অর্থনীতি
সঞ্চয়পত্র ছেড়ে ব্যাংকে ছুটছে মানুষ

দেশে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে প্রতি মাসেই সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙানোর প্রবণতা বাড়ছে। ফলে কমে আসছে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে নিট বিক্রি কমেছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি। সব মিলে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) নিট বিক্রি ঋণাত্মকের পরিমাণ ৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। আবার, সঞ্চয়পত্রে গ্রাহকদের বিনিয়োগ কমে আসলেও ব্যাংক আমানতে জমার পরিমাণ বাড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নানা কড়াকড়ির কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মানুষ। সম্প্রতি ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদ বাড়ানোও এর অন্যতম কারণ। এ ছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণেও সঞ্চয়পত্র ভেঙে ফেলছেন। ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়ছে। কোনো কোনো ব্যাংকে ঋণের সুদের হার ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এর প্রভাবে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহারও বাড়াতে শুরু করেছে।
ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি খাতের কিছু ব্যাংক এখন আমানতের সুদ হার বাড়াচ্ছে। অনেকে আমানতে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে এক বছরের জন্যও স্থায়ী আমানত হিসাব খোলা যায়। সেগুলো থেকে মাসে মাসে মুনাফা পাওয়ার সুবিধা আছে। এক বছরের স্থায়ী আমানতে কয়েকটি ব্যাংক ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। আবার কিছু ব্যাংক ছয় বছরের জন্য টাকা জমা রাখলে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। ফলে সঞ্চয়পত্র ছেড়ে ব্যাংক আমানতে ঝুঁকছে গ্রাহক।
এদিকে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বলছে, সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে নিট বিক্রি ঋণাত্মক হয়েছে ১ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। আগের মাসে নিট বিক্রি ঋণাত্মকের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) নিট বিক্রি ঋণাত্মক হওয়ার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়েও নিট বিক্রি ঋণাত্মক ধারায় ছিল। তবে ঐ সময় এর পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। তবে বিক্রি কমতে থাকায় সংশোধিত বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ধরা হয় ৩২ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে নিট বিক্রি দাঁড়ায় ঋণাত্মক প্রায় ৩ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের পুরো সময়ে সঞ্চয়পত্রের মোট বিক্রি হয় ৮০ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। একই সময়ে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ৮৪ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। এর মানে, পুরো অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকার এক টাকারও ঋণ পায়নি। মূলত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে বেশি ভাঙানোর প্রবণতা বাড়তে থাকে।
আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্র থেকে ভাঙানো বাবদ (নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে বা মেয়াদান্তের আগে) আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে নিট বিক্রি বলা হয়। নিট বিক্রিকে সরকারের ধার বা ঋণ হিসেবে গণ্য করা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরেও সঞ্চয়পত্র থেকে তুলনামূলক কম ঋণ পেয়েছিল সরকার। পুরো অর্থবছরে ৩২ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নিট ঋণ আসে ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। অথচ করোনার পরও ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ হয়েছিল প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এটি তার আগের অর্থবছরে ছিল মাত্র ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে হয় তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য। মেয়াদপূর্তির আগে সঞ্চয়পত্র ভাঙানো হলে মুনাফার হার সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৭১ শতাংশ। মেয়াদ ও টাকার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ মুনাফা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে যাদের এ খাতে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে, তাদের মুনাফা কমে যায়।
এখন ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকলে রিটার্নের সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব রকম সঞ্চয়পত্রের সুদহার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। তার আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনা হয়। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎস করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়।
বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৫২, পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনের সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৭৬, পাঁচ বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ২৮, তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
চট্টগ্রামে গ্রিন ডাটা সেন্টার নির্মাণের প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন

চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) জন্য গ্রিন ডাটা সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবটিতে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের হাটহাজারি উপজেলার ফটিকা মৌজায় বিটিসিএলের ১৪৯ দশমিক ৪৮ একর অব্যবহৃত জমির ওপর পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে একটি অত্যাধুনিক গ্রিন ডাটা সেন্টার স্থাপনের জন্য প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ সৃষ্টি, কর্মসংস্থানের সুযোগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে এবং নিজস্ব চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ডাটা স্টোরেজ ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমে বিটিসিএলের রাজস্ব আয় বাড়বে। এ অবস্থায় প্রকল্পটি পিপিপি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের নীতিগত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।
জানা যায়, নীতিগত অনুমোদনের পর ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পাদনের মাধ্যমে প্রস্তাবিত প্রকল্পের কারিগরি ও আর্থিক বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হবে এবং পিপিপি গাইডলাইন অনুযায়ী উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বেসরকারি অংশীদার নির্বাচন করা হবে। প্রকল্পে এডিবি কারিগরি সহায়তা এবং ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজরি সার্ভিস দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
জুনে ছাড় হতে পারে ঋণের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তি

আগামী ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বসন্তকালীন বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে ঋণ কিস্তির বিষয়ে একটি সমঝোতা হতে পারে জানিয়েছে আইএমএফের প্রতিনিধি দল। আর ঋণের অর্থ ছাড়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে আগামী জুনে আইএমএফের বোর্ড সভায়।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) আইএমএফ প্রতিনিধি দল ১২ দিন বাংলাদেশ সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে এমনই ইঙ্গিত দেন। আইএমএফের সফরের নেতৃত্বে ছিলেন সংস্থার কর্মকর্তা ক্রিস পাপাজর্জিও।
আইএমএফ বলছে, ২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৩.৩ শতাংশ, যেখানে আগের বছর একই সময়ে তা ছিল ৫.১ শতাংশ। ছাত্রজনতার আন্দোলনের কারণে অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, বিনিয়োগও কমেছে। এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতি এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, যা চলতি বছরের মার্চে কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে। তবে তা এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার (৫-৬ শতাংশ) অনেক বেশি।
ক্রিস পাপাজর্জিও বিবৃতিতে বলেন, বহিরাগত অর্থসংকট মোকাবিলা ও মূল্যস্ফীতি কমাতে এখনই নীতিগত কড়াকড়ি প্রয়োজন। কর ব্যবস্থায় সংস্কার এনে রাজস্ব বাড়ানো ও ভর্তুকি-ভিত্তিক করছাড় কমানো জরুরি।
বাংলাদেশের অর্থনীতি নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে আইএমএফ বলেছে, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে কর ব্যবস্থার সংস্কার, বিনিময় হারে নমনীয়তা এবং আর্থিক খাতে কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে। আর্থিক সংস্কারের বিষয় বাংলাদেশ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা সঠিক পথে রয়েছে বলে জানায় সংস্থাটি।
পাপাজর্জিও মনে করেন, বাংলাদেশের রিজার্ভের পাশাপাশি বিনিময় হারও স্থিতিশীল। রিজার্ভের পরিমাণ এমনকি তাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার আরও নমনীয় হলে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বাড়বে।
করব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আইএমএফ বলেছে, করনীতি ও প্রশাসনের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য থাকা উচিত। এ ছাড়া করছাড় কমাতে হবে, করনীতিকে সহজ করতে হবে এবং রাজস্ব বৃদ্ধির টেকসই পথ খুঁজে বের করতে হবে।
ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে আইনগত সংস্কার ও কার্যকর সম্পদ মান যাচাই এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও সুশাসন জোরদারের প্রতিও গুরুত্বারোপ করে আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার জোরালো অগ্রগতি দরকার।
২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় বাংলাদেশের। এরপর তিনটি কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। একই বছরের ডিসেম্বরে পেয়েছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর ২০২৪ এর জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে। তিন কিস্তিতে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পায় বাংলাদেশ। ঋণের অর্থছাড় বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার। চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ে দেরি হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও, সরকার আশা করছে আগামী জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাওয়া যাবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা থাকবে: অর্থ উপদেষ্টা

রপ্তানি বহুমুখীকরণ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার চেষ্টা থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা চাচ্ছি, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের যেন নরমাল ট্রেড হয়। বিশেষ করে জিএসপি (অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা) আবার চালু করা যায় কি না। কারণ জিএসপি আমেরিকার বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আগামী সপ্তাহে শুল্ক আরোপ নিয়ে আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে কী প্রস্তাব দেওয়া হবে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সেখানে আমাদের যাওয়ার প্রথম উদ্দেশ্য হলো বাজেট সাপোর্ট ও কতগুলো প্রজেক্ট ওরিয়েন্টেড বিষয়ে বিশ্বব্যাংক, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং ওপেক ফান্ড আছে, তাদের সঙ্গে আলাপ করব। অর্থায়ন নিয়ে সেখানে আমাদের বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দুটি চুক্তি হতে পারে এবং ওপেক ফান্ডের সঙ্গেও হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ওখানে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেশনের সঙ্গেও আলাপ করব। তারা কক্সবাজারে কাজ করছে। এ ছাড়া ইউএসএ ট্রেজারির সঙ্গে রূপপুর প্রকল্পে পেমেন্টের বিষয়ে আলোচনা হবে। এরইমধ্যে আমরা আলাপ করেছি। নিষেধাজ্ঞা আছে, তারপরও এ প্রকল্প নিয়ে বিশেষ কিছু করা যায় কি না সে বিষয়ে আলোচনা হবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা ইউএসএয়ের সঙ্গে যতটুকু সম্ভব সরকারের লেভেল, মাল্টিল্যাটারাল লেভেল বা বাইলেটারাল লেভেল ছাড়াও প্রাইভেট খাতের সঙ্গে যোগাযোগ করব। যেমন এনার্জি খাতের দু-একজন বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আলাপ হতে পারে। আমরা এনার্জি আনব কি না সে বিষয়ে। কারণ ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে তো আমাদের ইউএসএ থেকে আমদানির বিষয়ে একটু প্রণোদনা দিতে হবে। কারণ আমরা রপ্তানি যা করি তার থেকে কম আমদানি করি। এজন্য বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যদি তাদের কাছ থেকে এনার্জি, মেশিনারিজ আমদানি করি, আমদানি বেশি করলেই তো গ্যাপটা কমবে। আমরা বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে পারি, সেক্ষেত্রে আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ করে রপ্তানি করতে পারি। একই সঙ্গে তাদের দিক থেকেও যদি আমদানি করে, তবে গ্যাপ শূন্যের কোটায় আনা সম্ভব না।
ট্রাম্প প্রশাসন ৯০ দিনের জন্য শুল্ক আরোপ স্থগিত করেছে, এরপর আমরা ভালো কিছু প্রত্যাশা করতে পারি কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, নিশ্চয়ই আমরা আলাপ করব। তবে একসঙ্গে তো সব কিছু আসবে না। ইউএসএয়ের বাণিজ্য প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে আসছে। তারাও এসব বিষয়ে আলাপ করবেন। সব মিলিয়ে অর্থায়নসহ সবকিছু আমি আসার পর জানতে পারবেন।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বহু মিষ্টি কিনেছি, কোনো দোকানদার ভ্যাট চালান দেননি: এনবিআর চেয়ারম্যান

মিষ্টি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ তুলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, আমি নিজেও বহু মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনেছি। কোনো দোকানদার ভ্যাটের চালান দেননি। তারা ভ্যাট আদায়ের যন্ত্র ইএফডিও ব্যবহার করেন না।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব বোর্ড ভবনে অনুষ্ঠিত এনবিআরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব অভিযোগ করেন তিনি।
মিষ্টির ওপর ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব দিয়ে বাংলাদেশ সুইটস ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শ্রী ননী গোপাল ঘোষ বলেন, মিষ্টির ওপর যখন সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট ছিল তখন অনেক বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।
জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, আপনি বলছেন ফ্রি করে দিলে রাজস্ব বাড়বে। এটা একটা আজগুবি কথা। আপনি ১৫ শতাংশের ওপর অঙ্ক করে দেখলেন রাজস্ব আদায় কম, সাড়ে ৭ শতাংশ বেশি হয় এ রকম জাদুকরী দেশে বাস করলে তো হবে না।
তিনি আরও বলেন, আমি নিজেও বহু মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনেছি। কোনো দোকানদার ভ্যাটের রিসিট দেন না। ইএফডিও ব্যবহার করে না। এটা সমস্যা আছে। ভ্যাট দেয় জনগণ। আমি এ জীবনে যত মিষ্টি কিনেছি সব জায়গায় ভ্যাট দিয়েছি, কিন্তু আমার ভ্যাট সরকারের কোষাগারে আসে নাই। আমার তো বয়স হয়েছে। এ পর্যন্ত দেখলাম না কোনো মিষ্টি দোকানদার আমাকে ভ্যাটের রিসিট দিয়েছে।
মিষ্টিতে সুপারশপের মতো ভ্যাট ইনক্লুসিভ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, আমরা মিষ্টির দামে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করব। ইনক্লুসিভ করব। ভ্যাট আলাদা করে ধরা হবে না। ক্রেতা ভ্যাট দেখে চমকে উঠবে না। এমন একটা আদেশ প্রস্তুত করছি। টোটাল ভ্যালুর ওপর ভ্যাট ধরব। ক্রেতার জানার দরকার নাই যে তিনি কত টাকা ভ্যাট দিয়েছেন। এই একই জিনিস আমরা সুপারশপে করেছি।
যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্সের বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্স এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো তাদের টিকিটের মূল্যের সঙ্গে যোগ করে নিয়ে নেয়। এ ট্রাভেল ট্যাক্সের টাকা সরকারের টাকা কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এ টাকা সরকার পায় না। অনেক ক্ষেত্রেই এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো সরকারি কোষাগারে এটা জমা দেয় না বা কখনো কখনো কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যায়, তারা ব্যবসা বন্ধ করে চলে যান। সরকারের কোটি কোটি টাকা পাওনা থাকলে সেটা দেয় না।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাচ্ছি যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্স যাত্রী নিজে দেবে। তারা টাকা জমা দিয়ে চালান দেবে এবং সেটা দেখিয়ে চলে যাবে।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বাংলাদেশি পণ্যে বছরে ১ বিলিয়ন ডলার শুল্ক পায় যুক্তরাষ্ট্র: সিপিডি

যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর বাংলাদেশি পণ্যের ওপর এক বিলিয়ন ডলারের বেশি শুল্ক আদায় করে থাকে বলে জানিয়েছেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। অন্যদিকে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর প্রায় ১৮০ মিলিয়ন ডলার শুল্ক আদায় করে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে ‘ট্রাম্প রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ অ্যান্ড বাংলাদেশ ইমপ্লিকেশন অ্যান্ড রেসপন্স’ শীর্ষক ডায়ালগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে তিনি এসব তথ্য জানান।
এ সময় ট্রাম্পের শুল্কনীতি মোকাবিলায় মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তির পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতায় জোর দেওয়ার আহ্বান জানান বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। পাশাপাশি বাংলাদেশকে কৌশলগত বিকল্প অন্বেষণেরও সুপারিশ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ মার্কিন আমদানিতে গড়ে ৬.২ শতাংশ শুল্ক এবং অন্যান্য শুল্ক আরোপ করে। তবে যখন রিবেট বিবেচনা করা হয়, তখন গড় শুল্ক ২.২ শতাংশে নেমে আসে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে মার্কিন আমদানিতে গড় শুল্ক ১৫.১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
সিপিডির পরামর্শ, বাংলাদেশের উচিত মার্কিন শুল্কের প্রভাব তার রপ্তানি প্রতিযোগিতার ওপর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করা। সেই সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জড়িত থাকা।
ট্রাম্প প্রশাসনকে রোগের সঙ্গে তুলনা করে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক বলেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি পুরোটা অনিশ্চিত প্রক্রিয়া। তবে মোটা দাগে ধরা যেতে পারে এই শুল্ক নীতিতে চীন তাদের মূল টার্গেট।
তিনি আরও বলেন, নির্ধারিত সময় শেষে বাংলাদেশর মতো দরিদ্র দেশগুলোর ওপর শুল্ক কিছুটা কমাতে পারে। কিন্তু আমাদের মার্কেটের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে বায়ারদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের ৫০ শতাংশ নেগোসিয়েশন করতে হবে। এর জন্য কারখানাগুলোকে ব্যাংকের সাপোর্ট দিতে হবে। তবে এই কাজটা কেবল একটা পদ্ধতির মধ্যদিয়ে যাওয়া জরুরি, যা আগামী ৯০ দিনের জন্য কার্যকর হবে। তবে আগামীতে আমাদের রপ্তানি কিছুটা কমাতে পারে। এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তবে আগামী ৯০ দিন পরে পরিস্থিতি যাই হোক তাতে যেন সরকারের সহযোগিতা থাকে।
অন্য বক্তারা জানান, মার্কিন শুল্কনীতি শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্ব অর্থনীতিকে দুষ্টচক্রের মধ্যে ফেলবে। এটি শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যে নয়, শ্রমিকদের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ৯০ দিন পর যুক্তরাষ্ট্র কী করবে এটি কারও ধারণা নেই। তাই বিপদে পড়ার আগেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
এসময় বক্তারা অভিযোগ করেন, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থাকে (ডব্লিউটিও) কাজ করতে দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। তাই ডব্লিউটিও’র দিকে না তাকিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দিতে পরামর্শ দেন তারা।