রতিবারে ৪৭ দশমিক ১৬ ডলার মাশুল ধরা হয়।
জাহাজে পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে মেইন সাপ্লাই লাইন থেকে প্রতি ১০০০ লিটারের জন্য ২ দশমিক ৯২ ডলার, বন্দরের লরি দিয়ে (৫ কিলোমিটারের নীচে) প্রতি ১০০০ লিটারের জন্য ৬ পয়েন্ট ২৩ ডলার, ৫ কিলোমিটারের উপরে প্রতি ১০০০ লিটারের জন্য ৮ দশমিক ২৩ ডলার, বন্দরের ওয়াটার বোট ব্যবহার করে কর্ণফুলী নদীর মধ্যে প্রতি ১০০০ লিটারের জন্য ১২ দশমিক ৪৬ ডলার এবং পতেঙ্গা লাইট হাউজ থেকে ৭ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে ১০০০ লিটারের জন্য ১৮ দশমিক ৬৯ ডলার, পতেঙ্গা লাইট হাউজ থেকে ৭ নটিক্যাল মাইলের বাইরে প্রতি ১০০০ লিটারের জন্য ২৪ দশমিক ৯৬ ডলার এবং বন্দরের বাইরের কোন পক্ষ থেকে পানি সরবরাহ নিলে প্রতি ১০০০ লিটারে ওয়াসার দরের ২০ শতাংশ বেশি হারে ওভারহেড চার্জ ধরা হয়েছে।
ওয়েস্ট হ্যান্ডলিং চার্জের ক্ষেত্রে কর্ণফুলী নদীর মধ্যে স্বল্পদূরত্বে প্রতিবারের সেবায় ২৪৫৬ দশমিক ৯৯ ডলার, কর্ণফুলী নদীর বাইরে প্রতিট্রিপের সেবায় ৪০৬৩ দশমিক ১৫ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
বন্দরের ক্রেন ব্যবহারের জন্য (কী গ্যান্ট্রি, মোবাইল হার্বার, একই ধরণের অন্য যন্ত্র) প্রতি মুভমেন্টে পণ্যভর্তি কন্টেইনার প্রতি ২১ ফুটের নীচে ২০ দশমিক ৮০ ডলার, ২১ থেকে ৪০ ফুটের জন্য ৩১ দশমিক ২০ ডলার এবং ৪০ ফুটের উপরের জন্য ৩৫ দশমিক ১০ ডলার, খালি কন্টেইনারের ক্ষেত্রে প্রতি ২১ ফুটের নীচে ১০ দশমিক ৪০ ডলার, ২১ থেকে ৪০ ফুটের জন্য ১৫ দশমিক ৬০ ডলার এবং ৪০ ফুটের উপরের জন্য ১৭ দশমিক ৫৫ ডলার, জেটি ক্রেন ব্যবহারের জন্য ক্রেনপ্রতি প্রতি ৮ ঘণ্টার জন্য ১০ টনের নীচে ৫৮ দশমিক ২৪ ডলার, ১০ থেকে ৪০ টনের জন্য ১৭৪ দশমিক ৭২ ডলার এবং ৪০ টনের উপরে ২৯১ দশমিক ২০ ডলার এবং হ্যাজ কভারের জন্য প্রতিবারে প্রতি প্যানটনে ৩৫ দশমিক ১০ ডলার চার্জ নির্ধারণ করা হয়।
শিল্প-বাণিজ্য
যুক্তরাষ্ট্রে ৭ মাসে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২২ শতাংশ

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পাল্টা শুল্ক পুরোপুরি কার্যকর হয়েছে গত মাসে। এর আগে গত জানুয়ারি থেকে জুলাই (সাত মাসে) এই বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এই হার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ পাঁচ রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।
চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ থেকে ৪৯৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। শুধু জুলাইয়ে রপ্তানি হয়েছে ৭০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৪ হাজার ৫৮০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি।
গত ৩১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানির ওপর সংশোধিত পাল্টা শুল্কহার ঘোষণা করে। গত ৭ আগস্ট এই শুল্কহার কার্যকর হয়। সংশোধিত হার অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বসেছে। ভারতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে হারটি দাঁড়িয়েছে ২৫ শতাংশ। আর ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের পাল্টা শুল্কের হার ১৯ শতাংশ। এখন পর্যন্ত চীনের পণ্যে পাল্টা শুল্ক ৩০ শতাংশ।
একাধিক তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক বলেন, চীনের হারানো ক্রয়াদেশের একটা অংশ বাংলাদেশে আসছে। ছয় থেকে আট মাস ধরে তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। পাল্টা শুল্কের কারণে সামনের মৌসুম থেকে আরও বাড়তি ক্রয়াদেশ আসতে পারে। যদিও কোনো কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাড়তি শুল্কের একটি অংশ বহন করতে রপ্তানিকারকদের চাপ দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দীর্ঘদিন ধরে চীন শীর্ষস্থানে থাকলেও উভয় দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে সেই জায়গাটি দখলে নিয়েছে ভিয়েতনাম। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ভিয়েতনাম ৯৪৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি। শুধু জুলাইয়ে ভিয়েতনাম ১৬৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে চীন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ে চীন ৬৯২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ শতাংশ কম। শুধু জুলাইয়ে চীন ১১৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানি গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় ৩৮ শতাংশ কম। শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে চীনের রপ্তানিই সবচেয়ে বেশি কমেছে।
অটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চতুর্থ শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক ভারত চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ৩৩১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ২৬৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ।
বাংলাদেশের একাধিক উদ্যোক্তা জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে জড়ায়। তখন থেকেই চীন থেকে অল্প অল্প ক্রয়াদেশ সরছে। গত বছর নির্বাচনী প্রচারণায় চীনের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের অনেকে বাংলাদেশে বাড়তি ক্রয়াদেশ দেওয়া শুরু করে। সে জন্য দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়তে থাকে।
বাংলাদেশের শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি অনন্ত গ্রুপ। গত অর্থবছরে শিল্প গ্রুপটির ছয়টি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ৪৬ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে।
জানতে চাইলে অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির বলেন, মার্কিন ক্রেতাদের কেউ কেউ আমাদের কাছে বাড়তি পাল্টা শুল্কের একটি অংশ দাবি করছেন। শুধু তা–ই নয়, মিসর, হাইতির যেসব দেশে পাল্টা শুল্ক কম সেসব দেশে আমাদের উৎপাদন ইউনিট স্থাপনের পরামর্শ দিচ্ছে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা অন্য দেশের উদ্যোক্তাদেরও একই প্রস্তাব দিচ্ছে। ফলে সামনের দিনে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। এই রপ্তানি ২০২৩ সালের তুলনায় দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। যদিও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ২০২৩ সালে রপ্তানি কমেছিল ২৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছিল ৭২৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।
শিল্প-বাণিজ্য
তিন বছর পর হিলি দিয়ে টমেটো আমদানি শুরু

টানা তিন বছর বন্ধের পর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে টমেটো আমদানি শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামের বড় বাজার নামক একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে এসব টমেটো আমদানি করছে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ভারত থেকে টমেটোবোঝাই একটি ট্রাক হিলি বন্দরে প্রবেশের মধ্যদিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রথমদিন ২৮ টন টমেটো আমদানি হয়েছে। প্রতিকেজি টমেটো শুল্কসহ আমদানি খরচ গুনতে হচ্ছে ৬১ টাকা।
আমদানিকারক এনামুল হক বলেন, দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে এসব টমেটো আমদানি করা হচ্ছে। বন্দরে প্রতিকেজি টমেটো ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা থাকলে আরও বেশি পরিমাণ আমদানি করা হবে।
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে এক ট্রাকে ২৮ টন টমেটো আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত এসব টমেটো ৫০০ ডলারে শুল্কায়ন করা হচ্ছে। যেহেতু টমেটো কাঁচাপণ্য তাই দ্রুত ছাড়করণে আমদানিকারককে সবধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
হিলি উদ্ভিদ সংগোনিরোধের তথ্যমতে, ২০২২ সালের ৬ আগস্ট সবশেষ এ বন্দর দিয়ে টমেটো আমদানি হয়েছিল।
শিল্প-বাণিজ্য
বেনাপোল দিয়ে চাল আমদানি শুরু, দাম কমার আশা

চার মাস বন্ধ থাকার পর আবারও বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। এতে দেশের বাজারে চালের দাম কমে আসবে বলে দাবি আমদানিকারকদের।
প্রথম চালানে বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে ভারতীয় ৯টি ট্রাকে ৩১৫ মেট্রিক টন চাল বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে। বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বেনাপোলের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাজি মুসা করিম অ্যান্ড সন্স এসব চাল আমদানি করেছে। এতে রপ্তানিকারক ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুধর্ম আয়াতনিরিয়াত প্রাইভেট লিমিটেড।
জানা গেছে, প্রতিকেজি চালের আমদানি মূল্য ধরা হয়েছে শূন্য দশমিক ৪০৫ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫১ টাকার সমান। বাজারজাত করতে এর সঙ্গে পরিবহন, সরকারি শুল্ক, গুদামভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ যুক্ত হবে।
বেনাপোল বন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাজী মুসা করিম অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সামাদ জানান, গত মঙ্গলবার থেকে ভারতীয় ৯ ট্রাক ভর্তি ৩১৫ মেট্রিক টন মোটা চাল আমদানির জন্য ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে অপেক্ষায় ছিল। এসব চাল বৃহস্পতিবার বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে। পেট্রাপোল বন্দরে আরও চাল বোঝাই ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। শনিবার বেনাপোল কাস্টমসে বিল অফ এন্ট্রি জমা দিয়ে ওই চাল ছাড় করার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি আরও জানান, দেশের বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমতি দিতে ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে আবেদন আহ্বান করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের ২৩ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন করার শেষ সময় ছিল। সারাদেশের মতো বেনাপোল স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা চাল আমদানির অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। বেনাপোল স্থলবন্দরের বেশ কয়েকজন আমদানিকারক চালের বরাদ্দ পেয়েছেন। আমদানির অনুমতিপত্র বা আইপি পাওয়ার পর অনেকে এলসি খুলেছেন। যার বিপরীতে বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হয়েছে।
তিনি জানান, আমদানির অনুমতিপ্রাপ্ত আরও আমদানিকারকরা পর্যায়ক্রমে এলসি খুলছেন। ফলে রোববার (২৪ আগস্ট) থেকে চাল আমদানি বাড়তে পারে। চাল আমদানির ফলে দেশের বাজারে চালের দাম কমে আসবে। কেজি প্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা দাম কমে যাবে। ভালো মানের চিকন জাতের চাল ৬৭ থেকে শুরু করে ৭০ টাকার মধ্যে থাকবে। স্বর্ণা জাতের চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকার মধ্যে থাকবে বলেও জানান তিনি।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, চার মাস বন্ধ থাকার পর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে আবারও ভারতীয় চাল আমদানি শুরু হয়েছে। বন্ধের পর শুরুর প্রথম দিনে ৯ ট্রাকে ৩১৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। আরও অনেক ট্রাক চাল ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছে।
বেনাপোল উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কর্মকর্তা শ্যামল কুমার নাথ জানান, চলতি বছরের গত ১৫ এপ্রিল এ বন্দর দিয়ে সর্বশেষ চাল আমদানি হয়। বৃহস্পতিবার থেকে আবারো চাল আমদানি শুরু হয়েছে। এদিন ৯টি ট্রাকে ৩১৫ মেট্রিক টন ভারতীয় চাল আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত চালের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুত সনদ প্রদান করা হবে যাতে দ্রুত ছাড়করণ নিতে পারেন।
শিল্প-বাণিজ্য
হিলি স্থলবন্দরে দেড় মাসে আয় ১৮ কোটি টাকা

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চলতি অর্থ বছরের ৩০ জুন থেকে ভারতে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি শুরু হয়েছে। এতে আগের তুলনায় রপ্তানি খাতে বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার আয়। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৯১ টন পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে। যা থেকে ১৭ লাখ ১০ হাজার ৫০০ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ সরকার।
এই বন্দর দিয়ে বিগত কয়েক বছর তেমন কোনো পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়নি। তবে বর্তমান ভারতে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। হিলি স্থলবন্দর মূলত আমদানি নির্ভর হলেও এখানে দিন-দিন বাড়ছে পণ্য রপ্তানি পরিমাণ। এই বন্দর দিয়ে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয় তার বিপরীতে প্রায় ৭০ শতাংশ পণ্যই ভারত থেকে আমদানি হয়ে থাকে। বর্তমানে হিলি বন্দর থেকে রাইস ব্রান (তুষের তেল), টোস্ট বিস্কুট, ম্যাংগো জুস, ঝুট কাপুড়, নুডুলসসহ বিভিন্ন ধরনের বেকারি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। চলতি বছরের ৩০ জুন থেকে আগস্টের ২০ তারিখ পর্যন্ত ২ হাজার ৯১ টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা থেকে ১৭ লাখ ১০ হাজার ৫০০ ডলার আয় এসেছে। যা বাংলা টাকায় প্রায় ১৮ কোটি।
বাংলাহিলি সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি ফেরদৌস রহমান বলেন, সরকারের আয়ের পাশাপাশি এই স্থলবন্দরে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেক শ্রমিক। ভারতের অভ্যন্তরে কিছু সমস্যা সমাধান করা গেলে এখানকার রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা।
এদিকে হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা নিজাম উদ্দীন বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দীর্ঘদিন রপ্তানি বন্ধ থাকলেও বর্তমানে ভারতে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারির পর থেকে আর কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি। পরে চার মাস পর ৩০ জুন থেকে ভারতে আবার পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। কাস্টমসের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।