অর্থনীতি
বাংলাদেশ ও আইডিবির মধ্যে ২৭০ মিলিয়ন ইউরোর ঋণচুক্তি

বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ২৭০ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন ইউরোর ‘রুরাল অ্যান্ড পেরি-আরবান হাউসিং ফাইন্যান্স প্রজেক্ট— সেকেন্ড ফেজ’ শীর্ষক ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণচুক্তি করেছে ইসলামিক ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)। সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত আইডিবির বোর্ড অব গভর্নরসের বার্ষিক সভা এবং আইডিবি গ্রুপের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে ৮ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন। প্রতিনিধিদল চারদিনের এই আয়োজনে সৌদিভিত্তিক বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর সাথে কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক সভায়ও মিলিত হন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ও আইডিবির নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ্রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী অংশ নেন। এ সময়ে আইডিবি গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সোলাইমান আল জাসের, সৌদি ফান্ড ফর ডেভলপমেন্টের (এসএফডি) ডেপুটি চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ইঞ্জিনিয়ার ফয়সাল এম আল খাতনি এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফাইন্যান্সিং কর্পোরেশনের (আইটিএফসি) চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) ও ইসলামিক কো-অপারেশন ফর ডেভেলপমেন্ট অব দ্যা প্রাইভেট সেক্টরের (আইসিডি) ভারপ্রাপ্ত সিইও ইঞ্জিনিয়ার হানি সেলিম সনবলের সাথে পৃথকভাবে দ্বিপাক্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বাংলাদেশের জন্য আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতার ক্ষেত্র বৃদ্ধি, ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার কৌশল নির্ধারণ, নমনীয় ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি ও ঋণের সুদ হ্রাসকরণ, জলবায়ু পরিবর্তনে সহনশীলতা বৃদ্ধিসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে বিদ্যমান সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়।
গত ২৮ এপ্রিল একটি সাইড ইভেন্টে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সাথে আইডিবি গ্রুপের চিফ ইকোনমিস্টের একটি দ্বিপাক্ষিক সভা হয়। যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্য এবং বিশেষত অর্থনৈতিক বহুধাকরণে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা এবং নীতিগত উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত অপর একটি সাইড ইভেন্টে আইডিবি গ্রুপের ‘মেম্বার কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্র্যাটেজি (এমসিপিএস) ফর দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ ২০২৪-২০২৬’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
এমআই

অর্থনীতি
সোনার দাম বাড়লো, ভরি ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৫১ টাকা

দেশের বাজারে নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে সোনার দাম। ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম এবার ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৫১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। বুধবার (২৭ আগস্ট) থেকেই কার্যকর হবে নতুন এ দাম।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পিওর গোল্ড) দাম বাড়ার কারণে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের বাজারে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করেছে বাজুস।
নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, দেশের বাজারে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের সোনার দাম পড়বে ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৫১ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮০১ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৪১ হাজার ২৬৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ১ লাখ ১৬ হাজার ৮৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস আরও জানায়, সোনার বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে, গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।
এর আগে, সবশেষ গত ২৪ জুলাই দেশের বাজারে সোনার দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। সে সময় ভরিতে ১ হাজার ৫৭৪ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৭১ হাজার ৬০১ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি।
এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭৯৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৪০ হাজার ৪০০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ১ লাখ ১৬ হাজার ১২৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা কার্যকর হয়েছিল গত ২৫ জুলাই থেকে।
এ নিয়ে চলতি বছর মোট ৪৬ বার দেশের বাজারে সমন্বয় করা হলো সোনার দাম। যেখানে দাম বাড়ানো হয়েছে ৩০ বার, আর কমানো হয়েছে মাত্র ১৬ বার। আর ২০২৪ সালে দেশের বাজারে মোট ৬২ বার সোনার দাম সমন্বয় করা হয়েছিল। যেখানে ৩৫ বার দাম বাড়ানো হয়েছিল, আর কমানো হয়েছিল ২৭ বার।
সোনার দাম বাড়ানো হলেও দেশের বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। দেশে বর্তমানে ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮১১ টাকায়।
এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপা ২ হাজার ৬৮৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপা ২ হাজার ২৯৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রুপা ১ হাজার ৭২৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বর্তমানে।
অর্থনীতি
পাঁচ মাসে ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে বাংলাদেশ: বিডা

২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে বাংলাদেশ প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর বিডা অডিটোরিয়ামে বিনিয়োগ বিষয়ক সংবাদদাতাদের একটি দলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ তথ্য জানান বিডার ব্যবসায় উন্নয়ন প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি।
বিনিয়োগ প্রস্তাবের প্রবাহকে একটি ইতিবাচক প্রবণতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে প্রাপ্ত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ অগ্রসর পর্যায়ে পৌঁছেছে- যার মধ্যে রয়েছে স্বাক্ষরিত চুক্তি, জমি ইজারা নিশ্চিতকরণ এবং বরাদ্দপত্র।
রোচি বলেন, পরিসংখ্যানগুলো বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে (এসইজেড) বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়, যা সরকারের শিল্পায়ন অভিযানের একটি মূল স্তম্ভ হিসেবে অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মনোযোগ কেবল বিনিয়োগের পরিমাণের ওপর নয় বরং বিনিয়োগের মান এবং স্থায়িত্বের ওপরও। যদি এই গতি অব্যাহত থাকে এবং সুবিধা প্রদান আরও সুগম হয়, তাহলে আগামী পাঁচ মাসে আরও কার্যকর ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, এই প্রবণতা মহামারী-পরবর্তী পুনরুদ্ধার পর্যায়ে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক এবং স্থানীয় ও বিদেশি উভয় বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নতুন করে আস্থা অর্জনের প্রতিফলন ঘটাবে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) মতে, প্রস্তাবিত বিনিয়োগের প্রায় ৬০ শতাংশ বর্তমানে অনুসন্ধানমূলক বা যথাযথ পরিশ্রমের পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন, প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা এবং প্রাথমিক প্রকল্প পরিকল্পনা।
রোচি বলেন, বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ প্রস্তাব অনুসন্ধানমূলক পর্যায়ে শুরু হয় এবং সঠিক সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যায়। আরও ২০ শতাংশ প্রস্তাব এখন আনুষ্ঠানিক নথিভুক্তির আগে গভীরভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগকারীদের প্রশ্নের উত্তরে এবং স্বচ্ছতার প্রয়োজনীয়তার জবাবে বিইজেডএ’র নির্বাহী সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, একটি ইউনিফাইড ইনভেস্টমেন্ট পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মটি বিনিয়োগের অবস্থা, অঞ্চল-নির্দিষ্ট উন্নয়ন, জমির প্রাপ্যতা এবং অনুমোদনের সময়সীমা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য একীভূত করবে।
অর্থনীতি
তিউনিশিয়া-মরক্কো থেকে ৬৫ হাজার টন সার কিনবে সরকার

তিউনিশিয়া থেকে ২৫ হাজার টন টিএসপি এবং মরোক্ক থেকে ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানি করবে সরকার। একই সঙ্গে সার সংরক্ষণ ও বিতরণের সুবিধার্থে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণ করা হবে। এই সার আমদানি ও বাফার গুদাম নির্মাণে ব্যয় হবে ৬১৭ কোটি ৩২ লাখ ২৪ হাজার ২৫২ টাকা।
মঙ্গলবার (২৬ অগস্ট) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থ উপিদেষ্টা দেশের বাইরে থেকে বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তিউনিশিয়ার গ্রুপ চিমিক তিউনিসিয়ান ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে সই হওয়া চুক্তির আওতায় ২৫ হাজার টন টিএসপি সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই সার আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ১৮৪ কোটি ৬৬ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি টনের মূল্য ধরা হয়েছে ৬০২ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আর এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মরক্কোর ওসিপি নিউট্রিক্রপস ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে সই হওয়া চুক্তির আওতায় ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই সার আমদানিতে ব্যয় হবে ৩৮৩ কোটি ১৬ লাখ ৪২ হাজার ৩২০ টাকা। প্রতি টনের মূল্য ধরা হয়েছে ৭৮১ দশমিক ৩৩ মার্কিন ডলার।
এছাড়া বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ‘সার সংরক্ষণ ও বিতরণের সুবিধার্থে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্যাকেজ-৪ এর লট-১ (ভোলা ১০ হাজার টন)- এর অধীন একটি সাইটে গোডাউন নির্মাণ কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ঢাকার হাতিরপুলের প্রতিষ্ঠান এম/এস এমবিএল-আরইএল (জেভি)- এর সঙ্গে এই কাজের জন্য চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৪৯ লাখ ১৯ হাজার ৪৩২ টাকা।
অর্থনীতি
সামিট কমিউনিকেশনের চেয়ারম্যানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সরকারের ১০ কোটি ২৪ লাখ ৫২ হাজার ৬৫২ টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফরিদ খানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ এ মামলাটি করেন। দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মোহাম্মদ ফরিদ খান ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন—লেক্স কাউন্সিলের স্বত্বাধিকারী ও বিটিআরসির প্যানেল আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব, বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, সাবেক কমিশনার (আইন) মো. আমিনুল হক বাবু, সাবেক কমিশনার (স্পেকট্রাম) শেখ রিয়াজ আহমেদ, সাবেক কমিশনার (অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব) ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী ও সাবেক কমিশনার (সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস) মো. দেলোয়ার হোসাইন।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়, বিটিআরসির কর্মকর্তা ও লেক্স কাউন্সিলের প্যানেল আইনজীবীর সহযোগিতায় সামিট কমিউনিকেশনস বেআইনিভাবে ১৪ কোটি ২০ লাখ ৮৮ হাজার ১৩৬টি নতুন অর্ডিনারি শেয়ার ইস্যু করে। যার মধ্যে ৯ কোটি ৪৪ লাখ ৮৮ হাজার ৯১১টি শেয়ার দেওয়া হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক গ্লোবাল এনারিংয়ে, যা মুহাম্মদ আজিজ খান ও তার পরিবারের মালিকানাধীন।
এছাড়া ৪ কোটি ৪ লাখ ৯৫ হাজার ১১৯টি শেয়ার দেওয়া হয় মরিশাসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেকুওয়া ইনফ্রা টেক লিমিটেডকে। বাকি ৭১ লাখ ৪ হাজার ৪০৬টি শেয়ার দেওয়া হয় পূর্বের শেয়ারহোল্ডার মো. আরিফ আল ইসলামের অনুকূলে।
এই শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোম্পানির মূলধন প্রায় চারগুণ বাড়ার পাশাপাশি মোট শেয়ার সংখ্যা ৫ দশমিক ০৭ কোটি থেকে বেড়ে ১৯ দশমিক ২৮ কোটিতে পৌঁছে। ফলে মোহাম্মদ ফরিদ খানের মালিকানা ৯৫ শতাংশ থেকে কমে ২৫ শতাংশে নেমে আসে। অন্যদিকে, দুই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের যৌথ মালিকানা দাঁড়ায় ৭০ শতাংশে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১-এর ধারা ২৪ অনুযায়ী, শেয়ার হস্তান্তর বা মালিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে, বিক্রিত শেয়ারের মূল্যের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ রাজস্ব পরিশোধ করতে হয়। ২০২২ সালে একই কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সরকারি রাজস্ব আদায়ে ওই আইনের প্রয়োগ থাকলেও এক্ষেত্রে আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব সামিট কমিউনিকেশন থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ওই ৫ দশমিক ৫ শতাংশ মূল্য পরিশোধ সামিট কমিউনিকেশনসের জন্য প্রযোজ্য নয় মর্মে মতামত দেন।
দুদক বলছে, আইনজীবীর এ মতামতের ভিত্তিতে বিটিআরসির তৎকালীন চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কমিশনাররা মিলে অবৈধ সুবিধা নিয়ে শেয়ারের অনুমোদন দেন, ফলে সরকার প্রায় ১০ কোটি ২৪ লাখ টাকা রাজস্ব হারায়।
অর্থনীতি
ন্যূনতম কর একটা কালাকানুন: এনবিআর চেয়ারম্যান

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, কোনো সন্দেহ নাই ন্যূনতম কর একটা কালাকানুন। এটা স্বীকার করতেই হবে। বিজনেসে কর হবে মুনাফার ওপর। তা না করে মিনিমাম কর নির্ধারণ করছি। সমস্যা হচ্ছে এগুলো ঠিক করতে গেলে আমাদের কর আহরণ কমে যাবে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে অভিজাত হোটেলে আয়োজিত এক সংলাপে সিপিডি ওই তথ্য প্রকাশ করে। করপোরেট কর ও ভ্যাট সংস্কার শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র গবেষক মো. তামিম আহমেদ। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা আমার একটি নতুন প্রজেক্টে হাত দিয়েছি। আমরা চাই, অটোমেটেড এনবিআর। সবকিছু যদি ডিজিটাল করতে পারি তাহলে বোতাম টিপলেই ভ্যাট রিটার্ন ও কর রিটার্ন হয়ে যাবে। আমাদের অডিট রিপোর্টের কোয়ালিটি নিয়ে বড় প্রশ্ন আছে। অডিটের ঘোষণাগুলো দেখলে বোঝা যায় এখানে প্রকৃত চিত্র উঠে আসে নাই।
তিনি বলেন, বর্তমানে এনবিআরে অডিটের ম্যানুয়াল সিলেকশন বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ অডিট ম্যানুয়াল সিলেকশন হলে একই ব্যক্তি প্রতি বছর অডিটের আওতায় পড়ে যায়। এটা এখানেও এক ভাই অভিযোগ করল। আমরা বলেছি, অডিট সিলেকশন হবে ঝুঁকিকে ভিত্তি করে। এ কারণে আমরা যতদিন পর্যন্ত ডিজিটাল সিস্টেম করতে না পারব, ততদিন ম্যানুয়াল ভ্যাট অডিট বন্ধ থাকবে। দরকার হলে হলে কেয়ামত পর্যন্ত অডিট বন্ধ থাকবে। আমাদের অটোমেটেড করতেই হবে।
করজাল প্রসঙ্গে আবদুর রহমান বলেন, আমরা করের আওতায় যদি বাড়াতে পারি তাহলে আমরা করহার ও ভ্যাট হার কমাতে পারব। কমপ্লায়েন্স যখন করতে পারব ভ্যাটে এক রেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। রিফান্ড অটোমেটিক করদাতার হিসেবে চলে যাওয়া উচিত বলে মনে করি।
তিনি বলেন, ন্যূনতম কর নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কোনো সন্দেহ নাই ন্যূনতম কর একটা কালাকানুন। এটা স্বীকার করতেই হবে। বিজনেসে কর হবে মুনাফার ওপর। তা না করে মিনিমাম কর নির্ধারণ করছি। সমস্যা হচ্ছে এগুলো ঠিক করতে গেলে আমাদের কর আহরণ কমে যাবে। যখন আমরা মোটামুটি সিস্টেমে চলে আসব তখন ওই বাস্তবায়ন করতে পারব। এ বছর আমরা চেষ্টা করেছি প্রচুর ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে। আসলে ব্যবসায়ীদের সহজ করে না দিলে রাজস্ব আহরণ কঠিন হয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে সিপিডির এক গবেষণায় বলা হয়, ৮২ শতাংশ ব্যবসায়ী বর্তমান কর হারকে ‘অন্যায্য’ ও ব্যবসার উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা বলে মনে করেন। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৭৯ শতাংশ কর কর্মকর্তাদের জবাবদিহির অভাবকে বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ৭২ শতাংশ বলেছেন, কর প্রশাসনে দুর্নীতি তাদের জন্য প্রধান প্রতিবন্ধকতা।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে অবস্থিত ১২৩টি প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিচালিত এ সমীক্ষায় আরও দেখা যায়, ৬৫ শতাংশ ব্যবসায়ী নিয়মিত কর দাবিকে কেন্দ্র করে কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, যথাযথ ব্যাখ্যা বা পূর্বাভাস ছাড়াই কর কর্মকর্তারা অনেক সময় ইচ্ছেমতো কর আরোপ করেন।
ভ্যাট বিষয়ে অংশগ্রহণকারী ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, জটিল ভ্যাট আইন তাদের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা। এ ছাড়া অস্পষ্ট ভ্যাট নীতিমালা, কর কর্মকর্তাদের সীমিত সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ ও সচেতনতার ঘাটতি, পণ্য ও সেবার শ্রেণিবিন্যাসে জটিলতা এবং উচ্চ অনুবর্তন ব্যয় ব্যবসায়ীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এন্টারপ্রাইজ সার্ভের কাঠামো অনুসরণ করে পরিচালিত এ ভ্যাট সমীক্ষায় ঢাকা ও আশপাশের জেলাসহ মোট ৩৮৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।