জাতীয়
জিম্মিদশার ৩১ দিনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন
সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে ৩১ দিন জিম্মি থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিক। গত শনিবার দিবাগত রাতে চট্টগ্রামের কেএসআরএম গ্রুপের এই জিম্মি জাহাজ থেকে নেমে যায় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। কীভাবে কাটলো ৩১ দিন। সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন জাহাজের মাস্টার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ। মঙ্গলবার হোয়াটসঅ্যাপে গণমাধ্যমের কাছে জিম্মিদশার বর্ণনা দেন তিনি।
ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, মার্চের ১২ তারিখ সকালে ২৩ বাংলাদেশি নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ নীল সাগরে ছুটে চলছিল। কেবিনে অফিসের কাজ সেরে সকাল সাড়ে ৯টায় জাহাজ পরিচালনা কক্ষ- ব্রিজ থেকে মাস্টারের চেয়ারে গিয়ে বসি। বসেই জাহাজের দায়িত্বে থাকা তৃতীয় কর্মকর্তাকে বলি, সব ঠিকঠাক আছে তো?
মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে কয়লা বোঝাই করে সোমালিয়ার উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগর হয়ে যাওয়ার পথে তৃতীয় কর্মকর্তা জানালেন, ‘স্যার, জাহাজের ডান পাশে অনেক দূরে একটি ফিশিং বোট দেখা যাচ্ছে।’
দৃশ্যমান সেই ফিশিং বোট থেকে ব্যবধান বাড়িয়ে দিতে জাহাজটি বাঁয়ে ঘুরিয়ে দিয়ে নৌযানটি আমরা পর্যবেক্ষণ শুরু করি। হঠাৎ করে দেখি, নৌযান থেকে একটি স্পিডবোট সাগরে ভাসানো হয়েছে। তখনই আমরা নিশ্চিত হয়ে যাই, জলদস্যুরা আসছে। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে কয়লাবোঝাই থাকায় আমাদের গতি ছিল কম। ঘণ্টায় সাড়ে ১০ নটিক্যাল মাইল।
স্পিডবোটটি কাছাকাছি চলে এলে ঢেউ সৃষ্টি করে এবং উচ্চচাপে পানি ছিটিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। আবার ডানে-বাঁয়ে জাহাজ ঘুরিয়ে স্পিডবোটটির গতি কমানোর চেষ্টা শুরু করি। এ সময় যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনে যোগাযোগ করি। সেখানে কেউ ফোন ধরেননি। সে সময় যোগাযোগ করে কাছাকাছি কোনো যুদ্ধজাহাজও পাইনি।
জলদস্যুরা উঠে যাবে বুঝতে পেরে আমরা জাহাজের সুরক্ষিত কক্ষ- সিটাডেলে আশ্রয় নেওয়ার শেষ চেষ্টা করি। নাবিকের সিটাডেলে যাওয়ার নির্দেশ দিই। তবে চারজন জলদস্যু অস্বাভাবিক গতিতে ব্রিজে ওঠে পড়তে সক্ষম হয়। তারা প্রথমে দ্বিতীয় কর্মকর্তার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ‘মাস্টার মাস্টার’ বলে চিৎকার করে। আমাকে খুঁজতে থাকে। দ্বিতীয় কর্মকর্তা ভয় পেয়ে যান। আমি দ্রুত সেখানে চলে এসে হাত তুলি। তখনই জলদস্যুরা ‘অল ক্রু’ বলে চিৎকার করতে থাকে।
এরপরই আমি সব নাবিককে ব্রিজে চলে আসার নির্দেশ দিই। নাবিকরা শুরুতে বেশ ভয় পেয়ে যান। জলদস্যুরা জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ করার কথা বলে। ইঞ্জিন বন্ধ করার পর মাছ ধরার নৌযানটি আমাদের জাহাজের সঙ্গে বাঁধা হয়। ওই নৌযানে একজন পাকিস্তানি এবং বাকিরা ছিলেন ইরানের জেলে। নৌযানে থাকা সব জলদস্যু জাহাজে ওঠে। মোট ১২ জন সশস্ত্র জলদস্যু আমাদের জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। আমাদের কাছ থেকে মুঠোফোন কেড়ে নিলেও ল্যাপটপ ও কয়েকটি মুঠোফোন আমরা লুকিয়ে রেখেছিলাম। এ সময় জলদস্যুরা আনন্দ উল্লাস করতে থাকে। ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর থেকে জলদস্যুদের নির্দেশনায় চলতে থাকে জাহাজটি। এবার তাদের নির্দেশে আমরা এমভি আবদুল্লাহর ইঞ্জিন চালু করি। সোমালিয়ার উপকূলের দিকে যাওয়ার নির্দেশনা দেয় জলদস্যুরা। সে সময় একজন জলদস্যু একটি নম্বরে যোগাযোগ করতে বলে। কল দেওয়ার পর ‘আহমেদ’ পরিচয় দিয়ে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘হাউ আর ইউ ক্যাপ্টেন এভরিথিং ইজ ওকে’ এরপরই জাহাজটি কীভাবে কোথায় নিতে হবে, তার পথনির্দেশনা দিয়ে দেয় জলদস্যুনেতা। সে অনুযায়ী জাহাজ চলতে থাকে।
রোজার দ্বিতীয় দিনে ইফতারের আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অপারেশন আটলান্টার একটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহর পিছু নেয়। যুদ্ধজাহাজ থেকে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ভিএইচএফে জলদস্যুদের নির্দেশনা দেওয়া হয়, ‘তোমরা জাহাজ ছেড়ে যাও। না হলে অভিযান চালানো হবে।’ নির্দেশনায় কোনো কাজ হয়নি। যুদ্ধজাহাজ থেকে একটি হেলিকপ্টার আকাশে ওড়ানো হয়। একপর্যায়ে এমভি আবদুল্লাহর চারপাশে পানিতে হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ করা হয়। তাতেও কোনো কাজ হয়নি।
যুদ্ধজাহাজ যাতে দ্রুত চলে যায়, তা বলার জন্য আমাকে জলদস্যুরা ভয় দেখায় অস্ত্র তাক করে। আমি ভিএইচএফে জানাই, ‘আমরা অস্ত্রের মুখে আছি। তোমরা দূরে চলে যাও। প্রায় আধা ঘণ্টা পর যুদ্ধজাহাজ দূরে চলে যায়। যুদ্ধজাহাজ পিছু নেওয়ায় দুই দফা নোঙর তুলে তৃতীয় দফায় সোমালিয়া উপকূলের জেফলের দিকে এমভি আবদুল্লাহকে নিয়ে যায় জলদস্যুরা।
তিনি বলেন, মোট ৩৫ জন জলদস্যু জাহাজে ওঠে। যুদ্ধজাহাজ পিছু নেওয়ায় জলদস্যুরা জাহাজে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসে। রকেট লঞ্চার, মেশিনগান, এম-সিক্সটিনসহ নানা রকমের অস্ত্র। মনে হয়েছে, যেন যুদ্ধক্ষেত্রে আছি। জলদস্যুদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার না করে উপায় নেই। ভালো ব্যবহার করায় তারা আমাদের কেবিনে থাকার সুযোগ দেয়। কবে মুক্তি পাবো, মনে মনে শুধু সেই ভাবনা ভিড় করে।
আমরা ১৬ জানুয়ারি জাহাজ নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম। পথে শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দর হয়ে মোজাম্বিকের মাপুতো থেকে কয়লা বোঝাই করেছিলাম।
চট্টগ্রাম ছেড়ে যাওয়ার আগে প্রায় ১৪ লাখ টাকার বাজারসদাইয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল জাহাজটির মালিকপক্ষ এসআর শিপিং (কেএসআরএম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান)। জাহাজে তিন মাসের খাবার ছিল। জলদস্যুরা জাহাজে দুম্বা নিয়ে আসত। গরম পানিতে সেদ্ধ করে লবণ ও কিছু মসলা মিশিয়ে তারা তা খেতো। এগুলো আমাদের জন্য খাওয়ার অযোগ্য ছিল। একপর্যায়ে তারা নিজেদের রান্না করার জন্য লোক নিয়ে আসে জাহাজে। আমরা ইফতারের সময় লেবুসহ নানা ধরনের শরবত পান করতাম। সেহরিতে ভাতের পাশাপাশি দুধ থাকতো। জাহাজে পানি শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়ব—এমন আশঙ্কায় শুধু খাবার পানি সরবরাহ ঠিক রাখতাম আমরা।
এদিকে, গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দেখে জলদস্যুরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়। তাদের সন্দেহ হয়, নিশ্চয়ই নাবিকদের কাছে মুঠোফোন আছে। আহমেদ বলতে থাকে, ‘তোরা এই ছবি পাঠিয়েছিস’ পরে আমরা বলি, ‘মুঠোফোন নয়, ল্যাপটপ দিয়ে ছবি পাঠানো হয়েছে।’ পরে ল্যাপটপ কেড়ে নেয় জলদস্যুরা।
জলদস্যুদের ভিডিও করার বর্ণনা দিয়ে মোহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, মুক্তি পাওয়ার দুই দিন আগে হঠাৎ আহমেদ এসে সবাইকে ডেকে নিয়ে দাঁড়াতে বলে। সে আমাদের ভিডিও করতে শুরু করে। তার কথা অনুযায়ী, আমি নাবিকদের নাম জিজ্ঞাসা করে পরিচয় করে দিই। শুনেছি, এই ভিডিও তারা কেএসআরএম গ্রুপের কাছে পাঠিয়েছে। আমরা যে সুস্থ আছি, তা দেখতে চেয়েছে কেএসআরএম গ্রুপ। আমাদের মনে তখন আশার সঞ্চার হয়। এর দুদিন পর আবার সব নাবিককে ডেকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখে জলদস্যুরা। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দেখি, ছোট আকারের একটি উড়োজাহাজ আসছে। অদূরে দুটি যুদ্ধজাহাজ। আমরা ভয় পেয়ে যাই। কারণ, তখন এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে ৬৫ জন জলদস্যু। তাদের কাছে ভারী অস্ত্রশস্ত্র আছে।
জলদস্যুদের নির্দেশে এমভি আবদুল্লাহর নোঙর তুলে পেছনের দিকে সরিয়ে নিতে থাকি। জাহাজ পেছনের দিকে সরিয়ে নেওয়া হতে থাকে। একপর্যায়ে দেখতে পাই, রাতে তীর থেকে জাহাজের দিকে আলো ফেলে ইশারা দেওয়া হচ্ছে। জলদস্যুদের নির্দেশে জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ করা হয়। এ সময় পাঁচটি স্পিডবোটে করে সব জলদস্যু অস্ত্রসহ জাহাজ থেকে নেমে যায়। তখন সোমালিয়ার সময় ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টা ৮ মিনিট অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল প্রথম প্রহর।
জলদস্যুরা নেমে যাওয়ার পর জাহাজটি ঘুরিয়ে সোমালিয়া উপকূল ত্যাগ করতে শুরু করি। সবাই পরিবার ও স্বজনদের কাছে মুক্তির বার্তা দিতে ধাকে। এ সময় সবার মধ্যে জীবন ফিরে পাওয়ার আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। রাতের বেলায় জাহাজ চলছে। দুই পাশে তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর দুটি যুদ্ধজাহাজ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীতে থাকা চিকিৎসকেরা আমাদের সব নাবিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। স্প্যানিশ নৌবাহিনীর একজন নারী চিকিৎসক আমাকে বলেন, ‘সব নাবিক সুস্থ আছেন।’
তিনি বলেন, আমরা জলদস্যুদের হাত থেকে এত দ্রুত মুক্তি পাব তা কল্পনাও করিনি। সোমালিয়ার উপকূল থেকে জিম্মি জাহাজের এক মাসের মধ্যে মুক্তি পাওয়ার ঘটনার নজির খুব একটা নেই।
জিম্মিদশার পর থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদর দপ্তর সার্বক্ষণিক আমাদের জাহাজের অবস্থানের ওপর নজর রেখেছে। তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে সব সময় আমাদের পাশেই ছিল।
এমভি আব্দুল্লাহর বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবারও জাহাজটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ছিল। তবে বুধবার সেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা অতিক্রম করবে। সে ক্ষেত্রে ২২ এপ্রিল দুপুরের মধ্যে জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছাতে পারে।
এই মুক্তির জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা সহযোগিতা না করলে মুক্তি সম্ভব হতো না বলে মনে করেন ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদ।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আইন-আদালত
জুলাই বিপ্লবে আহত বাবুকে নেওয়া হচ্ছে থাইল্যান্ড
জুলাই বিপ্লবে আহত মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমানের ছেলে মো. বাবুকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হচ্ছে থাইল্যান্ড। আজ শনিবার (২৩ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তাকে থাইল্যান্ডে পাঠানো হবে।
বাবুর বয়স ৩৬ বছর। কাজ করতেন নয়াপল্টনের ছাপাখানায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বন্ধ হয়ে যায় ছাপাখানা। কিন্তু বাসায় বসে থাকেননি তিনি। জড়িয়ে পড়েন স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে। শনির আখড়ায় বাসা হওয়ায় সেখানে প্রতিদিন আন্দোলনে যেতেন।
জানা যায়, ২০ জুলাই সকালের দিকে আন্দোলনে যোগদান করেন বাবু। গলি থেকে মিছিল নিয়ে প্রধান সড়কে যান। এ সময় হেলিকপ্টার দিয়ে টহল দিচ্ছিল বিজিবি। হঠাৎ হেলিকপ্টার থেকে গুলি শুরু হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবু ৫-৬ হাত দূরে ছিটকে পড়ে। পুলিশ তাকে ঘিরে ধরে রাখে। রক্তে ভিজে যায় রাস্তা। পরিচিত একজন তার বোনকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে আসতে বলে। বোন বাবুর চার বন্ধুসহ ভাইকে উদ্ধার করতে আসে। কিন্তু পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রাস্তায় পড়ে থাকে বাবু।
৫-৬ ঘণ্টা পর বোনের জামাই এসে বাবুকে স্থানীয় একটি মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। সেখানেও শুরু হয় বিড়ম্বনা। কেন হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে? এ অভিযোগে চিকিৎসা শুরু করতেও দেরি হয়। এদিকে রক্তশূন্য হয়ে বাবু মৃতপ্রায়।
মুক্তিযোদ্ধা বাবা এদিন চিকিৎসকদের পায়ে পর্যন্ত ধরেন।
এদিকে মেয়ে হাজতে বন্দি। তাকে ছাড়াতে যান মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান। পুলিশ তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। পরে রাতে পুলিশ ফোন করে স্বামীকে চার হাজার টাকা নিয়ে যেতে বলে। ধারদেনা করে টাকা দিলে মুক্তি মেলে বাবুর বোনের। আর বাবুর বন্ধুদের পাঠানো হয় কারাগারে।
আহত বাবুর পেটের নিচের অংশ দিয়ে ঢুকে কোমরের পেছন দিয়ে বের হয়ে যায় বুলেট। গুলি ছিন্নভিন্ন করে বাবুর খাদ্যনালি, মূত্রথলি, কোমরের হাড়।
চিকিৎসকরা তার পেটে দুইবার অপারেশন করেছেন। তার খাদ্যনালির অনেকাংশ কেটে ফেলতে হয়। বাকি অংশ পেটে ফুটো করে আলাদা করে মলত্যাগের রাস্তা বানানো হয়। কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি হয় না। পরে সেপ্টেম্বর মাসে তাকে বিএমএমইউতে স্থানান্তরিত করা হয়। কিছুদিন পর অবস্থা আরও খারাপ হয় বাবুর। মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয় দেশের বাইরে পাঠানোর। ১৫ দিন আগে থাইল্যান্ডের চিকিৎসক এসে বাবুর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। পরে তারা তাকে থাইল্যান্ডে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন।
মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমকে জানানো হলে তিনি দ্রুত বাবুকে থাইল্যান্ডে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ডা. মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নির্দেশে আমরা বাবুকে দ্রুত বিদেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করি। শুক্রবার তার টিকিট পাওয়া যায়। আজ বেলা ১১টার বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে তাকে থাইল্যান্ডে পাঠানো হবে। দেশটির বেজথানি হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে বাবুকে। এরই মধ্যে গণবিপ্লবে আহত আরও চারজন ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আইন-আদালত
এলডিসি দেশগুলোতে ডলার বরাদ্দের প্রস্তাবে সমর্থন চাইলো বাংলাদেশ
জলবায়ু সংকটের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দের প্রস্তাবে সমর্থন জানাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) আজারবাইজানের বাকুতে কপ-২৯-এর চূড়ান্ত ফলাফলের বিষয়ে এলডিসি মন্ত্রী এবং ইইউ মন্ত্রীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এই আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকে অবশিষ্ট সমস্যার সমাধানে উভয় পক্ষের সহযোগিতার মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও সমতাভিত্তিক চুক্তি অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি বলেন, অনেক সমস্যা এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তিনি উভয় পক্ষকে একযোগে কাজ করার মাধ্যমে কপ২৯-এ একটি অর্থবহ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক চুক্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
বৈঠকে এলডিসি মন্ত্রীরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আর্থিক ও কারিগরি সহায়তার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তাদের মূল অবস্থান তুলে ধরেন।
ইইউ মন্ত্রীরা এলডিসি দেশগুলোর উদ্বেগের বিষয়গুলো স্বীকার করেন এবং জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে জলবায়ু অর্থায়ন, অভিযোজন, নির্গমন হ্রাস এবং গ্লোবাল স্টকটেক প্রক্রিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
অরবিসের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বাংলাদেশ: ড. ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশে চোখের যত্ন ও পরিষেবা সম্প্রসারণের জন্য অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অরবিস ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে কাজ ও সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
অরবিস ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট ও সিইও ডেরেক হডকির সাথে এক বৈঠকে তিনি বলেন, বাংলাদেশে চোখের যত্নের সেবা সম্প্রসারণ করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে আরা অরবিস ইন্টারন্যাশনালের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হড, অরবিস ফ্লাইং আই হাসপাতালের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ডেরেক বাংলাদেশ সফর করছেন। এখন চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ চলছে। ডেরেকে গত বুধবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীতে অধ্যাপক ইউনূসের সাথে তার কার্যালয়ে দেখা করেন।
অরবিস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. মুনির আহমেদ প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাতের সময় ডেরেকের সাথে ছিলেন। অরবিস প্রেসিডেন্ট প্রধান উপদেষ্টাকে ফ্লাইং আই হাসপাতালের একটি মডেল সংস্করণ উপস্থাপন করেন। অধ্যাপক ইউনূস এটির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
ডেরেক অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কাজ সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবিহিত করেন। অরবিস ১৯৮২ সালে বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি-সংরক্ষণ কর্মসূচি শুরু করেছিল। অরবিস গত ৩৯ বছর ধরে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে কাজ করছে।
ডেরেক বলেন, এই সময়ের মধ্যে, অরবিস এ পর্যন্ত কমিউনিটি আউটরিচ ইভেন্টে ৭.৮ মিলিয়নেরও বেশি চোখের স্ক্রিনিং পরিচালনা করেছে, প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে ৪.৫ মিলিয়নেরও বেশি ব্যক্তিকে ওষুধ ও অপটিক্যাল চিকিৎসা প্রদান করেছে, ২৫৮,০০০টিরও বেশি চোখের সার্জারি করেছে এবং বাংলাদেশের ৪০ হাজারের বেশি লোককে চোখের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে প্রশিক্ষিত করেছে।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে চক্ষু স্বাস্থ্য খাতে অরবিসের অবদানের কথা স্বীকার করেন এবং ফ্লাইং আই হাসপাতালের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অরবিস এখন বাংলাদেশে ১১তম প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ড. ইউনূস বলেন, আমি অরবিসকে ভালোবাসি। আমি ফ্লাইং আই হসপিটালকে ভালোবাসি। তিনি উল্লেখ করেন যে, অরবিস বাংলাদেশে চোখের স্বাস্থ্য খাতে ভূমিকা পালনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম।
ডেরেক বলেন, অরবিস ব্যক্তি, পরিবার ও জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করার জন্য বিশ্বব্যাপী ২ শতাধিক দেশ ও ভূখণ্ডে দৃষ্টি সংরক্ষণের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
বিশ্বজুড়ে প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ সম্পূর্ণভাবে পরিহারযোগ্য অন্ধত্ব ও দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের সমস্যা নিয়ে বসবাস করছে উল্লেখ করে ডেরেক বলেন, চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অরবিস জোরদার ও টেকসই চোখের যত্ন ব্যবস্থা নিয়ে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।
অরবিস প্রেসিডেন্ট বলেন, অলাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটি আফ্রিকা, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় বিশেষ কর্মসূচি পরিচালনা করছে এবং প্রশিক্ষণ প্রদান ও প্রযুক্তির প্রয়োগ করছে।
তিনি বলেন, গত চার দশক ধরে অরবিস শিশুদের চোখের যত্ন, মাইক্রোসার্জারি, রেটিনাল সার্জারি, কর্নিয়ার রোগ, প্রিম্যাচুরিটি রেটিনোপ্যাথি এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির ওপর গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের স্থানীয় অংশীদারদের দক্ষতা ও জ্ঞানের উন্নতিতে সাহায্য করেছে।
ডেরেক এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে আরও অবিহিত করেন, অরবিস সারা দেশে বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় ৪২টি দৃষ্টি সেবা কেন্দ্র স্থাপন করে চোখের যত্নের সাথে জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করেছে; ১৭টি সেকেন্ডারি হাসপাতাল, চারটি তৃতীয় হাসপাতাল, দুটি ওয়েট ল্যাব, একটি মানসম্পন্ন রিসোর্স সেন্টার ও একটি ডিজিটাল ট্রেনিং হাব প্রতিষ্ঠা বা উন্নতিতে সহায়তা করেছে।
এছাড়া, অরবিস ৪০০টি কমিউনিটি ক্লিনিককে ভিশন স্ক্রিনিং টুলস দিয়ে সজ্জিত করেছে এবং শৈশব অন্ধত্বের একটি প্রধান কারণ, প্রিম্যাচুরিটি রেটিনোপ্যাথির স্ক্রিনিং ও ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্দেশিকা তৈরি করেছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আইন-আদালত
সরকার নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না: রিজভী
অন্তর্বর্তী সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জনগণের দুর্ভোগ আগের মতোই রয়ে গেছে। দিনমজুর-শ্রমিকদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ছে।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয়তাবাদী রিকশা-ভ্যান-অটো চালক দলের বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
জনগণের দুর্ভোগ আগের মতোই আছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আগের মতোই আছে। অন্তর্বর্তী সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় দিনমজুর-শ্রমিকদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ছে।
তবে দেশের মানুষকে কষ্টে রেখে উপদেষ্টাদের যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ড মেনে নেয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, উপদেষ্টারা চাকরিজীবীর মতো কাজ করছেন। তাদের কাজে বিপ্লবের গতিশীলতা নেই।
অন্তর্বর্তী সরকারকে জুলাই বিপ্লবে হতাহতদের পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার আহ্বান জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
এ সময় রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে হত্যার লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল। আর শেখ হাসিনা হত্যাকাণ্ড চালিয়ে মায়াকান্নার অভিনয় করতেন।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
রাজউক কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার নির্দেশ
কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন) মমিন উদ্দিন একটি অফিস আদেশ জারি করে কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি জানান, রাজউকের ৯ম গ্রেডে ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের এবং অবশিষ্ট গ্রেড ১০ থেকে অন্য গ্রেডের কর্মকর্তাদের সম্পদ বিবরণী আগামী ৩০ নভেম্বর মধ্যে চেয়ারম্যান দপ্তরে দাখিল করতে হবে।
এমআই